হজ্জের মূলতত্ত্ব:
হজরত জোনায়েদ (র) এর নিম্ন ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।
এক ব্যক্তি হজরত জোনায়েদ (র) কাছে আগমন করল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন-
-তুমি কোথা থেকে এসেছ?
সে জবাব দিল, আমি হজ্জ করে এসেছি।
– তুমি হজ্জ করেছ?
– জি হাঁ! আমি হজ্জ করেছি।
যখন তুমি হজ্জ করার নিয়তে বাড়ি থেকে বের হও, তখন পাপ পরিত্যাগ করার নিয়ত করেছিলে কি?
– না, আমি তো এই ব্যাপারে কোন চিন্তা করি নি।
তবে তো তুমি হজ্জ করার জন্য বাড়ি হতে বের হও নি। আচ্ছা। হজ্জের সফরে তুমি যে সকল মনযিল অতিক্রম করেছ এবং যেসব স্থানে রাত অতিবাহিত করেছ তখন তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মনযিল এবং সেই পথের ঘাঁটিসমূহ অতিক্রম করার নিয়ত করেছিলে কি?
– না, আমি করি নি।
– তাহলে তোমার হজ্জ কীভাবে শুদ্ধ হলো? আচ্ছা যখন তুমি এহরাম বাধার নিয়ত করেছ প্রাত্যহিক কাপড় দেহ হতে ছেড়েছ, তখন তার সাথে তোমার খারাপ স্বভাবও বর্জন করেছ কি?
– আমি সেদিক খেয়ালই করি নি।
– তাহলে তোমার এহরাম বাঁধাই ঠিক হয় নি। যখন তুমি আরাফাতে দণ্ডায়মান হয়েছিলে তখন কি তোমার মনে এই ধারণা হয়েছিল যে তুমি আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান এবং তুমি তাকে দেখছ?
– না আমার এমন কল্পনা হয় নি।
তাহলে তুমি যেন আরাফাতেই যাও নি। তুমি মুযদালেফায় গিয়ে তোমার কামরিপু পরিত্যাগ করেছ কি?
– না।
তাহলে তুমি মুযদালেফায়ও যাও নি। তুমি তওয়াফ করার সময় আল্লাহর অনুগ্রহ অনুভব করেছ কি?
– না, আমি অনুভব করি নি।
– তাহলে তুমি তওয়াফও কর নি। সাফা মারওয়া দৌড়ানোর সময় তার উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি?
না! করি নি।
তাহলে তোমার সায়ী হয় নি। কুরবানী করার সময় তোমার পাপ বিসর্জন দেওয়ার নিয়ত করেছ কি?
– না, করি নি।
তাহলে তোমার কুরবানী কী করে হলো? আচ্ছা কঙ্কর নিক্ষেপ করার কালে তোমার অসৎ সঙ্গীদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করার নিয়ত করেছিলে কি?
– না।
তাহলে তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয় নি। তুমি ফিরে যাও এবং এসব গুণাবলির সাথে হজ্জ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীম পর্যন্ত গিয়ে পৌছ। যে মাকাম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন: وإبراهيم الذي وفى “ইবরাহীম তার প্রবুর কৃতজ্ঞত র হক আদায় করেছেন।” (সূরা: আন্-নাজম- ৩৭)
বুযুর্গদের হজ্জ:
হজরত আবু ইয়াযিদ (র) বলেন- আমি প্রথমবার হজ্জ করতে গিয়ে শুধু কাবাগৃহ ছাড়া আর কিছুই দেখি নি। দ্বিতীয়বার হজ্জ করতে গিয়ে কাবা গৃহ ও তাঁর মালিককে দেখেছি। তৃতীয়বার হজ্জ করতে গিয়ে কাবার মালিক ব্যতীত আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় নি।
হজরত ফুজায়েল ইবনে আইয়াজ বলেন; আমি আরাফাতে অবস্থানকালীন দেখলাম, সবাই দোয়া করছে আর এক যুবক মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রয়েছে।
আমি তাকে বললাম: হে যুবক! তুমি কেন দোয়া করছ না?
যুবক বলল: আমি ভেবে দেখলাম যে, আমি মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলেছি। লজ্জায় দোয়া করার জন্য আমি হাত উঠাতে পারছি না।
আমি বললাম- তুমি দোয়া কর! এসব লোকের বরকতে আল্লাহ তোমাকে তোমার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন।
আমার কথা শুনে সে দোয়া করার উদ্দেশ্যে হাত উঠাতেই তার মুখ থেকে এমন জোরে চিৎকার বের হলো যে সাথে সাথেই তার প্রাণবায়ু বের হয়ে গেল। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
(কাশফুল মাহজুব বাংলা ২৭২-২৭৪ পৃষ্ঠা)