কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত:
কুরআন মাজিদ মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবন গঠনের জন্য একে জানা একান্ত প্রয়োজন। কুরআন মাজিদকে জানতে হলে পড়তে হবে। কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ এ কুরআন তেলাওয়াতের উপর বান্দার উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্নভাবে প্রতিদান দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। সর্বপ্রথম পড়ার ব্যাপারে আদেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ [سورة العلق: ١)
পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
তিনি অন্য আয়াতে বলেন-
فَاقْرَهُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ [سورة المزمل: ٢٠]
-কাজেই তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজসাধ্য পাঠকর।
আল্লাহ তাআলা নিজ নবিকেও কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতের জন্য আদেশ করেছেন। যেমন-
اتلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتابِ [العنكبوت: ٤٥]
আপনি তেলাওয়াত করুন কিতাব হতে যা আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।
সুতরাং কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক। আদেশ করা ছাড়াও আল্লাহ তাআলা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য প্রতিদানের ব্যবস্থা করেছেন। যেমন তিনি এরশাদ করেন:
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ الله وَأَقَامُوا الصَّلوةَ وَانْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةٌ لنْ تَبُورَ .
لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُوْرٌ شَكُورٌ [فاطر: ٢٩، ٣٠]
-যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নাই। এজন্য যে, আল্লাহ্ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরও বেশি দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। (সুরা ফাতির, ২৯-৩০)
হজরত কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন: ইমাম মুতাররিফ রহঃ যখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন তখন বলতেন, এটা ক্বারিদের আয়াত।
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন পাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন: خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
-তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন নিজে শিখে এবং তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি)
তিনি আরো বলেন:
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِّنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ المَ حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ (الترمذي)
-যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব হতে ১টি অক্ষর পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে ১টি নেকি এবং নেকিটিকে ১০ গুণ করা হবে। আমি বলি না الم একটি হরফ, বরং ا একটি হরফ, ل একটি হরফ এবং م একটি হরফ। (তিরমিজি)
* রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন-
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِأَصْحَابِهِ (مسلم)
-তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, উহা কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে। (মুসলিম)
* রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ (بيهقى)
-সর্বোত্তম নফল ইবাদত কুরআন তেলাওয়াত। (বায়হাকী)
তিনি আরো বলেন-
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُعَذِّبُ قَلْبًا وَعَى الْقُرْآنَ (ابن عساكر عن أبي أمامة)
-তোমরা কুরআন পড়। কারণ আল্লাহ তাআলা ঐ অন্তরকে শান্তি দিবেন না, যা কুরআন আয়ত্ব করেছে।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ দ্বারা কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত প্রমাণিত হয়। তাছাড়া সকল বালেগ মুসলিমের উপর যেহেতু সালাত আদায় করা ফরজ আর কুরআন পাঠ ছাড়া সালাত আদায় হয় না। তাই কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের গুরুত্ব কতটুকু তা সহজেই বুঝা যায়।