“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৪৫ পৃষ্ঠায় একটি সহীহ হাদিসকে মওদ্বু বলার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। শুধু তাই নয় একজন হক্কানী ইমামের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। ইমাম ইবনে আসাকিরের ও ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর হাদিসের গ্রন্থে। তার আরেকটি মিথ্যা কথা হলো ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) নাকি বলেছেন যে, হাদিসটি দ্বঈফ। কেমন মিথ্যা বাদী হলো এ কথা বলতে পারেন আপনারাই বলুন, অথচ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) হাদিসটি সহীহ বলেছেন।
❏ ইমাম ইবনে আসাকীর ও ইমাম দায়লামী (رحمة الله) সংকলন করেন-
أبو يعقوب البحري الجرجاني نا علي بن نصير نا سويد بن سعيد حدثني عبد الرحيم بن زيد العمي عن أبيه عن وهب بن منبه عن معاذ بن جبل عن النبي (صلى الله عليه وسلم) قال من أحيى اللَّيَالِي الْأَرْبَع وَجَبت لَهُ الْجنَّة لَيْلَة التَّرويَة وَلَيْلَة عَرَفَة وَلَيْلَة النَّحْر وَلَيْلَة الْفطر-
-‘‘হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে চার রাতে জাগরণ করে ইবাদত করবে, তার জন্য জান্নাত অনিবার্য।’’ ১.তরবিয়াত (৮ই যিলহজ্জের রাত)
২. লাইলাতুল আরাফার রাত,
৩. কুরবানীর ঈদের রাত
৪. ঈদুর ফিতরের রাতে ইবাদতকারী।’’
(ইমাম ইবনে আসাকির : তারীখে দামেস্ক : ৪৩/৯৩ পৃ. হা/৪৯৮৮, ইমাম দায়লামী : আল-ফিরদাউস, ৩/৬২০ পৃ. হা/৫৯৩৭, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৫৫৭ : হা/৮৩৪২, ইমাম ইবনে জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়্যাত ফি আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ২/৭৮ পৃ. হা/৯৩৪, ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৫/৩৯পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/১৪৩ পৃ. হা/১১২৭৭, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৫/৬৬ পৃ. হাদিস, ১২০৭৬, ইরাকী, তাখরীযে ইহ্ইয়াউল উলূম, ২/৮৯৬ পৃ. নাবিল সা‘দ উদ্দিন সালিম র্জারার, ইমা ইলা যাওয়াইদুল আমালি, ৫/৫০৮ পৃ. হা/৫০৫২, সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ৪১/৩৮৭ পৃ. হা/৪৫৩৬৭, আলবানী, দ্বঈফু জামেউস সগীর, হা/৫৩৫৮, তিনি বলেন হাদিসটি জাল।)
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) উক্ত হাদিসটি সংকলন করে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু সনদে ‘আব্দুর রহিম বিন যিয়াদ’ নামক রাবী যঈফ, তাই এ সনদটি যঈফ। পাঁচ রাতের সংক্রান্ত আরও কয়েকটি সূত্র বর্ণিত হওয়ায় এ বিষয়টির ভিত্তি আছে বলে বুঝা যায়।
ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) সংকলন করেন-
قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: وَأَخْبَرَنِي مَنْ، سَمِعَ الْبَيْلَمَانِيَّ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: خَمْسُ لَيَالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءَ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَأَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বেন, পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না।
১. জুম‘আর রাত, ২. রযবের প্রথম রাত, ৩. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত)
৪-৫. দুই ঈদের রাত্র।’’ ৯৪
(ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ পৃ. হা/৭৯২৭, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/২৮৮ পৃ. হা/৩৪৪০, ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল আওকাত, পৃ-৩১১, হা/১৪৯, ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : হা/৭৯২৭, ইমাম সুয়ূতি: জামেউস সগীর : ১/৬১০ : হা/৮৩৪২, তিনি এটি হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضي الله عنه) এর সূত্রে সংকলন করেছেন।)
সনদ পর্যালোচনা:
এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত, তবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এ হাদিসে তার শায়খের নাম গোপন করেছেন, তিনি বিশ্বস্ত হাদিসের ইমাম, তাই তার তাদলীস গ্রহণযোগ্য, তাঁর তাদলীস সমালোচিত বলে কেহই অভিমত পেশ করেননি। অপরদিকে এ সনদেরর রাবী মুহাদ্দিস ‘বায়লামানী’ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন- وذكره ابن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’
(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৫৫১ পৃ. ক্রমিক.৪৮২৭)
তবে এ হাদিসটির শাওয়াহেদে আরেকটি যঈফ সনদের হাদিস রয়েছে, তাই এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।
ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
خَمْسُ لَيالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدَّعْوَةُ أوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبانَ وَلَيْلَةُ الجُمُعَةِ وَلَيْلَةُ الفِطْرِ وَلَيْلَةُ النَّحْرِ
-‘‘পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না।
১. রজবের প্রথম রাত,
২. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত),
৩. জুম‘আর রাত্র,
৪-৫ দুই ঈদের রাত্র।’’
(ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ১০/৪০৮ পৃ. ক্রমিক.৯৬৮, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/৮৭ পৃ. হা/৬০৭৫, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/৩৯৩৬)
সনদ পর্যালোচনা:
আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন- باسناد ضَعِيف -‘‘এ সনদটি যঈফ।’’
(আল্লামা মানাভী, তাইসীর, ১/৫২০ পৃ.)
তাই উভয় সনদ মিলিয়ে এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-
قَالَ الشَّافِعِيُّ: وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ إِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبَ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ
-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, আগের যুগে (সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে) বলা হতো, পাঁচ রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন,
১. জুম‘আর রাতের দোয়া,
২.-৩. ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া,
৪. রযব মাসের প্রথম মাসের রাতের দোয়া এবং
৫. শবে বরাতের দোয়া।’’
(ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/২৮৭ পৃ. হা/৩৪৩৮)
বুঝা গেল সনদে একজন রাবী সমস্যা হলেও পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের নিকট হাদিসটি বিশুদ্ধ বলেই পৌঁছেছে।