নামাজে যদি কোনো ওয়াজিব তরক হয়ে যায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই সাহু সিজদা দিতে হবে। তা না হলে আপনার নামাজ হবে না। আজকের আলোচনায় সহজভাবে নামাজে কখন সাহু সিজদা দিতে হবে আর কখন দিতে হবে না এ মাসলা-মাসায়েল তুলে ধরা হলো। উল্লেখ্য, সাহু সিজদার এ মাসলাগুলো ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম হলো- শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে ২টি সিজদা দিতে হবে। ২ সিজদার মাঝখানে অবশ্যই ১ তাসবিহ পরিমাণ সোজা হয়ে বসতে হবে। তারপর যথারীতি আবার আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করতে হবে। তবে নামাজে যদি কোনো ফরজ তরক হয়ে যায় তাইলে সাহু সিজদা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আবার নতুন করে নামাজ পড়তে হবে। অনেককেই দেখা যায় কোনো কারণ ছাড়াই সব নামাজের শেষে একটা সাহু সিজদা দিয়ে দেয়। এমনটি করাও ঠিক নয়। আপনি যদি জামাতে নামাজ পড়েন তাইলে ইমাম সাহেব যদি সাহু সিজদা দেয় তাহলে আপনি দিবেন। আর যদি আপনি জামাতে মাসবুক মানে ১ রাকাত পরে উপস্থিত হন আর যদি আপনার নিজে পড়ার রাকাতে কোনো ওয়াজিব তরক হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে-
১. ফরজ নামাজের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব। যদি আপনি ফরজ নামাজের প্রথম রাকাত বা ২য় রাকাত বা উভয় রাকাতেই সুরা ফাতেহা ভুল করে না পড়েন, তাহলে আপনাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। আবার ফরজ নামাজের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া সুন্নাত। আপনি যদি যে কোনো ফরজ নামাজের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা ভুল করে না পড়েন, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।
২. ফরজ নামাজের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সুরা মিলানো ওয়াজিব। যদি আপনি ভুল করে ফরজ নামাজের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সুরা না পড়েন, তাহলে আপনাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। আবার ফরজ নামাজের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সুরা পড়ার নিয়ম নেই। তবে আপনি ভুলে ফরজ নামাজের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সুরা পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।
৩. সুন্নাত ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সুরা মিলানো ওয়াজিব।আপনি যদি যে কোনো সুন্নাত/নফল নামাজের যে কোনো রাকাতে সুরা ফাতেহা বা সুরা ফাতেহার পর অন্য একটি সুরা না পড়েন তাহলে আপনি একটি ওয়াজিব তরক করলেন। আপনাকে অবশ্যই সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।
৪. ভুল করে যে কোনো রাকাতে ২ রুকু বা ৩ সিজদা দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।
৫. সুরা ফাতেহা পড়ার পর এখন কি সুরা পড়বো- এ চিন্তায় যদি ৩ তসবীহ পরিমাণ সময় চলে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। অথবা কোনো সুরার কোনো আয়াত ভুলে গেছেন ঐ আয়াত স্মরণ করার জন্য যদি ৩ তসবীহ পরিমাণ সময় চলে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ফরজ ও সুন্নাত নামাজের ১ম বৈঠকে যদি ভুলে দুবার আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেলেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। আবার ফরজ ও সুন্নাত নামাজের ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর যদি দুরুদ শরীফের ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ’ পর্যন্ত পড়ে ফেলেন তাহলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। অবশ্য তারচেয়ে কম পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। তবে নফল নামাজের যে কোনো বৈঠকে দুবার আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।
৬. যে কোনো বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় যদি ভুলে সুরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। তবে নিয়ত করার সময় ছানার পরিবর্তে ভুলে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।
৭. ৩/৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠক ভুলে গেছেন এবং ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন, যদি অর্ধেকের কম দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে বসে পড়বেন এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আর যদি অর্ধেকের বেশি দাঁড়িয়ে যান তাহলে আর বসবেন না। ৩/৪ রাকাত নামাজ শেষ করে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু দিবেন।
৮. জোহর ও এশার ৪র্থ রাকাতে বসতে মনে নেই। একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ৫ম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে মনে হবার সাথে সাথে বসে পড়তে হবে। আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরাবেন। এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আর যদি ৫ম রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন এবং রুকুও করে ফেলেন তবুও বসে পড়বেন। এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। আর যদি রুকু করার পরও মনে না হয় তাহলে আরো ২ রাকাত পড়ে মোট ৬ রাকাত পড়বেন। এক্ষেত্রে শেষ ২ রাকাত নফল ও প্রথম ৪ রাকাত ফরজ হিসাবে আদায় হলো। কিন্তু আসরের নামাযে ৪র্থ রাকাতে এ রকম ভুল হলে মোট ৬ রাকাতই পড়বেন, কিন্তু ঐ ৬ রাকাতই নফল হিসেবে গণ্য হবে। কারণ আসর নামাজের পর কোনো নফল নামাজ নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে পুনরায় আসরের নামাজ পড়তে হবে।
৯. নামাজ ৩ রাকাত পড়েছেন না ৪ রাকাত পড়েছেন- এ রকম সন্দেহ যদি সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই। আর যদি হঠাৎ করে এ সন্দেহ হয় তাহলে এ রাকাতকে ৩য় রাকাত ধরে আরেক রাকাত পড়ে নিবেন। আর মন যদি ৪র্থ রাকাতের দিকে সায় দেয় তাহলে আরেক রাকাত পড়ার দরকার নেই। এই অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আবার ১ম রাকাত পড়লেন না ২য় রাকাত পড়লেন এ রকম সন্দেহ যদি সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহেরও কোনো ভিত্তি নেই। আর যদি হঠাৎ করে এ সন্দেহ হয় তাহলে এ রাকাতকে ১ম রাকাত ধরে আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ২য় রাকাতও হতে পারে। আবার ২য় রাকাতেও আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ২য় রাকাত হতে পারে। আবার ৩য় রাকাতেও আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ৪র্থ রাকাত হতে পারে। তারপর ৪র্থ রাকাতে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফিরাবেন।
১০. যদি নামাজে সালাম ফিরানোর পর যদি নামাজ ৩ রাকাত পড়েছেন না ৪ রাকাত পড়েছেন এ রকম সন্দেহ সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই।আর যদি স্পষ্টভাবে মনে পড়ে যে, নামাজ ৩ রাকাত পড়েছেন এবং আপনি কিবলামুখি হয়ে বসে আছেন এবং কারো সাথে কথা বলেন নি তাহলে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে আরেক রাকাত পড়ে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফিরাবেন। তবে কারো সাথে কথা বলে ফেললে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
১১. একই নামাজে সিজদায়ে সাহু করার একাধিক কারণ পাওয়া গেলেও একটি সিজদায়ে সাহু করলেই হবে।
১২. বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পড়েন রুকুতে চলে গেছেন বা দোয়া কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। আর যদি দোয়া কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পড়ে ফেলেন কিন্তু মনে হবার সাথে সাথে দোয়া কুনুত পড়েছেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।