নামাযের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব কাজ সমূহ
নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবের বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো,
নামাযের বাহিরে ৭টি ফরজ। যেগুলোকে নামজের শর্ত বলা হয়।
১। শরীর পবিত্র থাকা
২। কাপড় পবিত্র থাকা
৩। নামজের স্থান পবিত্র থাকা ( মারাকিল ফালাহ-২০৮)
৪। সতর ঢাকা ( মারাকিল ফালাহ-২১০)
৫। কেবলামুখি হওয়া ( মারাকিল ফালাহ-২১১)
৬। ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়া
৭। নিয়ত করা ( মারাকিল ফালাহ-২১৫)
নামাজের ভিতরের ছয়টি ফরজ। যেগুলোকে নামজের রোকন বলা হয়।
১। তাকবিরে তাহরিমা ( আল্লহু আকবার) বলা
২। কিয়াম করা
৩। কেরাত পড়া
৪। রুকু করা
৫। দুই সেজদা করা
৬। শেষ বৈঠকে তাহাহ্যুদ পড়ার সময় বসা। (হেদায়া-১/৯৭)
নামজের ওয়াজিবসমূহ
১। তাকবিরে তাহরিমার সময় আল্লাহু আকবার বলা (আদ্দুররুল মুখতার-মাআ শামী-২/২৭৮)
২। সুরা ফাতেহা পড়া
৩। সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো
৪। ফরজ নামজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা
৫। কেরাতের পূর্বে সূরা ফাতেহা পড়া
৬। সূরা ফাতেহা একাধিকবার না পড়া (হিন্দিয়া-১/১২৮)
৭। যেহরী(উচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া
৮। সিররী (অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২১৫)
৯। নামাজের রোকনসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ( হিন্দিয়া-১/১২৯)
১০। রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো (শামী-২/১৫৮)
১১। সেজদার মাঝে কপাল ও নাক জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখা। (শামী-২/২০৪)
১২। প্রত্যেক রাকাতে এক সেজদার পর অপর সেজদা করা (শামী -২/১৫৩)
১৩। উভয় সেজদার মাঝে বসা। (শামী-২/১৫৮)
১৪। প্রথম বৈঠক করা (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দুরাকাত পড়ার পর) । (বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৯৯)
১৫। প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদ পড়া। (শামী -২/১৫৯)
১৬। প্রথম বৈঠকের পরে বিলম্ব না করে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো । (মারাকিল ফালাহ-১৩৬)
১৭। নামজের ক্রিয়াসমূহের মাঝে তারতীব রক্ষা করা। (হালবী কাবীর-২৯৭)
১৮। সালাম শব্দ দ্বারা নামাজ শেষ করা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬২)
১৯। বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২০। দুই ঈদের নামজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২১। দুই ঈদের নামজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর বলা। (মারাকিল ফালাহ-৯৩)
নামজের সুন্নাত সমূহ
১। ফরজ নামাজের জন্য আজান ও ইকামত বলা।(আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/৪৮)
২। তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত উঠানো।(তানভীরুল আবসার মাআ শামী-২/১৮২)
৩। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক রাখা। (ফাতাওয়া শামী-২/১৭১)
৪। ইমামের জন্য তাকবীরগুলো উচ্চস্বরে বলা।(হিন্দিয়া-১/১৩০)
৫। সানা পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭১)
৬। ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭২)
৭। ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৪)
৮। অনুচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলা। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৩)
৯। সানা, আউযুবিল্লা্হ বিসমিল্লাহ, আমীন অনুচ্চস্বরে বলা। (হিন্দিয়া-১৩১)
১০। হাত বাঁধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।(হিন্দিয়া-১/১৩১)
১১। পুরুষের জন্য নাভির নিচে, আর মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা।(হিন্দিয়া-১/১৩০)
১২। এক রোকন থেকে অন্য রোকনে যাবার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৩-৪৮৯)
১৩। একাকী নামাজ পাঠকারীর জন্য রুকু থেকে উঠার সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” ও “রব্বানা লাকাল হামদ” বলা। ইমামের জন্য শুধু “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলা আর মুক্তাদির জন্য শুধু “রব্বানা লাকাল হামদ” বলা।(মারাকিল ফালাহ-২৭৮)
১৪। রুকুতে “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” বলা।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৮)
১৫। সেজদায় বলা “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা”।(বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৯৪)
১৬।রুকুতে উভয় হাটু আঁকড়ে ধরা। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৭)
১৭। রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা। আর মহিলার জন্য মিলিয়ে রাখা।(শামী-২/১৭৩)
১৮। পুরুষের জন্য নামাজে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখে আঙ্গুলগুলো কেবলার দিক করে রাখা। আর মহিলার জন্য উভয় পা ডান দিকে বের করে জমিনের উপর বসা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৪৯৬)
১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদের পর দুরুদ শরীফ পড়া।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০০)
২০। দুরুদের পর দোয়া পড়া। হিন্দিয়া-১/১৩০)
২১। তাশাহ্যুদে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার সময় শাহাদাত(তর্জনি) আঙ্গুল দ্বারা কেবলার দিকে ইশারা করা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০১-৫০২)
নামাজের মুস্তাহাবসমূহঃ
১। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় উভয় পায়ের পাতার উপর, সেজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০৩)
২। তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় হাত চাদর থেকে বাহিরে বের করে রাখা।
৩। সালাম ফিরানোর সময় উভয় কাঁধের উপর দৃষ্টি রাখা।(মারাকিল ফালাহ-১৫১)
৪। নামাজে মুস্তাহাব পরিমান ক্বেরাত (ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাস্যাল- সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত।আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাস্যাল- সূরা তরেক থেকে বায়্যিনা পর্যন্ত। মাগরীবে কিসারে মুফাস্যাল- সূরা যিলযাল থেকে শেষ পর্যন্ত সূরাগুলোর যেকোনটি) পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২/২৬১)
৫। জুমআর দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ-লাম-মিম সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২/২৬৫)
৬।যথা সম্ভব কাশি ও ঢেকুর চেপে রাখা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৬)
৭। হাই আসলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৭)
والله اعلم بالصواب