নিশ্চিত সন্দেহ-সংশয় মুক্ত মন-মানসিকতা নিয়ে শবে বারাআত বা লাইলাতুন নিসফে মিন শা’বান উপলক্ষে রোজা রাখুন এবং রাতভর ইবাদত-বন্দেগী করুনঃ—
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শবে বারাআতের ফজীলতঃ—
- হাদীস নং ১ঃ—
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بن النَّضْرِ الْعَسْكَرِيُّ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بن خَالِدٍ، حَدَّثَنَا عُتْبَةُ بن حَمَّادٍ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ، وَابْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَالِكِ بن يُخَامِرَ، عَنْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ، عَن ِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:”يَطَّلِعُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ”
রসূলুল্লাহ স বলেন: আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের (লাইলাতুল বারাআত) রাতে আপন সব মাখলুকের দিকে বিশেষ দয়ার দৃষ্টিতে দেখেন। আর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
(তাবারানী আউসাত্ব: ৬৭৭৬, তাবারানী কাবীর: ২১৫, সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাঃ ১২৯৬০)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মারফূ ৷
আল্লামা নূরুদ্দিন হাইসামী রহঃ বলেন: হাদীসটি তবারানী তাঁর কাবীর ও আওসাতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১২৯৬০)
- ইমাম যুরকানী রহ. বলেন,
فإن ابن حبان قد صححه وكفى به اعتمادا
‘‘ইবনে হিব্বান রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। হাদীসটির উপর ইতিমাদ করার জন্য এটাই যথেষ্ট।’’ (শারহুল মাওয়াহিব: ৫৬১/১০).
- নাসিরুদ্দিন আলবানী রহি বলেন:
حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا
“এ হাদীসটি সহীহ। এ হাদীসটি একদল সাহাবায়ে কিরাম থেকে এমন বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে”।
(সিলসিলাতু আহাদীসিস সহীহা: ১১৪৪)
- হাদীস নং ২ঃ—
6642 – حَدَّثَنَا حَسَنٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، حَدَّثَنَا حُيَيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” يَطَّلِعُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلَّا ثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ، وَقَاتِلِ نَفْسٍ “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেছেন: অর্ধ শা’বানের রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং হিংসুক ও আত্মহত্যাকারী এই দুই শ্রেণীর মানুষ ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬৪২)
- শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রহঃ বলেন:-
حديث صحيح بشواهده
হাদীসটি শাহেদের ভিত্তিতে সহীহ ৷ (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬৪২) - স্বাভাবিকভাবে চিন্তুা করুন,
- যেই রাতের ফজীলত বিষয়ে সহীহ হাদীস পাওয়া যায়,সেই রাতে চুপচাপ শুয়ে-বসে থাকা উত্তম???
- নাকি ইবাদত-বন্দেগী করা উত্তম???
- ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন:— قَالَ الشَّافِعِيُّ) : وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ: إنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي ①لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، ②وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، ③ وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، ④وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ،⑤ وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَ الشَّافِعِيُّ) : وَأَنَا أَسْتَحِبُّ كُلَّ مَا حُكِيَتْ فِي هَذِهِ اللَّيَالِيِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُونَ فَرْضًا.
- * “আমাদের কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, পাচঁ রাতে দুআ কবুল হয়। এক. জুমুআর রাতে। দুই. ঈদুল আযহার রাতে। তিন. ঈদুল ফিতরের রাতে। চার. রজবের প্রথম রাতে। পাঁচ. মধ্য শাবানের রাতে।
…এরপরে ইমাম শাফিঈ রহ. বলেন:-
আর আমি যেসব রাতের কথা বর্ণনা করলাম, তাতে দুআ করা মুস্তাহাব বলি, ফরজ নয়।” (কিতাবুল-উম্ম লিশ শাফেঈ- ১/২৬৪)
- শবে বারাআতের আমলঃ—
- তিনটি বা কমপক্ষে দুইটি রোজা রাখা:-
- হাদীস নং ১ঃ—
حَدَّثَنَا هَدَّابُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ مُطَرِّفٍ، – وَلَمْ أَفْهَمْ مُطَرِّفًا مِنْ هَدَّابٍ – عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، – رضى الله عنهما – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ أَوْ لآخَرَ ” أَصُمْتَ مِنْ سَرَرِ شَعْبَانَ ” . قَالَ لاَ . قَالَ ” فَإِذَا أَفْطَرْتَ فَصُمْ يَوْمَيْنِ ” .
‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি শা’বান মাসের মধ্যভাগে সওম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন তুমি সওম পালন করনি, তখন দু’দিন সওম পালন করে নিও। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৪১)
- শবে বারাআতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী মুস্তাহাব, তবে ইবাদত বন্দেগী না করলে কোনো গুনাহ হবে না ৷ কিন্তু অস্বীকার করলে ফাসেক্বী হবে ৷
- হাদীস নং ২ঃ—
أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ اللَّيْلِ يُصَلِّي فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ قَدْ قُبِضَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ ذَلِكَ قُمْتُ حَتَّى حَرَّكْتُ إِبْهَامَهُ فَتَحَرَّكَ، فَرَجَعْتُ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، وَفَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ: ” يَا عَائِشَةُ أَوْ يَا حُمَيْرَاءُ ظَنَنْتِ أَنَّ النَّبِيَّ خَاسَ بِكِ؟ “، قُلْتُ: لَا وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ قُبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ، فَقَالَ: ” أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ “، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ” هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ . قَالَ الْأَزْهَرِيُّ: ” قَوْلُهُ قَدْ خَاسَ بِكَ يُقَالُ لِلرَّجُلِ إِذَا غَدَرَ بِصَاحِبِهِ فَلَمْ يُؤْتِهِ حَقَّهُ قَدْ خَاسَ بِهِ، ” قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ وَاللهُ أَعْلَمُ،
হযরত আয়েশা রা. বলেন: এক রাতে রসূলুল্লাহ স. নামায আদায় করলেন। তাতে সিজদা এত লম্বা করলেন যে, আমি ধারণা করলাম রসূলুল্লাহ স.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেছে। তাই আমি উঠে গিয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর (পায়ের) বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়া দিলাম। আর তা নড়ে উঠলো। অতঃপর আমি ফিরে এলাম। পরে যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামায শেষ করলেন তখন বললেন: হে আয়েশা! বা হে হুমাইরা! তুমি কি ধারণা করেছ যে, নবী স. তোমার সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি? আমি বললাম: না, ইয়া রসুুলাল্লাহ! স. বরং আপনার লম্বা সিজদার কারণে আমি ধারণা করেছি যে, আপনার ইন্তিকাল হয়ে গেছে। রসূলুল্লাহ স. বললেন: তুমি কি জানো, আজকের এ রাত কোন রাত? আমি বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন: এ রাত হলো অর্ধ শা’বানের (লাইলাতুল বারাআত) রাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে সব বান্দার প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদেরকে ক্ষমা করে দেন; রহমত প্রার্থীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। আর হিংসুকদেরকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী : ৩৮৫৪)
হাদীসটির স্তর : জাইয়্যেদ, মুরসাল। ইমাম বাইহাকী রহ. বলেন: قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ “আমি বলি এটা উত্তম মুরসাল”। আর মুরসাল হাদীসের পক্ষে কোন সমর্থক বর্ণনা থাকলে চার ইমামসহ অনেক নীতিনির্ধারক ইমামের নিকটে সেটা গ্রহণযোগ্য। (শরহু নুখবাতিল ফিকার: মুরসাল হাদীস অধ্যায়)
আর এ হাদীসের পক্ষে বহুসংখ্যক সমর্থক হাদীস রয়েছে এবং অনেক ইমাম এটাকে সহীহ বলেছেন। ইমাম বাইহাকী আরও বলেন:
وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَاء بْنُ الْحَارِثِ أَخَذَهُ مِنْ مَكْحُولٍ “
হতে পারে আলা বিন হারিস এ হাদীসটি হযরত মাকহুল রহ. থেকে গ্রহণ করেছেন”। আর মাকহুল হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করে থাকেন। এ হিসেবে হাদীসটি তখন আর মুরসালও থাকে না; বরং সরাসরি সহীহ হয়ে যায়। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী : ৩৮৫৪)
- মুরসাল হাদীসের গ্রহনযোগ্যতা বিষয়ে ইমাম শাফেঈ রহঃ বলেন:—
মুরসাল হাদীসের সমর্থনে একটা মারফূ অথবা একটা মওকুফ অথবা আরেকটি মুরসাল হাদীস পাওয়া গেলে উক্ত মতনের মুরসাল দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য ৷ (শরহুল ই’লালুত তিরমিজী ১/৫৪৩)
- ইমাম মুসলিম রহ. বলেন:—
أَنَّ الْقَوْلَ الشَّائِعَ الْمُتَّفَقَ عَلَيْهِ بَيْنَ أَهْلِ الْعِلْمِ بِالأَخْبَارِ وَالرِّوَايَاتِ قَدِيمًا وَحَدِيثًا أَنَّ كُلَّ رَجُلٍ ثِقَةٍ رَوَى عَنْ مِثْلِهِ حَدِيثًا وَجَائِزٌ مُمْكِنٌ لَهُ لِقَاؤُهُ وَالسَّمَاعُ مِنْهُ لِكَوْنِهِمَا جَمِيعًا كَانَا فِي عَصْرٍ وَاحِدٍ وَإِنْ لَمْ يَأْتِ فِي خَبَرٍ قَطُّ أَنَّهُمَا اجْتَمَعَا وَلاَ تَشَافَهَا بِكَلاَمٍ فَالرِّوَايَةُ ثَابِتَةٌ وَالْحُجَّةُ بِهَا لاَزِمَةٌ
অতীত ও বর্তমান কালের হাদীস বর্ণনাকারীদের ঐকমত্য হচ্ছে, কোন নির্ভরযোগ্য রাবী যখন কোন নির্ভরযোগ্য রাবী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং তারা দু’জন একই যুগের লোক হওয়ার দরুন তাদের মধ্যে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ এবং কোন রিওয়ায়াত শুনার সম্ভাবনা থাকে; যদি কোন হাদীস বা খবর দ্বারা কখনো তাদের একত্রিত হওয়ার সঠিক কথা বা সামনাসামনি বসে আলোচনা করার কথা জানা নাও যায়, তবুও আলিমদের মতে এ জাতীয় হাদীস প্রামাণ্য বলে স্বীকৃত হবে এবং তা দলীল হিসেবে গৃহীত হবে। (মুকাদ্দামায়ে মুসলিমঃ ১/২৯, পরিচ্ছদঃ ০৬ )
- হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ-
متى توبع السيّئُ الحفظ بمعتبر كان يكون فوقَه أو مثله لا دونه وكذا المختلط الذي لم يتميز و المستور و الاسناد المرسل و كذا المدلس إذا لم يعرف المحذوف من إسناده صار حديثهم حسناً لا لذاته
যার স্মরণশক্তিতে দূর্বলতা রয়েছে এমন কোন রাবীর সমর্থনে যখন উল্লেখযোগ্য কোন হাদীস পাওয়া যায় আর তা তার সমকক্ষ বা উপরে হয় তার নিচে না হয় অথবা উক্ত সমর্থন এমন রাবীর পাওয়া যায় যে গোলতাল পাকিয়ে ফেলে, একটি থেকে অন্যটি আলাদা করতে পারে না অথবা উক্ত সমর্থন কোন অজানা রাবীর বা মুরসাল সনদের বা কোন মুদাল্লাস সনদের পাওয়া যায় তখন তাদের হাদীস (যঈফের সীমা অতিক্রম করে) হাসান হয়ে যাবে। তবে হাসান লিযাতিহী নয় বরং হাসান লি-গাইরিহী। ( ইবনে হাজার, শরহে নুখবাহ, পৃষ্ঠা ৭৪,৭৫।)
- ইবনে কাসির রহ. উল্লেখ করেনঃ-
قَالَ اَلشَّيْخُ أَبُو عَمْرٍو لَا يَلْزَمُ مِنْ وُرُودِ اَلْحَدِيثِ مِنْ طُرُقِ مُتَعَدِّدَةٍ أَنْ يَكُونَ حَسَنًا لِأَنَّ اَلضَّعْفَ يَتَفَاوَتُ فَمِنْهُ مَا لَا يَزُولُ وَمِنْهُ ضَعْفٌ يَزُولُ بِالْمُتَابَعَةِ كَمَا إِذَا كَانَ رَاوِيهِ سَيِّئَ اَلْحِفْظِ أَوْ رَوَى اَلْحَدِيثَ مُرْسَلًا فَإِنَّ اَلْمُتَابَعَةَ تَنْفَعُ حِينَئِذٍ وَيُرْفَعُ اَلْحَدِيثُ عَنْ حَضِيضِ اَلضَّعْفِ إِلَى أَوْجِ اَلْحُسْنِ أَوْ اَلصِّحَّةِ
শায়েখ আবূ আমর উবনুস সলাহ রহিঃ বলেছেন কোন হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান হওয়া জরূরী নয়। কেননা দূর্বলতার একাধিক স্তর রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয় না। আর কতক দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। যেমন কোন দূর্বল হাদীসের বর্ণনাকারী যদি দূর্বল স্মৃতিশক্তির হয় অথবা হাদীসটি মুরসাল সনদে বর্ণিত হয় তখন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটিকে পাওয়া উল্লেখিত দূর্বল হাদীসকে উপকৃত করবে এবং হাদীসটি দূর্বলতার তলদেশ থেকে হাসান অথবা সহীহের শিখরে উঠে আসবে। (ইখতিসারু উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৪৩) - সুতরাং যেহেতু শর্তস্বাপেক্ষে মুরসাল হাদীস গ্রহনযোগ্য, সেহেতু শবে বারাআতের রাতে ইবাদত বন্দেগী করা মুস্তাহাব ৷ কারণ বিপরীতধর্মী কোনো হাদীসের প্রমাণ নেই ৷৷
- হাদীস নং ৩ঃ— حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْخُزَاعِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ أَبُو بَكْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَنْبَأَنَا حَجَّاجٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ فَقَدْتُ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَخَرَجْتُ أَطْلُبُهُ فَإِذَا هُوَ بِالْبَقِيعِ رَافِعٌ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ ” يَا عَائِشَةُ أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ ” . قَالَتْ قَدْ قُلْتُ وَمَا بِي ذَلِكَ وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ . فَقَالَ ” إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعَرِ غَنَمِ كَلْبٍ ”.
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৯)
হাদীসটির স্তরঃ- হাসান লি গাইরিহী ৷
হাদীসটাকে শায়েখ আলবানী যঈফ বলেছেন একটা কারণে ৷ সেটা হলোঃ-
يحيى بن معين يقول: الحجاج بن أرطأة كوفي [صدوق ] ليس بالقوي، يدلس عن محمد بن عبيد الله العرزمي عن عمرو بن شعيب.
أبا زرعة يقول: الحجاج بن أرطأة صدوق مدلس
حدثنا عبد الرحمن سمعت أبي يقول: حجاج بن أرطأة صدوق يدلس عن الضعفاء
এই হাদীসের রাবী “হাজ্জাজ” সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেছেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু শক্তিশালী নন। তিনি আমর থেকে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু দুর্বলদের থেকে তাদলীস করেন। (জরাহ ওয়াত্তাদীল, রাবী নং ৬৭৩)
তাহলে বুঝা গেলো যে, আলবানী সাহেবের উক্ত হাদীসটাকে যঈফ বলার কারণ হচ্ছে হাসানুল হাদীস “হাজ্জাজ” কর্তৃক দুর্বল রাবীদের থেকে তাদলিসগুলো যঈফ ৷
কিন্তু এই হাদীসে হাজ্জাজ দুর্বল রাবী থেকে আন সিগাহ দ্বারা বর্ননা করেন নি ৷
বরং তিনি এই হাদীসটিতে “يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ” এর মতো বুখারী-মুসলিমের বিশ্বস্ত রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন ৷৷ “ইয়াহইয়া ইবনে আবু কাসির” সহীহ বুখারীর মশহুর রাবী ৷ দেখুনঃ ১৫৩,১৫৪,২৯৮,৩৬০,৪০০,৫৫৩, ইত্যাদি ৷
যেহেতু তিনি যঈফ রাবী থেকে বর্ননা না করে বরং সিক্বাহ রাবীর থেকে হাদীসটা বর্ননা করেছেন এবং হাদীসটির শাহেদ আছে ৷
সুতরাং এই হাদীসটি যঈফ নয়,বরং কমসে কম হাসান স্তরের হবে ৷৷
- হাদীস নং ৪ঃ—
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلاَّلُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَنْبَأَنَا ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا . فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ ” .
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত পড় এবং এর দিনে সওম রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৮)
এই হাদিসের রাবী (আবু বকর বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ) ইবনে আবু সাবরাহ >> এর জন্যই আলবানী সাহেব হাদীসটিকে ডাইরেক্ট জাল বা মওযূ বলে দিয়েছেন ৷৷৷
আসুন,, ইবনে আবু সাবরাহ সম্পর্কে প্রখ্যাত সকল ইমামদের মতামত দেখিঃ—
أبو دواد السجستاني : مفتي أهل المدينة
ইমাম আবু দাউদ রহ,বলেন: তিনি মদীনার মুফতী ছিলেন ৷
الذهبي : صدوق و عالم مكثر
ইমাম যহাবী রহ, বলেন: তিনি সত্যবাদী ও আলেম ৷
مصعب بن عبد الله الزبيري : كان من علماء قريش
মুসাআব ইবনে অাব্দুল্লাহ বলেন:- তিনি কুরাইশ আলেমদের মধ্যে একজন ছিলেন ৷
محمد بن سعد كاتب الواقدي : كثير العلم والسماع والرواية
মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ বলেন: তিনি প্রচুর জ্ঞানী,ও শ্রবণ শক্তিসম্পন্ন বর্ননাকারী ৷
يحيى بن معين : ليس حديثه بشيء، ومرة: ضعيف الحديث
ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন: তিনি হাদীস শাস্ত্রে মজবুত নন, অন্যত্র বলেন: তিনি হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল ৷
ابو سبرة
অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই বুঝে আসে যে, হাদীসটা মওজূ বা বানোয়াট নয় ৷ আবার নিসফে মিন শাবানের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার বিষয়ে এই হাদীসটি ছাড়াও আরো দুইটা হাদীস উপরে দেওয়া হয়েছে ৷৷ সুতরাং সনদ হিসেবে হাদীসটা জাল নয় বরং যঈফ ৷ আর সমর্থক হাদীস থাকার কারণে বর্জনযোগ্য নয়, বরং গ্রহনযোগ্য ৷৷
- হানাফী ফিকাহ মোতাবেক যেকোনো যঈফ হাদীস যেকোনো শায়েখের মতের চাইতে উত্তম ৷ যেমনঃ—
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ মুরতাযা যাবীদী রহঃ বলেন:—
يروى عنه أنه كان يقول: ضعيف الحديث أحب إلي من آراء الرجال، وكأن المراد منه الضعيف الذي من قبل سوء حفظ راويه…
‘‘ইমাম আবূ হানীফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, ‘মানুষের ইজতিহাদী মতের চেয়ে যয়ীফ (দুর্বল) হাদীস আমার নিকট অধিক প্রিয়।’ এখানে যয়ীফ বলতে সে হাদীস বুঝানো হয়েছে যার দুর্বলতা শুধু রাবীর মুখস্থ শক্তির কারণে।’’ [যাবীদী, উকূদুল জাওয়াহির, পৃ. ২২]
সুতরাং যে কোনো আয়েখ শায়েখের বিদআত মতের চাইতে যঈফ সনদের হাদীস আমল করাই নিরাপদ ৷
- লাইলাতুল নিসফি মিন শা’বান বা শবে বারাআত সম্পর্কে পূর্ববর্তী আলেমদের অভিমতঃ—
- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মাক্কী রাহ. (মৃত্যু-২৭২ হিজরি) বলেনঃ—
.
وقال أبو عبد الله محمد بن إسحاق بن العباس المكي الفاكهي (المتوفى : 272هـ)
ذِكْرُ عَمَلِ أَهْلِ مَكَّةَ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَاجْتِهَادِهِمْ فِيهَا لِفَضْلِهَا وَأَهْلُ مَكَّةَ فِيمَا مَضَى إِلَى الْيَوْمِ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، خَرَجَ عَامَّةُ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَصَلَّوْا وَطَافُوا، وَأَحْيَوْا لَيْلَتَهُمْ حَتَّى الصَّبَاحَ بِالْقِرَاءَةِ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، حَتَّى يَخْتِمُوا الْقُرْآنَ كُلَّهُ، وَيُصَلُّوا، وَمَنْ صَلَّى مِنْهُمْ تِلْكَ اللَّيْلَةَ مِائَةَ رَكْعَةٍ ‘
(أخبار مكة للفاكهي: ذكر عمل أهل مكة ليلة النصف من شعبان واجتهادهم فيها لفضلها )
মক্কাবাসী’গণ শবে বারাআতের রাত্রে ইবাদত বন্দেগী করতেন ফজীলত বিশ্বাস করে ৷
মক্কাবাসীগণ অতীত থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যখন শাবানের মধ্য রজনী (শবে বারআত) পেতেন, তখনই নারী-পুরুষ সকলেই মসজিদে হারামে এসে সালাত পড়তেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতেন।
এবং এমনকি রাত্রি জাগরণ করে ভোর পর্যন্ত কোরআন তিলাওয়াত করতেন। এভাবে কুরআন খতম করতেন এবং সালাত পড়তেন। এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ ১০০ রাকাত সালাতও পড়েন ৷ [ আখবারু মাক্কা লিল-ফাকিহী,পৃঃ ৩/৬৪ ]
- ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেনঃ
وَأَمَّا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَفِيهَا فَضْلٌ، وَكَانَ فِي السَّلَفِ مَنْ يُصَلِّي فِيهَا
শাবানের মধ্য রজনীর ফযীলত রয়েছে। সালাফগণ এই রাত্রে সালাত আদায় করতেন। [ফাতাওয়া আল-কুবরা-৫/৩৪৪]
- তিনি আরও বলেন:—
ليلة النصف من شعبان، فقد روى في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها.
‘শবে বারাআতের ফজিলতের ব্যাপারে অনেক মারফু হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, এটা ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। সালাফের অনেকে বিশেষভাবে এ রাতে (নফল) নামাজ পড়তেন।’ (ইকতিজাউস সিরাতিল মুসতাকিম : ২/১৩৬-১৩৭, প্রকাশনী : দারু আলামিল কুতুব, বৈরুত)
- আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রাহি. বলেনঃ-
وأما صيام يوم النصف منه فغير منهي عنه، فإنه من جملة أيام البيض الغر المندوب إلى صيامها من كل شهر. وقد ورد الأمر بصيامه من شعبان بخصوصه،
শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে নিষেধ নেই। কারণ, ১৫ তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীজ’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর প্রত্যেক মাসের এ তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ করে শাবান মাসে রোজা রাখতে বলেছেন। (লাত্বায়িফুল মাআরিফ ,পৃষ্ঠা নং ১৩৬)
- ইবনে রজব রহঃ আরও বলেন:—
وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام كخالد بن معدان ومكحول ولقمان بن عامر وغيرهم يعظمونها ويجتهدون فيها في العبادة
শামের কিছু তাবেঈন যেমনঃ খালিদ বিন মা’দান, মাকহুল, লুকমান বিন আমের এবং অন্যান্য তাবেঈরা শবে বারাআতের রাত কে খুব মহিমান্বিত রাত মনে করতেন এবং রাতে খুব ইবাদত বন্দেগী করতেন ৷ (লাত্বায়িফুল মাআরিফ ,পৃষ্ঠা নং ১৩৭)
তিনি আরো বলেন:—
فينبغي للمؤمن أن يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالى ودعائه بغفران الذنوب وستر العيوب وتفريج الكروب وأن يقدم على ذلك التوبة فإن الله تعالى يتوب فيها على من يتوب.
অতএব, মু’মীনদের কর্তব্য হলো: শবে বারাআতের রাতে সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে, আল্লাহর যিকির, দুআ, ক্ষমা প্রার্থনা নিজের দোষত্রুটি গোপন রাখার দুআ এবং সকল বিপদাপদ থেকে মুক্তির দুআ করা উচিৎ ৷ সর্বপরি এ রাতে বেশী বেশী তওবা করা উচিৎ ৷ কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ রাতে ক্ষমার যোগ্যদের কে ক্ষমা করে দেন ৷ (লাত্বায়িফুল মাআরিফ ,পৃষ্ঠা নং ১৩৮)
- শাইখ ইবনে উসাইমিন রাহ. বলেনঃ—
.
وقال الشيخ محمد بن صالح بن محمد العثيمين (المتوفى : 1421هـ)
302 – ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان روي في فضلها أحاديث ومن السلف من يخصها بالقيام ومن العلماء من السلف وغيرهم من أنكر فضلها وطعن في الأحاديث الواردة فيها، لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم على تفضيلها.
(مجموع فتاوى ورسائل ابن عثيمين: 7/ 205)
শবে বারাআতের ফযীলতের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে এই রাত্রিতে সালফে সালেহীন উলামায়ে কেরাম সালাত পড়তেন।
আবার কেউ কেউ, এই রাত্রের ফযিলত অস্বীকার করেন এবং এই ব্যাপারে বর্ণিত হাদিস সমুহের ব্যাপারে আপত্তি করেছেন।
কিন্তু অধিকাংশ আহলে ইলম উলামায়ে কেরাম অথবা তাদের মধ্যে অধিকাংশই এই রাত্রের ফযিলতের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন -৭/২০৫, তরজমা নং ৩০২ ]
- ইমাম আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি বলেন:—
وقال العلامة محمد أنور شاه بن معظم شاه الكشميري الهندي (المتوفى : 1353هـ)
739] هذه الليلة ليلة البراءة وصح الروايات في فضل ليلة البراءة، وأما ما ذكر أرباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا أصل لها،
(العرف الشذي شرح سنن الترمذي :2/172 )
এই রাত্রিটা হচ্ছে লাইলাতুল বারাআত। লায়লাতুল বারাতের ফযীলতের ব্যাপারে রেওয়াত গুলো সহিহ। এমনিভাবে আরবাবে কুতুবে যে, যঈফ ও মুনকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। [আনোয়ার শাহ কাস্মীরী, আরফুশ শাজী শরহে তিরমিজি, পৃঃ-২/১৭২ ]
- হাফিয ইবনে হাজার হাইসামি রহ. বলেন :—
وَالْحَاصِلُ أَنَّ لِهَذِهِ اللَّيْلَةِ فَضْلًا وَأَنَّهُ يَقَعُ فِيهَا مَغْفِرَةٌ مَخْصُوصَةٌ وَاسْتِجَابَةٌ مَخْصُوصَةٌ وَمِنْ ثَمَّ قَالَ الشَّافِعِيُّ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – إنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِيهَا.
‘সারকথা হলো, লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত সুসাব্যস্ত একটি বিষয়। এ রাতে বিশেষভাবে ক্ষমা করা হয় এবং বিশেষভাবে দুআ কবুল করা হয়। এ ভিত্তিতেই ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেছেন, এ রাতে দুআ করা মুস্তাহাব।’
(আল-ফাতাওয়াল ফিকহিয়্যাতুল কুবরা : ২/৮০, প্রকাশনী : আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যা)
সুতরাং যেই রাতে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন, সেই রাতে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিকল্প নেই ৷
তবে, নামাজ ও রোজার পরিবর্তে উৎসব, আতশবাজি, মিছিল ইত্যাদি তে সওয়াব পাওয়া যাবে মনে করলে নিঃসন্দেহে সেটা জায়েয হবে না ৷
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন, আমিন ৷৷