মূল কপির লিংক – https://msushafiqy.com/?p=217
হাত পা ধৌত করাকে অজু বলে। অজুর মধ্যে চার ফরজ।
১। এক কানের লতি হইতে অপর কানের লতি পর্যন্ত , কপালের উপরের চুলের মূল হইতে গল (থুতীর নীচে) পর্যন্ত ধৌত করা।
২। দুই হাতের কনুই (কেহনা) সহ ধৌত করা।
৩। দুই পায়ের গোড়ালীেসহ ধৌত করা।
৪। মাথার এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ মোছেহ করা।
যার দাঁড়ি থুতনি হতে ঝুলিয়া পড়েছে তা ধৌত করা ফরজ। দাঁড়ি ঘন হলে ধৌত করা ফরজ নতুবা নয়। যে দাঁড়ির ভিতরে মুখের চামড়া দেখা যায় না তাকে ঘন দাঁড়ি বলে, আর চামড়া দেখা গেলে তাকে পাতলা দাঁড়ি বলে। যে যে অঙ্গ ধৌত করা ফরজ ঐ সমস্ত অঙ্গ এভাবে ধৌত করবে যাতে ফোটা ফোটা পানি পড়তে থাকে। ফোটা ফোটা পানি না টপকালে অজু সিদ্ধ হবে না। ইহা ইমাম আবু হানিফা (রহ:) ও মোহাম্মদ(রঃ) এর বাক্য।
অজুর পানি অন্য লোকে ঢেলে দিলেও দোরস্ত হবে। অজুর সকল কাজ নিজে করা উচিত। যেমন- বদনা, লোটা প্রভৃতিতে পানি নেয়া, শরীরের প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢেলে দেয়া প্রভৃতি। ভিজা হাত কোন অঙ্গের উপর দিয়ে টেনে নেয়াকে মোছেহ বলে। যদি লোটা-বদনা বা অন্য কোনো পাত্র হতে হাত ভিজায়ে নেয়া যায়, তবে উক্ত হাত দ্বারা মোছেহ করা জায়েয হবে না।
এরূপ কোন অঙ্গ ধৌত করার পর যদি হাত ভিজা থাকলে, অথবা প্রত্যেক অঙ্গ মোছেহ করার পর যদি হাত ভিজা থাকে, অথবা কোন অঙ্গ হতে হাত ভিজায়ে নিয়ে ঐ ভিজা হাত দ্বারা কোন স্থান মোছেহ করলে, তবে তা জায়েয হবে না।
অজু করে মুসলমান নাপিত দ্বারা ক্ষৌরী কাজ করালে কিছুই করতে হবে না। কিন্তু বিধর্মী নাপতি দ্বারা ক্ষৌরী করালে ধৌত করতে হবে।
অজু সমাপন করে অজুর স্থান হতে মৃত চামড়া অথবা ফোঁড়ার উপর হতে মরা চামড়া উঠালে অজু সিদ্ধ হইবে। কিন্তু ঐ মরা চামড়া উঠাতে যদি ব্যথা অনুভব হয় বা রক্ত পুঁজ নির্গত হয়, তবে পুনরায় অজু করতে হবে।
অজুর অঙ্গের কোন স্থান কাটে গেলে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করে ধৌত করবে, তাতে অক্ষম হলে কিছুই করবে না। যদি দুই হাত কাটা হওয়ায় বা কেটে যাওয়ায় পানি ব্যবহার করা কষ্টকর হয়, তবে তৈয়ম্মুম করবে। এরূপ হাত কনুইসহ, পা গোঁড়ালীসহ কাটা হলে ধৌত করা আবশ্যক নহে। কিন্তু হাত – পায়ের যতটুকু অংশ ধৌত করা ফরজ ঐ স্থানের মধ্যে কিছু অবশিষ্ট থাকলে ঐ অবশিষ্ট স্থান ধৌত করতে হবে। যদি হাতের দুইটি বক্ষ হয়, কি পাঁচ আঙ্গুল হতে বেশী আঙ্গুল হয়, তবে উভয় বক্ষ ও সমস্ত আঙ্গুল ধৌত করতে হবে।
কান ও দাঁড়ির মধ্যের স্থান ধৌত করা ফরজ। চক্ষু ও নাকের মধ্যে ধৌত করা ফরজ নহে। অজুর মধ্যে ওয়াজিব নেই। কিন্তু অজু করার সময় অজুর পানি বদনা বা ঘটিতে না পড়াকে ফকিহগণ ওয়াজিব লিখেছেন।
অজুর সুন্নতের বিবরণ
হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) উপাসনা ও আরাধনা উপলক্ষে সতত যাহা করিয়াছেন এবং কখন কখন র্বজ্জন করিয়াছেন উহাকে ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ বলে। যাহা যাহা অভ্যাস স্বরূপ র্নিব্বাহ করিয়াছেন উহাকে ছুন্নতে জাওয়ায়েদ বলে। যেমন ডান হস্ত দ্বারা কাপড় পরা, আহার করা, দান করা ইত্যাদি। উহাকে ছুন্নতে জাওয়ায়েদ বলে। ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ বর্জন করিলে খোদাতায়ালা শাস্তি করিবেন।
অজুর ছুন্নত এই
১। অজুর নিয়ত করা, আমি এবাদৎ করিবার জন্য অজু করিতেছি নতুবা বে অজু দূর করিবার জন্য অজু করিতেছি।
২। بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ عَلى دِيْنِ الْاِسْلَامِ এই দোয়া পড়া; যদি এই দোয়া এয়াদ না থাকে তবে بسم الله الرحمن الرحيم পড়বিে
৩। দুই হস্ত শুদ্ধ থাকিলে কব্জী পর্যন্ত তিন বার ধৌত করা।
৪। হাতের আঙ্গুলী খেলাল করা।
৫। সমস্ত মুখ ভরিয়া পানি দিয়া তিনবার কুলকুচ (কুল্লি) করা।
৬। দাঁতন বা মেছওয়াক করা।
৭। নাকের মধ্যে তিনবার ভাল করিয়া পানি দেওয়া
৮। অজুর প্রত্যেক স্থান বা অঙ্গ তিন বার ধৌত করা।
৮। অজুর ধারা সমূহের প্রতি দৃষ্টি রাখা অর্থাৎ প্রথমে হাত ধৌত করা, পরে, কুল কুচ করা, তাহার পরে নাসিকায় পানি দেওয়া ইত্যাদি।
১০। লাগালাগিভাবে ধৌত করা।
১১। দাঁড়ি খেলাল করা, এইরূপ ভাবে খেলাল করিবে যেন হস্তের পৃষ্ঠ চক্ষের সম্মুখে ও হাতের তল্লী অগ্রে থাকে।
১২। সমস্ত মাথা ১ একবার মোছহ্ে করা।
১৩। কানের ছিদ্র, মুখে ও বাহিরের দিকে মোছেহ করা।
১৪। পায়ের আঙ্গুলী মোছেহ করা। এই রূপে মোছেহ করিবে প্রথম বাম হস্তের ছোট আঙ্গুলী দ্বারা ডান পায়ের ছোট আঙ্গুলী হইতে আরম্ভ করিয়া বাম পায়ের ছোট আঙ্গুলীতে সমাপ্ত করবি।েও পায়রে আঙ্গুলী খলোল করবিার সময় বাম হস্তরে ছোট আঙ্গুলী পায়রে আঙ্গুলীর নিম্নভাগ হইতে উপরের দিকে টানিবে। বাজ কিতাবে আরও বেশী লিখিয়াছে রুকুদ্দীন ইত্যাদি।
অজুর মোস্তাহাবের বিবরণ:
পূণ্য সঞ্চয়ের আশায় যাহা র্নিব্বাহ করা যায় উহাকেই মোস্তাহাব বলে। অজুর মোস্তাহাব এইঃ- ১। কাবার দিকে বসিয়া অজু করা। ২। মৃত্তিকা র্নিম্মতি পাত্র দ্বারা অজু করা। ৩। অজুর বদনা বাম দিকে রাখিয়া অজু করা। ৪। উচ্চ স্থানে বসিয়া অজু আরম্ভ করা ৫। বাম হস্তে নাক ঝাড়া ৬। সমুদয় অঙ্গ মর্দ্দন করা, ৭। অজু করার নিমিত্ত ওয়াক্তের র্পূব্বে পাত্রে পানি ভরিয়া রাখা, ৮। অঙ্গুরী ঢিলা হইলে অজুর সময় ঘুরাইয়া দেওয়া ৯। সমুদয় অঙ্গ ধৌত করার সময় بسم الله বিছমিল্লাহ বলা, ১০।
অজুর মধ্যে হজরতের (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) প্রতি রূ পাঠ করা। ১১।গর্দ্দান মোছেহ্ করা। ১২।সমুয় অঙ্গ ধৌত করার সময় ডান কি হইতে আরম্ভ করা। ১৩।অজুর অবশিষ্ট পানি পশ্চিম েিকাঁড়াইয়া পান করা। ১৪।মুখ, হাত, পা যে স্থান র্পয্যন্ত ধৌত করা কর্ত্তব্য তপেক্ষ। অধিক ধৌত করা। ১৫।ুইটি পা বাম হস্ত দ্বারা ধৌত করা। ১৬। অজুর মধ্যে অনাবশ্যকে কাহারও সাহায্য না লওয়া। ১৭।অজু সমাপন হইলে ইন্না আন্জল্নাহ্ ছুরা পাঠ করা অথবা ােয়া পাঠ করা, যেমন কলেমা শাহাাৎ এই দোয়াটি সহ পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهَرِيْنَ سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدَ اَنْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
কুল্লি করিবার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
নাকের মধ্যে পানি দিবার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اَرِحْنِىْ بِرَائِحَةِ الْجَنَّةِ وَلَاتَرِحْنِىْ بِرَائِحَةِ النَّارِ
মুখ ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ بَيِّضْ وَجْهِىْ يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَتَسْوَدُّ وَجُوْهٌ
ডান হাত ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اعْطِنِىْ كِتَابِىْ بِيَمِيْنِىْ وَحَاسِبْنِىْ حِسَابًا يَّسِيْرًا
বাম হাত ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ لَاتَعْطِنِىْ كِتَابِىْ بِشِمَالِىْ وَلَا مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ
মাথা মোছেহ করিবার সময় নিম্নের দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اَظَلِّنِى تَحْتَ ظَلَّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَاظَلَّ اِلَّاظَلَّ عَرْشِكَ
দুই কর্ণ মোছেহ্ করিবার সময় এই দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ الَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ يَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهُ
ঘাড় মোছেহ করিবার সময় এই দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اَعْتِقْ رَقَبَتِىْ عَنِ النَّارِ
ডান পা ধৌত করার সময় এই দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ ثَبِّتْ قَدَمِىْ عَلٰى الصِّرَاطِ يَوْمَ تَذِلُّ الْاَقْدَامُ
বাম পা ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে: اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ ذَنْبِىْ مَغْفُوْرًا وَسَعْيِىْ مَشْكُوْرًا تِجَارَتِىْ لَنْ تَبُوْرًا
মিছওয়াকের মোস্তাহাবের বিবরণ:
১। দক্ষিণ হস্তের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধা আঙ্গুলী নিম্নে রাখিয়া র্তজ্জনী অনামিকা ও মধ্যমা এই তিন আঙ্গুলী উর্দ্ধে রাখিয়া ধৃত করত: দাঁতুনী সম্পন্ন করিবে।
২। জয়তুন কাষ্ঠের দাঁতুনী দ্বারা, তদাভাবে, তিক্ত কাষ্ঠ যেমন নিম প্রভৃতি দ্বারা দাঁতুনী করিবে এবং বার আঙ্গুলী পরিমাণ লম্বা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমাণ মোটা হওয়া আবশ্যক।
৩। সিধা কাষ্ঠ হওয়া,
৪। মিছওয়াক গিরা ব্যতীত হওয়া।
৫। দাঁতুনী দ্বাদশ আঙ্গুলীর অতিরিক্ত হইলে বক্রী অংশে দূরাত্মা শয়তান আরোহণ করে।
৬। দন্তরে পাশ দিয়া মিছওয়াক করা, লম্বাতে না করা।
৭। কুলকুচ্ করার সময় কমের মধ্যে দক্ষিণ কোণের উপরের পাটির দন্ত তিন বার তৎপর নিম্ন পাটির দন্ত তিন বার মিছওয়াক দ্বারা ঘর্ষন করিবে পানিসহ, এই পানি কুলকুচ ব্যতীত হইবে। দোররোল মোখ্তার ও রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।
মিছওয়াকের মকরূহর বিবরণ:
অর্থাৎ কোন্ কোন্ কারণে মিছওয়াক মকরূহ হয়, তাহার বিবরণ:
১। শুইয়া দাঁতুনী করা, ইহাতে প্লীহা বাড়িয়া যায়।
২। মুঠ ভিড়িয়া মিছওয়াক ধৃত করা, ইহাতে অর্শ্ব রোগ উৎপন্ন হয়।
৩। দাঁতুনী চুষিলে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা।
৪। দাঁতুনী সম্পন্ন হওয়ার পর দাঁতুনীকে ধৌত না করা।
৫। দাঁতুনীকে দাঁড় করাইয়া রাখা, ইহাতে পাগল হইয়া যায়।
৬। বাঁশ দ্বারা দাঁতুনী করা। রুকুনুদ্দীন ইত্যাদি। হানফি মজহাবের ওলামাগণের বাক্য মতে দাঁতুনী অজুর জন্য ছুন্নত, নামাজের জন্য ছুন্নত নহে। শাফী মজহাবের ওলামাগণের মত মতে দাতুঁনী নামাজের জন্য ছুন্নত, অজুর জন্য ছুন্নত নহে। দুটি সম্প্রদায়ের মতের মধ্যে প্রভেদ এই যে, মিছওয়াক করিয়া এক অজুর দ্বারা কয়েক নামাজ পড়িলে প্রত্যেক নামাজের ছওয়াব সত্তর নামাজরে ছওয়াবরে সমান হইব,ে ইহা হানফী ওলামাগণরে মত মত।ে কন্তিু শাফী ওলামাগণরে মত মতে প্রত্যকে নামাজরে জন্য প্রত্যেক দফা মিছওয়াক না করিলে সত্তর নামাজের পূণ্য সঞ্চয় হইবে না।
দাড়ি মোছেহ করিবার ধারা এই
যাহার ঘন দাড়ি, ঐ দাড়ি মুখ ধৌত করার সময় দুই হাত জোড় করার ন্যায় করিয়া হস্তের উদর দাড়ির দিকে, পৃষ্ঠ গল দিক দিয়া একবার খেলাল করিবে।সমুদয় মাথা মুছেহ করার ধারার এই প্রথমত: দুই হস্তের তলিকা ও আঙ্গুলী সকল ভিজাইয়া বৃদ্ধা ও তর্জ্জনী দুই তলিকা হইতে ফাঁক রাখিয়া দুই হস্তের ছয় আঙ্গুলী অর্থাৎ প্রত্যেক হস্তের মধ্যমা অনামিকা ও কনিষ্ঠা এই তিন আঙ্গুলী দুই হস্তের মাথায় মাথায় মিলিত করিয়া মস্তকের প্রথম হইতে শেষ র্পয্যন্ত অর্থাৎ সম্মুখ হইতে পশ্চাৎ দিকে টানিয়া লইবে। পরে শেষ হইতে সম্মুখে টানিয়া আনিবে। ঐ টানিয়া আনিবার সময় মস্তকের দুই কোন হস্তের তলিকা দ্বারা মোছেহ করিবে। প্রথম বার টানিয়া লওয়ায় দুই কোন বক্রী ছিল, শেষে টানিয়া লওয়ায় দুই কোন মোছেহ হইল। মাথার আর কোন স্থান বাকী রহিল না। তৎপর দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর ভিতরের দিক দ্বারা দুই কর্ণের পৃষ্ঠ মোছেহ করিবে। তর্জ্জনী আঙ্গুলী দ্বারা কর্ণের পেঁচগুলি মোছেহ করিবে। তৎপর কনিষ্ঠা আঙ্গুলী কর্ণ কুহরে প্রবেশ করাইয়া মোছেহ করিবে। এইরূপ দুই হস্তের পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় বা গর্দ্দন মোছেহ করিবে। এ নিমিত্ত প্রথম বার ৪ চার আঙ্গুলী ও তলিকা ফাঁক রাখিবার জন্য বলা হইয়াছে। কুলকুচ ও নাসিকায় পানি দেওয়ার ধারা এই: এক চৌল (চুল্ল) পানি লইয়া প্রথম কুল্লি করিবে। তৎপর পানি দিয়া দ্বিতীয় বার কুলকুচ করিবে। তৎপরে পানি লইয়া তিন বার নাসিকায় গ্রহণ করিবে। কিন্তু দক্ষিণ হস্ত দ্বারা নাকের ভিতর পানি দিবে আর বাম হস্ত দ্বারা ঝাড়িয়া ফেলিবে, ডান হস্ত দ্বারা নাক ঝাড়া নিষেধ লিখিয়াছে। নাকে তিন বার পানি দিবার সময় নূতন নূতন পানি লইতে হইবে। এবং ধারার প্রতি
দৃষ্টি রাখিবে। যেমন হস্ত মর্দ্দন, কুলকুচ, নাকে পানি দেওয়া মুখ ধৌত করা ইত্যাদি।অজুর চারি ফরজের আন্দর হইতে কোন জায়গা এক লোম পরিমাণ যদি শুষ্ক থাকে, তবে অজু দোরস্ত হইবে না। আঙ্গুলীর নখের ভিতর গমের আটা লাগিয়া শুকাইয়া গেলে ভিতরে পানি প্রবেশ না করিলে, অজু সিদ্ধ হইবে না। যখন স্মরণ হইবে তখন আটা বাহির করিয়া ঐ জায়গায় পানি প্রবেশ করাইবে। পানি প্রবেশ করাইবার র্পূব্বে কোন নামাজ পড়িলে তাহা দোহরাইতে হইবে। অজু করিয়া কোন এবাদৎ না করিলে সেই অজু ভাঙ্গিবার র্পূব্বে পুনরায় অজু করা মক্রূহ বা মানা। অজু করার পর দুই রাকাৎ নামাজ পড়িলে অজু থাকা স্বত্ত্বেও অজু করিলে পূণ্যের ভাগী হইবে। গোছল করিবার সময় অজু করিয়া লইলে, সেই অজু দ্বারা নামাজ পড়িবে। অজু ভঙ্গ না হইলে দ্বিতীয় অজু না করিবে। যদি কোন ব্যক্তির হস্ত ও পদ কাটিয়া যাওয়ায় তাহাতে তৈল ও মোম বা অন্য কোন ঔষধ লাগান হয়, তবে উহার উপর দিয়া পানি জারী করিলে অজু সিদ্ধ হইবে। যদি কাহারো হস্তে বা পায়ের মধ্যে ফোঁড়া বা কোন রোগ হয়, পানি অনিষ্ট জনক হইলে পানি দ্বারা ধৌত না করিয়া, ভিজা হাত দিয়া মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে। যদি মোছেহ অনিষ্ট করে তবে সেই জায়গা একেবারে ছাড়িয়া দিবে কিছুই করিবে না। কিন্তু নামাজ ছাড়িতে পারিবে না। যখমের উপর পাট্টি লাগাইলে ঐ পাট্টি খুলিয়া ধৌত করিলে যদি ক্ষতি বা কষ্ট হয়, তবে পাট্টির উপর ভিজা হাত দ্বারা মোছেহ করিবে। নতুবা মোছেহ দোরস্ত হইবে না। পাট্টি খুলিয়া মোছেহ করিতে হইবে। যদি পাট্টির নীচে সমস্ত জায়গায় যখম না থাকে তবে পাট্টি খুলিয়া যখমের জায়গা বাদ দিয়া বাকী সমস্ত স্থান
ধৌত করিতে পারিলে ধৌত করিবে। পাট্টি খুলিতে না পারিলে সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। যেই স্থানে যখম আছে ও যেই স্থানে যখম নাই, সব জায়গায় মোছেহ করিতে হইবে। যদি কাহারও হাড় ভাঙ্গার দরুণ উহার উপর বাঁশের বারাবাঁধ দিয়া পাট্টি লাগাইলে, পাট্টি খুলিলে যদি অনিষ্ট হয়, তবে ঐ পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। “গুইল” দেওয়া ব্যক্তির ঐ হুকুম অর্থাৎ গুইলের যখমের উপর মোছেহ করিতে না পারিলে পাট্টি খুলিয়া কাপড়ের গদ্দির উপর মোছেহ করিবে। যদি পাট্টি খুলিবার জন্য ও বন্ধ করিবার জন্য কোন লোক পাওয়া না যায়, পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। পাট্টির উপর মোছেহ করিতে হইলে সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ করা ভাল। যদি সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ না করিয়া অধিকাংশের উপর মোছেহ করে তবুও দোরস্ত হইবে। অর্ধেক বা কমের উপর দোরস্ত হইবে না। পাট্টি বাঁশের হউক বা কাপড়ের হউক, খুলিয়া পড়িয়া গেলে যখম যদি ভাল না হয় পুনরায় পাট্টি বাঁধিলে র্পূব্বরে মোছেহ বাকী থাকিবে। পুনরায় মোছেহ করার আবশ্যক নহে। যদি যখম ভাল হইয়া পড়িয়া যায় ও পুনরায় বাঁধিবার আবশ্যক না হয়, তবে মোছেহ করিতে পারিবে না। ঐ জায়গা ধৌত করিয়া নামাজ পড়িতে হইবে। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।
অজুর মকরুহের বিবরণ:
১। মুখে পানির ছিটা জোরে মারা। ২। পানি আবশ্যক হইতে বেশী ও কম ব্যবহার করা। ৩। অজু করিবার সময় অনাবশ্যক কথোপকথন করা। ৪। নূতন পানির দ্বারা তিন বার মোছেহ করা। ৫। অশুদ্ধ স্থানে অজু করা। ৬। রমনীগণের বাকী পানির দ্বারা অজু করা। ৭। মসজিদের আন্দর অজু করা। ৮। অজুর
পানিতে থুথু ফেলা ও নাকের দ্বারা ঘ্রাণ করা। ৯। পা ধৌত করার সময় কাবার দিক দিয়া ধৌত করা। ১০। এইরূপ ডান হস্তে নাকে পানী দেওয়া। ১১। ডান হস্তে বেগর ওজর নাক পরিস্কার করা। ১২। নিজের অজুর জন্য কোন ঘটি খাশ করিয়া রাখা। আলমগিরি ও রুকুনুদ্দীন ইত্যাদি।
অজু ভঙ্গের বিবরণ
গুহ্য ও প্রশ্রাবের দ্বার দিয়া যে না পাক অশুদ্ধ দ্রব্য নি:সরণ হয় তদ্ধারা অজু ভঙ্গ হইবে। শরীর হইতে রক্ত ও পুঁজ বর্হিগত হইয়া পাক জায়গায় পৌঁছিলে অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। ঠেশ দিয়া শুইলে যেন মাথায় নীচ হইতে বালিশ বা ঠেশ টানিয়া লইলে পড়িয়া যাইবে, অজু ভঙ্গ হইবে। মুখ ভরা বমি করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজের আন্দর হা হা, হি হি করিয়া বালেক লোক হাস্য করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। যদি ও ভুলে করা যায়, অজ্ঞান হইলে ভঙ্গ হইবে। যদি ও নিশার বস্তু খাইয়া অজ্ঞান হয়, অজু নষ্ট হইয়া যাইবে। মবাসরুতে ফাহেসার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে। অর্থাৎ পুরুষের লিঙ্গ ও স্ত্রী লোকের যোনীর দ্বার পরস্পর আবরণ ব্যতীত মিলিলে, যদিও দুইটি স্ত্রী লোক হয়, তাহাকে মোবাসরুতে ফাহেসা বলে। প্রস্তর ও কিরা বা কীট যদি প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়া নির্গত হয়, অজু ভঙ্গ হইবে। যখম হইতে কিরা ও প্রস্তর বহির্গত হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। কর্ণ হইতে কিরা নির্গত হইলে নতুবা যখম হইতে গোস্তের টুকরা রক্ত ব্যতীত ঝড়িয়া পড়িলে অজু ভঙ্গ হইবে না। গুইল লাগাইলে বা ফোড়া হইতে রক্ত বাহির হইলে অজু ভঙ্গ হইবে। যখম হইতে রক্ত বাহির হইয়া ঢলিলে অজু ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তি নাকের মধ্যে
আঙ্গুলি প্রবেশ করাইয়া বাহির করার পর রক্তের দাগ দেখিতে পাইল, কিন্তু ভাসে নাই, অজু ভঙ্গ হইবে না, কাহারও চক্ষুর মধ্যে ছোট দানা ভাঙ্গিয়া গেলে বা নিজে ভাঙ্গিলে পরে চক্ষুর মধ্যে ছাড়াইয়া পড়িলে, বাহিরে নির্গত না হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না, বাহিরে নির্গত হইলে ভঙ্গ হইবে। এই রূপ কোন ব্যক্তির কর্ণের আন্দর দানা হইয়া ভাঙ্গিয়া যাওয়ার পর সই স্থান হইতে বাহির না হইলে, ঐ জায়গায় জমিয়া থাকিলে ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তির যখম হইতে রক্ত বাহির হইতেছে দেখিয়া সে কাপড় বা মাটির দ্বারা মুছিতে লাগিল, এই রূপে কয়েকবার মুছিল, পরে আর রক্ত বাহির হইতে পারিল না। তখন ঐ ব্যক্তির ভাবিতে হইবে যে, মুছিবার দ্বারা রক্ত জারি হয় নাই। নতুবা বাহির হইয়া জারি হইত এই রূপ জানিলে অজু ভঙ্গ হইবে। নতুবা ভঙ্গ হইবে না। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড। কোন রমনীর গুহ্যের দ্বার ও যোনীর দ্বার কাটিয়া একত্র হইয়া গেলে- ঐ রমনী হইতে বায়ু বাহির হইলে, ঐ বায়ুতে দুর্গন্ধ থাকিলে অজু ভঙ্গ হইবে। কারণ দুর্গন্ধ বায়ু গুহ্যের দ্বার হইতে বাহির হয়। দুর্গন্ধ না হইলে যোনীর দ্বার দিয়া বহির্গত হইবে। উহার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে না। মাছি, মশা শরীরের রক্ত চুষিলে অজু ভঙ্গ হইবে না। জোঁকে চুষিলে অজু অঙ্গ হইবে, এক প্রকার কীট (কিরা) যাহাকে আমাদের দেশে ‘আঢালী’ বলে, ঐ কিরা যদি বড় হয়, শরীর চুষিলে অজু ভঙগ হইবে। ছোট হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। চক্ষু ও নাসিকা হইতে দু:খের সহিত যেই পানী বহির্গত হয়, তাহা দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে। গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি। চক্ষুর জল কষ্ট ব্যতীত সরিলে অজুর ক্ষতি হইবে না। থুকের মধ্যে রক্ত দেখিতে পাওয়া গেলে, রক্তের ভাগ কম ও থুক সাদা
নতুবা জরদা দেখিলে অজু ভঙ্গ হইবে না। যদি রক্তের ভাগ বেশী বা সমান হয় ও রং লাল দেখা যায় অজু ভঙ্গ হইবে। দন্তের দ্বারা কোন বস্তু চর্বন করিলে, ঐ বস্তুর মধ্যে রক্তের দাগ দর্শন করিলে নতুবা দন্তে খিলাল করার পর খিলালে রক্তের লাল রং দেখা গেলে, কিন্তু থুক একেবারে সাদা, রক্তের রং থুকের মধ্যে একেবারে নাই, অজু ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তি জোঁক লাগাইলে জোঁকে এই রূপ ভাবে রক্ত চুষিয়াছে যে, পেটের মধ্য দিয়া কর্ত্তন করিলে রক্ত জারি হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে। এইরূপ না হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তির কর্ণে দরদ হইলে কর্ণকুহর হইতে যেই স্থান স্নান করিবার সময় ধৌত করা ফরজ সেই স্থান পর্যন্ত পানী নির্গত হইলে অজু ভঙ্গ হইব।ে এইরূপ নাভি হইতে দরদ সহ পানী বহির্গত হইলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে, অর্শ্বরোগীর মক্আদ (মলঘর) বাহির হইয়া গেলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। যখমের উপর পাট্টি বাঁধিবার পর পাট্টিতে রক্ত ইত্যাদি দেখা গেলে, অজু ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তি বসিয়া নিদ্রা যাইতেছে ও ঝুকিয়া ঝুকিয়া জমির উপর পতিত হওয়ার নিকট র্বত্তী হইতেছে, যতক্ষণ র্পয্যন্ত পড়িয়া না যায়, অজু ভঙ্গ হইবে না। যদি পড়িয়া যাওয়ার সময় জাগ্রত হইয়া যায়, অজু ভঙ্গ হইবে না নতুবা ভঙ্গ হইবে। যদি ঘুমাইলে নিকটর্বত্তী লোকেরা আলাপ শুনে, অজু ভাঙ্গিবে না। দোররোল মোখতার) নিজের বা অপরের লিঙ্গ দেখিলে অজু ভঙ্গ হইবে না, ছুইয়ে অজু ভাঙ্গিবে না। (আলম গিরী ১ম খণ্ড)। কোন রমনীকে ধৃত করিলে, মজি ইত্যাদি বাহির না হইলে অজু ভাঙ্গিবে না। কোন ব্যক্তি অজু করিবার সময় সন্দেহ হইল যে, আমি ফল না। স্থান ধৌত বা মোছেহ করিয়াছি কিনা? তবে তাহার এই সন্দেহ
প্রথমবার অজুর মধ্য ভাগে হইলে, যেই স্থানে সন্দেহ হয়, সেই স্থানকে ধৌত বা মোছেহ করিবে। যদি অজু সমাপন করার পর এইরূপ সন্দেহ হয়, কিন্তু এই সন্দেহ ইতির্পূব্বে আর হয় নাই ইহা প্রথমবার সন্দেহ, নতুবা তাহার সন্দেহ হওয়ার অভ্যাস থাকিলে তবে অজু ভঙ্গ হয় নাই, বলিয়া জানিতে হইবে। পুনরায় অজু করিতে হইবে না। যদি অজুর কোন স্থান ধৌত করে নাই, বিনা সন্দেহে জানিতে পারে এবং নির্দিষ্ট ভাবে জানিতে পারিতেছেনা কোন জায়গা বাকী রহিয়াছে, তবে বাম পা ধৌত করিবে, বাম পা ধৌত করিয়াছে বলিয়া একিন হইলে তখন দক্ষিণ (ডান) পা ধৌত করিবে। এক ব্যক্তি অজু ছিল, কিন্তু ভঙ্গ হইয়াছে কিনা তাহাতে সন্দেহ হইলে, তবে ঐ ব্যক্তির পুনরায় অজু করিতে হইবে না। যথা (রুকুনুদ্দিন ও দোররোল মোখতার ইত্যাদি)। বক্ষ হইতে দরদ ও কষ্ট সহ পানী নির্গত হইলে অজু ভঙ্গ হইবে। বমি করিবার সময় ভাত, পানি, পিত্ত বমি করিলে যদি পুরা মুখ হয়, অজু ভঙ্গ হইবে। নতুবা ভঙ্গ হইবে না। পাতলা রক্ত ও ভাসিত হইয়া বমি করিলে অজু ভঙ্গ হইবে। বেশী হউক বা কম হউক ভঙ্গ হইবে। এক মতলি বা অশ্যানি দ্বারা সামান্য সামান্য কয়েক বার বমি করিলে উহাকে একত্র করিলে পরা মুখে এক দপার পরিমাণ হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজের মধ্যে দাড়াইয়া বা বসিয়া ঘুমাইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। ছজিদার মধ্যে রমনীগণ নিন্দ্রা গেলে অজু ভঙ্গ হইবে। পুরুষের হইবে না। নামাজের মধ্যে হাস্য করিলে নিজে শুনিয়াছে অপর লোকেরা না শুনিলেও নামাজ ভঙ্গ হইবে। অজু ভঙ্গ হইবে না। কেবল হাস্য করিবার সময় দন্ত দেখিতে পাইলে ও শব্দ একেবারে বাহির না হইলে অজু ও নামাজ ভাঙ্গিবে না।
কিন্তু না বালেগা মেয়ে নামাজের মধ্যে জোরে হাস্য করিলে নতুবা না বালেগা রমনী সজিদা তেলাওয়াতের মধ্যে হাস্য করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজ ও সজিদা বাতেল হইয়া যাইবে। অজু সমাপন করিয়া অজুর স্থান হইতে মরা র্চম্ম কি? ফোড়া বা পাঁচড়ার উপর হইতে মরা র্চম্ম উঠাইলে অজুর কোন অনিষ্ঠ হইবে না। কিন্তু ঐ মরা র্চম্ম উঠাইতে যদি ক্লেশ অনুভব হয়, কি রক্ত পুঁজ নির্গত হয়, তবে পুনরায় অজু করিতে হইবে। অজুর পরে নখ কাটিলে অজুর কোন ক্ষতি হইবে না। ফোড়া, পাঁচড়া দাবাইয়া রক্ত বাহির করিলে অজু ভঙ্গ হইবে। তামাক বা নিশা জাতিয় কোন বস্তু পান করিয়া ভালরূপে চলিতে না পারিলে এবং পায়ের পাতা এদিক ওদিক ঘুরিয়া গেলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। উলঙ্গ অবস্থায় অজু করিলে দোরস্ত হইবে। যেই বস্তু বাহির হওয়ার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইয়া যায় উহা অশুদ্ধ। যেই বস্তুর দ্বারা অজু ভঙ্গ না হয় উহা শুদ্ধ। সামান্য রক্ত পাঁচড়া হইতে নির্গত হইলে এবং ঐ রক্ত পাঁচড়ার মুখ হইতে জারি না হইলে অর্থাৎ না ভাসিলে, নতুবা সামান্য বমি করিলে মুখ ভরা না হইলে, ঐ রক্ত ও বমি অশুদ্ধ হইবে না। কাপড়ে বা গায়ে লাগিলে উহা ধৌত করা ওয়াজিব হইবে না। কিন্তু পাঁচড়ার মুখ হইতে পানী জারি হইলে, নতুবা বমি মুখ ভরা হইলে, উহা না পাক জানিবে। পুরা মুখ বমি করিয়া লোটা বা অন্য কোন পাত্রে মুখ লাগাইয়া পানী লইয়া কুলকুচ (কুল্লি) করিলে, ঐ লোটা বা পাত্রের পানী না পাক হইয়া যাইবে। কারণ চুল্লু করিয়া পানী লইলে না পাক হইবে না। ছোট ছেলে দুগ্ধ বমি করিলে পুরা মুখ হইলে না পাক হইবে ও কাপড়ে লাগিলে ধৌত না করিয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। মুখ ভরা না হইলে না পাক হইবে না।
বেগর অজু কোরআন শরীফ ধৃত করা দোরস্ত নাই। খোলা থাকিলে দেখিয়া দেখিয়া ধৃত না করিয়া পড়িতে পারিবে। এরূপ তাবিজে কোরআনের আয়াত লিখা থাকিলে, বে-অজু উহাকে ধৃত করিতে পারিবে না। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।
অজু কিরূপে করিতে হয় তাহার নিয়ম:–
প্রথমত: লোটা বদনা কি ঘটিতে পানি লইয়া উচ্চ স্থানে কা’বার দিকে মুখ করিয়া ঘটি বাম পার্শ্বে রাখিয়া বসিবে। তারপর বিছমিল্লাহ বলিয়া নিয়ত করত: ডান হাতের কব্জি র্পয্যন্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর বাম হাতের কব্জি র্পয্যন্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর দাঁতুনী করত: মজমজা (গরগরা) করিয়া দুই কুল্লি করিবে, শেষের কুলকুচে গরগরা করিবে। সাবধান? কুলকুচ পশ্চিম দিকে ফেলিবে না। তৎপর নাসিকায় তিনবার পানী দিয়া নাসা বাম হস্ত দ্বারা ঝাড়িয়া ফেলিবে। তৎপর সমস্ত মুখ তিনবার ধৌত করিবে ও দাড়ি খেলাল করিবে, তাহার পর দক্ষিণ হস্ত কনুই সহ তিনবার ধৌত করিয়া, এরূপে বাম হস্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর এক হাতের আঙ্গুলী দ্বিতীয় হাতের আঙ্গুলীর ভিতর প্রবেশ করাইয়া পাঞ্জার ন্যায় খেলাল করিবে। আংটি কিংবা কোন গহনা হাতে থাকিলে তাহা ঘুরাইয়া দিবে। যেন শুষ্ক না থাকে, তৎপর একদফা সমস্ত মস্তক মোছেহ করিবে। তৎপর তর্জ্জনী আঙ্গুলীর দ্বারা কর্ণের পেঁচ গুলি মোছেহ করিবে। তৎপর দুই বৃদ্ধা আঙ্গুলীর ভিতরের দিক দ্বারা দুই কর্ণের পৃষ্ঠ মোছেহ করিবে। তাহার পর দুই হস্তের আঙ্গুলীর পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় মোছেহ করিবে। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।