নির্দিষ্ট মাযহাব মানার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা ও ঐক্যমতঃ একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, শরী‘আতের মৌলিক ও স্পষ্ট বিধি-বিধান এবং আকীদাগত বিষয়ে কোন ইমামের তাকলীদ বা অনুসরণের প্রয়োজন নেই।” কিন্তু প্রান্তিক ও শাখাগত অনেক মাসাইলের ক্ষেত্রে যেহেতু কুরআন হাদীসে বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়, আর দলীল প্রমাণের আলোকে বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ একাধিক আয়াত বা হাদীসকে সামনে রেখে আমলযোগ্য সিদ্ধান্তটি খুঁজে বের করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়, এ জন্য সে সকল বিষয়ে আমল করতে গিয়ে কোন মুজতাহিদ ইমামের মতামত তথা মাযহাব গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মাযহাব গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা এবং শরী‘আতের পক্ষ থেকে তার অনুমোদনের বৈধতা বরং জরুরী হওয়ার বিষয়টি আমরা পূর্বের দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণ করার প্রয়াস পেয়েছি। এখন যে বিষয়টি জানা দরকার তা হল, উলামা ও ফুকাহায়ে কেরামের ইজমা বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে একথা প্রমাণিত যে, বর্তমানে চার ইমামের মাযহাব ছাড়া অন্য কোন মাযহাব গ্রহণ করা বৈধ নয়। সুতরাং চার ইমামের মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি তা তিনি যত বড় ব্যক্তিত্ব সম্পন্নই হোন না কেন তার মাযহাব গ্রহণ করা ইজমায়ে উম্মত অর্থাৎ উম্মতের সর্ববাদী সিদ্ধান্তের খেলাফ হবে যা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয নয়।

নিম্নে এ বিষয়ক কিছু উক্তি পেশ করা হচ্ছেঃ

১. গাইরে মুকাল্লিদ বন্ধুদের মান্যবর ইমাম, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. (মৃত্যু:৭২৮ হি.) চার মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মুজতাহিদের মাযহাব মানা যাবে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, الاجماع اليوم قدانعقد على خلاف هذا القول.অর্থঃ এর বিপরীতে (চার মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মুজতাহিদের মাযহাব না মানার ব্যাপারে) আজ ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যা ২০/৫৮৪) আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হল, উম্মতের ঐক্যমতে বর্তমানে চার ইমামের মাযহাবই অনুসরণযোগ্য।

২. প্রখ্যাত হাদীস গবেষক ও বিশ্লেষক ইমাম যাহাবী রহ. (মৃত্যু:৭৪৮হি.) বলেন, فيمتنع تقليد غير الاربعة في القضاء والافتاء لان المذاهب الاربعة انتشرت تحررت. অর্থঃ মাসআলা মাসাইল সংক্রান্ত ফাতাওয়া ও আদালতের ফায়সালার ক্ষেত্রে চার ইমাম ব্যতীত অন্য কারো তাকলীদ ও অনুসরণ নিষিদ্ধ। কেননা এই চার মাযহাব পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা কিতাবাকারে সংকলিত হয়েছে। (ফয়যুল কাদীর ১/২৬৯ ও ২৮৮)

৩. ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে খালদুন রহ. (মৃত্যু: ৮০৮ হি.) তার জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ তারীখে ইবনে খালদুনে লিখেছেনঃوقد صار اهل الاسلام اليوم على تقليد هولاء الائمة الاربعة.অর্থঃ এ যুগে ইসলামের অনুসারীগণ এই চার ইমামের একজনকে তাকলীদ (অনুসরণ) এর জন্য বরণ করে নিয়েছেন। (তারীখে ইবনে খালদুন ১/৪৭৯)

৪. বিশিষ্ট ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. (মৃত্যু: ৯৭০ হি.) বলেন, وماخالف الائمة الاربعة فهو مخالف للاجماع.অর্থঃ যে মাযহাব ও মতামত ইমাম চতুষ্টয়ের বিপরীত হবে তা মুসলিম উম্মাহর ইজমা তথা সর্ববাদী সিদ্ধান্তের বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হবে। (আল আশবাহ-১৬৯)

৫. ভারতবর্ষের বিখ্যাত ফকীহ ও ফিকহের মূলনীতি বিশেষজ্ঞ শায়খ আহমদ মোল্লা জিয়ুন রহ. স্বীয় গ্রন্থ তাফসীরে আহমাদিয়াতে লিখেনঃقد وقع الاجماع على ان الاتباع انما يجوز للاربع …وكذا لايجوز لاتباع لمن حدث مجتهدا مخالفا لهم.অর্থঃ কেবল ইমাম চতুষ্টয়ের তাকলীদই বৈধ হবে, এ ব্যাপারে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনুরূপ এদের বিপরীতে কোন নব্য মুজতাহিদের অনুসরণ বৈধ হবে না। (তাফসীরে আহমাদিয়্যা পৃ: ৩৪৬)

৬. হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. (মৃত্যু: ১১৭৬ হি.) বলেন,ان المذاهب الاربعة المدونة المحررة قد اجتمعت الامة اومن يعتد به منها على جواز تقليدها الى يومنا هذا.অর্থঃ সংকলিত ও গ্রন্থবদ্ধ এই চার মাযহাবের অনুসরণের বৈধতার উপর আজও পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ অর্থাৎ উম্মাহর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/২৮৬)

চলবেঃ উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ দ্বারা জানা গেল, বর্তমানে দ্বীন মানতে হলে উম্মতকে চার মাযহাবের কোন একটিকে অনুসরণ করতে হবে। এর বাইরে কোনো মাযহাব মানা হলে তা হবে ইজমার পরিপন্থী; অবৈধ ও নাজায়িয এবং স্পষ্ট গোমরাহী। প্রশ্ন হল চার ইমামের মাযহাবই যখন সহীহ ও অনুসরণযোগ্য তাহলে সকল বিষয়ে চারজনের একজনকে কেন মানতে হবে? যে বিষয়ে যখন যাকে খুশী তাকে অনুসরণ করা কেন বৈধ হবে না?

বন্ধুগণ! সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কেন একই সঙ্গে সকল ইমামের তাকলীদ বৈধ হবে না বা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন জনের অনুসরণ বৈধ হবে না এ ব্যাপারে তাকলীদে শাখসী বা ব্যক্তি বিশেষের তাকলীদ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি। তার সঙ্গে এটুকুও জেনে রাখুন যে, মাযহাবসমূহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে যেমন চার মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি অনুসরণের ক্ষেত্রেও কোন ব্যক্তির জন্য চার মাযহাবের মধ্যে থেকে কেবল যে কোন একটিকে গ্রহণ করা বৈধ ও একাধিক মাযহাব গ্রহণ করা অবৈধ হওয়ার ব্যাপারেও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা বিপরীতধর্মী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে একাধিক মাযহাব মানা বাস্তবতার নিরিখেই যেমন অসম্ভব তেমনি মনের চাহিদা অনুযায়ী যখন যে মাযহাব মনে চায় অনুসরণ করাও বিচারবুদ্ধি ও যুক্তির খেলাফ। কেননা শয়তানের সহযোগী নফসে আম্মারা তথা কুপ্রবৃত্তির অধিকারী মানুষের জন্য তা হবে প্রবৃত্তিপূজার হাতিয়ার। বিষয়টি নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

১. গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, فيكونون في وقت يقلدون من يفسده وفي وقت يقلدون من يصححه بحسب الغرض والهوى ومثل هذا لايجوز باتفاق الائمة ونظير هذا ان يعتقد الرجل ثبوت شفعة الجوار اذا كان طالبا لها ويعتقد عدم الثبوت اذا كان مشتريا فان هذا لايجوز بالاجماع…لان ذالك يفتح باب التلاعب بالدين وفتح للذريعة الى ان يكون التحليل والتحريم بحسب الاهواء.অর্থঃ স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুকূলে হলে তারা সেই ইমামের অনুসরণ করে যিনি তাদের স্বার্থ অনুযায়ী বিষয়টি নাজায়িয বলে ফাতাওয়া দেন। আবার স্বার্থের বিপরীত হলে সেই একই ব্যক্তিবর্গ এমন ইমামের অনুসরণ করেন যিনি বিষয়টি জায়িয বলে ফাতাওয়া দেন। প্রবৃত্তির এমন লাগামহীন গোলামী সকল ইমামের মতেই নাজায়িয ও অবৈধ। এ জাতীয় বিষয়ের একটি উদাহরণ হল, নিজে প্রতিবেশী ও দাবীদার হলে প্রতিবেশী হওয়ার ভিত্তিতে ‘ক্রয়ে অগ্রগন্যতার হক’ বৈধ বলা আর নিজে ক্রেতা হলে প্রতিবেশীর জন্য তা অবৈধ বলা। এভাবে খুঁজে খুঁজে প্রতিটি বিষয়ে স্বার্থের অনুকূল মাযহাব অনুসরণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা ইজমা তথা সকলের ঐক্যমতে বৈধ নয়। কারণ এটা দ্বীন নিয়ে খেলতামাশার পথ উন্মুক্ত করে দেয় এবং নিজ খেয়ালখুশি অনুযায়ী হারাম-হালাল নির্দিষ্ট করণের পথ খুলে দেয়। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যা ৩২/১০০-১০১)

২. বর্তমান বিশ্বের প্রখ্যাত ফকীহ মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতী তকী উসমানী (দামাত বারাকাতুহুম) নির্দিষ্ট এক ইমাম মানার ব্যাপার উম্মতের ঐক্যমতের কথাটি এভাবে ব্যক্ত করেছেন,فلو ابيح لكل احد ان ينتقى من هذه الاقوال ماشاء متى شاء لادى ذلك الى اتباع الهوى دون الشريعة الغراء وبالتالي فان كل واحد من هذه المذاهب له نظام خاص يعمل في اطاره بحيث ان كثيرا من مسائله مرتبط بعضها ببعض فلو اخذ منه حكما وترك حكما اخر يرتبط به لاختل ذالك النظام وحدثت حاله من التلفيق لايقول بصحتها احد…ومن هنا دعت الحاجة الى التمذهب بمذهب معين.অর্থঃ মনের অনুকূলে স্বাধীন মত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হলে প্রবৃত্তির অনুসরণের পথই কেবল উন্মুক্ত হবে, নিখাঁদ শরী‘আতের অনুসরণ হবে না।…দ্বিতীয়তঃ মাযহাবগুলোর প্রতিটিরই রয়েছে নিজস্ব মূলনীতি, আমলের পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা যার ভিত্তিতে সেখানে আমল করা হয়। ফলে দেখা যায় অনেক মাসআলাই একটির সঙ্গে অপরটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং যদি কোন একটি বিধানকে গ্রহণ করে তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অপর বিধানকে বর্জন করা হয় তাহলে মাযহাবের মূলনীতি ও শৃঙ্খলা ব্যাহত হবে এবং প্রবৃত্তি অনুসরণের পথ সৃষ্টি হবে যাকে পরিভাষায় তালফীক বলা হয়। যা বৈধ হওয়ার কথা কেউ আদৌ বলেন না।…আর এ কারণেই নির্দিষ্ট মাযহাব অনুসরণের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। (উসূলুল ইফতা পৃ: ৬৩-৬৪)

৩. বিখ্যাত গ্রন্থ রিয়াজুস সালেহীন প্রণেতা আল্লামা নববী রহ. (মৃত্যু: ৬৭৬ হি.) বলেন,انه لو جاز اتباع اي مذهب شاء لافضى الى ان يلتقط رخص المذاهب متبعا هواه ويتخير بين التحليل والتحريم والوجوب والجواز وذالك يؤدي الى انحلال ربقة التكليف..فعلى هذا يلزمه ان يجتهد في اختيار مذهب يقلده على التعيين.অর্থঃ মনের খেয়ালখুশি অনুযায়ী স্বাধীনভাবে যে কোন মাযহাবের অনুসরণ বৈধ হলে তা মানুষকে প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে মাযহাবসমূহের সহজ সুবিধাজনক ও অনুকূল বিষয়গুলো লুটে নেয়া এবং হারাম-হালাল, ও আবশ্যকীয় ও বৈধ বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে মনের পছন্দসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দিকে ঠেলে দিবে। আর এই মনোভাব শরয়ী বাধ্যবাধকতার লাগাম অবমুক্ত করে দিবে। সুতরাং অনুসরণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কোন মাযহাব নির্বাচনে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া অত্যাবশ্যক। (আল মাজমু শরহুল মুহাযযাব। ভূমিকা অংশ ১/১২০-১২১

৪.হাফেজে হাদীস আল্লামা যাহাবী রহ. বলেন,وعلى غير المجتهد ان يقلد مذهبا معينا.অর্থঃ গাইরে মুজতাহিদ অর্থাৎ কুরআন হাদীস ও শরী‘আতের মূলনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও সল্প অভিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট ইমামের মাযহাব অনুসরণ করে আমল করা অপরিহার্য। (ফয়যুল কাদীর ১/২৬৯)

৫. হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেন, اعلم ان الناس كانوا في المائة الاولى والثانية غير مجتمعين على التقليد لمذهب واحد بعينه وبعد المائتين ظهر فيهم التمذهب للمجتهدين باعيانهم …وعلى هذا ينبغي ان القياس وجوب التقليد لامام بعينه.অর্থঃ মুসলমানগণ প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরী শতকে নির্দিষ্ট কোন ইমামের মাযহাব অনুসরণের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না অর্থাৎ তখন পর্যন্ত এর প্রয়োজন দেখা দেই নি। কিন্তু দ্বিতীয় শতকের পর নির্দিষ্ট মুজতাহিদের মাযহাবসমূহ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

সুতরাং নির্দিষ্ট কোন ইমামের তাকলীদ বা অনুসরণ ওয়াজিব হওয়া বুদ্ধি-বিবেচনারই দাবী। (আল ইনসাফ পৃ: ৬৮-৭০) উপরোক্ত পাঁচটি বক্তব্যের প্রথম দুটি নির্দিষ্ট করে যে কোন একজন ইমামের মাযহাব অনুসরণের বাস্তবতা ও এ সংক্রান্ত ইজমা তুলে ধরেছে আর পরবর্তী বক্তব্যগুলো এটাকে আরও জোরদার করে তুলেছে। সুতরাং বর্তমানে মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট কোন ইমামের মাযহাব অনুসরণের বিকল্প নেই। আর ৪র্থ শতাব্দির উলামায়ে কেরামের চার ইমামের যেকোন এক ইমামের মাযহাবের অনুসরণ আবশ্যক হওয়ার উপর ইজমা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে এসেছে। যেমন- আলইনসাফ-৫২, ৫৭-৫৯। মাদারে হক-৩৪১। ইন্তিসারুল হক বজওয়াবে মিয়ারে হক-১৫৩। আলমুআফাকাত-৪/১৪৬ আলমাজমূ শরহুল মুহাজ্জাব-১/৯১

আর একবার ইজমা হলে পরবর্তীতে সে ইজমার বিপরীতে ইজমা হলে পূর্বের ইজমা বাতিল হয় না। কারণ, পূর্বের ইজমাটি যেমন শক্তিশালী পরবর্তী ইজমাও তেমনি। সমান পর্যায়ের দুই দলীল একটি অপরটির দ্বারা বাতিল হয় না। বরং একটির চেয়ে আরেকটি শক্তিশালী হলে এক দলীলের উপর আরেক দলীলকে বাতিল করা যায়। এ কারণেই ইজতিহাদের ভিত্তিতে একটি মতকে প্রাধান্য দেয়ার পর পরদিন ইজতিহাদ পাল্টে গেলে নতুন ইজতিহাদের মাধ্যমে পূর্বের ইজতিহাদের দ্বারা করা ফায়সালাকে পাল্টানো জায়েজ নয়। তবে নতুন করে এমন মাসআলার ফায়সালা করতে গেলে নতুন ইজতিহাদ অনুযায়ী ফায়সালা করতে হবে। কিন্তু পূর্বের ইজতিহাদের দ্বারা কার্যকর হওয়া রায় বর্তমান পরিবর্তিত ইজতিহাদ দ্বারা পাল্টানো জায়েজ নয়। এ কারণেই হযরত উমর রাঃ একদিন একটি বিষয়ের ফায়সালা ইজতিহাদের মাধ্যমে করার পর, পরদিন এমনি আরেক মামলার রায় ইজতিহাদ পরিবর্তনের কারণে ভিন্ন দিলে যখন তাকে এ বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, تِلْكَ على مَا قضينا وَهَذِه على مَا نقضي. অর্থাৎ সেটি তাই যেভাবে আমি এর ফায়সালা করেছিলাম, আর এটি সেভাবেই হবে, যেমনটি এখন করলাম। {শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহিয়্যাহ লিজজারকা, কায়দা নং-১৫} ইসলামী ফিক্বহের প্রসিদ্ধ কায়দা তথা মূলনীতি হল, الِاجْتِهَاد لَا ينْقض بِمثلِهِতথা একটি ইজতিহাদ তারমত আরেকটি ইজতিহাদের দ্বারা ভেঙ্গে যাবে না। {শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহিয়্যাহ লিজজারকা, কায়দা নং-১৫} এ কারণেই একবার ইজমা হয়ে যাওয়ার পর তারমত আরেকটি ইজমা দ্বারা পূর্ববর্তী ইজমার বিপরীত করা বৈধ হবে না। মুল আলোচনা শেষ। এই লিখাগুলো তাদের জন্য যারা সত্যিকারার্থেই সঠিক জানতে চায়।