সূচীপত্র ০১. ইমাম ইবনে আবিদ্ দুন্ইয়া আলায়হির রাহমাহ্র সংক্ষিপ্ত জীবনী/ ০৫ ০২. মুখবন্ধ/ ০৭ ০৩. অসহায় মায়ের দো‘আয় তাঁর মৃত ছেলে জীবিত হয়ে গেছেন/ ০৯ ০৪. যায়দ ইবনে খারিজাহ্ ইন্তিকালের পর জীবিত হন এবং কথা বলেছেন/ ১২ ০৫. এক আনসারীর মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া ও কথা বলার ঘটনা/ ১৫ ০৬. যায়দ্ ইবনে খারিজাহ্ ইনতিকালের পর জীবিত হয়ে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.) সত্য নবী, খোলাফা-ই রাশেদীন সত্য খলীফা ও সাহাবী ছিলেন মর্মে সাক্ষ্য দেন /১৬ ০৭. ভন্ডনবী মুসায়লামা কায্যাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক শহীদ জীবিত হয়ে হুযূর-ই আক্রামের রিসালত ও প্রথম তিন খলীফার বিভিন্ন চারিত্রিক সৌন্দর্য্যরে পক্ষে সাক্ষ্য দেন/২০ ০৮. হযরত রিব্‘ঈ ইবনে হেরাশের ঘটনা। তিনি ইন্তিক্বালের পর কথা বলেছেন/২১ ০৯. হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হযরত রিব‘ঈ ইবনে হেরাশের ঘটনার সত্যায়ন করেছেন/২২ ১০. হযরত রিব‘ঈ ইবনে হেরাশ ইনতিকালের পর গোসলের খাটিয়ায় হেসেছেন/ ২৩ ১১. হযরত আবূ আসিমের পিতার নানা অন্তিম গোসলের খাটিয়ায় আল্লাহর দরবারে দো‘আ করেন এবং তদনুযায়ী জীবিত হয়ে জিহাদ করেছেন/২৩ ১২. হযরত রূবা অন্তিম গোসলের খাটিয়ায় জীবিত হয়ে সঙ্গীনীদের জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন/২৪ ১৩. এক ব্যক্তি তার ইনতিক্বালের পর জীবিত হয়ে তাঁর আমলনামা সম্পর্কে খবর দিয়েছেন /২৫ ১৪. এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর জীবিত হয়ে খবর দিলো যে, সে তার জীবদ্দশায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব ও ওমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে তিরস্কার ও গালি দেওয়ায় দোযখের আগুনে জ্বলছে/২৫ ১৫. হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর ফারূক্বের প্রতি জীবদ্দশায় অশালীনতা প্রদর্শনের কারণে মৃত্যুর পর লা’নতের শিকার হতে হলো/২৬ ১৬. জীবদ্দশায় হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর ফারূককে গালি দেওয়ায় কলেমা তার কোন কাজে আসেনি, বরং সে মৃত্যুর পর আগুনে প্রবেশ করার সংবাদ দিল/২৬ ১৭. মৃত্যুর পর শিয়া হবার শাস্তি স্বরূপ দোযখে প্রবিষ্ট হবার সংবাদ দিলো/ ২৯ ১৮. সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পরকালের পরিণতি দর্শন /৩১ ১৯. গর্ভবর্তী মহিলা তার মৃত্যুর পর সন্তান জন্ম দিলেন, সন্তানটি তার মায়ের কবরে আল্লাহর হিফাযতে ছিলো এবং তার পিতার কোলে ফিরে এলো/৩৩ ২০. জীবদ্দশায় মাকে গাধা বলে তিরস্কার করায় মৃত্যুর পর তার অশুভ পরিণতি। সে প্রতিদিন কবর থেকে গাধার আকৃতিতে উঠে গাধার মত ডাক দেয়/৩৪ ২১. মৃত্যুর পর কবর থেকে জিহাদ করার জন্য জীবিত হওয়ার পর তাঁর দো‘আয় তাঁর মৃত গাধাটাও জীবিত হলো/৩৭ ২২. মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া গাধা বিক্রিত হবার ঘটনা/ ৩৮ ২৩. শাহাদাতের পর শহীদ যুবক তাঁর দুই জীবিত মুজাহিদ সাহাবীকে সাহায্য করেছেন/ ৩৯ ২৪. মৃত কাফির তার কবরে আগুনের শিকলে বন্দি অবস্থায় আগুনের শাস্তির শিকার হলো/ ৪০ ২৫. প্রশ্রাব করে পবিত্রতা অর্জন না করা এবং পিপাসার্তকে পানি না দিয়ে খালি কলসী দেখিয়ে উপহাস করার অশুভ পরিণতি- প্রতি রাতে কবর থেকে ‘প্রস্রাব, প্রস্রাব, কলসী কলসী’ বলে চিৎকার করে/ ৪১ ২৬. কাফিরের কবরে আগুনের লেলিহান/ ৪২ ২৭. বিচারক বিচারকার্যে স্বজনপ্রীতি করার অশুভ পরিণত- তার অবিচারের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো/ ৪৩ ২৮. এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর ফেরেশতা দেখার ঘটনা জীবিত হয়ে বলে দিলো এবং পুনরায় মৃত্যুবরণ করলো/ ৪৪ ২৯. নামায আদায় ও যিক্রের ফলে কঠিন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলো এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করলো/৪৬ ৩০. গোলার আঘাতে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে বেহেশতে তাঁর স্ত্রী হবে এমন হুর দেখার ঘটনার বিবরণ দিলো/৪৮ ৩১. আল্লাহর রাস্তায় রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদকারী যুবকের খন্ডিত মস্তক পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেছে/৫০ ৩২. শহীদ মুহাজিরদের সবদেহের চতুর্দিকে অদৃশ্যের রূপশী মহিলাদের মাতম করতে দেখা গেছে/ ৫০ ৩৩. কবরস্থ ব্যক্তিকে তার কবরে মুনকার-নকীরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে শোনা গেছে/ ৫১ ৩৪. হযরত ইয়াহিয়া আলায়হিস্ সালাম-এর ছিন্ন মস্তক শরীফ ও তাঁর শরীয়তের বিধান বলে দিয়েছিলো ও এর চিত্তাকর্ষক ঘটনা/৫৩ ৩৫. হযরত ইয়াহিয়া আলায়হিস্ সালামকে অস্বীকার ও তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী মেয়েটিকে আযাবের বাতাস দালানের ছাদ থেকে নিক্ষেপ করলে নিচে বুভুক্ষ কুকুরগুলো তাকে সাবাড় করলো/৫৫ ৩৬. রাতে সূরা সাজদাহ্ ও সূরা মুলক নিয়মিত পাঠের বরকতে তিলাওয়াতকারীর মৃত্যুর পর তার শবদেহ থেকে নূর চমকিয়েছে/৫৬ ৩৭. ক্বাবিলকে পানি পান করানোর অনুমতি মিলেনি, কারণ সে দুনিয়ায় সর্বপ্রথম খুনি/ ৫৮ ৩৮. ফিরআউনের অনুসারীদের রূহকে পাখীর পাকস্থলীতে রেখে প্রতিদিন আগুনে জ্বালানো হয়/ ৫৯ ৩৯. ঋণ পরিশেষ না করায় এন্তাকিয়ার কূপে বন্দীর পক্ষ থেকে তার ঋণ পরিশোধ করা হলে সে কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেলো/৬০ ৪০. হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর দো‘আয় ৭০ জন বনী ইসরাঈল জীবন লাভ করেছিলো/ ৬১ ৪১. হযরত হিযক্বীল আলায়হিস্ সালাম-এর দো‘আর ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর চোখের সামনে তার সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোককে তাদের মৃত্যুর পর জীবন দান করেছেন এবং তারা দীর্ঘদিন জীবদ্দশায় ছিলো/৬৩ ৪২. হযরত ওযায়র আলায়হিস্ সালাম ইনতিক্বালের দীর্ঘ একশ’ বছর পর পুনরায় পার্থিব জীবন লাভ করেন/৬৪ ৪৩. হযরত ওযায়র আলায়হিস্ সালাম যখন পুনরায় জীবন লাভ করেন তখন তিনি ছিলেন যুবক আর তাঁর সন্তানরা ছিলেন বয়োবৃদ্ধ/৬৫ ৪৪. সূরা বাক্বারার গাভীর যবেহ্কৃত গোশতের টুকরা নিহত ব্যক্তি (আমীল)-এর গায়ে নিক্ষেপ করলে সে জীবিত হয়ে তার খুনীর নাম বলে দিয়েছিলো/৬৭ ৪৫. মৃত কাফিরকে তার কবরে আগুনের শিকলে বন্ধি ও কঠিন শাস্তিতে আক্রান্ত দেখা গেলো/ ৭০ ৪৬. হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালামের সামনেই তাঁর যবেহ্ ও পোষণকৃত পাখীগুলোকে জীবিত করে দেখানো হয়েছিলো/৭১ ৪৭. একশত বছর পর জীবিত লোকটির শরীরে মৃত্যুর উষ্ণতা (উত্তাপ) বিরাজ করছিলো/ ৭৩ ৪৮. হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের দো‘আয় সাম ইবনে নূহ্ আলায়হিস্ সালাম জীবিত হয়েছিলেন/ ৭৩ ৪৯. কূফায় এক মহিলা তার জানাযার পর জীবিত হয়ে আরো অনেকদিন জীবদ্দশায় ছিলো/ ৭৪ ৫০. এক ব্যক্তির দো‘আর ফলে তার দু’মৃত ছেলে জীবিত হয়েছিলো/ ৭৫ ৫১. এক মুজাহিদ যুবকের ছিন্ন মস্তক সূরা ক্বাসাসের আয়াত তিলাওয়াত করেছিলো/ ৭৬ ৫২. নিহত মযলুমের ছিন্ন মস্তক তার খুনীকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সংবাদ দিলো/ ৭৭ ৫৩. এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার নেক কাজকে এক সুদর্শন পুরুষ এবং তার মন্দ কর্মকে কুৎসিৎ ও দুর্গন্ধযুক্ত নারীর আকারে দেখতে পেলো। তারা উভয়ে যথাক্রমে তার সেবা ও অভিযোগ করতে লাগলো/৭৮
লেখক পরিচিতি
[ইমাম ইবনু আবিদ্ দুন্ইয়া (২০৮হি.-২৮১হি.)]
ইমাম বুখারী, ইমাম তিরমিযী, ইমাম ইবনে মাজাহ্, ইমাম ইবনে খোযাইমা ও ইমাম আবু হাতেম রাযী রাহেমাহুমুল্লাহসহ অসংখ্য মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, ফক্বীহ্ ও জগতখ্যাত আলেম ও বিজ্ঞজনদের শিক্ষাগুরু এবং খলীফা মু’তাদ্বিদ বিল্লাহ্ ও খলিফা মুকতাফী বিল্লাহর গৃহ শিক্ষক হাফেযুল হাদীস আল্লামা ইমাম ইবনে আবিদ্ দুন্ইয়া রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। নাম : আবু বকর আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবীদ ইবনে সুফিয়ান ইবনে ক্বাইস আল বাগদাদী আল উমুভভী আল ক্বরশী। জন্ম : তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দির প্রথম দিকে (২০৮হি.) বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষকমণ্ডলী: তিনি জগতখ্যাত অসংখ্য ওলামার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে সা‘ঈদ ইবনে সুলাইমান, আলী ইবনুল জা’দ, সা‘ঈদ ইবনে মুহাম্মদ আল জারমীসহ একই স্তরের প্রায় শতাধিক ওলামা রয়েছেন। ছাত্রবৃন্দ: বিশ্বনন্দিত শতাধিক মুহাদ্দিসহ অসংখ্য ছাত্র তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে ইমাম বুখারী, ইমাম তিরমিযী, ইমাম ইবনে মাজাহ্, ইমাম ইবনে আবী হাতেম রাযী, ইমাম ইবনে খোযাইমা অন্যতম। তাছাড়া, আব্বাসী খলীফা মু’তাদ্বিদ্ বিল্লাহ্ ও মুক্তাফী বিল্লাহ্ এবং তাঁদের রাজপুত্রদেরও তিনি উস্তাদ ছিলেন। রচনাবলী: তিনি প্রায় তিন শত অতি মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন ও রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ কিতাব ছিল ওয়ায, নসীহত, যুহদ ও তাক্বওয়া ইত্যাদি বিষয়ে। ড. নজম আবদুর রহমান খলফ-এর হিসাব মতে তাঁর কিতাবের সংখ্যা ২১৭টি। উল্লেখ্যযোগ্য কিছু গ্রন্থের নাম নি¤েœ দেওয়া হলোঃ ১. আল ইখলাসু ওয়ান্ নিয়্যাহ্ ২. সিফাতুল জান্নাত, ৩. সিফাতুন্ নার, ৪. আমর বিল মা’রূফ ওয়ান্ নাহি আনিল মুনকার, ৫. আত্তাওবাহ্, ৬. যাম্মুল গীবাতি ওয়ান্ নামীমাহ্, ৭. আয্যুহ্দ, ৮. ফাদ্বাইল-ই রামাদ্বান, ৯. মুহাসাবুতন্ নাফ্স, ১০. আশশুকর, ১১. আত্তাহাজ্জুদু ওয়া ক্বিয়ামুল্ লায়ল, ১২. আন্ নামীমাহ্, ১৩. যাম্মুদ্ দুন্ইয়া, ১৪. যাম্মুল্ কিযবি, ১৫. যাম্মুল মাকর, ১৬. মুজাবুদ্ দা’ওয়াহ্, ১৭. মান আশা বা’দাল মাওতি ইত্যাদি।
ইমাম ইবনু আবিদ্ দুনিয়া সম্পর্কে মণীষীদের অভিমত: ১. ইমাম ইবন হাজর আস্ক্বালানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ‘তার ‘আত্ তাক্বরীর’ নামক কিতাবে লিখেছেন- صَدُوْقٌ حَافِظٌ صَاحِبُ تَصَانِىْفَ (তিনি অত্যন্ত সত্যবাদী, হাফেযুল হাদিস এবং অনেক কিতাবের রচয়িতা)। ২. আল্লামা খতীব বাগদাদী তাঁর ‘তারিখে বাগদাদ’-এ লিখেছেন- اَدَّبَ غَىْرَ وَاحِدٍ مِّنْ اَوْلاَدِ الْخُلَفَآءِ (তিনি একাধিক রাজপুত্রের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক ছিলেন)। ৩. ইমাম ইবনে আবী হাতিম রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন-كَتَبْتُ عَنْهُ مَعَ اَبِىْ وَهُوَ صَدُوْقٌ (আমি ও আমার পিতা তাঁর থেকে হাদীস লিখেছি, তিনি সাদূক্ব অর্থাৎ অত্যন্ত সত্যবাদী ছিলেন।) ৪. তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তাঁর সাথে কেউ বসলে তিনি তাকে চাইলে ক্ষণিকের মধ্যে হাসাতে পারতেন, আবার চাইলে ক্ষণিকের মধ্যে কাঁদাতে পারতেন। এটা তাঁর জ্ঞানের গভীরতা এবং পূর্ববর্তীদের ঘটনা ও নছিহত সম্পর্কে অধিক ওয়াকেফহাল ছিলেন বলেই সম্ভব হতো।’ ৫. আল্লামা শমসুদ্দিন যাহাবী বলেন- اَلْمُحَدِّثُ الْعَالِمُ الصَّدُوْقُ ـ مَوْلاَهُمُ الْبَغْدَادِىُّ صَاحِبُ التَّصَانِىْفِ (তিনি প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, আলিম, অত্যন্ত সত্যবাদী এবং অনেক কিতাবের প্রণেতা।) ৬. হাফেয ইবনে কাসীর বলেন- اَلْحَافِظُ الْمُصَنِّفُ فِىْ كُلِّ فَنٍّ ـ اَلْمَشْهُوْرُ بِالتَّصَانِىْفِ الْكَثِيْرَةِ وَالنَّافِعَةِ الشَّائعَةِ الزَّائِعَةِ فِى الزَّمَانِ وَغَيْرِهَا (তিনি ছিলেন হাফেযুল হাদিস, প্রত্যেক বিষয়ের লেখক, অনেক কিতাবের রচয়িতা। তাঁর ছিল উপকারী, বহুল প্রচারিত ও আপন যুগে সমাদৃত অনেক লেখনী। বিশেষ করে তার অধিকাংশ লেখা ছিল যুহ্দ, তাক্ব্ওয়া ও ওয়ায-নছিহতের উপর। ইন্তিকাল: তাঁর ইন্তেকালের সাল ও তারিখ সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। আল্লামা শামসুদ্দিন যাহাবীর মতে, তিনি ২৮১ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে ইন্তিকাল করেন, কিন্তু যে মতটি অধিক গ্রহণযোগ্য তা হলো, তিনি ২৮২ হিজরীতে ইনতিকাল করেন। তিনি প্রায় ৭৪ বছর হায়াত পেয়েছেন এবং এ দীর্ঘ হায়াতে তিনি মখলুককে খালেকের নিকটবর্তী করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। কাযী আবুল হাসান বলেন, ‘ইমাম ইবনে আবিদ্ দুন্ইয়া যে দিন ইন্তিকাল করলেন, আমি সে দিন কাযী ইসমাঈল ইবনে ইসহাক-এর নিকট গিয়ে বললাম, আল্লাহ্ তা‘আলা কাযী সাহেবকে সম্মান বৃদ্ধি করে দিন আজ ইমাম ইবনে আবিদ দুন্ইয়া ইন্তিকাল করেছেন, উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আবু বকর এর প্রতি করুণা করুন। তাঁর ইন্তিকালে অনেক ইলম-এরও ইন্তিকাল হয়েছে। হে ছেলে! তুমি ইউসুফ-এর নিকট গিয়ে বল তিনি যেন তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন। ফলে ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বশক্তিশান। তিনি যা চান করতে পারেন। তিনি হায়াত ও মওতের ¯্রষ্টা। পবিত্র ক্বোরআনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘‘বড় কল্যাণময় তিনি, যাঁর (ক্বুদরতের) মুঠোর মধ্যে রয়েছে সমগ্র বিশ্বের রাজত্ব এবং তিনি প্রত্যেক কিছুর উপর শক্তিমান। তিনিই, যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা হয়ে যায়- তোমাদের মধ্যে কার কর্ম অধিক উত্তম এবং তিনিই মহা সম্মানিত, ক্ষমাশীল।’’ [সূরা মুল্ক: আয়াত: ১-২, তরজমা: কান্যুল ঈমান] তিনি পবিত্র ক্বোরআনে আরো ঘোষণা করেন- ‘প্রত্যেক নাফ্স মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। অর্থাৎ প্রত্যেকে মরণশীল। মৃত্যু যেমন প্রত্যেকের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত, তেমনি মৃত্যু প্রত্যেকের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। একথা চিরন্তন সত্য যে, আল্লাহ্ তা‘আলাই জীবনদাতা, আবার আল্লাহ্ তা‘আলাই মৃত্যু ঘটান। তিনি যেমন কাউকে জীবন দান করতে পারেন, তেমনি মৃত্যুও ঘটাতে পারেন। পবিত্র ক্বোরআন, হাদীস এবং বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা ও ঘটনা থেকে একথাও প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কারো মৃত্যু ঘটানোর পর প্রাথমিক পর্যায়ে কবরে জীবিত করে মুন্কার-নকীরের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তর করান। আর তার পার্থিব জীবনের কর্ম ও ওই প্রশ্নোত্তর অনুসারে তার কবর তথা বরযখী জীবনের ব্যবস্থাপনা করেন। ক্বিয়ামতে চূড়ান্তভাবে জীবিত করে হিসাব-নিকাশের পর তাকে তার পরিণাম স্থলে পৌঁছান। এটা হলো প্রত্যেক সৃষ্টির ব্যাপারে সাধারণ নিয়ম। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করলে কাউকে মৃত্যু দিয়ে তার পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তাকে পুনরায় জীবন দান করে ক্ষণস্থায়ীভাবে কিংবা দীর্ঘস্থায়ীভাবে এ পৃথিবীতেই ক্ষমতা প্রয়োগ করাতে পারেন। সহীহ্ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহ্ তা‘আলা মাটির উপর, নবীগণের (আলায়হিমুস্ সালাম) পবিত্র শরীরকে গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন। তাঁরা ইন্তিকালের পরও জীবিত। নামায পড়েন, হজ্জ করেন, তাঁদেরকে রিয্ক্ব দেওয়া হয় ইত্যাদি। মি’রাজ শরীফের দীর্ঘ বর্ণনায়ও এর অকাট্য প্রমাণ মিলে। আমাদের আক্বা ও মাওলা হুযূর-ই আক্রামের ‘হায়াতুন্নবী’র বিষয়টিতো আরো বেশী শানদার। তিনি এরশাদ করেছেন- ‘যে আমার ওফাতের পর আমার যিয়ারত করলো, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করলো।’ ‘যে স্বপ্নে আমাকে দেখেছে, সে আমাকেই দেখেছে; কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ সম্মানিত সাহাবা-ই কেরাম, শহীদগণ, গাউস, ক্বুত্ব-আবদাল প্রমুখ উচ্চ পর্যায়ের ওলীগণের বেলায়ও দেখা যায় তাঁরা আপন আপন ওফাতের পরও জীবিত এবং ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁদেরকে ইন্তিক্বালের পর যে জীবন দান করেছেন, তা পার্থিব জীবনের মতোই, বরং তদপেক্ষাও শক্তিশালী বলে প্রমাণ মিলে। সুতরাং মৃত্যু একটি পুলের মতো, এ পার্থিব জীবন থেকে পরকালীন জীবনে পাড়ি দেওয়ার একটি মাধ্যমই। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সাধারণ মানুষের পরকালীন জীবন এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরকালীন জীবনের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ ও তাঁদের সৎকার্যাদির যথাযথ প্রতিদান ও প্রভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা লাভে সমর্থ হন। অনেকের বেলায় দেখা গেছে, তাঁরা তাদের মরণোত্তরকালে সম্পূর্ণ জীবিত মানুষের মতো কথাবার্তা বলেছেন, কাজ করেছেন ইত্যাদি। যেমন হযরত রিব‘ঈ ইবনে হেরাশের মরণোত্তরকালীন কথা বলা ও হাসা ইত্যাদি। হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোকও পয়দা হবে, যে মৃত্যুবরণ করার পর কথা বলবে।’’ আবার এমনও দেখা গেছে যে, কোন কোন পাপী, বদ-মাযহাব, বদ-আক্বীদা ও বেদ্বীন লোককেও আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মৃত্যুর পর জীবিত করে কথা বলিয়েছেন, তাদের কবরের দুরবস্থার বর্ণনা করিয়েছেন ইত্যাদি। এ উভয় অবস্থার মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার বহু হিকমত নিহিত আছে। এর মাধ্যমে প্রথমতঃ আল্লাহর মহান কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ইনতিক্বালের পরবর্তী জীবনের বিশেষ মর্যাদা এবং তাঁদের সৎকর্মের পরকালীন প্রতিদানের প্রকাশ পায় এবং তৃতীয়তঃ কোন কোন পাপী, এমনকি কাফির ও বদ-আক্বীদা সম্পন্নের মাধ্যমে তাদের ও তাদের অসৎ কর্মের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে জীবিত মানুষকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এমন এমন ঘটনাও ঘটানো হয় যে, জীবিত লোক তার মৃত ভাইয়ের কবরের ভিতর মুনকার-নকীরের প্রশ্নগুলো এবং মৃত ব্যক্তির জবাবের শব্দ শুনেছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতাকে বাস্তবে প্রমাণ করিয়ে দেখানো হয়েছে, যাতে জীবিত মানুষরা এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, ইত্যাদি। অবশ্য, এসব বিষয়ের প্রমাণ অকাট্যভাবে প্রাপ্ত হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। অতি সুখের বিষয় যে, ইমাম ইবনে আবিদ্দুন্ইয়া আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মান ‘আ-শা বা’দাল মাওত’-এর মধ্যে মৃত্যুর পরও যে মানুষ আল্লাহর ক্ষমতাক্রমে জীবিত থাকতে পারে, কথা বলতে পারে, তার পক্ষে বহু অকাট্য ঘটনা সনদ সহকারে উল্লেখ করেছেন। এ সম্মানিত লেখক ও তাঁর বর্ণনাদির গ্রহণযোগ্যতা থেকে আহলে সুন্নাতের এ বিশেষ আক্বীদা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সুখের বিষয যে, ইমাম ইবনে আবিদ্দুন্ইয়ার এ কিতাবটা সংগ্রহ করে সেটার, এ ‘ইন্তিক্বালের পর দুনিয়ায় জীবিত হলেন যারা’ শিরোনামে বঙ্গানুবাদ করেছেন বিশিষ্ট আলিম-ই দ্বীন, গবেষক ও শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন আযহারী। সরল বাংলায় অনূদিত কিতাবটার পুস্তকাকারে মুদ্রণ ও প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম। এটা ট্রাস্টের প্রকাশনা ও সুন্নিয়তের প্রচার-প্রসারে আরেকটা বিশেষ সংযোজন। আমি গুনাহ্গারও কিতাবটার আদ্যোপান্ত দেখেছি। অনুবাদ শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল হয়েছে। কিতাবটা পাঠক সমাজকে অতিমাত্রায় উপকৃত করবে- ইনশাআল্লাহ্।
সালামান্তে – মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
بسم الله الرحمن الرحيم
مَنْ عَاشَ بَعْدَ الْمَوْتِ [ইন্তিকালের পর দুনিয়ায় জীবিত হলেন যাঁরা]
অর্থাৎ: হযরত সাবিত আল বুনানী হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, আমি একজন আনসারী অসুস্থ যুবককে দেখতে গেলাম। অল্প কিছুক্ষণ পরেই যুবকটি ইন্তিকাল করলেন, তখন আমরা তাঁর চোখ দু’টি বন্ধ করে দিয়ে তাঁকে একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে রাখলাম, আর উপস্থিতদের মধ্যে কেউ তাঁর মাকে গিয়ে বললেন, ‘‘আল্লাহর নিকট প্রতিদান ও সাওয়াব প্রত্যাশা করুন।’’ (অর্থাৎ সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য্যধারণ করে ধৈর্য্যশীলদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত অফুরন্ত নেয়ামত-সাওয়াব ও প্রতিদান পাবার প্রত্যাশা ও কামনা করুন, ধৈর্য্যহীন হবেন না।) তখন মা বললেন, আমার ছেলে কি মারা গেছে? তারা বললেন, ‘হ্যাঁ, তিনি মারা গেছেন’। মা আবার বললেন, ‘তোমরা কি সত্য বলছ?’ তারা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সত্য বলছি।’ তখন মা আকাশের দিকে (উপরের দিকে) হাত দু’টি উত্তোলন করে দিয়ে ফরিয়াদ করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার উপর ঈমান এনেছি এবং তোমার প্রিয় রাসূলের দিকে হিজরত করেছি। আমি যে কোন সময় যে কোন প্রকারের কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি আর এ বিপদ থেকে মুক্তির জন্য তোমার নিকট ফরিয়াদ করেছি, তুমি সাথে সাথে তা অপসারণ করে নিয়েছ এবং আমাকে মুক্তি দিয়েছ, তাই হে আল্লাহ্, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি- আজকের এ কঠিন মুসীবতকে তুমি আমার উপর চাপিয়ে দিওনা বরং তা থেকে তুমি আমাকে উত্তরণ দান কর।’ বর্ণনাকারী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, ‘তখন আমরা ওই যুবকের মুখমণ্ডল থেকে চাদর সরালাম। দেখলাম, যুবকটি জীবিত হয়ে গেলেন এবং সুস্থও হয়ে গেলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া করলাম আর যুবকটিও আমাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করলেন।’ তাঁর সম্পর্কে এবং এ ধরনের আরো কতিপয় স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। ওইগুলোর মধ্যে নি¤œলিখিত কয়েকটা বর্ণনা প্রনিধানযোগ্যঃ
অর্থাৎ: হযরত সালেহ আল্মুরবী (বর্ণনাকারীদের একজন) বলেন- আমি ঘটনাটি হাফ্স ইবনে নাদ্বর আস্সুলামীর নিকট বর্ণনা করলাম, তখন তিনি তা শুনে বিস্মিত হলেন। পরবর্তী জুমায় যখন তাঁর সাথে দেখা হলো তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘‘আমি তোমার এ ঘটনা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, অতঃপর আমি রাবী‘আহ্ ইবনে কুলসূম-এর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে বললেন, এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তার এক অন্ধ, বধির পঙ্গু ও চলতে অক্ষম বৃদ্ধা প্রতিবেশি ছিলেন একটি মাত্র ছেলে ছাড়া ওই বৃদ্ধার আর কেউ ছিল না। ছেলেটি তার দেখাশুনা করতো। একদিন হঠাৎ ছেলেটি মারা গেল। তাই আমরা ওই বৃদ্ধার নিকট এসে বললাম, ‘‘এ মুসীবতের উপর ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করুন। তখন বৃদ্ধা বললেন, ‘কি হয়েছে? আমার ছেলে কি মারা গেছে? হে আল্লাহ! আমার প্রতি করুণা করো, আমার কাছ থেকে আমার ছেলেকে কেড়ে নিওনা, আমি অন্ধ, বধির, চলতে অক্ষম, সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই, হে আমার মুনিব! আমার প্রতি এ মুসীবতে দয়া করো।’ বর্ণনাকারী বললেন, আমি বললাম, ‘মনে হয় মহিলাটি পাগল হয়ে গিয়েছে, আমি বাজারে গিয়ে তার জন্য কাফনের কাপড় খরিদ করে যখন ফিরে এলাম, তখন দেখলাম সে (মৃত যুবকটি) বসে আছে।
অর্থাৎ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ইদরীস হযরত ইসমাঈল ইবনে আবী খালেদ থেকে বর্ণনা করেন, ক্বাসিম ইবনে আবদির রাহমান-এর পাঠদানকালীন সময়ে তাঁর নিকট ইয়াযীদ ইবনে নু’মান ইবনে বশীর তাঁর পিতা নু’মান ইবনে বশীরের একটি চিঠি নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হন। আর চিঠিটির ভাষ্য ছিল এই- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। নু’নাম ইবনে বশীর-এর পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ্র মাতা আবূ হাশেমের মেয়ের প্রতি, তোমার প্রতি সালাম, আমি ওই আল্লাহর নিকট তোমার শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এ মর্মে আমার নিকট চিঠি পাঠিয়ে আবেদন করেছ যে, আমি যেন তোমার প্রতি যায়দ ইবনে খারেজা সম্পর্কিত ঘটনাটি লিখে পাঠাই। ঘটনাটি নি¤œরূপঃ যায়েদ ইবনে খারেজা মদিনাবাসীদের মধ্যে সর্বাধিক শারীরিক দিক থেকে সুস্থ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একদিন তিনি তাঁর কণ্ঠনালীতে ভীষণ ব্যথা অনুভব করলেন এবং হঠাৎ তিনি জোহর ও আসরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে ইন্তিকাল করেন। তখন আমরা তাঁকে তাঁর পিঠের উপর চিৎ করে শয়ন করালাম এবং তাঁকে দু’টি চাদর ও একটি বস্ত্র দ্বারা আবৃত করে রাখলাম। অতঃপর আমি মাগরিবের নামাজের পর তাসবীহ্ পাঠ করছিলাম। ঠিক এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললেন, ‘‘যায়দ ইন্তিকালের পর কথা বলেছেন’’। তখন আমি তাড়াতাড়ি তাঁকে দেখতে গেলাম। সেখানে আগে থেকে অনেক আনসারী সমবেত হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম যে, তিনি (যায়দ) বলছিলেন অথবা তাঁর মুখে নি¤েœ বর্ণিত বাক্যগুলো ধ্বনিত হচ্ছিলঃ মধ্যবর্তী খলীফা (অর্থাৎ হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)। কেননা এ ঘটনা হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর খেলাফতকালে সংঘটিত হয়েছিল।) ছিলেন দৃঢ়-অবিচল ও শক্তিধর, যিনি আল্লাহ্ তা‘আলার খাতিরে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করতেন না। তিনি কোন শক্তিধরকে দুর্বলদের গ্রাস করার সুযোগ দিতেন না। তিনি আবদুল্লাহ্, আমিরুল মু’মনিন, সত্য সত্য, যা পূর্ববর্তী কিতাবে বিবৃত হয়েছে। অতঃপর তিনি (মৃত ব্যক্তিটি) বললেন, হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তিনি আমীরুল মো’মেনীন, যিনি অনেক অপরাধীকে মার্জনা করে থাকেন। দু’টি রাত অতিক্রান্ত হয়েছে এবং অবশিষ্ট আছে চারটি রাত। অতঃপর মানুষের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হবে এবং মানুষ একে অপরকে গ্রাস করতে থাকবে, ফলে থাকবে না কোন শাসন এবং বৈধ করে নেবে অবৈধকে ও ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে পড়বে মুসলমানরা। তারা বলতে থাকবে, এটা কিতাব ও তাক্বদীরের ফয়সালা। তিনি আরও বললেন, হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের আমীরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত হও এবং তাঁর নির্দেশ মান্য কর। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল সে নিশ্চয়তা পেল না তার জীবনের। আল্লাহর নির্দেশ নির্ধারিত। তোমাদের সকলের প্রতি সালাম। হে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা! আপনি কি মনে করেছেন আমি আপনার এবং উহুদের যুদ্ধে শাহাদতপ্রাপ্ত সা’দের দল বর্হিভূত? আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘না, কখনই নয়, এটাতো লেলিহান অগ্নি, যা গাত্র হতে চামড়া খসিয়ে দেবে। জাহান্নাম ওই ব্যক্তিকে ডাকবে, যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল। [সূরা আল মা‘আরিজ, আয়াত-১৬-১৮] কিছুক্ষণ পর তাঁর (মৃত ব্যক্তি) শব্দ থেমে গেল। তখন আমি আমার পূর্বে যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, মৃত ব্যক্তির নিকট আমার আসার পূর্বে তিনি আর কি কি বলেছেন? তখন তারা বললেন, আমরা হঠাৎ শুনতে পেলাম কে জানি আমাদেরকে বলছেন- মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর, কান পেতে শুন, তখন একজন অপরজনের দিকে তাকাচ্ছিল, তখন আমরা শুনতে পেলাম আওয়াজটি মূলতঃ কাপড়ের নিচ থেকে আসছে। আমরা তাঁর চেহারা থেকে যখন কাপড় সরালাম তখন তাঁকে নি¤œবর্ণিত বাক্যগুলো বলতে শুনলামঃ ‘এইতো হযরত আহমদ মুজতাবা রসূলুল্লাহ্, সালামুন আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। অতঃপর বললেন, হযরত আবূ বকর সিদ্দিক্ব, মহা সত্যবাদী, আমানতদার, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের খলীফা। যিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন শক্তিশালী। সত্য, সত্য। তিনি পূর্ববর্তী কিতাবে বর্ণিত ছিলেন।
অর্থাৎ: হযরত ইকরামা ইবনে ইবরাহীম হযরত আবদুল মালেক ইবনে ওমাইর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হাবীব ইবনে সালিম-এর নিকট একটি চিঠি পাঠ করেছি, যা নু’মান ইবনে বশীর খালেদের মাতার নিকট লিখেছিলেন। তিনি এতে লিখেছেন, ‘অতঃপর তুমি আমার নিকট জানতে চেয়েছিলে যায়দ ইবনে খারেজাহ্ সম্পর্কে, যিনি মৃত্যুর পর কথা বলেছিলেন, অতঃপর তিনি পূর্ব বর্ণিত ঘটনাটি বর্ণনা করলেন।
অর্থাৎ: ইমাম যুহরী প্রখ্যাত তাবে‘ঈ সা‘ঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একজন আনসারী ব্যক্তির মৃত্যুকালে উপস্থিত ছিলাম, যখন তিনি মারা গেলেন, তখন তাঁকে একটি চাদর আবৃত করে রাখা হলো তখন তিনি হঠাৎ করে বলে উঠলেনঃ হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আল্লাহ দ্বীনের ব্যাপারে শক্তিধর কিন্তু দেখতে দুর্বল। আর হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু অত্যন্ত আমানতদার এবং হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আনহু তাঁরা উভয়ের পথেই অবিচল আছেন। ন্যায় বিচার লোপ পেয়েছে, শক্তিশালীরা দুর্বলদের গ্রাস করছে।
অর্থাৎ: হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন যায়দ ইবনে খারেজা ইন্তিক্বাল করলেন, আনসারীগণ তাঁর গোসল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় লিপ্ত হয়ে গেলেন, এমনকি একটি অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হবার উপক্রম হয়ে গেল। পরবর্তীতে তারা সকলে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, তাঁকে কয়েকটি গোসল দেয়া হবে, প্রথম দু’বার গোসল দেবে মাইয়্যেতকে গোসলদাতারা। অতঃপর প্রত্যেক গোত্র প্রধান প্রবেশ করবেন এবং তারা তাঁর উপর কিছু কিছু পানি ঢালবেন আর তা হবে তৃতীয় গোসল। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, আমিও তাঁর নিকট প্রবেশকারীদের একজন ছিলাম। যখন আমরা তাঁর উপর পানি ঢালতে গেলাম তখন দেখলাম তিনি কথা বলছেন। তিনি বলছিলেন, দু’টি (বছর) অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, আর বাকী আছে চারটি (বছর)। এখন ধনীরা দরিদ্রদেরকে গ্রাস করতে থাকবে অতঃপর তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। থাকবে না কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ। আবূ বকর সিদ্দীক্ব ছিলেন বিনয়ী, ন¤্র, দয়ালু। (হযরত ওমর) কাফিরদের প্রতি কঠোর, আল্লাহর খাতিরে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করতেন না। আর হযরত ওসমান মু’মিনদের প্রতি অতি দয়ালু। তোমরা হযরত ওসমানের পথে থাক এবং তাঁর কথা শ্রবণ কর ও তাঁর আনুগত্য কর।’’ এ কথাগুলো বলতে বলতে তাঁর আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে আসল এবং এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে গেল। দেখলাম তাঁর রসনা নড়ছে; কিন্তু তাঁর শরীর শীতল ও প্রাণহীন হয়ে গেল।
অর্থাৎ: হাবীব ইবনে সালিম হযরত নু’মান ইবনে বশীর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, যায়দ ইবনে খারেজা একজন নেতৃস্থানীয় ও অভিজাত আনসারী ছিলেন। হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যখন হিজরত করেন, তখন তিনি তাঁর (যায়দ) গৃহে উঠেন এবং তার মেয়েকে শাদী করেন, ওই মহিলার পূর্ববর্তী স্বামীর নাম ছিল সা’দ। যায়েদের পিতা খারেজা এবং ভ্রাতা সা’দ ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি (যায়দ) দীর্ঘায়ু লাভ করেন। তিনি হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা-এর খেলাফতকাল এবং হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর খেলাফতের প্রথম দুই বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তিনি একদিন মদীনা মুনাওয়ারার কোন একটি গলিতে হাঁটা-হাঁটি করছিলেন। তখন সময়টি ছিল যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়। হঠাৎ তিনি পড়ে গেলেন এবং ইন্তিকাল করে গেলেন। আনসারীগণ জানার পর তাঁরা তাঁকে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে ঢেকে দিলেন একটি কাপড় ও দু’টি চাদর দ্বারা। ওই দিকে তাঁর ঘরে মহিলারা ও পুরুষরা কান্নাকাটি করছিলেন আর তিনিও এ অবস্থায় ছিলেন। যখন মাগরিব ও এশা নামাযের মধ্যবর্তী সময় হলো তখন উপস্থিত সবাই একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন এবং কে যেন বলছিলেন, ‘চুপ থাকো।’ তখন সবাই সেদিকে তাকালে হঠাৎ শুনতে পান কেউ যেন বলছিলেন, ‘‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল, উম্মী (আসল ও মূল) নবী, সর্বশেষ নবী, যাঁর পরে কোন নবী নেই, যা পূর্ববর্তী কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, অতঃপর বললেন- সাদাক্বা অর্থাৎ সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন।’’ অতঃপর বক্তা আবার বলছিলেন, ‘‘হযরত আবূ বকর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খলীফা, যিনি সিদ্দীক্ব এবং অতি আমানতদার। যিনি শারীরিকভাবে হালকা-পাতলা ছিলেন, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার বিষয়ে ছিলেন কঠোর, দৃঢ়, যা পূর্ববর্তী কিতাবে বর্ণিত। অতঃপর বললেন, ‘‘সাদাক্বা, সাদাক্বা, সাদাক্বা’’। তিনি আবার বলছিলেন, ‘‘মধ্যবর্তী (হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) ছিলেন সাহসী, অনড় ও কঠোর, যিনি আল্লাহর বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করতেন না। তিনি শক্তিশালীদেরকে দুর্বলদের গ্রাস করার সেই সুযোগ দেননি। তিনি আল্লাহর অনুগত বান্দা। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আমিরুল মু’মিনীন, যা পূর্ববর্তী কিতাবে বর্ণিত ছিল।’’ অতঃপর বলছিলেন, সাদাক্বা, সাদ্াক্বা, সাদাক্বা। (সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন।) অতঃপর বললেন, ‘‘হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তিনি মু’মিনগণের আমীর, মু’মিনদের প্রতি দয়ালু, অনেক অপরাধ সত্ত্বেও মানুষকে ক্ষমা করে দেন, অতিক্রান্ত হয়ে গেল দু’টি রাত (তাঁর খেলাফতের দুই বছর) অবশিষ্ট আছে চার (চার বছর)। থাকবে না কোন নিয়ন্ত্রণ, বৈধ করে নেবে নিষিদ্ধ ও হারামকে। ক্বিয়ামত সন্নিকটে, মানুষ একে অন্যকে গ্রাস করতে থাকবে। অতঃপর সর্বশেষ মুসলমানরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এবং তারা বলতে থাকবে, ‘‘হে মানব সকল, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নির্দ্ধারিত হুকুম মেনে চল। তোমরা তোমাদের আমীরের দিকে আগমন করো, তাঁর কথা শুন এবং তাঁর আনুগত্য কর। কেননা তিনি তাঁর পূর্ববর্তীদের (খলিফাগণ) পথের উপর রয়েছেন। সুতরাং যারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে তারা নিরাপদ থাকবে না তাদের রক্তপাত থেকে। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ সুনির্ধিারিত ও অবধারিত। দুইবার একথা বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘এটি জান্নাত, এটি দোযখ। এ যে সম্মানিত নবী-রাসূল ও শহীদগণ উপস্থিত। বিশেষ করে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা। আপনাদের সকলের প্রতি সালাম। আমি অনুধাবন করছি আমার পিতা খারেজা এবং আমার ভাই সা’দকে, যাঁরা ওহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছেন।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘না, কখনই না, এতো লেলিহান শিখা, যা গাত্র থেকে চামড়া খাসিয়ে দেয়। জাহান্নাম তাকে ডাকবে…।’’ [সূরা মা‘আরিজ: আয়াত:১৬-১৮]
তিনি আবার বললেন? ‘‘এইতো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত। আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাততুহু।’’ নু’মান ইবনে বশীর বললেন, যখন শুনতে পেলাম যে, যায়দ ইবনে খারেজা তাঁর ইন্তিকালের পরে কথা বলছেন, তখন আমি মানুষের বেষ্টনী ভেদ করে তাঁর শিরে গিয়ে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কিছু কথা শুনতে পেলাম। তিনি বলছিলেন, ‘‘মধ্যবর্তী খলীফা হলেন অবিচল, দৃঢ়, শক্তিমান…।’’ এভাবে তাঁর কথা শেষ হয়ে গেল। তখন উপস্থিত লোকদের আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তিনি আমি আসার পূর্বে কি কি বলেছেন, তখন তারা আমাকে পূর্ববর্তী কথাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন।
অর্থাৎ: হযরত হোসাইন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওবায়দ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, মুসায়লামা কায্যাব (ভণ্ড নবী)-এর বিপক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হওয়া এক ব্যক্তি ইন্তিকালের পর কথা বলেছেন এবং বলেছেন, ‘‘হযরত মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর সিদ্দিক্ব, হযরত ওমর ও হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম বিনয়ী ও দয়ালু।
অর্থাৎ: হযরত রিব‘ঈ ইবনে হেরাশ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা তিন ভাই ছিলাম। আমাদের মাঝে যিনি মধ্যবর্তী, তিনি ছিলেন আমাদের মধ্যে সর্বাধিক ইবাদতপরায়ণ, রোযাদার এবং আমাদের সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আমি জিহাদে যাবার কারণে কিছু দিনের জন্য অনুপস্থিত ছিলাম। আমি যখন ফিরে এলাম, তখন আমাকে বলা হলো- তাড়াতাড়ি তোমার ভাইয়ের নিকট যাও; তিনি এখন মৃত্যু শয্যাশায়ী। তিনি বললেন, তখন আমি দ্রুত তার নিকট উপস্থিত হলাম। কিন্তু আমার যাবার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন এবং তাঁকে একটি কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখা হল। তখন আমি তার শিয়রে গিয়ে বসে কাঁদছিলাম। তিনি (আমার মৃত ভাই) তাঁর হাত দিয়ে নিজ চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে নিলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘‘আস্সালামু আলাইকুম’’ তখন আমি বললাম, ‘‘ভাই, মৃত্যুর পরে কি আবার জীবিত হওয়া যায়?’’। তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, নিশ্চয় আমি আমার রবের সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন দয়া ও করুণা সহকারে এবং সন্তুষ্টচিত্তে। তিনি আমাকে পরিধান করিয়েছেন সবুজ রংয়ের রেশমী কোমল পোশাক। আমি পরকালের বিষয় পেয়েছি তোমাদের ধারণার চেয়েও অধিক সহজ হিসেবে।’’ এ কথা তিনবার বলেছেন। ‘তাই তোমরা আমল করতে থাক এবং অলসতা করো না।’ একথাও তিনি তিনবার বলেছেন, ‘‘আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাক্ষাত পেয়েছি। আমি তাঁকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে আরয করলাম, হুযূর করীম যেন আমি না আসা পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করেন। তাই তোমরা তাড়াতাড়ি আমার কাফন-দাফন শেষ কর।’’ একথা বলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। পানিতে পাথর নিক্ষেপ করতে যে পরিমাণ সময় প্রয়োজন তার চেয়েও দ্রুত সময়ে তাঁর আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। বর্ণনাকারী বললেন, ‘‘তোমরা আমার ভাইয়ের তাড়াতাড়ি কাফন-দাফনের ব্যবস্থা কর।’’
অর্থাৎ: হযরত বির‘ঈ ইবনে হিরাশ বর্ণনা করেন, আমার এক ভাই মারা গেলেন। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বাধিক রোযাদার ও ইবাদতপরায়ণ ছিলেন। এমনকি গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহেও রোযা রাখতেন এবং রাত জেগে ইবাদত করতেন প্রচন্ড শীতের রাতেও। অতঃপর তাঁর ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিলেন এবং তার সাথে আরও সংযোজন করে বললেন, ‘‘এ ঘটনার খবর যখন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার নিকট পৌঁছল, তখন তিনি এ ঘটনাকে সত্যায়ন করে বলেছেন, ‘‘আমরা শুনে থাকতাম যে, এ উম্মতের মধ্যে এমন একজন হবেন, যিনি মৃত্যুর পর কথা বলবেন।’’
অর্থাৎ: হযরত আলী ইবনে ওবায়দুল্লাহ্ গাত্বফানী এবং হযরত ইবনে ইয়াযীদ বলেন, আমাদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, হযরত রিব‘ঈ ইবনে হিরাশ (বা খেরাশ) এ মর্মে শপথ করেছিলেন যে, তিনি এ জীবনে কখনও হাসবেন না এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি হাসবেন না যতক্ষণ না তিনি জানতে পারেন যে, তিনি জান্নাতে থাকবেন, না কি জাহান্নামে। তাই তিনি সারা জীবন এভাবে অতিক্রম করেছেন যে, কখনও কেউ তাঁকে হাসতে দেখেনি তাঁর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত। পূর্ববর্তী হাদীসের ন্যায় বর্ণনা পেশ করেছেন। তবে তিনি তাও বলেছেন যে, এ ঘটনার সংবাদ যখন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার নিকট পৌঁছালো তখন তিনি বলেছেন, বনূ আব্সের ভাই সত্য বলেছেন, আল্লাহ তাঁকে রহমত করুন! আমি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,‘‘আমার উম্মতের এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর কথা বলবে’’। তিনি শ্রেষ্ঠ তাবে‘ঈগণের একজন।
অর্থাৎ: হযরত বকর ইবনে মুহাম্মদ আল আবেদ হযরত হারেস আল গানাভী থেকে বর্ণনা করেন, হযরত রিব’ঈ ইবনে হেরাশ শপথ করেছেন যে, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁত দেখিয়ে হাসবেন না, যতক্ষণ না তিনি জানতে পারেন পরকালে তাঁর ঠিকানা কোথায় হবে। বর্ণনাকারী বলছেন, তাই তিনি কখনও অট্টহাসি দেননি; কিন্তু একমাত্র তাঁর মৃত্যুর পর। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর ভাই রিব‘ঈও একইভাবে শপথ করেছেন যে, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত অট্টহাসি দেবেন না যতক্ষণ না তিনি জানতে পারেন, তিনি কি বেহেশতে যাবেন, নাকি দোযখে হারেস আল গানাভী বলেন, তাঁকে গোসলদাতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, ‘‘আমরা যখন তাঁকে গোসল দিচ্ছিলাম তখন তিনি তাঁর খাটিয়াতে হাসছিলেন। এভাবে তাঁকে গোসল দেয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি হাসতে থাকেন।’’
অর্থাৎ: হযরত আবূ ‘আসিম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমার মামা সংজ্ঞাহীন হয়ে গেলেন এবং ইন্তিকাল করলেন। তখন আমরা তাঁকে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিই এবং পরবর্তীতে আমরা তাঁকে গোসল দিতে নিয়ে গেলাম ও গোসল দেয়া শুরু করলাম। ঠিক তখনই তিনি তাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে হঠাৎ বলতে লাগলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যু দিওনা যতক্ষণ না তুমি আমাকে তোমার পথে জেহাদ করার তৌফিক দান কর। বর্ণনাকারী বললেন, তিনি একথা বলতে বলতে জীবিত হয়ে গেলেন এবং পরবর্তীতে তিনি ‘বাত্তাল’-এর নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন।
অর্থাৎ: হযরত ওক্ববাহ্ ইবনে আম্মার আল ‘আবাসী হযরত মুগীরাহ্ ইবনে হায্ফ থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি রূবা বিনতে বীজান’ নামক মহিলার ঘটনা বলতে গিয়ে বলেন, রূবা একদিন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং মৃত্যুবরণ করলেন। তখন মহিলারা তাঁকে গোসল দিলেন এবং কাফন পরিধান করালেন। অতঃপর তিনি হঠাৎ নড়া-চড়া করতে করতে কাফন খুলে ফেললেন এবং উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, ‘‘তোমরা আমার কাছ থেকে এ মর্মে সুসংবাদ গ্রহণ করো যে, পরকাল সম্পর্কে তোমরা আমাকে যে ভয় দেখিয়েছিলে, আমি দেখলাম তা তার চেয়েও অধিক সহজ, আর আমি দেখতে পেলাম, জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং কোন মাদকাসক্ত ও কোন মুশরিক।
অর্থাৎ: যরত সুফিয়ান ইবনে ওয়ায়নাহ্ বলেন, আমি সালেহ্ ইবনে হাইকে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন, আমার এক প্রতিবেশী আমাকে জানালেন যে, এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর যখন তাঁর সামনে তাঁর আমলনামা পেশ করা হলো তখন তিনি তা দেখে বলতে লাগলেন, ‘‘আমি যে সমস্ত গুনাহ্ থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছি তিনি তা ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমি যে গুনাহ্ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করিনি তা ঠিক ওভাবেই রয়ে গেছে। তিনি বললেন- এমনকি আনারের ঐ দানাটিও, যা আমি রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে নিয়েছিলাম তার জন্যও আমার আমলনামায় একটি সাওয়াব লেখা হয়েছে। একদিন আমি রাতে নামায পড়তে ঘুম থেকে উঠলাম এবং আমি একটু বড় করে শব্দ করলাম, তথা আমার আওয়াজ শুনে আমার এক প্রতিবেশীও ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন এবং তিনিও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলেন। এ কারণেও আমার জন্য একটি সাওয়াব লেখা হয়েছে। আর একদিন আমি একজন মিসকীনকে একটি দিরহাম দিয়েছিলাম অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে এবং মূলত আমি তাকে এ দিরহাম দিয়েছিলাম মানুষদের দেখানোর জন্য। তাই আমি দেখলাম আমার এ দিরহামটি আমার জন্য বয়ে আনল না কোন পূণ্য, না কোন পাপ।
অর্থাৎ: হযরত শোয়াইব ইবনে সাফওয়ান হযরত আবদুল মালেক ইবনে ওমাইর থেকে বর্ণনা করেন এবং বললেন- কুফায় এক লোক ছিলেন, যিনি মৃত ব্যক্তির জন্য বিনা মূল্যে কাফন বিতরণ করতেন। এক ব্যক্তি মারা গেল শুনতে পেয়ে তিনি তার জন্য কাফনের কাপড় নিয়ে তার বাড়ীতে গেলেন এবং মৃত ব্যক্তির নিকট প্রবেশ করলেন। তখন মৃত ব্যক্তিটি একটি কাপড় দ্বারা আবৃত ছিল। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, মৃত ব্যক্তিটি স্বাস নিচ্ছে এবং তার চেহেরা থেকে কাপড় ফেলে দিয়ে বলতে লাগল, ‘‘লোকেরা আমাকে ধোঁকা দিয়েছে, আমাকে প্রতারিত করেছে, তারা আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আগুন, আগুন।’’ তখন আমরা তাকে বললাম, ‘‘তুমি লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্ বল।’’ তখন সে বলল, ‘‘তা আমি বলতে পারছিনা।’’ তখন তারা বললেন, ‘‘কেন?’’ সে বলল, ‘‘আমি হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে তিরস্কার করতাম, মন্দ বলতাম এবং গালি দিতাম, তাই আমি এ কালেমা পাঠ করতে পারছিনা।’’
অর্থাৎ: ওয়ালীদ ইবনে শুজা’ ইবনে ওয়ালীদ আস্ সাকুনী বলেন, আমার পিতা আমাদেরকে বলেছেন, হযরত খালাফ ইবনে হাওশব বলেন, ‘মাদায়েন শহরে এক ব্যক্তি মারা গেলেন এবং তাঁকে কাপড়াবৃত করা হলো, তখন কিছু লোক বিদায় হয়ে গেলেন আর কিছু লোক সেখানে থেকে গেলেন। এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তিটির কাপড় নড়ছে বা নাড়া দিচ্ছেন। যখন তাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরানো হলো তখন তিনি বলে উঠলেন- ‘মাদায়েনের এ মসজিদে এমন কতেক লোক আছে, যাদের দাড়িতে খেযাব লাগানো। তারা হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে লা’নত করে এবং তারা তাঁদের দু’জনের বিষয়ে তার্বার করে, অর্থাৎ তাঁদের দু’জনকে খলীফা হিসেবে গ্রহণ করেনা। যে সমস্ত ফেরেশতা আমার রূহ কব্জ করার জন্য এসেছেন তাঁদেরকে দেখলাম- তাঁরা ওই সমস্ত লোকের উপর লা’নত করছেন এবং তাদের থেকে নিজেদের দায়িত্ব গুটিয়ে নিচ্ছেন। তখন আমরা বললাম, ‘‘আপনি কি এ ধরনের কোন বদ আচরণের সাথে যুক্ত ছিলেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘আস্তাগফিরুল্লাহ্, আস্তাগ্ফিরুল্লাহ।’’ অতঃপর তিনি আবার এত দ্রুত ইন্তিকাল করলেন। মনে হচ্ছিল যেন কোন একটি পাথর, যা নিক্ষেপ করা হয়েছে। (অর্থাৎ খুব দ্রুত।)
অর্থাৎ: আবদুর রহমান মুহারেবী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত আবুল খসীব আমার নিকট বর্ণনা করেন এবং বললেন, আমি ‘জাযর’ নামক স্থানে বসবাস করতাম। আমি যখনি শুনতে পেতাম কোন মানুষ মারা গেছে তখন আমি তার জন্য কাফনের কাপড় নিয়ে যেতাম। তিনি বললেন, একদা এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, অমুক জায়গার এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার কাফনের কোন কাপড় নেই। তিনি বললেন, তখন আমি আমার এক বন্ধুকে বললাম, চলো আমাদের সাথে। যখন আমরা আসলাম তখন দেখতে পেলাম- কিছু লোক বসে আছে, আর মাইয়্যেত তাদের সামনে চাদর আবৃতাবস্থায় এবং তার পেটের উপর একটি ইট বা শক্ত মাটির বড় একটি টুকরা। আমি বললাম- কি হয়েছে তোমরা তাকে গোসল দিচ্ছনা কেন? তাঁরা বললেন- তার কাফনের কাপড় নেই। তখন আমাদের বন্ধুকে বললাম- যাও কাফনের কাপড় নিয়ে এসো এবং সে নিয়েও আসল। আমি তাদের সাথে বসে রইলাম। আমরা যখন উপবিষ্ট ছিলাম, ঠিক তখন দেখলাম- হঠাৎ মৃত ব্যক্তিটি লাফ দিয়ে উঠে গেল এবং ইট বা মাটির টুকরাটি ফেলে দিয়ে বসে গেল। আর সে বলতে লাগল, ‘‘আগুন, আগুন।’’ তখন আমি তাকে বললাম, ‘‘বল- লা-ইলা-হা ইল্লা-হ্।’’ সে বলল, এখন এ কলেমা আমার কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ্ ঐ কুফাবাসী মৌলভীর উপর লা’নত করুন, যে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে ও প্ররোচিত করেছে। যার ফলে আমি হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমাকে গালি দিয়েছি।’’ অতঃপর সে আবার মৃত হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, ‘‘আল্লাহ্র ক্বসম! আমি তাকে কাফন দেব না’’। ফলে আমি তাকে কাফনের কাপড় না দিয়েই ফিরে এসেছি। তিনি বললেন, ইবনে হুবাইরাহ্ আল্-আকবর আমার নিকট লোক পাঠিয়েছেন এবং তাঁর নিকট এ ঘটনাটি বর্ণনা করার অনুরোধ করেছেন। তাই আমি তাঁকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছি।
অর্থাৎ: খালাফ ইবনে খাদ্বীব বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন- আবুল খাদ্বীব বশীর আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আমি একজন স্বচ্ছল ব্যবসায়ী ছিলাম। আমি স¤্রাট কিসরার শাসানধীন (পারস্য সা¤্রাজ্যের) মাদায়েন নামক শহরে বসবাস করতাম। আর এ সময়টি ছিল মাদায়েনের শাসক হুবাইরার শাসনামলের মহামারীর সময়কাল। তখন আমার নিকট আশরাফ নামক আমার এক কাজের লোক এসে বলল- মাদায়েনের অমুক মহল্লার জনৈক লোক মারা গিয়েছে। তার কাফনের কোন কাপড় নেই। তখন আমি আমার বাহনে আরোহণ করে ওই মহল্লায় গেলাম। আমি গিয়ে দেখলাম এক মৃত ব্যক্তি, তার পেটের উপর একটি ইট বা শুকনো মাটির একটি বড় ঢিলা, আর তার চতুর্থপাশে তার প্রিয়জনরা বসে আছে এবং তারা ওই মৃত ব্যক্তির ইবাদত-বন্দেগী ও শান-মান বর্ণনা করছে। তখন আমি তার জন্য কাফনের কাপড় খরিদ করতে লোক পাঠালাম এবং কবর খননকারীদেরকে কবর খনন করতে নিয়োগ করলাম। তার জন্য কবর খনন করা হলো, আর আমরা তাকে গোসল দেয়ার জন্য পানি গরম করছিলাম। এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তি হঠাৎ লাফ দিয়ে তার পেটের উপর থেকে ইট কিংবা ঢিলটি ফেলে দিল এবং সে নিজের জন্য ধ্বংস ও হতাশা ডাকছিলো। কিছু লোক তা দেখে তার নিকট থেকে সরে দাঁড়াল। তখন আমি নিকটে গিয়ে তার বাহুকে শক্ত করে ধরলাম এবং বললাম- কি হয়েছে? কি দেখেছ? তখন সে উত্তরে বলতে লাগল, ‘‘কুফার এক শায়খ (মৌলভী)’র সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল সে আমাকে তার ধর্ম (শিয়া ধর্ম) ও তার দলে প্রবেশ করালো এবং তাদের পথভ্রষ্ঠতা অনুযায়ী আমাকে দিয়ে হযরত আবূ বকর ও হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমাকে গালি দেওয়াতো এবং তাঁদের খেলাফতকে অস্বীকার করাতো।’’ তখন আমি তাকে বললাম- আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং এ কাজটা আর করবে না। তখন সে বলল, ‘‘এখন তা (ক্ষমা প্রার্থনা) আমার কোন কাজে আসবে না। এ কারণে আমাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হলো এবং তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। আর আমাকে বলা হলো, তুমি তোমার ওই (শিয়া) বন্ধুদের নিকট গিয়ে এ কথাগুলো বলে আবার তোমার পূর্বের (মৃত্যু) অবস্থায় ফিরে এসো।’’ বর্ণনাকারী বললেন, আমি জানিনা সে তার সব কথা বলতে পেরেছে কিনা, না কি সে এর পূর্বেই মৃতাবস্থায় ফিরে গেল। তখন আমি বাজার থেকে কাফন আনার অপেক্ষা করছিলাম। আর যখন তা আনা হলো তখন আমি এ কাফনটি নিয়ে নিলাম এবং বললাম, ‘‘তাকে আমি কাফনও দেবনা, গোসলও দেবনা, তার জানাযাও পড়াবনা’’। অতঃপর আমি ফিরে গেলাম। আর আমি শুনতে পেলাম যে, তার নিকট উপস্থিত যারা ছিল তারাই তার গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেছে। আরেক দল মৃত ব্যক্তির এ অবস্থা দেখে তারাও আমার সাথে ওই স্থান ত্যাগ করেছে। খালাফ বললেন, আমি বললাম, ‘‘হে আবুল খাদ্বীর, যে ঘটনাটি তুমি আমাদেরকে বললে তা কি তোমার উপস্থিতিতেই সংঘটিত হয়েছে?’’ উত্তরে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, অবশ্যই, আমার চক্ষুযুগল দেখেছে এবং আমার কর্ণযুগল শুনেছে।’’ খালাফ বললেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, তখন তারা সকলেই একই কথা বলেছেন।’’
অর্থাৎ: আলী ইবনে মুহাম্মদ খালাফ ইবনে তামীম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হযরত সুফিয়ান সাওরী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ বিষয়ে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছেন এবং তা সত্যায়ন করেছেন।
অর্থাৎ: মুজালিদ হযরত আমের থেকে বর্ণনা করেন এবং বললেন, একদিন আমি হযরত জুহাইনাহ্ গোত্রের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌঁছলাম। দেখলাম এক বৃদ্ধ লোক তাদের আঙ্গিনায় বসে আছেন। তখন আমি তাঁর নিকটে গিয়ে বসলাম। তখন তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, জাহেলী যুগে আমাদের এক ব্যক্তি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লো। তখন আমরা তাকে একটি কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখলাম এবং আমরা ভেবেছিলাম সে মারা গেছে। তাই তার কবর খনন করার নির্দেশ দিলাম। এমতাবস্থায় আমরা তার নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ উঠে বসে গেল এবং বলল, ‘‘আমি আমার সংজ্ঞাহীন অবস্থা থেকে ফিরে এসেছি। আমাকে বলা হলো-‘তোমার মা নির্বোধ। তুমি কি দেখছনা তোমার জন্য কবর খনন করা হচ্ছে এবং তোমার মা সন্তানহীন হবার উপক্রম হয়েছে? তুমি দেখেছ আমরা তাকে খুব কষ্টে তোমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নিয়েছি। তোমার কবরে বাঁশ ও খড়কুটা বিছিয়েছি, যা হচ্ছে নিয়ম-প্রথা ও আবশ্যক। তুমি শোকর আদায় করছো তোমার রবের এবং তাঁর জন্য নামায পড়ছো? পরিত্যাগ করছো মুশরিক ও পথভ্রষ্টদের?…’’ সবাই যখন তাকে দেখতে গেল, দেখা গেল সে মৃত। পরে তাকে ওই খননকৃত কবরে দাফন করা হলো। ঘটনা বর্ণনাকারী বৃদ্ধ লোকটি দীর্ঘায়ু লাভ করেছিল এবং ইসলামের যুগ পেয়েছেন ও ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ: হযরত মুজালিদ শা’বী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমাকে জুহাইনা গোত্রের এক বৃদ্ধ বলেছেন, অতঃপর ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তিনি বললেন- আমি জুহাইনা গোত্রীয় ওই বৃদ্ধকে দেখেছি- তিনি নামায পড়ছেন এবং মূর্তি-প্রতিমাকে গাল-মন্দ করছেন।
অর্থাৎ: হযরত আবূ খালিদ শা’বী থেকে বর্ণনা করেন, জুহাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ল। আর ঘটনাটি ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের। তার পরিবারের লোকেরা মনে করল- সে মারা গেছে। তখন তার কবর খনন করা হলো। অতঃপর ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ দিলেন। এ কবিতার একাংশ বাড়িয়ে বর্ণনা করা হলো, আর তা হলো, – ‘‘তুমি কি ঈমান এনেছ প্রেরিত রাসূলের প্রতি?’’
অর্থাৎ: হযরত যায়দ ইবনে আসলাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একদিন গমন করছিলেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলো। লোকটির কাঁধে ছিল তার একটি ছেলে। তাদের দেখে হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, কাকের সাথে কাকেরও এভাবে মিল বা সাদৃশ্য দেখিনি, যেভাবে বাবার সাথে তার ছেলের সাদৃশ্য রয়েছে। তখন লোকটি বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! তার মা মৃত অবস্থায় ছেলেটিকে জন্ম দিয়েছে। হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, কি বললে? কিভাবে? লোকটি বলল, আমি অমুক অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় তার মা ছিল গর্ভবর্তী। তার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমি বলেছিলাম, ‘‘তোমার পেটে যে সন্তান রয়েছে তাকে আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট আমানত রাখলাম।’’ যখন আমি সফর থেকে ফিরে আসি, তখন শুনতে পেলাম আমার স্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন এবং তাকে জান্নাতুল বক্বী’তে দাফন করা হয়েছে। একদিন রাতে আমি আমার এক চাচাত ভাইয়ের সাথে বক্বী’ কবরস্থানে বসে আছি। হঠাৎ দেখলাম কবরের মধ্যে বাতির ন্যায়-সমুজ্জ্বল একটি আলো উদ্ভাসিত হয়েছে। তখন আমি আমার চাচাত ভাইকে বললাম, এটা কি? তারা বলল, ‘‘জানিনা। কিন্তু আমরা প্রত্যেক রাতে এ আলোটি অমুক মহিলার কবরের উপর দেখতে পাচ্ছি।’’ তখন আমি একটি শাবল নিয়ে কবরের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি কবরটি খোলা, আর দেখতে পেলাম ছেলেটি তার মায়ের কোলে বসে আছে। তখন অদৃশ্য থেকে কেউ আমাকে ডেকে বলল, ‘‘হে স্বীয় রবের নিকট আমানত হিসেবে ন্যস্তকারী বান্দা, তুমি তোমার আমানত গ্রহণ কর। যদি তুমি তার মাকেও আল্লাহর নিকট আমানত রাখতে, তাহলে তাকেও তুমি জীবিত পেয়ে যেতে।’ তখন আমি বাচ্চাটিকে কোলে নিলাম, ওদিকে সাথে সাথে কবরটি বন্ধ হয়ে গেল। আবু জা’ফর বলেন, আমি হযরত ওসমান ইবনে যুফরকে এ ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘‘এ ঘটনাটি আমি হযরত আসিমের নিকট শুনেছি।’’
অর্থাৎ: হযরত সুফিয়ান ইবনে ওয়ায়নাহ্ দাউদ ইবনে শাবূর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ ক্বাযা‘আহ্ নামক এক বসরার অধিবাসী এবং আরও অনেক বসরাবাসী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বা তারা বলেন, আমাদের ও বসরার মধ্যকার জলসীমা দিয়ে আমরা অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় শুনতে পেলাম গাধার ডাকের ন্যায় একটি কর্কশ আওয়াজ। তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম, গাধার এ ডাকটি কি এবং কেন? তারা বললেন, ‘‘এটি আমাদের এক ব্যক্তি যখনি তার মা তার সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে চাইত তখন সে তার মাকে বলত, ‘‘তুমি গাধার মতো চিৎকার করতে থাক।’’ এক ব্যক্তি বললেন, তখন তার মা তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, ‘‘আল্লাহ্ তোমাকে গাধা বানিয়ে দিন!’’ আর যখন সে মারা গেল তখন থেকে প্রত্যেক রাতে তার কবর থেকে এ আওয়াজটি শুনতে পাওয়া যায়। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)
অর্থাৎ: আওয়াম ইবনে হাওশাব হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হজ্বের উদ্দেশ্যে রাওনা হলাম। পথিমধ্যে আমাকে চমকে দিল একটি গাধা। সেটা যমীন থেকে তার ঘাড়টি বের করে আমার সামনে তিনবার ডাক দিল এবং আবার মাটির ভিতরে চলে গেল। আমি যখন ওই গোত্রের নিকট আসলাম, তখন তারা আমার চেহারা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো- কি হয়েছে, আপনার চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল কেন? তখন আমি তাদের নিকট এ ঘটনা খুলে বললাম। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জানেন ওই গাধারূপ লোকটি কে? আমি বললাম, ‘‘না’’। তখন তারা আমাকে বলল, সে এ এলাকারই একজন যুবক। আর ওই ঝুপড়িতে অবস্থানকারী মহিলাটি হলেন তার মা। মা যখন যুবকটিকে কোন কিছুর নির্দেশ করতেন তখন সে মাকে গালি-গালাজ করত এবং বলত, ‘‘তুমি একটা নিছক গর্ধভ।’’ আর তার মুখের সামনে গাধার ন্যায় গর্জন করত এবং অট্টহাসি দিতো- হা, হা, হা। আর যখন যুবকটি মৃত্যুবরণ করলো তখন তাকে আমরা ওই জঙ্গলে দাফন করে দিয়েছি। যেদিন তাকে দাফন করেছি সেদিন থেকে প্রতিদিন তার দাফনের সময়টিতে নিজ কবর থেকে স্বীয় মস্তক বের করে তার মায়ের ওই ঝুপড়ির দিকে তিনবার সজোরে গাধার মত ডাক দিয়ে আবার কবরে ফিরে যায়। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)
অর্থাৎ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আবূ হোযাইল বলেন, জনৈক ব্যক্তি ছিল, তার সাথে যখন তার মা কথা বলতেন, তখন সে তার মায়ের মুখের সামনে গাধার ন্যায় তিনটি ডাক দিত এবং মাকে বলত, ‘‘নিশ্চয় তুমি একটি গাধা।’’ যখন লোকটি মারা গেল এবং তাকে দাফন করা হলো, তখন সে প্রতিদিন আসরের নামাযের পর (যে সময়ে তাকে দাফন করা হয়) তার কবর থেকে বের হয়ে আসে। বের হয়ে আসার সময় তার মাথা থেকে বুক পর্যন্ত গাধার আকৃতি থাকে এবং নিচের অংশ মানুষের ন্যায় থাকে। আর সে গাধার ন্যায় তিনটি সজোরে চিৎকার দিয়ে আবার তার কবরে ফিরে যায়।
অর্থাৎ: হযরত ইসমাঈল ইবনে আবূ খালেদ, শা’বী থেকে বর্ণনা করেন, ইয়ামন থেকে একদল লোক আসল স্বেচ্ছায় আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে। তাদের একজনের একটি গাধা মারা গেল। তখন তার সঙ্গীরা তাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু লোকটি তাদের সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানাল। লোকটি ওযু করে নফল নামায আদায় করল এবং আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ফরিয়াদ করে বলছিল, ‘‘হে আল্লাহ্! আমি কবর থেকে ওঠে এসেছি তোমার রাস্তায় জেহাদ করার উদ্দেশ্যে এবং তোমার সন্তুষ্টি কামনায়। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় তুমি জীবিত করে থাক মৃতকে, পুনরুত্থিত কর কবরবাসীকে। তাই আমার উপর তুমি ছাড়া অন্য কারও অনুগ্রহ আমি চাই না। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তুমি যেন আমার একমাত্র বাহন এ মৃত গাধাকে জীবিত করে দাও।’’ অতঃপর লোকটি গাধাটির উপর আঘাত করলে গাধাটি জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো এবং তার দুই কান নাড়া দিলো। তখন লোকটি গাধাটির উপর বসার আসন স্থাপন করলো এবং লাগাম লাগিয়ে তার উপর বসে দ্রুত গিয়ে তার সঙ্গী-সাথীদের নিকট পৌঁছে গেলো। তখন তারা জিজ্ঞেস করল, তোমার কি অবস্থা? বলল, আমার অবস্থা হলো আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য আমার গাধাটিকে পুর্নজ্জীবিত করে দিয়েছেন। শা’বী বলছেন- আমি এ গাধাটিকে কুনাসাহ্ নামক জায়গায় বিক্রি করতে দেখেছি।
অর্থাৎ: হযরত মুসলিম ইবনে ইবনে আবদুল্লাহ্ শারীক আন্ নাখ‘ঈ বললেন, ‘ওই গাধার মালিক ছিল নাখ‘ঈ গোত্রের এক ব্যক্তি। তার নাম হলো- নুবাতা ইবনে ইয়াযীদ। তিনি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব-এর খেলাফতকালে জেহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, তিনি যখন শান্নে ‘আমীরাহ্ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন তাঁর আরোহনের একমাত্র গাধাটি মারা গেল। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ দিলেন। তবে তিনি এতে আরও কিছু সংযোজন করে বলেছেন, কান্নাসা নামক স্থানে গাধাটি বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন তাঁকে কেউ প্রশ্ন করল- তুমি এমন গাধাটিকে বিক্রি করে দিচ্ছ যেটিকে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার খাতিরে জীবিত করে দিয়েছেন? তিনি বললেন, তাহলে কি করবো? তাঁর দলে উপস্থিত এক ব্যক্তি তিনটি লাইনের একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন। আমি নি¤েœাক্ত চরণ বা শ্লোকটি মনে রাখতে পেরেছি- ‘আমাদের মাঝে এমনও কেউ আছেন, যার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা গাধাকে জীবিত করে দিয়েছেন, যখন এটির প্রতিটি অংশ ও জোড়াগুলো মৃত্যু বরণ করল।’
অর্থাৎ: হযরত সা‘ঈদ ক্বরশী হযরত আভী আবূ আব্দুল্লাহ্ শামী থেকে বর্ণনা করেন এবং বলেন, আমরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলাম এবং আমরা সৈন্য ঘাটি স্থাপন করলাম। তখন আমাদের একটি দল শত্রুদের পিছু ধাওয়া করছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁদের দুইজন আলাদা হয়ে গেলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, যখন আমরা দলচ্যুত অবস্থায় ছিলাম, তখন হঠাৎ এক রোমান বৃদ্ধ আমাদের সম্মুখে এলো। সে একটি গাধায় আরোহণরত ছিল। গাধাটির উপর ছিল বসার জন্য যিন্ বা আসন। যখন বৃদ্ধটি আমাদেরকে দেখল, তখন সে তরবারী উম্মুক্ত করে আমাদের দিকে অগ্রসর হল এবং আমার সহপাঠীর গাধার উপর আক্রমন করে গাধাটিকে মাটিতে ফেলে দিল। অতঃপর বৃদ্ধটি আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কি করেছি তা তোমরা ভালভাবে দেখেছ। আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তাহলে তোমরা আমার সাথে লড়তে এসো। তখন আমরা কিছুক্ষণ তার সাথে যুদ্ধ করলাম এবং আমাদের একজন শাহাদত বরণ করে নিলেন। তখন সে আমাকে বলতে লাগল- তোমার সঙ্গীর কি পরিণতি হয়েছে তা তুমি দেখেছ। বললাম, হ্যাঁ। তখন আমি আমাদের মূল দলের সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমি নিজেকে বলছিলাম, ‘‘হতাশা আমার জন্য, আমার সঙ্গী আমার পূর্বে শহীদ হয়ে বেহেশতে চলে গেল আর আমি আমার দলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছি।’’ তখন আমি আবার ফিরে গোলাম এবং আমার বাহন থেকে নেমে আমার তলোয়ার ও ঢাল হাতে নিয়ে ওই বৃদ্ধের দিকে অগ্রসর হলাম এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলাম; কিন্তু আঘাতটি লক্ষ্যচ্যুত হলো, সেও আমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করল। তাও লক্ষ্যচ্যুত হল। তখন আমি তরবারি ফেলে দিয়ে তাকে চেপে ধরলাম। সে আমাকে কাঁধের উপর তুলে মাটিতে ফেলে দিয়ে আমার বুকের উপর চেপে বসল এবং সে কোন একটা কিছু বের করছিল আমাকে হত্যা করার জন্য। এমন সময় দেখলাম আমার শাহাদতবরণকারী সঙ্গীটি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে লোকটির চুল ধরে আমার বুক থেকে সরিয়ে নিল এবং আমরা দুইজনে মিলে লোকটিকে হত্যা করলাম। অতঃপর তার মালামালগুলো গণীমত হিসেবে নিয়ে নিলাম এবং আমরা কথা বললে বলতে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। ঠিক তখন দেখলাম আমার ওই শহীদ বন্ধুটি আবার তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল এবং শহীদে রূপান্তরিত হয়ে গেল। তখন আমি আমার দলের লোকদেরকে এ বিষয়ে খবর দেয়ার পর তারা সকলে এসে শহীদ ব্যক্তিটিকে ওই জায়গায় শাহাদত প্রাপ্তাবস্থায় দেখতে পেলেন।
অর্থাৎ: হযরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ্ তার পিতা আবদুল্লাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন, আমি একদা সফরের উদ্দেশ্যে রাওনা দিলাম। আবূ ইয়াহ্য়া মাদানী, প্রকাশ আবূ বকর ঠিক এভাবে বর্ণনা করেছেন, কুলসূম ইবনে জাওশান আল ক্বুশাইরী বলেন, আমি একদা জাহেলী যুগের একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে গমন করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি কবর থেকে বের হয়ে আসল। তার গায়ে আগুন জ্বলছিলো এবং তার ঘাড়ে আগুনের একটি শিকল। আর আমার হাতে একটি পানির মশক ছিল। লোকটি যখন আমাকে দেখে বলল, হে আবদুল্লাহ্! আমাকে পানি পান করাও। তখন আমি মনে মনে বলছিলাম, লোকটিতো আমাকে চিনতে পেরেছে এবং আমার নাম ধরে ডাক দিয়েছে, আমি দেখলাম তার পরপর কবর থেকে আরেকজন লোক উঠে এসে আমাকে বললো, ‘‘হে আবদুল্লাহ্! তুমি তাকে পানি পান করিওনা।’’ কারণ সে কাফির তারপর তাকে আগুনের শিকল ধরে টানদিয়ে কবরে নিয়ে গেল। তিনি বললেন, আমি এ রাতে এক বৃদ্ধ মহিলার ঘরে মেহমান হয়ে উঠলাম, মহিলাটির ঘরের পাশে ছিল একটি কবর। তখন আমি এ কবর থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম এবং সে বলছিল, ‘‘প্র¯্রাব, প্র¯্রাব, পানির মশক, পানির মশক!’’ আমি বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? মহিলা বললেন, এলোকটি আমার স্বামী, সে যখনি প্রশ্রাব করতো প্রশ্রাবের ছিটকা থেকে কাপড় চোপড়কে রক্ষা করত না এবং পবত্রিতা অর্জন করত না। আমি তাকে বললেও সে শুনত না। তাই সে যে দিন মারা গেছে সে দিন থেকে ‘প্র¯্রাব প্র¯্রাব’ বলে চিৎকার করছে। মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে পানির মশকের বিষয়টি কি? মহিলা বললেন, এক পিপাসার্ত ব্যক্তি তার কাছে এসে পানি চেয়েছিল। তখন সে বলল, এইতো মশক। কিন্তু মশকে পানি ছিল না, আর পিপাসার্ত লোকটি পিপাসায় মারা গেল। এ কারণে আমার স্বামী যেদিন মারা যায় সে দিন থেকে সে এভাবে ‘মশক, মশক’ বলে চিৎকার করছে। আমি যখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র দরবারে এসে এ ঘটনাটি বললাম তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কাউকে একা সফর করতে নিষেধ করেছেন।
অর্থাৎ: হযরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন, একদিন আমি হজ্ব বা ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলাম, যখন আমি রুওয়াইসা নামক স্থানে পৌঁছলাম এবং ক্লান্ত হয়ে গেলাম তখন আমি পানির নিকট আসলাম এবং আমার বাহনকে (পশু) পানি পান করালাম ও আমার পানির মশক ভর্তি করালাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে কূপের আশে-পাশে বসবাসকারীরা আমার নিকট জড়ো হল এবং আমাকে নানা প্রশ্ন করতে লাগল। তখন তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি বললেন- লোকটিকে ছেড়ে দাও, সে খুবই ক্লান্ত। ফলে সবাই আমাকে ছেড়ে দিল। আমি ক্বেবলার দিকে কতগুলো কবরের পাশ দিয়ে গমন করছিলাম। তখন আমার সামনে কবর থেকে একলোক বের হয়ে আসল। তার ঘাড়ে আগুনের একটি শিকল দাউ দাউ করে জ্বলছিলো এবং শিকলের অন্য পাশটি এক ব্যক্তির হাতে ধারণকৃত। এ ভীতিকর অবস্থা দেখে আমার বাহনটি ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় শিকল পরিহিত লোকটি ডেকে ডেকে বলছিল, ‘‘হে আবদুল্লাহ্! আমাকে পানি পান করাও।’’ তখন অন্য লোকটি বলতে লাগল, ‘‘হে আবদুল্লাহ্! তাকে পানি পান করিও না।’’ বর্ণনাকারী বললেন, আমি জানিনা সে কি আমার নাম জানে নাকি স্বাভাবিকভাবে অপরিচিত একজন অপরজনকে ডাকার সময় যেভাবে বলে থাকে, ‘হে আল্লাহর বান্দা’ তাই বলছিল। যখন আমি পেছন দিকে ফিরে তাকালাম দেখলাম, তখন অপর লোকটি তাকে টেনে কবরে নিয়ে যাচ্ছে, আর সে সেখান থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা করছে এবং লোকটি তাকে প্রহার করছে।
অর্থাৎ: হযরত সোলায়মান ইবনে বেলাল বললেন, আমি আত্বা আল-খোরাসানীকে বলতে শুনেছি, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি চল্লিশ বছরকাল যাবৎ বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছে। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তখন সে তার সন্তানদের বলল, ‘‘আমার ধারণা আমি এ রোগেই মৃত্যুবরণ করব। যদি আমি মারা যাই, তবে তোমাদের নিকট আমাকে চার বা পাঁচ দিন রেখে দেবে (দাফন না করে), যদি আমার কোন বিষয়ে তোমাদের সন্দেহ হয়, তখন তোমরা আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবে।’’ সুতরাং যখন সে মারা গেলো তখন তাকে একটি ‘তাবূত’ বা কাঠের বক্সে রাখা হলো। তৃতীয় দিনে তার মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলো। তখন এক ব্যক্তি তাকে ডেকে বলল, ‘‘হে অমুক! এ দুর্গন্ধ কিসের?’’ তখন তাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হলো আর সে কথা বলতে শুরু করল এবং বলল, ‘‘আমি চল্লিশ বছর বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময়ের কোন বিচার নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু একদা দুই ব্যক্তি (বাদী ও বিবাদী) একটি মামলা নিয়ে আমার নিকট আসলে তাদের মধ্যে একজনকে আমি একটু পছন্দ করতাম। তাই আমি তার কথাগুলো খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম; কিন্তু অপরজনের কথাগুলো ঠিকভাবে শুনিনি। এ দুর্গন্ধ আমার ওই ভুলের কারণেই বের হচ্ছে।’’ অতঃপর তার কানে প্রচন্ড জোরে আঘাত করা হলে সে আবার মারা গেলো।
অর্থাৎ: হযরত কাসীর ইবনে ইয়াহ্ইয়া ইবনে কাসীর মুয়াম্মার আলআম্মী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম। তার নাম ছিল আব্বাদ। আর ঘটনাটি ছিল ৬৬ হিজরীর। একটু পরে লোকটি মারা গেলে লোকেরা বলতে লাগল, সে মারা গেছে, আবার কেউ বলল, তাঁর রূহ ঊর্ধ্বজগতে গমন করেছে। ঠিক এমন সময় লোকটি বলে উঠল, ‘‘আমার মা-বাবা, তোমরা কোথায়? তোমাদের উভয়কে খুব মিস করছি, তোমাদের শূন্যতা অনুভব করছি।’’ অতঃপর সে তার চক্ষুযুগল খুলল। আমরা বললাম, আমরা মনে করেছি তুমি মারা গিয়েছ। সে বললো, আমি দেখতে পেলাম ফেরেশতারা মানুষের মাথার উপর দিয়ে বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করছে। তাদের মধ্যে একজন ফেরেশতা বলছে, ‘‘হে আল্লাহ্! ক্ষমা করে দাও তোমার ওই সব বান্দাদেরকে, যাদের চুল এলোমেলো, শরীর ধূলিময় এবং যারা এসেছে দূর-দূরান্তর থেকে’’। তখন উত্তরে অন্য ফেরেশতারা বললো, ‘‘নিশ্চয় তাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে।’’ আবার আরেক ফেরেশতা বললেন, ‘‘হে মক্কাবাসীরা! যদি তোমাদের নিকট কোন মানুষ না আসত তাহলে আমি এ দুই পাহাড়ের মধ্যখানে আগুন লাগিয়ে দিতাম।’’ অতঃপর লোকটি বললেন, আমাকে উঠাও, তখন তাকে উঠিয়ে বসানো হল। সে বলল, ‘‘হে ছেলে! যাও সবার জন্য ফল-ফলাদি নিয়ে এসো।’’ আমরা বললাম, ‘‘না, প্রয়োজন নেই।’’ বর্ণনাকারী বলছেন, তখন একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, সে যেভাবে বলছে, সত্যি যদি সে ফেরেশতাদের দেখে থাকে, তাহলে সে আর বাঁচবে না। অতঃপর আমরা তার হাত দুটো একত্রিত করে তাকে শোয়ালাম সাথে সাথে সে আবার মারা গেলো।
অর্থাৎ: আমর ইবনে খালেদ আল আসাদী বর্ণনা করেন, দাঊদ ইবনে আবূ হিন্দ বলেন, একদা আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং ধারণা করলাম এ রোগেই আমার মৃত্যু হবে। আমার ঘরের দরজা ছিল সরাসরি আমার বেড রুমের দিকে। তখন আমি দেখতে পেলাম এক ব্যক্তি আমার ঘরের দিকে আসছে। তার সুবিশাল দেহ, বিরাট স্কন্ধ, কুচকুচে কাল। দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন যুত্ব্ নামক (নিগ্রো) গোত্রের। যখন তাকে নিকট থেকে দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম তিনি মালাকুল মাওত। তখন আমি ‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজে‘ঊন’ বলতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম, আমার রূহতো তিনি কবজ করেই ফেলবেন, আর আমি কাফির অবস্থায় মারা যাব। সে বললো, আমি শুনেছি যে, কাফিরদের রূহ কব্জ করে কাল ফেরেশতা। এমতাবস্থায় আমি শুনতে পাচ্ছি ঘরের ছাদ অপসারিত হবার শব্দ এবং তা খুলেও গেল। ফলে আমি আসমান পর্যন্ত দেখতে পেলাম। দেখলাম, সাদা পোশাকধারী এক ব্যক্তি আমার নিকট উপস্থিত হলো এবং কিছুক্ষণ পর আরেকজন। তারা উভয়ে মিলে এমন জোরে হুংকার দিল যে, কালো লোকটি ভয়ে পিছু হটে গেলো এবং সে দূর থেকে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছিল। আর উভয়ে মিলে তাকে ধমক দিচ্ছিলো। অতঃপর তাদের একজন আমার শিয়রে এবং অপরজন আমার পায়ের নিকট বসল। শিয়রের দিকের লোকটি পায়ের দিকের লোকটিকে বলল, তার পা ‘‘স্পর্শ করো’’। তখন সে আমার পায়ের পাতা স্পর্শ করে বললো, তাকে খুববেশী নামাজের দিকে যাতায়াতকারী মনে হচ্ছে। আবার পায়ের দিকের লোকটি মাথার দিকের লোকটিকে বলল, স্পর্শ করো, তখন লোকটি আমার ঠোঁট ও জিহবায় হাত দিয়ে বলল, তার রসনা সদা আল্লাহ্ তা‘আলার যিকরে সিক্ত। অতঃপর উভয়ে পরস্পর বলতে লাগলো, তার এখনও সময় আসেনি, এরপর আবার ছাদ খুলে গেলো এবং তারা উভয়ে বের হয়ে গেলো ও ছাদ ঠিক আগের অবস্থায় ফিরে গেলো।
অর্থাৎ: হযরত আবদুল করীম ইবনে হারেস আল হাদ্ব্রামী বর্ণনা করেন, হযরত আবূ ইদরীস আল মদীনী বলেন, আমাদের নিকট এক মদীনাবাসী আসলেন। তাঁর নাম ছিল যিয়াদ। আমরা একসাথে রোমের ‘মিক্বিল্লি’ নামক স্থানে যুদ্ধ করছিলাম, শহরটিকে আমরা অবরোধ করে রাখলাম। আমি, যিয়াদ এবং অন্য এক মদিনাবাসী আমরা তিন বন্ধু মিলে অন্যদের সাথে একদিন অবরোধে ছিলাম, আমাদের একজনকে পাঠালাম খানা নিয়ে আসার জন্য। হঠাৎ তার খুব নিকটে একটি কামানের গোলা এসে পড়ল। সেটার বিক্ষিপ্ত একটি টুকরা তাঁর হাঁটুতে এসে আঘাত করলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো। তাকে আমি টেনে নিয়ে আসছিলাম এবং আমার সঙ্গীকেও ডাক দিলাম। সেও আসলো। আমরা দু’জন মিলে তাঁকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলাম। আমরা এভাবে দিনের প্রথমাংশ কাটিয়ে দিলাম; কিন্তু সে কোন ধরনের নড়াচড়া করছে না। অতঃপর হঠাৎ সে এমনভাবে হেসে উঠল যে, তাঁর দাঁতগুলো দেখা গেলো। আবার কিছুক্ষণ নিস্তেজ হয়ে রইলো। আবার কাঁদতে লাগলো। চোখ থেকে সজোরে অশ্রু ঝরছিলো। আবার চুপ হয়ে গেলো। আবার হাসলো ও কাঁদলো। আবার চুপ হয়ে গেলো। সর্বশেষ সে উঠে বসে গেলো এবং বললো, আমি এখানে কেন? আমরা বললাম, তোমার কি হয়েছে তুমি জান না? বললো, ‘না’। আমরা বললাম, ‘‘কামানের গোলার কথা কি তোমায় স্মরণ নেই? যা তোমার খুব নিকটে পড়েছিলো এবং তুমি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলে? সে বললো, ‘হ্যা’। তুমি তো আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে। এরপর দেখলাম তুমি এগুলো করছো।’’ সে বললো, হ্যাঁ, আমি তোমাদেরকে পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দিচ্ছি। ‘আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো একটি মুক্তা খচিত ঘরে। তারপর কয়েক স্তর বিশিষ্ট একটি বিছানার দিকে আনা হলো, তার পাশে দু’টি মখমলের দস্তরখানা। আমি যখন বিছানায় বসলাম তখন আমার ডানদিক থেকে অলংকারের শব্দ শুনতে পেলাম এবং দেখলাম এক মহিলা বের হয়ে আসল। আমি জানিনা মহিলাটি অতি সুন্দর, নাকি তার অলংকার? তার পোশাক, নাকি তার অলংকার? দস্তরখানার পাশ দিয়ে এসে আমাকে অভ্যর্থনা জানাল। আমিও তাকে আহ্লান-সাহ্লান বললাম। মহিলাটি বলল, স্বাগতম ওই নিষ্ঠুর নির্দয়কে, যে কখনও আমাদেরকে পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ফরিয়াদ করেনি। হয়তো আমরা তার স্ত্রীর মত রূপসী নই। সে যখন আমাকে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে কিছু বিবরণ দিল তখন আমি হাসলাম এবং আমার ডান পাশে এসে সে বসল। আমি বললাম- তুমি কে? বলল, আমি তোমার স্ত্রী ‘খুদ’। যখন আমি তার দিকে হাত বাড়ালাম, তখন সে আমাকে বলল- এটকু থাম। আজকে জোহরের পরতো তুমি আমাদের নিকট চলেই আসছো। তার কথা যখন শেষ হলো আমি কাঁদলাম। আবার আমার বাম দিক থেকে অলংকারের ঝনঝনানি শুনলাম। দেখলাম তার মতই আরেকটি রূপসী মহিলা। সেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন করার পর আমি হাসলাম, সেও আমার বামে বসল, তার দিকে আমি হাত বাড়ালাম। সে বলল, থাম, তুমি জোহরের সময় আমাদের নিকট অবশ্যই আসছো। তখন আমি কাঁদলাম।’ বর্ণনাকারী বললেন, সে আমাদের সাথে বসে কথা বলছিলো। জোহরের আযান যখন হলো সাথে সাথে সে ঢলে পড়লো এবং মৃত্যুবরণ করলো। আব্দুল করীম বলেছেন, এক ব্যক্তি আমাদের নিকট এ ঘটনাটি আবূ ইদরীস মাদীনীর সূত্রে বর্ণনা করেন, একদিন তিনি আসলে ওই ব্যক্তি বলেন, তুমি কি আবূ ইদ্রীসের মুখ থেকে এ ঘটনাটি শুনতে চাও? অতঃপর আমি তাঁর নিকট এসে তাঁরই মুখ থেকে এ ঘটনাটি শুনলাম।
অর্থাৎ: আবূ ইয়াকুব আল হুনায়নী আবদুর রহমান ইবনে যায়দ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আগে কার যামানায় একদল যুবক ছিলো, যারা সর্বদা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে জয়ীও হত। একদা তারা সকলে বন্ধি হয়ে গেল এবং তাঁদেরকে ধরে বাদশাহর নিকট আনো হলো। বাদশাহ্ তাঁদেরকে স্বীয় ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে সবাই তা প্রত্যাখ্যান করল এবং বলল, ‘‘আমরা এ কাজ কখনও করতে পারব না। আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করতে পারি না।’’ বাদশাহ্ তার সৈন্যবাহিনীর নিকট তাঁদেরকে সোপর্দ করে বললো, ‘‘এ যুবকদের বিষয় তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম। তাদেরকে একটি নদীর তীরে আনা হলো এবং তাঁদের মধ্য থেকে এক যুবকের শিরñেদ করা হলো। খন্ডিত ওই মাথাটি নদীতে পড়ার পর তাঁদের দিকে ফিরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাদেরকে অভয় দিয়ে তাদের উদ্দেশে বলল, ‘‘হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে এসো তোমার রবের দিকে খুশী ও সন্তুষ্টচিত্তে। অতঃপর প্রবেশ কর আমার প্রিয় বান্দাদের দলে এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে। এ অবস্থা দেখে সৈনিক দল ভয়ে বিচলিত হয়ে পালিয়ে গেলো আর বাকী সব যুবক নিরপদে ফিরে গেল।
অর্থাৎ: হযরত আবদুস্ সামাদ ইবনে আবদুল ওয়ারিস বর্ণনা করেন, আমি আবদুল ওয়াহেদ ইবনে যায়দকে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন, আমরা এক যুদ্ধে ছিলাম এবং শত্রুর মোকাবেলা করলাম। যুদ্ধ শেষ হবার পর আমাদের এক ব্যক্তিকে খুঁজে পাচ্ছিলম না। তাঁকে তালাশ করার পর একটি ঝোঁপে খুঁজে পেলাম নিহতাবস্থায়। তার চারিদিকে কতগুলো রূপসী মহিলা মাতম করছে। তারা যখন আমাদেরকে দেখল তখন ঝোঁপের মধ্যে আত্মগোপন করল। তাদেরকে আমরা আর দেখতে পাইনি।
অর্থাৎ: আত্তাফ ইবনে খালেদ বলেন, আমাকে আমার খালা বলেছেন, আমি একদিন শহীদগণের কবর যেয়ারতের উদ্দেশ্যে বাহনে আরোহণ করলাম। তিনি প্রায়ই তাঁদের কবর জেয়ারত করতে আসতেন। আমার খালা বললেন, আমি হযরত হামযা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কবরের পাশে অবতরণ করলাম, আমি কিছু নফল নামায আদায় করলাম। সেখানে ছিল না কোন আহ্বানকারী এবং ছিল না কোন জবাবদাতা ও সাহায্যকারী; কিন্তু একমাত্র ওই ছেলেটি যে আমার বাহনের (ঘোড়ার বা উটের) লাগাম টেনে ধরে আছে। আমি যখন নামায শেষ করে এভাবে হাত উঁচিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম, তখন সাথে সাথে আমি মাটির নিচ থেকে সালামের জবাব শুনতে পেলাম, তাঁর এ আওয়াজকে আমি ঠিক ওভাবে চিনতে পারলাম যেভাবে আমি মানিযে, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর যেভাবে আমি সুনিশ্চিতভাবে জানি রাত ও দিনকে। ফলে আমার শরীরের সকল পশম কেঁপে ও শিহরিত হয়ে উঠল।
অর্থাৎ: ইসমাইল ইবনে আবি খালেদ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইয়াযীদ ইবনে ত্বারীফ বলেন, আমার ভাই মারা গেলো। তাকে কবরস্থ করে লোকেরা যখন ফিরে গেলো, তখন আমি তার কবরের উপর আমার মাথা রাখলাম অতঃপর কবর থেকে একটি ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বুঝতে পারলাম এটি আমার ভাইয়ের আওয়াজ। সে বলছিল, ‘আল্লাহ্’। তখন অপর ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার দ্বীন কি?’ সে বলল, ‘‘ইসলাম।’’ অর্থাৎ আমার ভাই মুনকার ও নকীরের প্রশ্নগুলোর জবাব দিচ্ছিলো।
অর্থাৎ: আলা ইবনে আবদুল করীম বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলো, তার একটি ভাই ছিলো, যার দৃষ্টিশক্তি ছিল দুর্বল। তার ভাই বললো, যখন আমরা তাকে দাফন করলাম এবং লোকেরা ফিরে আসলো, তখন আমি কবরের উপর আমার মাথা দু’টি রাখলাম। হঠাৎ আমি কবরের ভিতর থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাকে কেউ জিজ্ঞেস করছিলো, ‘‘তোমার রব কে? তোমার নবী কে?’’ তখন আমি আমার ভাইয়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম এবং তা চিনতে ও বুঝতেও পারলাম। সে উত্তরে বলছিলো, ‘আল্লাহ্ আমার রব। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমার নবী।’’ পরক্ষণে কবরের ভিতর থেকে তীর বা বর্শার ন্যায় কিছু একটা আমার কানের দিকে আসছিল। তা দেখে আমার শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল এবং আমি কবরস্থান ত্যাগ করলাম।
অর্থাৎ: হযরত সা‘ঈদ ইবনে জুবাইর হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম হযরত ইয়াহ্য়া আলায়হিস্ সালামের নেতৃত্বে বারজন হাওয়ারীর (আলেম) একটি দলকে মানুষকে দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠালেন। তাঁরা তাদেরকে যা কিছু শিক্ষা দিচ্ছিলেন তন্মধ্যে একটি ছিল, তাঁরা লোকদেরকে নিজ বোনের মেয়েকে বিবাহ্ করতে নিষেধ করছিলেন। কেননা তা হারাম। তৎকালীন বাদশাহর এক ভাগ্নী ছিলো যাকে বাদশাহ্ ভালবাসত এবং বিবাহ্ করতে চাইত। বাদশাহ্ তার ভাগ্নীর প্রতিদিনের সব ধরনের চাহিদা পূরণ করত এবং কোন আকাক্সক্ষা প্রত্যাখ্যান করতো না। ভাগ্নীকে বিবাহ্ করার ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার খবর যখন মেয়েটির মায়ের নিকট পৌঁছল, তখন সে তাকে বললো, তুমি যখন রাজার নিকট প্রবেশ করবে এবং রাজা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা, তখন তুমি বলবে, আমার একমাত্র চাহিদা ও প্রত্যাশা হলো, আমি চাই আপনি ইয়াহ্য়া ইবনে যাকারিয়া আলায়হিস্ সালামকে হত্যা করে তাঁর শিরটি আমাকে উপহার দেবেন। সুতরাং সে যখন বাদশাহর দরবারে প্রবেশ করলো, আর বাদশাহ্ তার চাহিদা বা প্রয়োজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো তখন সে বললো, ‘আমার একমাত্র প্রয়োজন ও চাহিদা হলো- আমি চাই আপনি হযরত ইয়াহ্য়া ইবনে যাকারিয়া (আলায়হিমাস্ সালাম)কে হত্যা করবেন। বাদশাহ্ বললো, ‘আমার নিকট এটা ছাড়া অন্য কিছু চাও।’ সে বললো, ‘আমি এটা ছাড়া আর কোন কিছু চাইনা।’ যখন সে অন্য কিছুতে রাজী হচ্ছিলো না তখন বাদশাহ্ হযরত ইয়াহ্য়া আলাইহিস্ সালামকে শহীদ করে দিলো এবং তাঁর মস্তক মুবারক একটি থালায় রাখল, তাঁর রক্ত মুবারকের একটি ফোটা যেই মাটিতে পড়ল সাথে সাথে তা উথলাতে শুরু করলো এবং তা বুখত নসর নামক একজন নুতন বাদশাহ্ শাসনভার গ্রহণ করা পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। তখন বুখত নসর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো ও শপথ করল যে, এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ ও বিচার স্বরূপ তিনি এ হত্যার সাথে জড়িতদেরকে কতল করতে থাকবেন, যতক্ষণ না এ রক্ত থেমে যায়। ফলে তিনি হযরত ইয়াহ্ইয়া আলায়হিস্ সালাম-এর হত্যার বিচার হিসেবে শত্তর হাজার মানুষকে কতল করল। পরিশেষে রক্তের ফোঁটাটি থেমে গেলো।
অর্থাৎ: উল্লেখ্য যে, শাহ্র ইবনে হাওশাব বলেন, ‘হযরত ইয়াহ্ইয়া আলায়হিস্ সালামকে শহীদ করে তাঁর শির মুবারক যখন মেয়েটিকে দেয়া হলো, তখন সে তা একটি স্বর্ণের থালায় রেখে তার মায়ের নিকট উপহার স্বরূপ পেশ করলো। তখন তালায় রাখা শির মুবারকটি কথা বলতে লাগলেন এবং বলছিলেন, ‘‘সে (মেয়েটি) রাজার জন্য বৈধ নয় এবং রাজাও তার জন্য বৈধ নয়।’’ এভাবে তিনবার বলেছেন। (অর্থাৎ ওই শির মুবারক শরীয়তের বিধানটি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন।) মা যখন মাথা মুবারকটি দেখল, তখন বলল, ‘আজ আমার চক্ষু শীতল হয়েছে এবং আমার সিংহাসন নিরাপদ হয়েছে।’ অতঃপর মেয়েটি রেশমের উন্নত মানের পোষাক পরিধান করে তার দালানের ছাদে আরোহন করল। আর দালানের নিচে ছিল কতগুলো কুকুর, যেগুলোকে খাওয়ানো হতো মানুষের মাংস, ওদিকে মেয়েটি তার দালানের উপর পায়চারী করছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা এক প্রবল বাতাস প্রেরণ করলেন। এমতাবস্থায় সে দৃশ্য অবলোকন করছিলো এবং হঠাৎ নিচে পড়ে গেলো। তখন কুকুরগুলো তাকে সাবাড় করে ফেললো। এমনকি তার চক্ষুগুলো পর্যন্ত। (নবীর সাথে বেয়াদবী করার শাস্তি সাথে সাথে আল্লাহ্ তা‘আলা দিয়ে দিলেন।)
অর্থাৎ: হাসান ইবনে দিনার বলেন, আমার নিকট হযরত সাবেত আল-বুনানী এবং অন্য এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা উভয়ে হযরত মুত্বরিফ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে শিখ্খীরকে দেখতে গেলেন। আর তিনি ভীষণ অসুস্থতার কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। তখন তাঁরা দেখতে পেলেন মুত্ত্বরিফ থেকে একে একে তিনটি নূর বা আলো উদ্ভাসিত হলো। প্রথমটি তাঁর মাথা থেকে। দ্বিতীয়টি তাঁর দেহের মধ্যভাগ থেকে এবং শেষটি তাঁর পায়ের দিক থেকে। এতে উপস্থিত সকলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলো। তাঁরা বললেন, যখন তাঁর জ্ঞান ফিরলো তখন তাঁকে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘হে আবূ আবদিল্লাহ্! আপনি কেমন আছেন? আমরা এমন কিছু দেখেছি যার কারণে আমরা সকলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ‘‘তিনি বললেন, কি দেখেছেন?’’ তখন আমরা তাঁকে এ বিষয়ে বর্ণনা দিলাম। তিনি বললেন, আপনারাও কি তা দেখেছেন?’’ আমরা বললাম, ‘‘হ্যাঁ’’। তিনি বললেন, ‘‘এগুলো হলো সূরা ‘সাজ্দাহ্’-এর বরকত। যাতে রয়েছে ২৯টি আয়াত। যার প্রথম বরকতটি বিকশিত হয়েছে আমার মাথার দিক থেকে, দ্বিতীয়টি শরীরের মধ্যভাগ থেকে এবং শেষটি নিচের দিক থেকে এবং সেগুলো উর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করছে আমার জন্য সুপারিশ করার জন্য। আর ‘তাবারকা’ সূরাটি আমাকে পাহারা ও নিরাপত্তা দিচ্ছে। একথা বলতে বলতে তিনি ইন্তেকাল করে গেলেন।
অর্থাৎ: হযরত মুর্য়ারিক্ব আল ‘ইজলী বলেন, আমরা এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম। লোকটি ছিল অজ্ঞানাবস্থায়। হঠাৎ দেখলাম- তাঁর মাথা থেকে একটি নূর বের হয়ে ছাদ বিদীর্ণ করে ঊর্ধ্ব গমন করল। অতঃপর তাঁর নাভি থেকে অনুরূপ একটি নূর বের হয়ে তাও ঊর্ধ্বগমন করলো এবং তাঁর শরীরের নি¤œভাগ থেকে আরেকটি নূর উদ্ভাসিত হয়ে তাও পূর্বের ন্যায় হলো। অল্প কিছুক্ষণ পর যখন লোকটির জ্ঞান ফিরলো। তখন আমরা তাঁকে বললাম, ‘‘আপনার নিকট থেকে কি বিচ্চুরিত হয়েছে আপনি কি তা জানেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যা’’। যে নূরটি আমার মাথার দিক থেকে নির্গত হয়েছে তাহলো- আলিফ, লাম, মীম, তান্যীল বা সূরা ‘আস্-সাজদাহ্’র প্রথম চৌদ্দটি আয়াত আর যে নূরটি আমার নাভি থেকে নির্গত হয়েছে তা হলো সাজদাহ্র আয়াতটি এবং পায়ের দিক থেকে নির্গত নূরটি হলো এ সূরার বাকী আয়াতগুলো। এ আয়াতগুলো আমার জন্য সুপারিশ করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বগমন করেছে। আর ‘তাবারাকা’ বা সূরা মুলক্ আমার নিকটে র’য়ে আমাকে পাহারা দিচ্ছে এবং নিরাপত্তা দিচ্ছে; যে দু’টি সূরা আমি প্রতি রাতে তেলাওয়াত করতাম।
অর্থাৎ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে দিনার আবূ আইয়ুব ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ্ নামক এক স্বগোত্রীয় লোক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তিনিসহ তাঁর গোত্রের একটি দল নৌযানে আরোহণ করলেন। কিছুদিন ধরে সমুদ্র ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাঁরা একটি গ্রামের নিকটে পৌঁছলে এ অন্ধকার দূরীভূত হল। আবদুল্লাহ্ বলেন, যখন আমি পানির সন্ধানে বের হলাম, তখন দেখলাম, কতগুলো বন্ধ দরজা। তার ভিতরে বাতাসের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমি ডাক দিলাম- কেউ আছ কি? কেউ আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। এমতাবস্থায় হঠাৎ আমার সামনে উপস্থিত হলো দু’জন অশ্বারোহী যুবক, যাদের প্রত্যেকের নেতৃত্বে রয়েছে আরও সাদা পোশাকধারী সৈন্যবাহিনী। তারা আমাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে আমি তাদেরকে আমাদের অবস্থার বিবরণ দিই। তারা বললেন, ‘‘হে আবদুল্লাহ্! তুমি এ রাস্তা ধরে অগ্রসর হও। রাস্তাটি তোমাকে একটি কূপের দিকে নিয়ে যাবে, যেখানে রয়েছে পানি। সেখান থেকে তুমি পানি সংগ্রহ করো এবং ওখানে যা দেখবে তাতে ভীত হয়ো না।’’ তখন আমি তাদেরকে দরজাবদ্ধ ঘরগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ‘‘এগুলো হলো ওই সমস্ত ঘর, যেখানে মৃতদের রূহ থাকে।’’ তিনি বললেন, ‘যখন আমি ওই রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে পানির নিকট পৌঁছলাম তখন দেখতে পেলাম এক ব্যক্তি নিচের দিকে মাথা করে ঝুলন্তাবস্থায় আছে। সে হাত দিয়ে কূপ থেকে পানি নেয়ার চেষ্টা করছে; কিন্তু পারছে না। সে যখন আমাকে দেখল তখন ডাক দিয়ে বললো, ‘‘হে আবদুল্লাহ্! (আল্লাহর বান্দা) আমাকে পানি পান করাও। আমি যখন তাকে পানি পান করানোর জন্য মশক ভর্তি করে তার দিকে হাত বাড়ালাম, তখন হঠাৎ আমার হাত আটকে গেলো। তখন লোকটি বললো, ‘‘তাহলে তোমার পাগড়ীটি ভিজিয়ে আমার দিকে নিক্ষেপ করো।’’ আমি পাগড়ীটি পানি সিক্ত করলাম তার দিকে নিক্ষেপ করার জন্য। তখনও দেখি হঠাৎ আমার হাত আটকে গেলো। তাকে বললাম, ‘‘হে আল্লাহ্র বান্দা! আমি তোমার জন্য কি করেছি তুমি তা দেখেছ। তোমাকে পানি পান করানোর জন্য মশক ভর্তি করলাম, তখন হঠাৎ আমার হাত স্থির হয়ে আটকে রইলো। আবার তোমাকে দেয়ার জন্য আমার পাগড়ী পানিতে সিক্ত করলাম। তখনও আমার হাত আটকে গেলো। তুমি কি আমাকে বলবে, তুমি কে?’’ তখন সে উত্তরে বললো, ‘‘আমি আদম আলায়হিস্ সালাম-এর সন্তান (ক্বাবিল)। আমিই এ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম রক্তপাত ঘটিয়েছি।’’
অর্থাৎ: ইমাম আওযা‘ঈ বলেন, আমাকে আসক্বালানের এক ব্যক্তি সমূদ্র তীরে জিজ্ঞেস করলো, হে আবূ আমর! আমরা প্রতিদিন সমূদ্র থেকে কতগুলো কৃষ্ণ রংয়ের পাখিকে বের হতে দেখি। আবার যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তারা শ্বেতবর্ণের হয়ে যায়। তিনি বললেন, তোমরাও কি এটি লক্ষ করেছ? তারা বললেন, ‘হ্যাঁ’, তিনি বললেন, এগুলো কতেক পাখি, যাদের পাকস্থলীতে রয়েছে ফেরআউনের অনুসারীদের রূহ। তাদেরকে প্রজ্বলিত আগুনে পোড়ানো হয়। ফলে তারা কালো বর্ণের হয়ে যায়। অতঃপর তারা এ পালকগুলো ফেলে দিলে তারা আবার সাদা বর্ণের হয়ে যায়। যখন তারা তাদের বাসায় ফিরে যায়, তখন সেখানেও তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়। ফলে তারা আবার কালো বর্ণের হয়ে যায়। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে, ((ফিরআউনের অনুসারীদের প্রবেশ করাও কঠিন শাস্তিতে।)) [সূরা গাফির: আয়াত-৪৬]
অর্থাৎ: হযরত শয়বান ইবনে হাসান বলেন, আমার বাবা এবং আবদুর রহমান ইবনে যায়দ জেহাদের উদ্দেশ্যে বের হলেন, তাঁরা একটি গভীর ও প্রশস্ত কূপের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, তাঁরা একটি হাড়ির সাথে রশি বেঁধে কূপে ফেললে হাড়িটি কূপে পড়ে যায়। তাঁরা তাঁদের নিজেদের এবং সাথীদের রশিগুলোকে একত্রিত করে এবং একটির সাথে আরেকটির জোড়া লাড়িয়ে তাঁদের একজন কূপে অবতরণ করছিলেন। তিনি কিছুদূর নামার পর হঠাৎ কূপের ভেতর থেকে একটি শব্দ শুনতে পান। ফলে তিনি উপরের দিকে ফিরে আসলেন এবং বললেন, আমি যা শুনতে পেয়েছি তোমরাও কি তা শুনতে পেয়েছো? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে আমাকে খুঁটিটা দাও, তিনি খুঁটিটা নিয়ে আবার কূপে অবতরণ করলেন এবং শব্দটি আবার শুনতে পেলেন খুব কাছ থেকে। আর দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি একটি পাথর খন্ডের উপর বসে আছে। তার নিচে পানি। তিনি বললেন, তুমি কি জিন, নাকি ইন্সান? বলল, আমি মানুষ। তিনি বললেন, তাহলে তুমি এখানে কেন? বলল, আমি এনত্বাকিয়ার অধিবাসী। আমি মারা যাবার পর আমাকে আমার রব এখানে আটকে রেখেছেন আমার অপরিশোধিত ঋণের কারণে। আমার সন্তানরা এনত্বাকিয়ায় আছে। তারা আমাকে স্মরণও করে না এবং আমার পক্ষ থেকে আমার ঋণগুলোকে পরিশোধও করছে না। তখন কূপে অবতরণকারী ব্যক্তিটি কূপ থেকে উঠে তার সাথীদের বললেন, ‘জেহাদের পর জেহাদ’। আমাদের কয়েকজনকে বল, তারা যেন এনত্বাকিয়ায় যায়। ফলে কিছু লোক এনত্বাকিয়ায় গিয়ে ওই ব্যক্তি ও ওই ব্যক্তির সন্তাদের খোঁজ নিল। তারা বললো, হ্যাঁ, তিনি আমাদের পিতা। তাঁর উপর কিছু ঋণ রয়ে গিয়েছে, যেগুলো আদায় করা হয়নি। আপনারা আমাদের সাথে চলুন যাতে আমরা আপনাদের উপস্থিতিতে তাঁর ঋণগুলো আদায় করে দিতে পারি। ফলে তাঁরা তাদের সাথে গিয়ে ওই ঋণগুলো পরিশোধ করে দিলো। তাঁরা বললেন, অতঃপর আমরা যখন এনত্বাকিয়া থেকে ফিরে আসলাম এবং পূর্বের সেই কূপের স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন কেউ ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির আর কোন শব্দ ও উপস্থিতি খুঁজে পেলো না। এমনকি সেখানে কূপটিও বিদ্যমান ছিলো না এবং ছিলো না পূর্বের কোন কিছুর অস্থিত্ব। রাত হয়ে গেলে সকলে সেখানে ঘুমালো। তখন স্বপ্নে ব্যক্তিটি তাঁদেরকে সাক্ষাত দিলো এবং তাদেরকে বললো, আল্লাহ্ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। কেননা আমার রব আমাকে বেহেশতের অমুক অমুক স্থানে স্থানান্তরিত করেছেন, যখন আমার পক্ষ থেকে আমার কর্জ পরিশোধ করা হল।
অর্থাৎ: আমর ইবনে সালিম আল মুযানী বলেন- আমি মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল ক্বুরাযীকে, ‘মুসা তাঁর গোত্র থেকে ৭০ (সত্তর) জন পুরুষকে নির্বাচন করেছেন’- এ আয়াত প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম তাঁর গোত্র থেকে সত্তর জন সৎ ব্যক্তিকে নির্বাচন করলেন এবং তাদেরকে নিয়ে বের হয়ে পড়লেন এবং তারা বললো, আপনি আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তিনি বললেন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আমার রবের নিকট, তিনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমাকে ‘তাওরাত’ কিতাব দান করবেন। তারা বললো, ‘আমরা এ তাওরাতে বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখি।, ‘তখন তাদেরকে বজ্রাঘাত পেয়ে বসলো, এমতাবস্থায় যে, তারা তা দেখছিলো’। তখন হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম একা দাঁড়িয়ে রইলেন, সত্তর জনের কেউ তাঁর সাথে নেই, সবাই মৃত্যুবরণ করলো। হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম বললেন, হে আমার রব! তোমার যদি তাদেরকে ধ্বংস করার ইচ্ছা ছিলো তাহলে এর পূর্বে কেন তুমি কি তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করে দাওনি? তুমি আমাদের মধ্যে কতেক নির্বোধ ব্যক্তিদের কর্মকান্ডের কারণে আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে? আমি বনী ইসরাঈলদের নিকট ফিরে গিয়ে তাদেরকে কি জবাব দেব? অথচ আমার সাথে যারা বের হয়েছিলো তাদের একজনও বেঁচে নেই। অতঃপর বর্ণনাকারী আয়াত তেলাওয়াত করলো, ‘অতঃপর আমি তোমাদেরকে পূনর্জীবিত করলাম তোমাদের মৃত্যুর পর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ যখন তারা পুনর্জীবিত হলো তখন বললো, ‘হুদনা’ অর্থাৎ আমরা হেদায়তের দিকে ফিরে এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কারণে এ শব্দটি তাদের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেলো এবং তখন থেকে তারা ‘ইয়াহুদী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো।
অর্থাৎ: হোসাইন ইবনে আবদুর রহমান হেলাল ইবনে ইযাসাফ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘আপনি কি দেখেননি তাদেরকে, যারা নিজেদের আবাসস্থল থেকে বের হয়ে পড়েছিলো মৃত্যুর ভয়ে, যারা ছিলো কয়েক সহ¯্র লোক’- এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা ছিলো বনী ইসরাঈলের লোকজন। তাদের মধ্যে যখন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়লো তখন তাদের মধ্যে ধনী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করলো, আর দরিদ্র ও হীন ব্যক্তিরা থেকে গেলো। ফলে যারা সেখানে অবস্থান করেছিলো তাদের উপর মৃত্যু আঘাত হানলো, আর যারা পালিয়ে গেলো তাদের কারও কিছু হয়নি। পরবর্তী বছর যখন একই অবস্থা দাঁড়ালো, তখন তারা (ধনীরা) বলতে লাগল, তারা (গরীবরা) যেভাবে এখানে অবস্থান করেছিলো আমরাও যদি সেভাবে অবস্থান করতাম, তাহলে আমরাও ধ্বংস হয়ে যেতাম যেভাবে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। ওদিকে গরীব-নিঃস্বরাও বলতে লাগলো, আমরা যদি এখান থেকে প্রস্থান করতাম যেমনিভাবে তারা প্রস্থান করেছিলো, তাহলে আমরাও মুক্তি পেতাম যেভাবে তারা মুক্তি পেয়েছিলো। তাই তারা সকলে পরবর্তী বছরে ঐকমত্যে পৌঁছলো যে, তারা সকলে এ বছর পালিয়ে যাবে। অতএব, তারা তাই করলো এবং সকলে দেশ ত্যাগ করে আল্লাহর ইচ্ছায় একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছলো। আর সেখানে আল্লাহ্ তা‘আলা সবার প্রতি মৃত্যু প্রেরণ করলেন, ফলে তারা সকলে মারা গিয়ে চমকানো হাড়ে পরিণত হলো। এলাকাবাসী ও পথচারীগণ তা কুঁড়িয়ে এক জায়গায় একত্রিত করলো। একদা তাদেরই একজন সম্মানিত নবী আলায়হিস্ সালাম, যাঁর নাম হোসাইনের বর্ণনা মতে, হিযক্বীল আলায়হিস্ সালাম, তাদের পাশ দিয়ে গমন করছিলেন। তখন তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ফরিয়াদ করে বললেন, হে আল্লাহ্! তোমার যদি মর্জি হয় তাহলে তুমি এদেরকে জীবিত করে দিতে পার, যার ফলে তারা তোমার ইবাদত করবে, তোমার পৃথিবীকে আবাদ করবে এবং তোমার বান্দাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন, আমার এ কাজটি করা কি তোমার নিকট খুবই প্রিয়? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বললেন, ওই সম্মানিত নবী আলায়হিস্ সালামকে বলা হলো, আপনি এ এ বাক্য বলুন। যখন তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার নির্দেশে একটি বাক্য বললেন, তখন দেখা গেলো হাড়গুলোতে গোশ্ত ও শিরাগুলো প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। তিনি যখন আল্লাহর নির্দেশে আরেকটি বাক্য পড়লেন তখন দেখা গেলো তারা সকলে একেকটি আকৃতি ধারণ করলো এবং তাকবীর, তাসবীহ্ ও তাহলীল পাঠ করতে করতে আবার জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। এ ঘটনার পর তারা আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছায় অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলো।
অর্থাৎ: হযরত আবূ হাযম বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হাসানকে নি¤েœাক্ত আয়াতে বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় নবীকে সম্বোধন করে বলেন, ‘‘অথবা ওই ব্যক্তির মতো, যে এমন এক নগরে উপনীত হয়েছিলো, যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো? সে বললো, ‘মৃত্যুর পর কি রূপে আল্লাহ্ এটিকে জীবিত করবেন? তৎপর আল্লাহ্ তাকে একশ’ বছর মৃত রাখলেন, তারপর তাকে পুনর্জীবিত করলেন।’’ হাসান বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে দিনের প্রথম প্রহরে (চাশতের নামাযের সময়) মৃত্যু দান করেন এবং তাঁকে পুনর্জীবিত করেন (একশত বছর পর) সূর্য ঢলে পড়ার পর অস্ত যাওয়ার পূর্বে।’’ ‘‘আল্লাহ্ বলেন, তুমি কতকাল অবস্থান করলে? তিনি বললেন, ‘একদিন অথবা একদিনেরও কিছু কম অবস্থান করেছি।’’ আল্লাহ্ বললেন, ‘‘না, বরং তুমি একশ’ বছর অবস্থান করেছ। তোমার খাদ্য সামগ্রী এবং পানীয় বস্তুর দিকে লক্ষ্য করো, তা অবিকৃত রয়েছে এবং তোমার গর্ধভটির প্রতি লক্ষ্য কর, কারণ তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করবো।” হযরত হাসান বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা গর্ধভটি অক্ষুণœ রেখেছেন এবং তার খাদ্য ও পানীয়কে পাখি ও হিং¯্রজন্তুর আহার ও পান করা থেকে রক্ষা করেছেন। ‘‘আর অস্থিগুলোর প্রতি লক্ষ্য করো; কিভাবে সেগুলোকে সংযোজিত করি এবং গোশত দ্বারা ঢেকে দিই।’’ হযরত হাসান বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সেটার অঙ্গগুলোর মধ্যে যেটিকে সর্বপ্রথম জীবিত করেন, তা হলো তার দুই চোখ। তারপর তিনি দেখছিলেন অস্থি (হাড্ডি)গুলো কিভাবে একের পর এক পূর্বাবস্থায় ফিরে আসছে। ‘‘যখন তা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেলো তখন তিনি বললেন, ‘‘আমি জানি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয় সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।’’ [সূরা বাক্বারাহ্, আয়াত-২৬০]
অর্থাৎ: হযরত সুফিয়ান হযরত আ’মশ থেকে ‘কারণ আমি তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করবো-’ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন, তিনি যখন পুনর্জীবিত হয়ে ফিরে আসলেন, তখন তিনি ছিলেন যুবক আর তাঁর সন্তান ও নাতি-নাতনিরা ছিলো বৃদ্ধ বা বয়োজ্যেষ্ঠ।
অর্থাৎ: হযরত সা‘ঈদ ইবনে জুবাইর হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলের যুগে দু’টি নগরী ছিলো, তৎমধ্যে একটি খুবই সুরক্ষিত প্রাচীর বেষ্টিত ও মজবুত ফটক বিশিষ্ট ছিলো। আর অপরটি ছিলো বিধ্বস্ত (অরক্ষিত)। সুরক্ষিত নগরবাসীর যখন সন্ধ্যা হতো তখন তারা তাদের ফটকগুলো বন্ধ করে দিতো এবং যখন সকাল হতো তখন তারা প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে দেখত- তাদের চারপাশে কোন ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে কিনা। একদিন সকালে তারা দেখতে পেলো, এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যা করে তার লাশ তাদের নগরীর দেয়ালের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। অতঃপর অরক্ষিত নগরীর বাসিন্দারা এসে বললো, তোমরা কি আমাদের এ লোককে হত্যা করেছো? ওদিকে নিহত ব্যক্তির এক যুবক ভাতিজা লাশের পাশে বসে কাঁদছে এবং বলছে, তোমরাই আমার চাচাকে হত্যা করেছো। তারা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের নগরের ফটক বন্ধ করার পর এখনও খুলিনি এবং তোমাদের এ লোকের হত্যার বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। অতঃপর তারা সকলে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনার বিচার দাবী করলো। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামের নিকট ওহী প্রেরণ করে নির্দেশ দিলেন, ‘‘স্মরণ করুন, যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ করছেন তোমরা যেন একটি গরু যবেহ কর।’ তারা বললো, আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম বললেন, আল্লাহর শরণাপন্ন হচ্ছি যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত না হই। তারা বললো, আপনার প্রতিপালককে আমাদের জন্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন, এটি কোন ধরনের গরু? হযরত মূসা আলায়হিস্ আলায়হিস্ সালাম বললেন, আল্লাহ্ বলছেন, এটি এমন গরু হবে, যেটি বৃদ্ধও নয়, অল্প বয়স্কও নয়, মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যা আদিষ্ট হয়েছো তা করো। তারা বললো, আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন, এটির রং কি? তিনি বললেন, আল্লাহ্ বলছেন, এটি হবে হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়। তারা বললো, আমাদেরকে আপনার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন, তা কোনটি? আমরা গরু সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছি এবং আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় আমরা দিশা পাব। তিনি বললেন, তিনি (আল্লাহ্) বলছেন, এটি এমন এক গরু, যা জমি চাষ ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, সুস্থ, নিখুঁত। তারা বললো, এখন আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। অতঃপর তারা এটি যবেহ করলো, যদিও তারা যবেহ করতে উদ্যত ছিলো না। [সূরা বাক্বারা, আয়াত:৬৭-৭১] হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, বনী ইসরাঈলে এক যুবক ছিল, যার একটি দোকান ছিলো, সে এতে বেচাকেনা করতো। তার বাবা ছিলো বৃদ্ধ বয়স্ক। একদা এক ব্যক্তি অন্য একটি শহর থেকে তার দোকানে মাল কিনতে আসলো এবং তাকে টাকাও দিয়ে দিলো। অতঃপর ক্রেতাকে মাল দেয়ার জন্য যুবক ও ক্রেতা উভয়ে গুদামে গেলো, চাবি ছিলো তার বাবার নিকট। ওদিকে বাবা গুদামের ছায়ার নিচে ঘুমাচ্ছেন। ক্রেতা বললো, তাকে ডেকে দাও। যুবক বললো, আপনিতো দেখছেন আমার বাবা ঘুমাচ্ছেন। আমি তাঁকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে তাকে ভীত-আতঙ্কিত করতে পছন্দ করি না। এতে তারা ফিরে গেলো। ওদিকে মাল-সামগ্রীগুলো ক্রেতার খুবই জরুরী বলে সে যুবকটিকে দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে বললো, চলো আমরা সামগ্রী নিয়ে আসি। তারা গিয়ে দেখলো, বৃদ্ধের ঘুম আরও বেশী গভীর হয়ে গেলো এবং সে নাক ডাকছিলো। ক্রেতা বললো, তাকে জাগ্রত করে দাও। যুবক বললো, আল্লাহর শপথ, আমি তাকে কখনও জাগ্রত করবো না। তার এ কাঁচা ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে তাকে বিব্রত করতে চাই না। ফলে ক্রেতা রাগান্বিত হয়ে টাকা ফেরত নিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বাবা যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হলো তখন তাকে বললো, আমার নিকট এক ব্যক্তি এসে এ মালগুলো চাইলো, কিন্তু আমি আপনাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে বিব্রত করতে চাইনি। একথা শুনে বাবা তাকে ভর্ৎসনা ও বকাবকি করলো। আল্লাহ্ তা‘আলা ওই যুবককে তার পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারের বিনিময়ে অনেক উত্তম প্রতিদান দিলেন। আর তা হলো, বনী ইসরাঈলের নিকট বর্ণিত ও প্রত্যাশিত গরুটি পাওয়া গেলো একমাত্র ওই যুবকের নিকটই। তারা এসে বললো, গুরুটি আমাদের নিকট বিক্রি করো। যুবক বললো, না এটি আমি আপনাদের নিকট বিক্রি করবো না। তারা বললো, তাহলে তোমার থেকে জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যাব। সে বললো, যদি তোমরা আমার নিকট থেকে এটি ছিনিয়ে নিতে চাও, তাহলে সেটা তোমাদের ব্যাপার। তারা নিরাশ হয়ে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর নিকট ফিরে আসল। তিনি বললেন, তোমরা গিয়ে তার যথোপযুক্ত মূল্য দিয়ে তার সম্মতি সাপেক্ষে নিয়ে আসো। তারা বললো, তাহলে আপনার নির্দেশ বা ফয়সালা কি? তিনি বললেন, আমার নির্দেশ ও ফয়সালা হলো, তোমরা এ গরুটিকে এক পাল্লায় রাখবে এবং অপর পাল্লায় স্বর্ণ রাখবে। যখন স্বর্ণের পাল্লা ভারী হবে তখন তোমরা তা মূল্য স্বরূপ পরিশোধ করে গরুটা ক্রয় করবে। তারা তাই করলো। গরুটি নিয়ে তারা নিহত ওই ব্যক্তির শবদেহের নিকট আসলো, আর তা ছিলো উভয় নগরীর মধ্যবর্তী স্থানে। উভয় নগরীর লোকেরা সমবেত হলো, ওদিকে তখনও নিহত ব্যক্তির ভাতিজা তার কবরের পাশে বসে বসে কাঁদছিল। তারা গরুটি যবেহ করে গরুর এক টুকরা গোশত নিহতের উপর নিক্ষেপ করলো। লোকটি জীবিত হয়ে তার শরীর ও মাথা থেকে ধুলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো, আমাকে আমার এ ভাতিজাই হত্যা করেছে। আমার দীর্ঘ হায়াত বা আয়ুষ্কাল তার নিকট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সে আমার ধন-সম্পদগুলো তাড়াতাড়ি পেতে চায়। তাই সে আমাকে হত্যা করে দিলো। একথা বলার পর লোকটি আবার মারা গেলো।
অর্থাৎ: হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম হযরত হুয়াইরেস ইবনে রেআব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন, একদা আমি আসাসাহ্ নামক স্থানে ছিলাম, তখন হঠাৎ এক ব্যক্তি কবর থেকে বের হলো। তার মুখে ও মাথায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এবং সে একটি লোহার শিকল দ্বারা আবদ্ধ। আর সে আমাকে বলছিলো, আমাকে পানি পান করাও, আমাকে তোমার এ মশক থেকে পানি পান করাও। তার পরপর আরেক ব্যক্তি এসে আমাকে বলছে, তুমি এ কাফিরকে পানি পান করিও না, এ কাফিরকে পানি পান করিও না। এটা বলতে বলতে সে ওই জ্বলন্ত ব্যক্তিকে ধরে ফেললো এবং তার ওই শিকলের এক পার্শ্ব ধরে টান দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দিলো ও টেনে হেঁচড়ে কবরে নিয়ে গেলো। হযরত হোয়াইরেস বলেন, তখন আমার উট আমাকে নিয়ে এত দ্রুত পালাতে লাগল যে, আমি একে কোনভাবে থামাতে পারছিলাম না। এভাবে উট আমাকে নিয়ে ‘অরাকুয যাব্ইয়াহ্’ অঞ্চলে গিয়ে থামলো। আমি উট থামিয়ে মাগরিব ও এশার নামায আদায় করলাম এবং উটে আরোহণ করে মদিনায় হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট পৌঁছে তাঁকে এ খবরটি জানালাম। তিনি বললেন, হে হুয়াইরেস! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করছি না। কারণ, তুমি আমাকে একটি খুবই ভয়ানক ও মারাত্মক অথচ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দিয়েছো। অতঃপর হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ‘সাফরা’ নামক এলাকায় বসবাসরত এমন কিছু বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ডেকে পাঠালেন, যারা জাহেলী এবং ইসলামী উভয় যুগ পেয়েছে। তাদের সামনে হুয়াইরেসকে হাজির করে তাদের উদ্দেশে বললেন, এ লোকটি আমাকে একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। আর আমি তার সত্যতার বিষয়ে সন্দেহ করি না। হে হুয়াইরেস “তুমি তাদেরকেও ওই ঘটনার বিবরণ দাও, যা তুমি আমাকে দিয়েছিলে।’’ তখন তিনি ঘটনাটি তাদের নিকট বর্ণনা করলেন। বিজ্ঞজনরা বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! আমারা এ ঘটনাটি জানি এবং লোকটিকেও চিনি। লোকটি বনী গেফার গোত্রের, যে জাহেলী (ইসলাম পূর্ব) যুগে মৃত্যু বরণ করেছে। হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এ কথা শুনে খুশি হলেন ও আল্লাহর প্রশংসা করলেন এ কারণে যে, লোকটি কাফির ছিলো মুসলিম ছিলো না এবং সে জাহেলী যুগে মারা গিয়েছিলো। হযরত ওমর ফারূক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাদের নিকট ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন! লোকটি জাহেলীযুগের লোক ছিলো। সে কোন মেহমানের মেহমানদারী করতো না।
অর্থাৎ: হযরত আমর ইবনে মালেক আন্নাকরী হযরত আবুল জাওয়া থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘‘স্মরণ করুন, যখন হযরত ইব্রাহীম বললেন, হে আমার প্রতিপালক, তুমি কিভাবে মৃতকে জীবিত করো, তা আমাকে দেখাও, তিনি (আল্লাহ্) বললেন, তবে কি তুমি বিশ্বাস করো না? তিনি (হযরত ইবরাহীম) বললেন, কেন করবো না, তবে এটা কেবল আমার চিত্ত-প্রশান্তির জন্য। তিনি (আল্লাহ্) বললেন, ‘‘তবে চারটি পাখি নাও এবং ওইগুলোকে তোমার বশীভূত করে নাও।’’ অর্থাৎ এদেরকে প্রশিক্ষণ দাও যাতে তারা তোমার ডাকে সাড়ে দেয়, অতঃপর এগুলোকে যবেহ করার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তিনি এদের যবেহ করলেন এবং এদের পালকগুলো তুলে ফেললেন ও টুকরা টুকরা করে কেটে ফেললেন, ‘‘অতঃপর এদের একটির রক্ত অন্যটির রক্তের সাথে এবং একটির পালক অন্যটির পালকের সাথে আর একটির গোশত অন্যটির গোশতের সাথে মিশ্রিত ও মিলিত করে নিলেন। তারপর তাঁকে বলা হলো, অতঃপর তাদের এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন করো। অতঃপর এদেরকে ডাক দাও এরা দ্রুত গতিতে তোমার নিকট আসবে।’’ তিনি তাই করলেন এবং যখন ডাক দিলেন তখন সাথে সাথে এদের রক্ত, পালক ও গোশতগুলো নিজ নিজ স্থানে ফিরে আসলো এবং যথাস্থানে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেলো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘‘জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’’ [সূরা বাক্বারা, আয়াত:২৬০]
অর্থাৎ: হযরত আবদুর রহমান ইবনে সাবেত হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা করো, কেননা তাদের মধ্যে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা রয়েছে। অতঃপর হযরত জাবির বললেন, একদা একটি দল স্থলপথে ভ্রমণে বের হলো। তাঁরা একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে গমনকালে পরস্পর বলছিলেন, যদি আমরা এখানে দুই রাক‘আত নামায পড়তাম এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দো‘আ করতাম, যাতে তিনি আমাদের জন্য এ কবরস্থান থেকে কিছু মৃত ব্যক্তিকে আমাদের সামনে উপস্থিত করতেন এবং তারা আমাদেরকে মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বলতো, তাহলে খুব ভাল হতো। অতঃপর তাঁরা সকলে দুই রাক‘আত করে নফল নামায আদায় করলেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ফরিয়াদ করলেন, তখন চুপিসারে হঠাৎ এক ব্যক্তি কবর থেকে বেরিয়ে আসলেন। তিনি তাঁর কপাল থেকে ধুলা ঝাড়ছেন এবং তাঁর কপালে সাজদার চিহ্ণ দেখা গেলো। তিনি আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা এখানে কি জন্য এসেছো? আজ থেকে একশ’ বছর পূর্বে আমি মৃত্যুবরণ করেছি, কিন্তু এখনও আমার থেকে মৃত্যুর উষ্ণতা (তাপ) থামেনি।’’ এখন তোমরা আল্লাহর দরবারে দো‘আ করো যেন, আমাকে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
অর্থাৎ: হযরত আওন ইবনে মূসা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত মু‘আবিয়া ইবনে কুররা এর নিকট শুনেছেন, তিনি বললেন, হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আলায়হিস্ সালামকে বনী ইসরাঈল জিজ্ঞেস করলো, হে রূহুল্লাহ্, হে আল্লাহর কালেমাহ্, নিশ্চয় এ স্থানের নিকটবর্তী সাম ইবনে নুহ্ আলায়হিস্ সালামকে দাফন করা হয়েছে। তাই আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে দো‘আ করুন যাতে তিনি তাকে আমাদের সামনে পুনর্জীবিত করে দেন। তাদের অনুরোধে হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম তাঁকে (সাম) ডাক দিলেন। কিন্তু কিছু দেখতে পেলেন না, তিনি আবার ডাক দিলেন আবারও কিছু দেখতে পেলেন না। তারা বললো, তাঁকে এ স্থানটির নিকটবর্তী স্থানে দাফন করা হয়েছে, অতঃপর তিনি (হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম) যখন পুনরায় ডাক দিলেন তখন তিনি (সাম) কবর থেকে বের হয়ে আসলেন শুভ্রকেশ বিশিষ্ট অবস্থায়। তখন তারা জিজ্ঞেস করলো, হে রুহুল্লাহ্ ও আল্লাহর নবী! (হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম) আমরা শুনেছি যে, তিনি (সাম) যুবক বয়সে ইন্তেকাল করেছেন, তাহলে এ শুভ্রতা কেন? তখন হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম সামকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার চুলের মধ্যে এ শুভ্রতা কেন? তিনি উত্তরে বললেন, হতে পারে তা ক্বিয়ামতের ভয়ানক চিৎকারের ভয়ে আমি ভীত, সন্ত্রন্থ হয়ে আছি। তাই এ শুভ্রতা বা বার্ধক্যের চিহ্ণ।
অর্থাৎ: আহমদ ইবনে আদী আত্ত্বাঈ বর্ণনা করেছেন, তিনি কুফার বনী কাওর নামক এলাকার এক বৃদ্ধকে বলতে শুনেছেন যে, তিনি একদা এক মহিলার জানাযায় উপস্থিত হলেন, মহিলাটিকে যখন কবরে শোয়ানো হলো তখন হঠাৎ করে সে নাড়া দিয়ে উঠলো। বৃদ্ধ লোকটি বললেন, তখন মহিলাটিকে কবর থেকে তুলে নিয়ে আসা হলো, পরবর্তীতে মহিলাটি দীর্ঘ দিন বেঁচে ছিলো এবং তার সন্তানও জন্মলাভ করেছিলো।
অর্থাৎ: হযরত সাবেত আল বুনানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতে বনী ইসরাঈল-এ এক মহিলা ছিলেন, যিনি তার স্বামীর প্রতি অত্যন্ত অনুগত ও যতœবান ছিলেন। একদা তাঁর দু’টি ছেলে কূপে পতিত হয়ে মারা গেলো। তখন মহিলার নির্দেশে ছেলে দু’টিকে কূপ থেকে উত্তোলন করে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলো এবং একটি বিছানায় রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হলো। অতঃপর মহিলাটি তার চাকর-বাকর এবং পরিবারের সদস্যদের বললো, তাদের কেউ যেন এদের মৃত্যুর সংবাদ তাদের পিতাকে না দেয়, যতক্ষণ না মহিলাটি নিজেই তার স্বামীকে এ সংবাদ দেন। যখন সন্তানদের পিতা ঘরে ফিরলো এবং তার সামনে আহার পেশ করা হলো তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার দুই ছেলে কোথায়? উত্তরে মহিলা বললো, তারা ঘুমিয়ে পড়েছে এবং আরাম করছে। (স্ত্রীর ইশারা-ইঙ্গিত দ্বারা স্বামী তার সন্তানদের মৃত্যুর বিষয়ে বুঝতে পারলেন।) তখন স্বামী বললো, না, এটা কখনও হতে পারে না, অতঃপর স্বামী চিরঞ্জীব সাধিষ্ঠ মহান আল্লাহর চিরন্তন হায়াতের দোহাই দিয়ে তার মৃত দুই সন্তানকে ডাক দিয়ে বললো, হে অমুক, হে অমুক! সাথে সাথে সন্তান দু’টি জীবিত হয়ে গেলো এবং ডাকে সাড়া দিলো। স্বামীর প্রতি মহিলার কৃতজ্ঞতা, আনুগত্য ও সদাচরণের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মৃত দুই সন্তানকে জীবিত করে দিলেন।
অর্থাৎ: হযরত সা‘ঈদ আল ‘আম্মী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি দল সমুদ্র পথে জেহাদে বের হলো। একজন যুবক আসলো জেহাদে অংশ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে শরিক হতে। তখন তারা যুবকটিকে তাদের সাথে নৌযানে আরোহণ করাতে অস্বীকৃতি জানালো। কিন্তু যুবকটির আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে তারা তাকে তাদের সাথে নিতে রাজী হলো। শত্রুদের সাথে যুদ্ধ আরম্ভ হলো এবং যুবকটি অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে শাহাদত বরণ করলো। যুবকের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মস্তকটি হঠাৎ নদীর ¯্রােতের উপর দাঁড়িয়ে গেলো এবং নৌযান আরোহী সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে নি¤œবর্তী আয়াতটি তেলাওয়াত করতে লাগলো- ‘‘পরকালের এ আবাসস্থল, যা আমি প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য, যারা পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।’’ [সূরা ক্বাসাস, আয়াত: ৮৩] অতঃপর মস্তকটি সমুদ্রে ডুবে গেলো এবং হারিয়ে গেলো।
অর্থাৎ: খুয়াইলেদ ইবনে সুলাইমান আল আসরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুয়াইলেদের সাথে আমার সাক্ষাতকালে তিনি আমাকে বলেন, জনৈক মহিলা তাকে যুবতীদের মহামারী সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার ঘরে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে আমার স্বামী মারা যায়, আমরা তার এখনও দাফন সম্পন্ন করিনি, যখন রাত গভীর হলো তখন আমরা এমন এক বিকট শব্দ শুনতে পেলাম যা আমাদের সবাইকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে ফেললো। আমার সাথে আমার একটি সন্তানও ছিলো, যে খুবই দুর্বল ও অসুস্থ ছিলো। সেও ভীত হয়ে আমার নিকট এসে আমার চাদরের নিচে ঢুকে পড়লো। ওদিকে আওয়াজটি আমাদের নিকটবর্তী হতে লাগলো, এক পর্যায়ে একটি খন্ডিত মস্তক আমাদের সামনে আমাদের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো এবং চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘হে অমুক! জাহান্নামের সুসংবাদ গ্রহণ করো, তুমি অন্যায়ভাবে একজন মু’মিনকে হত্যা করেছো।’ এ কথা বলতে বলতে খন্ডিত মাথাটি মৃত ব্যক্তির পায়ের দিক থেকে প্রবেশ করে মাথার দিক থেকে বেরিয়ে পড়লো। আবার মাথার দিক থেকে প্রবেশ করে পায়ের দিক থেকে বেরিয়ে পড়লো আর উচ্চস্বরে বলতে লাগলো, ‘হে অমুক! জাহান্নামের সুসংবাদ গ্রহণ করো।’ এভাবে চিৎকার করতে করতে ঘরের প্রাচীরে আরোহণ করে মস্তকটি আমাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো এবং শব্দটি ধীরে ধীরে থেমে গেলো।
অর্থাৎ: আবূ মাস‘ঊদ আল জুবাইরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাইখদের মসজিদের একজন শাইখ আমাদের নিকট হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সূত্রে একটি ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন, ‘আমরা একদা এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম। তখন মুমূর্ষু ব্যক্তিটি প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়লো এবং তার সকল শিরা-উপশিরা স্তব্ধ হয়ে গেলো। তাই আমরা তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলাম এবং তার চোখযুগল বন্ধ করে দিলাম, আর তার কাফন-দাফনের প্রস্তুতি স্বরূপ কাপড়, বড়ই পাতা ও খাটিয়া আনতে পাঠালাম। অতঃপর তাকে যখন গোসল দেয়ার জন্য নিয়ে গেলাম, তখন হঠাৎ লোকটি নড়া-চড়া করতে লাগলো। তখন আমরা বললাম, ‘‘সুবহানাল্লাহ্, সুবহানাল্লাহ্, আমরাতো ভেবেছি আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন।’’ লোকটি বললো, ‘‘সত্যিই আমি মারা গিয়েছি, আমি দেখলাম, আমি মারা যাবার পর আমাকে কবরে নিয়ে যাওয়া হলো। একজন সুন্দর সুদর্শন পুরুষ আমাকে আমার কবরে রাখলো এবং কিছু কাগজ দিয়ে কবরটাই ঢেকে দিলো। হঠাৎ দেখলাম, এক কৃষ্ণবর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত মহিলা আমার সামনে উপস্থিত হয়ে আমাকে বলতে লাগলো, এ লোকটি অমুক অমুক অপরাধ করেছে, যা আমি আপনাদের সম্মুখে বর্ণনা দিতে লজ্জাবোধ করছি। তখন আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে, আমি এ কাজ আর করবো না, তাই আমি মহিলাটিকে বললাম, আমাকে এগুলো থেকে রেহাই দাও।’’ সে বললো, আমি তোমার বিরুদ্ধে নালিশ করবো। তখন সুপ্রশস্ত এক বিশাল আকৃতির সুবাসিত একটি বালাখানায় আমরা উপস্থিত হলাম। এতে রয়েছে একটি আসন, যা দেখতে মনে হচ্ছিলো যেন তা রূপা দ্বারা নির্মিত। আর এ বালাখানার পাশে অবস্থিত রয়েছে একটি মসজিদ। এ মসজিদে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি নামায পড়ছেন এবং ‘সূরা নাহল’ তেলাওয়াত করছেন। তখন তিনি একটা জায়গায় গিয়ে আটকে গেলেন এবং আয়াতটি বারবার তেলাওয়াত করার চেষ্টা করছেন। তখন আমি তাঁকে লোকমা দিয়ে আয়াতটা স্মরণ করিয়ে দিলাম। লোকটি বললেন, তোমার কি এ সূরা মুখস্ত আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটি একটি অন্যতম নেয়ামতপূর্ণ সূরা, বর্ণনাকারী বললেন, তখন লোকটি তাঁর নিকটে থাকা একটি বালিশ উঠালেন এবং সেখান থেকে একটি সহীফা বা কাগজ বের করে তা পড়তে লাগলেন। তখন কৃষ্ণবর্ণের মহিলাটি তাঁর নিকট দৌঁড়ে গিয়ে বলতে লাগলো, এলোক এ অপরাধ করেছে, ওই অপরাধ করেছে, আর সুদর্শন লোকটি বলতে লাগলো, লোকটি এ করেছে, এ করেছে- আবার ভালো আমলগুলো তুলে ধরতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বললেন, সুদর্শন লোকটি বললেন, স্বীয় আত্মার উপর যুলুমকারী একজন বান্দা; কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। লোকটি আরও বললেন, এ ব্যক্তির এখনও মৃত্যুর সময় আসেনি, এ ব্যক্তির মৃত্যুর সময় হলো সোমবার। বর্ণনাকারী বলছেন, পুনর্জীবিত ব্যক্তিটি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি যদি ঠিকই সোমবার পুনরায় মৃত্যুবরণ করি তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে যে, আমি যা দেখেছি তা সম্পূর্ণ সত্য, আর যদি আমি সোমবার মৃত্যুবরণ না করি তাহলে তোমরা ধরে নেবে এটি ছিল আমার রোগের প্রকোপ ও যন্ত্রণার কারণে আমার আবোল তাবোল কথা-বার্তা। বর্ণনাকারী বলছেন, যখন সোমবার আসলো তখন লোকটি পুর্ণ সুস্থ ছিলো আর ওই দিন আসরের পর থেকে লোকটি ধীরে ধীরে নুইয়ে পড়তে লাগলো এবং অবশেষে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। বর্ণনাকারীর বর্ণনায় এও বলেছেন যে, আমি যখন সুবাসিত ও সুদর্শন লোকটির নিকট থেকে বের হয়ে আসছিলাম তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘আপনি কে? তখন তিনি উত্তরে বললেন, আমি আপনার ভালো আমল বা সৎকাজ। আমি বললাম, তাহলে ওই কালো কুৎসিৎ ও দুর্গন্ধযুক্ত মহিলাটি কে? বললেন, তা হলো তোমার অসৎ কাজ। বা এ ধরনের কোন বাক্য। —সমাপ্ত—