একবার সাহাবী হযরত জাবের রাঃ দয়াল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘরে দাওয়াত করলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীর দাওয়াত কবুল করলেন। হযরত জাবের রাঃ খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাড়িতে চলে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে খোশ খবরটা দিলেন,আর মেহমানদারির জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। বড় ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে খাসী জবাই করে অন্য কাজে যখন হযরত জাবের রাঃ ঘর থেকে বাহিরে গেলেন, ইতিমধ্যে হযরত জাবের রাঃ’র ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে খাসী তালাশ করতে লাগলো। বড় ভাই তাকে জানা খাসীটিকে জবাই করা হয়েছে । ছোট ভাই বায়না ধরলো-খাসী কিবাবে জবাই করে আমাকে তা দেখাও । অগত্যা বড় ভাই ছুরি হাতে করে ঘরের পেছনে গিয়ে বললো, এখানে খাসী জবাই করা হয়েছে । ছোট ভাই জানতে চাইলো,কিভাবে ? বর্ণনা করে বোঝতে না পেরে অবশেষে বড় ভাই বললো, তাহলে তুমি মাটিতে শুয়ে পড় । আমি তোমাকে দেখাই । ছোট ভাই মাটিতে শোয়ার পর বড় ভাই তার গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করার নমুনা দেখাতে গিয়ে ছোট ভাইকে সত্যি সত্যি জবাই করে ফেললো । বড় ভাই যখন দেখলো-ছোট ভাইয়ের গলা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সে ছটফট করতে করতে এক সময় নিস্তেজ হয়ে গেছে, তখন বুঝলো ব্যাপারটি কি ঘটেছে । আতঙ্কিত হয়ে সে নিকটবর্তী এক খেজুর গাছের চূড়ায় উঠে আত্মগোপন করে রইলো। এদিকে হযরত জাবের রাঃ পুত্রদের খোজে বাড়ীর পেছনে এসে ছোট ছেলের অবস্হা দেখে থমকে গেলেন । অত:পর তাকে বুকে করে স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন,তাড়াতড়ি একটি কম্বল নিয়ে এসো,বাচ্চাটিকে শুইয়ে দিই । স্ত্রী রক্তমাখা সন্তানের লাশ দেখে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। কিন্ত স্বামী হযরত জাবের রাঃ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আজ আমাদের শোক প্রকাশ করার দিন না আমাদের দুঃখ দেখলে নবীজীও দুঃখিত হবেন । অতএব,ধৈর্য ধারণ করো । কষ্ট হলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে তোল । তারপর তাঁরা দু’জনে মিলে ছোট ছেলেকে কম্বল মুড়ে রান্নঘরের পেছনে রেখে আসলেন । স্ত্রী রান্নার কাজে মন দিলেন । হযরত জাবের রাঃ বের হলেন বড় পুত্র আবদুল্লাহর খোজে । বাড়ীর পেছনে গিয়ে ছেলের নাম ধরে জোরে ডাক দিলেন । গাছের উপর আত্মগোপন করে বড় ছেলে সব. ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল,আর ভয়ে কাঁপছিল । পিতার ডাক শুনে ভাবলো,এখন পালাতে না পারলে আব্বার হাতে ধরা পড়তে হবে । ধরা পড়লে আর রক্ষা থাকবেনা ।পালানোর উদ্দেশ্যে গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো । পিতা কাছে গিয়ে দেখেন-আবদুল্লাহর দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই ! বড় ছেলে কে কোলে তুলে তিনি বাড়ীর ভিতরে আসলেন । স্ত্রীকে বললেন, আর একটি কম্বল নিয়ে আসার জন্যে । বড় ছেলের এই অবস্হা দেখে দরদী মা পুনরায় আর্তনাদ করে উঠলেন । স্বামী তাকে পুনরায় সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ধৈর্য্য ধরো । আজ আমাদের দুঃখ প্রকাশের দিন না । আজ আমাদের পরম আনন্দের দিন । দয়াল নবীজি অল্প কছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ঘরে তশরিফ আনবেন। তারপর দু’জনে মিলে বড় ছেলের লাশও কম্বলে মুড়ে ছোট ছেলের লাশের পাশে রাখলেন । স্বামী-স্ত্রী তাদের চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেন। হযরত জাবের রাঃ বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে নবীজীর আগমনের অপেক্ষা করতে লাগলেন । অল্পক্ষণের মধ্যে নবীজীকে উটের পিঠে করে আসতে দেখা গেলো । হযরত জাবের রাঃ আনন্দে আত্মহারা হয়ে দৌড়ে গিয়ে স্ত্রীকে নবীজীর আগমনের সংবাদ দিলেন ।এবং পুনরায় তিনি দৌড়ে বাড়ীর সামনে চলে এলেন । নবীজীর উটের কাছে গিয়ে তাঁকে বাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে আনলেন নবীজী জাবের রাঃ’র ঘরের সামনে উট থামিয়ে তাঁর ডান পা মোবারক মাটিতে রাখলেন, বাম পা মোবারক এখনো নামাতে বাকী । এমন সময় জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ নিয়ে উপস্হিত হয়ে বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ্ আপনাকে জাবেরের ছেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে খানা খেতে বলেছেন । অতঃপর নবীজী সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জাবের রাঃ’র ঘরে তশরীফ নিলেন । তাদের সামনে জাবের রাঃ দস্তর খানা বিছিয়ে দিলেন তার স্ত্রী খাবার বেরে দিলেন আর তিনি সেগুলো এনে মেহমানদের সামনে হাজির করলেন তারপর তিনি নবীজীকে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! দয়া করে খানা শুরু করুন নবীজী বললেন, হে জাবের ! তোমার ছেলেরা কোথায় ? তাদেরকে ডাক হযরত জাবের রাঃ বললেন, ইয়া হাবীবাল্লাহ! আপনি দয়া করে খেয়ে নিন ছেলেদেরকে আমি পরে ডাকবো হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন তোমার ছেলেদের ডেকে নিয়ে এসো তাদেরকে সাথে নিয়ে খানা খাবো হযরত জাবের ও তার স্ত্রীর হাত জোড় করে পুনরায় আরজ করলেন , ইয়া রাসূললুল্লাহ ! আপনি খানা খেয়ে নিন আমরা তাদেরকে ডেকে দিচ্ছিতখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জাবের ! এইমাত্র জিব্ররাইল ফেরেশতা আমাকে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে গেলেন ,আমি যেন তোমার ছেলেদেরকে সাথে নিয়ে খানা খাই। নবীজীর একথা শুনে হযরত জাবের রাঃ ও তার স্ত্রী আর ধৈর্য্য ধারণ করতে পারলেনা ।তারা চিৎকার করে কেদে কেদে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন, তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জাবের রাঃ কে বললেন, তোমার ছেলেদের কাছে গিয়ে বল, আল্লাহর নবী তাদেরকে ডাকছেন। হযরত জাবের রাঃ নবীজির নির্দেশ মোতাবেক ছেলেদের লাশের সামনে গিয়ে তা বললেন, সঙ্গে তারা দু’জন আল্লাহু আকবর বলে উঠে নবীজীর কাছে দৌড়ে চলে গেল।অত:পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক হযরত জাবের রাঃ এর দুই সন্তানকে নিয়ে খানা খেলেন। ( সূত্রঃ মাদারেজুন্নাবুয়্যত- মুজিজাতুর রাসুল)
Related Posts
RECENT POSTS
-
পাঁচ ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না sJul 8, 2024 | সালাত/নামায
-
পাঁচটি কাজের পাঁচটি পুরস্কার sJul 8, 2024 | ইসলামী জীবন - আদর্শ