লা-মাযহাবীরা সাধারণ মুসলমানগণকে বুঝিয়ে থাকেন যে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো যিন্দেগীর মাসআলা-মাসাইল কুরআন শরীফ ও সহীহ হাদীসে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর সে জন্যে ফিকহের কোন প্রয়োজন নেই। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে লা-মাযহাবীরা ইলমে ফিকহ এবং ফুকাহায়ে কিরামকে জঘন্য ভাষায় গালা-গালি করেন।
এ কারণে আমরা লা-মাযহাবী আলিমদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন নিম্নে পেশ করছি, লা-মাযহাবীগণ কুরআন শরীফের আয়াত এবং সহীহ হাদীসের সরাসরি ভাষ্যের আলোকে উত্তর দিবেন (কিয়াস এবং উলামায়ে কেরামের মতামত ব্যতিত)।
১। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অবিরামভাবে সর্বদা রোজা রাখল তার রোযা হল না।(বুখারী ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা:১০৪)
অথচ ইমাম বুখারী (র.) সর্বদা রোযা পালনকারী ছিলেন। (মীযানুল কুবরা,১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা:৫০) ইমাম ওয়াকী’ ইবন জাররাহ সর্বদা রোজা পালন করতেন। (তারীখে বাগদাদ,৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা:৪৭০)। ইমাম শু’বা ইবন হাজ্জাজ সর্বদা রোযা রাখতেন। (মুকাদ্দামায়ে তুহফাতুল আহওয়াযী, পৃষ্ঠা:২২২)
ইমাম বুখারী (র.) সহ হাদীসের অন্যান্য ইমামগণ উল্লেখিত সহীহ হাদিসের বিপরীত আমল করলেন কেন??
২। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সপ্তাহে একবারের বেশি কুরআন শরীফ খতম করবে না। (বুখারী -২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা:৭৫৫)
অথচ ইমাম বুখারী (র.) নিজে উক্ত হাদীসের বিপরীতে রামাদান মাসে প্রত্যেক দিন এক খতম করতেন। (তারীখে বাগদাদ,২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১২)
হযরত উসমান (রা.) তামীম দারী (রা.) প্রত্যেক দিন কুরআন এক খতম করতেন। (তবকাতে ইবনে সা’দ, তাহাবী)
এখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহীহ হাদীসের বিপরীতে হযরত উসমান (রা.), তামীম দারী (রা.), ইমাম বুখারী (র.)-এর আমল কি হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ নয়?
৩। একদা হযরত উমর (রা.) রাসূল (সা.) এর সামনে তাওরাতের এক কপি পাঠ করেন, এতে রাসূল (সা.) মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন- মূসা (আ.) যদি জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করতেন। (দারিমী) বর্তমানে যাঁরা বাইবেল পড়েন রাসূল (সা.) কি তাদের উপর মনঃক্ষুণ্ণ হবেন না?
৪। যদি আপনি বলেন আমরা সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দেই আর যঈফ হাদীসকে মারজুহ বলি, তাহলে বলেন প্রত্যেক হাদীসের ক্ষেত্রে কোনটা সহীহ কোনটা যঈফ সেটা কি রাসূল (সা.) কর্তৃক স্থিরকৃত; নাকি উম্মতের কথার উপর নির্ভর করেন অর্থাৎ তাকলীদ করে সহীহ যঈফ নির্ধারণ করা হয়?
৫। কোন হাদীস রেওয়ায়েতকারীর উপর জারাহ-তা’দীল তথা বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাচাই করার যে সকল নিয়ম উসূলে হাদীসের কিতাব সমূহে আছে সে গুলো কি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত? যদি এমন হয় তাহলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করুন।আর যদি এ সমস্ত নিয়ম কানুন গুনাহগার উম্মতদের বানানো হয় তাহলে উক্ত কায়দার আলোকে যারা হাদীসকে সহীহ অথবা যঈফ বলেন তারা তো হাদীসের অনুসারী না বরং উম্মতের মুকাল্লিদ।
৬। ‘সালাফ’ কি শুধু রাসূল (সা.)-এর নাম নাকি সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈনও সালাফের অন্তর্ভূত? যদি তারাও সালাফের অন্তর্ভূত হয়ে থাকেন তাহলে যারা সালাফী বলে দাবী করেন তারা সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈগণের বাণী সমূহকে কেন মানেন না?
৭। ইমাম বুখারী (র.)-এর বর্ণনাকৃত শর্তাবলী কি কুরআন-হাদীস দ্বারা সাব্যস্থ? যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে ঐ সমস্ত আয়াত ও হাদীস পেশ করুন। আর যদি এগুলো উম্মতের বানানো হয় তাহলে ইমাম বুখারী (র.)সহ হাদীসের অন্যান্য ঈমামগণ কি (মা’আযাল্লাহ) বিদআতী ছিলেন?
৮। রাসূল (সা.)-এর সাহাবীর সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। শুধু বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণকারী সাহাবীর সংখ্যা ছিল এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার (১,৪৪০০০)। এটা স্পষ্ট যে সাহাবায়ে কিরাম আরবী ভাষী ছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ফতওয়া দিতেন এমন সাহাবীর সংখ্যা ছিল মাত্র একশত তেইশজন। আবার তাদের মধ্যে সাতজন ছিলেন মুফতী। (ইলমুল মুওয়াক্কিয়ীন-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা:৫)
এ থেকে বুঝা যায় প্রায় দেড় লক্ষ সাহাবী ফতওয়া দানের যোগ্য সাহাবীদের অনুসরণ করতেন আর সাহাবীদের যুগে কেউ তাদের এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তুলেননি।
৯। মনে করুন, যায়েদ নামের কোন ব্যক্তি অন্য পুরুষের উপর যিনার অপবাদ দিল। তাহলে যায়েদকে কয়টা বেত্রাঘাত করা হবে? সরাসরি পুরুষকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি বর্ণনা করুন, মহিলার উপর কিয়াস করে নয়।
১০। কিসমিসকে আঙ্গুরের বিনিময়ে বিক্রয় করা জায়িয নাকি নাজায়িয? সহীহ হাদীস উল্লেখ করুন। শুকনা ও ভেজা খেজুর-ক্রয় বিক্রয়ের উপর কিয়াস করবেন না।
১১। রাসূল (সা.) হুকুম দিয়েছেন যখন তোমরা প্রস্রাব-পায়খানা করতে যাবে তখন সাথে তিনটি পাথর নিয়ে যাবে। এখন কেউ যদি পাথরের পরিবর্তে মাটি, কাপড়ের টুকরা,তুলা, রেশমের টুকরা, ঘাস, গাছের পাতা, টিস্যু পেপার ইত্যাদি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে তাহলে তার ইস্তিঞ্জা জায়িয হবে কি না? জায়িয বা নাজায়িয হওয়ার হুকুম এবং এ সমস্ত জিনিসগুলোর নাম সরাসরি হাদীস থেকে পেশ করুন। পাথরের উপর কিয়াস করবেন না।
১২। রাসূল (সা.) বগলের লোমকে উপড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে শতকরা একশত ভাগ গায়র মুকাল্লিদ পুরুষরা ক্ষুর (ব্লেড) ব্যবহার করে বগল পরিষ্কার করে এবং শতকরা একশত ভাগ গায়র মুকাল্লিদ মহিলারা লোমনাশক পাউডার ব্যবহার করে বগল পরিষ্কার করে। এটা কি সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ নয়? ক্ষুর ও লোমনাশক পাউডার ব্যবহার করে বগল পরিষ্কার করার হাদীস থাকলে পেশ করুন।
১৩। বর্তমানে সব গায়র মুকাল্লিদ মহিষের দুধ খায়, ঘি, দই, মাঠা খায়। এ গুলোর ব্যাপারে কোন আয়াত বা হাদীস আছে কি? থাকলে পেশ করুন।
১৪। মুনফারিদের (একাকী নামায আদায়কারী) জন্য প্রত্যেক নামাযে নিরবে ‘আমীন’ বলা সুন্নাত; এটি সহীহ, মারফু,বিরোধপূর্ণ নয় এমন একটি হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
১৫। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরের দ্বারা শিকারের আলোচনা কুরআন ও হাদীসে আছে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি বাঘ, চিতা, শুকর, বানরকে দিয়ে শিকারের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেগুলোর দ্বারা শিকার করে তাহলে সেই শিকারের হুকুম কি? সহীহ হাদীসের আলোকে পেশ করুন। এমনিভাবে ঘি’তে ইঁদুর পড়ে মারা গেলে তার হুকুম হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। কিন্তু বিড়ালের বাচ্চা, কেঁচো, পিঁপড়া, মৌমাছি, টিকটিকি ইত্যাদি কোন কিছুতে পড়ে মারা যায় তাহলে কোনটার হুকুম কি? পাক-নাপাক হওয়ার ব্যাপারে সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস পেশ করুন।
১৬। গোলাম তিন তালাকের অধিকারী নাকি দুই তালাকের, নাকি দেড় তালাকের? এমনিভাবে তালাক প্রাপ্তা বাদীর ইদ্দত তিন হায়িয, নাকি দুই হায়িয নাকি দেড় হায়িয? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন।
১৭। আল্লাহ তা’য়ালা হুকুম দিয়েছেন, তোমরা যদি জানাবাতের অবস্থায় থাক আর পানি না পাও তাহলে তায়াম্মুম কর। এখন প্রশ্ন হলো যদি কোন মহিলা হায়িয বা নিফাস থেকে ফারিগ হয় আর পানি না পায় তাহলে তার তায়াম্মুম জায়িয হবে কি না? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন, জানাবাতের উপর কিয়াস করে নয়।
১৮। ইমাম বুখারী (র.) প্রস্রাবের আদব সংক্রান্ত আলোচনায় যে হাদীস এনেছেন সেটি হলো; রাসূল (সা.) এক সম্প্রদায়ের ময়লা ফেলার স্থানে আসলেন এবং দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন’।( বুখারী, কিতাবুল অযু)
ইমাম বুখারী (র.) এই হাদীসের শিরোনাম করেছেন ‘দাঁড়িয়ে এবং বসে প্রস্রাব করা’।
উক্ত হাদীসের আলোকে লা-মাযহাবীদের নিকট প্রশ্ন হলো, লা-মাযহাবীরা দাবী করেন তারা সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন। বুখারী শরীফে বর্ণিত প্রশ্রাবের আদব সংক্রান্ত হাদীসের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় প্রশ্রাব দাঁড়িয়ে করা সুন্নাত। অথচ লা-মাযহাবীরা সকলেই বসে বসে প্রশ্রাব করেন। তাদের এ আমল সহীহ হাদীসের বিপরীত কেন?
দ্বিতীয়ত: লা-মাযহাবীরা যদি দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা সুন্নাত মনে করেন তাহলে কি সেটা পুরুষদের জন্য নাকি মহিলাদের জন্যও?
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, লা-মাযহাবীরা বলেন তারা সরাসরি হাদীসের ভাষ্যের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া প্রদান করেন। অথচ উক্ত হাদীসের মূল ভাষ্যে বসে প্রস্রাব করার কথা উল্লেখ না থাকার পরও ইমাম বুখারী এই হাদীস থেকে বসে প্রস্রাব করার বৈধতার উপর ফতওয়া দিয়েছেন।
ইমাম বুখারীর এই ইজতিহাদ লা-মাযহাবীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে?
উল্লেখ্য: ইমাম আবু হানিফা (র.) সহ অধিকাংশ ইমামের নিকট বিনা অযূরে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহ। রাসূল (সা.) এর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ব্যাখায় জমহুর মুহাদ্দিসীন বলেন ‘রাসূল (সা.) এর উক্ত আমল ছিল বৈধতা বুঝানোর জন্য’।
১৯। যে ক্যাসেটে কুরআন শরীফ রেকর্ড আছে সে ক্যাসেট বিনা অযুতে ধরার হুকুম কি? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন।
২০। রেকর্ডকৃত সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হবে কি? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন।
২১। রোজাবস্থায় ইনজেকশন দিলে রোজা ভঙ্গ হবে কি? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন।
২২। টেলিফোনে বিয়ে হলে তা বিশুদ্ধ হবে কি? সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জবাব দিন।
২৩। রাসূল (সা.) প্রস্রাবে বসার আদব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কিবলার দিকে মুখ এবং পিঠ দিয়ে প্রস্রাব-পায়খানায় বসবে না বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে মুখ করে বসবে। (বুখারী ১/২৬)
প্রশ্ন হলো ভারতীয় উপমহাদেশের লা-মাযহাবীরা উক্ত হাদীসের প্রকাশ্য অর্থের উপর আমল করেন না কেন?
২৪। আল্লাহ তা’য়ালা বিচারকার্যে ফয়সালার জন্য স্বাক্ষীদের নিসাব বর্ণনা করেছেন দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সাক্ষ্য। প্রশ্ন হলো মিরাস, ওসীয়ত, আমানত, গসব এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের জন্য কি সাক্ষীর সংখ্যা এটাই নাকি অন্য কিছু? সরাসরি সহীহ হাদীস উল্লেখ করে উত্তর দিন। এসব লেনদেনকে কর্জের উপর কিয়াস করবেন না।
২৫। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, পানীয় দ্রব্যে যদি মাছি পড়ে তাহলে তাকে তার মধ্যে ডুবিয়ে দাও। তারপর বের করে ফেলে দাও। এখন প্রশ্ন হলো মাছি না পড়ে যদি পিঁপড়া, মশা, ভীমরুল, ফড়িং, চিকা, কেঁচো, সাপ, চামচিকা ইত্যাদি পড়ে তাহলে কি করা হবে? পানি পাক থাকবে নাকি নাপাক? এসব কীট-পতঙ্গের নাম সরাসরি হাদীসে উল্লেখ দেখান। মাছির উপর কিয়াস করবেন না।
২৬। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার করা হারাম। এখন প্রশ্ন হলো সোনা-রুপার পাত্র দ্বারা অযু করা, গোসল করা, তেল লাগানো, সোনা-রুপার তৈরি কলম দ্বারা লেখা, সোনা-রুপার সুরমাদানি ব্যবহার করা, আতরদানি ব্যবহার করা এসব জায়িয কি নাজায়িয? কোন প্রকার কিয়াস করা ব্যতিত সরাসরি হাদীসের মাধ্যমে উত্তর দিন।
২৭। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদের বিবাহ কর অত:পর তাদের স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দাও। তখন তাদের উপর ইদ্দত ওয়াজিব হবেনা।
এ আয়াতে তো মুমিন নারীদের হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল; যদি কোন ইহুদী বা খ্রীষ্টান নারীকে বিবাহ করে নির্জনবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয়। তাহলে সেই মহিলার উপর ইদ্দত পালন ওয়াজিব হবে কিনা? সরাসরি সহীহ হাদীস উল্লেখ করে উত্তর দিন। কাফির মহিলাকে মুমিন মহিলার উপর কিয়াস করে নয়।
২৮। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, কুকুর যদি কোন পাত্রে মুখ দেয় তাহলে তা সাতবার ধুয়ে ফেল। এখন প্রশ্ন হলো, কুকুর যদি পাত্রে প্রস্রাব করে দেয়, অথবা পায়খানা করে দেয় অথবা বমি করে দেয়, অথবা কুকুরের রক্ত লেগে যায় তাহলে সেই পাত্রকে কতবার ধৌত করতে হবে? সরাসরি হাদীস উল্লেখ করে উত্তর দিন; কুকুরের লালার উপর কিয়াস করে নয়। যদি পাত্রের মধ্যে শুকর, বাঘ, চিতা, বানর, হাতি, গণ্ডার, খেকশিয়াল ইত্যাদি মুখ দেয় তাহলে সেই পাত্রকে কতবার ধৌত করতে হবে? এ সম্বন্ধে সরাসরি হাদীস উল্লেখ করে জবাব দিন, কুকুরের উপর কিয়াস করে না।
২৯। এক ব্যক্তি কসম করল যে, আল্লাহর কসম! আমি যায়েদের সাথে কথা বলবো না। অত:পর সে যায়েদের সাথে কথা তো বলেনি কিন্তু তার সাথে খানা-পিনা বা বিবাহ শাদীতে শরিক হয়েছে। আপনারা সরাসরি সহীহ হাদীস পেশ করুন যে এ লোকের উপর কাফফারা আসবে কী না?
৩০। কোন মুক্তাদি যখন ইমাম সাহেবের সূরা ফাতিহা কিছু বাকী থাকতে জামাতে শরীক হল, তার জন্য নিজের ফাতিহার মাঝখানে একবার সশব্দে আমীন বলা এবং (যেহেতু সে ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়া ফরয মনে করে) নিজের ফাতেহার শেষে নিরবে একবার আমীন বলা সুন্নত। এ ব্যাপারে সহীহ মরফু ও বিরোধপূর্ণ নয় এমন হাদীস পেশ করুন।
৩১। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যখন অনুদান বণ্টন করতেন তখন সবাইকে সমান অংশ দিতেন। আর হযরত উমর (রা.) যখন বণ্টন করতেন তখন সম্মানিত লোকদেরকে বেশী দিতেন বাকিদেরকে কম দিতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোন সহীহ হাদীসে এটা কি আছে যে, সিদ্দীকী যুগে বরাবর বণ্টন করতে হবে আর ফারুকী যুগে কম-বেশী করতে হবে?
সহীহ হাদীসের বিপরীতে লা-মাযহাবীদের কয়েকটি আমল
১. বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের ৩৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) মাত্র এক মুদ (আনুমানিক ১৪ ছটাক) পানি দ্বারা অযু করতেন। কিন্তু লা-মাযহাবীরা এই সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন না।
২. বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) (সাড়ে তিন সের) পানি দ্বারা গোসল করতেন। কিন্তু লা-মাযহাবীরা এই সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন না।
৩. বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের ৫১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, হযরত জাবির (রা.) বলেন- আমি রাসূল (সা.)-কে মাত্র এক জামা পড়ে নামায আদায় করতে দেখেছি। আজ পর্যন্ত লা-মাযহাবীদের কাউকে এই সহীহ হাদীসের উপর আমল করতে দেখা যায় না।
৪. বুখারী শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডের ৮৩৩ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় হলো- ‘ঈদগাহে কুরবানী করার বর্ণনা’। উক্ত শিরোনামের অধীনে ইমাম বুখারী (র.) যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করেছেন, তা থেকে প্রমাণিত হয় রাসূল (সা.) এবং হযরত ইবন উমর (রা.)-এর আমল ছিল ঈদগাহে কুরবানী করা। কিন্তু লা-মাযহাবীগণ বুখারী শরিফে উল্লেখিত হাদীসের উপর আমল না করে বাড়িতে কুরবানী করেন। লা-মাযহাবীগণ উল্লেখিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন না কেন?