ঈদের রাতটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এ রাতে জেগে থেকে ইবাদতের ফলে মুমিনের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ঈদের রাত শুধু আনন্দ উৎসবের রাত নয়। বরং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও সেতুবন্ধনের রাত এটি। ঈদের রাতের ইবাদাত বন্দেগির ফজিলত, গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক। এ ব্যাপারে হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এ রাতটিকে অবহেলায়, গান বাজনায়, মেহেদি উৎসব ও সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত না রেখে কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজে কাটানো মুসলিম উম্মাহর ঈমানের দাবি।
আমরা শবেবরাত ও শবেকদরকে যেমন মনে করি দোয়া কবুলের রাত, তেমনি মহিমান্বিত রমজান মাস শেষে ঈদের আগের রাতও দোয়া কবুলের রাত। এ রাতে দয়াময়ের পক্ষ থেকে রোজাদারের জন্য অগনিত পুরস্কার রয়েছে।
বিভিন্ন হাদিস শরীফে ঈদের রাতে জাগরণের ব্যাপারে তাগিদ এসেছে। জাগরণ করার মানে হল, এরাতে কিছু নাফেলা নামাজ, তাছবিহ-তাহলিল ও কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা। এরাত এমন একরাত যেরাতে দোয়া করলে কবুল হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমরা এরাত বাজারে-মার্কেটে, শফিং মলেক্রয় – বিক্রয়, রাস্তা – ঘাটে, দোকানে-পাটে আড্ডায়,গল্প-গুজবে অতিবাহিত করে দিই।
হজরত মুয়াজ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জেগে থাকবে, তার ওপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। রাত পাঁচটি হলো, ১. পনেরো শাবানের রাত। ২. ঈদুল ফিতরের রাত। ৩. আট জিলহজের রাত। ৪. নয় জিলহজের রাত। ৫. ঈদুল আজহার রাত। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এ এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণনা করেন, যখন ঈদুল ফিতরের রাতের আগমন হয়। তখন ওই রাতকে পুরস্কার দানের রাত হিসেবে অভিহিত করা হয়। যখন ঈদের সকাল নামে তখন আল্লাহ প্রতিটি দেশে ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। তারা পথের ধারে অবস্থান নেন ও মানুষকে ক্ষমার দিকে ডাকতে থাকেন। তাদের ডাক মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত সব মাখলুকই শুনতে পায়। তারা বলেন, ওহে উম্মতে মুহাম্মদী সা., তোমরা বের হয়ে এসো মর্যাদাবান প্রতিপালকের পানে। তিনি অধিক পরিমাণে দান করে থাকেন। মারাত্মক অপরাধও ক্ষমা করে দেন।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কি? তারা বলবে, তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা। আল্লাহ বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দাবান্দিরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তারপর দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করবো। এরপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম ও তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম। নবীজি সা. বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুতবাতুল আহকাম, ঈদুল ফিতরের খুতবাহ, পৃষ্ঠা: ১৬২-১৬৬)।
ঈদের রাতের আশ্চর্জজনক ফজিলতের ছোট্ট একটি হাদিস রয়েছে। হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বিশ্বনবি সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দুই ঈদের রাত জাগরণ করবে; সে দিন (হাশরের দিন) তার অন্তর মরবে না। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে। (ইবনে মাজাহ)
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবি করিম সা. কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা চার রাতে সব ধরনের কল্যাণের দরজা খুলে দেন। যেমন, ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, ১৫ শাবানের রাত ও আরাফার রাত। আর তা এভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (তারিখে বাগদাদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি দুই ঈদের রাত জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দিতেন। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রা. আদী বিন আরতকে বললেন, চারটি রাতকে খুবই গুরুত্ব দেবে। যথা: ১ রজবের রাত, ১৫ শাবানের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ঈদুল আজহার রাত। আল্লাহ তায়লা এসব রাতে অশেষ রহমত বর্ষণ করেন (তালখিসুল হাবির)।
ঈদের রাতের আরেকটি বড় প্রাপ্তি হলো, এ রাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া সরাসরি কবুল হয়। কোনো দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাই আমরা আমাদের ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে ঈদের রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের প্রয়োজনগুলোও চাইতে পারি। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা কামনা, কবরের আজাব থেকে মুক্তি, জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই চেয়ে নিতে পারি। এরপর পরদিন সকালে একেবারে নিষ্পাপ মাসুম শিশুর মতো পবিত্র ঈদের মাঠে আল্লাহর পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য হাজির হতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন।
ঈদের দিনে করণীয় নিচের লিংকে –
Trackbacks/Pingbacks