খানা খাওয়ার সুন্নত ও আদব সমুহ:
খাবার অবশ্যই হালাল বা পবিত্র হতে হবে। হারাম বা হালাল নাকি হারাম সন্দেহ হলে ঐ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন মজিদে সূরা বাকারার ১৭২ নং আয়াতে বলেন- হে ইমানদ্বাররা! আমি তোমাদেরকে হালাল রিযিক হিসেবে যা দিয়েছি তা থেকে তোমরা খাও। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। যদি তোমরা একমাত্র তারি ইবাদত করে থাক।
ডান হাতে পানাহার করা। কেননা, বাম হাতে পানাহারের ব্যাপারে হাদিস শরীফে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
১/ আমরা শুধু ডান হাত ধোয়েই খেতে বসি। কিন্তু হাদিসে আছে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুতে হবে। (আবু দাউদ -৩৭৬১)
২/ দস্তরখান বিছিয়ে খেতে হবে। কতজন মানি এটা? এটা অবশ্যই করনীয়। (বুখারী -৫৩৮৬) দস্তরখান বিছানোর ও নিয়ম আছে। যেন তেন ভাবে দস্তরখান বিছালেই হবে না। প্রথমে আল্লাহর নেয়ামতের মুখাপেক্ষী হয়ে বসতে হবে, এরপর দস্তরখান বিছাতে হবে। (বুখারী- ৫৩৮৫ ও ৫৩৯৯) দস্তরখান খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এর উপর ঝুটা হাড্ডি, কাটা ফেলা যাবে না, পা রাখা যাবে না। (মুসলিম- ২০৩৩)
৩/ খাবার আগে উঁচু স্বরে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। (বুখারী-৫৩৭৬)
৪/ আজ আমরা আধুনিকতা দেখাতে চামচ দিয়ে খাই। কিন্তু হাদীসে আছে ডান হাত দিয়ে খাবার খেতে হবে। (বুখারী৫৩৭৬, মুসলিম- ২০২০)
৫/ একসাথে কয়েকজন খেতে বসলে আগে এমপি মন্ত্রীর প্লেটে খাবার বেড়ে দেই আমরা। কিন্তু হাদীসে আছে বয়সে যিনি বড় ও বুজুর্গ তাকে দিয়েই খানা শুরু করতে হবে। (মুসলিম২০১৭)
৬/ প্লেটের যত্রতত্র স্থান থেকে খাবার খাবে না। এখান থেকে এক লোকমা, ওখান থেকে এক লোকমা খাবার খাবে না। নিজের সামনে থেকে সুন্দর করে খেতে হবে। (বুখারী ৫৩৭৬)
৭/ ভাত পরে গেলে কি করি? উঠিয়ে খাই তো? খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খেতে হবে। ময়লায় মাঝে পড়ে গেলে প্রয়োজনে পরিষ্কার করে খেতে হবে।(মুসলিম ২০৩৩)
৮/ কিছুর মাঝে হেলান দিয়ে বসে খাওয়া যাবে না। (বুখারী৫৩৮৯)
৯/ খাবার সময় খাদ্যের দোষ ধরা যাবে না। (বুখারী ৫৪০৯), খাবার পড়ে গেলে তা উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া। মুসলিম
১০/ কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে কিংবা রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, জুতা পড়েই খেতে বসে যায় অনেকে। জুতা পড়ে খাওয়া যাবে না।(মুস্তাদরাকে হাকেম ৭১২৯)
১১/ রাজকীয় আসনে বসে খাওয়া বাদ দিতে হবে। খাবার সময় তিন ভাবে বসা যায়। এ তিন পদ্ধতি ছাড়া সব পদ্ধতি বাদ দিতে হবে।ক/ দুই হাটু উঠিয়ে পায়ে ভর করে বসে খেতে হবে। (মুসলিম-২০৪৪) অথবা খ/ এক হাটু উঠিয়ে, অপর হাটু বিছিয়ে খেতে হবে। (শরহুস সুন্নাহ ৩৫৭৭) অথবা গ/ উভয় হাটু বিছিয়ে নামাজের ন্যায় বসে খেতে হবে। (আবু দাউদ ৩৭৭৩)তবে অসুস্থতাজনিত কারনে অন্য আসনে বসেও খাওয়া যাবে। (সুরা নুর ৬১)
১২/ খাবার শেষে প্লেট আঙ্গুল দিয়ে ভালোভাবে কেচে খেতে হবে। এতে প্লেট মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে। হাতের আঙ্গুল ও চেটে খেতে হবে। প্রথমে মধ্যমা আঙ্গুল এরপর শাহাদাৎ আঙ্গুল এরপর বৃদ্ধা আঙ্গুল চেটে খেতে হবে। (মুসলিম ২০৩৩, তিরমিযী ১৮০৪, তাবারানী আউসাত ১৬৪৯)
১৩/ খাবার শেষে নিচের দোয়া পড়া :
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻨَﺎ ﻭَﺳَﻘَﺎﻧَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ (আবু দাউদ ৩৮৫০)
১৪/ খাবার শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ ৩২৯৫)
১৫/ দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খাবার উঠানোর সময় এই দু‘আ পড়া :ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻏَﻴْﺮَ ﻣَﻜْﻔِﻰٍّ ﻭَﻻَﻣُﻮَﺩَّﻉٍ ﻭَﻻَ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻨًﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺭَﺑَّﻨَﺎ . (বুখারী শরীফ ৫৪৫৮)
১৬/ এক হাতে খেলেও খাবার খেয়ে উভয় হাত ধোতে হবে। (তিরমিযী১৮৪৬)
১৭/ খাবার শেষে শুধু হাত ধোলেই হবে না, কুলি করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। (বুখারী শরীফ ৫৪৫৫)