هو المستعان                 

আলহাজ্জ মওলানা মুফ্তী নজির আহমদ

ফটিকছড়ি সিনিয়র আলীয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রণীত

মূল্য- ৩/- (তিন টাকা)

                                 খালী পাতা

            মজ্‌হারুল ইছলাম

                 প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড

আলহাজ্জ মওলানা মুফতী নজীর আহমদ

          পোষ্টঃ নাজিরহাট, গ্রাম দৌলতপুর,

                     জেলা চট্টগ্রাম।

         গ্রন্থকার কর্ত্ত…ক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

                ১ম সংস্করণ-১৩৬৮ বাং

                          ১৯৬১ ইং

                                      মূল্য – ৩ (তিন টাকা মাত্র)

               প্রকাশকঃ-

আলহাজ্জ শাহ,সূফী,সৈয়দ মওলানা মীর আহমদ

                                                               মুনিরী সাহেব

           সাং রাঙ্গামাটিয়া, পোষ্টঃ ফটিকছড়ি,

                              জিলা চট্টগ্রাম।

প্রিন্টার- এস,হুদা খাঁ ছিদ্দিকী

ইছলামিয়া লিথো এন্ড প্রিন্টিং প্রেস,

চন্দনপুরা, চট্টগ্রাম।

                                    উপহার

                        আমার ………………………………………………………………………………………………………………………………………………………কে ………………………………………                           

                                 নিদর্শন স্বরুপ

                           মজ্‌হারুল ইসলাম

                                      বইখানি

                                 উপহার দিলাম

তারিখ ……………                                           স্বাক্ষর ………….

                                   খালী পাতা

                                  ভূমিকা

টিকছড়ি সিনিয়ার মাদ্রাসার হেড্ মৌলভীর পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া দেশের মুসলিম জনগণের র্ধম্মীয় শিক্ষায় অজ্ঞানতা এবং র্বত্তমান পরিস্থিতি পরিলক্ষিত করিয়া আমি এরূপ একখানা পুস্তকের বিশেষ অভাব অনুভব করি। সেই র্ধম্মীয় মছায়েল ব্যক্ত করিয়া জনগণের হৃদয়ে আলো দান করার প্রচেষ্টা সার্থক করিবার দায়িত্ব বহুলাংশে লেখক ও প্রকাশকদের উপর নির্ভর করে। এই পুস্তক খানি সেই বিরাট দায়িত্ব সম্পাদনে ক্ষুদ্রতম প্রচেষ্টা মাত্র। র্ধম্মীয় মছায়েলের মত জটিল বিষয়টেিক মুসলিম জনগণের বোধগম্য করিবার জন্য যতটুকু সম্ভব সরল, সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচনা বা প্রকাশ করিয়াছি। যদি কোন মছআলায় ভুল দেখা যায় তবে খাকচারকে জানাইয়া দিবেন নতুবা পারিলে সংশোধন করিয়া আমল করিবেন কারণ মানবরে ভূল হইয়া থাকে।

        পুস্তক খানা সংকলন কার্য্যে মছায়েল শিক্ষা বিষয়ক অনেক র্ধম্মীয় গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করা হইয়াছে। তজ্জন্য ঐ সমস্ত গ্রন্থকারের নিকট আমি কৃতজ্ঞ। পুস্তক খানি মুসলিম নর-নারীর উপযোগী বিবেচিত ও ইহাতে অপরের উপকার হইলে নিজকে ধন্য মনে করিব এবং আমার পরিশ্রম সার্থক হইবে। ইতিÑ   

                                                             গ্রন্থকার

                                              খালি পাতা

                                        অভিমত

বর্ত্তমান যুগে সূক্ষ্ম বিচারে সক্ষম সত্যিকার আলেমদের মারফৎ ইছলাম ধর্ম্মের জরুরী মছায়ালা মছায়েল বাংলা ভাষায় প্রচারের বিশেষ প্রয়োজন। হক্কানি আলেমগণ আস্তে আস্তে দুনিয়া হইতে বিদায় গ্রহণ করিতেছেন এবং মোছলমানগণ ক্রমশই অধঃগতির দিকে যাইতেছে। একমাত্র হক্কানি আলেমগণ এবং তাঁহাদের অভাবে তাঁহাদের কিতাব আমাদের দীনি পথে উৎস হইতে পারে। এই যান্ত্রীক যুগে দীনের মর্য্যাদা কেবল তাঁহারাই আমল ও এলম দ্বারা প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম (পারেন)। এই পুস্তকে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাৎ ইত্যাদি বিষয়ের খুটি নাটী মছলা মছায়েলের বিবরণ অতি সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে। এই দিক দিয়া মওলানা মুফ্‌তী নজির আহমদ সাহেবের এই কিতাব খানার দান অমূল্য। অতি আবশ্যকীয় মছলা মছায়েল অতি সংক্ষেপে ধারাবাহিক ভাবে সহজ সরল ভাষায় লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। কোন বাঙ্গালী মোছলমানের পক্ষে তাহা বুঝা কোন কষ্ট হইবে না। কিতাব খানি আগা গোড়া পাঠ করিলে এবং তদনুযায়ী আমল করিলে প্রত্যেকেই খাঁটি মোছলমান হইতে পারিবেন।

 আমার বাঙ্গালী মোছলমান ভাই বোনগণ এই কিতাব খানী পাঠ করিয়া উপকৃত হইবেন। ইহা আমার একান্ত কামনা।

                                            মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন

                                    মুনসেফ, ফটিকছড়ি মুনসেফি আদালত

                                               গ্রামঃ- ধুবাওয়ালা   পোঃ- ত্রিউশী

                                                             জিঃ- ময়মনসিংহ।

                            অভিমত

মওলানা সাহেবের পরিচয় প্রদান অনাবশ্যক। শিক্ষা বিষয়ে তাঁহার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বহুদিন যাবৎ তাঁহাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। তিনি আলোচ্য যে পুস্তক খানি আজ বাংলা ভাষায় আমাদেরকে উপহার দিয়াছেন, তাহা জনগণের জন্য অভিনব সামগ্রী। পুস্তক খানি শিক্ষা কেন্দ্র অর্থাৎ বলিতে গেলে র্ধম্মীয় মছায়েল কি জিনিস এবং কিভাবে তাহা প্রদত্ত হইতে পারে, তৎসম্বন্ধে পুস্তক খানি একটি তথ্য ভাণ্ডার। পুস্তক খানির আলোচ্য বিষয়: কলেমা, নামাজ শিক্ষা, কিভাবে নামাজ পড়িতে হয়, রোজা, হজ্জ, জকাৎ, র্কোব্বাণী ও নফল নামাজ আরও অন্যান্য র্ধম্মীয় মছায়েল যতদূর সম্ভব এই পুস্তকখানীতে লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। এইরূপ অতি জ্ঞাতব্য, অতি শিক্ষনীয় তথ্যপূর্ণ পুস্তক বাংলা ভাষায় বিরল। পুস্তকখানি বাংলা পাঠকারীদের একটি বিশেষ অভাব দূর করিল। আরবী শিক্ষাবিদগণের জন্যও এই পুস্তকখানি অতি মূল্যবান। আমাদের দেশের লোকেরা ইচ্ছানুযায়ী র্ধম্মীয় বিষয় নিয়া আলোচনা করে। এই পুস্তখানি সেই আলোচনাকে দূরীভুত করার একটি যন্ত্র বিশেষ।আমাদের দেশের ভাবী র্ধম্মীয় শিক্ষাগ্রহণকারীগণ শিক্ষাগ্রহণের সাথে সাথে মাওলানা সাহেবের এই পুস্তকখানি মনোযোগ সহকারে পাঠ করিয়া কার্য্যে অগ্রসর হইলে তাহাদের শিক্ষা সার্থক হইবেও দেশে প্রকৃত শিক্ষিত হিসাবে গণ্য হইতে পারিবে। আরবী ও বাংলা শিক্ষিত ও শিক্ষাগ্রহণকারী-দিগকে এই পুস্তকখানি পাঠ করিয়া উপকৃত হইতে অনুরোধ করি। ইতিÑ

                                            আরজ গুজার

                               ফটিকছড়ি আলীয়া জামেউল উলুম মাদ্রাসার

                                             শিক্ষক বৃন্দ।

                            সূচীপত্র

১ম খন্ড : ১ম পরিচ্ছেদ

বিষয়পৃষ্ঠা
ঈমানের বিবরণ
অজুর বিবরণ2
অজুর ছুন্নতের বিবরণ4
অজুর মোস্তাহাবের বিবরণ5
মিছওয়াকের মোস্তাহাবের বিবরণ7
মিছওয়াকের মকরুহর বিবরণ8
দাঁড়ি মোছেহ করিবার ধারার বিবরণ9
অজুর মকরুহের বিবরণ11
অজুর ভঙ্গের বিবরণ12
গোছলের বিবরণ17
জনাবতের বিবরণ19
কোন্ কোন্ পানির দ্বারা অজু ও গোছল দোরস্ত ও কোন্ কোন্ পানির দ্বারা দোরস্ত নহে তাহার বিবরণ24
কূপের বিবরণ29
জুঠার বিবরণ32
তৈয়ম্মুমের বিবরণ34                  
মৌজার উপর মোছেহ্ করার বিবরণ42
নাজাছাতের বিবরণ অর্থাৎ কোন বস্তুতে নাপাকি কিছু লাগিলে তাহা পরিস্কারের বিবরণ45
এস্তেন্জা, এস্তেবরা ও এস্তেনকার বিবরণ53
হায়েজের বিবরণ58
নেফাছের বিবরণ70

২য় পরিচ্ছেদ

bvgv‡Ri weeiY73
নামাজের ওয়াক্তের বিবরণ74
bvgv‡Ri †gv¯Ívnve I gKiƒn mg~‡ni weeiY75
AvRv‡bi weeiY78
bvgv‡Ri ¯^‡Z©i weeiY81
নামাজের ছেপাতের বিবরণ91
নামাজের ওয়াজেবের বিবরণ97
bvgv‡Ri Qzbœ‡Zi weeiY99
bvgv‡Ri g¯Ívnv‡ei weeiY101
bvgv‡Ri avivi weeiY103
GgvgwZ ও Rgv‡Z bvgvR covi          weeiY                      111
gQey‡Ki weeiY117
jv‡n‡Ki weeiY122
bvgvR f‡½i weeiY123
Qvjv‡gi weeiY127
bvgv‡Ri gKiƒ‡ni weeiY129
Qziv cvV Kwievi weeiY134

2q LÐ

Lwjdvi weeiY137
QzbœZ bvgv‡Ri weeiY140
‡e‡Z‡ii bvgv‡Ri weeiY140
bdj bvgv‡Ri weeiY142
P›`ª m~h©¨ MÖn‡Yi weeiY147
GQ‡ZQKvi bvgv‡Ri weeiY148
Zvivwei bvgv‡Ri weeiY148
ফরজ bvgv‡Ri weeiY151
KvRv bvgvR covi weeiY153
‡Qvn& QwR`vi weeiY159
gwiR e¨w³i bvgv‡Ri weeiY165
‡bŠKvq bvgvR covi weeiY167
QwR`v ZvjvIqv‡Zi weeiY168
C‡`i bvgv‡Ri weeiY172
KQi bvgvR covi weeiY181
f‡qi bvgvR covi weeiY185              
Ry¤§vi bvgv‡Ri weeiY186
RvbvRvi bvgv‡Ri weeiY192
knx‡`i weeiY202
bvgvR I †ivRv BZ¨vw`i wdw`qvi weeiY203
Kei †Rqvi‡Zi weeiY205

3q LÐ

RKv‡Zi weeiY209
D‡óªi RKv‡Zi weeiY217
gwnl I Miæi RKv‡Zi weeiY218
‡gl, †fov I QvM‡ji RKv‡Zi weeiY218
RKvZ Av`vq Kivi weeiY220
RKvZ I †dZ&ivi ab Kvnv‡K দিতে nB‡e Zvnvi weeiY222
‡dZ&ivi weeiY225
‡ivRvi weeiY227
KvRv †ivRvi weeiY232
GdZv‡ii weeiY Ges †Kvb& †Kvb& Kvi‡Y †ivRv fvw½‡Z cv‡i Zvnvi weeiY234                  
bR‡ii weeiY239
‡ivRv f½ nIqvi weeiY242
‡ivRv gKiæ‡ni weeiY244
bdj †ivRvi weeiY245
‡P‡nix LvIqv I GdZvi Kivi weeiY246
Kvddvivi weeiY247
wdw`qvi weeiY250
P›`ª †`wLevi weeiY251
KQ‡gi weeiY252
KQ‡gi Kddvivi weeiY257    
G‡ZKv‡di weeiY258
n‡Ri weeiY261
R‡e‡ni weeiY263
‡KveŸ©vbxi weeiY268
‡KveŸ©vb Kivi mg‡qi weeiY285
কোন্ কোন্ পশুর দ্বারা কোর্ব্বনী করা দোরস্ত ও কোন্ কোন্ পশুর দ্বারা কোর্ব্বানী না দোরস্ত তাহার বিবরণ290
kixwK †KveŸ©v‡bi cÖYvjx297

                        শুদ্ধিপত্র

৩৭ পৃষ্ঠার ১০ লাইনে অন্য স্থান মোছেহ করিয়া এবারৎ বেশী লিখা হইয়াছে।

৭০ পৃষ্ঠার ২ লাইনে হইবে না শব্দতে না শব্দ হইবে না। হইবে শব্দ হইবে। হইবে শব্দের পরের এবারৎ এইÑ যদি আছরের ওয়াক্তের আন্দর বন্ধ হয়, তবে মাজুরে গন্য হইবে না। এই এবারৎ বহি হইতে একবারে বাদ দেওয়া হইয়াছে তাহা সংশোধন করিতে হইবে।

২৪৫ পৃষ্ঠার ১৯ লাইনে করিলে ও ওয়াজেব, উভয়ে শব্দের মধ্য দিয়া কাজা শব্দ হইবে। ভুলে লিখা হয় নাই ১২৩ পৃষ্ঠার ১৮, ১৯ লাইনে নামাজ পড়ার সময় হইতে উত্তর দেওয়ায় পর্যন্ত দুইবার ভুলে লিখা হইয়াছে।

১৯১ পৃষ্ঠায় জানাজার নামাজে দ্বিতীয় তকবিরের দরূদের শেষে برحمتك يا ارحم الراحمين বেশী শিখা হইয়াছে।

২৮১ পৃষ্ঠার ৬ লাইনে আইয়ামে তকবিরর ও অন্য, উভয়ে শব্দের মধ্য দিয়া নামাজ শব্দ ভুলে লিখা হয় নাই।

২৮৮ পৃষ্ঠার শেষ লাইনে (যা) উল্টা লিখা হইয়াছে ও গায়েতুল আওতার লিখা হয় নাই শেষ লাইন

Aï× –ï×-c„ôv-jvBb
يقضيه-يقتضية1-4
KvwUqv-dvwUqv10-14
KvwUqv-dvwUqv13-14
nB‡ebv-nB‡e20-    24 bv c‡ii     Gevi‡Z †hvM nB‡e  
‡KZv‡e‡KZve24-02
‡kvbxZ-‡kvbxZ26-03
Rš‘i-Rš‘27-24
RvcMvq-RvqMvq29-03
cviLvbv-cvqLvbv19-11
KvwU‡j-dvwU‡j31-02
bxe`vb-bve`vb (MË©)31-18
LywWqv-Nywoqv33-07
e`ywii-eûwii33-09 (eûwii)
Pÿzi-PÂzi33-10
Kwiqv‡Q-KwiqvQ42-        11
KvUv-dvUv43, 44-14, 11
RL‡ii-RL‡gi44-21
ïÎæ-ïµ45-20
`yifxZ-`yixfzZ47-3, 17
`yN©Ü-`yM©Ü48-11
‡mB-‡hB52, 80-8, 23
AšÍ‡Kvl-AЇKvl54-20
‡i i³-‡h i³58-12
cvwi‡e-cvB‡e67-16
`„ó-`„wó76-18
Kveyj-eveyj80-3
cvqRvlv-cvqRvgv85-   4      
nvjIqvবী-nvjIqvনী৯3। ৯6-6, 5
†`Iqv‡ji-‡`Iqv‡ii৯5-16
Kev-Kiv৯6-10
`vi¯Í I †`i¯Í-‡`vi¯Í৯7, 175-6, 7
nB‡ebv-nB‡e70-2
evg cv-Wvb cv105-6
Cywoqv-cywZqv126-9
Ggvb-Ggvg139-6
Qziv‡Z-Qzi‡Z150, 160-22, 7
†QvenbvKve-‡QvenvbvKvi162-4
স্থীweK¡Z-w¯’ixK¡Z163-19
nBqv hvB‡e-nBqv hvB‡e bv182-10
Qvo-Qvov178-22
bvgR-bvgvR183-10
AvKei-AvKevi92-11 (†eª‡M‡Ui Av›`i)
wdiv‡bi-‡ekx wjLv nBqv‡Q184-10
mg‡qi c‡i-mg‡q Qc‡i184-10
g„‡Zi-g„Zvi mKj RvqMvq  
g„Z-g„Zv mKj RvqMvq  
g„Z‡K-মৃতাকে সকল জায়গায়  
g„Z-g„Zz¨195-8
Qvo-Qvc114-4
gy‡Li-gyL194-1
nB‡e-nB‡ebv210-17
Evmbv-evmb211-24
`yeস্ত-`yiস্ত251-7
ZwQqr-AwQqr278-8
bv‡qi-gv‡qi226-18
‡Lv`vi-‡Lv`vq240-25
KwiqvwQ-Kwiqv‡Q241-1
bwo‡j-bvwo‡j244-15
ewi‡j-Kwi‡j245-19
পুbবাq-cybivq248-3
bZze-bZzev253-19
bvLvBevq-bvLvBevi257-2
cðvw`-ck¦vw`266-13
‡Kvivb-‡Kvievb276-4
Qwjqv-Pwjqv276-22
‡Kviebx-‡Kvievbx279-10
`yB-`yBUv270-10
Zvnvi-Zvnv270-12
wPj-wQj271-23
bvgv‡R-bvgvR281-3
1 GKwU 2-GK GKwU189-24
Z-294-3
‡cŠuwQqv‡Q-‡cŠuwQ‡j2৯0-2
H e¨w³i-H e¨w³296-3
eস্ত-e¯‘295-22
GKevi`yBevi wjLv nBqv‡Q279-20
KwiqvbvKwiqv163-13
nBqvbv nBqv163-24
mwi‡dয়mwi‡di205-6 (mwi‡di)
ûKzgûKzK204-11
AÿbAÿg224-16
1213228-25
GBGBgZ233-11 (gZ kã ev` iwnqv‡Q)
‡evRv‡ivRv24110
Av‡RAv‡Q26912

 بسم الله الرحمن الرحيم                    

الحمد لله رب العالمين والصلوة علٰي رسوله محمد واله واصحابه اجمعين حمدا يقربنا الي مرضات الله تعالي وكرمته وصلوة تبلغنا الي محبة الرسول وشفاعته وحمدا يفتح به كل مقال و يختتم وصلوة ينال بها كل مطلوب يقضيه و يؤيده والله الموفق و المؤيد

 امين يا رب العالمين-                       

 ঈমানের বিবরণ

কলেমা তৈয়ব – لا الٰه الا الله محمد رسول الله

তাহার অর্থ এই যে, এবাদতের উপযুক্ত খোদা তা’লা ভিন্ন অন্য কোন মাবুদ নাই। হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) আল্লাহুতালার প্রেরিত পুরুষ। ঐ কলেমা শরিফে চারিটি ফরজ আছেÑ ১। শব্দগুলি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা। ২। তাহার অর্থ বুঝিয়া লওয়া, অর্থাৎ মা’নি জানা। ৩। প্রত্যেক মুসলমানে কলেমার মা’নিকে দেলের মধ্যে বিশ্বাস করা। ৪। হামিসার জন্য বিশ্বাস করা, সপ্ত বস্তুকে মনে ২ সত্য জানা ও বলা এবং মুখে অঙ্গীকার করা। ইহার নাম ঈমান। ঐ সপ্ত বস্তু হইতেছে। ১। যিনি এই বিশাল জগত সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার নাম আল্লাহ। ২। তাঁহার ফেরেশতাগণ ৩। সমুদয় কেতাব ৪। পয়গাম্বরগণ ৫। কেয়ামত অর্থাৎ শেষ বিচারের দিন ৬। সৎকর্ম ও অসৎ কর্ম উভয়ের সৃজন র্কত্তা খোদাতা’লা ৭। মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত

করিবেন। ইহাকে সত্য জানা ও মুখে অঙ্গীকার করাকে ঈমান বলে। খোদার উপর ঈমান আনিতে হইবে যে, যে সমুদয় দৃষ্টি গোচর হইতেছে এবং যাহা নয়ন গোচর হয় না, তাহার সৃষ্টিকর্তা খোদাতায়ালা। তিনি একক তাঁহার অংশীদার বা শরীক নাই। কি পুত্র পৌত্রাঁদি বা পিতা পিতা-মহাদি নাই। তিনি সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান আছেন, তাঁহার যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন। তিনি সর্বব্যাপী সর্বশক্তিমান, তাঁহার শক্তির হ্রাস নাই। তাঁহার নাম ও কীর্তি কালে কালে বিদ্যমান থাকিবে। খোদা তায়ালার ফেরেস্তাগণ মেয়েলোক বা পুরুষলোক নহেন। তাঁহাদের আহার নাই।তাঁহারা জাগ্রতাবস্থায় দিবা রাত্রি আল্লাহতালার উপাসনায় নিমগ্ন আছেন। তন্মধ্যে চারি জন সর্বশ্রেষ্ঠ।১ জিব্রাইল ২।মিকাইল, ৩।ইসরাফিল ৪।আজরাইল। হযরত জিব্রাইল যাবতীয় পরগাম্বরগণের প্রতি ওহী অবতীর্ণ করিয়াছেন। মিকাইল যাবতীয় প্রাণীর উপজীবিকা প্রেরণ করিতেছেন। ইসরাফিল বংশী বাদন করিবেন এবং আজরাইল প্রাণীর প্রাণ হরণে প্রবৃত্ত আছেন। যে যে কেতাবের প্রতি ঈমান আনিতে হইবে, প্রথম “সহিফা” ২।তওরাত, ৩।জবুর, ৪। ইঞ্জীল, ৫।ফোরকান বা কোরান শরীফ।

অজুর বিবরণ

হস্ত পদাদি ধৌত করাকে অজু বলে। অজুর মধ্যে চারি ফরজ। ১। এক কর্ণের লতি হইতে দ্বিতীয় কর্ণের লতি র্পয্যন্ত, কপালের উপরিস্থ চুলের মূল দেশ হইতে গল দেশ (থুতীর নীচে) র্পয্যন্ত ধৌত করা, ২। দুই হস্তের কুনি (কেহনা) সহ ধৌত করা ৩। দুই পায়ের উপরিস্ত গীরা সহ ধৌত করা ৪। মস্তকের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ চারি ভাগের এক ভাগ মোছেহ করা। যাহার

দাড়ি থোতা হইতে লট্কিয়া পড়িয়াছে তাহা ধৌত করা, কি মোছেহ করা ফরজ নহে। দাড়ি ঘন হইলে ধৌত করা ফরজ নতুবা নহে। যে দাড়ির মধ্যে র্চম্ম দৃষ্টিগোচর হয় না তাহাকে ঘন, আর চামড়া দেখা গেলে তাহাকে পাতলা বলে। যে যে অঙ্গ ধৌত করা ফরজ ঐ সমস্ত অঙ্গ এইরূপভাবে ধৌত করিবে যেন ফোটা ফোটা পানি পড়িতে থাকে। ফোটা ফোটা পানি না টপকাইলে অজু সিদ্ধ হইবে না। ইহা ইমাম আবু হানিফা (রহ:) ও মোহাম্মদ(রঃ) এর বাক্য। অজুর পানি অন্য লোকে ঢালিয়া দিলেও দোরস্ত হইবে। অজুর সকল কাজ নিজে করা উচিত, যেমন বদনা, লোটা প্রভৃতিতে পানি লওয়া, শরীরের প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালিয়া দেওয়া প্রভৃতি। ভিজা হাত কোন অঙ্গের উপর দিয়া টানিয়া লওয়াকে মোছেহ বলে। যদি লোটা-বদনা কি অন্য বস্তু হইতে হাত ভিজাইয়া নেওয়া যায় তবে উক্ত হাত দ্বারা মোছেহ করা সিদ্ধ হইবে না। এইরূপ কোন অঙ্গ ধৌতের পর যদি হস্ত ভিজা থাকে, কি প্রত্যেক অঙ্গ মোছেহ করার পর যদি হস্ত ভিজা থাকে, কি কোন অঙ্গ হইতে হাত ভিজাইয়া নিয়া ঐ ভিজা হাত দ্বারা কোন স্থান মোছেহ করে, তবে তাহা সিদ্ধ হইবে না। অজু করিয়া মুসলমান নাপিত দ্বারা ক্ষৌরী কর্ম করাইলে কছিুই করতিে হইবে না। কন্তি বর্ধিম্মী নাপতি দ্বারা ক্ষৌরী করাইলে ধৌত করিতে হইবে। অজু সমাপন করিয়া অজুর স্থান হইতে মৃত র্চম্ম, কি ফোঁড়ার উপর হইতে মরা র্চম্ম উঠাইলে অজু সিদ্ধ হইবে। কি ঐ মরা র্চম্ম উঠাইতে যদি ক্লেশ অনুভব হয়, কি রক্ত পুঁজ নির্গত হয় তবে পুনরায় অজু করিতে হইবে। অজুর অঙ্গের কোন স্থান কাটিলে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করিয়া ধৌত করিবে, তাহাতে অক্ষম হইলে কিছুই করিবে না। যদি দুই হস্ত কর্ত্তিত হওয়ায় বা কাটিয়া যাওয়ায় পানি ব্যবহার করা কষ্টকর

হয়, তবে তৈয়ম্মুম করিবে। এইরূপ হস্ত কুনি সহ, পাও সন্ধি সহ চ্ছেদিত হইলে ধৌত করা আবশ্যক করে না। কিন্তু উভয়ের মধ্যে অবশিষ্ট কিছু থাকিলে ঐ অবশিষ্ট স্থান ধৌত করিবে। যদি হস্তের দুইটি বক্ষ হয়, কি পাঁচ আঙ্গুলী হইতে বেশী আঙ্গুলী হয় তবে উভয় বক্ষ ও সমুদয় আঙ্গুলী ধৌত করিতে হইবে। কান ও দাড়ির মধ্যের স্থান ধৌত করা ফরজ। চক্ষু ও নাসিকার মধ্যে ধৌত করা ফরজ নহে। অজুর মধ্যে ওয়াজিব নাই, কিন্তু অজু করার সময় অজুর পানি বদনা বা ঘটিতে না পড়াকে ওয়াজেব লিখিয়াছে।

               অজুর সুন্নতের বিবর 

হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) উপাসনা ও আরাধনা উপলক্ষে সতত যাহা করিয়াছেন এবং কখন কখন র্বজ্জন করিয়াছেন উহাকে ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ্ বলে। যাহা যাহা অভ্যাস স্বরূপ র্নিব্বাহ করিয়াছেন উহাকে ছুন্নতে জাওয়ায়েদ বলে। যেমন ডান হস্ত দ্বারা কাপড় পরা, আহার করা, দান করা ইত্যাদি। উহাকে ছুন্নতে জাওয়ায়েদ বলে। ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ বর্জন করিলে খোদাতায়ালা শাস্তি করিবেন। অজুর ছুন্নত এই ১। অজুর নিয়ত করা, আমি এবাদৎ করিবার জন্য অজু করিতেছি নতুবা বে অজু দূর করিবার জন্য অজু করিতেছি। ২। بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ عَلى دِيْنِ الْاِسْلَامِ এই দোয়া পড়া; যদি এই দোয়া এয়াদ না থাকে তবে بسم الله الرحمن الرحيم পড়বিে ৩। দুই হস্ত শুদ্ধ থাকিলে কব্জী পর্যন্ত তিন বার ধৌত করা। ৪। হাতের আঙ্গুলী খেলাল করা।

৫। সমস্ত মুখ ভরিয়া পানি দিয়া তিনবার কুলকুচ (কুল্লি) করা। ৬। দাঁতন বা মেছওয়াক করা। ৭। নাকের মধ্যে তিনবার ভাল করিয়া পানি দেওয়া ৮। অজুর প্রত্যেক স্থান বা অঙ্গ তিন বার ধৌত করা। ৮। অজুর ধারা সমূহের প্রতি দৃষ্টি রাখা অর্থাৎ প্রথমে হাত ধৌত করা, পরে, কুল কুচ করা, তাহার পরে নাসিকায় পানি দেওয়া ইত্যাদি। ১০। লাগালাগিভাবে ধৌত করা। ১১। দাঁড়ি খেলাল করা, এইরূপ ভাবে খেলাল করিবে যেন হস্তের পৃষ্ঠ চক্ষের সম্মুখে ও হাতের তল্লী অগ্রে থাকে। ১২। সমস্ত মাথা ১ একবার মোছহ্‌ে করা। ১৩। কানের ছিদ্র, মুখে ও বাহিরের দিকে মোছেহ করা। ১৪। পায়ের আঙ্গুলী মোছেহ করা। এই রূপে মোছেহ করিবে প্রথম বাম হস্তের ছোট আঙ্গুলী দ্বারা ডান পায়ের ছোট আঙ্গুলী হইতে আরম্ভ করিয়া বাম পায়ের ছোট আঙ্গুলীতে সমাপ্ত করবি।েও পায়রে আঙ্গুলী খলোল করবিার সময় বাম হস্তরে ছোট আঙ্গুলী পায়রে আঙ্গুলীর নিম্নভাগ হইতে উপরের দিকে টানিবে। বাজ কিতাবে আরও বেশী লিখিয়াছে রুকুদ্দীন ইত্যাদি।

         অজুর মোস্তাহাবের বিবরণ:

পূণ্য সঞ্চয়ের আশায় যাহা র্নিব্বাহ করা যায় উহাকেই মোস্তাহাব বলে। অজুর মোস্তাহাব এইঃ- ১। কাবার দিকে বসিয়া অজু করা। ২। মৃত্তিকা র্নিম্মতি পাত্র দ্বারা অজু করা। ৩। অজুর বদনা বাম দিকে রাখিয়া অজু করা। ৪। উচ্চ স্থানে বসিয়া অজু আরম্ভ করা ৫। বাম হস্তে নাক ঝাড়া ৬। সমুদয় অঙ্গ মর্দ্দন করা, ৭। অজু করার নিমিত্ত ওয়াক্তের র্পূব্বে পাত্রে পানি ভরিয়া রাখা, ৮। অঙ্গুরী ঢিলা হইলে অজুর সময় ঘুরাইয়া দেওয়া ৯। সমুদয় অঙ্গ ধৌত করার সময় بسم الله বিছমিল্লাহ বলা, ১০।

অজুর মধ্যে হজরতের (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) প্রতি রূ পাঠ করা। ১১।গর্দ্দান মোছেহ্ করা। ১২।সমুয় অঙ্গ ধৌত করার সময় ডান কি হইতে আরম্ভ করা। ১৩।অজুর অবশিষ্ট পানি পশ্চিম েিকাঁড়াইয়া পান করা। ১৪।মুখ, হাত, পা যে স্থান র্পয্যন্ত ধৌত করা কর্ত্তব্য তপেক্ষ। অধিক ধৌত করা। ১৫।ুইটি পা বাম হস্ত দ্বারা ধৌত করা। ১৬। অজুর মধ্যে অনাবশ্যকে কাহারও সাহায্য না লওয়া। ১৭।অজু সমাপন হইলে ইন্না আন্জল্নাহ্ ছুরা পাঠ করা অথবা ােয়া পাঠ করা, যেমন কলেমা শাহাাৎ এই দোয়াটি সহ পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهَرِيْنَ سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ اَشْهَدَ اَنْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ

কুল্লি করিবার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

নাকের মধ্যে পানি দিবার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اَرِحْنِىْ بِرَائِحَةِ الْجَنَّةِ وَلَاتَرِحْنِىْ بِرَائِحَةِ النَّارِ

মুখ ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ بَيِّضْ وَجْهِىْ يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَتَسْوَدُّ وَجُوْهٌ

ডান হাত ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اعْطِنِىْ كِتَابِىْ بِيَمِيْنِىْ وَحَاسِبْنِىْ حِسَابًا يَّسِيْرًا

বাম হাত ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ لَاتَعْطِنِىْ كِتَابِىْ بِشِمَالِىْ وَلَا مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ

মাথা মোছেহ করিবার সময় নিম্নের দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اَظَلِّنِى تَحْتَ ظَلَّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَاظَلَّ اِلَّاظَلَّ عَرْشِكَ

দুই কর্ণ মোছেহ্ করিবার সময় এই দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ الَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ يَتَّبِعُوْنَ اَحْسَنَهُ

ঘাড় মোছেহ করিবার সময় এই দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اَعْتِقْ رَقَبَتِىْ عَنِ النَّارِ

ডান পা ধৌত করার সময় এই দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ ثَبِّتْ قَدَمِىْ عَلٰى الصِّرَاطِ يَوْمَ تَذِلُّ الْاَقْدَامُ

বাম পা ধৌত করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে:

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ ذَنْبِىْ مَغْفُوْرًا وَسَعْيِىْ مَشْكُوْرًا تِجَارَتِىْ لَنْ تَبُوْرًا

মিছওয়াকের মোস্তাহাবের বিবরণ:

১। দক্ষিণ হস্তের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধা আঙ্গুলী নিম্নে রাখিয়া র্তজ্জনী অনামিকা ও মধ্যমা এই তিন আঙ্গুলী উর্দ্ধে রাখিয়া ধৃত করত: দাঁতুনী সম্পন্ন করিবে। ২। জয়তুন কাষ্ঠের দাঁতুনী দ্বারা, তদাভাবে, তিক্ত কাষ্ঠ যেমন নিম প্রভৃতি দ্বারা দাঁতুনী করিবে এবং বার আঙ্গুলী

পরিমাণ লম্বা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমাণ মোটা হওয়া আবশ্যক। ৩। সিধা কাষ্ঠ হওয়া, ৪। মিছওয়াক গিরা ব্যতীত হওয়া। ৫। দাঁতুনী দ্বাদশ আঙ্গুলীর অতিরিক্ত হইলে বক্রী অংশে দূরাত্মা শয়তান আরোহণ করে। ৬। দন্তরে পাশ দিয়া মিছওয়াক করা, লম্বাতে না করা। ৭। কুলকুচ্ করার সময় কমের মধ্যে দক্ষিণ কোণের উপরের পাটির দন্ত তিন বার তৎপর নিম্ন পাটির দন্ত তিন বার মিছওয়াক দ্বারা ঘর্ষন করিবে পানিসহ, এই পানি কুলকুচ ব্যতীত হইবে। দোররোল মোখ্তার ও রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

মিছওয়াকের মকরূহর বিবরণ:

অর্থাৎ কোন্ কোন্ কারণে মিছওয়াক মকরূহ হয়, তাহার বিবরণ: ১। শুইয়া দাঁতুনী করা, ইহাতে প্লীহা বাড়িয়া যায়। ২। মুঠ ভিড়িয়া মিছওয়াক ধৃত করা, ইহাতে অর্শ্ব রোগ উৎপন্ন হয়। ৩। দাঁতুনী চুষিলে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা। ৪। দাঁতুনী সম্পন্ন হওয়ার পর দাঁতুনীকে ধৌত না করা। ৫। দাঁতুনীকে দাঁড় করাইয়া রাখা, ইহাতে পাগল হইয়া যায়। ৬। বাঁশ দ্বারা দাঁতুনী করা। রুকুনুদ্দীন ইত্যাদি। হানফি মজহাবের ওলামাগণের বাক্য মতে দাঁতুনী অজুর জন্য ছুন্নত, নামাজের জন্য ছুন্নত নহে। শাফী মজহাবের ওলামাগণের মত মতে দাতুঁনী নামাজের জন্য ছুন্নত, অজুর জন্য ছুন্নত নহে। দুটি সম্প্রদায়ের মতের মধ্যে প্রভেদ এই যে, মিছওয়াক করিয়া এক অজুর দ্বারা কয়েক নামাজ পড়িলে প্রত্যেক নামাজের ছওয়াব সত্তর নামাজরে ছওয়াবরে সমান হইব,ে ইহা হানফী ওলামাগণরে মত মত।ে কন্তিু শাফী ওলামাগণরে মত মতে প্রত্যকে নামাজরে জন্য প্রত্যেক দফা মিছওয়াক না করিলে সত্তর নামাজের পূণ্য সঞ্চয় হইবে না।

           দাড়ি মোছেহ করিবার ধারা এই

যাহার ঘন দাড়ি, ঐ দাড়ি মুখ ধৌত করার সময় দুই হাত জোড় করার ন্যায় করিয়া হস্তের উদর দাড়ির দিকে, পৃষ্ঠ গল দিক দিয়া একবার খেলাল করিবে।সমুদয় মাথা মুছেহ করার ধারার এই প্রথমত: দুই হস্তের তলিকা ও আঙ্গুলী সকল ভিজাইয়া বৃদ্ধা ও তর্জ্জনী দুই তলিকা হইতে ফাঁক রাখিয়া দুই হস্তের ছয় আঙ্গুলী অর্থাৎ প্রত্যেক হস্তের মধ্যমা অনামিকা ও কনিষ্ঠা এই তিন আঙ্গুলী দুই হস্তের মাথায় মাথায় মিলিত করিয়া মস্তকের প্রথম হইতে শেষ র্পয্যন্ত অর্থাৎ সম্মুখ হইতে পশ্চাৎ দিকে টানিয়া লইবে। পরে শেষ হইতে সম্মুখে টানিয়া আনিবে। ঐ টানিয়া আনিবার সময় মস্তকের দুই কোন হস্তের তলিকা দ্বারা মোছেহ করিবে। প্রথম বার টানিয়া লওয়ায় দুই কোন বক্রী ছিল, শেষে টানিয়া লওয়ায় দুই কোন মোছেহ হইল। মাথার আর কোন স্থান বাকী রহিল না। তৎপর দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর ভিতরের দিক দ্বারা দুই কর্ণের পৃষ্ঠ মোছেহ করিবে। তর্জ্জনী আঙ্গুলী দ্বারা কর্ণের পেঁচগুলি মোছেহ করিবে। তৎপর কনিষ্ঠা আঙ্গুলী কর্ণ কুহরে প্রবেশ করাইয়া মোছেহ করিবে। এইরূপ দুই হস্তের পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় বা গর্দ্দন মোছেহ করিবে। এ নিমিত্ত প্রথম বার ৪ চার আঙ্গুলী ও তলিকা ফাঁক রাখিবার জন্য বলা হইয়াছে। কুলকুচ ও নাসিকায় পানি দেওয়ার ধারা এই: এক চৌল (চুল্ল) পানি লইয়া প্রথম কুল্লি করিবে। তৎপর পানি দিয়া দ্বিতীয় বার কুলকুচ করিবে। তৎপরে পানি লইয়া তিন বার নাসিকায় গ্রহণ করিবে। কিন্তু দক্ষিণ হস্ত দ্বারা নাকের ভিতর পানি দিবে আর বাম হস্ত দ্বারা ঝাড়িয়া ফেলিবে, ডান হস্ত দ্বারা নাক ঝাড়া নিষেধ লিখিয়াছে। নাকে তিন বার পানি দিবার সময় নূতন নূতন পানি লইতে হইবে। এবং ধারার প্রতি

দৃষ্টি রাখিবে। যেমন হস্ত মর্দ্দন, কুলকুচ, নাকে পানি দেওয়া মুখ ধৌত করা ইত্যাদি।অজুর চারি ফরজের আন্দর হইতে কোন জায়গা এক লোম পরিমাণ যদি শুষ্ক থাকে, তবে অজু দোরস্ত হইবে না। আঙ্গুলীর নখের ভিতর গমের আটা লাগিয়া শুকাইয়া গেলে ভিতরে পানি প্রবেশ না করিলে, অজু সিদ্ধ হইবে না। যখন স্মরণ হইবে তখন আটা বাহির করিয়া ঐ জায়গায় পানি প্রবেশ করাইবে। পানি প্রবেশ করাইবার র্পূব্বে কোন নামাজ পড়িলে তাহা দোহরাইতে হইবে। অজু করিয়া কোন এবাদৎ না করিলে সেই অজু ভাঙ্গিবার র্পূব্বে পুনরায় অজু করা মক্রূহ বা মানা। অজু করার পর দুই রাকাৎ নামাজ পড়িলে অজু থাকা স্বত্ত্বেও অজু করিলে পূণ্যের ভাগী হইবে। গোছল করিবার সময় অজু করিয়া লইলে, সেই অজু দ্বারা নামাজ পড়িবে। অজু ভঙ্গ না হইলে দ্বিতীয় অজু না করিবে। যদি কোন ব্যক্তির হস্ত ও পদ কাটিয়া যাওয়ায় তাহাতে তৈল ও মোম বা অন্য কোন ঔষধ লাগান হয়, তবে উহার উপর দিয়া পানি জারী করিলে অজু সিদ্ধ হইবে। যদি কাহারো হস্তে বা পায়ের মধ্যে ফোঁড়া বা কোন রোগ হয়, পানি অনিষ্ট জনক হইলে পানি দ্বারা ধৌত না করিয়া, ভিজা হাত দিয়া মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে। যদি মোছেহ অনিষ্ট করে তবে সেই জায়গা একেবারে ছাড়িয়া দিবে কিছুই করিবে না। কিন্তু নামাজ ছাড়িতে পারিবে না। যখমের উপর পাট্টি লাগাইলে ঐ পাট্টি খুলিয়া ধৌত করিলে যদি ক্ষতি বা কষ্ট হয়, তবে পাট্টির উপর ভিজা হাত দ্বারা মোছেহ করিবে। নতুবা মোছেহ দোরস্ত হইবে না। পাট্টি খুলিয়া মোছেহ করিতে হইবে। যদি পাট্টির নীচে সমস্ত জায়গায় যখম না থাকে তবে পাট্টি খুলিয়া যখমের জায়গা বাদ দিয়া বাকী সমস্ত স্থান

ধৌত করিতে পারিলে ধৌত করিবে। পাট্টি খুলিতে না পারিলে সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। যেই স্থানে যখম আছে ও যেই স্থানে যখম নাই, সব জায়গায় মোছেহ করিতে হইবে। যদি কাহারও হাড় ভাঙ্গার দরুণ উহার উপর বাঁশের বারাবাঁধ দিয়া পাট্টি লাগাইলে, পাট্টি খুলিলে যদি অনিষ্ট হয়, তবে ঐ পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। “গুইল” দেওয়া ব্যক্তির ঐ হুকুম অর্থাৎ গুইলের যখমের উপর মোছেহ করিতে না পারিলে পাট্টি খুলিয়া কাপড়ের গদ্দির উপর মোছেহ করিবে। যদি পাট্টি খুলিবার জন্য ও বন্ধ করিবার জন্য কোন লোক পাওয়া না যায়, পাট্টির উপর মোছেহ করিবে। পাট্টির উপর মোছেহ করিতে হইলে সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ করা ভাল। যদি সমস্ত পাট্টির উপর মোছেহ না করিয়া অধিকাংশের উপর মোছেহ করে তবুও দোরস্ত হইবে। অর্ধেক বা কমের উপর দোরস্ত হইবে না। পাট্টি বাঁশের হউক বা কাপড়ের হউক, খুলিয়া পড়িয়া গেলে যখম যদি ভাল না হয় পুনরায় পাট্টি বাঁধিলে র্পূব্বরে মোছেহ বাকী থাকিবে। পুনরায় মোছেহ করার আবশ্যক নহে। যদি যখম ভাল হইয়া পড়িয়া যায় ও পুনরায় বাঁধিবার আবশ্যক না হয়, তবে মোছেহ করিতে পারিবে না। ঐ জায়গা ধৌত করিয়া নামাজ পড়িতে হইবে। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

অজুর মকরুহের বিবরণ:

১। মুখে পানির ছিটা জোরে মারা। ২। পানি আবশ্যক হইতে বেশী ও কম ব্যবহার করা। ৩। অজু করিবার সময় অনাবশ্যক কথোপকথন করা। ৪। নূতন পানির দ্বারা তিন বার মোছেহ করা। ৫। অশুদ্ধ স্থানে অজু করা। ৬। রমনীগণের বাকী পানির দ্বারা অজু করা। ৭। মসজিদের আন্দর অজু করা। ৮। অজুর

পানিতে থুথু ফেলা ও নাকের দ্বারা ঘ্রাণ করা। ৯। পা ধৌত করার সময় কাবার দিক দিয়া ধৌত করা। ১০। এইরূপ ডান হস্তে নাকে পানী দেওয়া। ১১। ডান হস্তে বেগর ওজর নাক পরিস্কার করা। ১২। নিজের অজুর জন্য কোন ঘটি খাশ করিয়া রাখা। আলমগিরি ও রুকুনুদ্দীন ইত্যাদি।

অজু ভঙ্গের বিবরণ

গুহ্য ও প্রশ্রাবের দ্বার দিয়া যে না পাক অশুদ্ধ দ্রব্য নি:সরণ হয় তদ্ধারা অজু ভঙ্গ হইবে। শরীর হইতে রক্ত ও পুঁজ বর্হিগত হইয়া পাক জায়গায় পৌঁছিলে অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। ঠেশ দিয়া শুইলে যেন মাথায় নীচ হইতে বালিশ বা ঠেশ টানিয়া লইলে পড়িয়া যাইবে, অজু ভঙ্গ হইবে। মুখ ভরা বমি করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজের আন্দর হা হা, হি হি করিয়া বালেক লোক হাস্য করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। যদি ও ভুলে করা যায়, অজ্ঞান হইলে ভঙ্গ হইবে। যদি ও নিশার বস্তু খাইয়া অজ্ঞান হয়, অজু নষ্ট হইয়া যাইবে। মবাসরুতে ফাহেসার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে। অর্থাৎ পুরুষের লিঙ্গ ও স্ত্রী লোকের যোনীর দ্বার পরস্পর আবরণ ব্যতীত মিলিলে, যদিও দুইটি স্ত্রী লোক হয়, তাহাকে মোবাসরুতে ফাহেসা বলে। প্রস্তর ও কিরা বা কীট যদি প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়া নির্গত হয়, অজু ভঙ্গ হইবে। যখম হইতে কিরা ও প্রস্তর বহির্গত হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। কর্ণ হইতে কিরা নির্গত হইলে নতুবা যখম হইতে গোস্তের টুকরা রক্ত ব্যতীত ঝড়িয়া পড়িলে অজু ভঙ্গ হইবে না। গুইল লাগাইলে বা ফোড়া হইতে রক্ত বাহির হইলে অজু ভঙ্গ হইবে। যখম হইতে রক্ত বাহির হইয়া ঢলিলে অজু ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তি নাকের মধ্যে

আঙ্গুলি প্রবেশ করাইয়া বাহির করার পর রক্তের দাগ দেখিতে পাইল, কিন্তু ভাসে নাই, অজু ভঙ্গ হইবে না, কাহারও চক্ষুর মধ্যে ছোট দানা ভাঙ্গিয়া গেলে বা নিজে ভাঙ্গিলে পরে চক্ষুর মধ্যে ছাড়াইয়া পড়িলে, বাহিরে নির্গত না হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না, বাহিরে নির্গত হইলে ভঙ্গ হইবে। এই রূপ কোন ব্যক্তির কর্ণের আন্দর দানা হইয়া ভাঙ্গিয়া যাওয়ার পর সই স্থান হইতে বাহির না হইলে, ঐ জায়গায় জমিয়া থাকিলে ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তির যখম হইতে রক্ত বাহির হইতেছে দেখিয়া সে কাপড় বা মাটির দ্বারা মুছিতে লাগিল, এই রূপে কয়েকবার মুছিল, পরে আর রক্ত বাহির হইতে পারিল না। তখন ঐ ব্যক্তির ভাবিতে হইবে যে, মুছিবার দ্বারা রক্ত জারি হয় নাই। নতুবা বাহির হইয়া জারি হইত এই রূপ জানিলে অজু ভঙ্গ হইবে। নতুবা ভঙ্গ হইবে না। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড। কোন রমনীর গুহ্যের দ্বার ও যোনীর দ্বার কাটিয়া একত্র হইয়া গেলে- ঐ রমনী হইতে বায়ু বাহির হইলে, ঐ বায়ুতে দুর্গন্ধ থাকিলে অজু ভঙ্গ হইবে। কারণ দুর্গন্ধ বায়ু গুহ্যের দ্বার হইতে বাহির হয়। দুর্গন্ধ না হইলে যোনীর দ্বার দিয়া বহির্গত হইবে। উহার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে না। মাছি, মশা শরীরের রক্ত চুষিলে অজু ভঙ্গ হইবে না। জোঁকে চুষিলে অজু অঙ্গ হইবে, এক প্রকার কীট (কিরা) যাহাকে আমাদের দেশে ‘আঢালী’ বলে, ঐ কিরা যদি বড় হয়, শরীর চুষিলে অজু ভঙগ হইবে। ছোট হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। চক্ষু ও নাসিকা হইতে দু:খের সহিত যেই পানী বহির্গত হয়, তাহা দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে। গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি। চক্ষুর জল কষ্ট ব্যতীত সরিলে অজুর ক্ষতি হইবে না। থুকের মধ্যে রক্ত দেখিতে পাওয়া গেলে, রক্তের ভাগ কম ও থুক সাদা

নতুবা জরদা দেখিলে অজু ভঙ্গ হইবে না। যদি রক্তের ভাগ বেশী বা সমান হয় ও রং লাল দেখা যায় অজু ভঙ্গ হইবে। দন্তের দ্বারা কোন বস্তু চর্বন করিলে, ঐ বস্তুর মধ্যে রক্তের দাগ দর্শন করিলে নতুবা দন্তে খিলাল করার পর খিলালে রক্তের লাল রং দেখা গেলে, কিন্তু থুক একেবারে সাদা, রক্তের রং থুকের মধ্যে একেবারে নাই, অজু ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তি জোঁক লাগাইলে জোঁকে এই রূপ ভাবে রক্ত চুষিয়াছে যে, পেটের মধ্য দিয়া কর্ত্তন করিলে রক্ত জারি হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে। এইরূপ না হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। কোন ব্যক্তির কর্ণে দরদ হইলে কর্ণকুহর হইতে যেই স্থান স্নান করিবার সময় ধৌত করা ফরজ সেই স্থান পর্যন্ত পানী নির্গত হইলে অজু ভঙ্গ হইব।ে এইরূপ নাভি হইতে দরদ সহ পানী বহির্গত হইলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে, অর্শ্বরোগীর মক্আদ (মলঘর) বাহির হইয়া গেলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। যখমের উপর পাট্টি বাঁধিবার পর পাট্টিতে রক্ত ইত্যাদি দেখা গেলে, অজু ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তি বসিয়া নিদ্রা যাইতেছে ও ঝুকিয়া ঝুকিয়া জমির উপর পতিত হওয়ার নিকট র্বত্তী হইতেছে, যতক্ষণ র্পয্যন্ত পড়িয়া না যায়, অজু ভঙ্গ হইবে না। যদি পড়িয়া যাওয়ার সময় জাগ্রত হইয়া যায়, অজু ভঙ্গ হইবে না নতুবা ভঙ্গ হইবে। যদি ঘুমাইলে নিকটর্বত্তী লোকেরা আলাপ শুনে, অজু ভাঙ্গিবে না। দোররোল মোখতার) নিজের বা অপরের লিঙ্গ দেখিলে অজু ভঙ্গ হইবে না, ছুইয়ে অজু ভাঙ্গিবে না। (আলম গিরী ১ম খণ্ড)। কোন রমনীকে ধৃত করিলে, মজি ইত্যাদি বাহির না হইলে অজু ভাঙ্গিবে না। কোন ব্যক্তি অজু করিবার সময় সন্দেহ হইল যে, আমি ফল না। স্থান ধৌত বা মোছেহ করিয়াছি কিনা? তবে তাহার এই সন্দেহ

প্রথমবার অজুর মধ্য ভাগে হইলে, যেই স্থানে সন্দেহ হয়, সেই স্থানকে ধৌত বা মোছেহ করিবে। যদি অজু সমাপন করার পর এইরূপ সন্দেহ হয়, কিন্তু এই সন্দেহ ইতির্পূব্বে আর হয় নাই ইহা প্রথমবার সন্দেহ, নতুবা তাহার সন্দেহ হওয়ার অভ্যাস থাকিলে তবে অজু ভঙ্গ হয় নাই, বলিয়া জানিতে হইবে। পুনরায় অজু করিতে হইবে না। যদি অজুর কোন স্থান ধৌত করে নাই, বিনা সন্দেহে জানিতে পারে এবং নির্দিষ্ট ভাবে জানিতে পারিতেছেনা কোন জায়গা বাকী রহিয়াছে, তবে বাম পা ধৌত করিবে, বাম পা ধৌত করিয়াছে বলিয়া একিন হইলে তখন দক্ষিণ (ডান) পা ধৌত করিবে। এক ব্যক্তি অজু ছিল, কিন্তু ভঙ্গ হইয়াছে কিনা তাহাতে সন্দেহ হইলে, তবে ঐ ব্যক্তির পুনরায় অজু করিতে হইবে না। যথা (রুকুনুদ্দিন ও দোররোল মোখতার ইত্যাদি)। বক্ষ হইতে দরদ ও কষ্ট সহ পানী নির্গত হইলে অজু ভঙ্গ হইবে। বমি করিবার সময় ভাত, পানি, পিত্ত বমি করিলে যদি পুরা মুখ হয়, অজু ভঙ্গ হইবে। নতুবা ভঙ্গ হইবে না। পাতলা রক্ত ও ভাসিত হইয়া বমি করিলে অজু ভঙ্গ হইবে। বেশী হউক বা কম হউক ভঙ্গ হইবে। এক মতলি বা অশ্যানি দ্বারা সামান্য সামান্য কয়েক বার বমি করিলে উহাকে একত্র করিলে পরা মুখে এক দপার পরিমাণ হইলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজের মধ্যে দাড়াইয়া বা বসিয়া ঘুমাইলে, অজু ভঙ্গ হইবে না। ছজিদার মধ্যে রমনীগণ নিন্দ্রা গেলে অজু ভঙ্গ হইবে। পুরুষের হইবে না। নামাজের মধ্যে হাস্য করিলে নিজে শুনিয়াছে অপর লোকেরা না শুনিলেও নামাজ ভঙ্গ হইবে। অজু ভঙ্গ হইবে না। কেবল হাস্য করিবার সময় দন্ত দেখিতে পাইলে ও শব্দ একেবারে বাহির না হইলে অজু ও নামাজ ভাঙ্গিবে না।

কিন্তু না বালেগা মেয়ে নামাজের মধ্যে জোরে হাস্য করিলে নতুবা না বালেগা রমনী সজিদা তেলাওয়াতের মধ্যে হাস্য করিলে, অজু ভঙ্গ হইবে। নামাজ ও সজিদা বাতেল হইয়া যাইবে। অজু সমাপন করিয়া অজুর স্থান হইতে মরা র্চম্ম কি? ফোড়া বা পাঁচড়ার উপর হইতে মরা র্চম্ম উঠাইলে অজুর কোন অনিষ্ঠ হইবে না। কিন্তু ঐ মরা র্চম্ম উঠাইতে যদি ক্লেশ অনুভব হয়, কি রক্ত পুঁজ নির্গত হয়, তবে পুনরায় অজু করিতে হইবে। অজুর পরে নখ কাটিলে অজুর কোন ক্ষতি হইবে না। ফোড়া, পাঁচড়া দাবাইয়া রক্ত বাহির করিলে অজু ভঙ্গ হইবে। তামাক বা নিশা জাতিয় কোন বস্তু পান করিয়া ভালরূপে চলিতে না পারিলে এবং পায়ের পাতা এদিক ওদিক ঘুরিয়া গেলে, অজু ভঙ্গ হইয়া যাইবে। উলঙ্গ অবস্থায় অজু করিলে দোরস্ত হইবে। যেই বস্তু বাহির হওয়ার দ্বারা অজু ভঙ্গ হইয়া যায় উহা অশুদ্ধ। যেই বস্তুর দ্বারা অজু ভঙ্গ না হয় উহা শুদ্ধ। সামান্য রক্ত পাঁচড়া হইতে নির্গত হইলে এবং ঐ রক্ত পাঁচড়ার মুখ হইতে জারি না হইলে অর্থাৎ না ভাসিলে, নতুবা সামান্য বমি করিলে মুখ ভরা না হইলে, ঐ রক্ত ও বমি অশুদ্ধ হইবে না। কাপড়ে বা গায়ে লাগিলে উহা ধৌত করা ওয়াজিব হইবে না। কিন্তু পাঁচড়ার মুখ হইতে পানী জারি হইলে, নতুবা বমি মুখ ভরা হইলে, উহা না পাক জানিবে। পুরা মুখ বমি করিয়া লোটা বা অন্য কোন পাত্রে মুখ লাগাইয়া পানী লইয়া কুলকুচ (কুল্লি) করিলে, ঐ লোটা বা পাত্রের পানী না পাক হইয়া যাইবে। কারণ চুল্লু করিয়া পানী লইলে না পাক হইবে না। ছোট ছেলে দুগ্ধ বমি করিলে পুরা মুখ হইলে না পাক হইবে ও কাপড়ে লাগিলে ধৌত না করিয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। মুখ ভরা না হইলে না পাক হইবে না।

বেগর অজু কোরআন শরীফ ধৃত করা দোরস্ত নাই। খোলা থাকিলে দেখিয়া দেখিয়া ধৃত না করিয়া পড়িতে পারিবে। এরূপ তাবিজে কোরআনের আয়াত লিখা থাকিলে, বে-অজু উহাকে ধৃত করিতে পারিবে না। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

অজু কিরূপে করিতে হয় তাহার নিয়ম:- প্রথমত: লোটা বদনা কি ঘটিতে পানি লইয়া উচ্চ স্থানে কা’বার দিকে মুখ করিয়া ঘটি বাম পার্শ্বে রাখিয়া বসিবে। তারপর বিছমিল্লাহ বলিয়া নিয়ত করত: ডান হাতের কব্জি র্পয্যন্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর বাম হাতের কব্জি র্পয্যন্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর দাঁতুনী করত: মজমজা (গরগরা) করিয়া দুই কুল্লি করিবে, শেষের কুলকুচে গরগরা করিবে। সাবধান? কুলকুচ পশ্চিম দিকে ফেলিবে না। তৎপর নাসিকায় তিনবার পানী দিয়া নাসা বাম হস্ত দ্বারা ঝাড়িয়া ফেলিবে। তৎপর সমস্ত মুখ তিনবার ধৌত করিবে ও দাড়ি খেলাল করিবে, তাহার পর দক্ষিণ হস্ত কনুই সহ তিনবার ধৌত করিয়া, এরূপে বাম হস্ত তিনবার ধৌত করিবে। তৎপর এক হাতের আঙ্গুলী দ্বিতীয় হাতের আঙ্গুলীর ভিতর প্রবেশ করাইয়া পাঞ্জার ন্যায় খেলাল করিবে। আংটি কিংবা কোন গহনা হাতে থাকিলে তাহা ঘুরাইয়া দিবে। যেন শুষ্ক না থাকে, তৎপর একদফা সমস্ত মস্তক মোছেহ করিবে। তৎপর তর্জ্জনী আঙ্গুলীর দ্বারা কর্ণের পেঁচ গুলি মোছেহ করিবে। তৎপর দুই বৃদ্ধা আঙ্গুলীর ভিতরের দিক দ্বারা দুই কর্ণের পৃষ্ঠ মোছেহ করিবে। তাহার পর দুই হস্তের আঙ্গুলীর পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় মোছেহ করিবে। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

গোছল চারি প্রকার যথা: ১। ফরজ ২। ওয়াজিব ৩। ছুন্নত ৪। মোস্তাহাব। ফরজ গোছল যথা স্ত্রী সঙ্গম করিয়া স্নান করা।

হায়েজের নিয়মিত কাল শেষ হইলে, স্নান করা ও নেফাছের নিয়মিত কাল শেষ হইলে স্নান করা, স্বপ্নদোষ হইলে স্নান করা ইত্যাদি। ওয়াজিব গোছল যথা: মৃত ব্যক্তিকে গোছল দেওয়া জীবিত ব্যক্তিদের উপর ওয়াজিব, কাফের অপবিত্রের জন্য স্নান করা ও ওয়াজিব। যেই ব্যক্তির সমস্ত শরীরে বা কোন অংশে নাপাকি লাগিয়াছে, কিন্তু কোন্ জায়গায় নাপাকি লাগিয়াছে, তাহা র্নিদ্দষ্টি করিয়া জানিতে পারিতেছে না তবে সমস্ত শরীরকে ধৌত করা ওয়াজিব। চারিটি গোছল সুন্নত; বাজ কেতাবে পাঁচটি গোছল ছুন্নত লিখিয়াছে। যথা: ১। জুমার নামাজ পড়ার জন্য স্নান করা, ২। দুই ঈদের নামাজ পড়ার জন, ৩। হজ্জ্বের বা ওমরার এহরাম বাঁধার জন্য র্আফার দিবস স্নান কর, ৪। আরফাতের মাঠে দাড়াইবার সময়, ৫। ইসলাম র্ধম্ম গ্রহণ করার পর গোছল করা ছুন্নত।

গোসলের বিবরণ:

মোস্তাহাব গোছল ঊনিশটি , যথা:- ১। পাগলামি বা অজ্ঞানী দূরীভুত হওয়ার পর, ২। সিঙ্গা লাগাইবার পর, ৩। শাবান চাঁদের পনর তারিখের রাত্রে, ৪। জিলহজ্জ চাঁদের নয় তারিখের রাত্রিতে, ৫। শবে কদরের রাত্রিতে, ৬। মজদলফায় দাঁড়াইবার সময়, ৭। কোরবান করার সময়, ৮। শয়তানকে প্রস্তর নিক্ষেপ করার জন্য যেই সময় মিনা বাজার প্রবেশ কর,ে৯। যেই সময় তওয়াফে জেয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফে প্রবেশ করা যায়। ১০। চন্দ্রগ্রহণ ও র্সূয্য গ্রহণের সময়, ১১। এস্তেছকার নামাজের সময়, ১২। কোন ভয়ের সময়, ১৩। মুছিবত দূর করার নিমিত্ত যেমন দিবসে অন্ধকার হওয়া, ১৪। মদিনা শরীফে প্রবেশ করার সময়, মহা পুরুষ হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) এর তাজিমের জন্য। ১৫। নূতন কাপড় পরিধান করার সময়, ১৬। মৃত ব্যক্তিকে ধৌত করার পর ১৭। মকতুল

ব্যক্তিকে কতল করার পর ১৮। মুছাফেরি হইতে ফিরিয়া আসার পর ১৯। মোস্তাহাজা বা খোন যাওয়া রমণীর নামাজের প্রত্যেক ওয়াক্তের সময়। রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

জনাবতের বিবরণ:

জনাবৎ শব্দের অর্থ দুরি হওয়া অর্থাৎ নাপাকির সময় এবাদতে মখচুছাহ্ (ফরজ এবাদৎ সমূহ) হইতে দূরে থাকিতে হয়, এই জন্য শরিয়ত এই শব্দকে জনাবৎ বলিয়া তাবির করিয়াছে। রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি। গোছলের মধ্যে তিনটি ফরজ, যথা: ১। কুলকুচ করা, ২। নাকের মধ্যে পানি দেওয়া যে স্থান র্পয্যন্ত নরম আছে, ও ৩। সমস্ত অঙ্গকে একবার ধৌত করা। গোছল করিবার সময় প্রথমত: দুই হস্ত কব্জী র্পয্যন্ত ধৌত করিবে। তৎপর এস্তেনজার জায়গা ধৌত করিবে, অপবিত্র বস্তু লাগুক বা না লাগুক। তৎপর যে যে স্থানে অপবিত্র বস্তু লাগিয়াছে, সেই সেই স্থান ধৌত করিবে। তৎপর অজু করিবে। চৌকি বা প্রস্তরের উপর গোছল করিলে, অজু করিবার সময় পা ধৌত করিয়া লইবে। যদি এমত স্থান হয় যে, অজুর পানি পায়ের নীচে জমে, তবে অজু সমাপন করত: পা ধৌত করিবে না। স্নান শেষ করিয়া স্থানান্থরিত হইয়া পরে পা ধৌত করিবে। গোছল এইরূপে করিতে হইবে। প্রথমত: অজু করার পর মস্তকের উপর তিন বার পানি ঢালিবে, তৎপর তিন বার দক্ষিণ স্কন্দে, তৎপর বাম স্কন্দে তিন বার পানি ঢালিবে, তৎপর র্সব্বশরীরে পানি ঢালিবে ও শরীর র্মদ্দন করিবে, যেন কোন স্থান শুষ্ক না থাকে। একখানা লোম শুষ্ক থাকিলেও গোছল দোরস্ত হইবে না। গোছল করিবার সময় কাবার দিকে মুখ না করিবে ও পানি বেশী পরিমাণে ও কম পরিমাণে যাহাতে গোছল ভাল মতে করা না যায়, খরচ না করিবে। যেই

স্থানে কেহ না দেখে সেই স্থানে গোছল করিবে। গোছল করিবার সময় কাহারও সঙ্গে আলাপ না করিবে। গোছল সমাপন করত: কাপড়ের দ্বারা র্সব্বাঙ্গ মুছিবে ও হঠাৎ ঢাকিয়া লইবে। খালি স্থান হইলে উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়াইয়া বা বসিয়া স্নান করা দোরস্ত আছে,গোছল খানার ছাদ কাটা হউক বা না হউক। কিন্তু বসিয়া গোছল করা ভাল। রমণীগণ রমণীগণের সম্মুখে নাভীর নীচে হইতে পায়ের গিরা র্পয্যন্ত খোলা বা দেখা দোরস্ত নহে। বা’জ রমণী বা’জ রমণীর সম্মুখে একেবারে উলঙ্গ হইয়া স্নান করা অত্যন্ত দোষনীয়। বৃষ্টির সময় ঠাণ্ডা হইবার মানসে বৃষ্টিতে দাঁড়াইলে নতুবা কুপের মধ্যে লাফ দিলে র্সব্বাঙ্গ ভিজিয়া গেলে এবং নাসিকায় পানি দিলেও কুলকুচ করিলে স্নান হইয়া যাইবে। এইরূপ স্নানের দোয়া পড়া যাক বা না যাক, গোছল দোরস্ত হইয়া যাইবে। যদি একখানা লোমের সমান অঙ্গ শুষ্ক থাকে, স্নান দোরস্ত হইবে না। স্নানের সময় ভুলে কুলকুচ না করিলে নতুবা নাসিকায় পানি না দিলে গোছল দোরস্ত হইবে না। স্নান সমাপন করার পর স্মরণ হইলে, যেই জায়গা ধৌত করে নাই সেই স্থানকে পুনরায় পানি দিয়া ধৌত করিবে। কুলকুচ না করিলে ও নাকে পানি না দিলে কুলকুচ করিবে ও নাকে পানি দিবে। দ্বিতীয় বার স্নান করা আবশ্যক হইবে না। কোন ব্যক্তি স্নানের র্পূব্বে খাওয়ার ও পান করিবার ইচ্ছা করিলে, কুলকুচ করিয়া ও হস্তদ্বয় ধৌত করিয়া ভোজন ও পান করিতে পারিবে। রমণীগণের চুল গুন্ধ বা বিনাট ভাঙ্গা না হইলে, সমস্ত চুল ভিজান ও চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছান ফরজ। একখানা লোম শুষ্ক থাকিলে নতুবা একখানা চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছিলে, গোছল সিদ্ধ হইবে না। চুল যদি গুন্ধে বা বিনট ভাঙ্গা হয় তবে গোড়ায় পানি পৌঁছাইতে হইবে না। পৌঁছাইলে গোছল সিদ্ধ হইবে না। চুল না ভিজাইলেও

দোরস্ত হইবে। ইহা রমণীগণের জন্য। পুরুষের চুল গুন্ধে হইলে খুলিয়া ভিজাইতে হইবে। নতুবা গোছল দোরস্ত হইবে না। নাকের ও কানের বালী এবং হাতের আংটি ইত্যাদি ভালমতে ঘুরাইবে। যেন ছিদ্রের আন্দর ও আংটি ইত্যাদির নীচে পানি প্রবেশ করিতে পারে। বালী ও আংটি ইত্যাদি ঢিলা হইলে না ঘুরাইয়া পানি প্রবেশ করিলে, তবে ঘুরাইয়া পানি প্রবেশ করা মোস্তাহাব ওয়াজিব নহে। হস্তের নখের ভিতর গমের আঠা লাগিয়া শুকাইয়া গেলে এবং উহার আন্দরে পানি প্রবেশ না করিলে, গোছল সিদ্ধ হইবে না। যখন স্মরণ হইবে এবং গমের আটা দেখিতে পাওয়া যাইবে, তখন আটা বাহির করিয়া পানি প্রবেশ করাইবে। পানি প্রবেশ করাইবার র্পূব্বে কোন নামাজ পড়িলে, তাহা পুনরায় পড়িতে হইবে। হস্ত, পা ফাটিয়া যাওয়ার পর তাহাতে মোম ও তৈল বা অন্য কোন ঔষধ লাগাইলে, তবে উহার উপর পানি জারী করিয়া দিলে দোরস্ত হইবে। গোছলের সময় পুরুষের লিঙ্গের সম্মুখের চামড়ার আন্দর পানি প্রবেশ করা ফরজ নতুবা গোছল দোরস্ত হইবে না। নাক ও কানের ভিতর পানি প্রবেশ করা ফরজ, পানি প্রবেশ না করিলে গোছল দোরস্ত হইবে না। স্নান করার সময় কুলকুচ না করিলে, পরে মুখ ভরিয়া পানি পান করিলে কুলকুচ হইয়া যাইবে। মুখ ভরিয়া না হইলে হইবে না। হস্ত, পা ও চুলের মধ্যে তৈল লাগার দরুণ উহাতে পানি দিলে স্থির থাকে না, দেওয়া মাত্র উঠিয়া যায়, তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। গোছল দোরস্ত হইবে। দন্তের মধ্যে কোন বস্তুর ছোট টুকরা লাগিয়া থাকার দ্বারা দন্তের ভিতরে পানি প্রবেশ না করিলে অজু ও গোছল দোরস্ত হইবে না। খেলাল দ্বারা ঐ টুকরাকে বাহির করিয়া আন্দরে পানি প্রবেশ করাইবে। যদি কাহারও চক্ষু বিমারের দ্বারা, চক্ষুতে কাদা জমিয়া শুকাইয়া

যায়, ঐ চক্ষুর ভিতর পানি প্রবেশ না করিলে অজু ও গোছল সিদ্ধ হইবে না। তবে ঐ কাদাকে চক্ষু হইতে বাহির করিয়া যাহা যাহা শুখা আছে, তাহাতে পানি দিয়া ধৌত করিতে হইবে। বেহেস্তি জেওর ১ম খণ্ড ও গায়াতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

বীর্য্য যদি কুদিয়া এবং জোস আসিয়া পুরুষ হইতে বা স্ত্রীলোক হইতে জাগ্রত অবস্থায় হউক বা নিদ্রাতে হউক, বাহির হইলে স্নান করা ফরজ হইবে। যেমন পুরুষ বা রমণী কাহাকেও ধৃত করিলে বা কেহর দিকে দৃষ্টি করিলে নতুবা ধেয়ান করিলে জোষ আসিয়া বীর্য্য কুদিয়া বাহির হইলে গোছল ফরজ হইবে। জোষ ব্যতীত এবং কুদন ছাড়া বীর্য্য বাহির হইলে স্নান ফরজ হইবে না। যেমন কোন ব্যক্তি বোঝা উঠাইলে বা পীড়ার দ্বারা বীর্য্য বাহির হইলে গোছল ফরজ হইবে না। ভাল মতে জোষ আসিয়া অন্তর ভরিয়া গেলে ঐ সময় যেই পানি নির্গত হয়, উহাকে মনী (বীর্য্য) বলে। রমণীর সহিত হাতাহাতি বা আলিঙ্গনাদি করার সময় যে তরল শ্বেতবর্ণ পানি নির্ঘত হয় উহাকে মজি বলে। এইরূপ প্রস্রাবের ন্যায় যে, তরল শ্বেত পানি নির্গত হয়, তাহাকে “অদি” বলে। পাঠক স্মরণ রাখিবে যে, “মজি” কিম্বা অদি নির্গত হইলে, স্নান করা ফরজ নহে। কিন্তু অজু ভঙ্গ হইবে। “মনি” (বীর্য্য) ও “মজির” মধ্যে প্রভেদ এই যে, “মনি” নির্গত হওয়ার পর অন্তর ভরিয়া যায় এবং জোষ ঠাণ্ডা হইয়া যায়। “মজি” নির্গত হইলে জোষ বৃদ্ধি হইয়া যায়। “মজি” পাতলা, “মনি” দৃঢ়, রুকনুদ্দিন ও আলমগিরী ১ম খণ্ড ও বেহেস্তী জেওর ইত্যাদি। পুরুষের লিঙ্গ রমণীর গুহ্য কি যোনী দ্বারে প্রবেশ করাইলে বীর্য্য বাহির হউক বা না হউক, স্নান করা ফরজ হইবে। কিন্তু গুহ্যের দ্বারে প্রবেশ করা হারাম ও গুনাহ “কবিরা”। ছোট মেয়ে এখনও অপ্রাপ্ত বয়স্কা কোন ব্যক্তি উহার সঙ্গে সঙ্গম করিলে, ঐ মেয়ের উপর

স্নান ফরজ হইবে না। কিন্তু অভ্যাসের জন্য স্নান করিতে হইবে। নিদ্রাতে স্বপ্ন দোষ হইয়াছে এবং সব কিছু স্মরণ আছে, জাগরিত হওয়ার পর বীর্য্য কাপড়ে কিম্বা শরীরে, তালাশ করাতে ও পাওয়া গেল না, বীর্য্য নির্গত হয় নাই। তবে স্নান করা ফরজ হইবে না। যদি কাপড়ে কিম্বা শরীরে ভিজা ভিজা লাগে তখন খেয়াল করিল যে, ইহা মজি হইবে না, তখন স্নান করা ওয়াজেব হইবে। পুরুষের স্নান করার পর যদি পুনরায় বীর্য্য বাহির হয়, দ্বিতীয়বার স্নান করা ওয়াজিব হইবে। স্ত্রীলোকে স্নান করার পর স্বামীর বাকী বীর্য্য বাহির হইলে পুনরায় স্নান করা ওয়াজিব হইবে না। পীড়া হওয়ায় নতুবা অন্য কোন কারণে বীর্য্য বাহির হইলে কিন্তু জোষ ও খাহেস একেবারে না থাকিলে স্নান করা ওয়াজিব হইবে না। অজু ভঙ্গ হইবে। স্ত্রী ও স্বামী একই পালঙ্গে ঘুমাইতেছিল, জাগরিত হওয়ার পর কাপড়ে বীর্য্যরে দাগ দেখিতে পাইলে এবং স্বপ্নদোষের কথা কাহার স্মরণ না থাকিলে, তবে স্বামী ও রমণী দুই ব্যক্তি স্নান করিতে হইবে, কারণ কাহার বীর্য্য তাহা জানিতে পারিল না। পুরুষের বীর্য্যে ও স্ত্রী-লোকের রেত:তে প্রভেদ এই যে, পুরুষের বীর্য্য গাঢ় শ্বেত বর্ণ, স্ত্রীলোকের রেত: তরল হরিদ্রা রং বিশিষ্ট। আরও লিখিত আছে যে, এক ব্যক্তি স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ আছে; কিন্তু জাগরিত হওয়ার পর কোন দাগ ও নেসানা পাওয়া গেল না তৎপর অজু করিয়া নামাজ পড়ার পর বীর্য্য নির্গত হইলে, ঐ ব্যক্তির উপর স্নান করা ওয়াজিব হইবে। নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে না। প্রস্রাবের সময় দৃঢ় বীর্য্য নির্গত হইলে, স্নান করা ফরজ হইবে। নতুবা হইবে না। আলমগিরী ১ম খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি। যেই ব্যক্তির উপর স্নান করা ফরজ, সেই ব্যক্তির কোরআন শরীফ ধৃত করা ও পড়া এবং মসজিদে প্রবেশ করা দোরস্ত নহে। কিন্তু খোদাতালার নাম লওয়া ও কলেমা পড়া

এবং দরূদ পড়া দোরস্ত আছে। এই প্রকারের মছআলা হায়েজের বিবরণে বর্ণনা করা যাইবে, ইন্সাআল্লাহতালা ‘তপছিরের কেতাবে স্নান ও অজু ব্যতীত ধৃত করা মক্রুহ, র্তজমা ওয়ালা কোরান শরীফ ধৃত করা হারাম। কেতাব ঐ

কোন্ ২ পানির দ্বারা অজু ও গোছল করা দোরস্ত এবং কোন্ ২ পানির দ্বারা দোরস্ত নহে তাহার বিবরণ:

সাগর, নদী, জলাশয়, কূপ, বিল, দীঘি, পুস্করিনী, গলিত বরফ নির্ঝরের পানি, মেঘের পানি ইত্যাদির দ্বারা অজু ও গোছল করা দোরস্ত আছে। জমজম কূপের পানি দ্বারা অজু ও গোছল করা সিদ্ধ ইক্ষুর রস, কি কোন বৃক্ষ তরমুজ বা কোন ফল নিংড়াইয়া (চিপিয়া) রস বাহির করত: ঐ রস দ্বারা অজু ও গোছল সিদ্ধ হইবে না। পানিতে কোন বস্তু মিশ্রিত হওয়ায় বা কোন বস্তু পাক করার দরূন পানি বলিয়া চেনা যাইতেছে না ও অন্য নাম হইয়া গিয়াছে, সেইরূপ পানির দ্বারা অজু ও গোছল করা দোরস্ত হইবে না। যেমন শরবত, সিরাব, সূর্ব্বা ও ছিরকা এবং গোলাপ জল ইত্যাদি ঐ সমস্ত বস্তু দ্বারা অজু ও গোসল সিদ্ধ নহে। পানির মধ্যে কোন পবিত্র বস্তু পড়িয়া পানির রং, ঘ্রাণ , আস্বাদ কিছু পার্থক্য হইলে ও ঐ বস্তুকে পানিতে না পাকাইলে, পানি ও পাতলা থাকিলে, সেই পানি ও অন্য পানির মত ভাল হইলে যেমন জারী পানির মধ্যে রেত বালু মিশ্রিত হইলে, নতুবা পানির সঙ্গে জাপরান কেশর) মিশ্রিত হইয়া পানিতে জাপরানের কিছু রং সামান্য সামান্য দেখা গেলে নতুবা সাবান মিশ্রিত হইলে তবে ঐ পানির দ্বারা অজু ও গোছল সিদ্ধ হইবে। পানির মধ্যে কোন বস্তু ঢালিয়া দিয়া পাক করাতে পানির রং, ঘ্রাণ, আস্বাদ পরির্বত্তন হইলে তদ্বারা অজু সিদ্ধ হইবে না। হাঁ যদি এই রকম বস্তু পাক করা যায় যাহাতে

পানির ময়লা দূর হইয়া পানি ছাফ ও পরিস্কার হয় ও পানি দৃঢ় না হয়, ঐ পানি দ্বারা অজু দোরস্ত হইবে। যেমন মৃত ব্যক্তিকে গোছল দিবার জন্য কুলের পাতা দিয়া গরম করিলে তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। হাঁ যদি এই পরিমাণ পাতা দিয়া পানি গরম করা যায় যাহাতে পানিতে বেশী পাতা দেওয়ার দরূণ দৃঢ় ও দবিজ হয় তবে ঐ পানির দ্বারা অজু ও গোছল করা দোরস্ত নহে। কাপড় রঙ্গাইবার জন্য পানির সঙ্গে জাপরান মিশ্রিত করিলে ঐ পানির দ্বারা অজু সিদ্ধ নহে। পানির সঙ্গে দুগ্ধ মিশ্রিত করিলে, দুধের রং পরিস্কার রূপে পানিতে আসিলে তদ্ধারা অজু না দোরস্ত, দুগ্ধ অতি অল্প হইলে পানিতে দুগ্ধের রং না আসিলে অজু সিদ্ধ হইবে। কোন ময়দানে বা জঙ্গলে অল্প পানি পাওয়া গেলে যতক্ষণ র্পয্যন্ত নাপাক বলিয়া নি:সন্দেহ হয় তদ্ধারা অজু করিতে হইবে। ঐ পানি ত্যাগ করিয়া তৈয়ম্মুম করিলে সিদ্ধ হইবে না। কূপের মধ্যে বৃক্ষের পাতা পড়িয়া পানি দুর্গন্থ হইয়া রং ঘ্রাণ ও স্বাদ পরিবর্তন হইলে ও পানি পাতলা থাকিলে অজু সিদ্ধ হইবে। যেই পানিতে অপবিত্র বস্তু বেশী বা অল্প হউক পড়িলে না পাক হইবে। যদি চলিত পানিতে অপবিত্র বস্তু পড়িয়া রং ঘ্রান ও স্বাদই পরির্বত্তন না হইলে অসিদ্ধ হইবে না। পরির্বত্তন হইলে স্রোত বিশিষ্ট পানি হইলেও অসিদ্ধ হইবে, দুর্গন্ধ হইলেও অসিদ্ধ। বস্তুত: নাহারের পানি অপেক্ষা হাওজের পানি শ্রেষ্ঠ। দুর্ব্বা তৃণাদি ও বৃক্ষের পাতা ইত্যাদি ভাসাইয়া নিতে পারিলে তাহাকেও স্রোত বিশিষ্ট পানি বলে। পুস্করণী বা জলাশয়ে যেই দিক ইচ্ছা সেই দিকে বসিয়া অজু করিতে পারে। বৃহৎ পুকুরের পরিমাণ এই, দশ হাত দৈর্ঘ্য ও দশ হাত প্রস্থ, গভীর এই পরিমাণ যে, যাহাতে চৌল (চুল্লু) করিয়া হাতে পানি উঠাইলে জমি খুলিয়া না যায়, এই পুকুরকে

দাহাদরদাহ বলে। ইহা স্রোত বিশিষ্ট পানির মত। এই পুকুরে যে অপবিত্র বস্তু দৃষ্টি গোচর হয় না, পড়িলে সেই পুকুরে যেই দিকে সেদিকে বসিয়া অজু করিতে পারিবে। যথা প্রস্রাব, শেণীত, সরাব ইত্যাদি। যদি দৃষ্টিগোচর বস্তু পড়ে যেমন মৃত কুকুর; যেই স্থানে পড়িয়াছে সেই স্থান ত্যাগ করিয়া অন্য স্থানে অজু করিতে পারিবে। (অপবিত্র স্থান হইতে একটা ছোট কূপের পরিমাণ বাদ দিয়া) অপবিত্র বস্তু ঐ বৃহৎ পুকুরে পড়ার দরুণ পানির রং, ঘ্রাণ, আস্বাদ পরির্বত্তন হইলে বা পানি দুর্গন্ধ হইলে পানি নাপাক হইবে। দাহদরদাহতে মোট দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে এবং ছাতে ১০০ শত হাত হইতে হইবে, অন্য কেতাবে বর্ণিত আছে। চতুস্কোণ পুকুরের দৈর্ঘ্য চব্বিশ গজ, প্রস্থ দশ গজ হইলে বৃহৎ পুকুরে গণ্য হইবে। গোলাকার পুকুর হইলে উহার পরিধি ৩৬ (৭২ হাত) হইলে দিঘী বলিয়া গণ্য হইবে। ত্রিকোণ হইলে প্রত্যেক কোণ বিশিষ্ট পুস্করিণীর কোণ ১৫। সোয়া পনর গজ হইলে বৃহৎ পুস্করিনী হইবে। উহা ২৪ অঙ্গুলিয় গজ দ্বারা পরিমাণ করা যাইবে। ইহা মোতাখেরিনদের ফতোয়া। দোররল মোখতার ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড জামেউল ফতোয়া ৩ খণ্ড। যেই পুকুর ২০ হাত লম্বা ও চারি হাত প্রস্থ ঐ পুকুর দাহদরদাহ অর্থাৎ বড় পুকুরের ন্যায় হইবে। ঐ পুকুরের গভীরতা এই পরিমাণ হইতে হইবে যে, হস্তের অঙ্গুলী নৌকার ন্যায় করিয়া পানি উঠাইলে মাটি দেখা না যায়। অজু ও গোছল করিলে যেই সকল পানি শরীর হইতে নির্গত হয় অর্থাৎ ব্যবহার করা হয় উহাকেই এস্তেমালি পানি বলা হয়। এস্তেমালি পানি শুদ্ধ কিন্তু উহার দ্বারা অন্য কোন বস্তু শুদ্ধ করা যায় না যেমন অজু, স্নান ইত্যাদি। ছাতের উপর অপবিত্র বস্তু থাকিলে বৃষ্টি দ্বারা নালা দিয়া পানি জারী হইলে তবে অর্ধেক বা অধিকাংশ ছাত নাপাক হইলে পানি নাপাক হইবে। পানি যদি

আস্তে আস্তে ভাসিয়া চলে সেই সময় অজু করিতে বেশী তাড়াতাড়ি না করিবে, যেন এস্তেমালী পানি হাতে না আসে। দাহদরদাহ পুকুরের যে স্থানে ব্যবহারীয় পানি পতিত হইয়াছে সেই স্থান হইতে ব্যবহারীর পানি হাতে উঠাইয়া লইলেও দোরস্ত হইবে। কোন কাফের বা কাফেরের ছেলের হাত পানিতে ডুবাইলে পানি অপবিত্র হইবে না। হাঁ যদি তাহার হাতে অশুদ্ধ বস্তু থাকে তবে পানি অশুদ্ধ হইবে। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড। অল্প পানিতে সামান্য অশুদ্ধ বস্তু পড়িলে অপবিত্র হইয়া যাইবে। যেই পরিমাণ অল্প নাপাক বস্তু পানিতে পড়িলে পানি নড়িয়া যায় তদ্ধারা পানি অপবিত্র হইবে ঊষ্ট্র ও ছাগলের মেগ্নী (পায়খানা) কূপের মধ্যে অধিক পরিমাণ পতিত হইলে পানি নাপাক হইয়া যাইবে। ঐ মেগ্নী শুষ্ক বা ভিজা হউক নতুবা টুকরা হউক নাপাক হইবে। যাহাকে মুব্তলী বেশী বলিয়া মনে করে তাহাকে অধিক পরিমাণ বলে। যে ব্যক্তির জন্য এই কূপ ব্যতীত অন্য কোন পানির কূপ পাওয়া না যায় তাহাকে মুবতলী বলে। সারমর্ম এই যে, যেই কূপে উষ্ট্র কিংবা বকরীর পায়খানা পতিত হইয়াছে সেই কূপ ছাড়া যদি অন্য পাক কূপ পাওয়া না যায় এবং যতক্ষণ র্পয্যন্ত ঐ ব্যক্তির মনে মনে অধিক পরিমাণে মেগ্নী পতিত হইয়াছে বলিয়া ধারনা না হয় পাক বলিয়া বুঝিতে হইবে। কাকাতুয়া কিংবা চিলের পায়খানার দ্বারা কূপের পানি অশুদ্ধ হইবে না। দোররল মোখতার ও আলমগীরি ১ম খণ্ড ইত্যাদি ও রুকনুদ্দিন। যেই জন্তুর পানিতে জন্ম হয় এবং সর্ব্বদা পানিতে বাস করে, সেই পানিতে মরিয়া গেলে পানি খারাপ হইবে না ও পাক থাকিবে। যেমন মাছ, ব্যাঙ, কাছিম ইত্যাদি পানি ছাড়া অন্য কিছুতে পড়িয়া মরিলে তাহাও নাপাক হইবে

না।যেমন ছিরকা, সিরাব ও দুগ্ধ ইত্যাদি জলের ব্যাঙ ও স্থলের ব্যাঙ একই কথা অর্থাৎ পানিতে মরিলে পানি নাপাক হইবে না।হাঁ যদি জমির ব্যাঙের মধ্যে রক্ত জন্মিয়া পানি কিম্বা যেই কোন বস্তুতে পড়িয়া মরে সমস্ত বস্তু নাপাক হইবে।স্থলের ব্যাঙ ও সমুদ্রে ব্যাঙের পার্থক্য এই যে, স্থলের ব্যাঙের অঙ্গুলীর মধ্য ভাগে ফাঁক আছে, সমুদ্রের ব্যাঙের অঙ্গুলীর মধ্য ভাগ চামড়া দ্বারা লাগানো যেই জন্তু পানিতে জন্ম না হইয়া পানিতে বাস করে উহা পানিতে মরিলে পানি নাপাক হইবে। যেমন হংস ও মুরগাবী মস্হুর পক্ষী সর্বদা সমুদ্রে সাতার দেয় ঐ জন্তু যদি মরিয়া যাওয়ার পর পানিতে পড়ে তবুও পানি নাপাক হইয়া যাইবে। ভেক বা কচ্ছপ যদি পানিতে মরিয়া টুকরা ২ও পানির সঙ্গে মিশ্রিত হইয়া যায় তবুও পানি নাপাক হইবে না।কিন্তু ঐ পানি পান করা ও উহার দ্বারা খাদ্য পাক করা দুরন্ত নহে।অজু ও স্নান করিতে পারিবে।রৌদ্রের গরমে যেই পানি উত্তপ্ত হইবে তদ্ধারা অজু ও গোছল না করা ভাল।কারণ সেই পানির দ্বারা শরীরে সাদা দাগ হওয়ার ভয় আছে। মরা জন্তুর চামড়া রৌদ্রে শুকাইয়া বা কোন ঔষধ ইত্যাদির দ্বারা পাক করিলে ও চামড়াতে পানি না থাকিলে বা চামড়ার মধ্যে পানি রাখিলে খারাপ না হইলে ঐ চামড়া পাক জানিবে।উহার উপর নামাজ পড়িতে ও মশক ইত্যাদি তৈয়ার করিয়া পানি রাখিতে পারিবে। কিন্তু সর্পের চামড়া ও ইদুরের এবং শুকরের চামড়া পাক হইবে না।মানুষের চামড়া দ্বারায় কোন কাজ করিলে সিদ্ধ নহে।করিলে পাতকি হইবে।কুকুর,বিড়াল,ব্যাঘ্র ইত্যাদির চামড়া দবাগত করিলে যেইরূপ পাক হয়,বিছমিল্লাহে আল্লাহু আকবর পড়িয়া জবেহ করিলে সেইরূপ পাক হয়।কিন্তু গোস্ত পাক হইবে না ও গোস্ত খাইতে পারিবে না।মৃত জন্তুর লোম, শিং, হাড় ও দাঁত ইত্যাদি পাক।পানিতে পতিত হইলে পানি নাপাক হইবে না।হাঁ যদি হাড় ও দন্ত ইত্যাদির উপর মৃত জন্তুর চরবি ইত্যাদি লাগিয়া

থাকে তবে নাপাক, পানিও নাপাক হইবে। মানবের হাড় ও চুল পাক কিন্তু উহাকে কোন কাজে লাগান বা তদ্ধারা কোন উপকৃত হওয়া দোরস্ত নাই। যদি কোন জাপগায় মানুষের হাড় ইত্যাদি পাওয়া যায় সম্মানের সহিত দফন করিয়া দিবে। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

কূপের বিবরণ

যদি কূপের মধ্যে সামান্য অপবিত্র বস্তু পতিত হয় বা অধিক পরিমাণে পতিত হয় কূপ নাপাক হইয়া যাইবে। কূপের সমস্ত পানি বাহির করিলে পাক হইবে। আন্দরের দিওয়ার ও প্রস্তর ইত্যাদি ধৌত করিতে হইবে না। এইরূপ যেই কলসী ও রজ্জুর দ্বারা পানি উঠাইয়াছে তাহাও ধৌত করা আবশ্যক নহে। নিজে নিজে পবিত্র হইয়া যাইবে। কবুতর ও চড়াইর পারখানা দ্বারা কূপ অপবিত্র হইবে না। মুরগী ও হংসের পায়খানার দ্বারা কূপের পানি অশুদ্ধ হইবে। উহাদের পায়খানা কূপে পড়িলে সমস্ত পানি বাহির করা ওয়াজেব হইবে। গরু, কুকুর, ছাগল কূপে প্রস্রাব করিলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। মানুষ ও ছাগল, কুকুর, নতুবা উহাদের সমান অন্য কোন জন্তু কূপে পড়িয়া মরিলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। কূপের বাহিরে মরিয়া পরে কূপে পড়িলেও সেই কথা। কোন জন্তু কূপের মধ্যে মরিয়া যাওয়ার পর ফুলিয়া বা ফাটিয়া গেলে ছোট বা বড় জন্তু হউক সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। যদি চড়ই, বাবুই, ইঁদুর এর ন্যায় অন্য কোন পাখী কূপে পতিত হইয়া মরিয়া না ফুলে বা ফাটিয়া না যায় তবে ২০ কলসী পানি তুলিয়া ফেলিতে হইবে কিন্তু ৩০ কলসী পানি ফেলা মস্তাহাব। প্রথমে ইঁদুর ইত্যাদি বাহির করিতে হইবে নতুবা পানি বাহির

করিলে কোন ফল হইবে না। যেই টুকটুকীর মধ্যে ভাসা রক্ত আছে উহারও একই কথা। যাহার মধ্যে ভাসা রক্ত নাই সেই টুকটুকী পানিতে মরিলে নাপাক হইবে না। বিড়াল, কবুতর, মুরগী নতুবা ইহার ন্যায় অন্য কোনজন্তু পানিতে মরিয়া না ফুলিলে ৪০ কলসী পানি ফেলা ওয়াজেব। ৬০ কলসী বাহির করা মস্তাহাব যেই কূপের মধ্যে যেই কলসী র্বত্তমানে মওজুদ থাকে সেই কলসী হিসাব মতে পানি বাহির করিতে হইবে। যদি ঐ কলসীর মধ্যে দুই কলসীর সমান পানি আঁটে (ধরে) দুই কলসী হিসাব করিতে হইবে। এইরূপ যতই বেশী হইবে ততই বেশী হিসাব করিতে হইবে। কলসীর কথা যাহা বলা হইল তাহার পরিমাণ ৮০ তোলা সেরের তিন সের পরিমাণ পানি হইতে হইবে। এই পরিমাণের পাত্র বা কলসী হইলে শরিয়ত মতে সিদ্ধ হইবে। পানির আন্দাজ কয়েক প্রকারে করা যাইতে পারে: (১) একটি কুপে পাঁচ হাত পানি আছ,ে তবে উহা হইতে ১০০ শত কলসী পানি বাহির করার পর দেখ, তাহাতে কত হাত পানি কমিয়া গিয়াছে। যদি এক হাত পানি কম হয়, বুঝিতে হইবে যে এক হাতে ১০০ শত কলসী পানি কমিবে। এই ভাবে ৫ হাতে ৫০০ শত কলসী পানি বাহির হইবে। (২) যাহারা পানির কাজ করে সেই রকমের দুই জন দীন্দার মুত্তকী লোক যত কলসী পানি আন্দাজ করিয়া হইবে বলিয়া বলে তত কলসী পানি বাহিরে ফেলিয়া দিবে। (৩) যেই স্থানে ঐ দুই প্রকারের আন্দাজ অসম্ভব হইয়া পড়ে তবে সেই স্থানে ৩০০ শত কলসী পানি ঐ কূপ হইতে বাহির করিয়া ফেলিবে। নামাজী এক কূপের পানি দ্বারা অজু করিয়া নামাজ পড়ার পর জানা গেল যে ঐ কূপের পানিতে ইঁদুর পড়িয়া মরিয়া গিয়াছে কিন্তু ফুলে নাই ও ফাটে নাই। ঐ পানিতে অজুকারী নামাজী এক দিবা রাত্রি নামাজ দোহরাইতে

হইবে। ঐ কূপের ধৌত করা কাপড়কে পুনরায় ধৌত করিতে হইবে। ফুলিলে বা ফাটিলে তিন দিবারাত্রির নামাজ দোহরাইতে হইবে। বাজ ইমামগণ বলেন, যেই সময় হইতে কূপ নাপাক হইয়াছে বলে জানা যায় সেই সময় হইতে নাপাক বুঝিতে হইবে। তাহার র্পূব্বরে নামাজ ও অজু দোরস্ত হইবে। যেই ব্যক্তির উপর গোছল আবশ্যক কলসী ইত্যাদি তালাসের উদ্দেশ্যে কূপের মধ্যে পতিত হইলে তাহার অঙ্গের সঙ্গে বা কাপড়ের সঙ্গে নাপাকি না থাকিলে কূপের পানি অশুদ্ধ হইবে না। এইরূপ কোন কাফেরের অঙ্গে বা কাপড়ে অপবিত্র বস্তু না থাকিলে এবং কূপে পতিত হইলে পানি নাপাক হইবে না। থাকিলে নাপাক হইবে। কূপের সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। কাপড় শুদ্ধ কিনা সন্দেহ হইলেও জানিতে না পারিলে, তবুও কূপ শুদ্ধ বলিয়া বুঝিতে হইবে। কিন্তু অন্তরের শান্তির জন্য ২০ কলসী বা ৩০ কলসী পানি বাহির করিয়া ফেলিয়া দিলে ক্ষতি হইবে না। কূপের মধ্যে জীবিত ইঁদুর কিংবা ছাগল পতিত হইয়া জীবিত অবস্থায় বাহির করা গেলে কূপ অপবিত্র হইবে না। এবং পানিও বাহির করিতে হইবে না। বিড়াল ইঁদুরকে কামড়াইবার পর যদি ইঁদুর রক্ত সহ কূপে পতিত হয়, কূপের সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। ইঁদুর নীবদান ( ) হইতে বাহিরে দৌঁড়ার পর অপবিত্র বস্তু সহ কূপে পতিত হইলে কূপের সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। ইঁদুর জীবিত হউক বা মৃত হউক লেজ কাটার পর কূপে পতিত হইলেও সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। এইরূপ ছপকলী (টিকটিকী) ভাসা রক্ত ওয়ালা হইলে উহার লেজ কূপে পতিত হইলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। যেই বস্তু কূপে পতিত হইয়া কূপের পানি অপবিত্র করিয়াছে যদি ঐ বস্তু চেষ্টা করা সত্ত্বেও বাহির করিতে না পারে, তখন

দেখিতে হইবে যে ঐ বস্তুটি কি রকম; যদি বস্তুটি নিজেই শুদ্ধ, অশুদ্ধ বস্তু মিশ্রিত হওয়ার দরুণ অপবিত্র হইয়া গিয়াছে, যেমন নাপাক কাপড় ও নাপাক জোতা ইত্যাদি, তখন উহাকে বাহির না করিলে মাফ জানিবে কিন্তু পানি বাহির করিতে হইবে। যদি বস্তুটা নিজে নাপাক হয় যেমন মৃত ইঁদুর ইত্যাদি তবে যতদিন র্পয্যন্ত এই ধারণা না হয় যে উহা গলিয়া মাটি হইয়া গিয়াছে ততক্ষণ র্পয্যন্ত কূপ পাক হইতে পারিবে না। যখন নি:সন্দহে হইবে কূপের সমস্ত পানি বাহির করিলে কূপ পাক বলিয়া জানিবে। যত পরিমাণ পানি কূপ হইতে বাহির করা আবশ্যক, এক দফাতে ও বাহির করা যাইতে পারে, নতুবা অল্প ২ করিয়া কয়েকবার করিয়াও বাহির করিতে পারিবে। পানি বাহির করার পর কূপ পাক হইবে। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড ও রুকনুদ্দিন এবং দোররুল মোখতার ইত্যাদি।

জুটার বিবরণ

মনুষ্য যেই প্রকার হউকনা কেন, সকলের জুটা পাক। মোসলমান হউক বা কাফের হউক, হায়েজওয়ালী হউক বা নেফাছ ওয়ালী হউক এইরূপ উহাদের পছিনা ও পাক, বা যদি উহাদের মুখে বা হস্তে নাপাক বস্তু থাকে তবে ঐ জুটা নাপাক জানিবে। কুকুরের জুটা নাপাক। কুকুর যদি কোন বাসনে মুখ ঢালিয়া দেয় ঐ বাসনকে তিনবার ধৌত করিলে পাক হইয়া যাইবে। কিন্তু সাতবার ধৌত করিলে ভাল হয়। ঐ বাসন মাটির হউক বা তামার হউক ইত্যাদির একই কথা। একবার মাটি দ্বারা মাজিলে অতি পরিষ্কার হইবে। সিংহ, গন্ডার, ব্যাঘ্র, ভল্লুক, বানর, শৃগাল প্রভৃতির জুটা অসিদ্ধ। বিড়ালের ও মোরগের জুটা মক্রুহ তনজীহ। অন্য পানি পাওয়া গেলে বিড়ালের জুটা পানি দ্বারা অজু না করিবে। পাওয়া

না গেলে সুতরাং করিবে। দুগ্ধ তরকারি ইত্যাদির মধ্যে বিড়াল মুখ ঢালিয়া দিলে ধনী লোকেরা তাহা না খাইবে, দীন লোকেরা খাইলে কোন ক্ষতি নাই। বিড়ালে ইঁদুর খাইয়া হঠাৎ বাসনে মুখ ঢালিলে ঐ বাসন বা বর্ত্তন নাপাক হইবে। ক্ষণকাল গৌণ করিয়া মুখ ছাটিয়া খাওয়ার পর বাসনে বা পাত্রে মুখ ঢালিয়া দিলে অপবিত্র হইবে না। কিন্তু মক্রুহ হইবে। মোরগ খোলা থাকিয়া এদিক ওদিক খুড়িয়া দুর্গন্ধ বস্তু আহার করিয়া জুটা করিলে মকরুহ হইবে। বন্ধ মোরগের জুটা মকরুহ নহে। পাক জানিবে। চিল কোড়া, বাজ বদুরির জুটা মক্রুহ, কিন্তু পুষিত হইলেও অপবিত্র বস্তু না খাইলে এবং চক্ষুর মধ্যে কোন নাপাক বস্তু না থাকিলে বা নি:সন্দেহ হইলে তবে উহাদের জুটা পাক। হালাল পাখী যেমন তোতা ও ময়না ইত্যাদি এবং হালাল পশু যেমন ছাগল, মেষ, ভেড়া, গরু, মহিষ, মৃগ ইত্যাদি সমূহের জুটা পাক। যে জন্তুর ও পশ্বাদির জুটা পাক তাহার ঘর্ম্মও সিদ্ধ। যে পশ্বাদির জুটা অসিদ্ধ তাহার ঘর্ম্মও অসিদ্ধ। গৃহে যে যে জন্তু থাকে যেমন সর্প, ইঁদুর, টুকটুকী ও তেলাপোকা ইত্যাদির জুটা মকরূহ। ইঁদুরে রুটি কামড়াইয়া খাইলে বাকী রুটি যেই স্থান হইতে খাইয়াছে তাহা কাটিয়া ফেলিয়া দিয়া খাইলে ভাল জানিবে। ঘোড়ার জুটা পাক। গর্দ্দভ ও খচ্চরের জুটা মশ্কুক। মশকুক পানি ব্যতীত অন্য কোন পাক পানি পাওয়া না গেলে ঐ পানির দ্বারা অজু করিবার পরে কিংবা আগে তয়ম্মুম করিতে হইবে। অঙ্গে কিংবা কাপড়ে লাগলে ধৌত করা ওয়াজেব নহে। পোষা বিড়াল হাত, পা ছাটিলে বা লোয়াব লাগাইলে সেই স্থান ধৌত করিতে হইবে। নতুবা মক্রুহ হইবে। অপর পুরুষের জুটা জানিয়া কোন স্ত্রী লোকে খাইলে তাহা মক্রুহ

হইবে। না জানিয়া খাইলে মক্রুহ হইবে না। বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড ও রুকনুদ্দিন ইত্যাদি।

তৈয়ম্মুমের বিবরণ

যদি কোন ব্যক্তি এমন স্থানে উপস্থিত হয় যে যাহাতে জল কোথায় আছে তাহা জানে না নতুবা জিজ্ঞাসা করার কোন লোকও পাওয়া যাইতেছে না, ঐ সময় তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ পড়িবে। অজু ও গোছল করার শক্তি না হইলে মাটি দিয়া মুখ ও হস্তদ্বয় মোছেহ করাকে তৈয়ম্মুম বলে। কয়েক কারণে তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত আছে: (১) এক ক্রোশ দুরে পানি থাকিলে যাহাতে কষ্ট এবং নামাজের সময় অতীত হইয়া যাওয়ার সম্ভব হইলে। (২) পীড়িত থাকা হেতু পানি ব্যবহারে পীড়া বৃদ্ধি হওয়ার ভয় হইলে। (৩) পানির অভাবে পশ্বাদি মারা যাওয়ার সম্ভব হইলে। (৪) বিদেশে মোছাফেরিতে পানির সন্ধান জানিতে গেলে, নমাজের সময় গত হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা হইলে। (৫) অজুর পরিমাণ পানি সঙ্গে আছে তদ্ধারা অজু করিলে সঙ্গীয় পশ্বাদি পিপাসায় থাকিলে। (৬) কূপের পানি তুলিবার বালতি কি রজ্জু না থাকিলে, দড়ি র্বত্তমান কিন্তু কূপের মালিক বিনা মূল্যে পানি না দিলে। এবং পানি পরিমাণ মূল্য সঙ্গে না থাকিলে। (৭) কয়েদী কারারুদ্ধ থাকিলে। (৮) পানির স্থানে শত্রুর ভয় থাকিলে। (৯) পানির নিকট শত্রুর সৈন্য থাকিলে। (১০) পানির নিকট হাকিমের পদাতিক সৈন্য গেরেফতার মানসে বসিয়া থাকিলে। (১১) পানির সঙ্গে কাদা উঠিলে। (১২) আবদ্ধ পানি অশুদ্ধ থাকিলে। (১৩) গাধা ও খচ্চরের পান করা পানির দ্বারা অজু করিলে। (১৪) অজু করিতে গেলে জানাজার নমাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে। (১৫) অজু করিতে গেলে ঈদের নামাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে।

(১৬) হস্ত লুলা বা হস্ত না থাকিলে এ সকল অবস্থাতে তৈয়ম্মুম করিবে। তৈয়ম্মুমের দুই রোকন যথা: (১) দুইবার মৃত্তিকায় করাঘাত করা। (২) তৈয়ম্মুমের সমস্ত স্থান মোছেহ করা, যাহাতে কোন জায়গা খালি না থাকে। তৈয়ম্মুমরে সাত শর্ত আছে: (১) মোসলমান হওয়া (২) তৈয়ম্মুমের নিয়ত করা (৩) মোছেহ করা (৪) তিন বা বেশী আঙ্গুলী দ্বারা মোছেহ করা (৫) মৃত্তিকা বা তৎজাতীয় বস্তু বিশুদ্ধ হওয়া (৬) মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা তৈয়ম্মুম করা (৭) পানি না পাওয়ার দরূণ তৈয়ম্মুম করা। ইংরাজী মাইল সরয়ী মাইল হইতে ছোট। কারণ সরয়ী মাইল চব্বিশ আঙ্গুলীতে এক হস্ত। ইহার চারি সহস্র হস্তে এক এক মাইলে এদেশে এক ক্রোশ হইবে। সুতরাং এক ক্রোশ দুরে পানি থাকিলে গোছলের পরির্বত্তে তৈয়ম্মুম সিদ্ধ হইবে। শরয়ী মাইল ইংরাজী মাইলের ১ ভাগ হইলে হইবে। সামান্য পানি পাওয়া গেলে যাহার দ্বারা এক ২ বার দুই হস্ত, দুই পদ, মুখ এবং মস্তক মোছেহ করিতে পারিবে, তবে হস্ত, পদ এবং মুখ ধৌত করিবে এবং মস্তক মোছেহ করিবে। কুলকুচ ইত্যাদি ছুন্নত ছাড়িয়া দিবে। এই পরিমাণ না পাওয়া গেলে তৈয়ম্মুম করিবে। রুগ্ন ব্যক্তি পানি ব্যবহার করিলে রোগ বাড়িয়া যাইবে ও গৌণে আরোগ্য হইবে তবে তৈয়ম্মুম করিবে। কিন্তু গরম পানি অনিষ্ট না করিলে গরম পানি দ্বারা অজু করা ওয়াজেব। গরম পানি পাওয়া না গেলে তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। পানি এক মাইলের কমের আন্দর পাওয়া গেলে এবং পাওয়া যাওয়া নি:সন্দেহ হইলে তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত হইবে না। যতদিন পানি পাওয়া না যায় ততদিন তৈয়ম্মুম করিতে হইবে। পানি দ্বারা অজু বা অবগাহন করিলে যে রকম পাক হয় তৈয়ম্মুম করিলেও সেই

রকম পাক হয়। পানি মূল্য ব্যতীত পাওয়া না গেলে এবং মূল্য নিজের নিকট না থাকিলে তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত আছে। যদি মূল্য সঙ্গে থাকে রাস্তার কুলি খরচ দিলেও পানির মূল্য দিতে পারিবে তখন পানি খরিদ করা ওয়াজেব নতুবা নহে। হাঁ যদি অধিক মূল্যে পানি বিক্রি করা যায় যাহাতে সেইরূপ অধিক মূল্যে কেহই বিক্রি করে না ও মূল্য দিতে না পারে তবুও তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। কোন স্থানে বেশী সর্দি হওয়ায় গোছল করিলে মরিয়া যাওয়ার বা ব্যাধি বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা থাকিলে এবং লেপ-তোষক বা গরম কাপড় না থাকিলে তৈয়ম্মুম করিলে সিদ্ধ হইবে। অধিকাংশ অঙ্গে ঘা বা চিচক্ হইলে তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও অবগত না হওয়ায় তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়ার পর অবগত হইল যে পানি তাহার নিকটার্বত্তী, নমাজ পুনরায় অজু করিয়া পড়া আবশ্যক নহে। মুছাফেরিতে সঙ্গীদের সহিত পানি থাকিলে যদি মুছল্লির মনে হয় যে পানি চাহিলে দিবে তবে চাওয়া ব্যতীত তৈয়ম্মুম করিলে দোরস্ত হইবে না। আর যদি মনে হয় চাহিলে দিবে না, তবে না চাহিয়া তৈয়ম্মুম দ্বারা নমাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে। কিন্তু নমাজ পড়ার পর পানি চাওয়াতে সে দিলে নমাজ পুন:বার পড়িতে হইবে। যদি জম্ জম কূপের পানি ছোরাহিতে আবদ্ধ থাকে ছোরাহির মুখ খুলিয়া অজু করা ওয়াজেব হইবে। তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। কোন ব্যক্তির নিকট পানি আছে, কিন্তু রাস্তা এই ভাবে খারাপ যে যাহাতে পানি পাওয়া যায় না। সেই ব্যক্তি ভয় করিতেছে যে যদি পানি দ্বারা অজু করে তবে পিপাসায় কষ্ট পাইবে এবং মরিবার আশঙ্কা আছে তবে তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। এক ব্যক্তির স্নান ও অজু করার আবশ্যক। স্নানে অনিষ্ট করিলে তাহার

পরির্বত্তে তৈয়ম্মুম করিবে। অজু করিলে অনিষ্ট না হইলে পানির দ্বারা অজু করিবে। তৈয়ম্মুমে আটটা সুন্নত আছে: (১) অজুর ন্যায় বিছমিল্লাহ বলা (২) দুই হস্তের করতল মৃত্তিকায় আঘাত করা (৩) দুই হস্তের করতল মৃত্তিকায় রাখিয়া সম্মুখ দিকে টানিয়া লওয়া (৪) দুই হস্তের করতল মৃত্তিকার উপর রাখিয়া পশ্চাৎ দিক টানিয়া লওয়া (৫) করতল ঝাড়া দেওয়া (৬) করতল মৃত্তিকার উপর রাখার সময় আঙ্গুলী গুলি ফাঁক ২ করিয়া রাখা (৭) ধারার প্রতি দৃষ্টি রাখা যেমন মুখ মোছেহ করার পর দক্ষিণ হস্ত মোছেহ করা তৎপর বাম হস্ত মোছেহ করা (৮) লাগালাগি মোছেহ করা যেমন; একস্থান মোছেহ করিয়া অন্য স্থান মোছেহ করিয়া অন্য স্থান মোছেহ করিতে গৌণ না করা। তৈয়ম্মুমের নিয়ম এই: প্রথমত: দুই হস্ত মৃত্তিকার উপর মারিয়া মুখ মোছেহ করিবে। তৎপর দ্বিতীয় বার হাত মারিয়া দুই হস্তের কনুই র্পয্যন্ত মোছেহ করিবে। যদি হাতে অলঙ্কার ইত্যাদি থাকে তাহার ভিতরের স্থান ভাল করিয়া মোছেহ করিবে। অজুর স্থান হইতে নখ বরাবর জায়গা যদি ছাড়িয়া দেয় তাহা হইলে তৈয়ম্মুম দোরস্ত হইবে না। আঙ্গুলীতে আংটী বা অন্য কোন গোলাকার বস্তু থাকিলে তাহাও খুলিয়া রাখিয়া সেই স্থান মোছেহ করিতে হইবে। যেন কোন স্থান বাকী না থাকে। মাটির উপর হাত মারিয়া ঝাড়িয়া ফেলিবে। যেন হাত মুখ ছাই মিশ্রিত হইয়া সাধুর মত না হয়। জমি ছাড়া যেই বস্তু মৃত্তিকা জাতীয় হয় উহার দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত হইবে। যেমন: বালু, প্রস্তর, ছুরমা, চুনা হারতাল ইত্যাদি। মৃত্তিকা জাতীয় ভিন্ন অন্য বস্তু দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত নহে। যথা: স্বর্ণ, রৌপ্য, রাঙ, গম, কাপড় ইত্যাদি। যদি উল্লিখিত বস্তুর উপর ধুলি ও মাটি লাগিয়া থাকে ঐ বস্তুর দ্বারা তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। যেই বস্তু আগুনেও জলে গলে না উহা মাটি

জাতীয় বটে।উহার দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত আছে।যেই বস্তু জ্বলিয়া ছাই হইয়া যায় এবং গলিয়া যায় উহার দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত নহে। এই রূপ ছাইয়ের দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত নহে।তামার বাসন বা বালিশ ইত্যাদির উপর যদি ভালমতে মাটি লাগিয়া থাকে এবং হাত মারিলে মাটি বা ধুলা হাতে লাগে তদ্ধারা তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত আছে।নতুবা নহে।প্রস্তরের উপর মাটি না থাকিলেও প্রস্তরের দ্বারা তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত।কোন স্থানে কাদা ব্যতীত অন্য কোন মাটি না থাকিলে তবে নিজের কাপড় বা কোর্ত্তার উপর কাদা মালিশ করিয়া শুকাইয়া লইয়া ঐ শুকনা মাটির দ্বারা তৈয়ম্মুম করিবে।নমাজ কাজা করিতে পারিবে না।জমির উপর প্রস্রাব ইত্যাদি পড়িয়া রৌদ্রের দ্বারা শুকাইয়া গেলেও দুর্গন্ধ না থাকিলে সেই জমির উপর নমাজ পড়া দোরস্ত আছে। কিন্তু সেই জমির মাটি দ্বারা তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত নহে।অজুর পরির্বত্তে যেমন তৈয়ম্মুম দোরস্ত হয় সেইরূপ গোছলের পরির্বত্তওে তৈয়ম্মুম দোরস্ত হইবে যদি কোন ওজর পাওয়া যায়, নতুবা দুরস্ত হইবে না।অজু ও গোছলের তৈয়ম্মুমে কোন প্রভেদ নাই।কোন ব্যক্তিকে তৈয়ম্মুমের তরতীব শিক্ষা বা দেখাইয়া দেওয়ার জন্য তৈয়ম্মুম করিলে সেই তৈয়ম্মুম দ্বারা নামাজ বা অন্য কোন এবাদত করিতে পারিবে না। কারণ তৈয়ম্মুমের নিয়ত করা ফরজ নিয়ত এইরূপ করিতে হইবে” আমি অশুদ্ধ হইতে শুদ্ধ হইবার জন্য তৈয়ম্মুম করিতেছি নতুবা নামাজ পড়ার জন্য তৈয়ম্মুম করিতেছি”এইরূপ নিয়ত করিলে দোরস্ত হইয়া যাইবে।আমি অজু কিংবা স্নানের জন্য তৈয়ম্মুম করিতেছি এইরূপ নিয়ত আবশ্যক নহে।কোরআন শরীফ স্পর্শ করার নিয়তে তৈয়ম্মুম করিলে তদ্ধারা নমাজ পড়া দোরস্ত হইবে না।এক নমাজের জন্য তৈয়ম্মুম করিলে তদ্ধারা অন্য ওয়াক্তের নমাজ ও কোরআন শরীফ পড়া দোরস্ত হইবে।কবর জেয়ারত বা মৃত

ব্যক্তি দফন করা এবং আজান দেওয়ার নিমিত্ত তৈয়ম্মুম করিলে, সেই তৈয়ম্মুম দ্বারা ফরজ নামাজ পড়া দোরস্ত নহে। কোন ব্যক্তির উপর গোছল ও অজুর আবশ্যক। একই তৈয়ম্মুম দ্বারা দোনটা সারিয়া যাইবে, পৃথক ২ তৈয়ম্মুম করিতে হইবে না। কোন ব্যক্তি পানি না পাওয়াতে তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়ার পর পানি পাওয়া গেলে পুন:বার নমাজ পড়িতে হইবে না। পানি যদি এক মাইল হইতে কম দূরে হয় এবং নমাজের সময়ও কম, পানির কাছে যাইয়া অজু করিলে নমাজের ওয়াক্ত চলিয়া যাইবে তখন তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না অজু করিয়া ওয়াক্ত না থাকিলে কাজা পড়িবে।দুষ্ট লোকে কোন রমণীকে ভয় দর্শাইলে নতুবা মহাজনে খাতককে ভয় দেখার কারণে তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়ার পর ঐ ভয় দূরীভূত হইলে ঐ নমাজ পুন:বার পড়িতে হইবে। যদি উহাকে দেখার পর নিজে ভয় করিয়া তৈয়ম্মুম দ্বারা নমাজ পড়ে সেই নমাজ পুন:বার পড়িতে হইবে না।কারণ ঐ ভয় খোদা তায়ালা হইতে আসিয়াছে।পানি পাওয়া গেলে কোরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত নহে।সম্মুখে পানি পাওয়ার আশা থাকিলে প্রথম ওয়াক্তে নামাজ না পড়া ভাল। কিন্তু মক্রূহ ওয়াক্ত র্পয্যন্ত গৌণ না করিবে।গৌণ না করিয়া প্রথম ওয়াক্তে নামাজ পড়িলে তাহাও দোরস্ত হইবে।জানাজার নামাজের নিমিত্ত বাতেলাওয়াতের সেজদার জন্য তৈয়ম্মুম করিলে,ঐ তৈয়ম্মুম দ্বারা অন্য নমাজ পড়িতে পারে।জানাজা বা দুই ঈদের নামাজ এবং চন্দ্র ও সূর্য্য গ্রহণের নমাজ না পাওয়ার আশঙ্কা হইলে তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ পড়িতে পারিবে।পানির দ্বারা অজু করিতে গেলে রেলগাড়ী ছাড়িয়া দেওয়ার ভয় আছে,নতুবা পানির নিকট সর্প ইত্যাদি জন্তু থাকিলে ঐ সময় তৈয়ম্মুম করা দোরস্ত আছে। অর্থাৎ এই দুই সময়ে পানি লওয়া অসম্ভব হইলে, মালের সঙ্গে পানি

বন্ধ থাকিলে এবং মুছল্লির ও ঐ পানির কথা স্মরণ না থাকিলে, তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ পড়ার পর পানির কথা স্মরণ হইলে পুন:বার ঐ নামাজ পড়া ওয়াজেব নহে। মৃত ব্যক্তির অলি তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ জানাজা পড়িলে সিদ্ধ হইবে না।কূপের নিকট যাইয়া রশি ও কলসী পাইয়া কোন প্রকারে পানি উঠাইতে না পারিলেও তাহার নিকট এমন কাপড়ও নাই যাহাকে কূপের মধ্যে ঢুকাইয়া পানি উঠাইয়া চিবাইয়া লইয়া অজু করিতে পারে, তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে।যদি কাপড় থাকে এবং কূপে প্রবেশ করার দরূন কাপড়ের রং খারাপ হইয়া আবশ্যকীয় পানির মূল্য হইতে কাপড়ের রং খারাপ হওয়ার মূল্য অধিক তবে তৈয়ম্মুম সিদ্ধ হইবে। নতুবা সিদ্ধ হইবে না। যদি অপবিত্র লোকের সঙ্গে কোন পশু থাকে এবং তাহার নিকট এই পরিমাণ পানি থাকে যাহার দ্বারা অবগাহন করিতে পারা যায় নতুবা পশু খাওয়ার পর অবশিষ্ট না থাকে (এক কাজ করিতে পারিবে) যদি ঐ ব্যক্তির নিকট এমন কোন বস্তু থাকিলে যাহার মধ্যে বসিয়া গোছল করিলে গোছলের পানি তাহাতে জমিয়া থাকে,তখন ঐ ব্যক্তি উহাতে বসিয়া অজু ও গোছল করিবে।অজু করিতে না পারিলে গোছল করিতে হইবে পরে ঐ জমা পানি পশুকে পান করাইবে। যদি সেইরূপ কোন বস্তু না থাকে তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়িবে। পানি পশুকে পান করাইবে। মুকিম (গৃহবাসী) ব্যক্তি কারারুদ্ধ অবস্থায় তৈয়ম্মুম করিয়া নমাজ পড়িলে যখন কারামুক্ত হয় ঐ নমাজ পুন:বার পড়িতে হইবে। কারারুদ্ধ ব্যক্তি পানি বা পাক মৃত্তিকা না পাইলে মুছল্লির ন্যায় হইয়া দাঁড়াইয়া কোরআন পাঠ ব্যতীত রুকু সেজদা করিবে এবং ঐ স্থান শুদ্ধ না হইলে দাঁড়াইয়া ইশারায় নমাজ পড়িবে।কারামুক্ত হইয়া ঐ নমাজ আবার পড়িতে হইবে।এইরূপ যেই ব্যক্তি পানি বা পাক মৃত্তিকা না পায় তাহারও একই কথা।কোন ব্যক্তির হস্তদ্বয় ও

পদদ্বয় কাটা ও মুখে ঘা আছে অজু ও তৈয়ম্মুম করিতে অক্ষম তখন ঐ ব্যক্তি অজু ও তৈয়ম্মুম ছাড়া নমাজ পড়িবে ঐ নমাজ পুন:বার পড়িতে হইবে না।এক হস্ত এক পা কাটা হইলে এবং মুখ সম্পূর্ণ ভাল না হইলে তবে ভাল জায়গা ধৌত করিয়া অজু করিবে; যদি সম্পূর্ণ মুখ ভাল হয় এবং হাত পা কাটা হয় মুখ মাটিতে মোছেহ করিয়া নমাজ পড়িবে হাত পা ভাল না থাকাতে ধৌত করিবে না। এক খণ্ড মৃত্তিকা দ্বারা কয়েকজন লোক নতুবা একজন লোক ষতদিন ইচ্ছা করে ততদিন তৈয়ম্মুম করিতে পারিবে। কারণ অজুর ব্যবহার করা পানি এস্তেমালী হইল। মৃত্তিকা ব্যবহার করিলে এস্তেমালী হইবে না।এক ব্যক্তি কয়েকজন লোককে তৈয়ম্মুম করিতে দেখিয়া বলিল,হে লোকগণ! এই স্থানে পানি আছে। তোমাদের হইতে যাহার ইচ্ছা অজু করিয়া নমাজ পড়িতে পার। কিন্তু পানি এক ব্যক্তির পরিমাণ হয়। ঐ পানির দ্বারা এক ব্যক্তি অজু করিলে আর অপরগণ তৈয়ম্মুম করিলে, সকলের তৈয়ম্মুম ভঙ্গ হইবে। কারণ ঐ পানিতে সকল মানুষের স্বত্ত্ব ছিল পৃথক-২।যদি ঐ পানির মালিক বলে যে আমি তোমাদের সকলকে এই পরিমাণ পানি দান করিয়াছি তবে কাহারও তৈয়ম্মুম ভঙ্গ হইবে না।কারণ ঐ দান করা পানিতে সকলের অংশ আছে ঐ অংশের পানি এক ব্যক্তির ও উপযোগী হইতেছেনা। হাঁ সকলে মিলিয়া ঐ পানি এক ব্যক্তিকে দান করিলে ইমাম আবু হানিফা (রহ:) বলেন, দান কৃত পাইলে তাহার তৈয়ম্মুম ভঙ্গ হইবে না। কারণ ইমাম সাহেব বলেন যে, শরীকি বস্তুর হেবা দোরস্ত নয়। ইমাম আবু ইউছুপ (র:) মুহাম্মদ (র:) বলেন এই মুছল্লির তৈয়ম্মুম ভঙ্গ হইবে। দানকৃত পানি পাওয়ার দ্বারায় অজু করিয়া নমাজ পড়িতে হইবে। এক মুছাফরে অজুর পরিমাণ পানি না হইবে বলিয়া মনে করিয়া তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ পড়ার পর জানিতে পারিল যে পানি

অজুর পরিমান হইবে। তবে নমাজ অজু করিয়া আবার পড়িতে হইবে। আঙ্গুলীর ভিতর ধূলী বালু না পৌঁছিলে তৈয়ম্মুম সিদ্ধ হইবে না। এক হস্তের আঙ্গুলী দ্বিতীয় হস্তের আঙ্গুলীর ভিতর দিয়া খিলাল করিলে সিদ্ধ হইবে। দোররুল মোখতার, বেহেস্তী জেওর ১ম খণ্ড রুকনুদ্দিন, আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি। যেই ২ কারণে অজু ভঙ্গ সেই কারণে তৈয়ম্মুম ও ভঙ্গ হয়।

মৌজার উপর মোধেছহ করার বিবরণ:

মৌজার উপর মোছেহ করা দোরস্ত আছে। ইমাম আবু হানিফা (রা:) আকায়েদের কেতাবে আহলে ছুন্নত অল জামাত হইতে জায়েজ রাখিয়াছে। পদতল হইতে হাটুর নিম্ন বা উরু র্পয্যন্ত সাদা, কাল এবং লাল প্রভৃতি রঙ্গের যে সুতা, পশম বা রেশম র্নিম্মতি জিনিষ দর্শন করিয়াছে উহাকে মৌজা বলে। মৌজা চারি প্রকার: (১) সুতার (২) রেশমের (৩) পশমের এবং (৪) চর্ম্মের। সুতা, রেশম ও পশম নির্ম্মিত মৌজার উপর মোছেহ করা দোরস্ত নহে। কেবল মাত্র চর্ম্ম র্নিম্মতি মৌজার উপর মোছেহ করা জায়েজ। মুকিম এক দিবারাত্রি মোছেহ করিতে পারিবে। মোছাফের তিন দিবা রাত্রি র্পয্যন্ত মৌজার উপর মোছেহ করিতে পারিবে যেমনÑ মুকিম ব্যক্তিকে রবিবার দিবস প্রাতে অজু করিয়া মৌজা পরার পর তাহার অজু দুই প্রহরের সময় র্পয্যন্ত থাকিয়া কোন কারণ বশত: ভঙ্গ হইলে, পরে ঐ ব্যক্তি সোমবার দ্বিপ্রহর র্পয্যন্ত যতবার হউক না কেন মৌজায় মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে। অজু ভঙ্গ হওয়া অবধি উহার হিসাব ধরা যাইবে। মৌজা পরার সময় হইতে হইবেনা। এইরূপ তিন দিবস রাত্রি বিষয় বিবেচনা করিয়া হিসাব করিয়া লইতে হইবে। উল্লিখিত হিসাব মতে নিয়মিত কাল (মুদ্দৎ) অতীত

হইলে বা মৌজা খসিয়া পড়িলে অথবা মৌজা তিনাঙ্গুলী পরিমাণ কাটিয়া বা ফাটিয়া গেলে মৌজার মোছেহ ভঙ্গ হইবে। চর্ম্মের ও বানাত নির্ম্মিত ইত্যাদির মৌজা যাহাতে পানি প্রবেশ করিতে পারে না এবং ঐ মৌজা পরিধান করিয়া রাস্তা দিয়া ভাল মতে চলিতে পারিলে সেই মৌজার উপর মোছেহ করা সিদ্ধ। লৌহ বা লাকড়ী নির্ম্মিত মৌজার উপর মোছেহ সিদ্ধ নহে। কারণ ঐ মৌজা পরিধান করিয়া ভালরূপে চলাফেরা করিতে পারে না। হাটতে কষ্ট হয়। মৌজা খসিয়া পড়িলে বা মোছেহের নিয়মিত কাল সম্পূর্ণ হইলে পা ধৌত করিতে হইবে। মৌজা রক্ষার্থে মৌজার উপর যাহা পরা যায় উহাকে জার্মুক বলে। আমরা উহাকে পা তাওয়া বলি। জার্মুক বস্ত্রের বা সুতার হইলে তাহার উপর মোছেহ করা বৈধ নহে। চর্ম্ম নির্ম্মিত হইলে মোছেহ করা সিদ্ধ। অজু করিবার পর মৌজা পরিধান করিতে হইবে নতুবা মোছেহ দোরস্ত হইবে না। দুই মৌজার কয়েক জায়গায় কাটা হইলে এবং ঐ কাটাগুলি একত্রিত করার পর তিন আঙ্গুলী পরিমাণ হইলে উহার উপর মেছেহ দোরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তির এক পায়ের অধিকাংশ মৌজা হইতে বাহির হইয়া গেলে দোন পদের মৌজা লইয়া ফেলিয়া পা ধৌত করিতে হইবে। এক পায়ের মৌজার উপর মোছেহ করিয়া দ্বিতীয় পায়ের মৌজা খুলিয়া পা ধৌত করিলে দোরস্ত হইবে না। মৌজার উপর মোছেহ করার নিয়ম এই: প্রথমত: দুই হস্ত ভিজাইয়া দুই হাতের আঙ্গুলী সকল ফাঁক রাখিয়া দক্ষিণ হস্ত দক্ষিণ পায়ের আঙ্গুলীর মাথা হইতে মৌজার উপর দিয়া টানিয়া পায়ের সন্ধি র্পয্যন্ত নিতে হইবে। এইরূপ বাম হস্তকে বাম পায়ের সন্ধি র্পয্যন্ত নিতে হইবে। তবেই মৌজার মোছেহ ফরজ ও সুন্নত সহ আদায় হইবে। প্রত্যেক মৌজায় হাতের তিন আঙ্গুলী বরাবর মোছেহ করা ফরজ। ইহার

কম হইলে মোছেহ দোরস্ত হইবে না। যেই জিনিস দ্বারা অজু ভঙ্গ হইবে উহার দ্বারা মোছেহ ভঙ্গ হইবে। মৌজা খসিয়া লইলে মোছেহ ভঙ্গ হইবে। যেই ব্যক্তির অজু ভঙ্গ হয় নাই মৌজা খুলিয়া ফেলিলে মোছেহ ভঙ্গ হইবে। দোন পা ধৌত করিতে হইবে। সম্পূর্ণ অজু পুনরায় করা আবশ্যক নহে। এক আঙ্গুলীর দ্বারা এক জায়গায় তিনবার রেখা টানিয়া মৌজায় মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে না। যদি তিন জায়গায় পৃথক ২ করিয়া তিন রেখা টানিয়া মোছেহ করে দোরস্ত হইবে। একটি মৌজা এক পা হইতে খুলিলে, দ্বিতীয় মৌজা খুলিয়া পা ধৌত করা ওয়াজেব। মোছেহ করিবার সময় মৌজার উপর আঙ্গুলীর চহ্নি হওয়া ফরজ। উহা মস্তাহাব নহে। মৌজার কাটা তিন আঙ্গুলীর সমান হইলে যদি চলিবার সময় ঐ পরিমাণ দেখা না যায়, সেই মৌজার উপর মোছেহ করা দোরস্ত আছে। মৌজার ভিতরে পানি প্রবেশ করিলে এবং পা ভিজিয়া গেলে তখন মৌজা খুলিয়া পা ধৌত করিতে হইবে, মোছেহ করা দোরস্ত হইবে না। মেঘের পানি বা শিশির মৌজার উপর লাগিয়া ভিজিয়া গেলে মৌজার মোছেহ হইয়া যাইবে। পুনরায় করিতে হইবে না। যেই ২ কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেই ২ কারণে মৌজার মোছেহও ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তির ভঙ্গ হাড়ের উপর লাকড়ি বা তক্তার দ্বারা যেই পট্টি বাঁধা হয় তাহাকে জবিরা বলা হয়। ঘা বা পট্টিটি খুলিয়া ঐ স্থান ধৌত করিলে যদি অনিষ্ট বা ক্ষতি হয় তবে জবিরার উপর মোছেহ করিতে পারিবে। জখরের সঙ্গে ভাল স্থান পট্টিতে বাঁধা গেলে সেই জায়গাও মোছেহ করা দোরস্ত আছে। যেই ব্যক্তির ঘায় মোছেহ করিলে অনিষ্ট হইবে না কিন্তু পট্টি খুলিলে ঐ ঘা পুনরায় নূতনভাবে হওয়ার ভয় আছে তখন তাহার উপর মোছেহ সিদ্ধ হইবে। পট্টি খসিয়া পড়িলে যদি নিজে বাঁধিতে না পারে এবং

অন্য কোন লোকও বাঁধিবার নাই, তখন ঐ ব্যক্তি মাজুর হইবে। তাহার জন্য মোছেহ সিদ্ধ হইবে। ঘা বা জখম সুস্থ হওয়ার র্পূব্বে জবিরা বা পট্টি নিজে ২ পড়িয়া গেলে সেই স্থান মোছেহ করিতে পারিবে। সুস্থ হইয়া পড়িয়া গেলে মোছেহ করা দোরস্ত হইবে না। জখমের পট্টির উপর মোছেহ করার পর ঐ পট্টি পড়িয়া যাওয়ায় দ্বিতীয় পট্টি পরির্বত্তন করিয়া বাঁধিলে উহার উপর দ্বিতীয় বার মোছেহ করা ভাল। জবিরা বা পট্টির অধিকাংশের উপর মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে। র্অদ্ধেেকর কমের উপর মোছেহ করিলে সিদ্ধ হইবে না। মৌজার উপর মোছেহ করার সময় বা পট্টির উপর মোছেহ করার সময় নিয়ত করা আবশ্যক নহে। নারী জাতিও মৌজার উপর মোছেহ করিতে পারে; আলমগীরি, রুকুনুদ্দিন, বেহেস্তী জেওর এবং গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড প্রভৃতি। কোন ব্যক্তি মৌজার উপর মোছেহ বা তৈয়ম্মুম করাইয়া দিলে তাহাও দোরস্ত হইবে। আলমগিরী ইত্যাদি।

নাজাছাতের বিবরণ, অর্থাৎ কোন বস্তুতে নাপাক কিছু লাগিলে তাহা পরিস্কার করিবার বিবরণ

নাজাছত (নাপাকি) দুই প্রকার: (১) গলিজাÑ অপবিত্র দ্রব্য শুস্ক হওয়ায় যদি তাহার চিহ্ন দৃষ্টি গোচর হয় যেমন গোবর, মল ইত্যাদি কাপড়ে বা অঙ্গে সামান্য লাগিলেও তাহা ধৌত করা হয়। (২) খফিফা অপবিত্র বস্তু শুষ্ক হওয়ায় যদি তাহার চিহ্ন দৃষ্টি গোচর না হয় যেমন শরাব, প্রস্রাব ইত্যাদি। রক্ত, মনুষ্যের পায়খানা, প্রস্রাব, শুক্র, কুকুর ও বিড়ালের পায়খানা প্রস্রাব, শুকরের মাংস ও অস্থি এবং লোম ও সর্ব্বাঙ্গ, ঘোড়া ও গর্দ্দভের পায়খানা, গরু ও মহিষ ইত্যাদির গোবর, মুরগী, হংস ও কচ্ছপের এবং সমস্ত হারাম পশুর পায়খানা ও প্রস্রাব নাজাছতে গলিজা। দুগ্ধ পোষ্য শিশু ছেলের পায়খানা ও

প্রস্রাব নাপাক গলিজা। হালাল পাখীর পায়খানা ও হালাল পশুর প্রস্রাব যথা: মহিষ, গরু, ছাগল ও অশ্ব ইত্যাদির প্রস্রাব নাজাছতে খফিফা। অর্থাৎ ছোট নাপাকী। মোরগ, হংস এবং মোরগাবীর ভিন্ন হালাল পাখীর পায়খানা পাক। যেমন কবুতর, চনচরার এবং ময়না ইত্যাদি। চমগাডরের (বাদুর) পায়খানা ও প্রস্রাব পাক। নাজাছতে গলিজা হইতে পাতলা বা ভাসা কোন দ্রব্য কাপড়ে বা শরীরে লাগিলে উহা প্রসারণ হইয়া যদি এক টাকার সমান বা কম হয় তাহা ধৌত না করিয়া নমাজ পড়িলে মক্রুহ হইবে। টাকার সমান হইতে বেশী হইলে ধৌত না করিয়া নামাজ পড়িলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। নাজাছাতে গলিজা হইতে কোন দৃঢ় (পুরু) বস্তু কাপড়ে বা শরীরে লাগিলে তাহা সাড়ে চারি মাষা বা তাহা হইতে কম ওজন হইলে ধৌত না করিয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে। ইহা হইতে বেশী হইলে দোরস্ত হইবে না। নাজাছাতে খফিফা কাপড়ে বা শরীরের যেই স্থানে লাগিয়াছে সেই স্থানের চারি ভাগের এক ভাগের কম হইলে ধৌত না করিলে মাফ জানিবে, নতুবা নহে। যমেন কোর্ত্তার আস্তিনের চারি ভাগের এক ভাগের কম জায়গায় নাপাকী লাগিলে তাহা মাফ। সেইরূপ কল্লিও জানিবে। পায়ের চারি ভাগের এক ভাগের কম স্থানে ঐ নাপাকি লাগিলে মাফ জানিবে নতুবা নহে। এই মছয়ালা পানির জন্য নহে। কারণ পানিতে গলিজা কিংবা খফিফা নাপাকি পতিত হইলে নাপাক হইয়া যাইবে। নাপাক তৈল কাপড়ে লাগিয়া দুই একদিনের মধ্যে ছড়াইয়া টাকার সমান হইতে বড় হইয়া গেলে ধৌত করা ওয়াজেব হইবে। ধৌত না করিলে নামাজ সিদ্ধ হইবে না। এক টাকার কম হইলে মাফ হইবে। মৎস্যের রক্ত এবং মৌমাছি ও মশার রক্ত নাপাক নহে। প্রস্রাবের বিন্দু সুইঁয়ের অগ্র বরাবর গায়ে বা কাপড়ে লাগিলে ও

দৃষ্টি গোচর না হইলে ধৌত করা ওয়াজেব নহে। অপবিত্র দ্রব্য যাহা দৃষ্টিগোচর হয় যেমন পায়খানা ও রক্ত যতবার ধৌত করিলে নাপাকি দুরভীত হয় ততবার ধৌত করিয়া উহা এবং উহার দাগ দূরভীত করিবে। কয়েকবার ধৌত করাতে যদি নাপাকি চলিয়া যায় কিন্তু তাহার দুর্গন্ধ ও দাগ না যায় তবুও কাপড় পাক হইয়া যাইবে। সাবান, সাজিমাটি ও সোডা ইত্যাদির দ্বারা দুর করা আবশ্যক নহে। তিনবার ধৌত করিলে পাক হইয়া যাইবে। প্রস্রাবের ন্যায় অন্য কোন নাপাকি যাহা দৃষ্টি গোচর হয় না তাহা লাগিলে তিন বার ধৌত করিলে এবং প্রত্যেক বার নিংড়াইলে ও তৃতীয় বার নিজের ক্ষমতা পরিমান চিপিলে পাক হইয়া যাইবে। এমনভাবে চিপিবে যাহাতে ছিন্ন না হয়। যদি নাপাকি এমন বস্তুতে লাগে যাহাকে নিংড়াইতে পারা যায় না, যেমন মাদুর, খেজুর পত্রের শপ, পাটি ও হোজলা ইত্যাদি তখন ঐ সকল বস্তু পানি দ্বারা ধৌত করিয়া ক্ষণকাল দাঁড় করাইয়া রাখিয়া যখন ফোটা বন্ধ হয় তখন আবার পানি দ্বারা ধৌত করিবে, এই ভাবে তিনবার ধৌত করিলে উহা পাক হইয়া যাইবে। পানি বা পানির ন্যায় তরল পদার্থ যাহার দ্বারা নাপাকি দূরভীত করা যায় তদ্ধারা পরিস্কার করিলে ঐ বস্তু পাক হইবে। যেমন গোলাপজল ও ছিরকা ইত্যাদি। কিন্তু ঘৃত ও তৈল এবং দুগ্ধ ইত্যাদির যাহাতে চর্ব্বি আছে তদ্ধারা ধৌত করা দোরস্ত নাই। ধৌত করিলে ঐ বস্তু নাপাক থাকিবে। গায়ে, কি কাপড়ে বীর্য্য লাগিয়া শুস্ক হইয়া গেলে উহা নখের দ্বারা ঘর্ষণ করিয়া ভালরূপে মর্দ্দণ করিলে পাক হইবে। শুষ্ক না হইয়া ভিজা হইলে ধৌত করিলে পাক হইবে। প্রস্রাব করার পর পাক হওয়ার পূর্ব্বে শুক্র বাহির হইলে ধৌত করিতে হইবে। মর্দ্দন করিলে পাক হইবে না। জুতা কিংবা চামড়ার মৌজায় নাপাক বস্তু লাগিয়া শুষ্ক হইয়া গেলে, যদি ঐ নাপাক বস্তু

দৃষ্টিগোচর হয় যেমন গোবর, পায়খানা, রক্ত ও বীর্য্য ইত্যাদি তবে জমির উপর ঐ বস্তুকে ঘর্ষন করিয়া নাপাকি দূর করিলে পাক হইবে। ভিজা হইলে এইরূপ ভাল জমিতে ঘর্ষণ করিবে যেন অশুদ্ধ বস্তু দূর হইয়া নাম ও দাগ বাকী না থাকে তবে পাক হইয়া যাইবে। প্রস্রাবের ন্যায় অশুষ্ক বস্তু জুতা কিংবা চামড়ার মৌজায় লাগিলে এবং নাপাকি দৃষ্টিগোচর না হইলে উহা ধৌত না করিলে ঐ মৌজা বা জুতা পাক হইবে না। কাপড় বা শরীরে কোনরুপ নাপাকী লাগলিে যদি ধৌত না করে পাক হইবে না। আয়না, শিশি, ছুরি, চাকু ও স্বর্ণের অলঙ্কার ইত্যাদিতে নাপাক বসতু লাগিয়া নাপাক হইলে ভালরূপে জমির উপর মুছিলে, ঘষিলে বা মাটির দ্বারা মাজিলে পাক হইয়া যাইবে। নাপাক জমি শুষ্ক হইয়া কোন দাগও দুর্গন্ধ একেবারে দূর হইলে ও না থাকিলে ঐ জমরি উপর নমাজ পড়া দোরস্ত হইব।ে কিন্তু ঐ স্থানের মাটি দ্বারা তৈয়ম্মুম দোরস্ত হইবে না। যেই ইষ্টক বা প্রস্তরকে জমির সঙ্গে এমন দৃঢ় ভাবে চুনা ইত্যাদির দ্বারা জোড়া লাগান হইয়াছে যে জমি না খুদিলে উহা জমি হইতে পৃথক করা যায় না, সেই ইষ্টক বা প্রস্তরে নাপাকি লাগিলে উহা শুকাইয়া যাওয়ার পর ঐ নাপাকির কোন নাম ও নমুনা বাকী না থাকিলে পাক হইয়া যাইবে। কিন্তু চুনা ইত্যাদির জোড়াই না হইলে, শুকাইয়া যাওয়ার পর ধৌত করা ভিন্ন পাক হইবে না। যেই ঘাস জমির সঙ্গে লাগা থাকে তাহাতে নাপাক বস্তু লাগিলে শুকাইয়া যাওয়ার পর নাপাকির চিহ্ন না থাকিলে পাক হইবে। যদি কাটা ঘাস হয় নাপাকি শুকাইয়া দূর হইলেও বিনা ধৌতে পাক হইবে না। অপবিত্র ছুরি, চাকু, মাটি ও তামার বাসন ইত্যাদি জলন্ত আগুনে ঢালিয়া দিলে পাক হইয়া যাইবে। ছোট ছেলে সিনার উপর বমী করিবার পর ঐ বমনকে তিনবার করিয়া চুষিয়া খাইলে পাক

হইয়া যাইবে। কুম্ভকার নাপাক মাটি দ্বারা কোন পাতিল ইত্যাদি প্রস্তুত করিলে যতদিন কাঁচা থাকিবে ততদিন নাপাক থাকিবে আগুনে জ্বালাইয়া পাকা করিলে পাক হইয়া যাইবে। মধু, ঘৃত, সিরা ও তৈল ইত্যাদি নাপাক হইয়া গেলে তখন ঐ সকল পদার্থ প্রত্যেকের পরিমান বা ততোধিক পানি ঐ সমস্ত দ্রব্যের মধ্যে ঢাকিয়া দিয়া আগুনে সিদ্ধ করার পর পানি শুকাইয়া গেলে পুনরায় এইভাবে তিন বার সিদ্ধ করিয়া ঐ সকল দ্রব্য পাক করা যায়। এইরূপ করিলে পাক হইয়া যাইবে। নতুবা এইভাবে পাক করিবে। ঘৃত বা তৈল ইত্যাদির সমান ২ পানি পাত্রে ঢালিয়া দিয়া নাড়িলে ঐ নাপাকি পানির উপর উঠিবার পর বাহিরে ফেলিয়া দিবে। এইরূপ তিনবার করিলে পাক হইয়া যাইবে। ঘৃত জমিয়া গেলে পানির দ্বারা ঐ ঘৃত আগুনে উত্তপ্ত করিলে ঘৃত গলিয়া যাইবে। ঐ নাপাক বস্তুকে বাহিরে ফেলিয়া দিলে পাক হইয়া যাইবে। নাপাক রং দ্বারা কাপড় রঙাইলে এই পরিমান ধৌত করিবে যেন ঐ কাপড় হইতে ছাপ পানি বাহির হয়, তবে পাক হইবে। শুষ্ক গোবরের ছাই এবং উহার ধূম পাক। ঐ ধূম রুটি ইত্যাদিতে লাগিলে কোন অনিষ্ট হইবে না। বিছানার এক কোণ পাক নহে আর সমস্ত কোন্ পাক, তবে পাক কোণায় নমাজ পড়া জায়েজ। যেই জমি গোবর দ্বারা লিপিয়াছে নতুবা মাটির সঙ্গে গোবর মিশ্রিত করিয়া লিপিয়াছে, তাহার উপর পাক বস্তু না বিছাইয়া নমাজ পড়া দোরস্ত নহে। গোবরের লিপিত জমি শুকাইলে ঐ জমির উপর অল্প ভিজা কাপড় বিছাইয়া নমাজ পড়িলে এবং ঐ ভিজা কাপড়ে মাটির কোন দাগ না লাগিলে নমাজ দুরস্ত হইবে। পা ধৌত করিয়া নাপাক জমির উপর দিয়া চলিলে যদ্ধারা পায়ের দাগ (চিহ্ন) জমিতে পড়িয়া গেল, নাপাক হইবে না। কিন্তু পায়ের পানির দ্বারা জমি ভিজিয়া গিয়া পায়ে ঐ নাপাক মাটি

বা নাপাক পানি লাগিলে, নাপাক হইবে। নাপাক বিছানায় শুইবার পর ঘর্ম্মের দ্বারা বিছানা ভিজিয়া উহার নাপাকি গায়ে বা কাপড় লাগিলে, নাপাক হইয়া যাইবে। নাপাক মেহেন্দি হাতে বা পায়ে লাগিলে তিনবার ধৌত করিলে পাক হইবে। তাহার রং দূরীভূত করা ওয়াজেব নহে। নাপাক ছুরমা চক্ষে লাগাইবার পর ছড়াইয়া বাহিরে নির্গত হইলে ধৌত করা ওয়াজেব। নতুবা নহে। নাপাক তৈল মস্তকে বা অঙ্গে লাগাইলে, তিনবার ধৌত করিলে পাক হইবে। কুকুর বা বানর গমের আটায় মুখ দিয়া জুটা করিলে আটায় দুর্গন্ধ লাগিলে, মুখ দেওয়া স্থান হইতে আটা বাহির করিয়া ফেলিয়া দিবে বাকী সমস্ত আটা পাক জানিবে। যদি শুষ্ক আটা হয় তখন যেই ২ স্থান উহার মুখের লোয়াব (লালা) লাগিয়াছে, সেই স্থান হইতে আটা বাহিরে ফেলিয়া দিবে। কুকুরের লোয়াব নাপাক। কুকুর নাপাক নহে। কুকুর শুষ্ক হউক বা ভিজা হউক নাপাক নহে। কুকুর গায়ে বা কাপড়ে রাগিলে অপবিত্র হইবে না। হাঁ যদি কুকুরের গায়ে অপবিত্র বস্তু থাকে তবে নাপাক। পানির দ্বারা যেই কাপড় ভিজিল সেই কাপড়ের সহিত পাক কাপড় বেষ্টন করিয়া রাখিয়া দেওয়ার পর দেখা গেল যে নাপাক কাপড়ের পানির দ্বারা পাক কাপড় এইরূপ ভিজিয়াছে যে ঐ পাক কাপড় চিবিলে এক ফোঁটা বা র্অদ্ধ ফোঁটা পানি পড়িবে নতুবা হস্ত ভিজিবে এবং ঐ নাপাকির রং ও দেখা যাইতেছে না ও দুর্গন্ধ লাগিতেছে না তবে ঐ কাপড় নাপাক হইয়া গিয়াছে, নতুবা নহে। প্রস্রাব ইত্যাদির দ্বারা ভিজা কাপড়ের সহিত পাক কাপড় লাগিয়া সামান্য দাগ বা চিহ্ন দেখিতে পাওয়া গেলে, ঐ পাক কাপড় নাপাক হইয়া যাইবে লাকড়ীর তক্তার একদিক নাপাক অপর দিক পাক, তবে যদি তক্তা খানা এইরূপ মোটাও পুরু হয় যে, মধ্য ভাগে চিরাইলে চিরাইতে পারে

ঐ তক্তা খানাকে উল্টাইয়া পাক দিক দিয়া নামাজ পড়িতে পারিবে। ঐরূপ পুরু না হইলে উহার পাক দিকের উপর নামাজ পড়া দোরস্ত হইবে না। দুই পল্লা কাপড়ের মধ্যে, এক পল্লা নাপাক আর এক পল্লা পাক দুই পল্লা সিলাইয়া একত্রিত ভাবে থাকিলে, পাক পল্লার উপর নামাজ পড়া দোরস্ত হইবে না। যদি সিলাইয়া না হয় তবে পাক পল্লার উপর নামাজ পড়া দোরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তির কাপড়ে বা অঙ্গে নাপাক বস্তু লাগিলে, কোন্ জায়গায় লাগিয়াছে তাহা জানিতে না পারিলে, অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস যেই জায়গায় হয়, সেই স্থান ধুইলে পাক হইবে। নতুবা যে কোন এক কেনারা ধৌত করিলে পাক হইয়া যাইবে। পরে কোন্ জায়গায় না পাকি লাগিয়াছে জানিতে পারিলে সেই স্থান ধৌত করিলে পাক হইবে, নতুবা নহে। পশ্বাদি জবেহ করার পর যেই রক্ত মাংসে বা রগে থাকিয়া যায় তাহা পাক কাপড়ে লাগিলে নাপাক হইবে না। কারণ ঐ রক্ত জারি নহে। জারি রক্ত কাপড়ে লাগিলে নাপাক হইবে। না ধুইলে পাক হইবে না। কলিজা ও যকৃৎ পাক জানিবে। প্রত্যেক পশু ও জন্তুর পীত প্রস্রাবের মত নাপাক। গলিজা ও খফিফা হইবে। মৃত পশুর দন্ত, শংি, চক্ষু, লোম, হাড়, খুড়া ও পশম ইত্যাদি পাক যদি দন্ত প্রভৃতির উপর চর্ব্বি না থাকে মৃত ছাগলের স্তন্যের দুগ্ধ পাক। মনুষ্যের মস্তকের চুল পাক। মৎস্যের রক্ত মৌমাছি ইত্যাদি এবং যেই জন্তু পানিতে বাস করে উহাদের রক্ত পাক। কাফেরগণের ব্যবহৃত কাপড় পাক। কিন্তু পায় জামার মধ্য ভাগ না ধুইয়া নমাজ পড়া মক্রুহ। প্রত্যেক মানুষের জুটা পাক। কাফের হউক বা মুসলমান হউক পবিত্র অবস্থায় হউক বা অপবিত্র অবস্থায় হউক, কাফেরগণের অন্যান্য ব্যবহৃত কাপড় পায়জামা ছাড়া পাক। কিন্তু পাক হইলেও ধুইয়া নমাজ ও পরিধান করা অতি উত্তম। কাফের

মুশরেক নাপাক নাজাছাতে এতেকাদী, নিজে নাপাক নহে। কেননা যদি উহারা নাপাক হইত হজরত রছুলুল্লাহ্ (দ:) রাত্রিতে পবিত্র মসজিদে কাফেরগণকে কখনও থাকিবার স্থান দিতেন না। যেই অশুদ্ধ বস্তু চক্ষে দেখা যায় না কাপড়ে লাগিলে অন্তরের বিশ্বাস যেই স্থান নাপাক হইয়াছে বলে মনে হয়, সেই স্থান কে একবার ধৌত করিলে পাক হইবে। সন্দেহ হইলে তিনবার বা সাতবার ধৌত করিবে এবং শক্তি পরিমাণ নিংড়াইবে, যাহাতে কাপড় ফাটিয়া না যায়, তখন পাক জানিবে। সেই নাপাকি চক্ষে দর্শন করা যায় তিনবার ধৌত করিয়া বা ঘষিয়া নতুবা মর্দ্দন করিয়া দূর করিতে হইবে। অজু ও গোছল করিলে যে সকল পানি শরীর হইতে নির্গত হয় অর্থাৎ ব্যবহার করা হয় উহাকেই এস্তেমালী পানি বলে। এস্তেমালী পানি শুদ্ধ কিন্তু উহা দ্বারা অন্য কোন বস্তু শুদ্ধ করা যায় না। যেমন অজু ও স্নান ইত্যাদি। ঘনীভূত ঘৃতের মধ্যে ইঁদুর পড়িলে ও নাপাক হইলে, মৃত ইঁদুরের চারি দিক হইতে কিছু ঘৃত বাহিরে ফেলিয়ে দিলে বাকী ঘৃত পাক হইবে। ঘৃতের একদিক হইতে কিছু পরিমাণ ঘৃত বাহির করিলে তখন নিকটর্বত্তী ঘৃত সরিয়া ঐ খালিস্থানকে পরিপূর্ণ না করিলে উহাকে জমীত ঘৃত বলে। মৃত ইঁদুর বা অন্য কোন অশুদ্ধ বস্তু লোটার পানির মধ্যে পাওয়া গেলে ঐ পানি ঠিলিয়া বা কূপ হইতে লওয়া গেলে এবং ইঁদুর ও নাপাক বস্তু কোথায় পড়িয়াছে তাহা জানিতে না পারিলে তখন লোটার পানি নাপাক বলে বুঝিতে হইবে। ঠিলিয়া ইত্যাদির পানি পাক জানিবে। এক স্থানে তিনটা ঠিলিয়া আছে প্রথমটাতে ঘৃত, দ্বিতীয় টিতে মধু এবং তৃতীয়টাতে খোরমার সিরা, ঐ তিনটা ঠিলিয়া হইতে কিছু পরিমাণ ঘৃত মধু ও সিরা লইয়া একত্র করার পর দেখা গেল সেখানে একটা মৃত ইঁদুর পড়িয়া রহিয়াছে, তখন মৃত ইঁদুরটাকে

রৌদ্রে রাখিতে হইবে। যদি ইঁদুর হইতে চক্নায়ী বাহির হয় তখন ঘৃতের ঠিলিয়া নাপাক জানিবে। জমাট হইয়া থাকিলে মধুর ঠিলিয়া নাপাক। নরম ও পুঁজ দেখা গেলে সিরার ঠিলিয়া নাপাক জানিবে। কারণ রৌদ্রের দ্বারা ঘৃত গলিয়া যায় ও মধু জমিয়া যায় এবং খোরমার সিরা নরম হয়। হস্তীর নাসিকা হইতে যেই পানি বাহির হয় তাহা নাপাক। রুকুনুদ্দিন, বেহেস্তী জেওর ২য় খণ্ড ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড এবং আলমগিরী, দোররুল মোখতার ইত্যাদি।

এস্তেনজা, এস্তেবরা ও এস্তেনকার বিবরণ

গুহ্য ও প্রস্রাবের দ্বার দিয়া যে নাপাক (অশুদ্ধ) দ্রব্য (মল মুত্রাদি) নির্গত হয় তাহা দূর করাকে এস্তেনজা বলে এবং প্রস্রাবের পর ভালরূপে পাক ও ছাপ হওয়াকে এস্তেবরা বলে। পায়ে চলিয়া হউক, বা কাঁশিয়া হউক নতুবা ঢেলা দ্বারা হউক বা বাম পাহলুর (উরু) উপর লেটিয়া হউক। কারণ মহাপুরুষ হজরত রছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) ফরমাইয়াছেন, কবরের মধ্যে প্রস্রাব সম্বন্ধে অধিকাংশ আজাব হইবে। পাক ও ছাপ হওয়ার পর ছোট একখানা কাপড় দ্বারা রানের (উরু) পানি মুছিয়া লইবে যেন ফোঁটা বন্ধ হইয়া যায় উহাকে এস্তেনকা বলে। প্রস্রাব করার পর প্রথমত: ক্ষণকাল হাঁটিয়া গলা খাকার দিবে অথবা বাম পার্শ্বে শয়ন করিয়া ভালরূপে বিশুদ্ধ হইবে। কেহ ২ অল্প সময় এবং কেহ ২ অধিক সময়ে বিশুদ্ধ হয়। হাঁটিবার সম্বন্ধে ইমামগণের মতভেদ আছে। কেহ বলে ৪০০ কদম হাঁটেিব। কেহ বলে ৩০০ শত কদম। কেহ বলে যত বৎসর ওমর (বয়স) হইয়াছে তত কদম হাঁটিবে। কিন্তু সারর্মম্ম এই যে, সকল লোকের প্রকৃতি (তবিয়ত) এক রকম নহে। যখন অন্তরে বিশ্বাস হইল যে আমি পরিস্কার হইয়াছি, তবে পাক হইয়াছে বলে জানিবে। পরে পানির দ্বারা ধৌত করিতে হইবে।

এস্তেনজাতে চারিটি রোকন বা অঙ্গ আছে।(১)অশুদ্ধ দূরীকৃত ব্যক্তি হওয়া (২)যদ্বারা বিশুদ্ধ হওয়া যায়, যেমন ঢিলা, প্রস্তর ও পানি ইত্যাদি (৩)অপবিত্র বস্তু গুহ্য অথবা প্রস্রাবের দ্বার দিয়া নির্গত হওয়া (৪)গুহ্য ও প্রস্রাবের দ্বারে অশুদ্ধ বস্তু নির্গত হওয়ার স্থান হওয়া।এস্তেনজার নিয়ম এই, প্রথমে শরীরকে শিথিল করিয়া বসিবে,কিন্তু রোজাদার হইলে শিথিল করিবে না।পানি খরচ করিয়া উঠার সময় রুমাল দ্বারা ঐ স্থান মুছিয়া ফেলিবে এবং আবদছের (পানি খরচ)র্পূব্বে ও পরে দুই হস্ত ধৌত করিবে।ইহা আদব জানিবে।এইরূপ বস্তু দ্বারা এস্তেনজা করা দরকার যে যাহাতে উহার দ্বারা অনায়াসে অশুদ্ধ দূর করা যায়।যেমন, ঢিলা,পাথর,পুরাতন ছেড়া কাপড়,তুলা ইত্যাদি। পায়খানায় প্রবেশ করার র্পূব্বে এবং দরজার বাহিরে এই দোয়া পড়িবেاَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ পায়খানায় প্রবেশ করিবার সময় প্রথমে বাম পা রাখিতে হইবে ও বাহির হওয়ার সময় ডান পা বাহির করিবে।তিনটি ঢিলার দ্বারা এস্তেনজা করা সুন্নত নহে।ঢিলা পুরুষ হইলে গ্রীষ্মকালে প্রথম ঢিলা সম্মুখ হইতে আরম্ভ করিয়া পশ্চাৎদিক শেষ করিবে।দ্বিতীয় ঢিলা পশ্চাৎদিক হইতে আরম্ভ করিয়া সম্মুখে শেষ করিবে।তৃতীয় ঢিলা র্পূব্বরে ন্যায় করিবে।শীতকালে উহার বিপরীত হইবে।প্রথমে পশ্চাৎদিক হইতে আরম্ভ করিয়া শেষ করিবে।কারণ গ্রীষ্মকালে অণ্ডকোষ ঝুলিয়া থাকে,শীতকালে ক্ষুদ্রাকার ধারণ করে।তিন ঢিলা দ্বারা এস্তেনজা করা মস্তাহাব। বাহ্য ক্রিয়া সমাপন করত: ঢিলা লইয়া পানি খরচ করিতে হইবে। এইরূপ ধৌত করিবে যে যেন ধারণা হয়

অশুদ্ধ দূর করিয়া বিশুদ্ধ হইয়াছি। সন্দেহজনক লোকে তিন বার ধৌত করিবে। স্ত্রীলোক হইলে গ্রীষ্মকালেও শীতকালে প্রথম ঢিলা সম্মুখ হইতে পশ্চাৎদিক শেষ করিবে। দ্বিতীয় ঢিলা পশ্চাৎদিক হইতে সম্মুখ দিকে, তৃতীয় ঢিলা সম্মুখ হইতে পশ্চাৎদিকে শেষ করিবে। ময়দানে পায়খানা করিলে কেহ না দেখে মত দূরে গিয়া পায়খানা করিবে। নিজের ছতর বা ঢাকিবার স্থান কেহ না দেখে মত খুলিবে। অশুদ্ধ বস্তু এদিক ওদিক না লাগিলে এবং পানি পাওয়া না গেলে প্রস্তর কিংবা ঢিলা দ্বারা ভালরূপে নাপাকি দূরীভূত করিলে দুরস্ত হইবে। ইহা মজবুরীর (আবশ্যকবশত:) সময় জানিবে। পানি পাওয়া গেলে ঢিলা দ্বারা এস্তেনজা করার পর পানি দ্বারা ভালরূপে ছাপ করিয়া লইবে। ঢিলা লওয়ার পর পানি দ্বারা এস্তেনজা করা সুন্নত। যেই স্থানে বাহ্য করিবে সেই জায়গায় পানি খরচ না করিবে। বাহ্য করার সময় যদি পায়খানা ছড়াইয়া টাকা পরিমাণ হইতে বড় হইয়া যায়, তখন পানি দ্বারা ধৌত করা ওয়াজেব। ধৌত না করিয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। এস্তেনজার সময় পাক হইয়াছে কিনা সন্দেহ হইলে তিনবার বা সাতবার ধৌত করিবে। ইহার চেয়ে বেশী নয়। বাহ্য যাওয়ার র্পূব্বে হস্তের আংটিতে খোদার নাম বা কোরানের আয়ত লিখা থাকিলে উহা খুলিয়া রাখিতে হইবে। পায়খানাও প্রস্রাবের সময় কাবামুখী হওয়া ও কাবাকে পিছনে রাখা অবৈধ। দাঁড়াইয়া প্রস্রাব করা মানা এবং ছোট ২ ছেলেমেয়েকে কাবার সম্মুখ করিয়া পায়খানা ও প্রস্রাব করান অবৈধ। নিম্নলিখিত স্থানে বাহ্য ও প্রস্রাব করা নিষেধ। (১) ছোট পুকুর, (২) ডোবা, (৩) ছোট জলাশয়, (৪) নাহার বা নদী, (৫) ইন্দিরা, (৬) কূপের নিকট, (৭) ফলবান বৃক্ষের নিম্ন,ে (৮) ধান্যপূর্ণ ক্ষেত্রে, (৯) কলাই বা

র্সব্ব প্রকার ডালের ক্ষেত্রে। (১০) গমে, (১১) যবে, (১২) সরিষায়, (১৩) যে বৃক্ষ ছায়া বিস্তার করে তাহার নীচে, (১৪) ঈদের মাঠের নিকট, (১৫) মসজিদের নিকট, (১৬) কবর স্থানের নিকট, (১৭) লোক চলাচলের সাধারণ পথে, (১৮) রাজ পথে, (১৯) মুষিক ও সর্পের র্গত্ত,ে (২০) সাধারণ র্গত্ত,ে (২১) নিম্নে বসিয়া র্ঊদ্ধ,ে (২২) দাঁড়াইয়া বাহ্য প্রস্রাব করা, (২৩) শয়ন করিয়া, (২৪) উলঙ্গ হইয়া, (২৫) অজুর স্থানে, (২৬) আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করিয়া, (২৭) ডান দিকে দেখিয়া, (২৮) গলায় খাঁকার দেওয়া, (২৯) থুথু ফেলা, (৩০) নাসিকা ঝাড়া, (৩১) আবশ্যক ছাড়া লজ্জার স্থান দেখা, (৩২) আজানের উত্তর দেওয়া, (৩৩) সালামের উত্তর দেওয়া, (৩৪) হাঁছির উত্তর দেওয়া, (৩৫) কথা বলা, (৩৬) মনে ২ খোদার নাম স্মরণ করা। এই সমুদয় কার্য্য মকরুহ। পাকা ইষ্টক, টিক্রি (চাঁরা) হাঁড়, কয়লা ও কাগজ প্রাণীর খোরাক এবং প্রত্যেক আদরনীয় বস্তু ও উপকারী বস্তু দ্বারা এস্তেনজা করা মকরুহ তাহরমিা। মাটির ঢিলা, প্রস্তর ও পানি ইত্যাদির দ্বারা এস্তেনজা করা সুন্নত। ভাল বস্তু ও উপকারী বস্তু না হইলে তদ্ধারা এস্তেনজা করা দোরস্ত হইবে। যেমন পুরাতন রুয়ী সুতা ও পুরাতন ছেড়া কাপড় এবং লাকড়ি ইত্যাদি। যাহার হস্তদ্বয় অবস হইয়াছে ও উহার স্ত্রী এবং দাসী না থাকিলে তাহার জন্য এস্তেনজা মাপ আছে। পুরুষ পীড়িত থাকা হেতু যদি এস্তেনজা করিতে না পারে তবে তাহার স্ত্রী ও দাসী তাহাকে এস্তেনজা করাইয়া দিবে। তদাভাবে কিছুই করিবে না। এইরূপ স্ত্রী পীড়িত থাকার দরূন তাহার স্বামী এস্তেনজা করাইয়া দিবে। যদি তাহার অভাব হয় কিছুই করিবে না। স্বামী ভার্য্যরে, ভার্য্যে স্বামীর আবরু দর্শন ও স্পর্শ করিতে পারিবে। কন্যা ও ভগ্নীর দ্বারা এস্তেনজা করাইতে পারিবে না। পুরুষ নিজের

পুরুষাঙ্গকে ডান হাতে ধরিয়া এস্তেনজা করা মকরুহ জানিবে।বাম হাতে মকরুহ হইবে না।পানি খরচের ধারা এই:প্রথমত:মধ্যমাঙ্গুলী উঁচু করিয়া ধৌত করিবে তৎপর অনামিকা আঙ্গুলী উঁচু করিয়া তৎপর কনিষ্ঠা তৎপর তর্জ্জনী আঙ্গুলী দ্বারা ধৌত করিবে।এইরূপ পর্যায়ে অশুদ্ধ ধৌত করিয়া শুদ্ধ হইবে।ভ্রমক্রমে কাবাভিমুখী বসিয়া পরে স্মরণ হইলে সাধ্যানুযায়ী অপর দিকে ঘুরিয়া বসিবে।রমণীগণের সন্তানাদি প্রসবের সময় পশ্চিম দিক্ বসা মকরুহ।এইরূপ চন্দ্র ও র্সূয্যরে দিকে বাহ্য ও প্রস্রাব করা মকরুহ।আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করা মকরুহ তাহরিমা।স্রোত বিশিষ্ট পানিতে প্রস্রাব করা মকরুহ তানজিহ।জাহাজ অথবা নৌকায় বসিবার সুযোগ না থাকিলে উহাতে থাকিয়া বাহ্য ও প্রস্রাব করিলে মকরুহ হইবে না।বাহ্যে বসিয়া অধিক কাল গৌণ না করিবে।কারণ উহাতে অর্শ্বের পীড়া হওয়ার সম্ভাবনা।নমাজের কাপড় লইয়া পায়খানায় না যাওয়া মস্তাহাব।অন্যান্য কাপড়ের অভাবে যাইতে পারে,কিন্তু সাবধানে রাখিতে হইবে এবং মস্তক খোলা না রাখিয়া টুপি মাথায় দিবে ও বাহ্যের দোয়া পাঠ করিবে।স্ত্রীলোক এইরূপে পানি খরচ করিবে,প্রথমত:বাম হাতের মধ্যমাঙ্গুলী ও অনামিকা এই দুই আঙ্গুলীর দ্বারা বাহ্য ধৌত করিবে তারপর পুরুষের ন্যায় ধৌত করা আরম্ভ করিবে।শীতকালে ঠাণ্ডা পানি হইলে অধিক কাল ধৌত করিবে।গরম পানি হইলে অল্প সময় ধৌত করিবে। গ্রীষ্মকালে অল্প সময় ধৌত করিলে হইবে।প্রস্তর কি ঢিলার অভাবে কয়লা ঘাস ইত্যাদির দ্বারা এস্তনেজা করতিে পারে ।ঢলিার অভাবে প্রস্তর, প্রস্তর অভাবে মুষ্টিমৃত্তিকা বা বালি দ্বারা কুলুখ লইবে।পায়খানার ভিতর গিয়া সোপানে বাম পদ অগ্রে উত্তোলন করিয়া পরে বসিবে তৎপর বস্ত্র উত্তোলন করিয়া দুই পায়ের ফাঁকে রাখিবে এবং বাম

পায়ের উপর জোর (ভার) দিবে। বাহ্য শেষ হইলে বাহির হইয়া এই দোওয়া পাঠ করিবে।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ دَفَعَ عَنِّى الْاَذٰى وَعَافَانِىْ-             

এস্তেনজা করার পর বাম হস্তকে জমির উপর ঘর্ষণ করিবে নতুবা মাটির দ্বারা মার্জ্জনা করিবে। শয্যার নিম্নে কোনরূপ নাপাকি থাকিলে তাহার উপর নমাজ পড়িতে পারিবে। এইরূপে শয্যার এক কোণে অশুদ্ধ থাকিলে দ্বিতীয় কোণে নমাজ পড়া সিদ্ধ হইবে। অজু করিবার সময় ঘটি বা বদনায় মৃত ইঁদুর পাওয়া গেলে ঐ পানির দ্বারা অজু করিলে সিদ্ধ হইবে না। রুকুনুদ্দিন এবং শরহে বেকায়া ১ম খণ্ড এবং মেফতাহুল জন্নত ইত্যাদি।

হায়েজের বিবরণ

মেয়ে লোকের বাচ্চাদানী হইতে যোনিদ্বার দিয়া কোন রোগ বা ব্যাধি ব্যতীত মাসে মাসে রে রক্ত বাহির হয় তাহাকে হায়েজ বা ঋতু বলে। প্রত্যেক মাসে স্ত্রীলোকগণ হায়েজে লিপ্ত হওয়ার কারণ এই, খোদাতায়ালা আদি পিতা আদম (আ:) এবং আদি মাতা হাওয়া (আ:) কে বেহেস্তের মধ্যে থাকিবার স্থান দেওয়ার পর গুন্দুম বা আনজির নতুবা আঙ্গুর ফল খাইতে নিষেধ করিয়াছিলেন। পাপাত্মা শয়তানের ছলনায় ঐ নিষিদ্ধ ফল আহার-করিবার জন্য হাওয়া (আ:) হস্তোত্তোলন করিয়া শাখা স্পর্শ করা মাত্রই রক্তের ধারা বাহির হইতে লাগিল। তখন খোদাতায়ালা বলিলেন” হে! হাওয়া তুমি যেই রূপ তরুর রুধি প্রবাহিত করিলে, সেইরূপ তোমার ও তোমার সন্ততিগণের, পৃথিবী প্রলয় হওয়া র্পয্যন্ত মাসে মাসে রক্ত বাহির হইতে থাকিবে। তদবধি মেয়েলোক এই দারুণ কষ্টে নিপতিত হইয়াছে। মেয়েলোকের

যোনিদ্বার দিয়া রক্ত বাহির হওয়া হায়েজের রোকন। হায়েজের সময় র্নিদ্দষ্টি আছে।হজরত (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) ফরমাইয়াছেন, বিবাহিতা ও অবিবাহিতা স্ত্রীলোকের হায়েজ কম পক্ষে তিন দিবা রাত্রি ও বেশীর পক্ষে দশ দিবারাত্রি।যদি তিন দিবা রাত্রি হইতে কম ও দশদিবা রাত্রি হইতে বেশী সময় রক্ত দেখা যায় তবে হায়েজ হইবে না।এস্তেহাজা হইবে।এস্তেহাজা বিমারের নাম।এস্তেহাজার সময় রক্ত বাচ্চাদানী হইতে বাহির হয় না।একখানা রগ স্ত্রীলোকের প্রস্রাবের রাস্তার আন্দরের সহিত সংলগ্ন আছে।সেই রগখানা ফাটিয়া গেলে রক্ত বাহির হইয়া যায়,তাহাকে এস্তেহাজা বলে।এক দিবারাত্রিতে চব্বিশ ঘন্টা, এইরূপ তিন দিবা রাত্রিতে বাহাত্তর (৭২) ঘন্টা হইবে। যদি ঐ বাহাত্তর (৭২) ঘণ্টা হইতে পোয়া ঘণ্টা কম হয় তবে হায়েজ হইবে না।যেমন একজন স্ত্রীলোকের প্রথম দফা দিনের ছয়টায় রক্ত দেখা গেল, চতুর্থ দিনের পৌনে ছয়টার সময় রক্ত বন্ধ হইয়া গেল। তাহাতে দেখা যায় যে ৭২ ঘন্টা হইতে পোয়া ঘণ্টা কম হইয়াছে, ঐ রক্ত হায়েজের রক্ত হইবে না।এস্তেহাজা হইবে। এইরূপ কোন স্ত্রীলোকের দশ দিবা রাত্রি অর্থাৎ ২৪০ ঘন্টা হইতে পোয়া ঘণ্টা বেশী রক্ত দেখা যায়,তবে পোয়া ঘণ্টা বেশী হায়েজের রক্ত হইবে না, এস্তেহাজা হইবে।যেমন একটি স্ত্রীলোক ফজরে ছয়টার সময় হায়েজের রক্ত দেখিতে পাইল, এগার দিনের সোয়া ছয়টায় রক্ত বন্ধ হইয়া গেল, তবে পোয়া ঘণ্টা যে বেশী হইল তাহা হায়েজের রক্তে গণ্য হইবে না।এস্তেহাজা বলিতে হইবে। ঘণ্টা দুই প্রকার। আছমানি ঘন্টা ও জমানি ঘন্টা।আছমানি ঘন্টায় ২৪ চব্বিশ ঘন্টায় একদিন হয়। এইরূপ ৭২ ঘন্টায় তিন দিন ও তিন রাত্রি হয়। জমানি ঘন্টা রাত্রি কিংবা দিনের দ্বাদশ হিচ্ছার নাম।সারমর্ম এই যে, দিবা রাত্রি ৭২ ঘন্টা হিসাব করিয়া তিন দিবা রাত্রি গণনা করিবে ও

দশ দিবারাত্রি ২৪০ ঘন্টা গণনা করিবে। ইহা উর্দ্ধ সীমা। এস্তেহাজা বিমারের সময় রোজা, নমাজ, ফরজ ও নফল এবং সঙ্গম ইত্যাদি করিতে পারিবে। দুই হায়েজের মধ্য দিয়া কম পক্ষে পনর দিন বিশুদ্ধ থাকার কালকে “তোহর” বলে। তোহরের র্উদ্ধ সীমার কোন হদ নাই। সমস্ত জীবনকেও ঘিরিয়া লইতে পারে। সমস্ত জীবনকে ঘিরিয়া লওয়া তিন প্রকার প্রথম এই যে বয়সের দ্বারা মেয়েলোককে বালেগা বলা যাইবে। অর্থাৎ পনর বৎসরের মেয়ে যাহাতে এক মিনিটও কম না হয়, রক্ত দেখা না গেলেও উহাকে বালেগা বলিতে হইবে। ঐ মেয়েটার পনর বৎসরের পরে সমস্ত জীবন যদি রক্ত দেখা না যায় তবে হামিসা রোজা রাখিতে, নামাজ পড়িতে এবং স্বামীর সহিত সঙ্গম করিতে পারিবে। যদি স্বামী তালাক দেয় তনি মাস ইদ্দত পালন করিতে হইবে। দ্বিতীয় প্রকার এই যে, একটি মেয়ে বালেগা হওয়ার নিকটর্বত্ততিে নতুবা বালেগ হওয়ার পরে, তিন দিবারাত্রি হইতে কম দিবস রক্ত দেখিতে পাইল, কিন্তু তাহার পর সমস্ত জীবন হায়েজের রক্ত বন্ধ হইয়া গেল, তবে এই মেয়েটির হুকুমও র্পূব্বরে মেয়েটীর হুকুম হইবে। তৃতীয় প্রকার এই যে, একটি স্ত্রীলোকের হায়েজের রক্ত এক দফা দেখা যাওয়ার পর সমস্ত জীবন বন্ধ হইয়া গেল, এই মেয়েটির হুকুমও র্পূব্বরে মেয়ে দোনটার হুকুম হইবে। অর্থাৎ রোজা, নমাজ ও সঙ্গম ইত্যাদিতে বাধা নাই। কিন্তু স্বামী তালাক দিলে তিন হায়েজ ইদ্দত পালন করিতে হইবে। যদি ছিন্নে আয়াছের র্পূব্বে হায়েজের রক্ত দেখা যায়, যদি ছিন্নে আয়াছের র্পূব্বে রক্ত দেখা না যায়, অর্থাৎ পরে দেখা যায়, তবে ছিন্নে আয়াছের শুরু হইতে তিন মাস ইদ্দত পালন করিতে হইবে। ছিন্নে আয়াছ, বাজ ফকিহগণ ৫৫ পঞ্চান্ন বৎসরকে বলে ও অপর কেহ ৫০ পঞ্চাশ বৎসরকে বলে। যদি কোন

ছোট মেয়ে বালেগ হওয়ার র্পূব্বে ও হামেলা বিবি বাচ্চা বাহির হইবার র্পূব্বে এবং বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের (যাহার বয়স ৫০/৬০ বৎসর হইয়াছে) রক্ত দেখা গেলে তাহা হায়েজের রক্ত হইবে না। এস্তেহাজা হইবে। হায়েজের রক্ত দুর্গন্ধ হইবে। এস্তেহাজাতে দুর্গন্ধ হইবে না। কোন স্ত্রীলোক বিশুদ্ধ অবস্থায় নমাজ কিংবা রোজা আরম্ভ করার পর হায়েজের রক্ত দেখিতে পাইলে তবে নফল রোজা বা নফল নমাজ হইলে, পাক হওয়ার পর কাজা দিতে হইবে। ফরজ নমাজ হইলে কাজা দিতে হইবে না। ফরজ রোজা হইলে কাজা দিতে হইবে। গা: আ: ১ম খণ্ড কেতাবুল হায়েজ ও রো: ইত্যাদি। কোন বালিকা নূতন বালেগ হওয়াতে হামিসা রক্ত জারি রহিল, সেই বালিকার হায়েজের রক্ত প্রত্যেক মাসে দশ দিবা রাত্রি হইবে। ঐ দশ দিবা রাত্রি মাসের প্রথম দশ দিন ও দশ রাত্রি হইতে পারে। কিম্বা মধ্যের দশ দিবা রাত্রিও হইতে পারে। নতুবা মাসের আখেরী দশ দিন ও দশ রাত হইতে পারে। যদি ঐ বালিকাকে স্বামী তোহরের শেষে তালাক দেয়, ইদ্দত ৬৯ (ঊনসত্তর) দিন হইবে। কারণ ত্রশি দিনে তিন হায়েজ ধরিবে। এবং দুই তোহর হইতে এক তোহর ২০ কুড়ি দিনে, দ্বিতীয় তোহর ১৯ ঊনিশ দিনে, মোট ৬৯ ঊনসত্তর দিন হইল। যদি ঐ নূতন বালেগা বালিকাকে তোহরের প্রথম ভাগে তালাক দেয়, তাহার ইদ্দত ৮৮ অষ্টাশী কিম্বা ৮৯ ঊনানব্বই দিন হইবে। কারণ ত্রিশ দিনে তিন হায়েজ ধরিতে হইবে ও তিন তোহর হইতে এক তোহর ২০ কুডি় দিন ও দ্বিতীয় তোহর ১৯ ঊনিশ দিন তৃতীয় তোহর ও ঊনিশ দিন। নতুবা এক তোহর ১৯ (ঊনিশ) দিনে ও দুই তোহর কুড়ি দিন হিসাবে ৪০ চল্লিশ দিন, মোট ৮৮ দিন বা ৮৯ দিন হইল। যদি হায়েজের প্রথম ভাগে ঐ বালিকাকে স্বামী তালাক দেয়, তবে তাহার ইদ্দত ৯৮ দিন কিম্বা

৯৯ দনি হইবে। ৪০ চল্লিশ দিনে চারি হায়েজ ও তিন তোহর র্পূব্বরে মত গণনা করিবে। যদি কোন স্ত্রীলোকের দুই দিন রক্ত দেখা দেয়, তাহার পর দিন বন্ধ হইয়া গেল, অনন্তর তিন দিন রক্ত দেখিতে পাওয়ার পর দুই দিন বন্ধ থাকিয়া পরে একদিন রক্ত দেখা গেল। তাহাতে মোট দশ দিন হায়েজে গণ্য হইবে ও মধ্যে মধ্যে যতদিন পরিস্কার ছিল তাহাও হায়েজের মধ্যে গণ্য হইবে। মোটের উপর দশ দিনের আন্দর তিন দিবা রাত্রি বা বেশী দিন রক্ত দেখা যায়, তাহা হায়েজ ধরিতে হইবে। একবার হায়েজ হওয়ার পর কম পক্ষে পনর দিন পাক থাকিতে হইবে। যদি কোন স্ত্রীলোকের তিন দিবা রাত্রি রক্ত দেখা গেল, তাহার পর পনর দিন পাক থাকিয়া তিন দিন ও তিন রাত্রি হায়েজের রক্ত দেখিতে পাইল। তাহাতে প্রথম তিন দিবা রাত্রি ও পনর দিনের পর তিন দিবা রাত্রি হায়েজ হইবে। এবং মধ্যের পনর দিন তোহর হইবে। যদি একদিন বা দুই দিন হায়েজের রক্ত দেখিয়া পরে পনর দিন পাক রহিল অনন্তর একদিন বা দুই দিন রক্ত দেখিলে, তাহাতে মধ্যের পনর দিন তোহর হইবে, ও পনর দিনের র্পূব্বে বা পরের একদিন বা দুই দিন এস্তেহাজা হইবে, হায়েজ হইবে না। যদি একদিন নতুবা কয়েক দিন হায়েজের রক্ত দেখা গেল, পরে পনর দিনের কম পাক রহিল তাহার পর একদিন বা কয়েকদিন রক্ত দেখা গেল, তবে মধ্য ভাগে পনর দিনের কম যত দিন পরিস্কার রহিল তাহাও হায়েজে গণ্য হইবে। অর্থাৎ প্রথম হইতে শেষ র্পয্যন্ত রক্ত জারী আছে বলিয়া বুঝিতে হইবে। তখন র্পূব্বরে নিয়মিত কাল হায়েজ গণনা করিয়া যাহা বেশী হয় তাহা এস্তেহাজা বুঝিতে হইবে। যেমন একটি স্ত্রীলোকের প্রত্যেক মাসের ১। ২। ৩ র্পয্যন্ত হায়েজের রক্ত দেখা যাওয়ার নিয়মিত কাল ছিল কিন্তু এক মাসে প্রথম তারিখে রক্ত দেখা গেল।

তাহার পর চৌদ্দ দিবস পাক রহিল, তাহার পর একদিন রক্ত দেখা গেল, তখন বুঝিতে হইবে যে বরাবর ১৬ (ষোল) দিন রক্ত দেখা গিয়াছে, তবে ঐ ষোল দিন হইতে প্রথম তিন দিন হায়েজ ধরিতে হইবে। বাকী ১৩ (তের) দিন এস্তেহাজা হইবে। যদি ৪। ৫। ৬ তারিখ হায়েজের নিয়মিত কাল হয়, তবে ৪। ৫। ৬ তারিখ হায়েজ ধরিতে হইবে। প্রথম তিন দিন ও পরের দশদিন এস্তেহাজা হইবে। যদি কোন স্ত্রীলোকের প্রথম অবস্থায় একাক্রমে ষোল দিন রক্ত দেখা যায়, তবে দশ দিন হায়েজ হইবে, ছয় দিন এস্তেহাজা হইবে। যদি কোন স্ত্রীলোকের প্রত্যেক মাসে পাঁচ দিন হায়েজের রক্ত দেখা যাওয়ার অভ্যাস ছিল, এক মাসে ৭ (সাত) দিন কিম্বা নয় দিন র্পয্যন্ত হায়েজের রক্ত দেখা যাওয়ার পর বন্ধ হইয়া গেল, তবে ঐ সাত দিন কিম্বা নয় দিনকে হায়েজ ধরিতে হইবে। ইহাও জানিবে র্পূব্বরে অভ্যাস পরর্বিত্তন হইয়া গিয়াছে। যদি ঐ স্ত্রীলোকের এগার দিন র্পয্যন্ত হায়েজের রক্ত দেখা যায়,তবে র্পূব্বরে আদত (অভ্যাস) মতে পাঁচ দিন হায়েজ হইবে ও ছয়দিন যাহা বেশী হইয়াছে এস্তেহাজা হইবে। ঐ ছয় দিনের রোজা ও নামাজ আদায় করিতে হইবে। মুস্তাহাজা স্ত্রীলোক যাহার বহুকাল র্পয্যন্ত রক্ত দেখা যাইতেছে, বন্ধ হইতেছে না যদি ঐ স্ত্রীলোক হায়েজের দিন ও তারিখ ভুলিয়া যায়, তবে নিজের অন্তরে খুব চিন্তা করিতে ও ভাবিতে হইবে ও জন্নে গালেব মতে আমল করিবে অর্থাৎ নিজের অন্তরে যেই সমস্ত দিন ও তারিখ তোহর বলিয়া সাক্ষ্য দিবে, তাহাতে নমাজ ইত্যাদি আদায় করিতে হইবে। যেই সমস্ত দিন ও তারিখ হায়েজ বলিয়া সাক্ষ্য দিবে তাহাতে নমাজ ইত্যাদি ছাড়িয়া দিবে ও না পড়িবে। যদি মুস্তাহাজা স্ত্রীলোকের হায়েজের দিন স্মরণ থাকে, কিন্তু আসরাতে ছলাছার দৌরা স্মরণ নাই, অর্থাৎ মাসের ত্রিশ দিন হইতে প্রথম দশ দিন হায়েজ হইয়াছে

কিম্বা দ্বিতীয় দশ দিন নতুবা তৃতীয় দশ দিন তাহা স্মরণ নাই,তবে ঐ স্ত্রীলোকটিও উল্লিখিত মতে আমল করিতে হইবে,অর্থাৎ যেই দশ দিন হায়েজ বলিয়া অন্তরে সাক্ষ্য দিবে তাহাতে নিজকে নিজে হায়েজ বলিয়া বুঝিবে ও যেই দশ দিনকে তোহর বলিয়া সাক্ষ্য দিবে,তাহাতে নিজকে নিজে তোহর অর্থাৎ পাক্ বলিয়া বুঝিবে।যদি মুস্তাহাজা স্ত্রীলোকের সন্দেহ হয় অর্থাৎ অন্তরের সাক্ষ্য দুই দিক সমান হয়,তাহা দুই প্রকার হইবে।প্রথম এই যে,তোহর ও হায়েজ সন্দেহ হইলে,দ্বিতীয় তোহর ও হায়েজ বন্ধ হইয়া যাওয়াতে সন্দেহ হইলে, যদি তোহর ও হায়েজ সন্দেহ হয় অর্থাৎ মনে ২ এ কথা যদি আসে অদ্য তোহরের দিন নতুবা হায়েজের দিন,দোন দিক্‌ সমান ২ হইল,তবে প্রত্যেক নামাজের জন্য অজু করিতে হইবে।কেবল মাত্র ফরজ, ওয়াজেব ও ছুন্নতে মোয়াক্কাদা পড়িবে।নমাজের আন্দর কোরান ফরজ পরিমান পড়িবে।মসজিদে প্রবেশ করিবে না ও কোরান শরীফে হাত লাগাইতে পারিবে না। যদি তোহরে ও হায়েজ বন্ধ হইয়া যাওয়াতে সন্দেহ হয় অর্থাৎ যদি মনে ২ এই কথা আসে, অদ্য তোহরের দিন নতুবা হায়েজ বন্ধ হওয়ার দিন। দোন দিক্ সমান ২ হইল, তবে প্রত্যেক নামাজের জন্য গোছল করিতে হইবে ও নামাজ ফরজ, ওয়াজেব ও ছুন্নতে মোয়াক্কাদা পড়িবে অন্য নামাজ ছাড়িয়া দিবে। মসজিদে প্রবেশ করিবে না ও সঙ্গম করিতে পারিবে না কারণ হায়েজের মধ্যে সঙ্গম পাওয়া যাওয়ার ভয় আছে। ঐ রকম মোস্তাহাজা ওয়ালী স্ত্রীলোকের রমজান শরীফের রোজা এই রূপে রাখিতে হইবে যে প্রথমে দেখিতে হইবে যে তাহার এই বিমারের র্পূব্বে হায়েজ রাত্রিতে আরম্ভ হইয়াছে কিনা। যদি রাত্রিতে হইয়াছে বলিয়া স্মরণ থাকে তবে রমজান শরীফের সমস্ত রোজা রমজান শরীফে রাখিয়া পরে ২০ (কুড়ি) দিনে রোজা কাজা করিয়া দিবে। যদি

দিনের মধ্যে হায়েজ হইয়াছে বলি স্মরণ থাকে, তবে রমজান মাসে সমস্ত রোজা থাকিয়া পরে ২২ (বাইশ) দিনের রোজা কাজা করিয়া দিতে হইবে। কারণ রাত্রিতে হায়েজ আরম্ভ হইলে রাত্রতিে হায়জে বন্ধ হইবে ও দিনের মধ্যে আরম্ভ হইলে দিনের আন্দরে বন্ধ হইবে। সেই জন্য দুই দিনের রোজা বৃদ্ধি হইয়া গেল। যদি এই এস্তেহাজা বিমারের র্পূব্বরে হায়েজ রাত্রিতে আরম্ভ হইয়াছে বা দিনে আরম্ভ হইয়াছে, তাহা স্মরণ না থাকিলে তবে অধিকাংশ ইমামগণ বলেন, ২০ কুড়ি দিনের রোজা কাজা করিয়া দিতে হইবে। ফকিহ আবু জাফর (র:) বাইশ দিনের রোজা কাজা করিয়া দিতে বলিয়াছেন। (আ: গি: ১ম খণ্ড আহকামে হায়েজ ও গা: আ: ১ম খণ্ড বাবুল হাযেজ ও দো: মো: রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।) মুস্তাহাজা স্ত্রীলোক কাবা শরীফের তাওয়াফ যাহাকে তাওয়াফে জেয়ারত বলে, তাহা দশ দিবস পরে পুন:রায় আদায় করিতে হইবে ও তায়াফুছ্ছদর যাহা বিদায় কালে করা যায় তাহা পুন:রায় করিতে হইবে না। কারণ ঐ তাওয়াফ হায়েজা মেয়ে লোক হইতে মাফ জানিবে। হায়েজা রমণীর সঙ্গে শুইতে ও খানা পাক করিতে ইত্যাদি পারিবে। কিন্তু সঙ্গম করিতে পারিবে না। তাহা হারাম হইবে। ঋতুবতী রমণীর নাভি হইতে হাঁটু র্পয্যন্ত স্পর্শ করা দোরস্ত নহে। কিন্তু কাপড় উপরে থাকিলে ঐ কাপড়ের উপর ছুইতে পারিবে। ঐ স্থান ছাড়া অন্যান্য স্থান স্পর্শ করিতে পারিবে ও ফায়দা গ্রহণ করিতে পারিবে। ঋতুবতী রমণীর সঙ্গে অবৈধ রূপে নতুবা ভ্রমে সঙ্গম করিলে খোদাতালার নিকট তওবা ও এস্তেগফার করিবে। ঋতুবতী স্ত্রীলোক তছবীহ, তাহলিল ও খাওয়ার সময় বিছমিল্লাহ পড়িতে পারিবে ও অন্যান্য দোয়া কালামও পড়িতে পারিবে এবং কবর স্থানে যাইয়া জেয়ারত পড়েও ঈদের মাঠে যাওয়া দোরস্ত আছে। ঋতুবতী রমণী ভিন্ন বিছানায় শয়ন করা

উচিত নহে। ইহা ইহুদী, নছারা ও পৌত্তলিকের কার্য্য। যদি এক দিবস নতুবা দুই দিবস রক্ত দর্শন করার পর বন্ধ হইয়া গেলে অজু করিয়া নামাজ পড়িবে। ঐ সময়ে গোছল করা ওয়াজেব নহে। কিন্তু সঙ্গম করা দোরস্ত নহে। যদি পনর দিন গত হওয়ার র্পূব্বে পুনরায় রক্ত দেখা যায় তখন জানিতে হইবে যে যত দিন গত হইয়াছে তাহা ঋতুর কাল ছিল। এখন হিসাবে যত দিন হায়েজের দিবস হয় তাহা হায়েজে গন্য করিতে হইবে ও গোছল করিয়া নামাজ পড়িবে। যদি পনর দিন গত হওয়ার পর রক্ত দর্শন করা না যায় তবে জানিতে হইবে যে র্পূব্বরে এক দিন কিম্বা দুই দিন এস্তেহাজা হইবে ও ঐ এক দিন কিম্বা দুই দিনের নামাজ কাজা করিবে। যদি কোন ঋতুবতী নারীর হায়েজের রক্ত দশ দিন পুরা হইবার র্পূব্বে নমাজের এমন সময় বন্ধ হইয়া গেল যে, হঠাৎ স্নান করিয়া আল্লাহু-আকবর বলিয়া নিয়ত করিতে পারিবে, তবে ঐ ওয়াক্তের নামাজ উহার উপর ওয়াজেব হইবে ও কাজা দিতে হইবে। যদি ঐ সময় হইতেও কম সময়ে রক্ত বন্ধ হইয়া যায় তবে ঐ নামাজ মাফ, তাহার কাজা ওয়াজেব হইবে না। যদি দশ দিবা রাত্রি পূর্ণ হওয়ার পর এমন সময় রক্ত বন্ধ হয়, তাহাতে কেবলমাত্র আল্লাহু আকবর বলিতে পারিবে তাহার অধিক আর কিছু বলিতে পারিবে না এবং স্নান করিতেও পারিবে না, তবে ঐ সময়ের নমাজ ওয়াজেব হইবে। এবং কাজা দিতে হইবে। যদি রমজান শরীফের দিনের আন্দরে ঋতু হইতে বিশুদ্ধ হয়, তখন খাওয়া ও পান করা ইত্যাদি দোরস্ত নহে, সন্ধ্যা র্পয্যন্ত রোজাদারের ন্যায় উপবাস থাকা ওয়াজেব। কিন্তু ঐ দিন রোজাতে হিসাব করিতে পারিবে না। উহার কাজা দিতে হইবে। যদি রমজান শরীফের সম্পূর্ণ দশ দিবা রাত্রিতে ঋতু বন্ধ হইয়া এই পরিমাণ রাত্রি বাকী থাকে যে যাহাতে আল্লাহু আকবর বলিতে পারা যায় না, তবুও

ভোর বেলায় রোজা রাখিতে হইবে ভাঙ্গিতে পারিবে না। যদি দশ দিবা রাত্রি পূর্ণ হইবার র্পূব্বে ঋতু বন্ধ হইয়া এই পরিমাণ রাত্রি বাকী আছে যে তাহাতে খুশীমত স্নান করিয়া একবারও আল্লাহু আকবর বলিতে পারা যাইবে না। তবুও রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। ঐ সময় স্নান না করিলেও রোজা রাখিতে হইবে ও ফজরে স্নান করিবে। যদি দশ দিবা রাত্রির কমে ঋতু বন্ধ হইয়া স্নানের পরিমাণ রাত্রি বাকী না থাকে, তখন রোজা রাখিতে পারিবে না ও দোরস্ত হইবে না। কিন্তু দিবসে কিছু খাইতে পারিবে না। রোজাদারের মত থাকিতে হইবে। পরে কাজা দিতে হইবে। যখন রমণীগণের যোনিদ্বার হইতে রক্ত বাহিরের চামড়াতে দেখিতে পাওয়া যাইবে, তখন ঋতু আরম্ভ হইয়াছে বলিয়া জানিবে। তবে যদি কোন রমণী যোনিদ্বারে রুয়ী ইত্যাদি রাখিয়া দিলে উহার দ্বারা রক্ত বাহিরে নির্গত হইতে না পারিলে এবং ভিতরে থাকিয়া গেলেও বাহিরের রুয়ী সুতার উপর রক্তের দাগ দেখিতে পাওয়া না গেলে, তখন ঋতু আরম্ভ হইয়াছে বলিয়া ধারণা করিতে পারিবে না। যখন বাহিরের চামড়াতে রক্তের দাগ দেখিতে পারিবে নতুবা যখন রুয়ী সুতা বাহির করিবে, তখন হইতে ঋতুবতী বলিয়া গণ্য করিবে। ঋতুবতী রমণী নামাজ, রোজা, কাবা শরীফের তাওয়াফ, মসজিদে প্রবেশ করা, কোরান শরীফ পড়া ও হাত লাগান এবং সঙ্গম করা ইত্যাদি হারাম, কিছুই দোরস্ত নহে। ঋতুবতী রমণীর জন্য মস্তহাব এই, যখন নামাজের সময় হইবে তখন অজু করিয়া নামাজের জায়গায় বসিয়া নামাজ পড়িতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ র্পয্যন্ত বসিয়া سبحان الله ولا اله الا الله (ছোবহানাল্লাহে অ লা এলাহা ইল্লাল্লাহে) পড়িতে থাকিবে তবে নমাজের আদত থাকিবে। ঋতুকালে সঙ্গম হালাল জানিলে কাফের

হইবে। যদি ঋতুবতী রমণী দশদিনের কমে বিশুদ্ধ হইয়া তিন দিবা রাত্রি গতে কিম্বা উহা হইতে র্উদ্ধকাল গতে নিয়মিত কাল পূর্ণ হওয়ার র্পূব্বে রক্ত বন্ধ হইয়া গেলে, তখন নামাজের শেষ সময় র্পয্যন্ত দেরী করা ওয়াজেব হইবে। নামাজের ওয়াক্ত গত হওয়া ও নামাজ কাজা হওয়ার ভয় থাকিলে স্নান করিয়া শেষ সময় নামাজ পড়িবে। মোয়োতাদা রমণী অর্থাৎ আদতওয়ালী নারী একদিন রক্ত দেখিলে দ্বিতীয় দিন পাক রহিল। যেই দিন রক্ত দেখিতে পাইবে সেই দিন নামাজ ও রোজা বন্ধ রাখিবে। যেই দিন রক্ত বন্ধ হইবে সেই দিন স্নান করিয়া নামাজ পড়িবে। ঋতুকালে তৃতীয় দিন নামাজ বন্ধ রাখিবে, ঋতু বন্ধ কালে চতুর্থ দিণ পড়িবে। এইরূপে দশ দিন র্পয্যন্ত করিবে। স: বে: ১ম খণ্ড বাবুল হায়েজ গা: আ: ও বে: জে: ২য় খণ্ড রুকনুদ্দিন। শিক্ষা দেনেওয়ালী নারী ঋতু কালে এক ২ শব্দ শিক্ষা দিবে, দুই শব্দের মধ্যে দেরী করিতে হইবে যাহাকে ওকফ: বলে। কোরান শরীফের হেজে বা বানান করাও দোরস্ত আছে। ঋতুর রক্তের রং ছয় প্রকার। ঐ ছয় প্রকার রং হইতে ঋতু কালে যেই রংয়ের রক্ত দেখিতে পাইবে, তাহা হায়েজের রক্ত হইবে। ঐ ছয় রং এই! (১) লাল (২) জরদা (৩) সবুজ (৪) খাকী অর্থাৎ মাটির রং (৫) কালবর্ণ (৬) তিরা রং অর্থাৎ দেখিতে সাদা বুঝায় সম্পূর্ণ সাদা নয়। ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য নামাজের এক ওয়াক্তের মধ্যে ওজর ব্যতীত এই পরিমাণ সময় পাওয়া যাইতেছে না যে, তাহাতে অজু করিয়া নামাজ পড়িতে পারা যায় তাহাকে মাজুর বলে। যেমন কোন রমণীর এস্তেহাজা হইলে বা ব্যাধির জন্য যোনিদ্বার দিয়া র্সব্বদা রক্ত নির্গত হইলে অথবা কোনো পুরুষরে সতত প্রস্রাব নঃিসৃত হইল,ে বহু মুত্র হইলে গুহ্যদ্বার দিয়া বায়ু নি:সরণ হইলে, অর্শ্ব হইলে, গণোরিয়া হইলে, লিঙ্গ দিয়া ধাতু পুঁজ পড়িলে, ফোঁড়া

বা ক্ষত হইলে। পাঁচড়া হইতে রক্ত, পুঁজ নির্গত হইলে এই সমস্ত অবস্থাপন্ন লোককে এবং গুল দেওয়ায় কষি দ্বারা পুঁজ ও রক্ত নির্গত হইলে, শরাতে তাহাদিগকে মাজুর বলে। প্রত্যেক ওয়াক্তের নমাজের জন্য মাজুর ব্যক্তির নূতন অজু করিতে হইবে, যতক্ষণ ওয়াক্ত থাকিবে ততক্ষণ থাকিবে, ওয়াক্ত চলিয়া গেলে অজুও সঙ্গে ২ ভাঙ্গিয়া যাইবে। মাজুর ব্যক্তি যেই ব্যাধিতে আক্রান্ত আছে, তাহা ছাড়া অন্য কোন কারণে অজু ভাঙ্গিয়া গেলে তদ্বারা অজু ভাঙ্গিয়া যাইবে। পুনরায় অজু করিতে হইবে। যেমন জোবেদার এস্তেহাজা হওয়ায় জোহরের ওয়াক্তে অজু করিয়াছিল, যতক্ষণ জোহরের ওয়াক্ত তাকিবে, এস্তেহাজার দ্বারা অজু ভাঙ্গিবে না। যদি পায়খানা বা প্রস্রাব করে নতুবা শরীর হইতে কোন রকমে রক্ত বাহির হইয়া চলিয়া যায় তদ্ধারা অজু ভঙ্গ হইবে। পুনরায় অজু করিতে হইবে। এইরূপ ওয়াক্ত চলিয়া গেলে অজু করিতে হইবে। ঐ অজুর দ্বারা ফরজ ও নফল নামাজ পড়িতে হইবে। এক ব্যক্তির এক ওজর দ্বারা সম্পূর্ণ এক ওয়াক্তের নামাজ গত হইয়া গেলে মাজুর হইবে। যখন দ্বিতীয় নমাজের ওয়াক্ত আসিবে তখন সম্পূর্ণ ওয়াক্ত ওজর পাওয়া যাওয়া আবশ্যক নহে। একবার ঐ সময় ঐ ওজর পাওয়া গেলে এবং বাকী সমস্ত সময় পাওয়া না গেলেও ঐ ওজর বন্ধ থাকিলে তবে ও মাজুর হইবে। হাঁ, যদি ঐ ওয়াক্তের পরে সম্পূর্ণ এক ওয়াক্ত ওজর ব্যতীত গত হইয়া যায় তবে আর মাজুর বলিতে পারিবে না। তখন যেইবার যখমের রক্ত নির্গত হইবে অজু ভাঙ্গিয়া যাইবে। জোহরের ক্ষণকাল গত হওয়ার পর যখম ইত্যাদির রক্ত ভাসিতে আরম্ভ হয়, তখন শেষ ওয়াক্ত র্পয্যন্ত এন্তেজারি করিতে হইবে। ঐ সময়ে বন্ধ হইলে ভাল, নতুবা অজু করিয়া নমাজ পড়িবে। পরে আছরের সম্পূর্ণ ওয়াক্ত রক্ত ভাসিতে থাকিলে, এমনকি অজু করিয়া

নমাজ পড়িবার সময়ও রক্ত ভাসা ব্যতীত রক্ত পাওয়া না গেলে, তখন আছরের ওয়াক্ত গত হওয়ার পর মাজুর বলিয়া গণ্য হইবে না। এই সময়ের আন্দর যাহা নমাজ পড়া গিয়াছে তাহা পুন:রায় পড়িতে হইবে।এস্তেহাজা ওয়ালী রমণী প্রস্রাব, বায়ু ও পায়খানার দরুণ অজু করার পর রক্ত বাহির হইলে অজু ভাঙ্গিয়া যাইবে। কারণ অজু করার সময় এস্তেহাজার রক্ত বন্ধ ছিল। এস্তেহাজার রক্ত ইত্যাদি কাপড়ে লাগিলে দেখিতে হইবে যে, নমাজ শেষ হওয়ার র্পূব্বে পুনরায় রক্ত সরিয়া কাপড়ে লাগিবে কিনা? যদি লাগে, তখন কাপড় ধৌত করা ওয়াজেব হইবে না। যখন কাপড় ধৌত করিয়া সম্পূর্ণ নামাজ পড়িলে ঐ বিমারের রক্ত পুন:রায় বাহির হইয়া কাপড়ে লাগিবে না, তখন কাপড় ধৌত করা ওয়াজেব হইবে। যদি রক্ত এক টাকার বরাবর হয় তবে ধৌত না করিয়া নমাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। বে: জে: ও খো: ফ: ১ম খণ্ড গা: আ: ইত্যাদি।

নেফাছের বয়ান

সন্তানাদি জন্মের পর যোনিদ্বার দিয়া রেহেম বা বাচ্চাদানী হইতে যে রক্ত বাহির হয় তাহাকে নেফাছ বলে। নেফাছের ন্যূনকালের ইয়ত্তা নাই। উর্দ্ধ কাল ৪০ দিন। ঐ ৪০ দিনের উর্দ্ধ সময় রক্তপাত হইলে এস্তেহাজা হইবে। যদি কোন রমণীর র্অদ্ধ ঘণ্টা রক্তপাত হইয়া যায় তবুও নফোছ ধরতিে হইব।ে সন্তান প্রসব হওয়ার পর একেবারে রক্ত পাত না হইলে তবুও প্রসবের পরে স্নান করা ওয়াজেব হইবে। জায়নব খাতুনের সন্তান প্রসব হইতেছে। ইতি মধ্যে সন্তানের অধিক অংশ বাহির হইয়া অল্প অংশ উদরে রহিলে, তখন যেই রক্তপাত হইবে তাহা নেফাছের রক্ত হইবে। যদি র্অদ্ধ হইতে কম বাহির হয়, ঐ সময় যেই রক্তপাত হয় উহা এস্তেহাজা

হইবে। যদি সেই সময় জ্ঞান বাহাল থাকে নামাজ পড়িতে হইবে। না পড়িলে গুনাহগার হইবে। বসিয়া পড়িতে না পারিলে ইসারা করিয়া নামাজ পড়িতে হইব।ে কাজা না করিবে। কিন্তু নমাজ পড়িলে সন্তান নষ্ট হওয়ার ভয় থাকিলে নমাজ না পড়িবে। চেক্ত্‌ অর্থাৎ কোন নারীর অপূরণ সন্তান বাহির হইয়া গেলে তাহাতে যদি সন্তানের কোন চিহ্ন হয় যেমন নখ, আঙ্গুল এবং চুল ইত্যাদি হইয়া থাকে, সন্তান জন্মের পর যাহা রক্ত বাহির হয় তাহা নেফাছের রক্ত হইবে। যদি সন্তানের কোন চিহ্ন না হয়, মাংসের টুকরা বাহির হইয়া যায় উহা নেফাছ হইবে না। ইহার র্পূব্বে হায়েজের পর পনর দিন তোহর গত হইয়া তিন দিন রক্ত দেখিতে পাইলে হায়েজ হইবে। যদি তিন দিবসের কমে রক্ত দেখা যায় নতুবা তিন দিবস রক্ত দেখা গিয়াছে ঐ পনর দিন তোহর গত হয় নাই তবে এস্তেহাজা হইবে। কোন নারীর যদি ৪০ দিবস হইতে নেফাছের রক্ত অধিক কাল দেখা যায়, ইতি র্পূব্বে ঐ নারী হইতে অন্য কোন সন্তান প্রসব না হইলে তাহার নেফাছ ৪০ দিন হইবে। যাহা বেশী হইবে এস্তেহাজা হইবে। চল্লিশ দিবস গত হওয়ার পর তৎক্ষণাৎ স্নান করিয়া নামাজ আরম্ভ করিবে। রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য দেরী করিতে পারিবে না। ইতি র্পূব্বে ঐ নারী হইতে সন্তান প্রসব হইলে র্পূব্বরে নিয়মিত কাল (আদত) মতে নেফাছ ধরিতে হইবে। উহা হইতে যাহা অধিক দিবস রক্ত দেখা যাইবে এস্তেহাজা হইবে। কোন নারীর নেফাছের নিয়মিত কাল ৩০ ত্রিশ দিন ছিল। দ্বিতীয় সন্তান প্রসব হওয়ার পর ত্রিশ দিবস গত হওয়াতেও রক্ত বন্ধ হইতেছে না ঐ সময় স্নান না করিবে ও নামাজ না পড়িবে। ৪০ দিন গত হওয়ায় নেফাছের রক্ত বন্ধ হইল। তখন এই সম্পূর্ণ ৪০ দিন নেফাছ হইবে। যদি ৪০ দিবসের অধিক কাল ৪৫ পঁয়তাল্লিশ কিম্বা ৫০ পঞ্চাশ দিবসে রক্ত বন্ধ

হয় তখন র্পূব্বরে নিয়মিত কাল (আদত) মতে নেফাছ ধরিতে হইবে। অর্থাৎ ত্রিশ দিবস নেফাছ হইবে। পনর দিন বা কুড়ি দিন এস্তেহাজা হইবে। ঐ পনর দিনের নামাজ কাজা করিয়া দিতে হইবে। যদি চল্লিশ দিবস সম্পূর্ণ হওয়ার র্পূব্বে নেফাছের রক্ত বন্ধ হইয়া যায়, তাড়াতাড়ি স্নান করিয়া নামাজ পড়িবে। যদি স্নান করিলে অনিষ্ট হয় তৈয়ম্মুম করিয়া নামাজ পড়িবে। কখনও নামাজ কাজা করিবে না। নেফাছের সময় নামাজ পড়িবে না। নেফাছের সময় নামাজ একেবারে মাফ। রোজা কাজা করিয়া দিতে হইবে। এক সঙ্গে দুই সন্তান জন্ম গ্রহণ করিলে নতুবা ছয় মাসের কমের আন্দরে আগে পাছে দুই সন্তান জন্ম হইলে প্রথম সন্তান হইতে নেফাছ ধরিতে হইবে। দ্বিতীয় সন্তান হইতে ইদ্দত হইবে। স: বে: ১ম খণ্ড, গা: আ: ১ম খন্ড ও নু: হে: ১ম খণ্ড, আ: গি: ১ম খণ্ড ইত্যাদি। এক সন্তান জন্ম হইয়া ছয় মাস কিম্বা ততোধিক কাল পরে দ্বিতীয় সন্তান জন্মিলে, দুই নেফাছ গণনা করিতে হইবে। হায়েজের সময় যে সমস্ত কাজ করা নিষেধ নেফাছের সময়ও তাহা নিষেধ। যেই টাকা পয়সা তসতরী বা তাবিজে নতুবা অন্য কোন বস্তুতে কোরান শরীফের আয়ত লিখিত থাকে তাহাতে হাত লাগান অর্থাৎ ছোঁয়া দোরস্ত নহে। হাঁ যদি কোন বস্তুর মধ্যে ঐ টাকা পয়সা ইত্যাদি রাখা যায় উহাকে ছুঁইতে পারিবে। কোরান শরীফকে পরিধানের কোর্ত্তা ও কাপড় ছাড়া অন্য কাপড় দ্বারা ছুইঁতে পারিবে। যেমন রুমাল ইত্যাদি কোরান শরীফের ছোট আয়তের র্অদ্ধকে আয়াত পড়িতে পারিবে। দোয়ার মানসে আলহামদো পড়িতে পারিবে যদি তেলাওতের উদ্দেশ্য না থাকে। এই রূপ কোরানের মধ্যে যাহা দোয়ার আয়াত আছে তাহা তেলাওতের উদ্দেশ্যে না হইলে দোয়ার উদ্দেশ্যে পড়িতে পারিবে। দোয়া কুনুত পড়িতে পারিবে। কলেমা

ও দরূদ শরীফ পড়িতে পারিবে ও খোদার জিকির করিতে পারিবে। যেমন নামাজের সময় উপস্থিত হইলে অজুকরিয়া পাক্ জায়গায় বসিয়া আল্লাহ্ আল্লাহ বলা ইত্যাদি দোরস্ত আছে। বে: জে: ২য় খণ্ড, রু: দি: ইত্যাদি।

২য় পরিচ্ছেদ

নামাজের বিবরণ

হজরত আদম (আ:)এর উপর ফজরের নামাজ ফরজ হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ:) এর প্রতি জোহর, হজরত ইউনুচ (আ:) এর প্রতি আছর, হজরত ঈছা(আ:)এর প্রতি মগরেবের নামাজ, হজরত মুছা (আ:) এর প্রতি এসা এবং শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) এর প্রতি বেতরের নামাজ অবতীর্ণ হইয়াছে। উল্লিখিত পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ আমাদের প্রতি হিজরীর ১ সনে পবিত্র রমজান মাসের ২৭শে তারিখে শুক্রবার দিবা-গত রজনীতে দয়াময় খোদাতালা র্সব্বশষে ও ভবিষ্যৎ বাণী র্কত্তা মহাপুরুষ হজরত মোহাম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) কে স্বর্গে আহবান করিয়া তাঁহার সঙ্গে নব্বই হাজার কথা বলিয়াছিলেন।তন্মধ্যে এই পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হইয়াছে। কেহ কেহ বলিয়াছেন, হজরতের র্পূব্বে মক্কাধামে মেরাজ হইয়াছে, এবং পবিত্র রজবের ২৭শে অথবা ২৭ শে রাত্রে মেরাজ হইয়াছে।আদি কালে পয়গাম্বরগণের প্রতি নামাজ অর্পিত হইয়াছে সেই রকম আমাদের উপরও অপর্ণ করা হইয়াছে।দশ বৎসর বয়স্ক হইলে মারপিট করিয়া নামাজ পড়াইতে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে।যাহার নামাজ সেই ব্যক্তিই পড়িবে, অন্য কাহারও দ্বারা নামাজ পড়াইলে কোন ফল হইবে না।রমণীগণের মধ্যে কেহ নামাজ জ্ঞাত সারে না পড়িলে, প্রথমে তাহার স্বামী তাহাকে সরল ভাবে বুঝাইবে, তাহাতে বাধ্য

না হইলে শয়নাগার পৃথক করিয়া দিবে, তাহার অবাধ্য হইলে প্রহার করিবে। কিন্তু এমন ভাবে প্রহার করিবে যেন কোন অঙ্গ অকর্মন্য না হয়, তাহাতেও নামাজ না পড়িলে তিন তোহরে তিন তালাক দিয়া পরিত্যক্ত করিবে। মেশকাত শরীফ ও ফেকার কেতাব।

নামাজের ওয়াক্তের বিবরণ

ফজরের নামাজের ওয়াক্ত ছোবেহ ছাদেকের পর হইতে আরম্ভ হইয়া র্সূয্যোদয়ের র্পূব্ব র্পয্যন্ত থাকিবে। র্সূয্যোদয় হইতে ফজরের ওয়াক্ত আর থাকিবে না। দ্বিপ্রহরের পর হইতে আরম্ভ করিয়া কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ না হওয়া র্পয্যন্ত জোহরের নামাজ পড়তিে পারবি।ে বস্তু আদরি ছায়া দ্বগিুণ পর হইতে আরম্ভ করযি়া র্সূয্যাস্ত হওয়ার র্পয্যন্ত আছররে নামাজের ওয়াক্ত থাকব।ে র্সূয্যাস্ত হওয়ার পর হইতে আরম্ভ করযি়া পশ্চমিরে লোহতি র্বণ মশিযি়া না যাওয়া র্পয্যন্ত মগরবেরে নমাজরে ওয়াক্ত থাক।ে পশ্চমিরে লোহতি মশিযি়া যাওয়ার পর হইতে আরম্ভ করযি়া ছোবহে কাজবেরে র্অথাৎ র্পূব্ব দকিে যে শ্বতে রখো নর্গিত হয়, সইে রখো দৃষ্ট হইবার র্পূব্ব র্পয্যন্ত এশাররে নমাজ পড়তিে পারবি।ে মধ্যাহ্ন সময়ে বস্তু দাঁড় করলিে যদি তাহার ছায়া র্পূব্ব দকিে থাকে তবে আসলী হইবে না (বস্তু র্অথাৎ সোজা লাকড়ী)। তাহার নম্নিে পততি হইয়া ক্রমশঃ যে বৃদ্ধি পায় এবং পশ্চমি দকিে ছায়া বস্তিারতি হয় ঐ বৃদ্ধি প্রাপ্ত ছায়াকে আসলী ছায়া বল।ে ছায়া আসলী হইতে দ্বগিুণ হওয়া র্পয্যন্ত জোহররে নামাজরে সময় থাক।েইহা ইমাম আবু হানিফা (র:) ইত্যাদির ব্যাখ্যা। এসার নামাজের র্পূব্বে বেতেরের নামাজ পড়া সিদ্ধ হইবে না। জোহর ও জুমার একই সময়, উহাতে কোন প্রকার মতভেদ নাই। জোহরের নামাজ যেই সময় মস্তাহাব, জুমার নামাজও

সেই সময় মস্তাহাব। নাবালেগ ও উম্মাদ, হায়েজ ও নফোছ ওয়ালীর উপর নামাজ ফরজ নহে।যাহারা নামাজকে ফরজ না জানিবে,তাহারা কাফের হইবে।আ:গি: ১মখণ্ড ইত্যাদি। র্সূয্যোদয়ের পর হইতে দুই প্রহরের র্পূব্ব র্পয্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে। রাত্রির তৃতীয় অংশ তাহাজ্জুদ পড়িবে। যদি তৃতীয়াংশে পড়িতে না পারে এশারের নামাজের পর পড়িবে কিন্তু তৃতীয়াংশের মত ছোয়াব পাইবে না।

নামাজের মোস্তাহাব ও মক্রুহ সমূহের বিবরণ

ফজরের নামাজ রাত্রি ফর্সা হইলে আরম্ভ করা মস্তাহাব। অর্থাৎ এই পরিমাণ সময়ে আরম্ভ করিলে যেন চুপে চুপে কোরানের ৪০ আয়াত প্রত্যেক রকাতে পাঠ করিতে পারে। এবং কোন কারণবশত: নামাজ ভঙ্গ হইলে ঐ নামাজ পুন:রায় পড়িতে পারে। ইহা পুরুষের জন্য।কিন্তু স্ত্রীলোকেরা প্রত্যেক সময় ফজরের নামাজ অন্ধকারে পড়া মোস্তাহাব।অর্থাৎ ফজরের প্রথম সময় পড়া মোস্তাহাব। গ্রীষ্মকালে জোহরের নামাজ গৌণ করযি়া ও শীতকালে জোহররে সময় হওয়া মাত্রই জোহররে নামাজ পড়া মোস্তাহাব। আছরের নামাজ (প্রত্যেক সময়) যে সময় ভালরূপে র্সূয্যরে দিকে দৃষ্টি করা যায় সেই সময় আছরের নামাজ পড়া মোস্তাহাব অর্থাৎ র্সূয্য রশ্মি যখন নিস্তেজ হয়। মগরেবের নামাজ সব সবয় র্সূয্যাস্ত হইবা মাত্রই পড়া মোস্তাহাব। এশারের নামাজ রাত্রির তৃতীয়াংশের প্রথমাংশে পড়া মোস্তাহাব। এবং তিনাংশের একাংশ হইতে র্অদ্ধকে রাত্রি র্পয্যন্ত পড়া মোবাহ। কবিরী ও রু: দি: ইত্যাদি। বৃষ্টির গোলযোগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সূর্য্য দৃষ্টি গোচর না হইলে ফজর, জোহর, ও মগরেবের নামাজ গৌণে পড়া মোস্তাহাব। এশা ও আছরের

নামাজ প্রথম সময় পড়া মোস্তাহাব। মগরেবের নামাজের সময় হইলে দুই রাকাত পরিমাণ গৌণ করিয়া পড়া মকরুহ তানজিহি হইবে।র্সূয্য হরিদ্রা বর্ণ হইলে সেই সময় আছরের নামাজ পড়া মকরুহ।সূর্য্যােদয়ের সময়, মধ্যাহ্ন সময়, র্সূয্যাস্তরে সময় নামাজ পড়া মকরুহ তাহরমিা।মধ্যাহ্নে কাজা নামাজ পড়া, নফল নামাজ, জানাজার নামাজ,সেজদায়ে তেলাওয়াত ও ছোহু সেজদা ইত্যাদি করা মকরুহ তাহরিমা।গা:আ:১মখণ্ড।কিন্তু জুমার দিবস মধ্যাহ্নে নফল নামাজ পড়া দোরস্ত আছে।এবং ইহার উপর ফকীহগণের ফতোয়া।ইমাম আবু ইউছুফ (র:) ও এইরূপ বলেন।ছগিরী ইত্যাদি।দুই প্রহর রাত্রে এশার নামাজ পড়া এবং এশারের সময়ের র্পূব্বে শয়ন করা মকরুহ। এশার নামাজ পড়ার পর আবশ্যক ব্যতীত আলাপ আলোচনা করা মকরুহ। নতুবা মকরুহ নহে। যেমন কোরান পাঠ করা ও হাদিছের কথা আলাপ করা, জিকির করা, ফেকাহর আলাপ করা, আত্মীয়গণের সহিত আলাপ করা এবং ভার্য্যরে সহিত আলাপ করা ইত্যাদি সিদ্ধ। ঐরূপ ফজরের নামাজের র্পূব্বে কথা বলা মকরুহ। পরে বলিলে কোন দোষ হইবে না। এশারের নামাজ অর্দ্ধরাত্রির পরে ও আছরের নামাজ সূর্য্য হরিদ্রাবর্ণ হওয়ার সময় ও মগরেবের নামাজ আকাশে যখন অধিক সংখ্যক নক্ষত্র দৃষ্ট হয় এই তিন সময় এই পরিমাণ গৌণ করা মক্রুহ তাহরিমা। কিন্তু নামাজ মক্রুহ তাহরিমা হইবে না। ছফর বা প্রবাসী ও খানা খাওয়ার ওজরের দ্বারা গৌণ করিলে মক্রুহ হইবে না। বেতেরের নামাজ শেষ রাত্রে পড়া মোস্তাহাব। জুম্মা ও ঈদের খোৎবা পাঠের জন্য ইমাম হুজরা হইতে বাহির হইলে নতুবা এমামের হুজরা না থাকিলে খোৎবা পড়ার জন্য সোপানে (মিম্বারে) উঠাবধি এবং খোৎবা শেষ না হওয়া র্পয্যন্ত অন্য নামাজ পড়া মক্রুহ তাহরিমা। কিন্তু ফজরের কাজা নামাজ থাকিলে

তাহা পড়িতে পারে। ফজরের নামাজের উপযুক্ত সময় হইলেও আছরের নামাজের পরে মগরেবের নামাজের র্পূব্বে নফল নামাজ পড়া মক্রুহ। কিন্তু ফজরের নামাজের জন্য একামত হইলে বিবেচনা করিয়া যদি ধারণা হয় যে সুন্নত পড়িয়া জামাতে দাখেল হইতে পারিবে। তখন ফজরের ছুন্নত পড়িতে হইবে। জমাত না পাওয়ার ভয় হইলে ছুন্নত পরিত্যাগ করিয়া জমাতভুক্ত হইবে। ঐ ছুন্নত র্সূয্যোদয় হওয়ার পরে ও দ্বিপ্রহরের র্পূব্বে পড়িতে হইবে। ইহার উল্টা পড়িলে মক্রুহ হইবে। আওকাতে ছলাছা অর্থাৎ র্সূয্যোদয়ের সময় ও মধ্যাহ্নরে সময় এবং র্সূয্যাস্তের সময় জানাজা উপস্থিত হইলে বা সেজদা তেলাওয়াৎ ওয়াজেব হইলে তখন ঐ জানাজার নামাজ, সেজদা তেলাওয়াত ঐ সময় আদায় করা মক্রুহ হইবে না। আ: ১ম খণ্ড ও রু: দি:। আহারের নিমিত্ত খাদ্য দ্রব্য সম্মুখে রাখিয়া নামাজ পড়িলে মক্রুহ হইবে। দুই ঈদের নামাজের র্পূব্বে নফল নামাজ পড়া মক্রুহ। বাহ্য, প্রস্রাব না করিয়া কি বাত কর্ম্ম চাপিয়া রাখিয়া নামাজ পড়া মকরুহ। মক্রুহ সময় এই: (১) যখন আকাশে অধিক সংখ্যক নক্ষত্র দৃষ্ট হয়। (২) কাবা শরীফের ঘরের উপর নামাজ পড়া। (৩) রাস্তার মধ্যে নামাজ পড়া। (৪) গোময়ের স্থানে নামাজ পড়া। (৫) পশ্বাদির জবেহ স্থানে নামাজ পড়া। (৬) গোর স্থানে নামাজ পড়া। (৮) যেই স্থানে গো, অশ্ব, মহিষ পানি পান করিয়া বিশ্রাম করে। (৯) পশ্বাদি যেই স্থানে বাঁধা যায়। (১০) ঘোড়ার আস্তাবলে। (১১) প্রস্তর কিম্বা কাষ্ঠ নির্ম্মিত পায়খানার উপর। (১২) পায়খানার ছাদের উপর। (১৩) শস্য পূর্ণ ক্ষেত্রে। (১৪) চাষি ক্ষেত্রে। (১৫) অরণ্যের সম্মুখে কোন লাকড়ি দাঁড় না করিয়া। (১৬) এশার নামাজের র্পূব্বে নিদ্রা যাওয়া। (১৭) ফজরের সময় নামাজের র্পূব্বে অবৈধ বাক্য বলা। অনাবশ্যক দুই সময়ের নামাজ এক সময় পড়া, শুক্রবারে

একামতের সময় ও জুম্মার খোৎবা পাঠের সময় ও দুই ঈদের ও সূর্য্য গ্রহণের নামাজের খোৎবা, বর্ষা বর্ষিবার খোৎবা পাঠের সময় এবং হজ্জের ও বিবাহের খোৎবা পাঠ করার সময় নফল নামাজ পড়া মক্রুহ। গা: আ: ১ম খণ্ড আ: গি: ১ম খণ্ড। বেতেরের নামাজের সময় এশারের পর হইতে ছোবেহ ছাদেক হওয়ার র্পূব্ব র্পয্যন্ত।এশরাকের নামাজের ওয়াক্ত সূর্য্য উদয় হওয়ার পর হইতে যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য্য গরম না হয়। সূর্য্য গরম হওয়ার পর হইতে দ্বিপ্রহর র্পয্যন্ত চাস্ত নামাজের সময় থাকিবে। সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পর হইতে জোহরের র্পূব্ব র্পয্যন্ত জওয়ালের সময়, র্অদ্ধ রজনী হইতে ছোবেহ ছাদেকের র্পূব্ব র্পয্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজের সময় থাকিবে এবং রাত্রির তৃতীয়াংশের শেষাংশে পড়া উত্তম। মগরেবের নামাজের পর আওয়াবিন নামাজ পড়িতে হইবে। দুই ওয়াক্তের নামাজ একত্র করিয়া আরাফাতের ময়দান ও মজদ্লফা ভিন্ন অন্য কোন ওয়াক্তে হানফি মজহাব মতে পড়া দোরস্ত হইবে না। রু: দি: ও গা: আ: ১ম খণ্ড। ছালাতুত্তছবীহ এবং এস্তেখারা ও কাজায়ে হাজাত মক্রুহ ওয়াক্ত ছাড়া প্রত্যেক সময় পড়িতে পারিবে। কিন্তু এস্তেখারার নামাজ এশারের পরে পড়িতে হইবে। কেতাব ঐ।

আজানের বিবরণ

নামাজ পড়ার জন্য উচ্চস্বরে নামাজীগণকে আহবান করাকে আজান বলে। নামাজের প্রারম্ভে লোকদিগকে সতর্কের নিমিত্ত আহ্বান করাকে একামত বলে। পবিত্রাত্মা হজরত পয়গম্বর সাহেব (ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) মেরাজে যাওয়ার রাত্রিতে হজরত জিব্রাইল (আ:) বায়তুল মোকাদ্দেছে একামত বলিয়াছিলেন ও আজান দিয়াছিলেন। তদবধি ফরজ নামাজের র্পূব্বে আজান ও একামতের প্রথা প্রচলিত হইয়াছে।

আজান পুরুষের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তের নামাজের নিমিত্ত উচ্চ স্থানে দাঁড়াইয়া আজান দেওয়া ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ। পাঁচ ওয়াক্তের ফরজের নিমিত্ত ছুন্নতে মোয়াক্কাদাহ ও ওয়াজেবের মত। ছাড়িয়া দিলে গুনাহগার হইবে। দুই ঈদে, জানাজায়, কছুপ, খসুপ ও এস্তেছকা নামাজের জন্য আজান বলা যায় না। নামাজের সময়ের র্পূব্বে আজান দিলে ঐ আজান দ্বিতীয়বার দিতে হইবে। গানের সুরের ন্যায় আজান বলায় যদি শব্দার্থ বিভিন্ন হয় তবে এইরূপ আজান দেওয়া মহাপাপজনক।আজান ও একামতে হাইয়ালচ্ছালাহ ও হাইয়াালাল ফলাহ্ বলার সময় দক্ষিণ ও বামে মুখ ফিরাইতে হইবে। এইরূপ নব সন্তান জন্মিলে আজান বলার সময় মুখ ফিরাইবে। ফজরের নামাজের সময় হাইয়াআলাস্ ফালাহ্ বলার পরে ‘আচ্ছালাতো খায়রুম মীনন্ নওম” দুইবার বলা মোস্তাহাব। এইরূপ আজান বলার সময় দুই হস্তের তর্জ্জনী আঙ্গুলী কর্ণ কুহরে প্রদান করা মোস্তাহাব। একামতে “হাইয়াআলাল ফালাহ্” এর পরে “কাদ্কামতিছ ছালাহ” দুইবার বলিতে হইবে।আজান ও একামত কাবাভিমুখী না হইয়া অন্য দিকে দিলে মকরুহ তান্জিহ হইবে।আজান ও একামতের মধ্যে কথা বলা সিদ্ধ নহে।কদর্য্য শব্দ উচ্চারণ করিলে পুন:রায় আজান বলিতে হইবে।আজান ও একামতে সালাম বলিলে তাহার উত্তর দেওয়া নিষ্প্রয়োজন।আজান বলিয়া কিছুকাল অপেক্ষা করিবে, যাহারা র্সব্বদা মসজিদে জামাতের নিমত্তি উপস্থিত থাকে তাহারা আসিতে পারে। এই পরিমিত সময় গৌণ করিবে যেন মোস্তাহাবের সময় অতিবাহিত না হয়। মগরেবের নামাজে তিন আয়াত পরিমাণ গৌণ করিয়া একামত আরম্ভ করত: নামাজ পড়িবে। আজান বলার সঙ্গে ২ একামত বলা মকরুহ। কয়েক ওয়াক্তের নামাজ একত্রে পড়িলে প্রথম ওয়াক্তের জন্য আজান ও একামত বলা ছুন্নত। অন্যান্য

সময়ের নিমিত্ত তাহার ইচ্ছাধীন। যদি এক মজলিসে কাজা করে, যদি কয়েক মজলিসে কাজা করে তবে প্রত্যেক মজলিসে আজান ও একামত বলিতে হইবে। গা: আ: ১ম খণ্ড কাবুল আজান ও শামী ১ম খণ্ড ইত্যাদি। যাহার উপর স্নান ফরজ সে আজান বলিলে পুন:রায় আজান বলিতে হইবে। কিন্তু একামত বলিলে দ্বিতীয়বার বলিতে হইবে না। ফ: ছে: বাবুল আজান ইত্যাদি। অজু ব্যতীত আজান বলা মকরুহ। কিন্তু সময় অতীত হওয়ার আশঙ্কায় অজু ব্যতীত আজান বলা যায়। একামত অজু ব্যতীত মকরুহ। আ: গি: ১ম খণ্ড ইত্যাদি। পাঁচ রকম লোকে আজান বলিলে পুনরায় আজান বলিতে হইবে। বালক (অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা নাবালেগ), রমণী, উন্মাদ, মাতাল, জুনব অর্থাৎ যাহার উপর গোছল ফরজ। আ: কা: আ: ১ম খণ্ড বাবুল আজান ইত্যাদি। আজান আরম্ভ কালে অজু ছিল পরে মধ্যভাগে অজু ভাঙ্গিয়া গেলে সেই অবস্থায় আজান খতম বা শেষ করিবে, বন্ধ করিয়া অজু করিবে না। অজু করিলে পুনরায় আজান বলিতে হইবে। কয়েকজন প্রবাসী ময়দানে ব্যতীত একামত সহ নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে। কিন্তু একামত ছাড়া নামাজ পড়িলে মকরুহ হইবে। মোয়াজ্জেন উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বেও অন্য ব্যক্তি একামত বলিলে যদি মোয়াজ্জেন বিরক্ত হয় তবে মকরুহ হইবে। অনুপস্থিত থাকিলে মকরুহ হইবে না। প্রথম আজান দেওয়ার পর মোয়াজ্জেন নামাজ পড়িয়া দ্বিতীয় মসজিদে ঐ মোয়াজ্জেনে আজান দিলে মকরুহ হইবে। নতুবা মকরুহ হইবে না। ক্রীতদাসগণ আজান বলা মকরুহ তানজীহি। অন্ধ, জারজ এবং পল্লীগ্রামের লোকে আজান দিলে সিদ্ধ হইবে। আজানের উত্তর দুই প্রকার: (১) সেই ব্যক্তি মসজিদের বাহিরে থাকিয়া আজান শুনে তবে ঐ ব্যক্তি সমস্ত কার্য্যাদি ছাড়িয়া এমন কি কোরান পাঠ ইত্যাদি ছাড়িয়া দিয়া মসজিদে যাইতে

হইবে এবং মুখে উত্তর দেওয়া ঐ ব্যক্তির উপর মোস্তাহাব। (২) যেই ব্যক্তি মসজিদের আন্দরে থাকিয়া আজান শুনে তাহার জন্য মুখে উত্তর দেওয়া ওয়াজেব, যদি দিনী এলম শিক্ষাদাতা বা শিক্ষাকারী না হয়। আজানের শেষ শব্দের শেষ অক্ষরে জজম্ পড়িবে যেমন الله اكبر আল্লাহো শব্দের আলেফকে মদ্ করিয়া পড়িলে এবং اشهد ان আন্না শব্দের নুনের পর আলেফ বৃদ্ধি করিয়া যেমন اَنَّا পড়িলে কুফরির কারণ হইবে। আকবর শব্দের “বা” ও “রা” অক্ষরের মধ্য দিয়া আলেফ বৃদ্ধি করিলে অর্থাৎ الله اكبار পড়িলে আজান ফাছেদ হইবে। গা: আ: ১ম খণ্ড ও রু: দি: বাবুল আজান ইত্যাদি।

নামাজের স্বর্ত্বের বিবরণ (অর্থাৎ নামাজের বাহিরের)

নামাজ আরম্ভ করার র্পূব্বে ছয় ফরজ আছে। প্রথম ফরজ নামাজির র্সব্বাঙ্গ অপবিত্র বস্তু হইতে পবিত্র হওয়া (২) নামাজের জন্য যেই কাপড় পরিধান করিবে তাহা শুদ্ধ হওয়া। এইরূপ একখানা লম্বা কাপড়ের একদিক পবিত্র ও অন্য দিক অপবিত্র হইলে, পবিত্র দিক পরিধান করিয়া নাড়িলে অপর দিক যদি না নড়ে তবে সেই কাপড়ের দ্বারা নামাজ দোরস্ত হইবে। নতুবা দোরস্ত হইবে না। যেই দ্রব্য নামাজির অঙ্গ হইতে পৃথক থাকে যেমন পাটি ও জায়নামাজ, যদি পাটির এক কেনারা পাক ও অন্য কেনারা না পাক হয় তবে পাক কেনারায় নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে। পাটি ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ হউক। নামাজির সঙ্গে যদি এইরূপ আণ্ডা থাকে যাহার আন্দরে রক্ত হইয়া গিয়াছে সেই আণ্ডা লইয়া নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে। কিন্তু শিশির মধ্যে প্রস্রাব লইয়া নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে না। কারণ প্রস্রাব নিজ স্থান হইতে বাহির হইয়া গিয়াছে, আণ্ডা সেইরূপ

নহে। কুকুর নামাজির গায়ে লাগিলে নামাজ দোরস্ত হইবে, কিন্তু কুকুরের লোয়াব লাগিলে ধৌত করা ব্যতীত নামাজ দোরস্ত হইবে না। গা:আ:১মখণ্ড সরুতুচ্ছালাত।(৩)নামাজ পড়ার স্থান পাক হওয়া ফরজ।অর্থাৎ দুই পা, দুই হস্ত, দুই হাঁটু ও কপাল রাখিবার স্থান পাক হওয়া ফরজ।রু: দি: ও ছ: ইত্যাদি। (৪)অঙ্গ পুরুষের পক্ষে নাভি হইতে উরু র্পয্যন্ত আবৃত করা ফরজ স্ত্রীলোকের সমস্ত শরীর আবৃত করা ফরজ।কিন্তু মুখ, করতল ও পা অনাবৃত করিতে পারে। গা:আ:১মখণ্ড।পুরুষের পক্ষে যেই পরিমাণ অঙ্গ আবৃত করা। ফরজ সেই পরিমাণ উদর পৃষ্ঠ সহ দাসীগণের পক্ষেও ফরজ। দাসী তিন প্রকার। মোদব্বেরা, মোকাতবা ও উম্মে অলাদ। মোদাব্বেরা এইরুপ দাসীকে বলে যাকাহে মালিক বলিয়া দিয়াছেন যে, আমি পরলোক গমন করার পর তুমি আজাদ। মোকাতবা উহাকে বলে যাহাকে মালিক বলিয়াছেন যে, তুমি আমাকে এই পরিমাণ ধন দিলে তুমি আজাদ (স্বাধীন)। যেই দাসী হইতে মালিকের সন্তান জন্ম হইয়াছে তাহাকে উম্মে অলাদ বলে। গা: আ: ১ম খণ্ড। রমণীগণের মস্তকের কেশরাশি লম্বিত হইয়া বস্ত্রের বহির্ভাগে পড়িলে, ফকিহ আবু লায়েছ বলেন, কেশরাশির চারি অংশের একাংশ খোলা হইয়া গেলে নামাজ ফাছেদ হইবে ও সিদ্ধ হইবে না। আ: কা: খানতে বর্ণিত আছে যে, রমণীগণের দুই কর্ণের উপরিভাগ হইতে যেই কেশ রাশি খোলা থাকিবে তদ্ধারা নামাজ অসিদ্ধ হইব।ে ইহা মোতাবর। এইরূপ দুই কর্ণ হইতে এক কর্ণের চারি অংশের একাংশ খোলা দেখিতে পাওয়া গেলে নামাজ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। এই বাক্য ছপি, ছগিরী ১১৮। ১১৯ পৃষ্ঠা। নামাজের আন্দর যেই অঙ্গ আবৃত করা ফরজ তাহা হইতে এক ২ অঙ্গের চতুর্থাংশ খোলা থাকিলে নামাজ অসিদ্ধ হইবে। যেমন পা এক শরীর, হস্ত এক শরীর,

গুহ্যদ্বার এক শরীর ও লিঙ্গ এক শরীর ইত্যাদি। প্রত্যেক অঙ্গ এ স্থলে শরীর বুঝাইবে। ইহার চারি অংশের একাংশ অনাবৃত থাকিলে বা হইলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। যদি চারি অংশের একাংশ হইতে কম খোলা থাকার পর হঠাৎ বস্ত্র দ্বারা আবৃত করিলে সেই সময় বিবেচনার বিষয় এই যে, যেই র্পয্যন্ত খোলা থাকিবে সেই র্পয্যন্ত যদি তিনবার ছোবহানাল্লাহ্ বলা র্পয্যন্ত গৌণ হয় তবে নামাজ অসিদ্ধ হইবে। তিনবার বলার মধ্যে বস্ত্র আবৃত করিলে নামাজ সিদ্ধ হইবে। ইহাও যদি বায়ুর দ্বারা বা অন্য কোন কারণে খোলা যায় বা হয়। যদি মুছল্লির দ্বারা খোলা থাকে বা হয় তবে হঠাৎ নামাজ ভঙ্গ হইব।ে কবরি,ি দুঃমোঃ ও রুঃদঃি। আমাদরে দশেরে রমণীগণ সরু ধুতি, পাতলা শাড়ী ও সুক্ষ্ম বস্ত্রাদি পরিধান করিয়া নামাজ পড়িলে আদৌ সিদ্ধ হইবে না। ছগিরী। হাঁ যদি পাতলা শাড়ীর নীচে উপযুক্ত তহবন ও গায়ে কোর্ত্তা ব্যবহার করে পাতলা কাপড়ের দ্বারা ও নামাজ সিদ্ধ হইবে। “হে নর নারীগণ তোমরা দোজখাগ্নি হইতে ভয় কর, সুক্ষ্ম শাড়ী ও সরু বস্ত্র ত্যাগ করত: পায়জামা, লম্বা কোর্ত্তা পরিধান করিয়া নামাজে প্রবৃত্ত হও, কেননা এই বস্ত্র পরিধান করা আবশ্যক। তোমরা দুনিয়ায় শোভা সৌন্দর্য্য দেখাইবার নমিত্তি শয়তানের অর্দ্ধাঙ্গিনী হইয়া নরকে গমন করিও না। উহা হইতে সাবধান হওয়া উচিত। চাচাতো, খালাতো ও মামাতো ভ্রাতার সম্মুখে স্ত্রীলোকেরা মুখ খোলা দোরস্ত নহে। বৃদ্ধ হইলে কোন ক্ষতি হইবে না। রমণীগণ উহাতে লিপ্ত আছে। যিনি দেখিবেন ও দেখাইবেন উভয়েই দোষী হইবেন। বস্ত্রাভাবে উলঙ্গ হইয়া নামাজ পড়িবে। কিন্তু দিনের নামাজ বসিয়া পড়িবে। ইশারায় রুকু সেজদা করিবে। রাত্রিতে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িবে। কারণ রাত্রিতে উলঙ্গ ব্যক্তির লিঙ্গ কেহই দেখিতে পারিবে না। রজনীতে

অন্ধকার গৃহে বস্ত্র থাকাতে উলঙ্গ হইয়া নামাজ পড়িতে পারিবে না। উলঙ্গ ব্যক্তিকে কেহ বস্ত্রদান করিলে উলঙ্গ হইয়া নামাজ পড়িতে পারিবে না। বস্ত্র প্রাপ্ত মাত্র পরিধান করিয়া নামাজ পরিবে। গা: আ: ১ম খণ্ড। উলঙ্গ ব্যক্তির নিকট রেশমী বস্ত্র ছাড়া অন্য কোন বস্ত্র না থাকিলে রেশমী বস্ত্র পরিধান করিয়া নামাজ পড়িবে। উলঙ্গাবস্থায় নামাজ না পড়িবে। আ: গি: ১ম খণ্ড কবিরী ও রু: দি:। উলঙ্গ ব্যক্তিকে কেহই বস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করিলে নামাজের শেষ সময় র্পয্যন্ত গৌণ করত: বস্ত্র দিলে ঐ বস্ত্র দ্বারা নামাজ পড়িবে। নতুবা উলঙ্গাবস্থায় নামাজ পড়িবে। এইরূপ নামাজের জায়গা ও অজুর পানির জন্য ও শেষ সময় র্পয্যন্ত গৌণ করিবে। গা: আ: ১ম খণ্ড, রু: দি: ও ছ: ১২১ পৃষ্ঠা। উলঙ্গ ব্যক্তির নিকট এক খানা কাপড় আছে, তাহার চারি ভাগের এক ভাগ পাক বাকী নাপাক এবং ঐ নাপাক অংশ পাক করিবার কোন বস্তু তথায় বিদ্যমান না থাকিলে, তবে ঐ বস্ত্র দ্বারা নামাজ সিদ্ধ হইবে। ঐ সময় উলঙ্গাবস্থায় নামাজ পড়িলে অসিদ্ধ হইবে। উলঙ্গ ব্যক্তি সামান্য বস্ত্র প্রাপ্ত হইলে উহা পরিধান করা ওয়াজেব। যদি ঐ বস্ত্র দ্বারা সমুদয় আব্রু আচ্ছাদন করা না যায় বা না হয় তবে প্রথমত: গুহ্য ও লিঙ্গ আচ্ছাদন করিবে, তৎপর রান তৎপর হাঁটু। রমণী হইলে রান আচ্ছাদন করার পর, পেট, পৃষ্ঠ, জঙ্ঘা সমুদয় শরীর আবৃত করিবে। যদি তৃণ হয় তাহার দ্বারা অঙ্গ আবৃত করা ওয়াজেব। ছ: ও রু: দি:। যদি গুহ্য ও লিঙ্গ আচ্ছাদন করা না যায়, তবে লিঙ্গ আবৃত করিবে। রু: দি:। কোন ব্যক্তির কাপড়ে অশুদ্ধ বস্তু লাগিলে ঐ বস্ত্র দ্বারা নামাজ পড়ার পর জানিতে পারিল বস্ত্রতে অশুদ্ধ বস্তু লাগিয়াছে, তখন বস্ত্রকে ধৌত করিবে, নামাজ পুন:বার পড়িতে হইবে না। উলঙ্গ ব্যক্তি নামাজ পড়ার আন্দর বস্ত্র পাইলে ঐ নামাজ পুন:রায় পড়িতে হইবে। পুরুষ

তিনটা বস্ত্র দ্বারা নামাজ পড়া মোস্তাহাব। পায়জামা, কোর্ত্তা ও পাগড়ী। দুই বস্ত্র দ্বারাও দোরস্ত আছে। কিন্তু এক পায়জামা দ্বারা নামাজ পড়া মক্রুহ। এইরূপ স্ত্রীলোক ও তিন বস্ত্র দ্বারা নামাজ পড়া মোস্তাহাব। পায়জামা, কোর্ত্তা ও এজার বা মাথার রুমাল। যদি দুই বস্ত্রের দ্বারা বা এক বস্ত্রের দ্বারা সমুদয় অঙ্গ আবৃত করিয়া পড়ে তবে দোরস্ত হইবে। নতুবা দোরস্ত হইবে না। গা: আ: ১ম খণ্ড, রু: দি: ও ছ: ১২২ পৃষ্ঠা। (৫) কাবা শরীফের দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়া, মক্কাবাসী লোকের মক্কা শরীফকে সোজা সামনে করিয়া নামাজ পড়া ফরজ। অন্যান্য লোকের জন্য মক্কার দিক্ সামনে করিয়া নামাজ পড়া ফরজ। সহরে ও বস্তিতে কাবার পরিচয়ের চিহ্ন মসজিদ। জঙ্গলে ও সমুদ্রে কাবাকে পরচিয় করার চহ্নি নক্ষত্র ও লোকজন এই সমস্ত চিহ্নাদি ও নিজের অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে না। তাহাররী (অন্তরের বিশ্বাস) ফরজ। যেই স্থানে কোন চিহ্ন না থাকে সেই স্থানে নিজের অন্তরের বিশ্বাস অনুযায়ী নামাজ পড়িবে। নতুবা নামাজ দোরস্ত হইবে না। এক ব্যক্তির কোন দিকে অন্তরে কাবার বিশ্বাস হইতেছে না। সব দিক্ সমান বুঝিতেছে তবে ঐ ব্যক্তি এক এক দিকে এক এক বার নামাজ পড়িবে। এক ব্যক্তি অন্তরের বিশ্বাস মতে এক দিকে এক রকাত পড়ার পর অন্তরের বিশ্বাস অন্যদিকে পরির্বত্তন হইয়া যাওয়ায় সেই দিকে এক রকাত পড়িলে, এইরূপ অন্তরের বিশ্বাস পরির্বত্তন হওয়াতে চারি দিকে চারি রকাত পড়িলে তাহার নামাজ সিদ্ধ হইবে। এক দিকে অন্তরের বিশ্বাস হইলে সেই দিক ত্যাগ করিয়া অন্যদিকে নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। যেই দিক অন্তরের বিশ্বাস মতে র্নিদ্দষ্টি করিয়াছে পুনরায় সেই দিকে নামাজ পড়িতে হইবে। রু: দি: আ: গি: ১ম খণ্ড গা: আ: ও শামী ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি তাহাররী করার

পর নামাজ আরম্ভ করিলে, নামাজের আন্দর নতুবা নামাজ সমাপ্ত হওয়ার পর জানিতে পারিল যে নামাজ করার দিকে পড়া যায় নাই। যদি নামাজের আন্দর জানা যায় তৎক্ষণাৎ কাবামুখী হইয়া যাইবে। নতুবা এক রুকুন (তিন বার ছোবহানাল্লাহ্) বলা র্পয্যন্ত গৌণ হইলে তবে নামাজ ভাঙ্গিয়া যাইবে। যদি নামাজ সমাপ্ত হওয়ার পর জানা যায় তবে নামাজ পুনরায় পড়িবার আবশ্যক হইবে না। এক ব্যক্তি তাহাররী মতে এক রাকাত আদায় করার পর জানিতে পারিল যে তাহার তাহাররী ভুল হইয়াছে, তবে অন্য দিকে দ্বিতীয় রকাত আদায় করিল, তৎক্ষণাৎ স্মরণ হইল যে প্রথম রকাতে ছজিদা একটি আদায় করা যায় নাই। তখন এই ব্যক্তির নামাজকে নূতন করিয়া পড়িতে হইবে। কারণ তাহার নামাজ ভঙ্গ হইয়াছে। মসবুক ও লাহেক এমামের পশ্চাতে নামাজ পড়িলে এমাম নামাজ হইতে ছালাম দেওয়ার পর (বাহির হওয়ার পর) ঐ দুই ব্যক্তির তাহাররী পরির্বত্তন হইয়া গেলে মসবুক নিজের তাহাররী মতে কাবার দিকে ফিরিয়া বাকী নামাজ পড়িবে বাকী লাহেক, নূতন ভাবে নামাজ আদায় করিবে। মুছাফের এমাম নামাজ দুই রকাত পড়িয়া সমাপ্ত করার পর মুকিম মুক্তদির রায় পরিবর্তন হইয়া গেল যে, কাবার অন্য দিকে নামাজ পড়া গিয়াছে। অবে ঐ মুকিম মক্তর্দি নূতন ভাবে নামাজ পড়িতে হইবে। আ: গি: ১ম খণ্ড ও রু: দি। কোন ব্যক্তি রোগের দরুন কাবামুখী হইয়া নামাজ পড়িতে সক্ষম হইতেছে না ও তাহার নিকট এমন কোন লোক নাই যে তাহাকে কাবা মুখী করিয়া দিবে, নতুবা লোক থাকিলেও কাবামুখী করিলে রুগীর অনিষ্ট হইবে, অথবা কোন রোগহীন লোক কাবামুখী হইয়া নামাজ পড়িলে দোষমন বা জন্তু তাহার শরীরের বা মালের অনিষ্ট করিবে। তখন তাহারা যেইদিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়িতে পারে

সেই দিকে পড়িবে। কারণ তাহারা মাজুর। এইরূপ যেই ব্যক্তি সমুদ্রের মধ্যে লাকড়ির উপর থাকিলে, কাবার দিকে নামাজ পড়িলে ডুবিয়া খাওয়ার ভয় হয়, কাবার দিক সন্দেহ করিলে ও জিজ্ঞাসা করার লোক উপস্থিত থাকিলে জিজ্ঞাসা না করিয়া তাহাররী মতে নামাজ পড়িলে, কাবার দিকে পড়া গেলে দোরস্ত হইবে। নতুবা দোরস্ত হইবে না। ছ: ও রু: দি: ইত্যাদি। পাঠক স্মরণ রাখিবে অন্ধ ও তদ্রুপ। কোন ব্যক্তি রেলগাড়ীতে কাবা মুখী হইয়া নামাজ আরম্ভ করার পর কাবার দিক হইতে গাড়ী ফিরিয়া গেলে ঐ ব্যক্তি কাবার দিকে মুখ ফিরাইবে। নামাজের জন্য যেই রকম তাহাররী করা ওয়াজেব সেই রকম সজিদা তেলাওয়াত ও জানাজার নামাজের জন্য তাহাররী করা ওয়াজিব। রু: দি: ইত্যাদি। (৬) নিয়ত (মনন) করা ফরজ। র্মম্ম এই যে, মনে মনে নিয়ত করা। মুখে বলা র্কত্তব্যরে সামিল নহে। যেমন কোন ব্যক্তি জোহরের নামাজ পড়ার নিমিত্ত মনে মনে নিয়ত করিয়াছে। হঠাৎ তাহার মুখে আছরের নামাজের নিয়ত আসিল তাহাতে কোন দোষ হইবে না। কিন্তু মনের নিয়তের সঙ্গে মুখে বলা মোস্তাহাব। ছগিরী ও খোলাছতুল ফতোয়া গ্রন্থে ছয় শর্ত্ব এইরূপ ভাবে বর্ণিত আছে। (১) নামাজি ব্যক্তির অঙ্গ দুই প্রকার অপবিত্র দ্রব্য হইতে পবিত্র হওয়া। (২) নামাজের বস্ত্র পবিত্র হওয়া। (৩) অঙ্গ আবৃত করা। (৪) কাবামুখী হইয়া নামাজ পড়া। (৫) নিয়ত করা। (৬) ওয়াক্তানুযায়ী নামাজ পড়া। দো: মো: ও গা: আ: ও এইভাবে বর্ণিত আছে। ফরজ ও ওয়াজেব নামাজের নাম ও ওয়াক্তের নাম মুখে উচ্চারণ না করিলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। সুন্নতে মোআক্কাদাহ ও তারাবীর নামাজ ও তদ্রুপ যেমন আমি জোহরের চারি রকাআত ফরজ নামাজ পড়িতেছি। নুতবা আমি জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ

আমার জিম্মা হইতে জোহরের ফরজ ছাকেত হওয়ার জন্য পড়িতেছি অথবা জানাজার নামাজ পড়িতেছি। নামাজ খোদার জন্য ও দোয়া মৈয়তের জন্য, এইরূপ ঈদের নামাজের জন্য ও নাম লইতে হইবে। যেমন কোর্ব্বানের নামাজ হইলে এই রকম নিয়ত করিবে। আমি দুই রকাত ঈদজ্জোহার ওয়াজেব নামাজ ছয় তক্বীর সহ পড়িতেছি। রমজানের ঈদের নামাজ হইলে ঈদল ফেতর ইত্যাদি বলিতে হইবে। ফরজ নামাজ পড়িতেছি নিয়ত করিলে কিন্তু জোহর বা আছর কিম্বা মগরীব না বলিলে, নতুবা জোহর, আছর ইত্যাদি বলিলে ও ফরজ না বলিলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। সারমর্ম এই যে, যেই সময়রে ফরজ বা ওয়াজবে এবং সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ সইে সময়ের সঙ্গে ২ ফরজ, ওয়াজেব ও সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ বলিতে হইবে। ছ: রু: দি: ইত্যাদি। রকাতের সংখ্যার নিয়ত করা আবশ্যক নহে। কোন ব্যক্তি ফরজ নামাজ আরম্ভ করার পর মনে হইল যে ইহা নফল নামাজ তখন নফল নিয়ত করিয়া নামাজ সমাপ্ত করিলে সেই নামাজ ফরজ হইবে। যদি নফল নিয়তে তক্বীর তাহরীমা করিয়া পরে ফরজ নিয়ত করিলে ফরজ হইবে। নফল নিয়ত বাতেল হইয়া যাইবে। এক সঙ্গে দুই ফরজের নিয়ত করিলে এবং এক ফরজের ওয়াক্ত র্বত্তমান উপস্থিত থাকিলে দ্বিতীয় ফরজের ওয়াক্ত র্বত্তমান হয় নাই তখন উপস্থিত ওয়াক্তের ফরজ আদায় হইবে। যেমন জোহরের সময়ে জোহর ও আছর ফরজের নিয়ত করিলে জোহরের ফরজ আদায় হইবে। যদি দুই ওয়াক্তের ফরজের কজার নিয়ত একত্রে করে তবে প্রথম ওয়াক্তের কজা ফরজ আদায় হইবে যদিওবা ছাহেবে তরতীব না হয়। যদি কজা ও ওয়াক্তিয়া নামাজের একত্রে নিয়ত করে, সময় থাকিলে

কাজা আদায় হইবে পরে ওয়াক্তিয়া আদায় করা যাইবে। যেমন এক ব্যক্তির জোহরের নামাজ কাজা হইয়াছে, আছরের সময় জোহর ও আছর নিয়ত করিল সেই সময় আছরের ফরজ পড়ার ওয়াক্ত বাকী থাকিলে প্রথমে জোহরের কাজা আদায় হইবে, পরে আছরের ওয়াক্তিয়া আদায় করিতে হইবে।ঐ পরিমাণ সময় না থাকিলে আছরের ওয়াক্তিয়া আদায় হইবে।কারণ ঐ সময় ওয়াক্তিয়া নামাজের নিয়ত বলবান হইবে।উল্লিখিত এবারতে ইঙ্গিত হইতেছে যে, যেই মুছল্লির পঞ্চ ওয়াক্তের নামাজ কিম্বা তাহা হইতে কম সময়ের নামাজ বর্জ্জিত হয় সেই মুছল্লীর ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় হইবে। যেই মুছল্লীর পঞ্চ ওয়াক্তের অধিক নামাজ বর্জ্জিত হয় ওয়াক্ত বৃহৎ হইলে সেই মুছল্লীর ঐ নিয়তে কোন নামাজ দোরস্ত না হওয়া উচিত। কারণ উহাতে হুজুম হইবে। এমাম সাহেব এমামতির নিয়ত করা আবশ্যক নহে। কোন ব্যক্তি একাকী নামাজ পড়া আরম্ভ করিলে পরে আর এক ব্যক্তি আসিয়া তাহার পিছনে এক্তেদা করিলে দোরস্ত হইবে। কিন্তু রমণীগণ এমামের পিছনে এক্তেদা করিলে এমামতির নিয়ত ভিন্ন উহাদের এক্তেদা দোরস্ত হইবে না। মুক্তদির জন্য এক্তেদার নিয়ত ও নামাজের নিয়ত করা আবশ্যক।ছ:ওস:বে:১মখণ্ড ইত্যাদি।সকল এমামগণের নিকট এইরূপ নিয়ত করিলে সিদ্ধ হইবে।আমি অদ্য ফজরের ফরজ নামাজের নিয়ত করিলাম, আমি কাবামুখী হইলাম, আল্লাহো আক্বর। এইরূপ যেই সময় যেই নামাজ হয় তাহার নিয়ত করিবে। নিয়ত তক্বীর তাহরীমের পরে হইলে সিদ্ধ হইবে না। যে কোন ব্যি বর্জ্জিত নামাজের তারিখ এবং কতদিন কত রকাত তাঁহা নির্দ্দিষ্ট করিতে না পারিলে, এইরূপ ভাবে নিয়ত করিবে। আমি নিয়ত করিলাম যে, আমার জিম্মে প্রথম ফজরের যেই ফরজ কাজা আছে তাহা পড়িতেছি। এইরূপ যেই ওয়াক্তের ফরজ পড়িবে

তাহার নাম লইবে ও প্রথম জোহরের ফরজ কিম্বা প্রথম আছরের ফরজ ইত্যাদি ২ ওয়াক্তের নিয়ত করিয়া কাজা নামাজ আদায় করিবে। এইরূপে বেতেরের ও কাজা পড়িতে হইবে। যেই সময় অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে আমি সমস্ত বর্জ্জিত নামাজ আদায় করিয়াছি ও আমার জিম্মায় আর কোন বর্জ্জিত নামাজ নাই তখন আর না পড়িবে। এক ব্যক্তি নামাজ পড়িতেছে কিন্তু ফরজ ও ছুন্নত কাহাকে বলে সে তাহা জানে না। সেই ব্যক্তির নামাজ সিদ্ধ হইবে না। কারণ তাহার নিয়ত সিদ্ধ হয় নাই। এক ব্যক্তি র্নিদ্দষ্টি এমাম অর্থাৎ মৌং আহমদ ছাহেবের পিছনে এক্তেদা করিল বলিয়া নিয়ত করিল কিন্তু উহা মৌং আহমদ নহে, আবদুল ছমদ, তাহার এক্তেদা দোরস্ত হইবে না। এবং নামাজও অসিদ্ধ হইবে। কোন ব্যক্তি একাকী নামাজ পড়ার সময় অন্য ব্যক্তি পরে আসিয়া তাহার পশ্চাতে এক্তেদা করিলে তাহার নামাজ সিদ্ধ হইব।ে এক এমাম জানাজার নামাজ মৃত ব্যক্তি পুরুষ মনে করিয়া পড়ার পর জানিতে পারিল যে, মৃত ব্যক্তি পুরুষ নহে, স্ত্রীলোক হন। সেই নামাজ সিদ্ধ হইবে না। কারণ তাহার নিয়ত সিদ্ধ হয় নাই। বেতেরের নামাজের নিয়ত এইরূপ করিতে হইবে, আমি বেতেরের তিন রকাত ওয়াজেব নামাজের নিয়ত করিলাম আমার মুখ কাবার দিকে, আল্লাহো আকরব। দুই ঈদের নামাজের নিয়ত এইরূপে করিবে। আমি দুই রাকাৎ ঈদুল ফেতরের ওয়াজেব নামাজরে নযি়ত করলিাম, এই এমামরে পশ্চাতে এক্তেদা করিলাম। আমার মুখ কাবার দিকে। আল্লাহো আকবর। কোর্ব্বানের ঈদের নামাজ হইলে ঈদুল ফেত্র না বলিয়া ঈদুজ্জোহা বলিতে হইবে। রু: দি: আ: গি: ১ম খণ্ড, গা: আ: ১ম খণ্ড ইত্যাদি। যেই সমস্ত নামাজ এমামের পশ্চাতে পড়া যাইবে অর্থাৎ জমাতের সহিত পড়া যাইবে তাহাতে এক্তেদার নিয়ত করা স্বর্ত বটে।

     নামাজের ছেফাতের বিবরণ

নামাজের আহকাম আরকান তের প্রকার। তন্মধ্যে ছয় প্রকার বলা হইয়াছে। বাকী সাত প্রকার এই: (১) দাঁড়াইয়া তক্বীর তাহরিমা (আল্লাহো আকবর) বলা। (২) দাঁড় করন অর্থাৎ ফরজ, ওয়াজেব দাঁড়াইয়া পড়া। (৩) নামাজে পবিত্র কোরান শরীফ পাঠ করা। (৪) রুকু দেওয়া। (৫) সেজদা করা। (৬) শেষ বৈঠকে বসা আত্তাহিয়াত পরিমাণ। (৭) কোন কর্ম্ম দ্বারা নামাজ হইতে বাহির হওয়া। নামাজের প্রথম ফরজ তকবীর তাহরিমা। তাহরিমা শব্দের অর্থ হারাম করিয়া দেওয়া। ইতি র্পূব্বে যাহা কর্ম্ম করা মোবাহ ছিল, যেমন খাওয়া ও পান করা ইত্যাদি তাহরিমার পর সমস্ত হারাম হইয়া যাইবে। যেই শব্দের দ্বারা খোদার তাজিম বুঝায় তাহরিমার সময় সেই শব্দ ব্যবহার করিতে পারিবে। যেমন اَللهُ اَكْبَرُ নতুবা اَللهُ اَجَلُّ অথবা اَللهُ اَعْظَمُ নতুবা سُبْحَانَ اللهِ وَالرَّحْمٰنُ ইত্যাদি। যেই শব্দের দ্বারা দোয়া ও প্রশ্ন বুঝায় তদ্ধারা নামাজ আরম্ভ করা দোরস্ত নহে। اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِىْ নতুবা اَسْتَغْفِرُ اللهَ যদি এমামকে কোন ব্যক্তি রুকুতে প্রাপ্ত হয় তখন ঝুকিয়া তকবির তাহরীমা বলিয়া এমামের সঙ্গে ভুক্ত হইলে তাহার নামাজ সিদ্ধ হইবে না। কেননা তকবীর তাহরীমা দাঁড়াইয়া বলা ফরজ। যদি র্পূব্বে ঐ ব্যক্তি সমাপ্ত করে নামাজ সিদ্ধ হইবে না। যদি মোক্তাদি আল্লাহো শব্দ এমামের সঙ্গে বা পরে বলে, কিন্তু এমাম আকবর শব্দের ر (রে) অক্ষর সমাপ্ত করার র্পূব্বে মোক্তাদি ر(র)ে অক্ষরকে উচ্চারণ করিয়া সমাপ্ত করিলে সেই মোক্তাদির নামাজ দোরস্ত হইবে না। সেইরূপ এমামকে কোন ব্যক্তি রুকুতে প্রাপ্ত হইয়া দাঁড়ান অবস্থায় আল্লাহো

শব্দ বলিয়া ‘আকবর’ শব্দ রুকুতে যাইয়া সমাপ্ত করিলে তাহার নামাজও দোরস্ত হইবে না। হাঁ যদি এমামের তকবিরের পর ঐব্যক্তি দ্বিতীয় তকবীর বলিয়া নিয়ত করিলে তাহার নামাজ দোরস্ত হইবে। এমাম আবু হানিফা (র:) বলেন, এমামের সঙ্গে ২ তকবীর বলা আফজল বা উত্তম। এবং এমাম মোহাম্মদ (র:) আবু ইউছুপ (র:) বলেন, এমামের পরে নিয়ত বলা উচিত। এমামের সঙ্গে বা র্পূব্বে নতুবা পরে কোন মোক্তাদি নিয়ত করার সন্দেহ করিলে তবে জন্নে গালেব অর্থাৎ অন্তরের টান যেই দিকে বেশী তাহা ধরিবে। কিন্তু দ্বিতীয় তকবীর বলিয়া নিয়ত করা সব চেয়ে আফজল। ছ: ইত্যাদি। আল্লাহু আকবর, এই আক্বর শব্দের ‘বে’ ও ‘রে’ অক্ষরের মধ্য ভাগে ‘আলেফ’ অক্ষর দীর্ঘ করিয়া اَكْبَار (আকবর) বলিলে নামাজ সিদ্ধ হইবে না। কারণ ইহা শয়তানের নাম। কেবলমাত্র আল্লাহু বলিলেও আকবর না বলিলে নতুবা আক্বর বলিয়া আল্লাহো না বলিয়া নিয়ত করিলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। নিয়ত ও তকবীর তাহরিমার দ্বারা নামাজ সিদ্ধ হইবে। নিয়ত ছাড়া তকবীর তাহরিমা দ্বারা নতুবা তকবীর তাহরিমা ছাড়া নিয়ত দ্বারা নামাজ আরম্ভ করিলে নামাজ সিদ্ধ হইবে না। দাড়াইয়া নামাজ নামাজ পড়িতে পারিলে বসিয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। কারণ ফরজ নামাজ দাঁড়াইয়া পড়া ফরজ। নফল নামাজ দাঁড়াইয়া পড়া ফরজ নহে। বসিয়া পড়িলে সিদ্ধ হইবে। কিন্তু দাঁড়াইয়া পড়িলে ছোয়াব বেশী হইবে। বেতেরের নামাজও দাঁড়াইয়া পড়া ফরজ। এইরূপ ভাবে দাঁড়াইতে হইবে যেন দাঁড়াইয়া দুই হস্ত লম্বা করিয়া দিলে দোন হাঁটু ধরিতে না পারে। ওজর ভিন্ন এক পায়ে দাঁড়াইয়া। নামাজ পড়িলে মক্রুহ হইবে। নামাজ দোরস্ত হইবে। ওজর হইলে মক্রুহ হইবে না। দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে যদি ক্ষতি হয় তখন বসিয়া পড়া দোরস্ত আছে।

যেমন পীড়িত ব্যক্তি দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে পীড়া বৃদ্ধি পাইবে, নতুবা ঘা হইতে রক্ত, পুঁজ নির্গত হইলে তখন বসিয়া নামাজ পড়িবে। দাঁড়াইয়া নামাজ পড়াতে দরদ ছাড়া কোন প্রকার কষ্ট অনুভব করা হইলে, না দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে সিদ্ধহইবে না। লাঠির উপর ভার দিয়া নতুবা খাদেমের (চাকর) উপর ভার দিয়া পড়িতে পারিলে দাঁড়াইয়া পড়া আবশ্যক। ইহা এমন হালওয়াবি সাহেবের ফতোয়া। কিঞ্চিৎ পরিমাণ দাঁড়াইতে পারিলে, যেমন তকবীর তাহরিমা দাঁড়াইয়া বলিতে পারে আর কিছুই পারে না, তবে দাঁড়াইয়া তকবীর তাহরিমা বলা আবশ্যক। পরে বসিয়া যাইবে। রুকু, সজিদা বসিয়া আদায় করিতে না পারিলে মস্তকের ইসারা দ্বারা আদায় করিবে। সজিদা রুকু হইতে নীচুকরিয়া করিতে হইবে। সজিদার জন্য কোন বস্তু সামনে রাখিয়া উহার উপর সজিদা না করিবে। যেমন বালিশ ইত্যাদি। ইহা যেই সময় জমির উপর সজিদা করিতে সক্ষম হয়। যদি জমির উপর সজিদা করিতে সক্ষম না হয়, তবে সামনে কোন বস্তু রাখিয়া তাহার উপর সজিদা করিবে, যেন রুকু অপেক্ষা সজিদাতে মস্তক নীচু হয়। তবে নামাজ দোরস্ত হইবে। বসিয়া নামাজ পড়িতে সক্ষম না হইলে পৃষ্ঠের উপর চিত্ হইয়া মস্তক র্পূব্ব দিক ও পা দুইটি কাবার দিক্ করিয়া নামাজ পড়িবে। এবং রুকু সজিদা মস্তক দ্বারা ইসারা করিয়া পড়িবে। যদি বসিয়া ঠেস্ লাগাইয়া নামাজ পড়িতে পারা যায় তবে চিত্ হইয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে না। পৃষ্ঠের উপর শুইয়া রুকু ও সজিদা মস্তকের দ্বারা এসারা করিয়া পড়িতে অক্ষম হইলে নামাজ সেই সময় না পড়িয়া সক্ষম অবস্থাতে পৌঁছিলে তখন পড়িবে। ইহা এক রেওয়ায়তে বলে। নামাজ জ্ঞাত অবস্থায় ছাড়িতে পারিবে না। দ্বিতীয় রেওয়ায়তে বলে, ঐ অবস্থায় জ্ঞান থাকিলেও এক দিবা রাত্রি হইতে অধিক সময় অক্ষম অবস্থায়

থাকিলে নামাজ না পড়িবে। এবং চক্ষু, অন্তর ও ভ্রু দ্বারা এসারা করিয়া নামাজ পড়িতে পারিবে না। যখন মস্তক দ্বারা এসারা করিয়া নামাজ পড়ায় সক্ষম হয় তখন দেখিতে হইবে যে পীড়িত অবস্থায় নামাজ মস্তকের দ্বারা এসারা করিয়া পড়ার জ্ঞান তাহার ছিল কিনা? যদি জ্ঞান থাকে তখন বর্জ্জিত নামাজ প্রথম রেওয়ায়ত মতে কাজা দেওয়া আবশ্যক হইবে। নতুবা হইবে না। ছং, গা: আ: ১ম খণ্ড ও রু: দি: ইত্যাদি। পীড়িত ব্যক্তি দাঁড়াইতে পারে কিন্তু রুকু ও সজিদা করিতে পারে না তবে হানফি মজহাব মতে বসিয়া নামাজ পড়িবে ও ইঙ্গিত করিয়া রুকু সজিদা করিবে। এইরূপ নামাজ পড়া আফ্জল। জখিরা কিতাবে বর্ণিত আছে যে, যদি দাঁড়াইতে পারে ও রুকু করিতে পারে কিন্তু সজিদা করিতে পারে না তখন তাহার উপর দাঁড়ান আবশ্যক নহে। বসিয়া এসারা করিয়া নামাজ পড়িবে। কোন ব্যক্তির কণ্ঠে ঘা হইলে রুকু ও সজিদা করিবার সময় ঐ ঘা হইতে রক্ত ও পুঁজ নির্গত হইলে, বসিয়া এসারা করিয়া নামাজ পড়িবে। একজন অতি বৃদ্ধ দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে ফোটা ২ প্রস্রাব নির্গত হয় বসিয়া নামাজ পড়িলে হয় না, তবে বসিয়া রুকু ও সজিদা করিয়া নামাজ পড়িবে। যদি সজিদা করিলে প্রস্রাব ও বায়ু নির্গত হয় বসিয়া এসারা করিয়া নামাজ পড়িবে। যদি বসিয়া নামাজ পড়িলে প্রস্রাব নির্গত হয় চীৎ হইয়া শুইয়া পড়িলে হয় না তবে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িবে ও রুকু সজিদা করিবে। অজ্ঞান অবস্থায় এক দিবারাত্রি হইতে কিছু অধিক সময়ের নামাজ বর্জ্জিত করা হইলে তাহার কাজা দিতে হইবে না। পীড়িত ব্যক্তি মস্তকের এসারা দ্বারা নামাজ পড়িলে, যদি এক দিবারাত্রির অধিক সময়ের নামাজ জ্ঞানহীন হইয়া বর্জ্জিত হয় কাজা দিতে হইবে না। নতুবা কাজা দিতে হইবে। এমাম আবু হানিফা (র:) বলেন, এক দিবারাত্রি হইতে এক ঘণ্টা বেশী হলেও কাজা দিতে হইবে না।

বঞ্জ (গাঁজা) খাইয়া এক দিবারাত্রির অধিক কাল নামাজ অজ্ঞান হইয়া বর্জ্জিত করিলে কাজা দেওয়া আবশ্যক হইবে।কোন স্ত্রীলোকের প্রসব কালে ছেলের মস্তক বাহির হইয়াছে এবং ঐ সময় নামাজের ওয়াক্ত গত হইয়া যাওয়ার ভয় হইলে,অজু করতিে পারিলে অজু করিবে নতুবা তৈয়ম্মুম করিবে ও ছেলের মস্তককে একটি ডেক্সিতে বা পাত্রে বা একটি ছোট গর্ত্তে রাখিয়া বসিয়া নামাজ পড়বিে ও রুকু সজদিা করবি।েরুকু সজদিা করতিে না পারলিে এসারা করিয়া রুকু সজিদা করিবে।নামাজ ছাড়িতে পারিবে না।কারণ যতক্ষণ র্পয্যন্ত ছেলের অধিকাংশ হেচ্ছা বাহির না হইবে নেফাছ ওয়ালী হইয়াছে বলিয়া বলিতে পারিবে না।ঐ সময় যেই রক্ত বা পানি দেখা যাইবে তাহা বিমারী বলিয়া ধরিতে হইবে। অধিকাংশ বাহির হওয়ার পর রক্ত ইত্যাদি দেখিতে পাইলে নেফাছের রক্ত বলিয়া মনে করিবে এবং সেই সময় নামাজ পড়িবে না। কোন ব্যক্তির দুই হস্ত সল(শুষ্ক) হইয়া গেলে এবং তাহার সঙ্গে এমন কেহ নাই যে তাহাকে অজু তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে, তখন ঐ ব্যক্তি তৈয়ম্মুমের মননে চেহেরা ও হস্তদ্বয় দেওয়ালের উপর মোছেহ করিয়া নামাজ পড়িবে। নামাজ ছাড়িতে ও গৌণ করিয়াও পড়িতে পারিবে না।পাঠক স্মরণ রাখিবে,অজ্ঞান অবস্থা ভিন্ন অন্য কোন ওজরে নামাজ ছাড়িয়া দেওয়া দূরে থাকুক গৌণ করিয়াও পড়িতে পারিবে না। অনাবশ্যক ফজরের সুন্নত বসিয়া পড়িলে দোরস্ত হইবে না।কোন ব্যক্তি মসজিদে হাঁটিয়া গেলে ফরজ নামাজ দাঁড়াইয়া পড়িতে পারে না কিন্তু ঘরে ফরজ নামাজ দাঁড়াইয়া পড়িতে পারে তবে মসজিদে না গিয়া ঘরে দাঁড়াইয়া ফরজ নামাজ পড়িবে। মসজিদে যাইতে হইবে না। কারণ ফরজ নামাজ দাঁড়াইয়া পড়া ফরজ।ছ:রু:দি: ও দো:মো: ইত্যাদি। (৩)তৃতীয় ফরজ কোরান পাঠ করা। কোরানের অক্ষরকে শুদ্ধ করিয়া এমন ভাবে

পড়িবে যে,যেন নিজে শুনিতে পারে।যদি অক্ষর শুদ্ধ করিয়া পড়িলেও নিজে না শুনিলে,এমাম হিন্দওয়ালী ও ফজলী সাহেব (রা:)বলেন,তাহা কেরাত হইবে না।এমাম কুরকী(র:)বলেন,অক্ষর শুদ্ধ করিয়া পড়িলে এবং নিজে না শুনিলেও দোরস্ত হইবে।এমাম সমশুল আইম্মা হানওয়ালী(র:)বলেন,নিজের দুই কর্ণে না শুনিলে এবং পার্শ্বস্থ দুই ব্যক্তি না শুনিলে দোরস্ত হইবে না।ইহাই সব চেয়ে শুদ্ধ বলিয়া ফকিহগণ বলিয়াছেন।কোরআন পাঠ করা নফল,ফরজ,ওয়াজেব ও সুন্নত নামাজের প্রত্যেক রকাতে ফরজ।কিন্তু ফরজ নামাজ দুই রকাত ওয়ালা হউক বা চারি রকাত ওয়ালা হউক নতুবা তিন রকাত ওয়ালা হউক দুই রকাতে কোরান পাঠ করা ফরজ ও ওয়াজেব নামাজে তিন রকাতে কোরান পাঠ করা ফরজ।যেমন বেতের।এমাম আবু হানিফা (র:) হইতে হাছন সাহেব রেওয়াত করিয়াছেন,ফরজ নামাজের শেষ দুই রকাতে ছুরা ফাতেহা পাঠ করা ওয়াজেব।ভুলিয়া না পড়িলে ছোহ্ সজিদা ওয়াজবে হইবে।চতুর্থ ফরজ রুকু করা।রুকুত শব্দের অর্থ পৃষ্ঠ ঝুকান।নামাজে এমন ভাবে ঝুকিবে যেন পৃষ্ঠ দেশে থালে পানি রাখা যায়।এবং বসিয়া রুকু করিলে ঐরূপ করিবে যেন ললাট জজ¥ার নিকটর্বত্তী হয়।কোন ব্যক্তি কুজ (গুঁজা),পৃষ্ঠ এমনভাবে ঝুকিয়াছে যে দেখিতে রুকু কারীর মত দেখায় ঐ ব্যক্তি রুকু করিবার সময় মস্তককে র্পূব্ব হইতে নীচু করিবে এবং মস্তকের দ্বারা এসারা করিতে হইবে।পঞ্চম ফরজ সজিদা সজিদা অর্থ ললাটকে জমির উপর রাখা।সজিদাতে ললাট ও নাসিকাকে জমির সঙ্গে লাগাইবে।নাসিকা ভিন্ন কেবল মাত্র ললাটের দ্বারা সজিদা করিলে ও দোরস্ত হইবে কিন্তু ওজর ব্যতীত মক্রুহ তন্জিহি হইবে।ললাট ছাড়া নাসিকা দ্বারা ওজর ব্যতীত সজিদা করিলে এমাম আবু হানিফা (র:) মক্রুহ হইবে বলিয়া বলিয়াছেন।ইমাম আবু ইউছুপ ও ইমাম

মুহাম্মদ (র:) বলেন, ললাটে কোন ওজর না থাকিলে নাসিকার দ্বারা সজিদা করিলে দোরস্ত হইবে না। সপ্ত অঙ্গের দ্বারা সজিদা করা ছুন্নত। দুই পা, দুই হস্ত এবং দুই হাঁটু ও ললাট, নাসিকা ললাটে গণ্য করা হইয়াছে। সজিদার স্থান দুই কদমের স্থান হইতে বার আঙ্গুলী পরিমান উঁচু হইলে সজিদা করা দোরস্ত হইবে। অধিক উঁচু হইলে ওজর ব্যতীত দোরন্ত হইবে না। পাগড়ীর পঁেচ যদি পাক বস্তুর উপর রাখিয়া উহার উপর সজিদা করিলে দোরস্ত হইবে। গরমের দরুণ নতুবা র্সদ্দি বা মৃত্তিকার গতিকে কোন পাক বস্তুর উপর গুদড়ি বিছাইয়া নামাজ পড়িলে দোরস্ত হইবে। শুষ্ক ঘাসের উপর বা তাজা ঘাসের উপর সজিদা করিলে, ললাট নিম্নদিকে না গেলে সজিদা দোরস্ত হইবে নতুবা হইবে না। জমির উপর দুই হাঁটু না রাখিলে নামাজ দোরস্ত হইবে। ছ: ইত্যাদি। ষষ্ঠ ফরজ আখেরী বৈঠক। আত্তাহিয়াত পড়িতে যতক্ষণ সময়ের আবশ্যক হয় ততক্ষণ বসা ফরজ! সপ্তম ফরজ। কোন কর্ম্ম দ্বারা নামাজ হইতে বাহির হওয়া। ইহা ইমাম আবু হানিফা (র:) বলেন: কিন্তু আচ্ছালামু আলাইকুম অরাহমতুল্লাহ্ বলিয়া নামাজ হইতে বাহির হওয়া ওয়াজেব। ছ: রু: দি: ইত্যাদি।

নামাজের ওয়াজেবের বিবরণ

নামাজের মধ্যে চৌদ্দ ওয়াজেব। (১) আলহামদু পড়া। ইমাম আবু হানিফা (র:) বলেন, সম্পূর্ণ ফাতেহা ওয়াজেব। মজ্তবা গ্রন্থে বর্ণিত আছে, এক আয়েত ছাড়িয়া দিলে ছোহ সজিদা করা আওলা বা উত্তম। (২) দুই রকাতে আলহামদুর সঙ্গে ছোট ছুরা অথবা তিন আয়ত পড়া যেমন ছুরা কওছর পড়া ইত্যাদি। ছোট তিন আয়ত হইতে কম হইলে মকরুহ তাহরিমা হইবে। (৩) ফরজ নামাজে প্রথম দুই রকাতে আলহামদুর সঙ্গে ছুরা মিলান। পরের দুই রকাতে

ছুরা মিলাইলে মক্রুহ তনজিহি হইবে।(৪)নফল নামাজের সমস্ত রকাতে ছুরা মিলাইয়া পড়া।কারণ নফল প্রত্যেক দুই রকাত জুদা ২ নামাজ জানিতে হইবে।যদি কোন নামাজি চারি রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করিয়া দুই রকাত পড়ার পর তৃতীয় রকাত কিম্বা চুতর্থ রকাত ভঙ্গ হইয়া গেলে শেষের দুই রকাত কাজা দেওয়া ওয়াজেব হইব।ে ৫।প্রথম দুই রকাত ফরজ নামাজে ছুরা পড়া ৬।সকল ছুরার র্পূব্বে আল্হামদু পড়া। আল্হামদু পড়ার র্পূব্ব অন্য ছুরা হইতে এই পরিমান পড়িলে যে এক রোকন (তিনবার ছোবহানাল্লাহ্ বলা) আদায় করিতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ গৌণ হইলে ছোহ সজিদা ওয়াজেব হইবে। (৭)এইরূপ ২। ৩ ও চারি রকাত ওয়ালী ফরজ নামাজের প্রথম দুই রকাত হইতে এক রকাতে আল্হামদু দুইবার পড়িলে ছোহ সজিদা ওয়াজেব হইবে না। (৮)নামাজের ধারার প্রতি দৃষ্টি রাখা অর্থাৎ প্রথমত: আল্হামদু তৎপর অন্য ছুরা পড়িতে হইবে তারপর রুকু,সজিদা এবং দ্বিতীয় সজিদা দিতে হইবে।ইহাকে ধারাবাহিক বলে।এক সজিদা প্রথম রকাতে ভুলিয়া না করিলে সালাম ফিরাইবার র্পূব্বে কাজা করিয়া দিবে।পরে আত্তাহিয়াতু, আবদুহু ও রছুলুহ র্পয্যন্ত পড়িয়া ছোহ সজিদা করিবে।অনন্তর আত্তাহিয়াতু,দরূদ এবং দোয়া পাঠ করিয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।যদি সালাম ফিরাইবার পর কথাবাত্তার র্পূব্বে হঠাৎ স্মরণ হয় তৎক্ষণাৎ সজিদা করিয়া আত্তাহিয়াত আবদুহু ও রছুলুহু র্পয্যন্ত পড়িয়া ছোহ সজিদা দিয়া পরে আত্তাহিয়াতু, দরূদ ও দোয়া পড়িয়া সালাম ফিরাইবে। (৯)রুকু দিয়া মস্তক উঠাইয়া এক তসবীহ পরিমাণ গৌণ করিয়া প্রথম সজিদা দেওয়ার পর এক তসবীহ পরিমাণ গৌণ করিয়া দ্বিতীয় সজিদা দেওয়া। (১০)প্রথম বৈঠক করা,নফল বা ফরজ হউক। (১১)প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া। (১২)বেতেরের নামাজে

দোয়া কুনুত পড়া। (১৩) ইমামের পক্ষে যে যে নামাজে ছুরা বড় করিয়া দরকার তাহা পাঠ করা। (১৪) যে যে নামাজে চুপে চুপে পড়া দরকার তাহা পাঠ করা। (১৫) সালাম করিয়া নামাজ সমাপ্ত করা, কিন্তু বাজ কিতাবে আরও বেশী বর্ণিত আছে। যেমন দোয়া কুনুতের জন্য তক্বীর বলা। (১৬) দুই ঈদের নামাজের তক্বীর বলা। (১৭) মোক্তাদি ইমামের পশ্চাতে নীরব থাকা। (১৮) নামাজের মধ্যে কোন ওয়াজেব ছুটিয়া গেলে ছোহ সজিদা দেওয়া। (১৯) মোক্তাদি ইমামের তাবেদারী করা। (২০) তেলাওতের সজিদা দেওয়া। (২১) প্রথম বৈঠকে আবদুহু ও রছুলুহ হইতে অধিক না পড়া। (২২) ফরজ দুই রকাতের মধ্যে এক রকাত পড়িয়া না বসা। (২৩) জোহরের তিন রকাত পড়িয়া না বসা। (২৪) আইয়্যামে তশরিকের তকবীর বলা ইত্যাদি। দো: মো:, গা: আ: ১ম খণ্ড ও ছ: ইত্যাদি। যেই নামাজ মকরুহ তাহরিমা সমেত পড়া হয় ঐ নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজেব। ভ্রম ক্রমে ওয়াজেব পরিত্যাগ করিলে ছোহ সজিদা করিলে ঐ নামাজ দোরস্ত হইবে জ্ঞাত সারে ওয়াজবে তরক করলিে ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে। স্বামী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

নামাজের ছুন্নতের বিবরণ

(১)তক্বীর তাহরিমা বলার সময় কর্ণ র্পয্যন্ত দুই হস্ত উঠাইয়া বৃদ্ধাঙ্গুলীর দ্বারা কর্ণ স্পর্শ করা। (২) দুই হস্তের আঙ্গুলী ফাঁক রাখা। (৩) ইমাম শব্দ করিয়া তক্বীর বলা। (৪) মেয়েলোকগণ স্কন্ধ র্পয্যন্ত দোন হাত উত্তোলন করা। ইমাম যদি তক্বীর তাহরীমা বলিবার সময় কেবল মোক্তাদিগণকে খবরদারি করিবার মানসে তক্বীর বলে, ইমাম মোক্তাদি কাহারও নামাজ দোরস্ত হইবে না। এইরূপ যেই ব্যক্তি মোকাব্বের হইবে তিনিও কেবলমাত্র মোক্তাদি-

গণকে খবরদারি করার জন্য নিয়ত করে কাহারও নামাজ সিদ্ধ হইবে না। মোকাব্বের বলে, যেই ব্যক্তি ইমামের আল্লাহো আকবর শব্দের আওয়াজ মোক্তাদিগণকে শুনাইয়া দেয়। সারর্মম্ম এই য, ইমাম ও মোকাব্বের উভয়ে নিয়ত করিবে যে, আমি আমার নামাজের জন্য ও মোক্তাদিগণকে খবরদারি করিবার জন্য তক্বীর তাহ্রিমা করিলাম। (৫) তাহরিমার পর ছোবহানাকা নীরবে পড়া। (৬)ছোবহানাকা পড়ার পর আউজো বল্লিাহ পড়া (৭) বিছমিল্লাহ ও চুপে ২ পড়া। (৮) নাভির নিম্নে বাম হস্ত বিছাইয়া তদুপরি দক্ষিণ হস্ত রাখা। (৯) ফরজ নামাজের শেষের দুই রকাতে কেবল মাত্র আল্হামদো পড়া। (১০) আল্হামদো পড়ার পর চুপে আমিন বলা। (১১) ছুন্নত পরিমাণ কোরান পাঠ করা। (১২) রুকু করিবার সময় তক্বীর বলা ও সজিদা দিতেও তক্বীর বলা ছুন্নত। (১৩) রুকুতে ছোবহানা রব্বিয়াল আজীম তিনবার বলা। (১৪) রুকুতে দুই হস্তের আঙ্গুলি বিস্তার করিয়া হাঁটু ধরা। (১৫) ইমাম প্রতি খাড়া হওয়ার সময় ছমিআল্লাহোলিমন হামিদা বলা ও মোক্তাদি প্রতি কওমার মধ্যে রব্বনা লাকাল হাম্দ বলা এবং একাকী নামাজ পড়িলে দোন তছবীহ বলিতে হইবে। (১৬) সজিদাতে দুই হস্ত ও হাঁটু রাখিয়া ললাট দ্বারা সজিদা করা। (১৭) প্রত্যেক সজিদাতে ছোবহানা রব্বিয়াল আলা তিনবার বলা। (১৮) বসিয়া আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় দক্ষিণ পা খাড়া রাখা ঐ বসাতে বাম পা নামাইয়া তদুপরি বসা। (১৯) প্রত্যেক বৈঠকে ও আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় রানের উপর দুই হাত রাখা। (২০) আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় আসহাদু আন লা এলাহা পড়িয়া তর্জ্জনী আঙ্গুলীর মাথা উঁচু করিবে। ইল্লাল্লাহর সময় আঙ্গুলীর মাথা নিচু করিবে। (২১) শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়ার পর দরুদ পড়া। (২২) দরুদের পর দোওয়া পাঠ করা। (২৩) প্রথমে

ডান দিকে সালাম করা ও পরে বাম দিকে সালাম করা। ইমাম হইলে উচ্চ:স্বরে প্রথমে দক্ষিণ দিকে পরে বাম দিকে তদপেক্ষা কিছু চুপে বলা। (২৪) ইমাম মোক্তাদি ও দূতগণের প্রতি সালাম প্রেরিত হওয়ার নিয়ত করা। মোক্তাদিগণ ইমামের দক্ষিণ দিকের ও বাম দিকের দূতগণের প্রতি ও মোক্তাদিগণের প্রতি নিয়ত করিবে। (২৬) আচ্ছালামু আলাইয়কুম অরাহমাতুল্লাহে বলা। আরও অন্যান্য কিতাবে অধিক ছুন্নত লিখিয়াছে। যেমন (২৭) সেজদাতে হস্তের ও পদাঙ্গুলী সকল কাবাভিমুখী করা। (২৮) রুকুতে দুই বাহু বগল হইতে পৃথক রাখা। (২৯) মেয়েলোকের দুই পা দক্ষিণ দিকে বাহির করিয়া রাখা। (৩০) মেয়েলোকের নিতম্বের (চুতড়ের) উপর বসা। (৩১) নামাজের শেষে মোনাজাত করা। (৩২) মোনাজাতে দুই বাহু উদর হইতে পৃথক করিয়া দুই স্কন্ধ র্পয্যন্ত উঁচু করা। (৩৩) একাকী নামাজ পড়িলে সালাম ফিরাইবার সময় ফেরেশতাগণের নিয়ত করিবে। (৩৪) ইমাম মোনাজাত করিবে ও মোক্তাদিগণ আমিন ২ বলিবে। ভ্রমক্রমে সুন্নত বর্জ্জিত হইলে ছোহ সজিদা দিতে হইবে না। জ্ঞাতসারে ছুন্নত পরিত্যাগ করিলে মক্রুহ তনজিহি হইয়া পাতকী হইবে। রু: দি: ছ:, দো: মো:, গা: আ: ইত্যাদি। তাহরিমা নাভির নিম্নে পরিবে বাম হস্তের পৃষ্টের উপর দক্ষিণ হস্তের বক্ষ রাখিয়া দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠাঙ্গুলীর দ্বারা বাম হস্তের কব্জী ধৃত করিবে এবং অবশিষ্ট তিন আঙ্গুলী সরল ভাবে বাম হস্তের উপর দিয়া বিছাইয়া দিবে।

নামাজের মস্তাহাবের বিবরণ

(১)মুছল্লি দাঁড়াইয়া নামাজ পড়ার সময় সজিদার স্থানে দৃষ্টি রাখা। (২) রুকু দেওয়ার সময় দুই পায়ের পৃষ্ঠে উপর দৃষ্টি রাখা। (৩) সজিদাতে নাসিকার উপর দৃষ্টি রাখা। (৪) আত্তাহিয়াত পড়ার

সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা। (৫) দক্ষিণ দিকে সালামের সময় দক্ষিণ স্কন্ধ ও পৃষ্ঠ দৃষ্টি করা। বাম দিকে সালামের সময় বাম স্কন্ধ ও পৃষ্ঠ দৃষ্টি করা। (৬) নামাজের সময় হাই আসিলে তাহা বন্ধ করা। (৭) নামাজে খাড়া হওয়ার সময় দুই পায়ের মধ্যে চারি আ্গুলী পরিমাণ ফাঁক রাখা। (৮) রুকুতে মস্তকটি এমনভাবে রাখিতে হইবে যেন পৃষ্ঠে পানি ঢালিয়া দিলে দুই দিকেই সমান ভাবে প্রবাহিত হইতে পারে। (৯) নামাজে কাঁশী আসিলে তাহা বন্ধ করা। (১০) হাঁচি আসিলে বন্ধ করা। (১১) নামাজে খেলা দোলা না করিয়া ঠিক থাকা। (১২) প্রথম রকাতে বড় ছুরা ও দ্বিতীয় রকাতে ছোট ছুরা পাঠ করা। (১৩) দুই হস্তের মধ্যে যেই স্থানে ফাঁক আছে তাহাতে সজিদা করা। (১৪) দুই হস্ত কর্ণের সোজা রাখা। (১৫) নামাজের নিয়ত মুখে বলা। (১৬) পুরুষ তকবীর তাহরিমা বলার সময় কোর্ত্তার আস্তিন হইতে হস্তদ্বয় বাহির করা। (১৭) রুকু ও সজিদাতে তছবিহ তিন বার হইতে অধিক বলা। (১৮) মোয়াজ্জেন হাইয়াআলাল ফালাহ বলিলে এমাম ও মোক্তাদিগণ নামাজ পড়ার নিমিত্ত দন্ডায়মান হওয়া। (১৯) সজিদা করিবার সময় প্রথম দুই হাঁটু মাটিতে রাখিবে, তৎপর দুই হস্ত তারপর নাসিকা এবং তৎপর কপাল রাখিবে। সজিদা হইতে উঠিবার সময় ইহার বিপরীত করিবে। অর্থাৎ সর্ব্বপ্রথমে মস্তক উঠাইবে, তৎপর হস্তদ্বয়, তৎপর দুই হাঁটু। নামাজের মধ্যে হাই আসিলে ওষ্টকে দন্ত দ্বারা দংশন করত: বন্ধ করিবে। তদাভাবে নামাজে চিন্তা করিবে যে আম্বিয়াগণ কখনও নামাজের মধ্যে হাই তোলেন নাই। নামাজে দণ্ডায়মান থাকিয়া হাই আসিলে দক্ষিণ হস্তের পৃষ্ঠ দ্বারা এবং বসার সময় হাই আসিলে বাম হস্তের পৃষ্ঠ দ্বারা বন্ধ করিবে। কুনিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, নামাজি ব্যক্তি নামাজ আদায় করিবার সময় কয় ফরজ, কয় ওয়াজেব

কয় ছুন্নত ও কয় মস্তাহাব না জানিলে তাহার নামাজ দোরস্ত হইবে। মস্তাহাব কাজ বর্জ্জন না করা ভাল। পুরুষ সজিদাতে স্কন্ধকে উদর হইতে এবং উদরকে রান হইতে পৃথক ও ফাঁক রাখিবে। স্ত্রীলোক পুরুষের উল্টা করিতে হইবে। ফজরের ফরজের প্রথম রকাত ত্রিশ আয়াত দ্বিতীয় রকাতে কুড়ি আয়াত এবং জোহরের দুই রকাতে ত্রিশ আয়াত, আছর ও এশারের দুই ২ রকাতে কুড়ি আয়াত পড়া মস্তাহাব। মগরীবের নামাজে লম্য়কুন হইতে শেষ কোরান র্পয্যন্ত যেই ছুরা ইচ্ছা হয় তাহা পড়া মোস্তাহাব। আবশ্যকীয় অবস্থায় যেই কোন ছুরা কোরান শরীফ হইতে পাঠ করিতে পারে। গা: আ: ১ম খণ্ড দো: মো:, রু: দি: ইত্যাদি।

নামাজের ধারার বিবরণ

নামাজ আদায় করিবার ইচ্ছা করিলে প্রথমত: অজু অবগাহন আবশ্যক হইলে তাহা করিবে। বিশুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করত: পবিত্র কাবাভিমুখে দাঁড়াইয়া খোদার দিকে মনোনিবেশ করিবে এবং দুনিয়ার সকল চিন্তা দূরীভূত করিবে, এবং খোদার উপাসনায় মগ্ন হইবে; যেন খোদাতালা তোমাকে দেখিতেছেন, তুমি দেখিতেছনা। তৎপর নামাজের নিয়ত করতঃ আল্লাহু আকবর তকবীর বলিয়া কর্ণ র্পয্যন্ত হস্ত উঠাইয়া তাহরিমা বাঁধিয়া ছোবহানকা পড়িবে, তৎপর আউজুবিল্লাহ তৎপর বিছমিল্লাহ পড়িয়া, আলহামদু পড়ার পর অন্য একটি ছুরা তিন আয়াত বা ততোধিক পাঠ করিয়া রুকু করিবে। রুকুর তছবীহ ছোবহানা রাব্বিয়াল আজিম তিন, পাঁচ বা সাতবার বলিবে। এবং দুই হস্তের আঙ্গুলী ফাঁক রাখিয়া হাঁটু ধৃত করিবে। তৎপর ছামিয়াল্লাহুলিমন হামিদাহ বলিয়া রুকু হইতে খাড়া হইবে। তৎপর তকবীর বলিয়া সজিদাতে যাইয়া ছোবহানা রব্বিয়াল আলা

৩। ৫। ৭ বার বলিবে দুই হস্তের মধ্যভাগে যাহা ফাঁক থাকে তাহাতে সজিদা করিবে। সজিদা হইতে প্রথম মস্তক তৎপর দুই হস্ত তৎপর হাঁটু উত্তোলন করিয়া দাঁড়াইবে ও প্রথমরকাতের মত দ্বিতীয় রকাতে পড়িবে কিন্তু উহাতে ছনা ও তাউজ পড়িবে না। দ্বিতীয় রকাত সমাপ্ত হওয়ার পর বাম পা বিছাইয়া উহার উপর বসিবে ও বাম পা খাড়া রাখিয়া আত্তাহিয়াতু পড়িবে এবং পায়ের আঙ্গুলী কাবাভিমুখী করিবে। আত্তাহিয়াতু এইÑ

اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ ـ

আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় লা-এলাহা র্পয্যন্ত পড়িলে তর্জ্জনী আঙ্গুলী দ্বারা ইসারা করার পর ইল্লাল্লাহু শব্দ বলারসময় নিচু করিবে। কিন্তু কনিষ্ঠ, অনামিকা, মধ্যম আঙ্গুলী আবদ্ধ করিবে। সোজা রাখিবে না। মধ্যমাঙ্গুলী বৃদ্ধাঙ্গুলীর মাথায় মাথায় স্পর্শ করাইবে। যদি চারি রকাত ওয়ালী নামাজ হয় আবদুহু অরছুলুহুর অধিক পড়িবে না। তৎপর আল্লাহু আকবর বলিয়া উঠিয়া বাকি দুই রকাত ফরজ নামাজ হইলে আল্হামদু ব্যতীত অন্য কোন ছুরা পড়িবে না। এইরূপ চতুর্থ রকাত পাঠ করিয়া বসিয়া আত্তাহিয়াতু পাঠ করিবে। তৎপর এই দরূদ পাঠ করিবে।

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَ عَلى الِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلى

 الِ اِبْرَاهِيمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَ عَلى الِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلي الِ اِبْرَاهِيمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِى وَ لِوَالِدَىَّ وَالْاُسْتَاذِىْ وَلِجَمِيْعِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ الْاَحْيَاءِ مِنْهُمْ وَالْاَمْوَاتِ بِرَحْمَتِكَ يَااَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ ـ

তৎপর এই দোয়া পাঠ করিবে, নতুবা হাদিছের অন্য দোয়া হইলেও পাঠ করিবে। তৎপর ডান দিকে ছালাম ফিরাইবে ও বলিবেÑ

السلام عليكم و رحمة الله

তৎপর বাম দিকে ছালাম দিবে। একাকী নামাজ পড়িলে শুধু ফেরেশতার প্রতি ছালামের নিয়ত করিবে। এমাম হইলে সঙ্গী লোকের প্রতিও সঙ্গীয় ফেরেশতার প্রতি। মোক্তাদি হইলে এমামে প্রতি ও ফেরেশতার প্রতি এবং এমাম দক্ষিণ দিকে থাকিলে এমামে প্রতিও সম্মুখে থাকিলেও এমামের প্রতি সালামের নিয়ত করিতে হইবে। আর যদি এমাম বাম দিকে থাকে তাহা হইলেও এমামের প্রতি সালামের নিয়ত করিতে হইবে। এই হইল নামাজের ধারা। তিন রকাত ওয়ালী নামাজ এইরূপ পড়িতে হইবে। চারি রকাত ওয়ালী ছুন্নতও এইরূপ পড়িবে, কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ রকাতে আল্

হামদুর সহিত অন্য ছুরা পাঠ করিতে হইবে।ফরজ নামাজের পর ছুন্নত থাকিলে এই দোয়া পরিমাণ গৌণ করিবে।

اَللّهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ وَ تَعَالَيْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ ـ

দোয়া পাঠ করার পর হঠাৎ উঠিয়া নিজ স্থান হইতে সরিয়া গিয়া অন্য স্থানে ছুন্নত পড়িবে।যেই ফরজ নামাজের পর ছুন্নত নাই যেমন ফজর ও আছর,মছ্বুক না থাকিলে এমাম মোক্তাদিগণকে সামনে করিয়া মোনাজাত করিবে নতুবা ডান দিক বা বাম দিক করিয়া মোনাজাত করিবে।পুরুষ ও মেয়ে লোকের নামাজের মধ্যে কুড়ি (২০)কথায় প্রভেদ আছে। (১)মেয়েলোক তাহরিমার সময় হস্ত স্কন্ধ র্পয্যন্ত উত্তোলন করিবে, (২)মেয়ে লোকের দুই হস্ত আস্তিনের ভিতরে রাখিবে বাহির করিবে না, (৩)বাম হস্তের উপর দক্ষিণ হস্ত রাখিবে কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুলী ও কনিষ্ঠাঙ্গুলীর দ্বারা কব্জী ধৃত করিবে না। (৪)তাহরিমা স্তন্যের নিম্নে বুকের উপর বাঁধিবে (৫)রুকুতে কিঞ্চিৎ মাত্র ঝুকিবে (৬)রুকুর মধ্যে হস্তের উপর ভর দিবে না (৭)রুকুতে হস্তাঙ্গুলী সব মিলাইয়া রাখিবে (৮) রুকুতে হস্ত কেবল মাত্র হাঁটুর উপর রাখিবে, হাঁটু দাবিয়া ধরিবে না। (৯) হাঁটু রুকুতে ঝুকাইবে (১০) রুকুতে শরীর চাপাইয়া রাখিবে, (১১) সজিদাতে বগল চাপাইয়া রাখিবে (১২) সজিদায় দুই হস্ত বিছাইয়া রাখিবে (১৩) আত্তাহিয়াত পড়ার সময় ও দক্ষিণ দিক বাহির করিয়া নিতম্বের উপর রাখিবে। (১৪) আত্তাহিয়াত পড়ার সময় আঙ্গুলী সকল মিলাইয়া রাখিবে। (১৫) নামাজের মধ্যে এমামের কোন কাজ ভ্রম হইলে পুরুষ মোক্তাদি ছোবহানল্লাহ বা আল্লাহু

আক্বর বলিবে স্ত্রীলোক হাত তালি দিবে। (১৬) পুরুষের এমামতি করিতে পারিবে না। (১৭) স্ত্রীলোকের জমাত মক্রুহ তাহরিমা (১৮) যদি স্ত্রীলোক জমাত করিয়া নামাজ পড়ে তাহাদের এমাম মধ্যভাগে দাঁড়াইতে হইবে অগ্র ও পশ্চাৎ না দাঁড়াইয়া একই কাতারে দাঁড়াইবে পুরুষের ন্যায় নহে। (১৯) স্ত্রীলোকের উপর জুমার ও দুই ঈদের নামাজ নাই। (২০) স্ত্রীলোকের ফজরের নামাজ কিঞ্চিত অন্ধকার থাকিতে আদায় করা উচিত। পুরুষের ফজর উজ্জল হইলে পড়া মোস্তাহাব। পুরুষ উল্লেখিত সমস্ত অবস্থার বিপরীত জানিবে। বাজ ফকিহ আরও অধিক কথায় প্রভেদ আছে বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। দোয়া চারি প্রকার: (১) দোয়ায়ে রগবৎ (২) দোয়ায়ে রাহ্বৎ (৩) তর্জরু (৪) খফিয়া। দোয়ায়ে রগবৎ অর্থাৎ খোদার নিকট হইতে কোন বস্তু তলব করা যেমন খোদার নিকট বেহেস্তের জন্য প্রার্থনা করা, এই দোয়া করিবার সময় দুই হস্ত বক্ষ বা চেহেরার সম্মুখে দুই কর্ণ বরাবর উত্তোলন করিয়া দুই হস্তের পেট আকাশের দিকে করিয়া দোয়া করিবে। দোয়ায়ে রাহ্বৎ অর্থাৎ ভীত হওয়ার সময় দোয়া করা। এই মত করিবে, দুই হস্তের পৃষ্ঠ মুখের দিকে করিবে। দোয়ায়ে তজররো অর্থাৎ খোদার নিকট নিজের আজিজী এবং এনকেছারী প্রকাশ করা। যেমন হে প্রভু! আমি তোমার একজন পাপিষ্ট ও নরাধম গোলাম হই আমার মত পাপী আর কেহই নাই। দোয়া করিবার সময় দুই হস্ত উত্তোলন করিয়া দুই হস্তের কনিষ্ঠা ও অনামিকা দুই আঙ্গুলী আবদ্ধ করিবে এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধা দুই আঙ্গুলী গোল করিয়া মাথায় ২ স্পর্শ করাইবে ও তর্জ্জনী আঙ্গুলী দ্বারায় ইঙ্গিত করিবে। দোয়ায়ে খফিয়া অর্থাৎ নিজের অন্তরে ২ দোয়া করা, ইহাতে হস্তদ্বয় উত্তোলন না করিবে। এমাম ছুরা পাঠ করিবার

সময় মোক্তাদিগণ ছোব্হানকা না পড়িবে। কিন্তু জোহর ও আছরের নামাজে মধ্যে ছোব্হানকা পড়িতে পারিবে। এমাম ছনা পড়িয়া আউজু বিল্লাহ ও বিছমিল্লাহ পড়িবে মোক্তাদিগণের তাহা পরিড়তে হইবে না। মছবুক এমামের সঙ্গে নামাজ সমাপন করিয়া বাকী নামাজ পড়িবার জন্য দাঁড়াইলে ঐ সময় ফজর ও মগরীব এবং এশারের নামাজে ছনা ও আউজু, তছমিয়া পড়িবে। এমাম আল্হামদু সমাপ্ত করিলে মোক্তাদিগণ চুপে ২ আমিন বলিবে। মোক্তাদিগণের তিন তছবীহ সমাপ্ত হওয়ার র্পূব্বে রুকু কি, ছজিদা হইতে মস্তক উঠাইলে এমামের সঙ্গে ২ মোক্তাদগিণ মস্তক উঠাইব।ে এমামরে তছবীহ শষে হওয়ার র্পূব্বে মোক্তাদী মাথা উঠাইলে পুনরায় রুকু বা সজিদাতে যাইতে হইবে। এই স্থলে মোক্তাদি দুই রুকু বা তিন ছজিদা গণনা করিতে পারিবে না। কেহ আলহামদু পড়ার র্পূব্বে অন্য ছুরা পাঠ করিলে নামাজ দোহরাইতে হইবে, কিন্তু ভুলে পড়িলে ছোহ সজিদা করিলে নামাজ দোরস্ত হইবে। আলহামদু পড়ায় পর কমপক্ষে তিন আয়াত পড়িতে হইবে। কোন ব্যক্তি রুকু বা ছজিদার তছবীহ অথবা আত্তাহিয়াতু পড়িয়া শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ না পড়িলে নামাজ দোরস্ত হইবে। কিন্তু মকরূহ হইবে এবং পাতকী হইবে। রুকু হইতে সোজা খাড়া না হইয়া এবং মস্তক কিঞ্চিৎ মাত্র উঠাইয়া সজিদা করিলে ঐ নামাজ দোহরাইতে হইবে। এইরূপ সজিদাতে করিলেও নামাজ দোহরাইতে হইবে। রুই সুতা ভরা কোন বস্তুও উপর সজিদা করিলে মস্তককে এমন ভাবে দাবাইবে যেন উহার উপর দাবাইলে মস্তক আর নীচের দিকে দাবা যাইবে না তখন সজিদা দোরস্ত হইবে। নতুবা দোরস্ত হইবে না। চারি রকাত ওয়ালী ফরজ নামাজের শেষ দুই রকাতে আলহামদুর পর ছুরা ভুলে পাঠ করিলে ছোহ সজিদা করিতে হইবে না। নি:শব্দে ছুরা পাঠ করিলে

নিজের কানে শুনিতে হইবে। নতুবা নামাজ দোরস্ত হইবে না। নামাজের মধ্যে কোন ছুরা হামিসা র্নিদ্দষ্টি করিয়া পড়া মকরুহ জানিবে। প্রথম রকাত হইতে দ্বিতীয় রকাতে লম্বা করিয়া পড়া মক্রুহ। স্ত্রীলোকের জমাত পড়া মক্রুহ এবং মসজিদে পুরুষের সঙ্গে জমাত পড়া অনুচিত। নামাজে অজু ভঙ্গ হইলে অজু করিয়া দোহরাইয়া পড়িবে। সজিদা করিবার সময় লরাট ও নাসিকা জমির উপর রাখিবে। নাসিকা ভিন্ন ললাটের দ্বারা সজিদা করিলে দোরস্ত হইবে। ললাট ছাড়া নাসিকার দ্বারা ওজর ব্যতীত সজিদা করিলে হইবে না। ইমাম মোক্তাদিগণকে পংতি করার জন্য উপদেশ দিবে। নামাজের মধ্যে বাম পা বিছাইয়া ডান পা খাড়া রাখিবে। ইমাম ছমিয়াল্লাহ্ বলিয়া মস্তক উঠাইলে মোক্তাদিগণ রব্বনা লকাল্ হামদ্ বলিবে। একাকী নামাজ পড়িলে ছমিয়াল্লাহ্ ও রব্বনা লাকাল হামদ্ দোনটা বলিতে হইব।ে ছজিদাতে পদ আঙ্গুলী কাবাভিমুখী রাখিতে হইবে। দুই হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলী দুই কর্ণের নিকট ফাঁকে ২ রাখিবে। বৃহৎ জমাত হইলে পশ্চাতের পংতির লোক সম্মুখের পংতির লোকের পৃষ্ঠে ও কটির উপর সজিদা করিতে পারে কিন্তু উভয়ে এক নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে। নতুবা নহে, যেমন সম্মুখের সকলে জোহরের ফরজ পড়িলে, পশ্চাতের সকলে আছরের ফরজ পড়ে এমতাবস্থায় সজিদা দেওয়া দোরস্ত হইবে না। পারিত পক্ষে লোকের পৃষ্ঠে সজিদা দেওয়া না দোরস্ত। জোহরে চারি রকাত ফরজ জ্ঞাতসারে প্রথম বসায় আত্তাহিয়াতু রছুলুহ র্পয্যন্ত বলিয়া কিছু বেশী পড়িলে ঐ নামাজ সিদ্ধ হইবে না। পুনরায় ঐ নামাজ পড়িতে হইবে। কিন্তু অজ্ঞাতসারে পড়িলে ছোহ সজিদা দিলে দোরস্ত হইবে। প্রত্যেক চারি রকাত ও তিন রকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের শেষের দুই রকাতে বা এক রকাতে

শুধু আল্হামদু দিয়া নামাজ পড়ার কারণ এই, আল্লাহু তালা পবিত্র কোরান শরীফে এরশাদ ফরমাইয়াছেন। ওয়ানেশ ক্লোী ওয়ালে ওয়ালেদায়কা, অর্থাৎ আমার কৃত উদ্যানের বিবিধ জাতীয় শস্যাদি আহার করতঃ কৃতজ্ঞ হও এবং তোমাদের জনক জননীর পরিশ্রমের কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। কেননা তোমাদের মাতা গর্ভে রাখিয়া স্তন্য দান করত: লালন পালন করিয়াছে। পিতা ক্রোড়ে স্কন্ধে লইয়া ভ্রমণ করত: অসহ্য যাতনা সহ্য করত: জীবিকা সঞ্চয় করিয়াছে। যেহেতু আমি যেইরূপ সৃজক তাহারা তদ্রুপ। সুতরাং আমার সঙ্গে তাহাদের সম্মান করা র্কত্তব্য। অপিচ চারি রকাতের দুই রকাত আমার সম্মান, দুই রকাত তোমাদের পিতামাতার সম্মান। স্মরণ কর আদমের প্রতি দুই রকাত ফরজ অবতীর্ণ হইয়াছে। আদমের (আ:) পিতামাতা নাই, সে ইহার কারণ। ইব্রাহিমের (আ:) প্রতি জোহর অবতীর্ণ হইয়াছে দুই রকাত খোদার প্রাপ্য স্বত্ব দুই রকাত তাহার পিতামাতার স্বত্ব। যদিও তাহারা কাফের ছিল। ইউনুছের (আ:) প্রতি আছরের নামাজ অবতীর্ণ হইয়াছে তন্মধ্যে দুই রকাত খোদার স্বত্ব, দুই রকাত পিতামাতার স্বত্ব। হজরত ঈছার (আ:) প্রতি মগরেবের নামাজ অবতীর্ণ হইয়াছে দুই রকাত খোদার স্বত্ব, এক রকাত তাহার মাতার স্বত্ব। ঈছার পিতা নাই। সুতরাং নামাজও তিন রকাত অবতীর্ণ হইয়াছে। দো: মো:, গা: আ:, ১ম খণ্ড মে: জি: রু: দি: ইত্যাদি। হজরত মুছা (আ:) এর প্রতি এশারের নামাজ অবতীর্ণ হইয়াছে। দুই রকাত আল্লাহর স্বত্ব ও দুই রকাত তাহার মাতাপিতার স্বত্ব। আর বেতের হজরত রছুলুল্লাহ্র উপর অবতীর্ণ হইয়াছে। এক রকাত আল্লাহর জন্য ও দুই রকাত তাহার মাতাপিতার জন্য।

এমামতি ও জমাতে নামাজ পড়ার বিবরণ

এমাম নিযুক্ত হওয়ার জন্য কয়েকটি র্শত্ত আছে: (১) মোসলমান হওয়া (২) বয়স প্রাপ্ত (৩) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া (৪) পুরুষ হওয়া (৫) নিরোগী হওয়া (৬) নামাজের মছায়লা ও র্শত্তাদিতে প্রাজ্ঞ হওয়া। মোক্তাদিগণের একতেদা দোরস্ত হওয়ার জন্য দশটা র্শত্ত আছে। (১) মোক্তাদিগণ এক্তেদার নিয়ত করিবে। (২) এমামও মোক্তাদির স্থান এক হওয়া (৩) এমাম ও মোক্তাদির এক নামাজ হওয়া (৪) মোক্তাদির জ্ঞানমত এমামের নামাজ সিদ্ধ হওয়া আবশ্যক। (৫) স্ত্রীলোক ঐ নামাজে মোক্তাদি সমশ্রেণীতে দণ্ডায়মান না হওয়া চাই। (৬) মোক্তাদির পা এমামের পায়ের অগ্রে না যাওয়া (৭) এমাম এক অঙ্গীয় শেষ করিয়া অন্য অঙ্গীয়ে প্রবেশ করিলে, যেমন রুকু হইতে সজিদায় গমন করিলে ইহা অবগত হওয়া। (৮) মোক্তাদি এমামের অবস্থা জ্ঞাত হওয়া। যেমন এমাম গৃহবাসী না প্রবাসী। (৯)এমামের সঙ্গে ২ সমস্ত অঙ্গীয় বিষয় সমূহ শেষ করা। (১০)নামাজের র্শত্তে ও রোকনে মোক্তাদি এমামতুল্য অথবা তন্যুন হওয়া। যেমন এমাম রুকু বা সজিদা করিয়া নমাজ পড়িলে মোক্তাদিও সেই মত করিয়া নামাজ পড়িবে। এমাম যদি এসারা করিয়া নামাজ পড়ে, মোক্তাদিও এসারা করিয়া নামাজ পড়িলে এই দুই অবস্থায় নামাজ দোরস্ত হইবে। ইহার উল্টা হইলে এক্তেদা দোরস্ত হইবে না।জমাতে নামাজ পড়ার উপকারিতা এই যে, গ্রাম বা মহল্লাবাসী একত্রিত হইয়া এক সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলে তাহাতে কাহারও বাক্-বিবাদ ও মনোবাদ থাকিলে তাহা বিদূরীত হয়। লোকের সহিত প্রীতি ও ভালবাসা জন্মিয়া ঈর্ষা বিদূরীত হয়। বিপদাপদে পরস্পরের উপকার হয়।অজ্ঞলোকে শাস্ত্র বেত্তার নিকট র্ধম্ম শাস্ত্র ও মছায়লা শিক্ষা করিয়া জ্ঞান সঞ্চার করিতে পারে। এই জন্য পুরুষগণ দলবদ্ধ হইয়া জমাতে পড়া ছুন্নতে মোয়াক্কাদা।

ঈদ, জুমার জন্য জমাত র্শত্ত, তারাবীর জন্য জমাত ছুন্নতে কেফায়া। রমজান শরীফে বেতেরের নামাজ জমাতে পড়া মস্তাহাব। রমজান ব্যতীত অন্য সময় বেতের ও নফল নামাজ জমাতে পড়া মকরুহ তাহরীমা। এমাম ব্যতীত অন্য একটি লোক মোক্তাদি হইলে তাহাকে জমাত বলে। উক্ত ব্যক্তি বালক হউক বা জেন হউক বা ফেরেশতা হউক জমাত সিদ্ধ হইবে। জেন এমাম হইলে নামাজ সিদ্ধ হইবে, ফেরেস্তার এমামতি অসিদ্ধ। যাহারা অক্লেশে জমাতে উপস্থিত হওয়ার শক্তি রাখে তাহাদের জন্য জমাতে নামাজ পড়া ছুন্নতে মোয়াক্কাদা। একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষা জমাতে নামাজ পড়িলে সাতাশ গুণ পূন্য বেশী। কয়েক কারণে জমাত বর্জ্জিত করিতে পারে। (১) পীড়িত হইলে (২) হস্ত পদাদি কাটা হইলে (৩) চলিতে না পারিলে (৪) অত্যন্ত অন্ধকার হইলে (৫) অধিক বৃষ্টি ও কাদা হইলে (৬) ঝড় হইলে (৭) বজ্রপাত হইলে (৮) চক্ষুদ্বয় বিনষ্ট হইলে। পীড়িত ব্যক্তির খেদমত করিলে (৯) যেই খাদ্যের জন্য মোস্তাক তাহার সম্মুখে আসিলে (১০) শত্রুর ভয় থাকিলে (১১) ঋণের ভয়ে মহাজন র্কত্তৃক ধৃত হওয়ার আশঙ্কা হইলে (১২) মছআলা মছায়েল শিক্ষাদাতা (১৩) মছআলা শিক্ষা গ্রহীতা (১৪) বৃদ্ধ অবস্থায়। আজান দেওয়া হইতে এমামতির পূণ্য বেশী। এমামতি করার উপযুক্ত যিনি মছআলায় অতিশয় প্রাজ্ঞ এবং নৃত্যগীত বাদ্য প্রভৃতি প্রকাশ্য পাপ হইতে বিরত আছেন, তিনি অগ্রগণ্য। তৎপর যিনি পবিত্র কোরান শরীফ ভালরূপে পাঠ করিতে পারে অর্থাৎ কারী। তৎপর যিনি অধিক র্ধাম্মকি, মোত্তাকি। র্ধাম্মকি বলে, যিনি সন্দেহ যুক্ত র্কায্যাদি হইতে বিরত থাকেন, হারাম র্কায্যাদি হইতে যিনি বাঁচিয়া থাকেন তিনি মোত্তাকি। হারাম ও হালাল দুই দিকে সমান ২ সন্দেহ হইলে উহাকে সোবাহ ও সক বলে। তৎপর যাহার বয়স অধিক।

তৎপর যাহার সৎ স্বভাব। তৎপর যিনি সুশ্রী অর্থাৎ রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়িলে মুখ রোশন হয়, তিনি এমামতি করিবেন। তৎপর যাহার মুখ র্সব্বদা হাসার ন্যায় থাকে। তৎপর যিনি সৎ বংশজ অর্থাৎ ছৈয়দ, মোসায়েক উত্তম বংশোদ্ভব। তৎপর হালাল ধন সৎ পথে দান কারক এমাম হইবেন। তৎপর যাহার আওয়াজ ভাল। তৎপর যাহার পত্নী সুন্দরী। অর্থাৎ নামাজ, রোজা ও র্পদ্দায় শ্রেষ্ঠা। তৎপর যাহার নিকট হালাল বেশী আছে। তৎপর যাহার নিকট মরতবা বেশী আছে। তৎপর যাহার কাপড় ভাল। তৎপর যাহার মস্তক বড়। তৎপর শরয়ী ও অভ্যাসে কোন এক কাজে কয়েকজন লোক সমান হইলে কোন উপায় ছাড়া কাহাকেও এমাম করিতে পারিবে না। তৎপর শরয়ী বা অভ্যাসে সমস্ত কাজে সমান হইলে লটারী অর্থাৎ চিঠি খেলিলে যাহার নাম উঠিবে তিনি এমাম হইবেন। উলঙ্গ ব্যক্তিগণ একত্র হইয়া জমাত পড়িলে মকরুহ তাহ্রিমা হইবে। কিন্তু একত্রিত হইয়া জমাত করিলে রমণীদের ন্যায় এমাম মধ্যস্থলে দাঁড়াইবে। তৈয়ম্মুম কারীর পশ্চাৎ অজু কারকের নামাজ এই অবস্থায় দোরস্ত হইবে যে অজুকারী ব্যক্তির সঙ্গে পানি থাকিলে ঐ পানি তাহাকে দিতে হইবে। পানি না থাকিলে সিদ্ধ হইবে। দুই ব্যক্তির এক ওজর হইলে এক অন্যের এমামতি করিতে পারিবে। দুই ওজর হইলে পারিবে না। যেমন প্রস্রাব নির্গত হওয়া ব্যক্তি বায়ু বহির্গত হওয়া ব্যক্তির এমামতি করিতে পারিবে না। এইরূপ দুই ওজর ওয়ালা ব্যক্তি এক ওজর ওয়ালা ব্যক্তির এমাম হইতে পারিবে না। যেমন প্রস্রাব ও ঘা ওয়ালার পশ্চাতে বায়ু বহর্গিত ওয়ালা এক্তেদা করা দোরস্ত নহে। কারণ এমামের দুই ওজর মোক্তাদির এক ওজর। বসিয়া নামাজ পড়ুয়ার পশ্চাতে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়ুয়া ব্যক্তির নামাজ দোরস্ত

ও সিদ্ধ।এইরূপ কুজের পাশ্চাতে নামাজ সিদ্ধ হইবে।পবিত্র রমণী মোস্তাহাজা রমণীর পশ্চাতে নামাজ না পড়িবে।এরাবী জঙ্গলী অর্থাৎ রাখাল গোওয়ার নির্ব্বুদ্ধি, অন্ধ যাহার চক্ষে দেখিতে পায় না।ক্রীত-দাস, হারামজাদা, কুষ্ঠ অর্থাৎ বড় আজার ওয়ালা,মুর্খ,ভুল কোরান পাঠক,ফাছেক ইত্যাদির এমামতি মক্রুহ।রমণীগণ র্সব্বদা জমাতে নামাজ পড়ার জন্য উপস্থিত হওয়া মকরূহ।এইরূপ ঈদের ও জুম্মার জমাতে এবং ওয়াজের মজলিশে উপস্থিত হওয়া মকরূহ।দিবসে হউক বা রাত্রিতে হউক।পুরুষ মেয়েলোকদের সঙ্গে এক্তেদা করা দোরস্ত নহে।বলখের এমামগণ নাবালেগের পশ্চাতে তারাবি নামাজ দোরস্ত বলিয়া বলেন।অন্যান্য এমামগণ দোরস্ত নয় বলিয়া ফতোয়া দিয়াছেন।ফরজ পড়ুয়ার সঙ্গে নফল পড়ুয়া এক্তেদা করিতে পারিবে কিন্তু নফল পাঠকের সঙ্গে ফরজ পাঠক এক্তেদা করিলে দোরস্ত হইবে না।নামাজ মানস কারক নামাজ মানস কারীর সঙ্গে দুই নামাজ হইলে এক্তেদা দোরস্ত হইবে না।দুই ব্যক্তির এক নামাজ মানস হইলে এক্তেদা দোরস্ত হইবে।নামাজরে শপতকারী মানসকারীর সঙ্গে এক্তদো করতিে পারবি।েশপথ কারক শপথ কারীর সঙ্গে এক্তেদা করিতে পারিবে।উম্মাদ,মাতাল,অজ্ঞান ব্যক্তির পশ্চাতে নামাজ সিদ্ধ নহে।নিরোগী পীড়িত ব্যক্তির পশ্চাতে এক্তেদা করা অসিদ্ধ।এইরূপ কোরানের সূরা পাঠক মূর্খ হইলে তাহার পশ্চাতে এক্তেদা করা অসিদ্ধ।উলঙ্গ ব্যক্তির পশ্চাতে বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তির নামাজ সিদ্ধ হইবে না।এইরূপ ইঙ্গিত দ্বারা নামাজ পড়ুয়া ব্যক্তির পশ্চাতে ইঙ্গিতহীন ব্যক্তির নামাজ সিদ্ধ হইবে না।স্ত্রীলোক পুরুষের জমাতে ভুক্ত হইলে পার্শ্ববর্তী তিন ব্যক্তির নামাজ ভঙ্গ হইবে অর্থাৎ স্ত্রীলোকের দক্ষিণে বামে ও পশ্চাতে যাহারা দাঁড়াইবে তাহাদের নামাজ ভঙ্গ হইবে। কিন্তু জানাজার নামাজে স্ত্রীলোক পুরুষের সম শ্রেণীতে দণ্ডায়মান হইলে

কাহারও নামাজ ভঙ্গ হইবে না। বৃহৎ মসজিদে এমাম মোক্তাদির বহু দূরে কাতার করিলে অর্থাৎ মধ্যস্থানে আরও দুই কাতার হইতে পারে, এমত স্থান রাখিয়া পংক্তি করিলে এক্তেদা সিদ্ধ হইবে না। এইরূপ এমামের ও মোক্তাদির মধ্যে কোন বস্তুর আড় থাকিলে যদি এমামের অবস্থা টের করিতে না পারে তবেও সিদ্ধ হইবে না। লাহেক লাহেকের পশ্চাতে মছবুক মছবুকের পশ্চাতে অথবা লাহেক মছবুকের কিম্বা মছবুক লাহেকের পশ্চাতে নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে না। এমাম অজুহীন হওয়া প্রকাশ পাইলে মোক্তাদদিরে নামাজ ভঙ্গ হইবে এবং কারণ বশত: এমামের নামাজ নষ্ট হইলে মোক্তাদির নামাজ নষ্ট হইবে। কোন ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের এমামতি করাতে উহাকে ঘৃণা করিলে, যদি ঐ ঘৃণা এমামের খারাপ চরিত্রের দ্বারা করা যায় উহার এমামতি মক্রুহ হইবে। যদি দুনিয়াবী আদাওতের দ্বারা করা যায় তবে মকরুহ হইবে না। এমামের ডান দিকে দশ মোক্তাদি, বামে এগার মোক্তাদি দাঁড়াইলে নামাজ মক্রুহ হইবে। এমাম ঠিক মধ্যস্থলে দাঁড়াইবে। নামাজ আরম্ভ করার পর যত ব্যক্তি আসিবে এমামের দক্ষিণ দিকে স্থান থাকিলে অথবা কাতারের মধ্যস্থলে স্থান থাকিলে তাহাতেই দাঁড়াইবে। এমাম বসিবারস্থলে মোক্তাদি আত্তাহিয়াত অথবা ছোবহানল্লাহ বলিয়া লোক্মা দিলে দোরস্ত হইবে। কিন্তু “বয়েট যাও” বলিয়া লোক্মা দিলে ঐ মোক্তাদির নামাজ ভঙ্গ হইবে। অন্য কাহারও নামাজ ভঙ্গ হইবে না। ছুন্নত পরিমিত নামাজের আন্দর সূরা পাঠ করিবে। তদপেক্ষা পাঠ করিলে মক্রুহ হইবে। এমামের জন্য মোক্তাদির অবস্থার দিকে দৃষ্টি রাখা উচিৎ। কোন ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের এক মাস এমামতি করার পর বলিল, আমি অগ্নিপূঁজক ছিলাম, তখন তাহার উপর ইছলাম গ্রহণ করার জন্য জবরদস্তি করা যাইবে। এবং তাহার ঐ বাক্য

অগ্রাহ্য করা যাইবে ও সকলের নামাজ সিদ্ধ জানিবে এবং উহাকে অতিশয় মার পিঠ করিবে। যেই মসজিদে একবার জমাত হইয়াছে, দ্বিতীয় বার সেই মসজিদে জমাত পড়া সম্বন্ধে এমাম আবু হানিফা (রহ:) বলেন, এমাম মোয়াজ্জেন মোকাররর থাকিলে এবং তিন ব্যক্তির অধিক হইলে ঐ মসজিদে আজান ও একামত সহ দ্বিতীয় বার জমাত পড়া মক্রুহ হইবে। আমাদের দেশে কোন মসজিদে আজান দুই বার দেওয়া হয় না, তাই এমাম আবু হানিফা (রহ:)’র বাক্যানুযায়ী ও মক্রুহ হইবে না। এমাম আবু ইউছুপ (র:) বলেন, দ্বিতীয় জমাতের এমাম প্রথম জমাতের এমামের স্থানটা বদলাইয়া অন্য স্থানে দাঁড়াইলে দ্বিতীয় জমাত মক্রুহ হইবে না। এই বাক্যের উপর ফতোয়া। কিন্তু রাস্তার নিকটর্বত্তি মসজিদ হইলে সব সময় উহাতে দ্বিতীয় জমাত পড়িতে পারিবে।কিন্তু বাজ কেহ ভয়ের নামাজের মছায়লার উক্তি প্রকাশ করিয়া সব সময় দ্বিতীয় জমাত মক্রুহ বলেন। উহা ঠিক নহে।কারণ ভয়ের নামাজের উদ্দেশ্য এই যে সকল মুজাহেদিন এক ওয়াক্তের নামাজ হইতে ফরাগত হইয়া নিজ ২ কাজে লিপ্ত হওয়া, কয়েক জমাত হইলে ঐ উদ্দেশ্যটা নষ্ট হইয়া যাইবে।এই জন্য যুদ্ধের নামাজের দ্বিতীয় জমাত র্নিদ্ধারিত হয় নাই।মৌলানা আবুল হাছনাত সাহেব ফতোয়া লক্নবীতে এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়িলে ২৫ (পঁচিশ) নামাজের পূণ্য বেশী হইবে।জামে মসজিদে পড়িলে পাঁচ শত নামাজের পূণ্য হইবে। মদিনা শরীফের মসজিদে পঞ্চাশ হাজার নামাজের পূণ্য হইবে। তদ্রƒপ মসজিদে আক্ছাতে ও জানিবে। মক্কা শরীফের মসজিদে অর্থাৎ হেরম শরীফে পড়িলে এক লক্ষ নামাজের পূণ্য হইবে। মহল্লার মসজিদে জমাত না হইলে অন্য মসজিদে জমাত পড়ার জন্য যাওয়া উচিত নহে। যদিও বা জামে মসজিদ হয়। কারণ উহার উপর মহল্লার মসজিদের

হক আছে। নিজ মহল্লার মসজিদে আজান দিয়া একাকী নামাজ পড়িলে অন্য মসজিদের জমাত হইতে বেহেতর। মহল্লায় দুইটা মসজিদ থাকিলে বাড়ীর নিকটর্বত্তি মসজিদে আজান দেওয়ার পর নামাজ না পড়িয়া চলিয়া যাওয়া মক্রুহ। কিন্তু এমাম ও মোয়াজ্জেন হইলে মক্রুহ হইবে না। দো: মো:, আ: গি: ১ম খণ্ড ম: মু: ফতোয়া ২য় খণ্ড, মৌলানা আবুল হাছনাত সাহেব, রু: দি:, ফতোয়ায়ে এমদাদিয়া ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

মছ্বুকের বিবরণ

এমামের কয়েক রকাত নামাজ সমাপন হইলে, এমামের সঙ্গে জমাতে ভুক্ত হওয়াকে মছ্বুক বলে। যেমন এমাম মগরেবের এক রকাত পড়ার পর কেহ জমাতে ভুক্ত হইলে উহাকে মছ্বুক বলা যাইবে। এমাম সমুদয় রকাত সমাপন করিয়া আত্তাহিয়াত পড়িতেছে ইতিমধ্যে রহিম আসিয়া জমাত ভুক্ত হইলে উহাকেও মছ্বুক বলিবে। মছ্বুক একাকী নামাজ পড়ার ন্যায় যেই ২ রকাত পরিত্যাগ হইয়াছে তাহাই পড়িবে। তিন অবস্থায় মছ্বুক হয়। ১। দুই রকাতীয় নামাজে যেমন ফজর ও জুম্মা। ২। তিন রকাতীয় নামাজে যেমন মগরেব ও রমজানের বেতের। ৩। চারি রকাতীয় নামাজে যেমন জোহর, আছর ও এশা ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি দুই রকাতীয় নামাজে প্রথম রকাতে এমামের সঙ্গে এক্তেদা করিতে না পারিলে দ্বিতীয় রকাতে এক্তেদা করিবে এবং এমামের সঙ্গে আত্তাহিয়াত পাঠ করার পর দরূদ ও দোয়া পাঠ করিবে কিনা, তাহাতে ফকিহগণের মতভেদ আছে। বাজ ফকিহ বলেন, দরূদ ও দোয়া পাঠ না করিবে, চুপ করিয়া বসিয়া থাকিবে। বাজ কেহ বলেন, দরূদ ও দোয়া সহ আত্তাহিয়াত পাঠ করিবে। বাজ কেহ বলেন, আত্তাহিয়াত পড়িয়া সাহাদতাইনকে বার বার পড়িবে। বাজ কেহ বলেন, আত্তাহিয়াত এইরূপ ভাবে

আস্তে ২ পড়িবে যে যেন এমামের ছালাম ফিরাইবার সময় ঐ ব্যক্তির আত্তাহিয়াত শেষ হয়। এই বাক্য শুদ্ধ বলে কাজি খাঁ বলেন।তবে কাজি খাঁর বাক্য ধরিতে হইবে।এমাম উভয় পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ মছবুক মোক্তাদি দাঁড়াইয়া স্বীয় নামাজের ন্যায় আউজু ও বিছমিল্লাহ এবং আলহামদোর সঙ্গে অন্য সূরা মিলাইয়া দুই রকাত সমাপন করত:ডানে ও বামে ছালাম ফিরাইবে এবং মোনাজাত করিবে।কোন ব্যক্তি ফজরের নামাজে আত্তাহিয়াতের মধ্যে এমামের সঙ্গে ভুক্ত হইলে,বসিয়া এমামের সঙ্গে দরূদ ও দোয়া না পড়িয়া আত্তাহিয়াত আস্তে ২ র্পূব্বরে লিখিত মতে পড়িবে।এমাম উভয় পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ মছবুক ব্যক্তি দাঁড়াইয়া স্বীয় নামাজের ন্যায় আউজু ও বিছমিল্লাহ এবং আলহামদোর সঙ্গে অন্য সূরা মিলাইয়া দুই রকাত সমাপন করত:ডানে ও বামে ছালাম ফিরাইবে। মগরেবের নামাজের তৃতীয় রকাতে কোন ব্যক্তি এমামের সঙ্গে ভুক্ত হইলে, প্রথমত:তৃতীয় রকাত এমামের সঙ্গে পড়িয়া ঐরূপে আত্তাহিয়াতু পাঠ করত:এমাম উভয় পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া ছানা,তাউজ ও তছমিয়া,ফাতেহার সঙ্গে অন্য ছুরা পাঠ করিয়া রুকু সজিদা করত: বসিয়া আত্তাহিয়াতু পড়িয়া তৎপর দাঁড়াইয়া আলহামদুর সঙ্গে অন্য ছুরা পড়িবার পর রুকু সজিদা করিয়া বসিয়া আত্তাহিয়াতু ও দরূদ দোয়া পড়িয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।কোন ব্যক্তি মগরেবের নামাজের দ্বিতীয় রকাতে জমাতভুক্ত হইলে,এমামের সঙ্গে দুই রকাত পড়িবার পর এমাম দুই পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া আলহামদুর সঙ্গে অন্য ছুরা পাঠ করিয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।জোহর,আছর ও এশার তিন রকাত পড়ার পর কোন ব্যক্তি জমাতে ভুক্ত হইলে এমামের সঙ্গে এক রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াতু পাঠ করিয়া,এমাম উভয় পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া ছানা,তাউজ ও তছমিয়া

এবং আলহামদুর সঙ্গে অন্য ছুরা পাঠ করিয়া রুকু সজিদা সমাপনে বসিয়া আত্তাহিয়াতু পড়িবে। তৎপর দাঁড়াইয়া আলহামদুর সহিত অন্য ছুরা পড়িয়া রুকু সজিদা করিয়া দাঁড়াইয়া শুধু আলহামদু পড়িয়া রুকু সজিদা করত: বসিয়া আত্তাহিয়াতু, দরূদ, দোয়া পড়িয়া উভয় দিকে ছালাম ফিরাইবে। এই মোট তিন অবস্থা হইল। জোহর, আছর ও এশা ইহাতে আত্তাহিয়াতু পড়ার সময় কোন ব্যক্তি জমাত ভুক্ত হইলে এমাম উভয় পার্শ্বে ছালাম ফিরাইলে ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া স্বীয় নামাজের ন্যায় পড়িবে। কোন ব্যক্তি এমাম দুই রকাত বা চারি রকাত পড়িয়া আত্তাহিয়াতু পড়িবার সময় জমাতভুক্ত হইলে, ঐব্যক্তি আত্তাহিয়াতু আবদুহু ও রছুলুহু র্পয্যন্ত পড়া শেষ করার র্পূব্বে এমাম মোক্তাদি সহ তৃতীয় রকাতের জন্য দাঁড়াইলে বা ছালাম ফিরাইলে,মছবুক মোক্তাদি ঐদুই অবস্তায় আত্তাহযি়াতু আবদুহু ওরসুলুহু র্পয্যন্ত পড়যি়া দাড়াইয়া বাকী দুই রকাত বা চারি রকাত আদায় করত:বসিয়া আত্তাহিয়াতু ও দরূদ এবংদোয়া পড়ার পর ছালাম ফিরাইয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।আত্তাহিয়াতু না পড়িয়া দাঁড়াইলে নামাজ মক্রুহ তাহরীমা হইবে।ঐ নামাজ দোহরাইয়া পড়া আবশ্যক।এমাম একদিক ছালাম ফিরার পর হঠাৎ স্মরণ হওয়ার পর তৎক্ষণাৎ দাঁড়াইয়া বাকী নামাজ পড়িতে পারিবে।কিন্তু বাকী নামাজের কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও যদি এমামের সঙ্গে ছালাম ফিরায় তবে নামাজ ভঙ্গ হইবে।নতুবা কেহ শিখাইয়া দেওয়ায় দাঁড়াইয়া আদায় করিলে তবুও নামাজ ভঙ্গ হইবে।ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে।যদি কেহই স্মরণ করাইয়া দেওয়ার মানষে স্মরণ করাইয়া দেয়,ভঙ্গ হইবে না।কারণ নামাজের আন্দর এয়াদ করাইয়া দিতে পারিবে,শিক্ষা দিতে পারিবে না।এক ব্যক্তি চারি রকাত ছুন্নতে মোয়াক্কাদা বা নফল নামাজের নিয়ত করিয়া এক রকাত পড়ার পর দ্বিতীয় রকাতের জন্য দাঁড়াইলে ঐ সময় জমাতের

জন্য একামত আরম্ভ হইলে, ঐ ব্যক্তি দুই রকাত নামাজ আত্তাহিয়াতু সহ পড়িয়া নামাজ সাঙ্গ করিয়া জমাতে ভুক্ত হইবে। জমাত পড়ার পর ছুন্নতে মোয়াক্কাদা হইলে চারি রকাত পড়িতে হইবে। নফল হইলে না পড়িলেও সারিয়া যাইবে। কাজা করিলে দুই রকাত কাজা করিবে। চারি রকাত ছুন্নতে মোয়াক্কাদা পড়ার পর ভুলে দাঁড়াইয়া পঞ্চম রকাতের জন্য ছজিদা করিলে আর এক রকাত পড়িয়া মোট ছয় রকাত পড়িয়া আক্কাহিয়াতু পড়ত: ছোহ সজিদা করিয়া পুনরায় আত্তাহিয়াতু ও দরূদ দোয়া পড়িয়া নামাজ সমাপ্ত করিলে দুরস্ত হইবে। যেই ২ নামাজে বড় করিয়া ছুরা পাঠ করা যায় মছবুক মোক্তাদি ঐ নামাজে জমাত ভুক্ত হইলে, ছানা, তাউজ ও তছমিয়া বাকী নামাজ পড়িবার জন্য দাঁড়াইলে পড়িবে। যেই নামাজের কেরাত এমাম চুপ করিয়া পড়িতে হয় সেই নামাজে মছবুক মোক্তাদি নিয়ত করিবা মাত্র ছানা পড়িবে। যদি এমামকে রুকু বা ছজিদাতে পাওয়া যায় তবে বিবেচনা করিতে হইবে যে দাঁড়াইয়া ছানা পড়িলে এমামের সঙ্গে রুকু ছজিদা করিতে পারিলে ছানা পড়িবে। না পারিলে না পড়িয়া এমামের সঙ্গে রুকু বা ছজিদায় চলিয়া যাইবে। যদি এমামকে বৈঠকে পাওয়া যায় তবে নিয়ত করিয়া ছানা না পড়িয়া বসিয়া দরূদ ও দোয়া ব্যতীত আত্তাহিয়াতু পড়িয়া এমাম ছালাম ফিরাইবার পর দাঁড়াইয়া বাকী নামাজ আদায় করিবে। মছবুক মোক্তাদি আত্তাহিয়াতু পড়িয়া দরূদ ও দোয়া ব্যতীত এমাম ছালাম ফিরাইবার র্পূব্বে কয়েক কারণে দাঁড়াইয়া বাকী নামাজ পড়িতে পারিবে। ১।মৌজার উপর মোছেহকারী মছবুক, এমাম ছালাম ফিরাইবার সময় র্পয্যন্ত গৌণ করিলে, তাঁহার মোছেহের সময় অতীত হওয়ার ভয় হয়, ২।মাজুর মছবুকের ওজর সময় গত হওয়ার ভয় হইলে। ৩। ফজরের ফরজ নামাজে সূর্য্য উদয় হওয়ার ভয় হইলে। ৪। মছবুক মোক্তাদির

সম্মুখ দিয়া লোক চলাচলের ভয় হইলে। উল্লিখিত কারণে মছবুক, এমাম ছালাম ফিরাইবার র্পূব্বে দাঁড়াইয়া বাকী নামাজ পড়িতে পারিবে। কিন্তু আত্তাহিয়াতু পরিমাণ বৈঠকের র্পূব্বে দাঁড়াইলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। এমাম ও মোক্তাদিগণের মধ্যে রকাতের সংখ্যা লইয়া মতভেদ হইলে, মোক্তাদি বলে তিন রকাত, এমাম বলে চারি রকাত পড়িয়াছি, এস্থলে এমাম নি:সন্দেহ করিয়া চারি রকাত পড়িয়াছে বলিয়া বলিলে দোরস্ত হইয়া যাইবে। নি:সন্দেহ করিয়া না বলিলে ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে। মোক্তাদিগণ হইতে কেহই বলে তিন রকাত কেহ বলে চারি রকাত পড়া গিয়াছে, এমাম ঐ সময় যেই দলের কথা বিশ্বাস করে, তাহাই ধরিতে হইবে। এমামের পক্ষে এক ব্যক্তি হইলেও সিদ্ধ হইবে। এক ব্যক্তি নি:সন্দেহ করিয়া বলে তিন রকাত, অন্য এক ব্যক্তি নি:সন্দেহ করিয়া বলে চারি রকাত, বাকী মোক্তাদিগণ ও এমাম সন্দেহ করে, তবে ঐ সময় কিছুই করিতে হইবে না। নামাজ দোরস্ত হইয়া যাইবে। যেই মোক্তাদি নি:সন্দেহ করিয়া তিন রকাত বলিয়াছে তিনিরও দোহরাইতে হইবে না। এমাম নি:সন্দেহ করিয়া বলিল, তিন রকাত পড়িয়াছি, এক মোক্তাদি নি:সন্দেহ করিয়া বলিল নামাজ সমাপ্ত হইয়াছে, এমাম ও মোক্তাদিগণ নামাজ দোহরাইবে। কিন্তু সন্দেহ বিহীন মোক্তাদি দোহরাইবে না। যদি এক ব্যক্তি নি:সন্দেহ করিয়া বলে নামাজ কম পড়া গিয়াছে, এমাম ও অন্যান্য মোক্তাদি সন্দেহ করিতেছে, এই অবস্থায় নামাজের ওয়াক্ত বাকী থাকিলে পুনরায় পড়া ভাল। কা: খাঁ: ১ম খণ্ড, আ: গি: ১ম খণ্ড ম: মু: ফতোয়া ২য় খণ্ড, মৌলানা আবুল হাছানাত রু: দি:, ফতোয়া এমদাদিয়া ১ম খণ্ড ছগীরি ইত্যাদি।

লাহেকের বিবরণ

কোন ব্যক্তি এমামের সঙ্গে নামাজ পড়িতেছিল, তৎক্ষণাৎ তাহার অজু ভঙ্গ হওয়ায় কতকাংশ নামাজ পরিত্যাগ হইয়াছে, সুতরাং ঐ পরিত্যাগীয় নামাজ পড়াকে লাহেক বলে। মোক্তাদি চারি প্রকার। ১। মুদরেক ২। মছ্বুক ৩। লাহেক ৪। মছ্বুক-লাহেক। যেই ব্যক্তি এমামের সঙ্গে পুরা নামাজ পড়িয়াছে তাহাকে মুদরেক বলে। এমামের কয়েক রকাত নামাজ সমাপন হইলে এমামের সঙ্গে জমাতে ভুক্ত হওয়াকে মছ্বুক বলে। যেমন এমাম মগরীবের নামাজ এক রকাত পড়িয়াছে, রহিম তৎপর জমাতে ভুক্ত হইল। রহিমকে এ স্থলে মছ্বুক বলে। কোন ব্যক্তি এমামের সঙ্গে নামাজ পড়িতেছিল, তৎক্ষণাৎ তাহার অজু ভঙ্গ হওয়ায় কতকাংশ নামাজ পরিত্যাগ হইয়াছে, তবে পরিত্যাগীয় নামাজ পড়াকে লাহেক বলে। যেমন রহিম জোহরের নামাজ পড়ার জন্য প্রথমত: এমামের সঙ্গে জমাতে ভুক্ত হইল। এক বা দুই রকাত পড়ার পর তাহার অজু ভঙ্গ হইল, ঐ সময় রহিম অজু করিয়া আসিতে ২ এমাম অন্য এক বা দুই রকাত নামাজ পড়িয়াছে। রহিমের ঐ এক রকাত কিংবা দুই রকাত নামাজ পড়াকে লাহেক বলে। লাহেক ব্যক্তির নামাজ পড়ার ধারা এই মনে কর রহিম জোহরের সময় প্রথম রকাতে জমাতে ভুক্ত হইল, দুই রকাত নামাজ পড়িলে রহিমের অজু ভঙ্গ হইল, রহিম অজু করিয়া আসিয়া এমামকে তৃতীয় রকাত সমাপনে চতুর্থ রকাতে পাইল, রহিম সেই সময় আল্হামদো পরিমান দাঁড়াইয়া ছুরা ব্যতীত রুকু, ছজিদা করত: তৃতীয় রকাত পড়িয়া চতুর্থ রকাত এমামের সঙ্গে পড়িবে। যদি চতুর্থ রকাত না পায়, তবে তৃতীয় রকাতের ন্যায় ছুরা না পড়িয়া রুকু ছজিদা করিয়া নামাজ সমাপন করিবে। যেই ব্যক্তি দ্বিতীয় রকাতে

এমাম দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িবার সময় জমাত ভুক্ত হইল, তৎপর এক বা দুই রকাত নামাজ ঐ ব্যক্তি হইতে পরিত্যাগ হইলে তাহাকে মছবুক লাহেক বলে। যেমন রহিম জোহরের নামাজ দ্বিতীয় রকাতে এমামের সঙ্গে জমাতে ভুক্ত হইল। এমামের সঙ্গে দ্বিতীয় রকাত পড়ার পর রহিমের অজু ভঙ্গ হইল। রহিম অজু করিয়া আসিতে ২ এমাম অবশিষ্ট দুই রকাত সমাপ্ত করিল। এই অবস্থায় রহিমের প্রথম এক রকাত মছ্বুক, শেষের দুই রকাত লাহেক হইবে। দ্বিতীয় রকাত ত এমামের সঙ্গেই পড়িয়াছে। রহিম ঐ নামাজ এই রূপে পড়িবে তৃতীয় ও চতুর্থ রকাতে ছুরা পাঠ ব্যতীত প্রথম রকাতে ছুরা পাঠ করিবে। রু: দি:, দো: মো: ইত্যাদি।

নামাজ ভঙ্গের বিবরণ

নামাজের মধ্যে জানিত অবস্থায় বা ভুলে আলাপ বা কথা বলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। নামাজের ভিতর আহা, উহু করিলে। ক্রন্দন করিলে। হাঁ যদি বেহেস্ত ও দোজখের কথা স্মরণ করিয়া শব্দ করিয়া ক্রন্দন করে নামাজ ভঙ্গ হইবে না। অনাবশ্যক কাঁসিলে বা গলা ছাপ করিবার জন্য কাঁসিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। যদি মজবুরির সময় কাঁসে আবশ্যক বশত: নামাজ ভঙ্গ হইবে না। নামাজ পড়ার সময় কাহাকেও ছালাম দিলে, তাহার উত্তর দেওয়ায়, নামাজ পড়িবার সময় কাহাকেও ছালাম দিলে, ছালামের উত্তর দেওয়ায় যে কোন অবস্থায় হউক না কেন নামাজ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। নামাজে হাঁছির উত্তর “ইয়ারহামুকুমুল্লাহ” বলিলে। কষ্ট বা মছিবতের দরূন ক্রন্দন করিলে। নামাজ পড়িবার সময় কোরআন দেখিয়া পড়িলে। জোহর, আছর ও এশা এই নামাজ সমূহে ভ্রমক্রমে তিন রকাত পড়িলে। নামাজে কোন অশুভ সংবাদ শ্রবণে “ইন্নালিল্লাহ” বলিলে।

নামাজে কোন আশ্চর্য্য জনক সংবাদ শ্রবণে ছোবহানল্লাহ বলিলে। সুসংবাদ শুনিয়া “আলহামদু” বলিলে। নামাজের মধ্যে ‘হা’ হা, ‘হি’ ‘হি’ করিয়া হাস্য করিলে! যেই ব্যক্তির অজু ভঙ্গ হইয়াছে, সেই ব্যক্তি অজু না করিয়া নামাজ পড়িলে। নিজের এমাম ব্যতীত অন্য লোককে লোকমা দিলে। এমাম নামাজের মধ্যে ছুরা নি:স্মরণ হইলে তাহাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়াকে লোকমা বলে। যেই ২ বস্তু মানুষের নিকট চাওয়া যায়, সেই বস্তু নামাজে খোদার নিকট চাহিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। নামাজে আমলে কাছির করিলে, নামাজ ভঙ্গ হইবে। আমলে কাছিরকে শাস্ত্রকারকেরা পঞ্চাবস্থায় বর্ণনা করিয়াছেন। এক অবস্থার উপর শরার বিধান, অন্য চারি অবস্থার উপর বিধান নহে। যেহেতু এক অবস্থা এই যে নামাজি নামাজের কর্ত্তব্য কার্য্য ভিন্ন অন্য কোন কার্য্য করিলে, যদি স্থানান্তরের কোন ব্যক্তি ইহা বিবেচনা করে যে ঐ ব্যক্তি নামাজ পরিতেছে না, তবে নামাজ ভঙ্গ হইবে। স্থানান্তরের ব্যক্তির র্মম্ম, যাহার সম্মুখে নামাজ আরম্ভ করে নাই। অন্য চারি অবস্থা এই: ১। সতত যেই কার্য্যাদি দুই হস্ত দ্বারা নির্ব্বাহিত হয়, তাহা এক হস্ত দ্বারা নির্ব্বাহ করা, যেমন পাগড়ী বাঁধা, বস্ত্র পরিধান করা ইত্যাদি। যেই কর্ম্ম এক হস্তে করা যায় তাহা কছির হইবে না, অর্থাৎ বেশী। যেমন টুপী পরিধান করা অথবা নামাইয়া রাখা উহা কলিল হইবে অর্থাৎ কম। কাছির শব্দের অর্থ বেশী এবং কলিল শব্দের অর্থ কম বা অল্প। ২। তিনটী কার্য্য একাক্রমে করা। ৩। এমন র্কম্ম করার জন্য ভিন্ন মত অবলম্বন করা। ৪। নামাজি মনে ২ বিবেচনা করে যে, আমি অধিক কার্য্য করিয়াছি। এই পাঁচ প্রকার আমলে কছিরের ব্যাখ্যা হইল। নামাজি এমামকে লোক্মা দিলে তিন আয়েতের অধিক পড়ার পর বা অন্য আয়েতে চলিয়া যাওয়ার পর এমাম লোক্মা গ্রহণ করুক বা না করুক, এমাম ও

মোক্তাদি কাহারও নামাজ ভঙ্গ হইবে না। নামাজের আন্দর ছেলে আসিয়া দুগ্ধ পান করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। জননী নামাজ পড়ার সময় শিশু সন্তান আসিয়া স্তন একবার বা দুইবার চুষিলে এবং দুগ্ধ বাহির না হইলে নামাজ ভঙ্গ হইবে না। দুগ্ধ বাহির হইলে ভঙ্গ হইবে। কিন্তু তিনবার চুষিলে দুগ্ধ বাহির না হইলেও ভঙ্গ হইবে। নামাজে কোন দ্রব্য পানাহার করিলে ভ্রমে হউক বা জানিত অবস্থায় হউক ভঙ্গ হইবে। দন্তের মধ্যে বুটের সমান কোন দ্রব্য থাকিলে উহা নামাজের আন্দর গিলিয়া ফেলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে এবং রোজা ও ভঙ্গ হইব।ে বুটরে চযে়ে ক্ষুদ্র হইলে চবিাইয়া গলিলিে ভঙ্গ হইব।ে দন্তের মধ্যে শশ্য থাকিলে উহা গিলিলে ভঙ্গ হইবে না। চিবাইয়া গিলিলে ভঙ্গ হইবে। ঘরের দ্বার বন্ধ করিলে ভঙ্গ হইবে না। কিন্তু বন্ধ দ্বার খুলিলে ভঙ্গ হইবে। পায়জমা পরিধান করিলে ভঙ্গ হইবে। খুলিলে ভঙ্গ হইবে না। পাগড়ী মস্তক হইতে উঠাইয়া জমিতে রাখিলে বা জমি হইতে মস্তকে রাখিলে ভঙ্গ হইবে না। টুপি মাথায় দিলে ভঙ্গ হইবে না। খোলাছা নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, যেই কার্য্যে দুই হস্তের আবশ্যক হয়, তাহা আমলে কাছির হইবে। রমণীর নামাজের সময় তাহার স্বামী আসিয়া দুই রাণের মধ্যভাগ দিয়া সঙ্গম করিলে ঐ রমণীর নামাজ ভঙ্গ হইবে। যদিও কোন অপবিত্র পানি বহির্গত না হয়।রমণী নামাজ পড়িতেছে এই অবসরে স্বামী আসিয়া চুম্বন করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে।স্বামীর কামভাব উদ্দিপ্ত হউক বা না হউক।কিন্তু কামভাব উদ্দীপ্ত হওয়ায় স্পর্শ করিলেও ভঙ্গ হইবে।এমাম মগরীবের ফরজ তিন রকাত পড়িয়া শেষ বৈঠক করার পর ভ্রমে দাঁড়াইয়া চতুর্থ রকাত পড়িলে অথবা জোহর,আছর ও এশার ফরজের শেষ বৈঠক করার পর দাঁড়াইয়া পঞ্চম রকাত পড়িয়া ছোহ ছজিদা করিলে,মছ্বুক মোক্তাদি অর্থাৎ যেই মোক্তাদি এমামের সঙ্গে প্রথম হইতে এক

বা ততোধিক রকাত নামাজ পড়িতে পারে নাই। উল্লিখিত অবস্থায় এমামের সঙ্গে ২ ঐ মছবুক মোক্তাদি দাঁড়াইলে তাহার নামাজ ভঙ্গ হইবে। কারণ এমাম দুই রকাত পড়ার পর তিন রকাত আরম্ভ করিলে নতুবা তিন রকাত পড়ার পর চতুর্থ রকাত আরম্ভ করিলে অথবা চতুর্থ রকাত পড়ার পর পঞ্চম রকাত আরম্ভ করিলে, ঐ মছবুক মোক্তাদি এমামের সঙ্গে নফল নামাজে শরীক হইল। ফরজ অধ্যয়ন কারী নফল অধ্যয়নকারীর সঙ্গে এক্তেদা করা দোরস্ত নহে। নামাজি মাঠে নামাজ পড়িলে, সম্মুখ দিয়া লোক গমনাগমন করিলে এক হাত লম্বা একাঙ্গুলী পরিমাণ মোটা একটী কাষ্ঠ সম্মুখে পুড়িয়া রাখিবে। উহা মোস্তাহাব নামাজির সম্মুখ দিয়া কাষ্ঠ পোতা না থাকিলে বা পোতিত কাষ্ঠের ভিতর কেহ গমন করিতে ইচ্ছা করিলে, তবে উহাকে হস্তের আঙ্গুলীর দ্বারা সঙ্কেত করিয়া নিষেধ করিবে। নতুবা ‘ছোবহানল্লাহ’ বলিয়া নিষেধ করিবে। ময়দানে বা মাঠে বহু লোক একত্রিত হইয়া নামাজ পড়িলে শুধু এমামের সম্মুখে কাষ্ঠ পুতিলে সমাধা হইবে। নামাজ পড়িবার সময় মোছল্লির সম্মুখ দিয়া কোন পুরুষ বা রমণী গমন করিলে মহাপাতকী হইবে। নবী (আ:) বর্ণনা করিয়াছেন যে, নামাজির সম্মুখ দিয়া নরনারী চলাচল করিলে কিরূপ পাপ হইবে তাহা মানব জাতি জানিতে পারিলে ৪০ (চল্লিশ) বৎসর র্পয্যন্ত ঐ স্থানে দণ্ডায়মান থাকিতে হইলেও থাকিত। তাই বলি মাঠে নামাজ পড়িবার সময় আড় দেওয়া উচিত। কোন স্ত্রীলোক পুরুষের নামাজের কাতারে আসিয়া মিলিলে তিন ব্যক্তির নামাজ ভঙ্গ হইবে। ডান দিকের একজন বাম দিকের একজন ও পশ্চাতের একজনের নামাজ ভঙ্গ হইবে। স্ত্রীলোক এক নামাজ পড়িতেছে পুরুষ অন্য নামাজ পড়িতেছে সমান ভাবে পাশাপাশি দাঁড়াইলে নামাজ মক্রুহ তাহরীমা হইবে। ছেলে ফরজ নামাজ পড়ার সময় পিতা বা মাতা কোন সাহায্য তলব করা

ব্যতীত ডাকিলে নামাজ ভঙ্গ করিবে না। কিন্তু নফল নামাজ পড়িবার সময় ডাকিলে, মাতা পিতা জানিতেছে না যে সে নামাজ পড়িতেছে। তখন উত্তর দেওয়া ওয়াজেব জানিবে। নামাজ পড়ার কথা অবগত থাকা সত্বওে ডাকিলে উত্তর না দিলে কোন ক্ষতি হইবে না। এইরূপ পীরের মুরিদ ও শিষ্য জানিবে। পাঁচ আনা মূল্যের কোন বস্তু চুরি বা হরণ হওয়ার কোন আশঙ্কা হইলে ঐ বস্তু নিজের বা অপরের হউক নামাজ ভঙ্গ করিতে পারিবে। এইরূপ সর্প ও বিচ্ছু মারিবার জন্য নামাজ ভঙ্গ করিতে পারিবে। নামাজের আন্দর পাগল বা অজ্ঞান হইলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। মোছল্লরি সঙ্গে প্রস্তর থাকিলে ঐ প্রস্তর কোন লোককে নিক্ষেপ করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। কাবার দিক হইতে অন্য দিকে বক্ষ ফিরাইলে ভঙ্গ হইবে। কিন্তু কাবার দিক হইতে বক্ষ ছাড়া মুখ ফিরাইলে তৎক্ষণাত কাবার দিকে মুখ করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে না। নামাজ পড়িবার সময় দন্ত হইতে রক্ত বাহির হইলে থুক হইতে রক্তের অংশ অধিক হইলে ভঙ্গ হইবে। মিষ্ট বস্তু আহার করিয়া নামাজ আরম্ভ করার পর মুখে আস্বাদ লাগিলে ভঙ্গ হইবে না। কিন্তু মুখে মিঠাই থাকিলে বা অন্য কোন বস্তু সরিষা পরিমাণ, নামাজ পড়ার সময় বাহির হইতে মুখে প্রবেশ করাইয়া চর্ব্বন করিয়া গিলিয়া ফেলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। আ: গি: ১ম খণ্ড, স্বামী ১ম খণ্ড, মো: ফতোয়া ১ম খণ্ড কাঁজি খাঁ ১ম খণ্ড রু: দি:, জা: ফতোয়া, বেহেস্তী জেওর ২য় খণ্ড ইত্যাদি।

          ছালামের বিবরণ।

ছালাম দুই প্রকার। ১।আচ্ছালামু আলায়কুম। ২।ছালামুন আলায়কুম। এই দুই প্রকারকে ছালাম বলে। কেহ কাহাকে ছালাম করিলে তাহার উত্তর দেওয়া ফরজে কেফায়া। কিন্তু ছালাম করা

ছুন্নত বটে। কয়েক ব্যক্তিকে ছালাম করা মক্রুহ জানিবে। ১। নামাজ পড়ার সময় ২। কোরান পাঠের সময়। ৩। ওয়াজ নছিহতের সময়। ৪ হাদিছ বর্ণনা করার সময়। ৫। যিনি দোয়া বা খোদার জেকেরে আছেন। ৬। যিনি লব্বায়কা বলিতেছেন। ৭। যিনি আজান দিতেছেন। ৮। যিনি প্রার্থনা করিতেছেন। ৯। যিনি একামত বলিতেছেন। ১০। যিনি খোত্বা পড়িতেছেন। ১১। যাহারা ওয়াজ, খোত্বা ও হাদিছ শ্রবণ করিতেছেন। ১২। মছায়ালার গ্রন্থ স্মরণকারী। ১৩। আসামী ফরিয়াদী উপস্থিত করিয়া বিচারাসনে বসিলে। ১৪। শরার বিদ্যা লইয়া তর্ক করার সময়। ১৫। শিক্ষক ছাত্রকে র্ধম্ম শিক্ষা দিবার সময়। মাতাল বা অজ্ঞানকে। ১৬। যুবতী রমণীকে। ১৭। তাস, পাশা, সতরঞ্জ, জুয়া খেলাকারী, শরাবী, নিন্দাকারী, বেনমাজি, গায়ক, দস্যু, গুণ্ডা, মিথ্যাবাদী, অত্যাচারী এবং স্বীয় পত্নীকে বের্পদ্দায় রাখা ব্যক্তিগণকে। ১৮। ভার্য্যার সহিত আলিঙ্গন করার সময় ও বির্ধম্মীকে। ১৯। গালিদাতা ব্যক্তিকে। ২০। যেই বৃদ্ধ বিদ্রƒপকারী। ২১। বাহ্য প্রস্রাব করার সময়। ২২। আহারাদি করার সময়। ২৩। কবুতর বা ক্রীড়াকারীকে। এই সকল ব্যক্তিকে ছালাম করা মক্রুহ। কয়েক ব্যক্তিকে ছালাম দিলে জওয়াব দেওয়া ওয়াজেব নহে। ১। যে ব্যক্তি নামাজে আছেন। ২। যিনি আহার করিতেছেন। ৩। যিনি কোরান পাঠ করিতেছেন। ৪। যিনি দোয়া বা খোদার জিকির করিতেছেন। ৫। যিনি খোত্বা পড়িতেছেন। ৬। যিনি লাব্বায়কা পড়িতেছেন। ৭। যিনি বাহ্য প্রস্রাব করিতেছে। ৮। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক। ৯। মাতাল বা অজ্ঞান। ১০। যুবতী রমণী। ১১। নিদ্রাযোগে শয়নকারী। ১২। আসামী ফরিয়াদীকে। ১৩। আচ্ছালামু আলায়কুম নতুবা ছালামুন আলায়কুম এই দুই প্রকার ছাড়া অন্য

প্রকার ছালাম করিলে। ১৪। আজান প্রদানকারী। ১৫। যিনি প্রার্থনা করিতেছেন। ১৬। যিনি একামত বলিতেছেন। ১৭। স্ত্রী পুরুষ সঙ্গম করার সময়। এই সকল অবস্থায় ছালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজেব নহে। ছালাম দেওয়ার সময় হস্ত উত্তোলন করা এবং মাথার উপর অথবা বক্ষের উপর হস্ত রাখা ‘লা বাছা বিহি’ অর্থাৎ কোন ভয় নাই লিখিয়াছে। আচ্ছালামু আলায়কুম বলিলে উহার উত্তরে অ-আলায়কুমুচ্ছালাম অ-রাহমতুল্লাহে অ-বরকাতুহু বলা মোস্তাহাব। যেই স্থানে হিন্দু ও মোসলমান একত্রিত থাকে আচ্ছালামু আলা মনিত্যাবা’আল হুদা বলিয়া ছালাম করিতে হইবে। বির্ধম্মী ছালাম করিলে প্রত্যুত্তরে হাদাকাল্লাহু বলিবে। দো: মো:, গা: আ:, ১ম খণ্ড ম: মৃ: ফতোয়া মৌলানা আবুল হাছানাত ৩য় খণ্ড রু: দি: ইত্যাদি।

নামাজের মক্রুহের বিবরণ

মক্রুহ দুই প্রকার: ১। মক্রুহ তাহরিমা ২। মক্রুহ তনজীহি। মক্রুহ তাহরিমা যেমন: ১। চদল অর্থাৎ মাথার উপর অথবা স্কন্ধের উপর কাপড় রাখিয়া দুই কেনারা এইরূপ ছাড়িয়া দিবে যেন কাপড়ের দুই মাথা ঝুলিয়া থাকে তাহাকে চদল বলে। কাব্বার দুই আস্তিনের মধ্যে হস্তদ্বয় প্রবেশ না করিয়া কাব্বাকে স্কন্ধের উপর রাখিয়া দেওয়াকে কাব্বার চদল বলে। ২। চাদর ইত্যাদিকে দক্ষিণ বগলের নিম্নদিক হইতে নিয়া বাম স্কন্ধের উপর জড়াইয়া দুই দিক ঝুলাইয়া দিয়া নামাজ পড়িলে। ৩। ছজিদায় যাইবার সময় সম্মুখের দিক হইতে বা পশ্চাতের দিক হইতে কাপড় উত্তোলন করা, যেন কাপড়ে মাটি বা অন্য কোন বস্তু না লাগে। ৪। আস্তিন অথবা দামান উঠাইয়া নামাজ পড়া। ৫। নামাজি নিজ অঙ্গ ও কাপড় অথবা দাড়ি দিয়া অনাবশ্যকীয় কাজ করা। ৬। এমন বস্তু মুখের

মধ্যে রাখা যাহাতে ছুন্নত মতে কেরাত পড়িতে পারা যায় না। ৭।মস্তকের উপর চুল বাঁধিয়া নামাজ পড়া। ৮।হস্তের আঙ্গুলী টানিয়া শব্দ করা। ৯।ডান দিক বা বাম দিক গর্দ্দন ফিরাইয়া দৃষ্টি করা। ১০।সজিদায় যাইবার সময় ছোট ২ প্রস্তর খণ্ড দূর করা, কিন্তু একবার দূর করিতে পারে। ১১।কোমরের উপর হস্ত রাখা। ১২।ময়লা যুক্ত কাপড় দ্বারা নামাজ পড়া।কিন্তু অন্য কাপড় না থাকিলে মক্রুহ হইবে না। ১৩।কুকুরের ন্যায় বসিলে অর্থাৎ চৌতড়ের উপর বসিয়া দুই হাঁটু খাড়া রাখিয়া নামাজ পড়া মক্রুহ হইবে। ১৪।কাতারের পশ্চাতে এক ব্যক্তি দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া। আগের কাতারে জায়গা না থাকিলে মকরুহ হইবে না। ১৫।অনাবশ্যকে উলঙ্গ মস্তকে নামাজ পড়িলে। ১৬।এমাম মসজিদের মেহেরাবে একাকী দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া। ১৭।জমাতে এমামের দক্ষিণে কম ও বামে বেশী মোক্তাদি থাকিলে। ১৮।নামাজে হেলা দোলা করিলে। ১৯।অনাবশ্যকে ডান পা বা বাম পায়ে জোর দেওয়া। ২০।ছজিদায় পা ঢাকিয়া রাখা। ২১।অনাবশ্যকে পাগড়ী রাখিয়া মস্তকে ধারণ না করিলে। ২২।র্অদ্ধ আস্তিন কোর্ত্তার দ্বারা অথবা আস্তিন উপরের দিকে উত্তোলন করিয়া রাখিয়া নামাজ পড়া। ২৩।মস্তকের চতুর্দিকে পাগড়ী বাঁধিয়া মধ্যভাগে খোলা রাখা। ২৪।মুখ ও নাক নামাজের মধ্যে ঢাকয়িা রাখা।আরবীতে উহাকে তলচ্ছুম বলে। ২৫।সজিদা ইত্যাদিতে হস্ত ও পায়ের আঙ্গুলী কাবার দিক হইতে ফিরাইয়া রাখা। ২৭।মসজিদে নিজের জন্য খাস করিয়া এক জায়গায় নামাজ পড়া। ২৭।কোন লোক নামাজ পড়িবার জন্য আসিতেছে তাহার জন্য এমাম রুকু সজিদাতে গৌণ করিলে। ২৮। অনাবশ্যকে রুকুতে হাঁটুর উপর ও সজিদাতে জমির উপর হাত না রাখিলে। ২৯।উদর রানের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিলে। ৩০।যেই গৃহে জীব জন্তুর চিত্র থাকে, সেই গৃহে নামাজ পড়িলে চিত্র কাঠের

হউক বা কাগজের নর্ম্মিতি হউক। ঐ চিত্র সম্মুখে হউক বা দক্ষিণে নতুবা বামে ও উপরে হইলে নামাজ মক্রুহ হইবে। কিন্তু পশ্চাতে বা পায়ের নীচে হইলে মক্রুহ হইবে না। ৩১।রুকুতে যাইয়া কেরাত সমাপ্ত করা। অনাবশ্যকে শরীর অনাবৃত রাখিয়া নামাজ পড়া। ৩২।মাথার চতুর্দিক রুমাল বাঁধিয়া মধ্য ভাগ খালি রাখা। ৩৩।গলায় জড়ান বস্ত্র না খুলিয়া নামাজ পড়া। ৩৪।যখন ছজিদা করিবে জানু (হাঁটু) জমির উপর রাখিবার র্পূব্বে হস্ত রাখা এবং ছজিদা হইতে মস্তক উঠাইবার সময় হস্ত উঠাইবার র্পূব্বে জানু উত্তোলন করা। ৩৫।তাড়াতাড়ি ছজিদা করা। ৩৬।রুকু করার সময় ও রুকু হইতে মস্তক উঠাইবার সময় হস্তদ্বয় উঁচু করা। ৩৭।দুই বাজু ছজিদায় বিছাইয়া দেওয়া। ৩৮।প্রথম রকাতে ছোট ছুরা পাঠ করিয়া দ্বিতীয় রকাতে তিন আয়েত পরিমাণ অধিক পাঠ করিলে। ৩৯।দুই রকাতের মধ্য ভাগে ছোট ছুরা ত্যাগ করিয়া নামাজ পড়া যেমন প্রথম রকাতে ছুরা তকাছুর পড়িয়া দ্বিতীয় রকাতে ছুরা হুমাজা পড়া। ৪০।প্রথম রকাতে ও দ্বিতীয় রকাতে কোরআনের তরতীবের উল্টা করিলে যেমন প্রথম রকাতে ‘কুলহু আল্লাহো’ পড়িয়া পরে তব্বতএদা পড়া। ৪১।গছবের জমিতে নামাজ পড়া। ৪২।নামাজে আলহামদো পড়িবার র্পূব্বে বিছমিল্লাহ বড় শব্দ করিয়া পড়া। ৪৩।ছানা ও তাউজ বড় করিয়া পড়া। ৪৪। আমিন বড় করিয়া পড়। ৪৫।নমাজের মধ্যে কোর্ত্তার আস্থিন বা পাখা দ্বারা বাতাস করা। কিন্তু তিনবার পাখা করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। ৪৬।জীব জন্তুর চিত্র করা বস্ত্র পরিধান করিয়া নামাজ পড়া। ৪৭।নামাজে শরীর চুলকাইলে। ৪৮।নামাজে চক্ষু বা মাথার দ্বারা ইঙ্গিত করিলে। ৪৯।অনাবশ্যকে নামাজে হস্তপদ নাড়িলে। ৫০। পাগড়ীর পেঁচের উপর ছজিদা করিলে। ৫১। মুখে টাকা গং রাখিয়া কেরাত পড়া। ৫২। নামাজে থুথু ফেলা। ৫৩।

রুকু হইতে স্থীর হইয়া না দাঁড়াইলে। ৫৪। ছজিদা হইতে মস্তক স্থির না করা। ৫৫। ফরজ নামাজে এক ছুরা দুই রকাতে দুই বার পড়া, কিন্তু নফল নামাজে মক্রুহ হইবে না। প্রাণী ছাড়া অন্য কোন বস্তুর চিত্র সম্মুখে বা ডান দিকে অথবা বাম দিকে থাকিলে নামাজ মক্রুহ হইবে না যেমন বৃক্ষ ইত্যাদি। যদি কেহ ফরজ নামাজের প্রথম রকাতে ভুলে কুল আয়োজো-বেরব্বিন্ নাছ পড়ে দ্বিতীয় রকাতে ঐ ছুরা পাঠ করিলে নামাজ মক্রুহ হইবে না। ৫৬। প্রথম রকাত হইতে দ্বিতীয় রকাতে ফরজ নামাজে লম্বা পড়া। ৫৭। রুকু ছজিদাতে কোরান পাঠ করা। ৫৮।ছজিদার তছবীহ ত্যাগ করা। ৫৯। রুকু ছজিদার তছবীহ তিনবার হইতে কম পড়া। ৬০।ছজিদায় ললাটে মৃত্তিকা লাগিলে ঐ মাটি ঝাড়িয়া ফেলা। ৬১।কোন লোকের মুখের দিক হইয়া নামাজ পড়া। ৬২।জীব জন্তুর চিত্রের উপর ছজিদা করা। ৬৩।এমাম মোক্তাদি হইতে একাকী উচু জায়গায় দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া। ৬৪।এমাম মোক্তাদি হইতে একাকী এক হাত পরিমাণ নীচে দাঁড়াইয়া এমামতি করা। ৬৫।কোন ব্যক্তি জমাতের কাতারে একাকী দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া।যেন অপরাপর মোক্তাদিগণের বৈঠকে ও রুকু এবং ছজিদাতে তাহার বিপরীত হয়। ৬৬।সাহি রাস্তার উপর নামাজ পড়িলে। ৬৭।যেইস্থানে পশ্বাদি জবেহ করা যায়, সেই স্থানে নামাজ পড়া। ৬৮।ঘোড়ার আস্তাবলে অথবা গো-শালায় নামাজ পড়িলে। ৬৯। গরুর গোবর যেই স্থানে ঢালা যায়। ৭০।গোছলের স্থানে নামাজ পড়া। ৭১।কবর সামনে রাখিয়া নামাজ পড়িলে। কিন্তু ডানদিক ও বামদিক এবং সম্মুখ দিক হইতে ছজিদার পরিমাণ স্থান বাদ দিয়া নামাজ পড়িলে মক্রুহ হইবে না। অনাবশ্যকে এক ছুরা হইতে এক আয়ত কি, দুই আয়ত পড়ার পর অন্য ছুরা হইতে পাঠ করা। ৭২।কাবার ছতের উপর নামাজ পড়া। ৭৩।এমামের

চরিত্র খারাব হওয়ার দরুন মোক্তাদিগণ তাহার উপর নাখোশ হইলে। ৭৪।এমামের লম্বা কেরাতে মোক্তাদিগণের ক্ষতি হইলে। ৭৫।এমাম রুকু, ছজিদার তছবিহতে এমনভাবে তাড়াতাড়ি করে যে যাহাতে মোক্তাদিগণ তিনবার তছবিহ বলিতে না পারে এবং আত্তাহিয়াতও সমাপ্ত করিতে না পারে। ৭৬।এমাম নামাজের কেরাতে বন্ধ হইয়া গেলে, মোক্তাদির লোক্মার দিকে অগ্রসর হওয়া। কারণ ঐ সময় তিন আয়াতে পড়িয়া রুকু দিবে অথবা অন্য আয়ত পড়িয়া নামাজ শেষ করিবে। ৭৭। যেই ফরজের পর ছুন্নত থাকে যেমন জোহর, মগরীব ইত্যাদি সেই ফরজের মুনাজাত করার পর ঐ স্থান ত্যাগ না করা। ৭৮। গোলামের এমামতি। ৭৯। অন্ধের এমামতি। ৮০। আ’রাবীর এমামতি। ৮১। ফাছেকের এমামতি। ৮২। হারামজাত এমাম হওয়া, কারণ ৭৮-৮২ র্পয্যন্ত এই সমস্ত লোক বিদ্যাহীন হইয়া থাকে। শিক্ষীত হইলে মকরুহ হইবে না। ৮৩। ঈদের নামাজের পূর্বে খাওয়াছ ব্যক্তি অর্থাৎ খাছ ২ লোকে-নফল নামাজ পড়া। ৮৪। বাহ্য ও প্রস্রাবের হাজত লইয়া নামাজ পড়া, যদি সময় অতিরিক্ত থাকে হাজত পুরা করিয়া নামাজ পড়িবে, নতুবা হাজত লইয়া নামাজ পড়িবে। ৮৫। ময়দানে নামাজ পড়িবার সময় মুছল্লির বা এমামের সম্মুখে কোন বস্তুর আড় না থাকিলে, ঐ আড় জমীর উপর একটি লাটি পুতিয়া দিলে হয় নতুবা কোন বৃক্ষ বা লোক নতুবা পশুর দ্বারাও হয়। ৮৬। নামাজ পড়িবার সময় আকাশের দিকে দৃষ্টি করা। ৮৭। খাদ্য সামনে রাখিয়া নামাজ পড়িলে। ৮৮। এমাম মস্তক উঠাইবার র্পূব্বে মোক্তাদি মস্তক উঠাইলে বা রাখিলে। ৮৯। ফরজ নামাজে কোরআনের আয়ত গণনা বা তছবিহ আঙ্গুলের সাহায্যে গণনা করা। ৯০। অনাবশ্যকে দিওয়ার বা লাটির উপর ঠেষ দিয়া নামাজ পড়া। ৯১। জুম্মার নামাজে বা

বা যেই সমস্ত নামাজে এমাম চুপে ২ কেরাত পড়ে তাহাতে ছজিদার আয়ত পড়া। ৯২। এমামের পশ্চাতে মোক্তাদির কেরাত পড়া। ৯৩। অনাবশ্যক হস্ত দ্বারা মৌমাছি তাড়াইয়া দেওয়া দুইবার, কিন্তু তিনবার তাড়াইলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। ৯৪। সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন,ে র্সূয্যাস্ত এই তিন সময় নামাজ পড়া। ৯৫। কোর্ত্তা থাকা স্বত্বওে কেবলমাত্র পায়জামা পরিধান করা। উল্লিখিত মকরুহ সমূহের দ্বারা নামাজ দুরস্ত হইবে। কিন্তু স্মরণ রাখিবে, যেই নামাজ মকরুহ তাহরিমা সহ আদায় করা যাইবে, সেই নামাজ দ্বিতীয় বার পড়া ওয়াজেব এবং মকরুহ তনজিহি সহ আদায় করিলে, উহা পুনরায় পড়া মোস্তাহাব। ফেকার গ্রন্থে আরও বহু মকরুহ বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে ৯৫টি এস্থলে ব্যাখ্যা করা গেল উপরে লিখিত মকরুহ হইতে বাজ মকরুহ তাহ্রিমা বাজ তনজিহি জানিবে। মজমুয়া ফতোয়া মৌলানা আবুল হাছনাত ১ম খণ্ড ও ২য় খণ্ড ও ছগিরী, আলমগীরি ১ম খণ্ড ফতোয়া এমদাদিয়া ১ম খণ্ড, দোররুল মোখতার, রুকুনুদ্দিন, বেহেস্তি জেওর ২য় খণ্ড ইত্যাদি।

ছুরা পাঠ করিবার বিবরণ:

এমামে জুমা, দুই ঈদ, ফজর, মগরীব ও এশারের নামাজে শব্দ করিয়া প্রথম দুই রকাতে আদা হউক বা কাজা হউক ছুরা পাঠ করা ওয়াজেব। আদা নামাজ একাকী পড়িলে মুছল্লির ইচ্ছা, শব্দ করিয়া ও পড়িতে পারিবে অথবা চুপে ২ পড়িতে পারিবে। কাজা পড়িলে চুপে ২ ছুরা পাঠ করিবে। জোহর আছর শব্দ করিয়া পড়িতে পারিবে না। কাজা হউক বা আদা হউক, একাকী হউক বা জমাতী হউক, প্রথম দুই রকাতে আলহামদু পড়ার পর অন্য ছুরা পড়বিে প্রথম দুই রকাতে ভুলে না পড়িয়া শেষের দুই রকাতে আলহামদু পড়ার পর অন্য ছুরা পাঠ করিয়া ছোহ ছজিদা দিলে নামাজ দোরস্ত

হইবে। এক ছুরা দুই রকাত নফল নামাজে পড়িলে মকরুহ হইবে না। কুলহু আল্লাহু আহাদ কে তুলহু আল্লাহো আহাদ পড়িলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। ফজরের নামাজে তেওয়ালে মোফাচ্ছাল এবং জোহরের নামাজে ও তেওয়ালে মোফাচ্ছাল পড়া, গৃহবাসী এমাম ও একা নামাজির জন্য ছুন্নত। ছুরা হুজরাত হইতে বুরুজ র্পয্যন্ত তেওয়ালে মোফাচ্ছাল বলে। সুতরাং ফজর ও জোহরে উহার মধ্য হইতে যাহা ইচ্ছা পাঠ করিবে। বুরুজ হইতে লাম-ইয়াকুন র্পয্যন্ত আওছাতে মোফাচ্ছাল যেহেতু আছর ও এশায় উহার মধ্য হইতে যাহা ইচ্ছা পাঠ করিবে। লাম-ইয়াকুন হইতে নাছ র্পয্যন্ত কেছারে মোফাচ্ছাল, সুতরাং মগরেবের নামাজে উহার মধ্য হইতে যাহা ইচ্ছা তাহা পাঠ করিবে। উহা পাঠ করা গৃহবাসী ব্যক্তির জন্য বটে। মোছাফের আল্হামদু এবং যেই ছুরা পড়িতে ইচ্ছা হয় পাঠ করিবে। গৃহী যেই ছুরা বিশেষ আবশ্যকে পড়িতে ইচ্ছা করে তাহা পাঠ করিবে। হামিসা এক ছুরা নামাজের জন্য র্নিদ্দষ্টি করিয়া পড়া মক্রুহ, কিন্তু নফল নামাজে নহে। ফরজ নামাজে এক রকাতে এক ছুরা দুইবার পড়া এবং দুই রকাতে এক ছুরা দুইবার পড়া মক্রুহ। কিন্তু অন্য ছুরা না জানিলে আবশ্যক বশত: পড়িলে মকরুহ হইবে না। ভুলে ফরজ নামাজে এক ছুরা দুই রকাতে দুই বার পড়িলে মক্রুহ হইবে না। যেমন প্রথম রকাতে কুল-আউজু-বে রব্বিন্নাছ পড়িলে দ্বিতীয় রকাতেও ছুরা নাছ পড়িবে। অন্য ছুরা পড়িলে মক্রুহ হইবে। কারণ কোরান উল্টা বা উচ্চতা পড়ার ন্যায় পাপ হইবে। প্রথম রকাতে আলম তারা দ্বিতীয় রকাতে আরা-আয়তললজি পড়িলে নামাজ মক্রুহ হইবে কেননা মধ্যে ছোট এক ছুরা রাখিয়া পড়া মক্রুহ। সুতরাং দুই ছুরা মধ্যে রাখিতে হইবে। অথবা লম্বা এক ছুরা মধ্যে রাখিবে। প্রথম রকাতে কুলহু আল্লাহ দ্বিতীয় রকাতে তব্বৎ এদা পাঠ করিলে, কোর-

আন উল্টা করিয়া পাঠ করার কারণে মক্রুহ তন্জিহি হইবে। এমাম আবু হানিফা (রা:) বলেন, প্রত্যেক রকাতে এক আয়ত পড়া ফরজ, এমাম আবু ইউছুপ (রহ:) ও মহাম্মদ (রহ:) তিন আয়ত পড়া ফরজ বলিয়া বলেন। অথবা লম্বা এক আয়ত, যেন ছোট তিন আয়াতের সমান হয় পড়া ফরজ। এক শব্দ এক আয়ত হইলে যেমন মোদ্হাম্মাতান নতুবা এক অক্ষর এক আয়ত হইলে যেমন ق কাফ্ ও ص ছোয়াত ইত্যাদি এক আয়ত পড়িয়া নামাজ খতম করিলে দুরস্ত হইবে না। যাহা মনে ২ (চুপে ২) পড়া যায় নিজে শুনে সঙ্গীয় লোকে শুনিতে না পায় উহাকে নি:শব্দ বা চুপে ২ পড়া বলে। যাহা বহু লোকে শ্রবণ করিতে পারে উহাকে উচ্চ শব্দ বলে। নিম্ন শ্রেণীর উচ্চ শব্দ সঙ্গীয় লোকে শ্রবণ করা। নিম্ন শ্রেণীর চুপে ২ পড়া নিজে শুনিতে পাওয়া। মোক্তাদি এমামের পাছে ছুরা ফাতেহা বা অন্য কোন ছুরা পাঠ করা দুরস্ত নহে। ছগিরী, সরহে বেকায়া ১ম খণ্ড ফতোয়া এমদাদিয়া ১ম খণ্ড, দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি

اسال الله رب العلمين ذالجود العميم ان يحقق لى فيه الاخلاص ويجعله نافعا الى يوم القيمة انه على ما يشاء قدير و بالاجابة جدير وان يسهل اكمال هذا الكتاب مع الاخلاص والنفع العميم لى ولعامة العباد فى البلاد و الحمدلله اولا واخرا وظاهرا و باطنا وصلى الله على سيدنا محمد وعلى اله وصحبه وسلم جزا الله على افقر الورى جامعه الحقير محمد نذير احمد المجددى غفرله و لوالديه والمسلين امين والحمد لله رب العلمين ـ

  • প্রথম খন্ড সমাপ্ত

২য় খণ্ড

খলিফার বিবরণ

কোন কারণ বশত: নামাজের মধ্যে এমামের অজু ভঙ্গ হইলে নূতন এমাম নিযুক্ত করাকে খলিফা বলে। আমরা উহাকে প্রতিনিধি বলি। নামাজের মধ্যে যে স্থান হইতে অজু ভঙ্গ হইয়াছে পুনরায় অজু করিয়া ঐ স্থান হইতে নামাজ আরম্ভকরিলে দুরন্ত হওয়ার জন্য তের র্সত্ত র্নিদ্ধারিত আছে। যদি ঐ সর্ত্ত বাধ্য হয় নামাজ সিদ্ধ নতুবা অসিদ্ধ হইবে। অসিদ্ধ হইলে পুনরায় পড়িতে হইবে। ঐ তের সর্ত্ত এইÑ ১। বে-এখতেয়ার বশত: নামাজ ভঙ্গ হইলে। ২। শরীর দ্বারা অশুদ্ধ বস্তু নির্গত হইলে। ৩। নামাজ ভঙ্গের কোন ঘটনা ঘটিলে ৪। উন্মাদ বা অজ্ঞান হইলে। ৫। নামাজ ভঙ্গের কোন ঘটনা ঘটিলে কোন অঙ্গীয় আদায় না করিলে। ৬। নামাজে অজু ভঙ্গ হইলে পুনরায় অজু করার নিমিত্ত হাঁটিয়া ২ ছুরা পাঠ করা। ৭। অজু ভঙ্গের পর পুনরায় নামাজ আরম্ভ করা র্পয্যন্ত এমন কার্য্য না করা যাহাতে নামাজ ভঙ্গে পরিণত হয়। ৮। অনাবশ্যক কোন কার্য্য না করা যেমন কাছে পানি রাখিয়া দুরে গমন করা। ৯। অজু করিতে গেলে অনাবশ্যক গৌণ করা। ১০। যে কারণে অজু ভঙ্গ হইয়াছে সেই কারণ ভিন্ন অন্য কোন ২য় কারণ পাওয়া না যাওয়া। ১১। কাজা নামাজের কথা স্মরণ না হওয়া। ১২। লাহেক না হওয়া। ১৩। যে ২ ব্যক্তিকে এমাম নিযুক্ত করা অসিদ্ধ তাহাদিগকে নূতন এমাম র্নিব্বাচন না করা। নামাজ ভঙ্গের পর রুকু সেজদা করিলে কি অন্য কোন অঙ্গীয় আদায় করিলে সিদ্ধ হইবে না। নামাজে এমামের অজু

ভঙ্গ হইলে তাহার পশ্চাতের বালক কি স্ত্রীলোককে খলিফা পদে বরণ করিতে পারিবেনা। নামাজের মধ্যে এমামের অজু ভঙ্গ হইলে জ্ঞানী ব্যক্তি অর্থাৎ মুসলমানী র্ধম্ম শাস্ত্রে অভিজ্ঞ হইলে তাহাকে ইঙ্গিত করিয়া অথবা তাহার হস্ত ধরিয়া টানিয়া এমামের স্থানে (মেহরাবে) আনয়ন করত: অবশিষ্ট নামাজ সমাপন করিবার নিমিত্ত নূতন এমাম নিযুক্ত করিবে। র্পূব্বোক্ত এমাম পংক্তি পরিত্যাগ করিয়া না গেলে অথবা মসজিদের বাহিরে না গেলে নূতন এমাম নিযুক্ত করিতে পারিবে। এমাম মসজিদের বাহিরে গেলে তাহার ক্ষমতা রহিত হইবে। এমাম খলফিা নিযুক্ত না করিয়া বাহিরে গেলে কোন হুসিয়ার মোক্তাদি ইমামের নিয়ত করিয়া এমামের স্থানে দাঁড়াইলে নামাজ সিদ্ধ হইব।ে জোহরের দুই রকাত সমাপন করিয়া এমামের অজু ভঙ্গ হইলে অবশিষ্ট দুই রকাত নামাজের জন্য পূর্ব্বতন এমাম দুই অঙ্গুলী উত্তোলন করিয়া নূতন এমামকে ইঙ্গিত করিবে তবেই ইঙ্গিতে নূতন এমাম উহা বুঝিবে, এক রকাত বাকী থাকিলে এক অঙ্গুলী দ্বারা ইঙ্গিত করিবে। হে পাঠক! স্মরণ রাখিও যত রকাত বাকী থাকিবে তত অঙ্গুলী নূতন এমামকে দর্শন করাইয়া ইঙ্গিত করিবে। সজেদা বাকী থাকিলে উরুর (হাঁটুর) উপর হস্ত রাখিয়া ইঙ্গিত করিবে। রুকু বাকী থাকিলে ললাটে হস্ত দ্বারা সঙ্কেত করিবে। ছুরা পাঠ বাকী থাকিলে মুখে হস্ত দ্বারা সংকতে করবি।ে সজেদা তলোওয়াত বাকী থাকলিে ললাট এবং জহিবায় হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিবে।ছোহ সেজদা বাকী থাকিলে বক্ষে হস্ত দ্বারা সঙ্কেত করিবে।মসজিদে পানী থাকিলে ঐ পানীর দ্বারা এমাম অজু করিয়া নামাজ পড়াইতে পারে।যে র্পয্যন্ত এমাম মসজিদে থাকেন, সে র্পয্যন্ত এমামতি কায়েম থাকে।শামী গ্রন্থকর্ত্তা বলেন এমামের ঐ সকল গোলমাল করা অপেক্ষা নামাজ পুনরায় পড়াই ভাল ও শ্রেয়:।এমাম নামাজের মধ্যে কোন কারণবশত: যদি ছুরা পাঠ করিতে না পারে,অথবা ছুরা পাঠের ক্ষমতা রহিত হয়, অর্থাৎ ফরজ নামাজ পড়ার কিঞ্চিৎ মাত্র শক্তি থাকিলে অন্যকে নেতা নিযুক্ত করিতে পারে।কিন্তু এমাম মহাম্মদ ও আবু ইউছুপ(রহ:)বলিয়াছেন এমত অবস্থায় নামাজ ভঙ্গ হইবেক।বাহ্য প্রস্রাব করার জন্য নামাজ পড়ায় অশক্ত হইলে এমাম মহাম্মদ (রহ:) ও আবু ইউছুপ(রহ:) নূতন এমাম নিযুক্ত করিতে পারে বলিয়া বলিয়াছেন।এমাম আবু হানিফা (রহ:) অসিদ্ধ বলিয়া বলিয়াছেন। এমাম রুকু সেজদা করিতে অপারক হইলে নূতন এমাম নিযুক্ত করিতে পারিবে না। নামাজের আন্দর এমাম সরমের গতিকে বা ভয়ের কারণে ছুরা পাঠ করা ভূলযি়া গেলে ঐ নামাজ সিদ্ধ হইবে না। কারণ এস্থলে এমাম মুর্খ হইল। সুতরাং মূর্খের পশ্চাৎ নামাজ সিদ্ধ নয়। এমাম নেতা নিযুক্ত করিয়া তৎক্ষণাৎ পানীর নিকট গিয়া অজু করত: নেতার পশ্চাৎ জমাতে ভুক্ত হইবে। নেতা নামাজ সমাপন করিয়া থাকিলে যেই স্থানে অজু করিয়াছে সেই স্থানে অথবা র্পূব্বে যেই স্থানে দাঁড়াইয়াছিল, সেই স্থানে দাঁড়াইয়া অবশিষ্ট নামাজ সমাপন করিবে। এমাম লাহেক, মছবুক, প্রবাসী ব্যক্তিগণকে খলফিা নিযুক্ত করিতে পারে, কিন্তু গৃহবাসী (মুকিম) মোক্তাদিকে নেতা নিযুক্ত করা র্কত্তব্য। লাহেক ব্যক্তিকে খলিফা করিলে, লাহেক ব্যক্তি প্রথমত: মোক্তাদিগণকে ইঙ্গিত করিয়া নিষেধ করিবে, যে র্পয্যন্ত আমি আমার বর্জ্জিত নামাজ সমাপন না করি, সে র্পয্যন্ত আমার এক্তেদা করিওনা। সে যে যে রকাতে লাহেক হইয়াছিল, তাহা সমাপ্ত করত: এমামের সাঙ্কেতীয় নামাজ সমাপন করিবে। মছবুক ব্যক্তিকে খলিফা করিলে এমামের অবশিষ্ট নামাজ প্রথমত: সমাপন করিয়া সালাম করার নিমিত্ত অন্য মোক্তাদিকে সম্মুখে টানিয়া আনিয়া সালাম করার জন্য স্কন্ধে হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিয়া মছবুক আপন নামাজ সমাপ্ত করিবে। যেমন এমামের এক রকাত

সমাপন হইলে এক ব্যক্তি জোহরের নামাজে ভুক্ত হইল,তিন রকাত সমাপ্ত হইলে এমামের অজু ভঙ্গ হইল। ঐব্যক্তিকে খলিফা করিয়া এক অঙ্গুলী দ্বারা ইঙ্গিত করত: এমাম অজু করিতে গমন করিলেন। ঐ ব্যক্তি প্রথমত: এমামের এক রকাত পড়িয়া সালাম করার জন্য দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আনিয়া ইঙ্গিত দ্বারা ছালাম করার আদেশ দিয়া পুনরায় ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া আপন পরিত্যাজ্য এক রকাত যাহা বাকী ছিল তাহা পড়িবে।রুকু বা সেজদাতে অজু ভঙ্গ হইলে অজু করার পর ঐ নামাজ আরম্ভ করিলে উল্লিখিত রুকু সেজদা পুনরায় করিবে।দোররুল মোখতার ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড এবং মালাবুদ্দা ইত্যাদি।

ছুন্নত নামাজের বিবরণ

ফজরের ফরজ নামাজের র্পূব্বে ও জোহরের ফরজের পর এবং মগরেবের ফরজ ও এশারের ফরজের পর দুই রকাত ছুন্নত মোয়াক্কাদা।জোহরের ফরজের র্পূব্বে ও জুম্মার র্পূব্বে ও পরে চারি রকাত ছুন্নত মোয়াক্কাদা।এমাম আবু ইউছুপ (রহ:) জুম্মার পর ছয় রকাত ছুন্নত মোয়াক্কাদা বলেন।ঐচারি রকাত ওয়ালি ছুন্নতকে এক ছালামে পড়িতে হইবে,দুই ছালামে পড়িলে ছুন্নতে পরিণত হইবে না।র্সব্বশ্রেষ্ঠ ছুন্নত ফজরের দুই রকাত তাহার পর মগরেবের পর দুই রকাত ছুন্নত তাহার পর জোহরের পরের দুই রকাত তাহার পর এশারের পরের দুই রকাত তাহার পর জোহরের র্পূব্বরে চারি রকাত।ফজর দুই রকাত ফরজ এবং জোহরে চারি রকাত ও আছরে চারি রকাত ও মগরেবে তিন রকাত এবং এসারে চারি রকাত ফরজ আলমগিরি ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

বেতেরের নামাজের বিবরণ

এমাম আবু হানিফা(র:)হইতে বেতেরের নামাজে তিন রেওয়ায়ত, আসিয়াছে ১।ফরজ ২।ছুন্নতে মোয়াক্কাদা ৩।ওয়াজেব; এই

রেওয়ায়ত ছহি ও শুদ্ধ। বেতেরের নামাজ ক্ষমতা থাকাতে বসিয়া পড়িলে সিদ্ধ হইবে না ও ওজর ব্যতীত আরোহন হইয়া পড়িলে ও অসিদ্ধ এবং আদায় না করিলে কাজা দেওয়া ওয়াজেব যদিও বহু কাল গত হইয়া যায়। বেতেরের নিয়ত না করিয়া পড়িলে আদায় হইবে না। বেতেরের নামাজ তিন রকাত এক ছালামে পড়িতে হইবে। দোয়াকুনুত পড়া ওয়াজেব। মুচল্লি তৃতীয় রকাত সমাপ্ত করার পর তকবির বলিয়া দুই হস্ত দুই কর্ণ র্পয্যন্ত উত্তোলন করিয়া দাঁড়াইয়া রুকু করার র্পূব্বে দোওয়া কুনুত পড়িবে, নাভীর উপর হস্ত রাখিয়া দোওয়া কুনুত পড়িবে। দোওয়া কুনুত চুপে ২ পড়িবে এমাম ও মুক্তাদি একই কথা। যেই ব্যক্তি দোওয়া কুনুত জানেনা এই দোওয়া পড়িবে رَبَّنَا اتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الاخِرَةِ حَسَنَةً وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ নতুবা اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا তিনবার পড়িবে। দোওয়া কুনুত না পড়িয়া ভুলে রুকু করিলে, রুকুতে কুনুত না পড়িবে এবং দাঁড়াইয়া ও কুনুত পড়িবে না। রুকু হইতে মস্তক উত্তোলন করার পর দোওয়া কুনুতের কথা স্মরণ হইলে এই অবস্থায় ছোহ সেজদা করিলে নামাজ দুরস্ত হইবে। দোয়া কুনুত ভুলে না পড়িলে ছোহ সেজদা করিবে। নতুবা নামাজ দোহরাইতে হইবে। এমাম রুকুতে গিয়া স্মরণ করিল যে, দোওয়া কুনুত পড়ে নাই, দাঁড়াইয়া দোওয়া কুনুত না পড়িবে, ছোহ সেজদা করিলে নামাজ দুরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তির বেতেরের ৩য় রকাত বা ২য় রকাতে সন্দেহ হইল যে এই রকাত ৩য় না, ২য় দুই দিক সমান হইল, ঐ ব্যক্তি কমরকাত র্নিদ্ধারিত করিয়া যেই রকাত পড়িতেছে সেই রকাতে একবার কুনুত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে এবং ৩য় রকাত পড়িয়া পুনরায় দোওয়া কুনুত পড়িবে। এইরূপ ১ম রকাতে বা ২য় রকাতে সন্দেহ হইলে প্রত্যেক রকাতে দোওয়া কুনুত

পড়িতে হইবে ও বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে ও ছোহ ছজিদা দিবে। মছবুক বেতেরের নামাজে এমামের সঙ্গে দোওয়া কুনুত পড়িলে, বাকী নামাজ আদায় করিতে পুনরায় না পড়িবে। ফজরের নামাজে কুনুত নাজেলা এমামে পড়িলে পশ্চাৎগামী লোক চুপ থাকিবে। কোন ব্যক্তি এমামকে ৩য় রকাতের রুকুতে পাইলে ও এমামের সঙ্গে দোওয়া কুনুত পড়িতে না পারিলে বাকী নামাজ দাঁড়াইয়া আদায় করিবার সময় দোওয়া কুনুত না পড়িবে। বেতেরের নামাজ ব্যতীত অন্য নামাজ দোওয়া কুনুত না পড়িবে। আলমগিরী ১ম খণ্ড ও ছগিরী ইত্যাদি।

নফল নামাজের বিবরণ

আছরের নামাজের ফরজের র্পূব্বে চারি রকাত ও এশারের ফরজের র্পূব্বে চারি রকাত নফল (মস্তাহাব) ফজরের নামাজের র্পূব্বে বার রকাত নামাজ পড়াকে তাহাজ্জদ বলে। তাহাজ্জদ বলে। তাহাজ্জদের নামাজ ছুন্নত মোয়াক্কাদা। বাজ্ এমামগণ নফল বলিয়া বলিয়াছেন। নিয়ত এইরূপ করিবে

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ التَّهَجُدِّ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

কম চারি রকাত কিম্বা আট রকাত ও পারিবে, বেশী বার রকাত, প্রত্যেক রকাতে ছুরা এখলাচ তিনবার করিয়া পড়িবে নতুবা ১ম রকাতে ছুরা এখলাচ ১২ বার ২য় রকাতে ১১ বার এই রকম ১২ রকাত পড়িলে শেষ রকাতে ১ বার পড়িবে নতুবা প্রথম রকাতে ১ বার ২য় রকাতে ২ বার এইরূপ বার রকাত পড়িলে শেষ রকাতে ১২ বার পড়িতে হইবে। শেষ রজনীতে পড়িবার সক্ষম না হইলে এশারের নামাজের পর পড়িবে, কিন্তু শেষ

রাত্রেিত পড়ার মত পূণ্য হইবে না।চাশত নামাজের নিয়ত এইরূপে করিবে

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ الضُّحيِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

র্সূয্যরে কিরণ যখন গরম হইবে তখন এই নামাজ পড়িতে হইবে অর্থাৎ দিনের চারি ভাগের এক ভাগ হইতে সূর্য্য র্পূব্বদিক থাকা র্পয্যন্ত পড়িতে পারিবে। চাশতের নামাজ ২ রকাত, ৪ চারি রকাত, বা আট রকাত নতুবা বার রকাত র্পয্যন্ত পড়িতে পার।ে বাজ কেতাবে ১ম রকাতে (والشمس) অসসমছে, ২ রকাতে (والليل) অল্লায়লে ৩য় রকাতে (والضحى) অজ্জোহা, ৪র্থ রকাতে الم نشرح لك পড়িবে। নতুবা উপরের ছুরা পাঠ করিয়া নিম্ন দিকে আসিবে এক রকাতে এক ছুরা পাঠ করিবে এক নিয়তে দুই রকাত পড়িবে। এইরূপ এশরাকের নামাজ ও মস্তাহাব। নিয়ত এইরূপে করিবেÑ

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ الاِشْرَاقِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

এশরাকের নামাজের ধারা এই, ফজরের নামাজ পড়ার পর ঐ স্থানে বসিয়া জিকির করার পর কোন আলাপ না করিয়া সূর্য্য এক বর্ষা বা দুই বর্ষা পরিমাণ উদয় হইলে দুই রকাত নতুবা চারি রকাত নামাজ পড়িবে। এক হজ্জ ও এক ওমরার পূণ্য হইবে। ১ম রকাতে

ছুরা ফাতেহার পর (اناانزلناه) ইন্না আন্জলনাহু দশ বার ২য় রকাতে এখলাছ (قل هو الله احد) দশ বার ৩য় রকাতে ছুরা ফলক (قل اعوذ برب الفلق) দশ বার ৪র্থ রকাতে ছুরা নাছ (قل اعوذ برب الناس) দশ বার পড়িবে এক হাজার বৎসরের পূণ্য আল্লাতা’লা দান করিবেগুছালাতোত্ তছবিহ ৪ রকাত নামাজ পড়া অত্যন্ত পূণ্য বলিয়া হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। ঈদুল ফিতর রাত্রে ওজোহার রাত্রে, বরাত ও কদরের রাত্রে, আখেরী চাহার সোম্বার রাত্রে পড়া অত্যন্ত পূণ্য। ছালাতোত্ তছবিহর নিয়ত ও ধারা এই

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ  

নিয়ত করার পর ছোব্হানাকা পড়িয়া আয়োজুবিল্লাহ্ ও বিছমিল্লাহ্ পড়িয়া আলহামদো পড়ার পর আল্হাকুমুত্তকাছোর পড়িয়া কলেমায় তমজিদ ১৫ পনর বার পড়িয়া রুকু করিবে। তছবিহের পর কলেমায় তমজিদ ১০ দশ বার পড়িবে পরে দাঁড়াইয়া দুই হস্ত ছাড়িয়া দিয়া ১০ বার ঐ কলেমা পড়িয়া সজেদায় যাইয়া তছবিহ পড়ার পর ঐ কলেমা ১০ দশ বার পড়িবে তাহার পর সজেদা হইতে বসিয়া ১০ দশ বার ঐ কলেমা পড়িয়া ২য় সজেদায় যাইয়া তছবিহর পর ঐ কলেমায় ১০ দশ বার পড়ার পর সজেদা হইতে উঠিয়া বসিয়া

জানুর উপর দুই হস্ত রাখিয়া ঐ কলেমা ১০ দশবার পড়িবে। তাহার পর ২য় রকাতে আলহামদো পড়িয়া, ছুরা অলআছরে পড়িয়া র্পূব্বরে মত কলেমায় তমজিদ প্রত্যেক রকাতে ৭৫ বার পড়িবে। তাহার পর ৩য় রকাতে কুল্ এয়া আইয়ুহালকাফেরুন পড়িবে, তাহার পর ৪র্থ রকাতে কুলহু আল্লাহো আহাদ পড়িয়া কলেমায় তমজিদ র্পূব্বরে ন্যায় পড়িবে। মোট চারি রকাতে কলেমায় তমজিদ ৩০০ তিন শত বার পড়িবে। ৪র্থ রকাত পড়ার পর আত্তাহিয়াত পড়ার পর দরূদ ও দোওয়া পড়িয়া ছালাম ফিরাইবে। এই নামাজ প্রত্যেক দিন না পারিলে সপ্তাহে পড়িবে, না পারিলে মাসে পড়িবে, না পারিলে বৎসরে পড়িবে, না পারিলে ওমরের মধ্যে একবার পড়িবে। মগরেবের নামাজের পরে ছয় রকাত তিন ছালামে পড়িবে। উহাকে আউওয়াবিন নামাজ বলে। বেশী কুড়ি রকাত পড়িতে পারে। অজু করার পর দুই রকাত নামাজ পড়াকে তাহিইয়াতোল অজু বলে। এই দুই রকাত নামাজ ফজরের ও মগরেবের র্পূব্বে পড়া নিষেধ জানিবে। নিয়ত এইÑ

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ تَّحِيَّةِ الْوَضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

কেরাত যাহা ইচ্ছা করা যায় তাহাই পড়িতে পারিবে। রমজান শরীফের ২৭ তারিখের রাত্রিতে নামাজ পড়িবার নিয়ত এইÑ

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ اللَّيْلَةِ الْقَدْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

তফছিরের মধ্যে বর্ণিত আছে, শবে কদর রাত্রিতে ১২ রকাত নামাজ ছয় ছালামে পড়িবে প্রত্যেক রকাতে আল্হামদু একবার ও কুলহুআল্লাহো তিনবার করিয়া পড়িবে। শবে বরাতে ও আশুরার রাত্রে ও এইরূপে নামাজ পড়িবে ১২ রকাত হইতে বেশী ও কম ও পড়িতে পারে। নিজের ঈমান ঠিক থাকিবার জন্য মগরেবের নামাজের পর দুই রকাত নামাজ পড়িতে হইবে ঐ নামাজের নিয়ত ও ধারা এইÑنَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ حَفِيْظِ الاِيْمَانِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

নিয়ত করার পর ১ম রকাতে ছানা ও আলহামদো এবং আয়েতুল কুরছি একবার ও ছুরা এখলাছ তিন বার ও কুল আয়োজো বে-রব্বিল ফলক ও বেরব্বিন্নাছ একবার ২ পড়িয়া রকাত সমাপ্ত করিবে। ২য় রকাত ও সেইরূপ পড়িবে। ছালাম ফিরার পর সজিদায় যাইয়া يا حى يا قيوم ثبتنى على الايمان এই দোওয়া তিনবার পড়ার পর মোনাজাত করিবে। কবরের জগ্তা (চিপ) আছান হওয়ার জন্য দুই রকাত নামাজ প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে দিন গতে রাত্রিতে এশারের নামাজের পর পড়িবে তাহার নিয়ত ও নিয়ম এইÑ

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ تَخْفِيْفًا عَنْ ضُغْطَةِ الْقَبْرِ  سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ

প্রথম রকাতে ছানা ও আলহামদো পড়ার পর ছুরা জুলজলাল ১৫ পনর বার পড়িবে ও রকাত শেষ করিবে ২য় রকাত ও সেইরূপ পড়িবে। মনকির ও নকির ফেরেস্তার উত্তর হালকা হওয়ার জন্য দুই রকাত নামাজ প্রত্যেক বৃহস্পতিবার দিন গতে এশারের নামাজের পর পড়িবে নিয়ত ও ধারা এইÑ

نَوَ يْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ مَامُوْنًا عَنْ سُؤَالِ مُنْكَرٍ وَ نَكِيْرٍ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

নিয়ত করিয়া ছানা ও আলহামদো পড়ার পর কুলহু আল্লাহো আহাদ্ ৫০ পঞ্চাশ বার পড়িবে ও রকাত সমাপ্ত করিবে ২য় রকাত ও সেইরূপ পড়িবে। এই দুই রকাত নামাজ পড়িলে মনকির ও নকির ফেরেস্তার প্রশ্নের উত্তর হইতে ভয় হইবে না। রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহণের বিবরণ

হজরত আবু দাউদ নবী (দ:) হইতে রেওয়ায়ত করিয়াছেন, সূর্য্য গ্রহণ এক নমুনা, ঐ নমুনার দ্বারা আল্লাহো তায়ালা লোকদিগকে ভয় দেখায় এবং যখন গ্রহণ দেখিবে নামাজ পড়িবে। আজান, একামত ব্যতীত এবং খোত্বা ছাড়া দুই রকাত নামাজ জুমার এমামের পশ্চাতে পড়িবে ও এমাম সুরা নি:শব্দে পড়িবে ইহা এমাম আবু হানিফার (র:) মত, এবং বাজ এমামগণ বড় করিয়া পড়িতে বলেন, নামাজ শেষ হইলে এমাম কাবাভিমুখী বসিয়া মুনাজাত করিবে। অন্যান্য নামাজের মত এক রুকু ও দুই ছজিদা এক রকাতে করিবে। আরবীতে এই নামাজকে কছুফ বলে। চন্দ্র গ্রহণ হইলে আপন গৃহে একাকী নামাজ পড়িবে। রাত্রের জ্যোতি: প্রকাশিত না হওয়া র্পয্যন্ত, দোওয়া দরূদ,

পাঠ করিতে থাকিবে। নামাজে ছুরা লম্বা করিয়া পড়িবে। এই নামাজকে আরবীতে খছুফ বলে। আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

এছতেছকার নামাজের বিবরণ

বৃষ্টি না হইলে বহু লোক একত্রিত হইয়া মাঠে গমন করত: বৃষ্টি বর্ষণের নিমিত্ত খোদা তালার নিকট প্রার্থনা করাকে এছতেছকার নামাজ বলে। এছতেছকার নিমিত্ত তিন দিন র্পয্যন্ত মাঠে যাইয়া প্রার্থনা করা মস্তাহাব। মাঠে যাইবার র্পূব্বে তিন দিন রোজা রাখিবার জন্য এমাম সমুদয় লোককে উপদেশ দিতে হইবে। রোজা রাখার পর ৪র্থ ৫ম ৬ষ্ঠ এই তিন দিবস মাঠে গিয়া নামাজ পড়িবে। মাঠে যাওয়ার র্পূব্বে প্রথমত: সকলে তৌবা করিবে। তৌবার দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণের খুব সম্ভাবনা। এছতেছকার নামাজের জন্য সকলে মাঠে গেলে জননীগণ স্বীয় দুগ্ধ পোষ্য শিশুদিগকে দুগ্ধ না দিয়া ক্রন্দন করান ভাল কারণ তাহারার ক্রন্দনের দ্বারা খোদা তালার অনুগ্রহের বারি বর্ষণ হইতে থাকে। এমামের সঙ্গে দুই রকাত নামাজ মাঠে এমাম কেরাত বড় করিয়া পড়িবে। নামাজ শেষ করিয়া দুই খোত্বা পড়িবে। ১ম খোত্বা কিছু পড়িলে, এমাম গায়ের চাদর বদ্লাইবে মোক্তাদিগণ বদলাইবে না। চাদর বদলাইবার ধারা এই চৌকোণ চাদর হইলে ডান দিক বাম দিকে আনিবে উপরের দিক নিচের দিকে নিবে। চাদর গোল হইলে ডান দিক বামদিকের উপর নিতে হইবে, ও বাম দিক ডানদিকের উপর রাখিতে হইবে। আলমগিরি ১ম খণ্ড ও গায়তুল আওতার ১ম খন্ড।

তারাবির নামাজের বিবরণ

রমজান মাসে এশার নামাজের পরে জমাতের সহিত কুড়ি রকাত নামাজ পড়াকে তারাবি বলে। তারাবি ২০ কুড়ি রকাত স্ত্রী-

পুরুষ উভয়ের জন্য ছুন্নত মোয়াক্কাদাহ। ইহাকে ছুন্নত না জানিলে কাফের হইবে।তারাবির ওয়াক্ত এশারের নামাজের পর হইতে ফজরের র্পূব্বে র্পয্যন্ত সময় থাকে।তারাবির নামাজের জমাত ছুন্নতে কেফায়া।আল্লাহতায়ালা যখন রমজান শরীফের রোজা ফরজ করিলেন, হজরত উমর(র:) নিজের উপর ২০ কুড়ি রকাত তারাবি রোজার শোকরের বদলে আবশ্যক মনে করিলেন তখন ছাহাবিগণ ও হজরত(দ:) বহুত খুসী হইলেন।তৎপর জিব্রিল (আ:) অবতীর্ণ হইয়া বলিলেন, আল্লাতায়ালা উমর(র:) এর এবাদত কবুল করিয়াছেন ও ফরমাইলেন যে, যেই ব্যক্তি ২০ কুড়ি রকাত তারাবি পড়িবে আমি তাহাকে নিশ্চয় বেহেস্তে স্থান দিব। দিনে রোজার পূণ্য পাইল,রাত্রে তারাবির ছওয়াব পাইল।তারাবির সময়,এশারের নামাজের পর হইতে ফজর হওয়ার র্পূব্বে র্পয্যন্ত। বেতেরের নামাজের র্পূব্বে হউক বা পরে হউক,শ্বামী ইত্যাদি।কিন্তু তারাবি আগে পড়াই ভাল।এশারের র্পূব্বে তারাবির নামাজ পড়া দুরস্ত নহে। তারাবির নামাজ ঘটনাবশত: আদায় করিতে না পারিলে তাহার কাজা নাই। কেহ কাজা আদায় করিলে তাহা নফলে পরিগণিত হইবে। বাজ্ ফকিহ্ বলেন ২য় তারাবি র্পয্যন্ত একাকী কাজা পড়িয়া দিবে। এশারের ফরজ ও ছুন্নত পড়ার পর, এমাম তারাবির কয়েক রকাত পড়িলে কোন ব্যক্তি তারাবির জমাতে ভুক্ত হইলে এমামের সঙ্গে বেতের সহ পড়ার পর, বাকী তারাবি পরে পড়িতে পারিবে। কেহ এমামের সঙ্গে এশারের ফরজ জমাতে পড়িতে না পারিলে নতুবা তারাবি ও জমাতে পড়িতে না পারিলে, বেতেরের নামাজ ঐ এমামের সঙ্গে জমাতে পড়িতে পারিবে। বাজ কেতাবে না দুরস্ত বলিয়া বর্ণিনা করিয়াছেন, সেই কথার উপর ফতোয়া নহে। ছগিরী ইত্যাদি তারাবির নামাজের কাজা নাই ইহার উপর ফকিহগণের ফতোয়া। তারাবির নামাজে চারি

রকাত পড়ার পর বসিয়া দোয়া পড়িবে ও মোনাজাত করিবে। মেফতাহুল জন্নত ও জামেউল ফতোয়া গং ওজর ব্যতীত তারাবির নামাজ বসিয়া পড়া মক্রুহ।গ্রামের কোন ব্যক্তি জমাত না করিয়া তারাবি পড়িলে সকলেই মহা পাতকী হইবে। রমজানের তারাবির নামাজে এক খতম কোরান পড়া ছুন্নত, দুই খতম পড়া ফজিলত, তিন খতম পড়া আফজল,দোররুল মোখতার ও রুকুনুদ্দিন।এক মসজিদে তারাবির জমাত দুইবার পড়া মক্রুহ, এক এমাম দুই জায়গায় দুইবার পুরা ২ তারাবিতে এমামতি করিলে দুরস্ত হইবে না।এক এমাম কুড়ি রকাতে তারাবীতে এমামতি করা আফজল।দুই এমাম ও পড়িতে পারে কিন্তু মস্তাহাব এই যে এক এমাম চারি রকাত ২ পড়িয়া জুদা হওয়া। এমাম ওজর ব্যতীত বসিয়া ও মোক্তাদিগণ দাঁড়াইয়া তারাবির নামাজ পড়িলে দুরস্ত হইবে, মক্রুহ হইবে না।না বালেগ ছেলে তারাবির নামাজে এমামতি করা অসিদ্ধ।ইহার উপর ফতোয়া।এমাম দুই রকাত তারাবিহ পড়ার পর ভুলে আত্তাহিয়াত না পড়িয়া তৃতীয় রকাতের জন্য দাঁড়াইলে ছজিদা করিবার র্পূব্বে এয়াদ হইলে বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছোহ ছজিদা করিয়া পরে আত্তাহিয়াত গং পড়িয়া নামাজ শেষ করিবে,তৃতীয় রকাতের জন্য ছজিদা করিলে পরে এক রকাত মিলাইয়া চারি রকাত পড়যি়া ছোহ সজদিা করযি়া নামাজ সমাপ্ত করবি।েদুই রকাত পড়ার পর আত্তাহিয়াত পড়িয়া তৃতীয় রকাতের জন্য দাঁড়াইলে আরও দুই রকাত মিলাইয়া পড়িলে মোট চারি রকাত তারাবিহ আদায় হইবে ও ছোহ ছজিদা দিবে।১ম ছুরাতে মোট দুই রকাত আদায় হইবে।এমাম যদি চারি রকাত পড়া গিয়াছে বলিয়া বলে,মোক্তাদি বলে তিন রকাত, ঐসময় এমামে চারি রকাতের উপর একিন করিয়া বলিলে এমামের কথা ধরিতে হইবে,এবং নামাজ দোহরাইতে হইবে না।যদি এমামের সন্দেহ হয়

তবে মোক্তাদিগণের কথা ধর্ত্তব্য হইবে ও নামাজ দোহরাইতে হইবে। মোক্তাদিগণের মধ্যে কেহ বলে চারি রকাত কেহ বলে তিন রকাত।তখন এমাম যেই পার্টিকে সমর্থন করিবে সেই পার্টির বাক্য ধর্ত্তব্য হইবে। মোক্তাদির মধ্যে এক ব্যক্তি একিনি বলে তিন রকাত নামাজ পড়া গিয়াছে, আর এক ব্যক্তি একিনি বলে চারি রকাত ঐ সময় এমাম ও বাকী মোক্তাদিগণের সন্দেহ হয়। তখন কিছুই করিতে হইবে না। যাহা পড়িয়াছে তাহাই ঠিক জানিবে। কেবল মাত্র এক মোক্তাদি একিনি বলিতেছে এমাম তিন রকাত নামাজ পড়িয়াছে। এমাম ও বাকী মোক্তাদিগণ সন্দেহ করিতেছে কয় রকাত নামাজ পড়িয়াছে। ঐ সময় নামাজ দোহরাইয়া পড়িবে দুই রকাত কিম্বা চারি রকাত নিয়ত করিয়া পড়িতে পারে। তারাবির নামাজ আলম্তারা হইতে আরম্ভ করিয়া ছুরা নাছ র্পয্যন্ত দুই বার পড়িলে পারা যায়। নতুবা মাত্র, ছুরা এখলাছ দ্বারা ও পড়িতে পারা যায়। না হইলে ছুরা আছর পড়িয়া এক রকাত পড়িলে ২য় রকাতে ফাতেহার পর এখলাছ পড়িয়া এক নিয়তে দুই রকাত পড়িবে। তৎপর ছুরা নাছ র্পয্যন্ত এইরূপ ভাবে পড়িলে কুড়ি রকাত হইবে। কিন্তু প্রত্যেক নিয়তের দ্বিতীয় রকাতে ছুরা এখলাছ পড়িতে হইবে। মধ্যাংশে এক ছুরা বাদ দিয়া ফরজ নামাজ পড়িলে মক্রুহ হইবে। তারাবিতে মক্রুহ হইবে না। আলমগিরি ১ম খণ্ড রুকুনুদ্দিন ও শ্বমী ১ম খণ্ড।

ফরজ পাওয়ার বিবরণ

নিজের নামাজ পরিত্যাগ করিয়া জমাতের সঙ্গে নামাজ পড়াকে ফরজ পাওয়া বলে। কোন ব্যক্তি ফজরের ও মগরেবের ফরজ এক রকাত পড়িয়া দ্বিতীয় রকাত পড়ার জন্য দাঁড়াইয়াছে ইতিমধ্যে জমাত আরম্ভ হইলে স্বীয় নামাজ পরিত্যাগ করিয়া জমাতে ভুক্ত

হইবে। যদি দ্বিতীয় রকাতের ছজিদা করে তবে নামাজ ত্যাগ না করিয়া পুরা পড়িয়া লইবে। আলমগিরি ১ম খণ্ড। যদি কেহ জোহর ও আছর এবং এশারের নামাজের দ্বিতীয় রকাতের ছজিদার র্পূব্বে জমাত আরম্ভ হয়, ঐ সময় স্বীয় নামাজ ত্যাগ করিয়া জমাতে ভুক্ত হইবে। দ্বিতীয় রকাতের ছজিদা করিলে বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছালাম ফিরাইয়া জমাতে ভুক্ত হইলে এবং বাকী দুই রকাতকে যদি চারি রকাত ওয়ালি ছুন্নত মোয়াক্কাদা হয়, চারি রকাত আদায় করিতে হইবে। কারণ যেই দুই রকাত পড়িয়াছে তাহা নফলে পরিগণিত হইবে। যদি তৃতীয় রকাতের ছজিদা করার পর জমাত আরম্ভ হয়, তবে ঐ সময় নামাজ ত্যাগ না করিবে চারি রকাত পড়িয়া লইবে। তৎপর ইচ্ছা করিলে জোহর ও এশারের জমাতে নফল নিয়তে ভুক্ত হইতে পারিবে। আছর ও মগরেব এবং ফজর নামাজের জমাতে ভুক্ত হইতে পারিবে না। কারণ ঐ ২ দুই ওয়াক্তের নামাজের পর নফল নামাজ দুরস্ত নহে। মগরেবের সময় তিন রকাত নফল হইবে। তিন রকাত ওয়ালি নফল নামাজ নাই। ফজরের ছুন্নত পড়িয়া, এমামকে আত্তাহিয়াতের আন্দর জমাত পাওয়ার আশা থাকিলে ফজরের ছুন্নত পড়িয়া জমাতে সামিল হইবে। নতুবা ছুন্নত না পড়িবে, জমাত আদায় করিয়া সূর্য্য উদয় হইলে ছুন্নত আদায় করিবে। জোহরের ফরজের র্পূব্বরে চারি রকাত ও কাবলোল জুমার চারি রকাত নামাজ ছুন্নত ফরজের জামাতের আগে পড়িতে না পারিলে ফরজের জমাতের পর দুই রকাত ছুন্নতের আগে পড়িবে। সেইরূপ কাবলোল জুমা, বাদাল জুমার আগে পড়িবে। এই বাক্যের উপর ফতোয়া। শ্বামী ও দোররুল মোখতার ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি। খোত্বা পাঠের সময় কাবলোল জুমা গং পড়া দোরস্ত নহে। কিন্তু সেই দিনের ফজরের ফরজ, ছানি খোত্বার সময় কাজা

আদায় করিতে পারিবে। কবিরি ও আলমগিরী ১ম খণ্ড। আছর ও এশারের ছুন্নতের কাজা ওয়াক্তের আন্দরে নাই। এবং জোহরের ছুন্নত চারি রকাত ও বাদাল জুমার চারি রকাত ছুন্নতের কাজা ওয়াক্ত চলিয়া গেলে দিতে হইবে না। এমাম রুকু হইতে মস্তক উঠাইবার র্পূব্বে মোক্তাদী এমামরে সঙ্গে রুকুতে ভূক্ত হইলে এক রকাত পাইবে নতুবা পাইবে না। এমামের র্পূব্বে রুকু সেজদা করিলে, কি রুকু সেজদা হইতে মস্তক উঠাইলে তাহা সিদ্ধ হইবে না। মকরুহ তাহরিমা হইবে। কাবলোল জুমা পড়িবার সময় খোত্বা পাঠের আজান আরম্ভ হইলে ঐ সময় কাবলোল জুমা পড়িয়া লইবে। ভঙ্গ না করিবে। এমামের সঙ্গে এক রকাত জমাতে পড়িলে বাকী এক রকাত বা দুই রকাত নতুবা তিন রকাত একাকী পড়িলে জমাতের ছওয়াব পাইবে কিন্তু জমাতে পরন্নায় গন্য হইবে না। তিন রকাত জমাতে পড়িলে এক রকাত জমাতে পড়িতে না পারিলে, সকল এমাম বলেন, ঐ ব্যক্তি জমাত পরন্নার মধ্যে গণ্য হইবে। এমাম তিন আয়ত পরিমাণ কেরাত পড়ার পর মোক্তাদি রুকুতে চলিয়া গেলে পরে এমাম রুকুতে মোক্তাদির সঙ্গে মিলিয়া রুকু করিলে মোক্তাদির রুকু দুরস্ত হইয়া যাইবে। এমাম এক ছজিদা করিতে ২ মোক্তাদি দুইবার করিল, এক ছজিদা হইবে। র্মম্ম এই, এমাম এক ছজিদা করাতে মোক্তাদি দুই ছজিদা করিলে ২য় ছজিদা যখন এমামে করিবে, তখন মোক্তাদি এমামের সঙ্গে আর এক ছজিদা না করিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। রুকুনুদ্দিন ও দোররুল মোখতার গং।

কাজা নামাজ পড়ার বিবরণ

কোন আবশ্যক বা অনিবার্য্য কারণবশত: নামাজ বর্জ্জিত হইলে তাহাকে কাজা নামাজ বলে। যেই ব্যক্তির উপর যেই নামাজ যেই সময় ওয়াজেব্ হয় সেই সময় আদায় না করিলে পরে তাহার কাজা দেওয়া ওয়াজেব।দেরী করিয়া কাজা দিলে গুনাহ্গার হইবে।যেই ব্যক্তির নামাজ ভুলে নতুবা নিদ্রা অবস্থায় বা জানিত অবস্থায় ছুটিয়া যায়, তখন হঠাৎ তাহার কাজা না দিয়া মৃত্যু হইলে দ্বিগুণ গুনাহ হইবে ১ম কাজা হওয়ায় ২য় হঠাৎ কাজা আদায় না করায়।পঞ্চ সময়ের নামাজের মধ্যে বেতেরের নামাজের নিমিত্ত ধারা সমূহের প্রতি দৃষ্টি রাখা ফরজ।কাজা নামাজ পড়ার জন্য কোন র্নিদ্দষ্টি সময় নাই। যেই সময় ইচ্ছা করে সেই সময় পড়িবে,কিন্তু গৌণ না করিয়া হঠাৎ কাজা পড়িয়া দেওয়া আবশ্যক। কাজা আদায় করিয়া দেওয়ার র্পূব্বে মৃত্যু মুখে পতিত হইলে মহাপাতকী হইবে।কোন আবশ্যক বশত: জোহরের নামাজ বর্জ্জিত হইলে, উহা আছরের সময় না পড়িয়া আছরের নামাজ পড়িলে সিদ্ধ হইবে না।কেহর ফজর অর্থাৎ এক অক্ত: হইতে পাঁচ অক্ত: র্পয্যন্ত নামাজ কাজা হইলে তরতিব (ধারা) মতে পড়া ফরজ, যেমন ফজর, জোহর, আছর, মগরীব, এশারের নামাজ কাজা হইলে, ১ম ফজর কাজা পড়িয়া দিবে তৎপর জোহর তৎপর আছর তৎপর মগরীব তৎপর এশার তৎপর র্বত্তমান ওয়াক্তের নামাজ পড়িলে দুরস্ত হইবে।যদি ১ম ফজর কাজা না পড়যি়া জোহর কম্বিা আছর নতুবা অন্য অক্তরে নামাজ পড়লিে দূরস্ত হইবে না পুনরায় তরতবি মতে পড়তিে হইব।েকোন ব্যক্তির ছয় ওয়াক্তের নামাজ কাজা হইলে তরতিব মতে পড়িতে হইবে না।ঐ ছয় অক্তের নামাজ কাজা আদায় করিয়া দিলে, পুনরায় তরতিব মতে পড়া ফরজ হইবে। কাজা নামাজের তরতিব (ধারা) তিন অবস্থাতে ভঙ্গ হয়।(১) কাজা নামাজ পড়িতে গেলে র্বত্তমান সময়ের নামাজ মস্তাহাব সময় পড়া ঘটিবে না। তখন বর্জ্জিত নামাজ পরিত্যাগ করিয়া র্বত্তমান সময়ের নামাজ পড়িবে। (২) কাজা নামাজের কথা ভুলিয়া গেলে, বর্ত্তমান সময়ের নামাজ পড়িতে পারিবে। (৩)ছয় ওয়াক্তের নামাজ কাজা হইলে উহা রাখিয়া র্বত্তমান

সময়ের নামাজ পড়িতে পারিবে।ছয় ওয়াক্তের অধিক নামাজ কাজা হইলে ও ধারা দৃষ্টি রাখিতে হইবে না।যেমন কোন ব্যক্তির সাত ওয়াক্তের নামাজ কাজা হইলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করিল অবশিষ্ট দুই ওয়াক্তের নামাজ ঐ ব্যক্তির জিম্মায় রহিল। ঐদুই ওয়াক্তের নামাজ না পড়িয়া র্বত্তমান সময়ের নামাজ পড়িতে পারিবে পরে বাকী নামাজ পড়িবে।ছুন্নত নামাজের কাজা আদায় করা ছুন্নত,ফরজ নামাজের কাজা পড়া ফরজ,ওয়াজেব নামাজের কাজা পড়া ওয়াজেব,দোররুল মোখতার ইত্যাদি।কেহ কাজা নামাজ নিজের জিম্মায় রাখিয়া মৃত্যু হইলে এবং মৃত্যুর র্পূব্বে তদীয় ওয়ারিশগণকে বর্জ্জিত নামাজের কাফ্ফারা দেওয়ার জন্য অছিয়ত করিয়া থাকিলে নতুবা উত্তরাধিকারীগণ নিজে এহছান স্বরূপ কাফ্ফারা আদায় করিতে চাহিলে,প্রত্যেক কাজা নামাজের জন্য র্অদ্ধ ছা গম বা তাহার আটা কি ছাতু কিম্বা এক ছা যব্ দরিদ্রকে দান করিবে।বেতেরের নামাজ বা রোজা বর্জ্জিত করিলে,প্রত্যেক বেতেরের নামাজ ও রোজার নিমিত্ত র্অদ্ধ ছা গম বা তাহার আটা কি,ছাতু দিতে হইবে।এইরূপ প্রত্যেক নজর, জেহারের জন্য দুই সের গেঁহু, অথবা আটা,নতুবা তৎমূল্য হিসাব করিয়া দিতে হইবে।পুরুষ ১২বৎসর স্ত্রীলোকের ১বৎসর বাদ দিতে হইবে।প্রত্যেক দিন বেতের সহ ৬ ওয়াক্তের ১২সের গেঁহু অথবা আটা নতুবা তৎমূল্য দিতে হইবে।প্রত্যেক মাসে ১/ মণ হইবে।এক বৎসরে ১০৮/মণ গেঁহু হইবে।এইরূপ রোজার এক মাসে ১।।০সের গেঁহু দিতে হইবে প্রত্যেক বৎসর নামাজ ও রোজার কাফ্ফারা ১০৯।।০এক শত সাড়ে নয় মণ গেঁহু অথবা তাহার মূল্য দিতে হইবে।৮০তোলায় সের, ৪০সেরে এক মণ ধরিতে হইবে।মৃতের জীবিত কাল পর্যন্ত হিসাব করিয়া পুরুষের ১২ বৎসর ও স্ত্রীলোকের ৯ নয় বৎসর বাদ দিয়া দিতে হইবে। কোন ব্যক্তির এক মাসের নামাজ

কাজা হইলে প্রথমত: এক মাসের ফজরের কাজা পড়িবে। তৎপর এক মাসের জোহরের কাজা তৎপর এক মাসের আছরের কাজা তৎপর এক মাসের মগরেবের কাজা তৎপর এক মাসের এশার কাজা তৎপর এক মাসের বেতেরের কাজা পড়িবে। কিন্তু কাজা নামাজকারী মনে ২ নিয়ত করিবে যে, আমি যে সকল নামাজ র্পূব্বে বর্জ্জিত করিয়াছি তাহা হইতে সকলের প্রথম দুই রকাত ফজরের ফরজ নামাজ কাজা পড়িতেছি=আল্লাহো আকবর। এই মত সকল নামাজের ফরজের ও ওয়াক্তের ও কাজার নাম বলিয়া পড়িতে হইবে। কোন ব্যক্তির কয়েক বৎসরের নামাজ কাজা হইলে, তাহা ঠিক করিতে না পারিলে তখন আন্তরিক খুব ভাবিবে, যেই দিকে অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস হয় সেই দিক মানিয়া লইবে। যেমন কয়েক বৎসরের নামাজ কাজা হইলে ভাবিতে ২ অন্তরের টান ৫ পাঁচ বৎসরের দিকে বেশী হইলে পাঁচ বৎসরের নামাজ কাজা পড়িবে। নিয়ত এইরূপ করিবে।

অন্তরের বিশ্বাসে কাজা নামাজ অর্নিদ্দষ্টি ভাবে বেশী হইলে এইরূপ নিয়ত করিবে।

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ اَوَّلِ فَجْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ اَوَّلِ ظُهْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

এইরূপ আছর ও এশারের নিয়তে اول ظهر স্থলে اول عصر, اول عشاء পড়িতে হইবে।

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى ثَلَاَثَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ اَوَّلِ مَغْرِبٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى ثَلَاثَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ اَوَّلِ فَجْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

কাজা নামাজের পরিমান ও সংখ্যা অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস মত আদায় করিতে ২ কেবলমাত্র এক দিনের নামাজ বাকী থাকিলে তাহাতে নিয়ত এইরূপ করিতে হইবে:

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَى صَلَوةِ آخِرَ فَجْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

জোহরের এইরূপে নিয়ত করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ آخَرَ ظُهْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

আছরের সময় এইরূপ নিয়ত করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ آخَرَ عَصْرٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

মগরীবের সময় এই নিয়ত করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى ثَلَاثَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ آخَرَ مَغْرِبٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

এশারের নিয়ত এইরূপ করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ آخَرَ عِشَاءٍ فَرْضُ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

বেতেরের নিয়ত এইরূপ করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اَقْضي لِلّهِ تَعَالى ثَلَاثَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ آخَرَ وِتْرٍ وَاجِبِ اللهِ تَعَالى مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ

আলমগিরী ১ম খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন গং। সূর্য্য উদয় হইবার সময় ও বরাবর (অর্দ্ধদিন) হইলে এবং ডুবিবার (অস্ত হওয়ার) সময় এই তিন সময়ে কাজা নামাজ পড়া মকরুহ তাহরিমা। কাজা নামাজ

লোকদিগকে জানাইয়া বা দেখাইয়া মসজিদে পড়া মকরুহ তাহরিমা ঘরে বসিয়া চুপে ২ পড়িবে।কেহ নামাজ পড়িবার সময় পাঁচ রকাত পরিমান পড়ার সময় বাকী আছে।কিন্তু ঐ ব্যক্তির এশারের ফরজ ও বেতের কাজা বাকী আছে।ফজরের নামাজ পড়িবার সময় প্রথম বেতের কাজা পড়িবে।তৎপর ফজরের ফরজ পড়িবে।সারর্মম্ম এই, জীবন ভর পাঁচ অক্ত: নামাজের অধিক নামাজ নিজের জিম্মার উপর কাজা না থাকিলে তরতিব্ (ধারা) মতে পড়া ফরজ। প্রবাসের কাজা নামাজ নিজ স্থানে পড়িলে কছর করিতে হইবে, নিজ স্থানের কাজানামাজ পর দেশে কাজা আদায় করিলে পুরা পড়িবে। আলমগীরি ১ম খণ্ড মেপ্তাহুল জন্নত ও দোররুল মোখতার ইত্যাদি গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড। এমাম আবু হানিফা (র:) বলেন, যেই ব্যক্তির এক অক্তের নামাজ হইতে পাঁচ অক্ত: (র্পয্যন্ত কাজা হইলে ঐ কাজা নামাজ আদায় করার র্পূব্বে ছয় অক্ত: র্পয্যন্ত অক্তিয়া নামাজ আদায় করিয়া পরে ঐ কাজা নামাজ পড়িলে সব নামাজ দুরস্ত হইয়া যাইবে।একদিবা রাত্রি হইতে বেশী দিন বেহুসিতে কাটাইলে তাহার কাজা দিতে হইবে না।একদিবা রাত্রি হইতে কম হইলে কাজা দিতে হইবে। (রুকুনুদ্দিন, আলমগিরী)।

ছোহ ছজিদার বিবরণ

নামাজের কোন অঙ্গ ভ্রমে বর্জ্জিত হইলে ইহা সংশোধনের জন্য আত্তাহিয়াত পাঠ করত:ডান দিক্ ছালাম ফিরাইয়া দুই সেজদা করাকে ছোহ ছেজদা বলে।ছোহ ছজিদা করা ওয়াজেব।কোন ওয়াজেব ভুলে ছুটিয়া গেলে ছোহ ছজিদা করিলে নামাজ দুরস্ত হইবে।ছোহ ছজিদা না করিলে নামাজ দোহরাইতে হইবে।ফরজ ছুটিয়া গেলে নামাজ ভঙ্গ হইবে।ছোহ ছজিদা করার ধারা এই-আখেরী রকাত আদায় করার পর আত্তাহিয়াত পড়িয়া ডান দিকে ছালাম

ফিরাইয়া দুই ছজিদা করিয়া পুনরায় বসিয়া আত্তাহিয়াত ও দরূদ এবং দোয়া পড়িয়া দুই দিকে ছালাম দিয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে। ভুলে ছালাম ফিরাইবার র্পূব্বে ছোহ ছজিদা করিলে তবে ও নামাজ দুরস্ত হইবে। ভুলে দুই রুকু নতুবা তিন ছজিদা করিলে ছোহ ছজিদা করা ওয়াজেব হইবে। নামাজের মধ্যে আলহামদো ভুলে না পড়িয়া কেবল অন্য একটি ছুরা পড়িলে, নতুবা অন্য ছুরা আগে পড়িয়া আলহামদো পরে পড়িলে ছোহ ছজিদা দোন ছুরাতে ওয়াজেব হইবে। ফরজের প্রথম দুই রকাতে ছুরা মিলাইয়া পড়া ভুলিয়া গেলে আখেরী দুই রকাতে আলহামদোর পর ছুরা মিলাইয়া পড়িবে ও ছোহ ছজিদা দিবে। নামাজ দুরস্ত হইবে। ফরজের ১ম দুই রকাত হইতে এক রকাতে ছুরা মিলাইয়া না পড়িলে পরের এক রকাতে ছুরা মিলাইয়া পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিলে নামাজ দুরস্ত হইবে। যদি পরের কোন রকাতে ও ভুলে না মিলাইলে, আত্তাহিয়াত পড়িবার সময় এয়াদ হইলে ও কেবল ছোহ ছজিদা করিলে নামাজ দুরস্ত হইবে। ছুন্নত ও নফল সব নামাজের রকাতে ছুরা মিলাইয়া পড়া ওয়াজেব। কোন রকাতে ছুরা ভুলে না মিলাইলে ছোহ ছজিদা করা ওয়াজেব। ফরজ ও ওয়াজেব এবং নফল সকল নামাজের মধ্যে ছোহ ছজিদা এক বরাবর ভাবে করিবে। তাহাতে কোন বেশ কম নহে।আলহামদো পড়িয়া ভাবিতে লাগিল যে কোন ছুরা পাঠ করিবে এই চিন্তাতে এই পরিমাণ সময় নষ্ট হইল যে যাহাতে তিনবার ছোবহানল্লা বলা যাইতে পারা যায়, তাহাতে ও ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। আখেরী রকাতে আত্তাহিয়াত ও দোয়া পড়ার পর সন্দেহ হইল যে আমি তিন রকাত পড়িয়াছি, কি, চারি রকাত পড়িয়াছি। এই চিন্তাতে বসিয়া থাকায় ও ছালাম ফিরায় মধ্যভাগে তিনবার ছোবহানল্লা বলার পরিমাণ গৌণ হওয়ার পর এয়াদ হইল যে আমি চারি রকাত পড়িয়াছি।

সেই সময় ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। আলহামদো ও অন্য ছুরা পড়ার পর ভুলে ভাবিতে ২ তিনবার ছোবহানল্লা বলার পরিমাণ রুকুতে যাইতে দের হইলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব। নামাজের মধ্যে কয়েক ওয়াজেব ছুটিয়া গেলে যেমন আলহামদোও প্রথম বৈঠক এবং দ্বিতীয় রকাতে ছুরা মিলাইয়া না পড়া ইত্যাদিতে একবার ছোহ ছজিদা করিলে নামাজ দুরস্ত হইবে। আলমগিরি ১ম খণ্ড। কেরাআত্ পাঠ করিতে ২ নামাজের আন্দর বন্ধ হওয়ায় কিছু চিন্তা করাতে তিনবার ছোবহানল্লা বলা পরিমাণ দের হইল,ে নতুবা ২য় বা ৪র্থ রকাতে আত্তাহিয়াত পড়িবার জন্য বসিয়া আত্তাহিয়াত আরম্ভ করিবার র্পূব্বে কিছু ভাবিতে ২ ঐ পরিমাণ দের হইল,ে বা রুকু হইতে দাঁড়াইয়া কিছু ভাবিতে ২ নতুবা দুই ছজিদার মধ্যে বসিয়া ভাবিতে ২ তিন বার ছোবহানল্লা বলা পরিমাণ দের হইলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। তিন রকাত বা চারি রকাত ওয়ালি ফরজ নামাজের মধ্যে দুই রকাত পড়ার পর আত্তাহিয়াত দুই বার পড়িলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। আত্তাহিয়াত পড়ার পর দরূদ আল্লাহোম্মা চল্লে আলা মুহাম্মদিন র্পয্যন্ত পড়িলে নতুবা ইহা হইতে আরও বেশী পড়িলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। কম পড়িলে হইবে না। নফল নামাজে আত্তাহিয়াত দুইবার পড়িলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব জানিবে। চারি রকাত ওয়ালি ফরজ নামাজের প্রথম দুই রকাতে আলহামদো দুইবার পড়িলে, ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে। আখেরী যেই কোন রকাতে আলহামদো দুইবার পড়িলে ছোহ ছজিদা না দিবে। (ফরজ নামাজের শেষের দুই রকাতে আলহামদো না পড়িলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে না।) নফস ও বেতেরের নামাজ হইলে ওয়াজেব হইবে। ছুরা ফাতেহা অধিকাংশ পড়িয়া বাকী অল্প অংশ ভুলিয়া গেলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে না। অধিকাংশ ভুলিয়া গেলে ছোহ ছজিদা

করা ওয়াজেব।কেবল আলহামদো পড়িয়া ভুলে অন্য ছুরা না পড়িয়া রুকুতে চলিয়া গেলে শেষ রকাতে ছোহ ছজিদা করিলে নামাজ সিদ্ধ হইবে।ভুলে আলহামদো না পড়িয়া অন্য ছুরা পড়িয়া রুকুতে গেলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে।(ছোবহানাকার জায়গায় দোয়া কুনুত পড়িলে,নতুবা ফরজ নামাজের ৩য় বা ৪র্থ রকাতে ভুলে আলহামদো না পড়িয়া আত্তাহিয়াত বা অন্য কিছু পড়িলে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে না।)তিন রকাত বা চারি রকাত ওয়ালি নামাজের মধ্যে দুই রকাতের পর ভুলে আত্তাহিয়াত না পড়িয়া কিঞ্চিৎ দাঁড়াইয়া বৈঠকের নিকটর্বত্তি হইলে বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে তৎপর দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িবে,ছোহ না দিবে।যদি দাঁড়াইয়া কেয়ামের নিকটর্বত্তী হয় তবে না বসিয়া দাঁড়াইয়া শেষ রকাতে ছোহ ছজিদা করিয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে। সোজা দাঁড়াইবার পর বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িলে পাতকী হইবে ঐ সময় ছোহ দিতে হইবে।কেহ চতুর্থ রকাতের পর ভুলে আত্তাহিয়াত না পড়িয়া পঞ্চম রকাতের জন্য দাঁড়াইল, কিন্তু সোজা দাঁড়ায় নাই তখন বসিয়া আত্তাহিয়াত ও দরূদ গং পড়িয়া ছোহ না দিয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।সোজা দাঁড়াইলে পঞ্চম রকাতের জন্য ছজিদা না করার র্পূব্বে এয়াদ হইল যে,আমি বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়ি নাই,তৎক্ষণাৎ বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছোহ দিয়া পরে আত্তাহিয়াত গং পড়িয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে।মোক্তাদির ভ্রম হইলে এমামের ছোহ ছজিদা দিতে হইবে না।মছ্বুক এমামের ভুলের দ্বারা এমামের সঙ্গে ছোহ ছজিদা করিবে।নিজের ভ্রমের জন্য নিজে ছোহ ছজিদা করিবে।পঞ্চম রকাতের ছজিদার পর স্মরণ হইল যে আমি চারি রকাতের পর আত্তাহিয়াত বসিয়া পড়ি নাই তাহার সঙ্গে আর ১ রকাত মিলাইয়া মোট ছয় রকাত পড়িয়া ছোহ ছজিদা করিয়া নামাজ শেষ করিবে।তবে ছয় রকাত নফল হইবে এবং ফরজ পুনরায় পড়িতে হইবে।

এইরূপ জোহর ও আছর এবং এশারের হুকুম জানিবে।কিন্তু চারি রকাতের পর আত্তাহিয়াত পড়িয়া দাঁড়াইবা মাত্র স্মরণ হইলে নতুবা পঞ্চম রকাতের ছজিদার র্পূব্বে স্মরণ হইলে হঠাৎ বসিয়া ছালাম ফিরাইবে ও ছোহ ছজিদা করিবে।পঞ্চম রকাতের ছজিদার পর স্মরণ হইলে আর এক রকাত মিলাইয়া ছয় রকাত পড়িবে তাহাতে চারি রকাত ফরজ ও দুই রকাত নফল হইবে।আছরের পরে নফল নামাজ দুরস্ত নহে।এই নামাজ দুরস্ত হইবার কারণ,এই নামাজ অপারিত অবস্থায় পড়া হইয়াছে।যদি পাঁচ রকাত পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিয়া নামাজ সমাপন করে চারি রকাত ফরজ হইবে, ও এক রকাত বাতেল হইবে।আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।যদি নামাজের মধ্যে সন্দেহ হয়,যে তিন রকাত পড়িয়াছে বা চারি রকাত পড়িয়াছে।এস্থলে বিবেচ্য বিষয় এই যে,ঐমুছল্লি আর কখনও নামাজের মধ্যে সন্দেহ করিয়াছে কিনা? যদি করিয়া থাকে,তবে ঐ নামাজ পরিত্যাগ করিয়া পুনরায় নামাজ আরম্ভ করিবে।আর যদি সন্দেহ করার অভ্যাস থাকে তবে মনে ২ ইহা বিবেচনা করিবে যে,কয় রকাতের দিকে মন বেশী ঝুকে,তিন রকাতের দিকে বেশী ঝুকিলে আর এক রকাত পড়িয়া চারি রকাত পড়িবে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব হইবে না।যদি চারি রকাতের দিকে বেশী ঝুকে তবে আর পড়িতে হইবে না।এবং ছোহ ছজিদাও করিতে হইবে না।যদি দুই দিক সমান মনে হয় কোনটাই স্থিবীকৃত না হয় তবে কম সংখ্যা তিন রকাত ধরিবে।আর এক রকাত বেশী পড়িবে কিন্তু এই অবস্থায় তিন রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া দাঁড়াইয়া ৪র্থ রকাত পড়িয়া ছোহ ছজিদা করিয়া পুনরায় আত্তাহিয়াত পড়িয়া সমাপন করিবে।যদি এইরূপ সন্দেহ হয় যে,এই রকাত ১ম রকাত বা ২য় রকাত কিনা,যদি এইরূপ সন্দেহ আর কখনও হইয়া থাকিলে তবে ঐ নামাজ বাদ দিয়া পুনরায় নূতন ভাবে নামাজ পড়িবে। আর যদি ঐ রূপ সন্দেহের অভ্যাস

থাকে,তবে মনের বিবেচনায় যত রকাত স্থবিীকৃত হয় তাহাই ধরিবে।যদি দুই দিক সমান হয়,কোন এক দিক স্থির না হয়,তবে কম সংখ্যা এক রকাত ধরিবে,কিন্তু এই এক রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে তৎপর ২য় রকাত পড়িয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে কিন্তু ২য় রকাতে আলহামদোর সঙ্গে ছুরা ১টি পাঠ করিবে তৎপর ৩য় রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া তৎপর ৪র্থ রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছালাম ডান দিকে ফিরাইয়া ছোহ ছজিদা করিয়া পরে আত্তাহিয়াত ও দরূদ এবং দোয়া পড়িয়া নামাজ সমাপন করিবে।এইরূপ ২য় কি,৩য় রকাতে সন্দেহ করিলে র্পূব্বরে মত করিবে,কিন্তু মনের বিবেচনায় দুই দিক সমান হইলে কম সংখ্যা ধরিয়া দুই রকাত পড়ার পর বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে তৎপর ৩য় রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িবে তৎপর ৪র্থ রকাত পড়িয়া বসিয়া আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিয়া পুনরায় আত্তাহিয়াত ও দরূদ ইত্যাদি দ্বারা নামাজ খতম করিবে।নামাজ সমাপন করার পর সন্দেহ হইল যে,তিন রকাত পড়িয়াছে,বা চারি রকাত পড়িয়াছে তবে ঐ সময় আর কিছুই করিতে হইবে না।কিন্তু যদি ঠিক করিয়া জানিতে পারিল,আমি তিন রকাত পড়িয়াছি, তবে আর এক রকাত পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিয়া নামাজ আদায় করিবে।নামাজ হইতে বাহির হওয়ার পর ঠিক করিয়া জানিলে বা স্মরণ হইলে পুনরায় পড়িবে।ছোহ ছজিদা করার পর এমন কাজ করিল যে,যাহাতে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব,তবে প্রথম ছোহ ছজিদা শেষ করিবে।২য় বার ছোহ ছজিদা দিতে হইবে না।নামাজের মধ্যে ছোহ ছজিদা ওয়াজেব্ হওয়ার পর দুই দিক ছালাম ফিরাইলে,স্মরণ হইল যে,আমার উপর ছোহ ছজিদা বাকী রহিয়াছে।কিন্তু কেহর সঙ্গে আলাপ করে নাই ও কাবার দিক হইতে বক্ষস্থল ফিরায় নাই ও নামাজ ভঙ্গ হয় যে, সেইরূপ কোন কাজও করে নাই সেই সময় ছোহ ছজিদা করিলে নামাজ দুরস্ত

হইবে। যদি ঐ সময় ছালাম ফিরাইয়া বসিয়া ২ কলেমা পড়িলে নতুবা দরূদ ইত্যাদি অজিপা পড়িলে তবুও ছোহ ছজিদা দিয়া নামাজ আদায় করিলে কোন ক্ষতি হইবে না। চারি রকাত বা তিন রকাত ওয়ালি নামাজে ভুলে দুই রকাত পড়িয়া ছালাম ফিরাইলে নামাজ হইতে বাহির হওয়ার কোন কাজ না করিলে হঠাৎ উঠিয়া বাকী নামাজ পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিয়া নামাজ শেষ করিবে। নামাজ হইতে বাহির হইয়া যাওয়ার কোন কাজ করিলে পুনরায় নামাজ দোহরাইবে। যেই স্থলে এমাম কেরাত বড় করিয়া পড়া ওয়াজেব, ছোট করিয়া পড়িলে এবং যেই স্থলে কের-আত ছোট (চুপ) করিয়া পড়া ওয়াজেব বড় করিয়া পড়িলে ছোহ ছজিদা দেওয়া ওয়াজেব জানিবে। এমাম ও মোক্তাদির মধ্যে রকাতের মতভেদ হইলে, এমামের একিন হইল যে নামাজ পুরা পড়িয়াছে তখন এমামের দোহরাইতে হইবে না। মোক্তাদিগণের একিন হইল যে নামাজ পুরাপুরি পড়া যায় নাই। তখন মোক্তাদিগণের নামাজ দোহরাইতে হইবে। কারণ তাহারার জ্ঞান যে তাহাদের নামাজ ফাছেদ হইয়া গিয়াছে। মোট কথা ওয়াজেব ভুলে ছুটিয়া গেলে ছোহ ছজিদা দিতে হইবে। জানিয়া ওয়াজেব ছাড়িয়া দিলে নামাজ দোহরাইতে হইবে। দোররুল মোখতার ১ম খণ্ড ও আলমগিরী ১ম ও ছাগীরী এবং বেহেস্তী জেওর ২য় খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

মরিজ (পীড়িত) ব্যক্তির নামাজের বিবরণ

নামাজ কোন সময়ে ছাড়িয়া দিতে পারিবে না। পীড়িত ব্যক্তি দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে যদি অনিষ্ট হয় তবে বসিয়া ২ নামাজ পড়িবে। যেমন দাঁড়াইলে অঙ্গে বেদনা হওয়া, ফোঁটা ২ প্রস্রাব, শুক্র, পুজ রক্ত ইত্যাদি নির্গত হওয়া ও বিমার বৃদ্ধি হওয়া, মস্তক ঘুরান, যেই

পরিমান দাঁড়াইয়া পড়িতে পারে দাঁড়াইয়া পড়িবে।যেমন তকবির তাহরিমা দাঁড়াইয়া বলিতে পারে ও এক আয়ত পরিমাণ পড়িতে পারে তবে দাঁড়াইয়া পড়িবে বাকী বসিয়া ২ পড়িবে।বসিয়া নামাজ পড়িলে,রুকু ও ছজিদার অক্ষম হইলে,মস্তকে ইঙ্গিত করিয়া নামাজ পড়িবে অর্থাৎ রুকু অপেক্ষা সেজদাতে অধিক মস্তক অবনত করিবে।যদি ঠেস দিয়া বসিতে অক্ষম হয় তবে চীৎ হইয়া কাবাভিমুখে মুখ দিয়া শয়ন করত:ইঙ্গিত দ্বারা নামাজ সমাপন করিবে। ঠেশ দিয়া বসিতে পারিলে শয়ন করিয়া পড়িলে দুরস্ত হইবে না।যদি রুকু ও দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া এবং ছজিদা হইতে অক্ষম হয়,বসিয়া নামাজ পড়িতে পারিলে,বসিয়া নামাজ পড়িবে ও রুকু,ছজিদা ইঙ্গিত দ্বারা করিবে।রুকু অপেক্ষা সেজদাতে অধিক মস্তক ঝুলাইবে।রুকু অপেক্ষা সেজদাতে অধিক মস্তক না ঝুলাইলে নামাজ দুরস্ত হইবে না।শয়ন করিয়া নামাজ পড়িতে কাবার দিকে পা লম্বা করিবে না।দুই উরু খাড়া করিয়া মস্তক কিঞ্চিৎ মাত্র উচ্চ করত:নামাজ পড়িবে।পীড়িত ব্যক্তি মস্তকের ইঙ্গিত দ্বারা নামাজ পড়িতে না পারিলে তখন নামাজ না পড়িবে।ইঙ্গিত করার অসাধ্যের দরুণ এক দিবারাত্রির অধিক নামাজ কাজা হইলে,ঐনামাজ খোদাতালা ক্ষমা করিবেন,তাহার কাজা দিতে হইবে না।একদিবারাত্রি বা দিবারাত্রির কম বর্জ্জিত হইলে যেই সময় মস্তকের ইঙ্গিত দ্বারা পড়ার শক্তিবান হয় সেই সময় কাজা দেওয়া ওয়াজেব হইবে।এইরূপ যেই ব্যক্তির বেহুসিতে একদিবারাত্রি হইতে অধিক নামাজ বর্জ্জিত হয়,তাহার কাজা ওয়াজেব হইবে না।পীড়িত ব্যক্তির কের-আত ও তছবিহ এবং আত্তাহিয়াত পড়িবার শক্তি না থাকিলে সাধ্য পরিমান পড়িবে নতুবা বন্ধ করিবে।বিমারির গতিকে কিছু নামাজ বসিয়া ২ পড়িলে রুকু,ছজিদার জায়গায় রুকু ছজিদা করিলে ক্ষণকাল পরে নামাজের আন্দর

ভাল (আরাম) হইলে বাকী নামাজ দাঁড়াইয়া পড়িবে। রুকু, ছজিদার শক্তি না থাকায় মস্তকের ইঙ্গিত দ্বারা রুকু, ছজিদা করিয়া কিছু নামাজ পড়ার পর ঐ নামাজে পুনরায় রুকু, ছজিদা করার উপর সমর্থ হইলে নামাজ ভঙ্গ হইয়া যাইবে নামাজ দোহরাইয়া পড়িবে। পীড়িত ব্যক্তির বিছানা পবিত্র না হইলে, বদলাইতে অত্যন্ত কষ্ট ও তক্লিফ হইলে সেই নাপাক বিছানায় নামাজ পড়া দুরস্ত হইবে। যদি নামাজের রকাত ও ছজিদার সংখ্যা স্মরণ রাখিতে না পারে নিজের পাশে নামাজ পড়িবার সময় একটি লোক বসাইয়া বাত্লাইয়া দিতে পারিবে। গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড রুকুনুদ্দিন, বেহেস্তি জেওর ২য় খণ্ড ও আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

নৌকায় নামাজ পড়ার বিবরণ

শরেহ বেকায়া কেতাবে বর্ণিত আছে যে, ওজর ব্যতীত নৌকায় বা জাহাজে বসিয়া ২ নামাজ পড়িতে পারিবে। কিনারায় নৌকা আবদ্ধ থাকিলে ওজর ব্যতীত বসিয়া ২ নামাজ পড়া দুরস্ত নহে। মুহিত কেতাবে লিখিত হইয়াছে, চলতি নৌকা হউক বা বান্ধা হউক, নৌকা যে দিক ঘুরিবে মুছল্লি, (নামাজি) সেই দিক হইতে কাবার দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়িবে। কেননা শক্তিক্রমে কাবার দিকে মুখ করা ফরজ, যেমন খোদাতালা ফরমাইয়াছেন: তোমরা যেই স্থানেই অবস্থান করনা কেন নামাজ পড়ার সময় তোমরা মুখ কাবার দিকে রাখÑ এইরূপ রেলের উপর নামাজ পড়িবার সময় রেল কাবার দিক হইতে ফিরিয়া গেলে নামাজি নিজের মুখ কাবার দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়িবে, নতুবা নামাজ দুরস্ত হইবে না। চতুষ্পদ পশুর উপর আরোহন করিয়া নফল নামাজ পড়া সব সময় দুরস্ত আছে। কিন্তু ওয়াজেব্ ও ফরজ নামাজ ওজর ব্যতীত চতুষ্পদ পশুর উপর চড়িয়া পড়া

দুরস্ত নাই। ফরজ ও ওয়াজেব্ নামাজ পশুর উপর আরোহন করিয়া পড়া দুরস্ত হওয়ার ওজর, যেমন দুষমন ও পশুর দ্বারা জানের বা মালের ভয় হইলে, মেয়ে লোকে দুষ্ট লোক কে ভয় করিলে, প্রবাসিদের কাফেলা চলিয়া যাওয়ার ভয় হইলে, নতুবা পশুর উপর অন্য লোকের সাহায্য ব্যতীত আরোহন করিতে না পারা, ইত্যাদি, পশুর উপর চড়িয়া নামাজ পড়িলে পশুকে থামাইতে না পারিলে ইঙ্গিত করিয়া নামাজ পড়িবে। কিন্তু কাবা মুখি হইয়া নামাজ পড়িতে হইবে। তাহাও না পারিলে যেই প্রকারে পারে পড়িবে। যদি কাবাভিমুখে মুখ করিয়া পড়িতে পারিত- অবস্থায় না পড়িলে নামাজ দুরস্ত হইবে না। গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি। আবশ্যক বশত: সব্ নামাজ রেলের উপর পড়া দুরস্ত আছে। কেতাব ঐ।

ছজিদা তালাওয়াতের বিবরণ

পবিত্র কোরআন শরীফের যে চৌদ্দটি ছজিদা র্নিদ্দশে আছে সেই সকল আয়াত পাঠ করিলে যে ছজিদা দেওয়া হয়, তাহাকে ছজিদা তালাওয়াৎ বলে। ঐ আয়াত পাঠ করার পর ছজিদা দেওয়া ওয়াজেব পাঠকও শ্রোতাগণের উপর ছজিদা করা ওয়াজেব। এমাম নামাজের আন্দরে ছজিদার আয়ত পাঠ করিলে, মোক্তাদিগণ শ্রবণ করুক বা না করুক, এমামের সঙ্গে ২ ছজিদা করা ওয়াজেব হইবে। নামাজের জন্য যে র্শত্ত তালাওয়াতের ছজিদার জন্য ও সেই র্শত্ত জানিবে, কিন্তু ছজিদা তালাওয়াতে তাহরিমা বাঁধিতে হইবে না। অমুক আয়তের নিমিত্ত এই ছজিদা করি, তাহা বলিতে হইবে না। তালাওয়াতেও ছজিদা আদায় করার নিয়ম এই, প্রথম দাঁড়াইয়া আল্লাহো আকবর তক্বির বলিয়া এক ছজিদা করত: আল্লাহো আকবর বলিয়া দাঁড়াইবে। ঐ ছজিদাতে ছজিদার তছবিহ তিনবার

পড়িবে। বসিয়া ২ তক্বির বলিয়া ছজিদা করিয়া পুনরায় ছজিদা হইতে উঠিয়া না দাঁড়াইলেও দুরস্ত হইবে। যে যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় সেই ২ কারণে তালাওয়াতের ছজিদাও ভঙ্গ হয়। কোরআন পাঠের ছজিদা গৌণে ও দিতে পারিবে কিন্তু নামাজের মধ্যে ছজিদার আয়ত পাঠ করিলে গৌণ করিতে পারিবে না এবং নামাজ হইতে বাহির হওয়া ও ছজিদা করা না দুরস্ত, তাই গুনাহগার হইবে। অর্থাৎ যেই ছজিদা নামাজের মধ্যে ওয়াজেব হয় তাহা নামাজ হইতে বাহির হইয়া আদায় করা দুরস্ত নহে। ছজিদার আয়ত শুনিবার সময় অজু না থাকিলে পরে অজু করিয়া ছজিদা আদায় করিবে। কোন ব্যক্তির জিম্মায় কয়েকটি ছজিদা বাকী থাকিলে হায়াতের মধ্যে আদায় না করিলে মহা পাতকী হইবে। হায়েজ বা নেফাছের সময় কোন স্ত্রীলোকে ছজিদার আয়ত পাঠ করিতে শুনিলে তাহার উপর ছজিদা করা ওয়াজেব নহে, বরং আল্লাহোতালা উহাকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। যদি এমত অবস্থায় শুনে যে, ঐ স্ত্রীলোকের উপর গোছল ওয়াজেব হইয়া থাকে, অবগাহন করার পর উহার উপর ছজিদা করা ওয়াজেব হইবে। নামাজের মধ্যে ছজিদার আয়ত পাঠ করার পর হঠাৎ ছজিদা করিবে। দুই তিন আয়ত পাঠ করার পর ছজিদা করিলেও দুরস্ত হইবে। ইহার অধিক আয়ত পাঠ করার পর ছজিদা করিলেও দুরস্ত হইবে কিন্তু পাতকী হইবে। হানফী মজহাবের লোক সাফেয়ী এমামের পশ্চাতে এক্তেদা করিলে যেই আয়তটি হানফী মতে ছজিদার নহে, কিন্তু সাফেয়ী মতে ছজিদার আয়ত হইলে এমামের সঙ্গে হানফী লোক ছজিদা করিতে হইবে। কিন্তু নামাজের বাহিরে সাফেয়ী লোক হইতে শুনিলে ছজিদা করিবে না। এইরূপ মালেকী মজহাবের এমাম হইলেও হানফীলোক ছজিদা করিতে হইবে এটা যদি ঐ মজহাব মতে ছজিদার আয়ত হয়।

হানফী এমাম ছজিদার আয়ত পড়িয়া ছজিদা না করিলে মোক্তাদিগণ ছজিদা করিবে না তাহারা শুনুক বা না শুনুক। প্রত্যেক মুসলমান আকেল, বালেক ছজিদার আয়ত পড়িলে বা অন্য কেহ হইতে শুনিলে ছজিদা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। কাফের, মাতওয়াল, উন্মাদ, নাবালেগ তাহাদের উপর পড়িলে বা শুনিলে ছজিদা ওয়াজেব হইবে না। উহারা হইতে কেহ শুনিলে ছজিদা ওয়াজেব হইবে। নামাজের মধ্যে কোন স্ত্রীলোক ছজিদার আয়ত পড়িয়া, ছজিদা দেওয়ার র্পূব্বে হায়েজ হইয়া গেলে ঐ ছজিদা করিতে হইবে না। তেলাওয়াতের ছজিদার আয়ত এই। ১। ছুরা আয়ারাফের ইন্নাল্লাজিনা হইতে অলহু এছ্জুদুন র্পয্যন্ত পড়িলে ছজিদা দিবে। ২। ছুরা রায়াদে অলিল্লাহে এছ্জুদু হইতে অল্ আচাল র্পয্যন্ত পড়িলে। ৩। ছুরা নাহালে অলিল্লাহে এছ্জুদু হইতে লা এস্তক্বেরুন র্পয্যন্ত পড়িলে। ৪। ছুরা বনি ইছরাঈলে, ইন্নল্লজিনা হইতে ল’মফ্উলা র্পয্যন্ত পড়িলে। ৫। ছুরা মরএমে এজা তুত্লা আলায়হিম হইতে অ’বুকিইয়ান র্পয্যন্ত। ৬। ছুরা হজের ১ম ছজিদায় আলমতারা হইতে মা এসায়ো র্পয্যন্ত। ৭। ছুরা ফোরকানে অ’এজা কিলা হইতে নফুরা র্পয্যন্ত। ৮। ছুরা নমলে, অ’এয়ালামু হইতে অ’মাতুয়ুলেনুন র্পয্যন্ত। ৯। ছুরা আলেফলাম তনজিলে ইন্নামা ইউমেনু হইতে লা এস্তকবেরুন র্পয্যন্ত। ১০। ছুরা ছোয়াদে ফস্তগফরা হইতে অ’আনাব র্পয্যন্ত ১১। হামমি সজদিাতে লা এছআমুন র্পয্যন্ত। ১২। ছুরা অন্নজমে, অ’আয়াবুদু র্পয্যন্ত। ১৩। ছুরা এন্সেকাকে লা এছজুদুন র্পয্যন্ত পড়িলে। ১৪। ছুরা একরাতে অক্তরিব র্পয্যন্ত পড়িলে ছজিদা করিতে হইবে। নামাজের মধ্যে বাহির লোকের মুখ হইতে ছজিদার আয়ত পাঠ করিতে শুনিলে নামাজের পরে ছজিদা আদায় করিবে। নামাজের আন্দরে ঐ ছজিদা আদায় করিলে দুরস্ত হইবে

না এবং পাতকী হইবে। এক জায়গায় বসিয়া ২ ছজিদার এক আয়ত বার ২ পড়িলে শেষে এক ছজিদা করিলে ওয়াজেব আদায় হইয়া যাইবে। যদি জায়গা বদলাইয়া এক ২ স্থানে এক ২ বার পড়িলে, যতবার যতস্থানে পড়িবে প্রত্যেক জায়গায় এক ২ ছজিদা করিতে হইবে। যদি এক জায়গায় বসিয়া ছজিদার কয়েক আয়ত পড়ে, প্রত্যেক আয়তে এক ২ ছজিদা করা ওয়াজেব হইবে। এক জায়গায় বসিয়া এক আয়ত পড়িল। পরে দাঁড়াইয়া ঐ স্থানে ঐ আয়ত কয়েকবার পড়িল এবং অন্য কোন স্থানে চলাফিরা করে নাই তবে এক ছজিদা ওয়াজেব হইবে। এক স্থানে একবার ছজিদার আয়ত পড়িয়া দাঁড়াইবার পর অন্য কাজে যাওয়ার পর পুনরায় ঐ স্থানে ফিরিয়া আসিয়া ঐ আয়ত পড়িলে দুই ছজিদা করিতে হইবে। ছজিদার আয়ত পড়ার পর সেই জায়গায় নামাজের নিয়ত বান্ধিয়া নামাজে পুনরায় ঐ আয়ত তেলাওয়াত করিলে এক ছজিদা নামাজের আন্দরে দিলে চলিবে যদি জায়গা বদলাইয়া পড়ে, দুই ছজিদা করিতে হইবে। ছজিদার আয়ত পড়ার পর ছজিদা আদায় করিলে, পরে ঐ আয়ত নামাজে পড়িলে পুনরায় ছজিদা করিতে হইবে। এক জায়গায় বসিয়া ২ ছজিদার আয়ত পড়িলে কিন্তু শ্রবণ কারি কয়েক জায়গায় শুনিলে যত জায়গায় শুনিবে তত ছজিদা করিবে কিন্তু তেলাওয়াতকারী এক ছজিদা করিবে। ছজিদার আয়ত তেলাওত করযি়া সেই স্থানে খাওয়া দাওয়া করিলে নতুবা তিন কদম চলিলে নয়ত: বেচা কেনা করিলে পরে সেই স্থানে পুনরায় ঐ আয়ত পড়িলে উহার উপর দুই ছজিদা করা ওয়াজেব হইবে। দোররুল মোখতার। গাযেতুল আওতার ১ম খণ্ড বেহেস্তি জেওর, রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি। যখন কোন মুছিবত দুর হইয়া যায় নতুবা কোন প্রকার খোদার নেয়ামত প্রকাশিত হয় তখন ছজিদায় তেলাওতের মত দুইটি

ছজিদা করাকে সোকরের ছজিদা বলে কিন্তু যেই তিন সময় নামাজ পড়া মকরুহ তাহরিমা সেই সময় ছজিদা করা অসিদ্ধ জানিবে। গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন ও কবিরী ইত্যাদি।

ঈদের নামাজের বিবরণ

শাওয়াল চাঁদের প্রথম দিবস বহু লোক একত্রিত হইয়া মাঠে এমামের সঙ্গে দুই রকাত নামাজ পড়াকে ঈদুল ফেতরের নামাজ বলে। ঈদের নামাজ হজরত নবি ছল্লল্লাহো আলায়হে ওছল্লম যখন মক্কাশরিফ হইতে মদিনা শরীফ হিজরত করিয়া যান তখন দেখিতে পাইলেন যে লোকগণ বৎসরের মধ্যে দুই দিবস খেলা ও আমোদ করিতেছেন, তখন নবি ছল্লল্লাহো আলাইহিচ্ছালাম লোকগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহা কোন্ দিবস? তখন উত্তর দিলেন, আমরা কুফরী অবস্থায় খেলা করিতাম। তখন হজরত ছল্লল্লাহো আলায়হে ওছল্লম ফরমাইলেন, আল্লাতালা তোমরাকে ঐ দুই দিনের বদলে ভাল দুই দিন বদলাইয়া দিয়াছেন, এক দিন ঈদুল ফেতর ২য় দিন ঈদুজ্জোহা। হিজ্রীর প্রথম বৎসর ওয়াজেব হয়। যেই ব্যক্তির উপর জুমা ওয়াজেব, সেই ব্যক্তির উপর ঈদের নামাজ ওয়াজেব। জুমার যাহা সর্ত্ত ঈদের ও তাহা সর্ত্ত জেলহজ্জের চাঁদের দশম তারিখ ঈদুল ফেতেরের ন্যায় নামাজ পড়াকে ঈদোজ্জোহা বা ঈদুল আজ্হা বলে।

রমজানের ঈদের নামাজের নিয়ত মোক্তাদি হইলে এইরূপে করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّيَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَيْ صَلَوةِعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ تَكْبِيْرَاتٍ وَاجِبِ اللهِ تَعَالى اِقْتَدَيْتُ بِهَذَا الِامَامِ مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ

الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ                   

কোরবানের ঈদের নামাজের নিয়ত এইমত করিবে

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّيَ لِلّهِ تَعَالى رَكَعَتَيْ صَلَوةِعِيْدِ الضُّحي مَعَ سِتِّ تَكْبِيْرَاتٍ وَاجِبِ اللهِ تَعَالى اِقْتَدَيْتُ بِهَذَا الِامَامِ مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ

 الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ ـ                   

ঈদের দিবস আল্লাহতালার নেয়ামত আল্লাহর বান্দাগণের উপর ফিরিয়া পুনরায় উপস্থিত হয়, এই জন্য ঈদ বলে। ঈদ অর্থ খুশি ও ফিরিয়া আসা। ঈদের নামাজ ওয়াজেব, ঈদের দিবসের মস্তাহাব এইÑ ১। গোছল করা। ২। মেছওয়াক করা। ৩। ভাল কাপড় পরিধান করা। নূতন হউক বা ধোলাই করা হউক। ৪। খোসবো দেওয়া। ৫। তক্বির বলা। ৬। ঈদের মাঠে যাওয়া নামাজ পড়ার জন্য। ৭। রাস্তা পরির্বত্তন করা। ৮। ঈদের নামাজের র্পূব্বে রোজার ফেত্রা আদায় করা। ৯। ঈদের নামাজের র্পূব্বে মিষ্টান্ন আহার করা। যদি খোরমা ইত্যাদি আহার করে তবে বেজোড় খাইতে হইবে। নতুবা অন্য কোন বস্তু হইলেও খাইয়া নামাজ পড়িতে যাওয়া। কোরবানের ঈদের নামাজের র্পূব্বে কিছু না খাওয়া মস্তাহাব, কোরবানী ওয়ালা হউক বা না হউক। ১০। প্রথম গ্রাস কোরবানীর গোস্তের দ্বারা খাওয়া। ঈদের নামাজের ছওয়ার হইতে পায়ে চলিয়া যাওয়া উত্তম। এক সহরে ঈদের কয়েক জমাত হইতে পারে, আলমগিরি ১ম খণ্ড ১২১ পৃষ্ঠা চলাতে ঈদায়েন ও দোররুল মোক্তার। ঈদের নামাজের জন্য

মিম্বর তৈয়ার করিয়া নামাজ পড়া উত্তম, জহিরিয়া ও খোলাছা কেতাবে ইমামগণের মতভেদ লিখিয়াছে।যদি ঈদের নামাজ মাঠে পড়া যায়, তবে বাজ্ ইমাম বলেন মিম্বর প্রস্তুত করিয়া নামাজ পড়িলে মকরুহ হইবে, বাজ্ ইমাম বলেন প্রস্তুত করিয়া নামাজ পড়িলে মকরুহ হইবে না বাজ ইমাম বলেন, সমস্ত ইমামগণের নিকট মিম্বর প্রস্তুত করিয়া নামাজ পড়িলে মকরুহ হইবে।খোলাছা কেতাবে ইমাম খাহারজাদা হইতে রেওয়ায়ত আছে যে, আমাদের এই জমানায় মিম্বর প্রস্তুত করিয়া মাঠে নামাজ পড়া উত্তম।গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ৩৮৫ পৃষ্ঠা।রমজানের ঈদের নামাজে ইমাম আবু ইউছুফ ও মহাম্মদ রহেমাহুমাল্লাহ বড় করিয়া তকবির বলিতে বলিয়াছেন ইহাকে আছহ: বলিয়াছেন কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র:) ছোট করিয়া পড়িতে বলিয়াছেন, কিন্তু উচ্চস্বরে পড়াকে নাহারুল হায়েকের মধ্যে জোর দিয়াছেন,দোররুল মোক্তার ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ৩৮৫ পৃষ্ঠা। র্সূয্য সাদা হওয়া হইতে বরাবর হওয়ার র্পূব্ব র্পয্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকিবে, আলমগিরী ১ম খণ্ড ১২১ পৃষ্ঠা।ঈদুল ফেতরের নামাজ প্রথম দিন কোন ওজরের দ্বারা পড়িতে না পারিলে পরদিন সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে র্পয্যন্ত পড়িতে পারিবে।পরদিনের পর রমজান শরীফের ঈদের নামাজ পড়া দোরস্ত হইবে না, কিন্তু কোরবানের ঈদের নামাজ তিন দিন অর্থাৎ১০।১১।১২ তারিখে সূর্য্য ঢলিবার র্পূব্বে র্পয্যন্ত পড়িতে পারিবে।ওজর ছাড়া ১১।১২ তারিখে নামাজ পড়িলে মকরুহ হইবে।রমজানের ঈদের নামাজের পরে বা আগে বড় করিয়া তকবির বলা বোরহান কেতাবে ছুন্নত বলিয়া লিখিয়াছে ও ইমাম আবু হানিফা (র:) হইতে বড় করিয়া পড়িবার জন্য এক রেওয়ায়ত আসিয়াছে কিন্তু আওয়াম মুসলমানগণকে কোন সময়ে বড় কিম্বা ছোট করিয়া পড়িতে বাধা দিতে নাই, তাহারা

যেই রকম ইচ্ছা করে সেই রকম পড়িতে পারিবে ঈদের নামাজের মাঠে। ঈদের নামাজের র্পূব্বে খাছ মুছলিমগণের জন্য কোন নফল নামাজ পড়া দোরস্ত নাই। ঈদের নামাজের পর ঈদের মাঠেও নফল নামাজ পড়িতে পারিবে না, কিন্তু আওয়াম অর্থাৎ সর্ব্বসাধারণ মুসলমানগণরে জন্য ঈদরে নামাজরে র্পূব্বে হউক বা ঈদরে নামাজরে মাঠে নামাজ পড়িবার আগে হউক বা পরেহউক র্সব্ব সময় উহাদের জন্য দোরস্ত আছে। রমজানের ঈদের তকবিরের মত র্সব্বসময় সবরকম ভাবে র্সব্ব সাধারণ মুসলমানের জন্য দোরস্ত জানিবে। দোররুল মোখতার ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ৩৮৬ পৃষ্ঠা ইত্যাদি। ঈদের নামাজের পর বাড়ী আসিয়া ৪ চারি রকাত নফল নামাজ পড়া মস্তাহাব, কারণ ফতহুল কদির নামক কেতাবে বর্ণিত আছে যে, নবি আলায়হিচ্ছালাম ঘরে আসিয়া ঈদের নামাজের পর দুই রকাত নফল নামাজ পড়িতেন, কাহাস্থানি (রহ:) চারি রকাত আফজল বলিয়াছেন। কেতাব ঐ পৃষ্ঠা ঐ। ঈদের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়, এক নেজা পরিমান সূর্য্য উদয় হওয়ার পর হইতে, মধ্যাহ্নরে র্পূব্ব র্পয্যন্ত থাকিবে। ঈদের নামাজের ধারা এই, প্রথমত: এমাম নিয়ত করিয়া তকবির বলিয়া তাহরিমা বাঁধিবেন তৎপর ছোবহানাকা পাঠ করিয়া উচ্চ: শব্দে তিনবার তক্বির বলিবেন, প্রত্যেক বারে হস্তদ্বয় ঝুলাইয়া দিবেন ও তাহরিমা বাঁধিয়া, আউজো-বিল্লাহ বিছমিল্লা চুপে ২ পড়িবে। তৎপর উচ্চ শব্দে আলহামদো ও অন্য ছুরা পাঠ করিয়া যথা নিয়মে রুকু ছজিদা করিয়া দাঁড়াইবে। তৎপর দ্বিতীয় রকাতে আলহামদো ও অন্য ছুরা পাঠ করিয়া তিন বার উচ্চ: শব্দে তকবির বলিয়া ও প্রত্যেক বারে হস্তদ্বয় ঝুলাইবেন। চতুর্থ বারে তকবির বলিয়া রুকু ছজিদা করত: আত্তাহিয়াত ও দরূদ দোওয়া পাঠ করিয়া ছালাম ফিরাইয়া নামাজ সমাধা করিবে এবং পরে খোত্বা আরম্ভ

করিবে। কোন কারণবশত: ধার্য্য দিবস ঈদ করিতে না পারিলে পরের দিবস ঈদ করা যায়। কিন্তু ঈদের নামাজের কাজা নাই, ঈদের জন্য দুই খোত্বা পাঠ করিবে, দোন খোত্বার দরমেয়ান অর্থাৎ প্রথম খোত্বা পাঠ করিয়া ক্ষণকাল বসিয়া দ্বিতীয় খোত্বা পাঠ করিবে। ইমাম মিম্বরের উপর উঠিলে না বসিবে দাঁড়াইয়া ৯ নয় বার তকবির বলিয়া প্রথম খোত্বা আরম্ভ করিবে। ঐ খোত্বা পড়া শেষ হইলে ক্ষণকাল মিম্বরের উপর বসিয়া দাঁড়াইলে দ্বিতীয় খোত্বা আরম্ভ করার র্পূব্বে ৭ সাত বার তক্বির বলিয়া ঐ খোত্বা আরম্ভ করিবে। দ্বিতীয় খোত্বা পড়িয়া মিম্বর হইতে নামিবার র্পূব্বে ১৪ চৌদ্দ দফা তক্বির বলিয়া নামিবে, ইহা মস্তাহাব। ঈদুল ফেতরের খোত্বা পাঠ করিতে ফেত্রার আহকাম ও কাহার উপর ফেত্রা ওয়াজেব ও কাহাকে ফেত্রা দিলে আদায় হইবে ও আদায় না করিলে কি ক্ষতি হইবে তাহা সমস্ত বয়ান করিবে ও শিক্ষা দিবে। ঈদের নামাজের র্পূব্ব জুমায় এই সমস্ত আহকাম লোকগণ ও মুছল্লগিণকে জানাইয়া দেওয়া উচিৎ। কোরবানের ঈদের খোত্বার সময় কোরবানের হুকুম ও আইয়ামে তস্রিকের হুকুম ইত্যাদি ২ শিক্ষা দিবে। রমজানের ঈদের নামাজ ও কোরবানের ঈদের নামাজ দুই ২ রকাত জানিবে। ৯ নয় জেলহজ্জ তারিখের ফজরের ফরজ নামাজের পর হইতে ১৩ই তরেই জলেহজ্জ তারখিরে আছররে ফরজরে পর র্পয্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে স্ত্রী ও পুরুষ সকলের উপর একবার তকবির বলা ওয়াজেব, জমাতে হউক বা একাকী হউক মুছাফের অর্থাৎ প্রবাসি হউক বা গৃহবাসি হউক তকবির বলিতে হইবে। কিন্তু পুরুষ উচ্চশব্দে বলিবে ও স্ত্রীলোক চুপে ২ বলিবে। ঈদের নামাজে ছোবহানাকা পাঠ করিবার পর যে তিন তকবির বলিবে ও ২য় দ্বিতীয় রকাতে রুকু করার

র্পূব্বে যে তিন তকবির বলা হইবে তাহাতে হস্তদ্বয় ঝুলাইয়া দিয়া তিন তছবিহ পরিমাণ প্রত্যেক তক্বিরে চুপ থাকিবে। দুই খোত্বা ঈদের নামাজের পরে পড়া ছুন্নত, যদি নামাজের র্পূব্বে খোত্বা পড়া যায়, নামাজ দুরস্ত হইবে ও ছুন্নতের ব্যতিক্রম হওয়ায় মন্দ হইবে, কিন্তু জুমার নামাজের খোত্বা ফরজ জানিবে। আলমগিরি ১ম খণ্ড চলাতিল ঈদায়েন ও গায়েতুল আওতার ঈদের বাব। রমজানের ঈদের নামাজ কোন ওজরের দ্বারা প্রথম দিন পড়িতে না পারিলে দ্বিতীয় দিন পড়িবে। বিনা ওজরে দ্বিতীয় দিন পড়িতে পারিবে না। দ্বিতীয় দিনের পর দিন ওজর হইলেও নামাজ পড়িতে পারিবে না। রমজানের ঈদের নামাজের পরে জানা গেল যে এমাম বে অজু নামাজ পড়িয়াছে, ইহা যদি সূর্য্য বরাবর ঠিক হওয়ার র্পূব্বে জানা যায় সেই সময় নামাজ দ্বিতীয়বার পড়িতে হইবে। সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পরে যদি জানা যায়, তবে পরদিন পড়িবে, যদি পরদিন সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পরে জানা যায় তবে নামাজ পড়া নিষেধ অর্থাৎ পড়িতে পারিবে না। এইরূপ যদি কোরবানের ঈদের নামাজে ঘটে, যদি সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পরও কোরবানী পশু জবেহ করার পর জানা যায়, তবে কোরবানী দোরস্ত হইবে ও ঈদের নামাজ পরদিন দ্বিতীয় বার পড়িতে হইবে। যদি পরদিন সূর্য্য বরাবর হওয়ার র্পূব্বে জানা যায় তখন সেই সময় নামাজ পড়িতে হইবে, পরদিন সূর্য্য বরাবর হওয়ার পরে যদি জানা যায় তবে তৃতীয় দিন নামাজ পড়িতে হইবে ও র্পূব্বরে কোরবানী সব সময় দোরস্ত হইয়াছে। অর্থাৎ কোরবানী দোহরাইতে হইবে না। তৃতীয় দিন যদি সূর্য্য বরাবর হওয়ার পর এমামের অবস্থা জানা যায়, তবে আর নামাজ পড়িতে পারিবে না, ও কোরবানী পশু যাহা আগে জবেহ করিয়াছে তাহা দোরস্ত হইয়াছে। ১০ দশে জেলহজ্জ তারিখে সূর্য্য বরাবর ঠিক হওয়ার র্পূব্বে যদি

এমাম বে অজু নামাজ পড়ার অবস্থা অবগত হয়, তবে মোকতদিগণকে লইয়া এমাম নামাজ দোবারা পড়িতে হইবে, কিন্তু যাহারা এমাম বেঅজু নামাজ পড়ার বিষয় অবগত হওয়ার র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিয়াছে তাহাদের কোরবানী দোরস্ত হইবে। যাহারা অবগত হওয়া স্বত্ত্বেও র্সূয্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিয়াছেন তাহাদের কোরবানী দোরস্ত হইবে না। কাজি খাঁ ১ প্রথম খণ্ড ৮৭ পৃষ্ঠা। ওলামায়ে হানফিয়া বলিয়াছেন, দোন ঈদের নামাজে ও জুমার নামাজে ছোহ: ছজিদা না করিবে কারণ লোকজনের উপর ফছাদ আসিয়া উপস্থিত হইবে। কাজি খাঁ ১ম খণ্ড ৮৯ পৃষ্ঠা। ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজ একসময় একত্র হইলে ঈদের নামাজ আগে পড়িতে হইবে ও ঈদের খোত্বার র্পূব্বে জানাজার নামাজ পড়িতে হইবে। এইরূপ মগরীবের ফরজ ও ছুন্নত আগে পড়িয়া পরে জানাজার নামাজ পড়িবে। আলমগিরি ১ম খণ্ড বাবুল ঈদায়েন; ফতোয়ায় লাবুদ্দিয়া ২৪ পৃষ্ঠা ও দোররুল মোখতার ইত্যাদি। যদি শুক্রবারে এমাম ছুন্নত ও খোত্বা পাঠ করিবার র্পূব্বে জানিতে পারিল যে জানাজা হাজির হইয়াছে তবেও জুমা আগে পড়িবে অর্থাৎ জুমার ফরজ পড়ার পর জানাজা পড়িতে হইবে। কিন্তু হাবি কেতাবে বর্ণিত আছে যে, বলখ্ বাসিগণ জুমার নামাজ পড়ার পর ছয় রকাত নামাজ পড়িয়া পরে জানাজার নামাজ পড়িতেন এই বাক্যের উপর ফকিহগণের ফতোয়া। জামেউল ফতোয়া ২য় খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠা। রমজানের ঈদের নামাজ দেরী করিয়া পড়া মস্তাহাব ও কোরবানের ঈদের নামাজ সহসা পড়া মস্তাহাব। ঈদের নামাজের জমাত এমাম ছাড় তিনজন মোকতদির কম হইলে নামাজ দোরস্ত হইবে না। যদি কোন ব্যক্তি ঈদের নামাজে এমাম তকবির বলার পরও কেরাত পড়িবার সময় আসিয়া উপস্থিত হয়, তবে প্রথমে ঐ ব্যক্তি আল্লাহু আকবর এইরূপ তিনবার তকবির বলিয়া পরে ঈদের

নামাজের নিয়ত করিয়া একতাদা করিবে। যদি কোন ব্যক্তি এমামকে প্রথম রকাতের রুকুতে পায় তখন ঐ ব্যক্তি তকবির তাহরিমা করিয়া দাঁড়াইয়া তিন তক্বির বলিলে এমামকে রুকুতে পাওয়ার আশা থাকিলে তখন দাঁড়াইয়া তক্বির বলিবে। পরে এমামের সঙ্গে রুকু করিবে, আশা না থাকিলে দাঁড়াইয়া তক্বির বলার পর রুকুতে যাইয়া ঐ তিন তক্বির বলিবে, রুকুর তছবিহ ছাড়িয়া দিবে, কারণ রুকুর তছবিহ ছুন্নত ও ঈদের নামাজের জওয়ায়েদ তক্বির বলা ওয়াজেব। যদি ঐ তিন তক্বির শেষ করার র্পূব্বে এমাম রুকু হইতে মাথা উঠাইয়া লইলে অর্থাৎ এক তক্বির কিম্বা দুই তকবির বলার পর এমাম রুকু হইতে উঠিয়া গেলে তখন ঐ ব্যক্তি হইতে বাকী তকবির মাফ হইয়া যাইবে। আর বলিতে হইবে না, ঐ ব্যক্তি অর্থাৎ মোকতাদি এমামের সঙ্গে ২ রুকু হইতে উঠিয়া যাইবে, যদি এমামকে প্রথম রকাতের কৌমার মধ্যে অর্থাৎ রুকু হইতে দাঁড়ান অবস্থায় পায় তখন তক্বির তাহরিমা করিয়া নামাজে সামিল হইবে। ও তাঁহার যে এক রকাত ছুটিয়া গেল, এমাম ছালাম ফিরার পর যখন বাকী রকাত পুরা করিয়া দিবার জন্য উঠিবে, তখন আলহামদো ও অন্য ছুরা পাঠ করার পর প্রথম রকাতের ছুটিয়া যাওয়া তিন জওয়ায়েদ তকবির ও দাঁড়াইয়া বলিয়া, পরে রুকু করিবে। যখন এমামকে প্রথম রকাতের ছজিদায় বা দ্বিতীয় রকাতে পাইবে তখন ও এইরূপ নামাজ পড়িতে হইবে। অর্থাৎ কৌমার মধ্যে পাইলে যেই রকম ভাবে নামাজ পড়িতে হয় সেই রকম ভাবে পড়িবে, যদি কোন ব্যক্তি এমাম আত্তাহিয়াত পড়িবার সময় ঈদের নামাজে উপস্থিত হয়, তখন ঈদের নামাজের নিয়ত করিয়া একতেদা করিবে। এমাম ছালাম ফিরাইলে পরে ঐ ব্যক্তি দাঁড়াইয়া দুই রকাত নামাজ এমামে যেই রকমে পড়িয়াছে সেই রকম ভাবে পড়িবে, ছয় তক্বির সহ। যদি ছোহ ছজিদার আত্তাহিয়াতের মধ্যে একতেদা করে তবুও ঐ রকমে দুই রকাত নামাজ ছয় তক্বির সহ এমামের মত আদায় করিতে হইবে।যদি এমাম ভুলে প্রথম রকাতে তিন তক্বির জওয়ায়েদ বলিবার র্পূব্বে কেরাত সুরু করিলে, আলহামদো ও অন্য ছুরা একটি পাঠ করার পর স্মরণ হইল যে তিন তক্বির জওয়ায়েদ বলা হয় নাই,তখন প্রথম রকাতের শেষেও রুকু করিবার র্পূব্বে তক্বির বলিয়া রুকু করিবে,যদি কেবল মাত্র আলহামদো পড়ার পরও অন্য ছুরা পাঠ করার র্পূব্বে স্মরণ হয়,তবে ঐ তিন তক্বির পরও অন্য ছুরা পাঠ করার র্পূব্বে স্মরণ হয়,তবে ঐ তিন তক্বির জওয়ায়েদ বলিয়া,পরে পুণরায় আলহামদো ও অন্য ছুরা পাঠ করিয়া রুকু করিবে।যদি এমাম দ্বিতীয় রকাতের পর তিন তক্বির জওয়ায়েদ না বলিয়া ভুলে রুকুতে চলিয়া যায়,তখন ঐ তিন তক্বির রুকুর মধ্যে বলিবে,রুকু হইতে পুনরায় দাঁড়াইয়া তক্বির বলিলে নামাজ ভঙ্গ হইয়া যাইবে(দোররুল মোখতার)কিন্তু বাহারুর রায়েক কেতাবে লিখিয়াছে যে নামাজ ভঙ্গ হইবে না,আলমগিরি প্রথম খণ্ড ঈদের বাব,গায়েতুল আওতার প্রথম খণ্ড ও রুকুনুদ্দিন।এমাম খোত্বাতে যখন তক্বির বলিবে,তখন মোকতদিগণও এমামের সঙ্গে ২ তক্বির বলিবে,তিন খোত্বা আলহামদোর দ্বারা আরম্ভ করা যাইবে। প্রথম জুমার নামাজের খোত্বা, দ্বিতীয় বর্ষা বর্ষিবার খোতবা,তৃতীয় ববিাহরে খোতবা,আল্লাহো আকবর দ্বারা পাঁচ খোতবা আরম্ভ করা যায় দুই ঈদের দুই খোত্বা, ও হজ্জের তিন খোত্বা।দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি। আইয়্যামে তসরিকের তক্বির ফরজ নামাজের ছালাম ফিরার পর সঙ্গে ২ তক্বির বলিবে।যদি ছালাম ফিরার পর এমন কাজ করিল যে, যাহার দ্বারা নামাজ বেনা করা যায়না যেমন মুনাজাত করা ও আলাপ করা ইত্যাদি, তখন আর তক্বির বলিতে পারিবে না, ঐ সময় মাফ হইয়া যাইবে। কেতাব ঐ।

কছর নামাজ পড়ার বিবরণ

নিজের বাসস্থান হইতে দেশ ভ্রমণে তিন দিবা রাত্রের ব্যবধান দূরর্বত্তী স্থানে গমন করিলে চারি রকাত ফরজ নামাজের স্থলে দুই রকাত ফরজ পড়াকে কছর বলে, আরবীতে প্রবাস কে ছফর বলে আর প্রবাসী কে মোছাফের। কছরের অর্থ কম করা, তিন দিন পায়দল চলিয়া যাহা রাস্তা গমন করা যায়তাহা ইংরেজি মাইল মতে আন্দাজ ৪৮ মাইল হয়, মানবের চাল বা উষ্ট্রের চালমতে তিন দিবা রাত্রি ধরিতে হইবে। গাড়ী, বা ঘোড়ায় নতুবা রেল ইত্যাদি দ্বারা অল্পক্ষণে পৌঁছিলেও মোছাফের হইবে। কিন্তু ঐ পরিমাণ অর্থাৎ ৪৮ মাইল হইতে হইবে। ৪৮ আট চল্লিশ মাইল ছফর করিবার মানসে বাড়ী হইতে বাহির হইয়া নিজ সাকিনের আবাদী জায়গা পিছে ফেলিয়া গেলে, মোছাফের হইবে এবং কছর পড়িবে। এক সহরের দুই রাস্তা আছে এক রাস্তা দিয়া চলিলে তিন দিবা রাত্রি হয় ২য় রাস্তা দিয়া চলিলে দুই দিবা রাত্রি হয় তিন দিবা রাত্রি রাস্তা দিয়া চলিলে কছর পড়িতে হইবে, দুই দিবা রাত্রি রাস্তা দিয়া চলিলে কছর পড়িতে পারিবে না। মোছাফের জোহর, আছর, এশা, এই চারি রকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজে বার রকাত না পড়িয়া ছয় রকাত পড়িতে হইবে।কছর না পড়িয়া পুরা পড়িলে পাতকী এবং গুনাহগার হইবে।মোছাফের চারি রকাত ফরজ নামাজ যদি ভুলে পড়ে, দুই রকাতের পর আত্তাহিয়াত পড়ে এবং চারি রকাতের পর ছজিদা ছোহ করিলে দুই রকাত ফরজ হইবে ও দুই রকাত নফল হইবে। যদি দুই রকাত পড়ার পর বসিয়া আত্তাহিয়াত না পড়িলে চারি রকাতের পর আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছোহ ছজিদা দিয়া পরে আত্তাহিয়াত ও দরূদ এবং দোয়া পড়িয়া ছালাম ফিরাইলে চারি রকাত নফল হইবে। পুনরায় ফরজ দুই রকাত পড়িতে হইবে। যদি কোন মোছাফের ফরজ দুই রকাত পড়ার পর ছুন্নত তাড়াতাড়ি পড়িতে হয়,

তবে ফজরের ছুন্নত ছাড়া অন্য ছুন্নত পরিতাগ করা দুরস্ত আছে। যদি তাড়াতাড়ি পড়িতে না হয় নতুবা সংগীগণ হইতে জুদা হওয়ার কোন ভয় না হয় তবে ছুন্নত পুরাপুরি পড়িতে হইবে, ত্যাগ করিতে পারিবে না। মোছাফের যদি রাস্তার মধ্যে অবস্থান করে তবে পনর দিন থাকিবীর নিয়ত না করিলে উহা হইতে কম থাকিবার নিয়ত করিলে মোছাফের থাকিয়া যাইবে মুকিম হইবে না। চারি রকাত ফরজ স্থলে দুই রকাত পড়িতে হইবে। যদি পনর দিন, বা পনরদিন হইতে বেশী দিন অবস্থানের নিয়ত করে তবে মোছাফের হইবে না নামাজ পুরা পড়িতে হইবে। নামাজ পড়িতে ২ নামাজের আন্দর পনর দিন থাকিবার নিয়ত করিলে মোছাফের হইয়া যাইবে। কিন্তু ঐ নামাজ পুরা চারি রকাত পড়িতে হইবে। তিন দিবা রাত্রির রাস্তা যাইবার জন্য এরাদা করিয়া কিছু দুর যাওয়ার পর কোন কারণবশত: ফিরিয়া বাড়ী চলিয়া আসিলে যখন বাড়ী আসিবার ইচ্ছা করিয়াছে তখন হইতে মোছাফের হইবে না। কোন মোছাফের অদ্য বা কল্য, নতুবা পরসু চলিয়া যাইব এইরূপ করিতে ২ কয়েক বৎসর গত হইলে ও কছর পড়িতে হইবে। যদি পনর দিন থাকিবার নিয়ত করে, মোছাফের হইবে না। যদি স্বামী ও স্ত্রী এক সংগে মোছাফেরী করে স্বামী যেই স্থানে যত দিন থাকে স্ত্রী ও ঐ স্থানে থাকে স্বামী ব্যতীত কোন স্থানে থাকে না, তবে ঐ অবস্থায় স্বামীর নিয়ত ধরিতে হইবে। স্বামী যদি পনর দিন থাকিবার নিয়ত কর,ে স্ত্রীও মুকীম হইয়া যাইব।ে স্ত্রী পনর দনি থাকবিার নযি়ত করুক বা, না করুক। এক ব্যক্তির দুই জায়গায় দুই বাড়ি আছে যদি প্রথম বাড়িতে বাস করে এবং দ্বিতীয় বাড়ীতে ও কিছু এলাকা রাখে যেমন জায়গা জমীন আছে তবে দুইটি বাড়ি আছলি হইবে। কোনটিতে ও মোছাফের হইবে না। যদি প্রথম বাড়ীর এলাকা একবারে ছাড়িয়া দেয় ২য় বাড়ীতে বাস করে ১ম ও ২য় বাড়ীর মধ্যে তিন দিবা রাত্রির ব্যবধান হইলে ১ম

বাড়ীতে আসিলে ছফরের নিয়তে, মোছাফের হইবে। বাড়ীতে উপস্থিত থাকার নামাজ ছফরে কাজা করিলে চারি রকাতে কাজা পড়িবে, ছফরের কাজা নামাজ বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া কাজা পড়িলে চারি রকাত স্থলে দুই রকাত পড়িবে। মোছাফের এমাম হইলে দুই রকাত পড়ার পর, আত্তাহিয়াত পড়িয়া ছালাম ফিরাইলে মোক্তাদিগণকে বলিয়া দিবেন যে, তোমাদের নামাজ তোমরা পুরা চারি রকাত পড়িয় শেষ কর আমি মোছাফের, এইরূপ বলা মোস্তাহাব। তখন মোক্তাদিগণ হঠাৎ উঠিয়া আলহামদো পড়িতে যতক্ষন সময় লাগে ততক্ষন দাঁড়াইয়া কিছু না পড়িয়া রুকু ও ছজিদাতে যাইতে রুকু এবং ছজিদার তছবিহ পড়িয়া পরে আত্তাহিয়াত এবং দরূদ ও দোয়া পড়িয়া দুই রকাত নামাজ খতম করিবে। প্রবাসীর প্রধান ব্যক্তির নিয়ত ধর্ত্তব্য হইবে। অধীনস্থ ব্যক্তির নিয়ত র্ধত্তব্য নয়। শরযি়তে মোছাফরে বলে যইে ব্যক্তরি প্রবাসরে স্থান তনি হইতে কম নয়, সমস্ত দিন ঐ প্রবাসে চলা আবশ্যক নয়, ফজর হইতে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়া পর্যন্ত হাঁটা মোতবর এইরূপ তিন দিন র্পয্যন্ত চলিয়া ইংরেজী মাইল মতে ৪৮ মাইল হাঁটিবার মনন করিলে মোছাফের হইবে। এস্থলে কয়েকটা কথা স্মরণ রাখা আবশ্যক। ১ম যেই স্থানে যাওয়ার বাসনায় বাড়ী হইতে বাহির হয় ঐ স্থানে মধ্যম মত চলার তিন দিবা রাত্রের ব্যবধান হওয়া আবশ্যক।২য় উপরোক্ত দিবা রাত্র শীতকালের ছোট দিন ধরিতে হইবে গ্রীষ্মকালের সূদীর্গ দিন ধরিলে সিদ্ধ হইবে না।যেমন চট্টগ্রাম হইতে নোয়াখালি জিলা।কার্ত্তিক মাসের তিন দিন তিন রাত্রের ব্যবধান দূরর্বত্তী হইলে ঐ স্থানে কছর পড়িতে হইবে।৩য় ফজর হইতে সন্ধ্যা র্পয্যন্ত সমস্ত দিনহাঁটা আবশ্যক নহে। মধ্যে কিছু বিশ্রাম করিয়া হাঁটিবে।৪র্থ বাড়ী হইতে তিন দিবা রাত্রের ব্যবধান যাওয়ার মনন করিয়া কছরের নিয়ত করিবে। কছর নামাজের নিয়ত এই

نويت ان اَقْصَرَ رَكَعَتَىْ صلوة الظهر فرض الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

আছর ও এশারের গং নামাজ হইলে এইরূপ ওয়াক্তের নাম লইয়া নিয়ত করিবে; মোছাফের এমামের পশ্চাতে মুকিম মোক্তাদি ২য় রকাতে সামিল হইয়া এমামের সঙ্গে এক রকাত পড়িলে এমাম ছালাম ফিরার পর ঐ মোক্তাদি কেরাত পরিমাণ দাঁড়াইয়া কিছু না পড়িয়া রুকু, ছজিদা করিয়া আত্তাহিয়াত আব্দুহু অ-রছুলুহু র্পয্যন্ত পড়িয়া দাঁড়াইয়া ঐ রূপ বিনা কেরাতে আর এক রকাত পড়ার পর আত্তাহিয়াত না পড়িয়া দাঁড়াইয়া ১ম ছানা ও আলহামদো পড়িয়া অন্য ১টি ছুরা মিলাইয়া পড়িয়া নামাজ সমাপন করিবে। ঐ এমামের ফিরানের সংগে দুই রকাতের পর আত্তাহিয়ার বৈঠকে মুকিম মোক্তাদী এক্তদো করলিে ছালাম ফরিানোর পর গৃহি মোক্তাদি দাঁড়াইয়া বিনা কেরাতে দুই রকাত প্রথমে পড়িয়া তারপর আত্তাহিয়াত আবদুহু অ-রছুলুহু র্পয্যন্ত পড়ার পর দাঁড়াইয়া দুই রকাত কেরাত সহ পড়িয়া নামাজ সমাপ্ত করিবে। বিবাহের পর কোন রমণী সাশুর বাড়িতে স্বাধীন ভাবে বাস করার পর বাপের বাড়ীতে আসিলে তিন দিবারাত্রির ব্যবধান হইলে পনর দিন থাকার নিয়ত না করিলে মোছাফের হইবে। ফরজ চারি রকাতের জায়গায় দুই রকাত পড়িবে। পনর দিনের নিয়তে মুকিম (গৃহি) হইবে। ফরজ চারি রকাত পড়িতে হইবে। চলতি জাহাজ বা রেলে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িলে মাথা ঘুরাইলে বসিয়া নামাজ পড়িবে। বৃহস্পতিবার নতুবা সোমবারে ফজর সময়ের পরে যাওয়া সুবিধা জনক। কোন ব্যক্তি জিলহজ্জ চাঁদের প্রথম দশ তারিখে মক্কা শরীফে উপস্থিত হইয়া

পনর দিন থাকিবার নিয়ত করিলে মুকিম হইতে পারিবে না। কারণ আরফাতের ময়দানে যাওয়ার গতিকে পনর দিন পুরা মক্কা শরীফে থাকিতে পারিবে না। নফল নামাজ পড়া ঘোড়ার উপর বা উটের উপর নতুবা গাড়ীর উপর ওজর হউক বা না হউক দুরস্ত আছে। ফরজ ও ওয়াজেব নামাজ ওজর ছাড়া দুরস্ত নহে। ওজর যেমন: সর্প, ব্যাঘ্র ইত্যাদি দ্বারা প্রাণের ভয় হইলে, দুষমন ইত্যাদির দ্বারা মালের ভয় হইলে, দুষ্ট লোকের দ্বারা কোন স্ত্রী লোকের ভয় হইলে। কাফেলা চলিয়া যাওয়ার আশঙ্কা হইলে, অন্য লোকের সাহায্য ছাড়া ছোয়ারীতে আরোহন করিতে না পারিলে ইত্যাদি ২ এই সময়ে উক্ত আরোহনকারীগণ এসারা করিয়া নামাজ পড়িবে। কিন্তু চলা বন্ধ করিয়া থামাইতে পারিলে চলা বন্ধ করিয়া নামাজ পড়িবে। না পড়িলে জরুরতের সময় যেই প্রকারে পারা যায় পড়িবে। কিন্তু কোন রকমে কেবলামুখী হইয়া পড়িতে পারিলে, না পড়িলে নামাজ দুরস্ত হইবে না। গায়তেুল আওতার ১ম খন্ড, দুররুল মোখতার আলমগিরী, বেহেস্তী জেওর, রুকুনুদ্দিন গং। চোর ডাকাত হইলেও বাড়ী না আসা র্পয্যন্ত কছর পড়িবে।

ভয়ের নামাজ পড়ার বিবরণ

র্ধম্মযুদ্ধে গমন করিয়া শত্রুর সম্মুখীন হইলে এমাম সৈন্যগণকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া এক শ্রেণী পাহারায় রাখিয়া দ্বিতীয় শ্রেণী এমামের সঙ্গে র্পয্যায়ক্রমে নামাজ পড়াকে ভয়ের নামাজ বলে। মখতচর কুদুরী কেতাবে বর্ণিত আছে, যেই সময় সাংঘাতিক শত্রুর ভয় হয়, এমাম দুই রকাতীয় নামাজ যেমন ফজর, জুম্মা, ঈদ এবং মোছাফেরের জোহর, আছর, এশা, প্রথম শ্রেনীকে লইয়া এমাম এক রকাত দুই ছজিদা সহ আদায় করিয়া, পরে ২য় শ্রেণী যাহারা শত্রুর সম্মুখীনে পাহারায় ছিল

তাহারা আসিবে; প্রথম শ্রেণী চলিয়া যাইলে শত্রুর সম্মুখীনে পাহারা দিবে ২য় শ্রেণী এমামের সঙ্গে এক রকাত পড়িয়া ছালাম না ফিরাইয়া চলিয়া যাইয়া শত্রুর পাহারা দিবে, এমাম একেলা তশ্হহুদ এবং দরূদ ও দোয়া পড়িয়া ছালাম ফিরাইবে, পরে ১ম শ্রেণী আসিয়া বাকী এক রকাত একেলা ২ কেরাত ছাড়া পড়িয়া এবং কেরাতের পরিমান দাঁড়াইয়া পরে আত্তাহিয়াত ও দরূদ এবং দোওয়া পড়িয়া ছালাম ফিরাইবে ও শত্রুর সম্মুখে যাইয়া পাহারা দিবে, পরে ২য় শ্রেণী আসিয়া এক রকাত দুই ছজিদা এবং কেরাত সহ পড়িয়া তশহহুদ ও দরূদ এবং দোয়া পড়িয়া ছালাম ফিরাইবে। মোছাফের ও এইরূপ পড়িবে। এমাম গৃহবাসী হইলে ১ম শ্রেণী এমামের সংগে দুই রকাত পড়িবে। ২য় শ্রেণী দুই রকাত পড়িবে অর্থাৎ চারি রকাত বিশিষ্ট নামাজে ১ম শ্রেণী এমামের সংগে দুই রকাত পড়িবে ২য় শ্রেণী এমামের সংগে দুই রকাত পড়িবে। মগরেবের নামাজ এমাম ১ম শ্রেণীর সংগে দুই রকাত এবং ২য় শ্রেণীর সংগে এক রকাত পড়িবে। নামাজ পড়ি বার সময় যুদ্ধ না করিবে যুদ্ধ করিলে নামাজ বাতিল হইবে। শত্রুর ভয়ে ঘোড়া, উট, হাতির উপর আরোহন র্পূব্বক নামাজ পড়িলে এসারা করিয়া রুকু ছজিদা করিবে এবং একাকী পড়িবে। নামিতে পারিলে নামিয়া না পড়িলে দুরস্ত হইবে না। কেবলামুখী হইতে না পারিলে যেই দিকে ইচ্ছা সেই দিকে নামাজ পড়িবে। কিন্তু ধারণা করিবে, আমি কাবাভিমুখে নামাজ পড়িতেছি। মেফতাহুল জন্নত ও কুদুরী ইত্যাদি।

জুম্মার নামাজের বিবরণ

শুক্রবারে দ্বিপ্রহরের কিঞ্চিৎ পর বহুলোক একত্রিত হইয়া কোরআন হাদিছের মতানুযায়ী দুই খোত্বা পাঠ করিয়া দুই রকাত নামাজ পড়াকে জুম্মার নামাজ বলে। জুম্মার নামাজ ফরজে আইন।

উহাকে ফরজ না জানিলে কাফের হইবে। জুম্মা সিদ্ধ হইবার জন্য সাতটি সর্ত্ত আছে। (১) মিছির হওয়া। (২) বাদশাহ্ বা তাহার প্রতিনিধি হওয়া। (৩) জোহরের সময় হওয়া। (৪) খোত্বা পাঠ করা। (৫) খোত্বা নামাজের পূর্ব্বে পাঠ করা। (৬) এমাম ভিন্ন তিন ব্যক্তি মোক্তাদি হওয়া। (৭) এজনে আম হওয়া, যে স্থানের বড় মসজিদে ঐ স্থানবাসী লোক যাহাদের উপর জুমার নামাজ ফরজ তাহারা উপস্থিত হইলে উপরোক্ত মসজিদ পুরাইয়া আরও অধিক লোক হইবে, ঐ স্থানকে মিছির (সহর) বলে। অধিকাংশ ফকিহগণের এইরূপ ফতোওয়া। জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার জন্য নয়টি সর্ত্ত আছে। (১) মুকিম অর্থাৎ গৃহবাসী হওয়া, প্রবাসীর উপর জুমা ফরজ নহে। (২) পীড়িত না হওয়া, পীড়িতের উপর জুমা ফরজ নহে। (৩) স্বাধীন হওয়া খরিদা গোলামের উপর জুমা ফরজ নহে। (৪) পুরুষ হওয়া স্ত্রীলোকের উপর জুমা ফরজ নহে। (৫) বালেগ হওয়া নাবালেগের উপর জুমা ফরজ নহে। (৬) বুদ্ধিমান হওয়া, উম্মাদের প্রতি জুমা ফরজ নহে। (৭) অন্ধ নাহওয়া, অন্ধের প্রতি জুমা ফরজ নহে। (৮) মুসলমান হওয়া, কাফেরের প্রতি জুমা ফরজ নহে। (৯) চল:শক্তি সম্পন্ন হওয়া, খোঁড়ার প্রতি জুমা ফরজ নহে। যাহাদের প্রতি জুমা ফরজ নহে, তাহারা মসজিদে উপস্থিত হইয়া জুমা আদায় করিলে দুরস্ত হইবে। ঐ দিনের জোহরের ফরজ নামাজ আর পড়িতে হইবে না। যদিও বা তাহাদের উপর জুমা ফরজ নহে। মিছিরের তফছির অন্য রকম ও বাজ্ ফকিহগণ করিয়াছেন কিন্তু ঐ রূপের ফতাওয়া নহে তাই বাদ দেওয়া গেল। আমির ও কাজি এবং খতিব একই কথা। ফতোয়া আলমগিরীতে বর্ণিত আছে যেই সহরের বাদশাহ কাফের হইবে সেই স্থানে মুসলমানগণের জুমা পড়া দুরস্ত হইবে। যেই ব্যক্তিকে মুসলমান কাজি নিযুক্ত করিবে উনি কাজি হইতে পারিবেন। এক

মুসলমান ব্যক্তিকে মুসলমানগণের কাজি নিযুক্ত করা ওয়াজেব। জোহরের সময় গত হইয়া গেলে জুমার নামাজ কাজা পড়িতে পারিবে না, জোহরের নামাজ কাজা পড়িবে। লাহক্ েবা মছবুক ব্যক্তি জুমার নামাজ পড়িবার সময় জোহরের ওক্ত গত হইয়া গেলে, ঐ নামাজ নফল হইয়া যাইবে পুনরায় জোহরের নামাজ কাজা পড়িতে হইবে। খোত্বা জোহরের র্পূব্বে এবং নামাজ জোহরের আন্দর পড়িলে নামাজ দুরস্ত হইবে না। এইরূপ নামাজের পরে খোত্বা পড়িলেও দুরস্ত হইবে না। (খোত্বা জুমার নামাজের ফরজ জানিবে)।খোত্বাতে কেবল মাত্র আলহামদোলিল্লা, নতুবা লাএলাহা ইল্লল্লাহ বা, ছোবহানল্লা একবার বলিলে ফরজ আদায় হইবে। কিন্তু বাজ ফকিহ বলেন মকরুহ তাহরিমা হইবে ও বাজ ফকিহ মকরুহ তনজিহি বলিয়াছেন। এক ছুরা তুয়ালে মফচ্ছল পরিমান পড়া দুই খোত্বার আন্দর ছুন্নত। এক খোত্বা পড়ার পর কিঞ্চিৎ পরিমান বসিয়া ২য় খোত্বা পড়া ছুন্নত। প্রথম খোত্বা আরম্ভ করার র্পূব্বে আয়োজু বিল্লা ও বিছমিল্লা পুরা ২ চুপে ২ পড়িয়া ১ম খোত্বা আরম্ভ করিবে। জুমার নামাজে দুই খোত্বা পড়া ছুন্নত। খতিব ছাড়া অন্য লোকে নামাজ পড়া ও দুরস্ত হইবে। খোত্বা পাঠের পরে এমামের অজু ভঙ্গ হইলে, যেই ব্যক্তি খোত্বা শুনিয়াছে তাহাকে খলিফা করিবে। নতুবা দুরস্ত হইবে না। জুমার জমাত এমাম ছাড়া তিন ব্যক্তি না হইলে জুমার জমাত না দুরস্ত জানিবে। খোত্বা পাঠের সময় কোন নামাজ পড়া দুরস্ত নাই। কিন্তু ফজরের ফরজ দুই রকাত ২য় খোত্বার ছানি পাঠের সময় কাজা পড়া দুরস্ত আছে। অনাবশ্যক জুমার র্পূব্বে জোহরের নামাজ পড়া হারাম। মাজুর জুম্মার র্পূব্বে জোহরের নামাজ পড়িলে মকরুহ তনজিদি হইবে। মাজুর জুম্মার দিবস জোহরের নামাজ জমাত করিয়া পড়া মকরুহ তাহরিমা। কয়েদিগণ জেলখানায় জুমার দিন জুমার নামাজ

পড়িলে দুরস্ত হইবে না। কারণ জেলখানায় এজনে আম নাই। যেই স্থানে জুমার নামাজ দুরস্ত নাই, সেই স্থানের লোক শুক্রবারে জোহরের নামাজ জমাতে পড়া দুরস্ত আছে। সহরি লোকে জোহরের নামাজ জমাতে পড়া অসিদ্ধ। এক ব্যক্তি জোহরের নামাজ জুমার র্পূব্বে পড়িয়া বাড়ী হইতে জুমার নামাজ পড়িবার জন্য বাহির হইলে, যদি এমামের সঙ্গে জুমার নামাজ পায় তাহার জোহরের ফরজ বাতিল হইবে। মাজুর হউক বা না হউক, মোছাফের হউক বা পীড়িত ইত্যাদি। যদি না পায় তবে ঐ ব্যক্তি যেই সময় বাড়ী হইতে বাহির হইয়াছিল, সেই সময় এমাম নামাজ হইতে বাহির হইয়া গেলে সকল এমামগণ বলেন তাহার জোহরের ফরজ ভঙ্গ না হইবে। যদি বাড়ী হইতে বাহির হইবার সময় নামাজে ছিল। কিন্তু এমামের নামাজে পৌহুছিবার র্পূব্বে এমাম নামাজ হইতে বাহির হইলে, এমাম আবু হানিফা (র:) বলেন তাহার জোহরের ফরজ ভঙ্গ হইবে। পুনরায় জোহরের নামাজ পড়িতে হইবে। এমামকে আত্তাহিয়াত পড়িবার সময় কোন ব্যক্তি এক্তেদা করিলে ঐ সময় জুমা আদায় করিতে হইবে। ইহাতে মুছাফের ও মুকিম এক সমান জানিবে।জুমাতে দুই আজান, এক আজান হজরত(ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম)এর সময় ছিল। ২য় আজান হজরত ওছমান (রজি:) লোক বেশী হওয়ার গতিকে বাড়াইয়া দিলেন। র্বত্তমানে প্রথম আজান কোন্টা তাহাতে ফকিহগণের মতভেদ আছে।ওয়াক্তের হেছাব মতে যেই আজান প্রথমে সময়ের আন্দর দেওয়া হয় উহাকে ১ম আজান, সরিয়তের হেছাব মতে যেই আজান খতিবের সম্মুখে দেওয়া হয় উহাকেও ১ম আজান বলে। শুক্রবারে জোহরের সময় যেই আজান বাহিরে দেওয়া যায় সেই সময় বেচাকিনা ছহিহ বাক্য মতে মকরুহ তাহরিমা। নামাজের দিকে চলা ওয়াজেব হয়। ঐ আজানের সময় নামাজের দিকে না চলিলে গুনাগার হইবে। জুমার নামাজের

খোত্বা এবং ছুন্নতের আগে জানাজা উপস্থিত হইলে তাহা এমাম জানিতে পারিলে তবুও জুমার নামাজের পরে জানাজার নামাজ পড়িতে পারিবে। জামেউল ফতোয়া ২য় খণ্ড ১৮ পৃ:। এক সহরে কয়েক জুমা পড়া দুরস্ত আছে জুমার এক জমাত হইয়া যাওয়ার পর, পরে দশ পনর জন লোক উপস্থিত হইলে তাহারা খোত্বা সহ জমাত পড়িয়া জুম্মা পড়িবে। কারণ যাহার উপর জুম্মা ফরজ, তাহার জুম্মা আদায় না করিলে জোহর আদায় করিলে সিদ্ধ হইবে না। কিন্তু যেই মসজিদে জুমা একবার পড়া গিয়াছে তাহাতে না পড়াই ভাল, পড়িলে কোন ক্ষতি হইবে না। মৌলানা আবুল হাছনাত মজমুয়া ফতোয়া ২য় খণ্ড ২৯৭ পৃ:। দুই খোত্বার মধ্যে বসিয়া কোন দোয়া জবানে করা নিষেধ, দিলে ২ করিতে পারিবে। খোত্বা এক ব্যক্তি পড়িয়া নামাজ অপর ব্যক্তি পড়িলেও সিদ্ধ হইবে, কিন্তু না পড়া ভাল, ওজর হইলে পড়িলে কোন ক্ষতি নাই। জুমার নামাজে এমাম উচ্চ শব্দে কেরাত পড়িবে। কব্লুল জুমা চারি রকাত ছুন্নত, খোত্বার আগে পড়িতে না, পারিলে জুমার ফরজের পর বাদল জুমার র্পূব্বে পড়িতে হইবে। করণ ঐ চারি রকাত ছুন্নত মোয়াক্কাদা। যেই স্থানে জুমার নামাজ দুরস্ত সম্বন্ধে সন্দেহ হয় সেই স্থানে আখারা জোহরিন চারি রকাত নামাজ পড়িতে হইবে। যেই স্থানে দুরস্ত হওয়ার কোন সন্দেহ না হইলে, সেই স্থানেও এহতেয়াতান্ নফল নিয়তে পড়িলে ফায়েদা হইতে খালি হইবে না। কারণ জুমার নামাজ সিদ্ধ হইলে উহার উপর কোন জোহরের নামাজ কাজা থাকিলে তাহা আদায় করা যাইবে। নতুবা নফল হইবে। ঐ নামাজ পড়ার নিয়ম বাজ ফকিহ এইরূপ বলেন। যদি ঐ ব্যক্তি জিম্মায় জোহরের নামাজ কাজা না থাকে, প্রথম দুই রকাতে ফরজের মত আলহামদোর সঙ্গে অপর ছুরা পাঠ করিবে, অপর দুই রকাতে কেবল আলহামদো পাঠ করিবে অন্য ছুরা না মিলাইবে। বাজ ফকিহ

আখরা: জোহরিন চারি রকাত নামাজ পড়ার নিয়ত ও নিয়ম এইরূপ লেখেন:

نويت ان اصلى لله تعالى اربع ركعات صلوة آخَرَ الظهر اَدْرَكْتُ وَقْتَهُ وَلَمْ يَسْقِطْ عَنِّىْ بَعْدُ الخ ـ

নিয়ত করার পর চারি রকাতে আলহামদোর সংগে অপর ৪টি ছুরা মিলাইয়া পড়িবে। যেন প্রত্যেক রকাতে আলহামদোর সহিত এক ২ ছুরা পাঠ করা যায়। এই নিয়মে পড়াই ভাল মনে করি। জুমার ফরজ দুই রকাত পড়ার পর বাদলজুমা পড়িবে। তাহার পর আখরা: জোহরিন চারি রকাত পড়িবে। ঐ চারি রকাতে আলহামদোর পর অন্য ছুরা মিলাইয়া পড়িলে কোন অনিষ্ট নাই। জুমা সিদ্ধ হইলে কোন দিবসের জোহরের ফরজ কাজা থাকিলে উহাই আদায় হইবে। নতুবা নফল হইবে। নফল নামাজে আলহামদোর সঙ্গে ছুরা মিলাইয়া পড়া ওয়াজেব, তাহার পর দুই রকাত ছুন্নতুল অক্ত পড়িবে। পীড়িত ব্যক্তির উপর এবং চল:শক্তি বিহীন বৃদ্ধের উপর জুমা ফরজ নহে। কিন্তু কানা ব্যক্তি যাহার এক চক্ষু নাই সে জুমা পড়িতে পারে। জুমার আজানের সময় কেহ আহার করিলে, যদি তাড়াতাড়ি আহার করিয়া জুমায় র্ভত্তি হইতে পারে তবে আহার করিবে। নতুবা আহার পরিত্যাগ করিয়া জুমায় চলিয়া যাইবে। জুমার নামাজ সমাধা করিয়া ক্ষৌরীকার্য্য করা র্সব্বোৎকৃষ্ট। শুক্রবারে মৃত ব্যক্তিগণের রুহু একত্রিত হয়। ঐ দিবসে কবর জেয়ারত করা হয় এবং শুক্রবার দিন রাত্রি হইতে আফজল। জুমার দিবসে কবরের শাস্তি বন্ধ। জুমার দিবস বা রাত্রে; মৃত্যু হইলে কবরে শাস্তি হইবে না। জুমার দিবস নরকাগ্নি র্নিব্বাণ করা হয় এবং বেহেশ্ত বাসী জুমার দিবস খোদাতালাকে দর্শন

করিতে পারিবেন। প্রত্যেক জুমায় খোদাতালাকে দর্শন করেন।মৃতের কপালে বা পাগড়িতে নতুবা কাফনে আহাদ নামা লিখিয়া দিলে তবে আল্লাহো তায়ালা তাহাকে মাফ করার আশা করা যায়।আহাদ নামা এইÑ

اَللّهُمَّ فَاطِرَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضِ عَالِمِ الْغَيْبِ وَ الشَّهَاَدَةِ اَلرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ اَنِّىْ اَعْهَدُ اِلَيْكَ فِىْ هَذِهِ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا انِّىْ اَشْهَدُ اَنَّكَ اَنْتَ اللهُ لَا ِالهَ اِلَّا اَنْتَ وَحْدَكَ لَاشَرِيْكَ لَكَ وَ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ فَلَا تَكِلْنِىْ اِلى نَفْسِىْ فَاِنَّكَ اِنْ تَكِلْنِىْ اِلى نَفْسِىْ تَقْرِبَنِىْ مِنَ الشَّرِّ وَتَبَاعِدنِىْ مِنَ الّخَيْرِ وَاَنِّىْ لَااَثِقُ اِلَّا ِبرَحْمَتِكَ فَاجْعَلْ لِىْ عَهْدًا عِنْدَكَ تَوَفِّيْنِيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّكَ لَاتُخْلِفُ الْمِيْعَادِ ـ

শুক্রবারে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পর জুমার নামাজের র্পূব্বে মুছাফেরিতে যাওয়া মকরুহ জানিবে। ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে মকরুহ নহে।ছগিরী,দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড,রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

জানাজার নামাজের বিবরণ

মৌতের চিহ্ন (আলামত) (১) পা এইরূপ ভাবে ঢিলা হইয়া যাওয়া যাহার দ্বারা দাঁড়াইতে পারে না। (২) পীড়িত ব্যক্তির খছিয়া

(অণ্ডকোষ) লট্কিয়া যাওয়া। (৩) দুই কান-পট্টি বসিয়া যাওয়া। (৪) নাক টেরা হওয়া। (৫) মুখের চামড়া টান হইয়া যাওয়া, নরম না থাকা। যখন পীড়িত ব্যক্তি হইতে এই আলামত দৃষ্টিগোচর হইবে তখন পীড়িতকে উত্তর শিয়রে দক্ষিণ পাশে কাবাভিমুখে শয়ন করাইয়া রাখিবে। নতুবা র্পূব্ব শিয়রে চীৎ করাইয়া পা কাবাভিমুখে ঈষদুচ্চে করিয়া রাখিবে। গরগরা হওয়ার র্পূব্বে কলেমা শাহাদৎ তাহার নিকট বসিয়া শব্দ করিয়া পাঠ করিবে। اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده و رسوله নতুবা কেবল মাত্র لااله الا الله محمد رسول الله পাঠ করিবে একবার কলেমা পাঠ করিলে দ্বিতীয় বার পাঠের নিমিত্ত জবরদস্তী করিবে না। কিন্তু একবার বলয়িা অন্য কথা বলিলে দ্বিতীয়বার বলাইবে। মূল কথা তাহার শেষ বাক্য যেন কলেমা হয়। আর ঐ সময়ের র্পূব্বে কাহার সঙ্গে কোন বিবাদ বা, ঝগড়া, কলহ, থাকিলে ক্ষমা করাইয়া খুসী করাইবে, কোন টাকা, পয়সা, ইত্যাদি পাওনাদার থাকিলে আদায় করাইবে। চরম সময় তাহার নিকট ছুরা এয়াছিন বা রায়াদ পাঠ করা, পবিত্র হাদীছে পয়গাম্বর ছাহেব (চল:) বর্ণনা করিয়াছেন, কাহারও মৃত্যুর সময় উপস্থিত হইলে, ছুরা এয়াছিন ও ছুরা রায়াদ পাঠ করিলে অতিসহজে তাহার প্রাণ বায়ুর অবসান হয়। এবং ঐ দুই ছুরা পাঠ করা মস্তাহাব। যখন মৃত্যু হইবে, চক্ষু দাড়ি বন্ধ করিবে। খোশবো জালাইয়া কাফনে ও মৃতের তক্তায় একবার নতুবা তিনবার বা পাঁচবার করিয়া খোশবো লাগাইবে। ইহাতে মৃতের তাজিম জানিবে। তৎপর মৃতকে তখতার উপর রাখিয়া পরিধানের বস্ত্র খুলিবে এবং নাভী

হইতে উরু র্পয্যন্ত কাপড় দ্বারা আবৃত রাখিয়া প্রথমে এস্তেনজা করাইয়া দিবে। উহার ধারা এই স্নান কারক এক হস্তে কাপড় বেড়াইয়া লইয়া মৃতের পায়খানার জায়গাকে ঢিলা, কুলুখ, দিয়া ছাফ করিবে। পরে কাপড় বেড়াইয়া পায়খানা প্রস্রাবের জায়গাকে ছাড় করিয়া ধৌত করার পর মৃতকে অজু করাইয়া দিবে। মৃতের অজুতে প্রথম মুখ ও নাক ধৌত করিবে। কুল্লী না করাইবে এবং নাকে পানি না দিবে। তাহার পর হাত কনুই র্পয্যন্ত ধুইবে। মৃত কোন নাপাকী অবস্থায় মৃত্যু হইলে ছোট এক খানা ভিজা কাপড় দ্বারা মুখের আন্দরে এবং নাকের আন্দর ও দন্তগুলি ও দুই হোঁট এবং মুখের মোছেহ করিয়া দিতে হইবে। পরে মাথা মোছেহ করিয়া দুই পা ধৌত করার পর, গোছল আরম্ভ করিবে। ভিজা কাপড় না হইলে রুয়ী সুতা ভিজাইয়া মোছেহ করিতে পারিবে। গোছল এইরূপে আরম্ভ করিবে। প্রথম মস্তকের চুল ও দাড়িকে গরম পানির দ্বারা যাহাতে বরই পাতার জোষ দেওয়া হইয়াছে ও সাবান লাগাইয়াছে, ছাফ করিয়া ধুইবে। তৎপর মৃতকে বাম করুটে শয়ন করাইয়া ডান দিক ধৌত করিবে। তৎপর ডান করুটে লেটাইয়া র্পূব্বরে ন্যায় বাম দিক ধৌত করিবে। ডান দিক হইতে আরম্ভ হইবার জন্য প্রথমে বাম করুটে মৃতকে শয়ন করাইবার জন্য বলা হইয়াছে। গোছল দেওয়া শেষ হইলে মৃতকে ঠেশ দিয়া বসাইবে ও আস্তে ২ পেট মালিশ করিবে এবং উদর হইতে যাহা বাহির হয় ধৌত করিবে। অজু ও গোছল পুনরায় দিতে হইবে না। তৎপর একখানা কাপড় দিয়া মৃতের গায়ের পানি মোছেহ করিবে। মৃতের নখ কাটিবে না এবং মাথার চুল আঁচড়াইবে না ও গুপ্ত স্থানের লোম ফেলা সিদ্ধ নয়। মৃতের মস্তকে ও দাড়িতে খোশবো মালিশ করিবে। যে ২ স্থান ছজিদার নিমিত্ত মাটিতে লাগাইয়াছে ঐ সকল স্থানে কাফুর মর্দ্দন

করিয়া দিবে। যেমন কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু ও নাক ইত্যাদি। বরই পাতা বা নিম পাতা না পাইলেও গরম পানির দ্বারা গোছল দিবে। গরম পানির দ্বারা না পারিলে ঠাণ্ডা পানির দ্বারা অবগাহন করাইবে। মৃতকে তিনবার ধৌত করিবে উহা ছুন্নত জানিবে। উল্লিখিত ধারা মতে তিনবার গোছল দিতে না পারিলে র্সব্বাঙ্গে একবার ধৌত করিলেও ফরজ আদায় হইবে। বেশী গরম পানির দ্বারা ধৌত করিবে না। কাফনে আতর, কাফুর না দিবে ও চক্ষুতে সুরমা ইত্যাদি না দিবে। পুরুষ মৃত হইলে তথায় অন্য পুরুষ না থাকিলে ঐ পুরুষের মহরেম স্ত্রীলোক তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে। মহরেম স্ত্রীলোক না থাকিলে কাপড়ের থলিয়া প্রস্তুত করত: হাতের ভিতরে দিয়া ঐ হস্ত দ্বারা তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে। ঐরূপ কোন স্ত্রীলোকের মৃত্যু হইলে তথায় অন্য স্ত্রীলোক না থাকিলে তাহার মহরেম পুরুষ তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে। তদঅভাবে না মহরেম পুরুষ থাকিলে কাপড়ের থলিয়া প্রস্তুত করত: হাতের ভিতরে দিয়া ঐ হস্ত দ্বারা তৈয়ম্মুম করাইয়া দিবে। পুরুষ, স্ত্রীলোকের অঙ্গের দিক হইতে দৃষ্টি বন্ধ করিবে। স্বামীর মৃত্যু হইলে স্ত্রী গোছল দিতে পারিবে। স্ত্রীকে স্বামী গোছল দিতে পারিবে না। দেখিতে পারিবে ও কাপড়ের উপর দিয়া ছুইতে পারিবে। হায়েজ ও নেফাছ ওয়ালি স্ত্রীলোক মৃতকে ধৌত করা মকরুহ। কোন ব্যক্তিকে বাঘ কি কুমীরে খাইলে যদি তাহার মস্তক ও অর্দ্ধ শরীর প্রাপ্ত হওয়া যায় তাহাকে গোছল ও জানাজা ব্যতীত মৃত্তিকায় পুতিয়া ফেলিবে। কিন্তু অর্দ্ধাপেক্ষা অধিক প্রাপ্ত হইলে মস্তক সহ, গোছল করাইয়া ও জানাজা পড়িয়া যথা নিয়মে কবর দেওয়া যাইবে। মস্তক ছাড়া অর্দ্ধ শরীর পাওয়া গেলে, নতুবা কেবল মাত্র মস্তক প্রাপ্ত হইলে উহার উপর নামাজ না পড়িবে এবং গোছল ও কাফন না দিবে এক খানা কাপড় বেড়াইয়া জমীতে পুতিয়া ফেলিবে। কোন ব্যক্তির জাহাজে মৃত্যু হইলে উহাকে

গোছল ও কাফন দিবে ও নামাজ পড়িয়া ভারি কোন বস্তু বাঁধিয়া দিয়া সাগরে ফেলিয়া দিবে। মৃতের আত্মীয় লোক ধৌত করা ভাল, নেক্কার মোত্তাকী লোকে ধৌত করিবে। ধৌত করার সময় মৃত হইতে কোন আয়েব দৃষ্টি গোচর হইলে, তাহা কাহাকেও বলা নিষেধ। কিন্তু জীবিত অবস্থায় কোন না দুরস্ত কাজের উপর মগ্ন হইয়া থাকিলে তাহার ইবরতের জন্য প্রচার করা দুরস্ত জানিবে, যেমন নাচ, গান, বাজা ইত্যাদি। ছোট ২ ছেলে ও মেয়ে বালেগ হওয়ার নিকটবর্ত্তি না হইলে স্ত্রীলোক ও পুরুষ ধৌত করিতে পারিবে। নতুবা পারিবে না। কোন মৃতকে পানি না পাওয়াতে তৈয়ম্মুম করাইয়া নামাজ পড়ার পর পানি পাওয়া গেলে, পুনরায় গোছল দিয়া নামাজ পড়িতে হইবে। ছোট ২ ছেলে মেয়েকে বালেগের মত কাফন ও গোছল না দিলেও সারিবে। জন্ম হওয়ার পর ছেলে ও মেয়ে ক্রন্দন করিলে জানাজার নামাজ পড়িতে হইবে। মায়ের উদর হইতে মৃত বাচ্চা জন্ম হইলে নামাজ না পড়িবে। গোছল ও কাফন দিয়া দফন করিবে। মুসলমানের চারি লক্ষণ। (১) সাদা দাড়িতে লাল খেজাব দেওয়া। (২) খত্না করা। (৩) কালা পোষাক পরিধান করা। (৪) নাভীর নীচের লোম কর্ত্তিত হওয়া। একটি লাশ প্রাপ্ত হইয়া মুসলমান কিম্বা কাফের কিছুই বিবেচনা করিতে না পারিলে এবং উহার সঙ্গে মুসলমানের কোন চিহ্ন ও নাই তবে দারুল এসলামে ঐ লাশকে স্নান দিয়া ও জানাজার নামাজ পড়িয়া কবর দেওয়া যাইবে। কিন্তু দারুল হারবে গোছল ও জানাজা পড়িতে পারিবে না। কোন কারণবশত: মুসলমান ও কাফেরের শব একত্রিত হইলে এবং মুসলমানীর কোন লক্ষণ পাওয়া না গেলে, এস্থলে দেখিতে হইবে যে, যদি মুসলমানের শবের সংখ্যা অধিক হয় তবে সমস্ত লাশকেই স্নান করাইয়া, নামাজ পড়িয়া দফন করিবে। কিন্তু জানাজার

নামাজ পড়ার সময় মুসলমানের উপর দোওয়ার নিয়ত করিবে। যদি উভয়ই সমতুল্য হয়, গোছল করাইবে। জানাজার নামাজ সম্বন্ধে ও দফনকরার জায়গা সম্বন্ধে মতভেদ আছে।বাজ ফকিহ বলেন জানাজার নামাজ কেহর উপর না পড়িবে।বাজ্ ফকিহ বলেন উহারার উপর জানাজার নামাজ পড়া যাইবে।এইরূপ কবরের জায়গা সম্বন্ধে বাজ ফকিহ বলেন মুসলমানের কবর স্থানে দফন করিবে।বাজ্ ফকিহ বলেন আলগ জায়গায় দফন করিবে। জানাজা পড়া ও মুসলমানের কবর স্থানে দফন করা বাজ্ পণ্ডিতগণ ভাল বিবেচনা করেন।যদি কাফেরের শব বেশী হয়,কেহর উপর জানাজা না পড়িবে।গোছল দিয়া কাফেরের কবর স্থানে দফন করিবে। কেতাবিয়া রমনী অর্থাৎ য়িহুদী, নছারা, মুসলমান দ্বারা গর্ভবতী হইলে উক্ত রমণীকে ভিন্ন স্থানে কবরস্থ করিয়া পীঠ কাবাভিমুখী রাখিবে। কারণ গর্ভের সন্তানের মুখ পৃষ্ঠ দেশে থাকে। সুতরাং ঐ রমণীকে কাবাভিমুখে পৃষ্ঠ করিলে সন্তানের মুখ কাবাভিমুখে হইবে। ইহাই ঐ রূপ করার তাৎপর্য্য। যদি ঐ গর্ভ ৪ মাসের কম হয়, তবে কাফেরের গোরস্থানে পুতিয়া ফেলিবে। উহার অধিক হইলে মুসলমানের গোরস্থানে দফন করিবে। কারণ মুসলমানের ঔরষ জাত সন্তান হইবে (দো) স্ত্রী লোকের জন্য পাঁচ কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া ছুন্নত। (১)কোর্ত্তা (২)এজার (৩)ছেরবন্ধ (৪) চাদর (৫) ছিনাবন্ধ। কোর্ত্তা গলা হইতে পা র্পয্যন্ত হইতে হইবে। এজার মস্তক হইতে পা র্পয্যন্ত, চাদর মস্তক হইতে পা র্পয্যন্ত, এই তিনটি কাপড়ে পুরুষ ও স্ত্রী লোক এক সমান জানিবে। ছের বন্ধ দুই হাত লম্বা হইতে হইবে। ছিনা বন্ধ দ্বারা বক্ষ হইতে উরু র্পয্যন্ত ঢাকিতে হইবে। পুরুষকে দুই কাপড় এজার এবং চাদর দিলে, ও স্ত্রী লোককে তিন কাপড় এজার ও চাদর এবং ছের বন্ধ দিরে ও দুরস্ত হইবে। আবশ্যকবশত: যাহা পাওয়া যায় তাহা দেওয়া যাইবে। কিন্তু সমস্ত অঙ্গ ঢাকিতে হইবে। কাফন পরিধানের ধারা এই

প্রথম এক চাদর বিছাইবে তাহার উপর ২য় চাদর, (এজার) তাহার উপর কোর্ত্তা পরিধান করাইয়া মেয়ে লোক হইলে তাহার চুল দুই ভাগ করিয়া এক ডান দিকে কোর্ত্তার উপর দিয়া বক্ষের উপর রাখিতে হইবে ২য় ভাগ বাম দিকে কোর্ত্তার উপর দিয়া বক্ষের উপর রাখিবে। তৎপর ছের বনধ, চাদরের নীচে হইতে মস্তকের উপর দিয়া বক্ষের চুলের উপর রাখিয়া দিবে। ছিনা বন্ধ তিন হাত লম্বা, সকল কাফনের উপর বিছাইবে। পুরুষ বা স্ত্রীলোক জীবিত অবস্থায় যেই কাপড় পরিধান করা দুরস্ত আছে, সেই কাপড় দিয়া কাফন দেওয়াও দুরস্ত আছে। সব চেয়ে সাদা কাপড়ের কাফন পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য ভাল। মৃতের চৌকি স্কন্ধে লইয়া কবরস্থানে যাইবার দুইটা বিধি আছে ১ম আসল ছুন্নত, ২য় কামালে ছুন্নত; আসল ছুন্নত এই, মৃতের চৌকি (খাট) চারি ব্যক্তি চারি পায়া স্কন্ধে লইয়া প্রত্যেকে দশ ২ কদম চলিবার পর একের পর একে চৌকি পায়া বদলাইয়া প্রত্যেকে চল্লিশ কদম চলিবে। কমালে ছুন্নত এই বহনকারীগণ হইতে এক ব্যক্তি মৃতের ডান ছরহানার দিক দিয়া ডান স্কন্ধে লইয়া দশ কদম চলিবার পর ডান পায়ের দিক দিয়া ডান স্কন্ধে লইয়া দশ কদম চলিবে, তাহার পর বাম ছরহানার দিক দিয়া বাম স্কন্ধে লইয়া দশ কদম চলিবার পর বাম পায়ের দিক দিয়া বাম স্কন্ধে লইয়া দশ কদম চলিয়া চল্লিশ কদম সমাপ্ত করিবে।জানাজার নামাজের জন্য প্রথম সুলতান অর্থাৎ বাদশাহ র্নিদ্দষ্টি, উপস্থিত থাকিলে নতুবা তাহার নায়েব অর্থাৎ সহরী হাকেম, তাহার পর কাজি তাহার পর মহাল্লার এমাম, তাহার পর অলি নামাজ পড়াইবে। অনুপযুক্ত হইলে অন্যকে এজ্ন দিবে। জানাজার নামাজের নিয়ত এইরূপ করিতে হইবেÑ

نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِىَ اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَازَةِ فَرْضِ الْكِفَايَةِ

 وَالثَّنَاءُ لِلّهِ تَعَالى وَالصَّلَوةُ عَلَى النّبِىِّ وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيِّتِ مُتَوَجِّهًا اِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ

মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ হয় উল্লিখিত ভাবে নিয়ত করিবে। যদি স্ত্রীলোক হয়, লেহাজল মৈয়তের জায়গায় লেহাজিহিল মৈয়তে বলিতে হইবে। জানাজার নামাজের ধারা এই প্রথমত: মৃত ব্যক্তির বুক সোজা দাঁড়াইয়া নিয়ত করত: তকবির বলিয়া কর্ণে উলা দিয়া তাহরিমা বাঁধিবে। তৎপর ছানা পড়িবে।

سُبْحَانَكَ اَللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلَااِلَهَ غَيْرُكَ

তাহার পর দ্বিতীয় তকবির বলিয়া দরূদ পড়িবে।

اللهم صل على محمد وعلى ال محمد كما صليت وباركت وتباركت وترحمت على ابراهيم وعلى ال ابراهيم انك حميد مجيد برحمتك يا ارحم الراحمين

দরূদ পড়িবার পর তৃতীয় তকবির বলিবার পর এই দোওয়া পড়িবে।

اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا  وَمَيِّتِنَا َوشَاهِدِنَا َو غَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا

وَذَكَرِنَا وَاُنْثَانَا اَللّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا َفاَحْيِهِ عَلَى الْاِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْاِيْمَانِ ـ

তৎপর চতুর্থ তকবির বলিয়া সালাম করত: নামাজ সমাধা করিবে। মৃত ব্যক্তি না বালেগ ছেলে হইলে তৃতীয় তকবির বলার পর এই দোওয়া পড়িবে।

اَللّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَ ذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَاِفعًا وَّمُشَفَّعًا

যদি না বালেগা মেযে় হয় واجعله এর জায়গায় ২ واجعلها বলিতে হইবে এবংشافعا و مشفعا এর জায়গায় شافعة ومشفعة পড়িতে হইবে।

জানাজার নামাজের তকবির তাহরিমা ছাড়া বাকি তকবিরে হস্ত উত্তোলন করিতে পারিবে না এবং ছানা ও দরূদ ইত্যাদি চুপে ২ পড়িবে। যদি মৃত ব্যক্তি পাগল বা বেআকল হয়, নিয়ত ঠিক থাকিবে। না বালেগ ছেলে ও মেয়ের তৃতীয় তকবিরে পরের দোয়া ঐ পাগলের বা বে-আকলের তৃতীয় তকবিরের পর পড়িবে اللهم اغفر لحمنا এই দোয়া না পড়িবে। মৃতকে কবরে দিবার সময় بسم الله وبالله وعلى ملة رسول الله দোয়া পড়িবে। দফনের পর কবরকে মাছের পৃষ্ঠের মত করিয়া খোরমার ডালি পুতিয়া দিবে ও পানি ঢালিয়া দিয়া জেয়ারত পড়িবে এবং তলকিন

করিবে। যেমন নবি আলা: নিজের পুত্র ইব্রাহিমের কবর তলকিন করাইয়াছিলেন।দফনের পর মৃতের জন্য দোয়া করিবে এবং মৃতের জন্য ঐ তারিখে খয়রাত করিবে যেন মৃতের ফায়েদা হয়। জাদুল আখেরত ও দোররুল মোখতার।

যেই ব্যক্তি নিজকে নিজে বধ করে এমাম আবু হানিফা গং (রহ) জানাজার নামাজ পড়িবার জন্য উহার উপর ফতোয়া দিয়াছেন। জানাজার নামাজের আন্দর দুই ফরজ জানিবে।(১)চারি তকবির বলা এবং প্রথম তকবিরে কর্ণে উলা দিয়া তাহরিমা বাঁধিবে তৎপর তিন তকবিরে হস্ত উত্তোলন ব্যতীত বলিবে।(২)দাঁড়াইয়া জানাজা পড়িবে,বসিয়া পড়িলে সিদ্ধ হইবে না।বাহিরের ছয় ফরজ।(১)মৃত ব্যক্তি মুসলমান হওয়া বির্ধম্মী না হওয়া।(২)নাপাকি হইতে পাক হওয়া। (৩)এমাম বালেগ হওয়া। (৪)মৃত দেহ সম্মুখে হওয়া। (৫)মৃত ব্যক্তিকে মৃত্তিকায় রাখা।(৬)মৃতের অধিকাংশ কাবাভিমুখে রাখা অর্থাৎ এমাম ও মোক্তাদিগণের সম্মুখে থাকা। মৃতকে উল্টা রাখিয়া অর্থাৎ এমামের দক্ষিণ হস্তের দিকে মৃতের মস্তক না রাখিয়া পা দুইটি রাখিয়া নামাজ পড়িলে মকরুহ তনজিহি হইবে। জানাজার নামাজে মৃতের জন্য দোয়া করা ওয়াজেব ও ছানা ও দরূদ পড়া ছুন্নত। মৃতের কবরে পাটী বা গাদী বিছাইয়া দেওয়া দুরস্ত নহে। মসজিদের আন্দরে জানাজার নামাজ ওজর ব্যতীত পড়া মকরুহ তাহরিমা। জমিন নরম হইলে মৃতকে লোহার বা লাকড়ির তাবুতে রাখিতে পারা যায়, মেয়ে লোকের জন্য সব সময় তাবুত দেওয়া ভাল। পুরুষের জন্য জমিন নরম না হইলে মকরুহ হইবে। তাবুতের নীচের দিক দিয়াও তক্তা দিতে হইবে ঐ তক্তার উপর মাটি বিছাইয়া দিতে হইবে এবং বাকী পাঁচ তক্তাতে আন্দরের দিকে কাদা লিপিয়া দিতে হইবে। মৃতকে ঘরের মধ্যে কবর দেওয়া অনুচিত। ঘরে কবর দেওয়া পয়গাম্বরের জন্য খাচ। কবর শরীরের গঠন বরাবর লম্বা হইতে হইবে এবং প্রস্থে উহার অর্দ্ধেক জানিবে। কবর

হইতে যাহা মাটি বাহির হইয়াছে তাহা ছাড়া অন্য মাটি বেশী করিয়া কবরে ঢালিয়া দেওয়া মকরুহ জানিবে। গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড, দোররুল মোখতার, রুকুনুদ্দিন, আলমগিরী ১ম খণ্ড ও স্বামী ১ম খণ্ড, জাদুল আখেরত, তফছিরে রুহুল বয়ান ২য় খণ্ড, জামেউল ফতোয়া ৩য় খণ্ড।

শহিদের বিবরণ

যেই ব্যক্তি আল্লাহোতায়ালার রাস্তায় মারা যায় তাহাকে শহিদ বলে নতুবা উম্মাদ ও জ্ঞানবান শুদ্ধাবস্থায় কোন অত্যাচারীর দৌরাত্ম্যে নিহতহইলে যদি ঐ হত্যাকারী আইন মত দণ্ডিত হয়, তাহা হইলে ঐ নিহত ব্যক্তিকে শহিদ বলে। অথবা মুসলমান বাদশাহ বা সম্রাটের সহিত বিদ্রোহী হইলে যদি ঐ বিদ্রোহী লোকদিগের দ্বারা হয় অথবা কাফেরের সহিত যুদ্ধে নিহত হইলে তাহাকে শহিদ বলে; ডাকাত বা চোর র্কত্তৃক নিহত হইলেও শহিদ হইবে। শহিদ ব্যক্তির পরিচ্ছদ অতিরিক্ত হইলে উহা খুলিয়া রাখা যাইবে। যেমন টুপি, মৌজা, অস্ত্র ইত্যাদি। কাফনে-সুন্নত অপেক্ষা শরীরে অধিক বস্ত্র থাকিলে খুলিয়া রাখিবে, এবং সুন্নত অপেক্ষা কম হইলে তাহা পূরণ করিয়া দিতে হইবে। শহিদ ব্যক্তিকে গোছল না দিয়া ঐ রক্ত ও বস্ত্র সহ কবরস্থ করিতে হইবে। শহিদ দুই প্রকার, কামেল ও নাকেচ। ইহকাল ও পরকালে শহিদে পরিণত হওয়াকে শহিদে কামেল বলে। যাহারা শুধু পরকালে শহিদে পরিণত হইবে, উহাদের সংখ্যা কিছু উল্লেখ করা যাইতেছে। (১) পানিতে ডুবিয়া মৃত্যু হইলে। (২) অগ্নিতে দগ্ধ হইয়া মৃত্যু হইলে। (৩) কাহারও উপর অট্টালিকা ভগ্ন হইয়া পড়িলে। (৪) হিংস্র জন্তু র্কত্তৃক হত হইলে। (৫) কুম্ভীর র্কত্তৃক নিহত হইলে। (৬) প্লেগ হইয়া মৃত্যু হইলে। (৭) যেই ব্যক্তি দুষমনের উপর হাতিয়ার মারিতে উহা নিজের উপর পড়িয়া মারা গেলে। (৮) কলেরা হইয়া মৃত্যু হইলে। (৯) জুমার রাত্রে মৃত্যু হইলে। (১০) ছাত্র

অবস্থায় মৃত্যু হইলে।(১১)ঋতুর্বত্তী রমণীর মৃত্যু হইলে। (১২)নেফাস অবস্থায় মৃত্যু হইলে।(১৩)প্রসব বেদনায় মৃত্যু হইলে।(১৪)মুছাফেরিতে মৃত্যু হইলে।(১৫)নিজের জান বাঁচাইতে মারা গলে।(১৬)জুলুমের দ্বারা মারা গেলে।(১৭)পানি ইত্যাদি আটকিয়া মৃত্যু হইলে।(১৮)যে ব্যক্তি পশুর দ্বারা মারা যায়।(১৯)যেই ব্যক্তির সর্প ও বিচ্ছু ইত্যাদির কাটার দ্বারা মৃত্যু হয়।(২০)যে ব্যক্তি স্ত্রী ও ছেলেকে এবং দাসীকে আল্লাহোতালার হুকুম জারি করিতে থাকে ও হালাল কামাইয়া খাওয়ায়।(২১)যেই ব্যক্তি প্রত্যেক রাত্রে ছুরা এয়াছিন পড়িয়া থাকে।(২২)যে ব্যক্তি সরল অন্ত:করণে খোদার রাস্তায় কতল হওয়ার দোয়া করে।(২৩)যে ব্যক্তি শুক্রবারে দিনে বা রাত্রে মারা যায়। আল্লামা জালালুদ্দিন ছইউতি সাহেব শোহদায়ে আখেরত ত্রিশ জন র্পয্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন উল্লিখীত ব্যক্তিগণের শহিদের ছওয়াব পাওয়া হাদিছ শরিফে বর্ণিত আছে।যদি মুসলমান কোন মুসলমানকে অত্যাচার করিয়া তলোয়ার বা ছুরি ইত্যাদির দ্বারা মারিয়া মৃত্যু মুখে পতিত করে, মৃত শহিদ হইবে।কাফেরে হারবী, যেই রকমে মুসলমানকে মারিবে শহিদ হইবে।বাপে পুত্রকে মারিলে তাহার বদলা লইতে পারিবে না, কিন্তু পুত্র শহিদ হইবে।দোররুল মোখতার, স্বামী, গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড, রুকুনুদ্দিন ইত্যাদি।

নামাজ ও রোজা ইত্যাদির ফিদিয়ার বিবরণ

কেহ মৃত্যু মুখে পতিত হইলে তাহার নামাজাদি কাজার কাফ্ফারা দেওয়ার অছিয়ত করিয়া থাকিলে ঐ কাফ্ফালা দেওয়াকে ফিদিয়া বলে। ফরজ নামাজ, রমজান শরিফের রোজা ও ওয়াজেব নামাজ যেমন দুই ঈদের নামাজ ও নজর ও বেতেরের নামাজ সজিদায়ে তেলাওয়াৎ ও ছৌগন্দ (কছম) ইত্যাদির কাফ্ফারা দিতে হইবে। উহা মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ মাল হইতে দিতে

হইবে। ফিদিয়ার নিয়ম এই- প্রথম মৃতের বয়স হিসাব করিয়া যাহা হয় পুরুষ হইলে ১২ বৎসর আর স্ত্রী লোকের ৯ নয় বৎসর মোট বয়স হইতে বাদ দিতে হইবে। বাকী বয়সের ফিদিয়া আদায় করিতে হইবে। যেমন কাদেরের ৫০ বৎসর ওমর হইয়াছে; ১২ বৎসর বাদ দিয়া বাকী ৩৮ বৎসরের হিসাব করিয়া ফিদিয়া দিতে হইবে। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজে দুই সের গেঁহু অথবা তৎমূল্য হিসাব করিয়া ৫ ওক্তের নামাজ ও বেতেরের নামাজ এই ৬ ছয় ওয়াক্তে ১২ সের গেঁহু অথবা তৎমূল্য দিতে হইবে। প্রত্যেক মাসে ৯ নয় মণ হইবে এক বৎসরে ১০৮/ মণ গেঁহু হইবে। এইমত রোজার এক মাসে ১।।০ এক মণ কুড়ি সের গেঁহু দিতে হইবে। প্রত্যেক বৎসর নামাজ ও রোজার কাফ্ফারা এক শত সাড়ে নয় মণ গেঁহু অথবা তাহার মূল্য দিতে হইবে। ৮০ আশি তোলায় সের ও ৪০ সেরে এক মণ ধরিতে হইবে। এইরূপ মৃতের জীবিত কাল র্পয্যন্ত হিসাব করিয়া দিবে। উল্লিখিত প্রত্যেক বিষয় দুই সের ২ করিয়া গেঁহু দিতে হইবে। কেহ কেহ কছম করিয়া মৃত্যু মুখে পতিত হইলে, তাহার কাফ্ফারা ।।০ কুড়ি সের গেঁহু অথবা তৎমূল্য দিতে হইবে। এই সমস্ত গেঁহু র্পূব্বরে রোজা ও নামাজের গেঁহুর সঙ্গে যোগ করিয়া পরিশোধ করিতে হইবে। মৃতের এক তৃতীয়াংশ মালের দ্বারা ফিদিয়া পরিশোধ করিতে না পারিলে যাহারা ওয়ারিশ হইবে তাহারা স্বয়ং পরিশোধ করিতে পারবি।ে যদি মৃত দরিদ্র এবং ওয়ারিশগণও দরিদ্র হয় তখন হিলা করিবে যে হিসাব করিয়া যত মণ যত সের গেঁহু ফিদিয়া হইবে তাহার অলিগণ হইতে এক ব্যক্তি একটি কোরআন শরীফ তাহার পরির্বত্তে দিবে। কোরআন শরীফ ছাড়া তছবিহ, নতুবা হাদিছের কেতাব, বা জায়নামাজ গং যাহার মূল্য নির্ণয় করা কঠিন, এমত বস্তু দিলেও দুরস্ত হইবে। এচকাত করার ধারা এই- মৃতের অলিগণ

হইতে একজন অলি মুসলমানগণের সম্মুখে একটি কোরআন শরীফ হস্তে লইয়া কোন দরিদ্রকে বলিবে, অমুক মৃতের ফিদিয়া হিসাবান্তে এত মণ ও সের গেঁহু সাব্যস্ত হইয়াছে। তাহার পরির্বত্তে এই কোরআন শরীফ তোমার হাতে বিক্রি করিতেছি। ঐ দরিদ্র লোকটি বলিবে, আমি কবুল করিলাম। দুই জন লোককে সাক্ষী করিবে। তখন ঐ কোরআন শরীফের মালিক ঐ দরিদ্র লোকটি হইয়া গেল। ঐগেঁহু মোকরররা দরিদ্রের উপর আদায় করা আবশ্যক হইল।তখন কোরআন বিক্রেতা অলি দরিদ্র খরিদারকে বলিবে যে, অমুকের পুত্র অমুকের জিম্মায় যেমন ৪০ চল্লিশ বৎসরের পঞ্ছগানা ফরজ নামাজ ও ওয়াজেবাদি, রমজান শরীফের রোজা ও ছজিদা তেলাওয়াৎ ইত্যাদি যেই সমস্ত খোদার হুকুম তাঁহার উপর আদায় করা ওয়াজেব ছিল, তাহা যে তিনি হইতে ফৌত হইয়া গিয়াছে, তাহার বদলে ৪৪০৪ চারি হাজার চারি শত চারি মণ গেঁহু বা তৎমূল্য অমুকের ফিদিয়া আসিয়াছে তাহা আমি নগদ আদায় করিতে অসমর্থ হওয়ায় কোরআন শরীফের মূল্য উল্লিখিত গেঁহু বা তৎমূল্যের পরর্বিত্তে তোমাকে ঐ মৃতের ফিদিয়া দিলাম। তুমি কবুল করিলা কিনা? দরিদ্র লোকটি বলিবে, আমি উহা স্বীকার করিয়া সাদরে গ্রহণ করিলাম। এইরূপ ৩ বার বলিবে। ইহাতেই ফিদিয়া পরিশোধ হইবে। কোরআন শরীফ নাদিলে ওয়ারিশগণ এই তদবিরও করিতে পারিবে যে অর্দ্ধ চা অর্থাৎ দুই সের গেঁহু কর্জ্জ হইয়া লইয়া ঐ দরিদ্রকে মৃতের ফিদিয়া দিবে র্পূব্বরে ন্যায়। পুনরায় দরিদ্র মৃতের ওয়ারিশকে ঐ দুই চা গেঁহু দান করিবে। তাহার পর ওয়ারিশ পুনরায় দরিদ্রকে মৃতের ফিদিয়া দিবে। এইরূপ করিতে ২ যাহা ফিদিয়া সাব্যস্ত হয় সমস্তই আদায় করিবে। এইরূপ করিলে খোদার সম্পূর্ণ মুক্তির আশা করা যায়। জাদুল আখেরত, দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

কবর জেয়ারতের বয়ান

কাহারও কবর জেয়ারত করার ইচ্ছা হইলে প্রথমে স্বীয় গৃহে

দুই রকাত নামাজ পড়িবে, প্রত্যেক রকাতে আলহামদো ও আয়তুল কুরছি একবার এবং ছুরা এখলাছ তিনবার করিয়া পড়িবে। ঐ নামাজের পূণ্য মৃতের উপর বখ্শিষ করিয়া দিবে। ঐ নামাজ মৃতের কবরে জ্যোতি হইবে এবং মুছল্লি অসীম পূণ্যের ভাগী হইবে। কবরস্থানে যাইবার সময় পথে কোন অবৈধ র্কম্ম বা গল্প না করিবে।কবরস্থানে উপস্থিত হইলে জোতা খুলিয়া কবর সম্মুখে করিয়া এবং কাবাকে পশ্চাতে রাখিয়া দাঁড়াইবে। আলহামদো, আয়তুল কুরছি, এজাজোল জেলাতে, আলহাকোমত্তকা ছোর পাঠ করিবে।তৎপর পশ্চিম দিক ঘুরিয়া নামাজ পড়ার ন্যায় দাঁড়াইয়া মোনাজাত করিবে।মুসলমানের কবরের সঙ্গে কাফেরের কবর মিলিত থাকিলে প্রথমে আচ্ছালামু আলা মনিত্তাবাআলহুদা পড়িয়া আলহামদো ইত্যাদি পাঠ করিবে। কবরস্থানে কোরান পাঠ করিতে মৃতের কোরানের শব্দ ভালবাসার কবরস্থানে কোরান পাঠ করিতে মৃতের কোরানের শব্দ ভালবাসার নিয়ত করিয়া পড়িবে।নতুবা আল্লাতালা সবস্থানে কোরান পাঠ করা গেলে শুনে।মৃতের উত্তরাধিকারীগণ হইতে কোন ব্যক্তি কাহাকেও কোরান শরীফ পড়াইবার জন্য কবরস্থানে বসাইলে মকরুহ হইবে না, ইহার উপর ফতোয়া; এবং পয়সা ও টাকা দেওয়াও দুরস্ত হইবে। কবরস্থানে চুপে ২ কোরান পাঠ করিবে। বেশী বড় শব্দ করিয়া পাঠ করাকে বাজ ফকিহ মকরুহ বলিয়াছেন।জেয়ারতের উত্তম দিবস, সোমবার র্পূব্বাহ্ন,ে বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্ন,ে শুক্রবার জুমার নামাজের পর, শনিবার সূর্য্যােদয়ের পর, পনর সাবান রাত্রে, জেলহজ্জের ১০ই রাত্রে, দুই ঈদের রজনীতে ১০ই আশুরার রাত্রে, (মহরম) রবিউল আউওয়ালের ১২ তারিখ রাত্রে, রজবের ১৭ ও ২৭শে রাত্রে এবং সমস্ত রমজান শরিফ ভরিয়া জেয়ারত করা উত্তম। আবু বকর বেন আবু ছয়ীদ (র:) বলেন, জেয়ারতে কবুর করার সময় সাতবার ছুরা এখলাছ পড়া মস্তাহাব, কারণ মৃতের গুনাহ মাফ না করিলে এখলাছ পড়ার দরুনে খোদা মাফ করিবেন, নতুবা জেয়ারত কারীর গুনাহ মাফ

করা যাইবে।যেই ব্যক্তি কবরস্থানে যাইয়া بسم الله وعلى ملة رسول الله পড়িবে সেই কবর ওয়ালাগণ হইতে চল্লিশ বৎসরের আজাব ও অন্ধকার এবং কবরের ঘিছাঘিছি উঠাইয়া দিবে। কবরকে মোছেহ না করিবে এবং চুম্বন না দিবে, মা ও বাপের কবর চুম্বন করিলে কোন ক্ষতি নাই।মা ও বাপের কবর অন্যান্য কবরের মধ্যে হইলে, অন্যান্য কবরকে পায়মাল না করিয়া নিকটে যাইয়া জেয়ারত করিতে পারিলে করিবে, নতুবা নিকটে না যাইয়া জেয়ারত করিবে।চতুষ্পার্শ্বে কবর, মধ্য ভাগে জমী হইলে সেই জমীর মালিক কবরের মৃতগণ তাবুতে হউক বা না হউক কবরের উপর দিয়া চলিয়া নিজ জমীতে যাইতে পরিবে।কবরস্থানে নূতন রাস্তা দেখিলে সেই রাস্তা দিয়া না চলিবে।মৃতকে যতক্ষণ র্পয্যন্ত কবরে মাটি ঢালিয়া দেওয়া না যায় তাহার মুখ দেখা দুরস্ত আছে। দফনের পর মুখ দেখা মকরুহ। স্ত্রীলোকগণ র্পদ্দা মতে কবরস্থানে যাইয়া যেন ক্রন্দন না করে বা শোক না করে, জেয়ারত পড়া দুরস্ত আছে।মৃতের রুহের উপর ছওয়াব পৌঁছাইবার জন্য যাহা খানা খাওয়ান যায় তাহা তিন দিন গত হইলে গরীব ও ধনী সকলে খাওয়া দুরস্ত আছে।তিন দিনের আন্দর হইলে গরীবে খাইতে পারিবে।অন্য কাহারও জমীতে মৃতকে দফন করিলে জমীর মালিক মৃত লাশকে বাহির করিয়া দিতে বা রাখিতেও পারিবে।কবরের জায়গার মূল্য ওয়ারিশগণ হইতে লইতে পারিবে।কবরস্থানের তাজা তৃণলতা এবং বৃক্ষাদি কাটা মকরুহ।কারণ ঘাস, পত্র ও বৃক্ষাদির তছবিহর দ্বারা মৃতের বরকত হইয়া থাকে।মুল্তকত্ নামক কেতাবে বর্ণিত আছে যে,কবরস্থান এমনভাবে পুরানা হইয়াছে যে,কবরের কোন নাম ও নেশানা র্পয্যন্ত না থাকিলে, সেই কবরস্থানে ঘর তৈয়ার ও ক্ষেতি এবং কৃষি কিছুই করিতে পারিবে না ও পশ্বাদি চড়াইতে কবরস্থানের তৃণ ও লতা কিছুই খাওয়াইতে

পারিবে না।এই জন্য ওলামাগণ কবরস্থানে কোরান শরীফ পড়া মস্তাহাব বলিয়াছেন। কারণ কোরানের দ্বারা বরকত হাছেল হইবে। হজরত বেন আব্বাছ (র:) ফরমাইয়াছেন, মৃতগণের রুহ ঈদের দিবস, আশুরার দিবস এবং রজব মাসের ১ম জুমার দিবস ও শুক্রবার দিবস বা রাত্রে এবং সবেকদর রাত্রে ও সবেবরাত রাত্রে কবর হইতে বাহির হইয়া ঘরের দ্বারে দাঁড়াইয়া বলেনÑ এই মোবারক রাত্রে কিছু খয়রাত বা খানা খাওয়াইয়া আমাদের উপর মেহেরবানি কর। আমরা তোমাদের খয়রাত ও লোক্মা খাওয়ানের দিকে চাহিয়া রহিয়াছি। যদি তোমরা বখিলি করিয়া খানা বা খয়রাত না কর, তবে শুধু ছুরা ফাতেহাটা পড়িয়া হইলেও আমাদের রুহের উপর ছওয়াব পৌঁছাও। ঐ সময় যদি জীবিত লোকগণ কিছু খয়রাত বা খানা খাওইয়া মৃতের রুহের উপর ছওয়াব বখ্শিষ করে, অত্যন্ত খুসি হইয়া ফেরত যায় নতুবা অত্যন্ত দু:খিত ও পেরেসান হইয়া ফেরত যায়। আলমগিরী ৫ম খণ্ড জামেউল ফতাওয়া ২য় খণ্ড,ও তফছরিে রুহুল ২য় খন্ড, জামউের রমুজ, বাহারুর রায়কে, দকায়েকুল আখবার গং। কাবা ঘরের আন্দরে ফরজ বা নফল নামাজ পড়া দুরস্ত আছে, যদিও বা মোক্তাদির পৃষ্ঠ এমামের পৃষ্ঠের দিকে হয়, যেই মোক্তাদির পৃষ্ঠ এমামের মুখের দিকে হয়, তাহার নামাজ দুরস্ত হইবে না। কারণ ঐ মোক্তাদি এমামের আগে হইবে। কাবা ঘরের উপরে নামাজ পড়া মকরুহ। এমাম কাবা ঘরের ভিতরে থাকিলেও মোক্তাদি বাহিরে থাকিয়া ও এক্তেদা করিলে দুরস্ত হইবে কিন্তু কাবা গৃহের দ্বার খোলা থাকা আবশ্যক। সরহে বেকায়া ুনুরল হেদায়া ১ম খন্ড।

اسال الله ذا الجود والكرم ان يكون هذا الكتاب مكفرا لذ نوبى ومو جبا لنجاتى وان يغفرلى ولو الدى ولاولادى ولشيخى ولجميع المسلمين امين                        

                 -: ২য় খণ্ড সমাপ্ত :-

৩য় খণ্ড

জকাতের বিবরণ

ধনের যে অংশ শরাতে র্নিদ্দষ্টি করিয়াছে ঐ অংশ কোন গরীবকে দান করাকে জকাত বলে। যেই ব্যক্তির নিকট মাল আছে, জকাত না দিলে খোদার নিকট মহাপাপী হইবে। উহার উপর হাশরের বিচারের দিন বড় শান্তি হইবে। কোরাণ শরীফে নামাজ ও জকাত সম্বন্ধে একত্র করিয়া খোদাতালা ৩২ বত্রিশ জায়গায় এরসাদ ফরমাইয়াছেন। প্রেরিত মহা পুরুষ পয়গাম্বরগণের প্রতি জকাত ফরজ নহে। যাহার নিকট ৫২।।০ তোলা রৌপ্য এক বৎসরকাল জমা থাকিবে তাহার ৪০ অংশের একাংশ জকাত দিতে হইবে। ৪০ অংশের একাংশ ১।/০ এক তোলা পাঁচ আনা রৌপ্য হইবে। সুতরাং এক টাকা পাঁচ আনা ওজন জকাত দিতে হইবে। স্বর্ণ ৭।।০ তোলা এক বৎসরকাল জমা থাকিলে ৪০ অংশের একাংশ অর্থাৎ ৶ তিন আনা স্বর্ণ জকাত দিতে হইবে। ইহাও জানিবে আমাদের দেশের তোলা বড়। অন্যান্য দেশের তোলা আমাদের তোলা অপেক্ষা ছোট তাই আমাদের দেশের ১২ মাষায় তোলা ধরিয়া গণনা করিলে ৩৯ তোলা রৌপ্যের উপর ও পাঁচ তোলা আড়াই মাষা স্বর্ণের উপর জকাত দিতে হইবে যেমন সরহে বেকায়ার ১ম খণ্ড স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিবরণের হাসিয়াতে লিখা আছে। উল্লিখিত ওজন হইতে কম হইলে জকাত ফরজ হইবে না। ঐ পরিমান কিম্বা বেশী হইলে জকাত ওয়াজেব হইবে। গরীব, নাবালেগ ও বিধর্মী এবং দাস ও উন্মাদের উপর জকাত ফরজ নহে। ধনাঢ্য বুদ্ধিমান বয়:প্রাপ্ত ও স্বাধীন মুসলমানের উপর জকাত ফরজ। এক বৎসর নেছাব পুরা মালের স্বত্বাধিকারী হইলে জকাত ফরজ হইবে। হারাম মালের নেছাব পুরা হইলেও জকাত দিতে হইবে না। হারাম ধনের জকাত কাহাকে দান করিলে ঐ ধন ফেরত দিবে। ফেরত দিতে না পারিলে, ফকির, মিছকিন ইত্যাদিকে দান করিবে। যাহার নিকট হইতে এই ধন পাইয়াছে তাহার নামে দান করিবে। চুরি বা দস্যু বা এতিমের ধনে স্বত্বাধিকাকী হইলে জকাত দিতে পারিবে না। এইরূপ সুদ ও ঘুষ খাইয়া ধন বৃদ্ধি করিলে তদ্বারা জকাত দিতে পারিবে না। ঋণ পরিশোধ করার পর নেছাবের স্বত্বাধিকারী হইলে এক বৎসর অতীত হইলে জকাত ফরজ হইবে। জমীর খাজানা ও জামীন টাকা বা অন্য কোন রকমের ঋণ থাকিলে, স্ত্রীর মোহর ছাড়া সমস্ত ঋণ বাদ দিয়া নেছাব পরিমান সোনা বা রূপা থাকিলে এক বৎসর অতীত হইলে জকাত ফরজ হইবে। কাহারও নিকট দুইশত টাকা কর্জ্জ আছে এবং উহার নিকট দুইশত টাকা জমা ও আছে। উহার উপর জকাত ফরজ হইবে না, ২০০ ্ টাকা হইতে যদি ১৪৭।। আনা কর্জ্জ থাকে ও বাকী ৫২।। আনা এক বৎসর জমা থাকে ১।/০ এক টাকা পাঁচ আনা জাকাত দিতে হইবে। পরিধানের বস্ত্রাদি, গৃহের দ্রব্যাদি যেমন থাল, লোটা, ইত্যাদি এবং সাংসারিক আবশ্যকীয় গৃহাদির জাকাত দিতে হইবে না। যেই গৃহের ভাড়া পাওয়া যায় ঐ গৃহের জাকাত দিতে হইবে। স্বীয় আবশ্যকীয় অস্ত্রাদির জাকাত দিতে হইবে না। বানজ্যি করার মননে তরবারি, বন্দুক, প্রভৃতি অস্ত্র রাখিলে জাকাত দিতে হইবে। তফছির, হাদিছ ও ফেকার কেতাব ভিন্ন অন্যান্য কেতাব নেছাব পরিমিত থাকিলে অর্থাৎ ঐ কেতাব সকল বিক্রি করিলে এবং তৎমূল্য ৫২।। টাকা হইলে বিদ্বান ব্যক্তির জাকাত দিতে হইবে না। কোন বস্তু হারাইয়া গেলে, কি কাহারও দ্বারা গছব করা হইলে এবং উহার উপর কোন প্রমান না থাকিলে, কি কোন পর্ব্বতে পুতিয়া রাখিলে কি কোন্ স্থানে ভূমিতে পুতিয়া রাখিয়াছে তাহা ভুলিয়া গেলে, কি কাহাকেও ধার দিলে যদি ঐ ধার অস্বীকার করে, পরে এক দল লোকের

সম্মুখে কয়েক বৎসর পরে স্বীকার করিলে কিম্বা সমুদ্রে ডুবিয়া গেলে এই সকল অবস্থায় জাকাত দিতে হইবে না। ঐ সকল বস্তু কয়েক বৎসর পরে পাওয়া গেলে বিগত বৎসরের জাকাত দিতে হইবে না। র্বত্তমান সময় হইতে অর্থাৎ পাওয়া যাওয়ার পর হইতে বৎসর পূর্ণ হইলে জকাত দেওয়া যাইবে। স্বীয় গৃহে ধন পুতিয়া রাখিয়া জায়গা ভুলিয়া গেলে তাহার জাকাত দিতে হইবে, কেননা স্বীয় গৃহ খনন করিতে কোন বাধা নাই। ব্যবহারী বস্তু তিন প্রকার: (১) যে যে বস্তু দ্বারা কার্য্য করিলে র্বত্তমান থাকে, যেমন হাতুড়ি,বাঁটালি,লাঙ্গল,জোয়াল ইত্যাদি। (২) যে যে বস্তু ব্যবহারের পর বাকী না থাকে কিন্তু তাহার চিহ্ন থাকে যেমন বস্ত্রাদির রঙের নিমিত্ত কুসুম ফুল, জাফরান ইত্যাদি। (৩) যে যে বস্তু ব্যবহারের পরে চিহ্ন থাকে না যেমন সাবান, সোডা, সাজিমাটি ইত্যাদি, এই প্রকার বস্তু হইতে ১/৩ দফার বস্তুতে জাকাত নাই অর্থাৎ হাতুড়ি, বাঁটালি ইত্যাদিতে জাকাত নাই। (২) দফার বস্তুর নেছাব পরিমিত হইলে জাকাত দিতে হইবে। কোন ব্যক্তির নিকট আট তোলা স্বর্ণ চারি মাস বা ছয় মাস কাল ছিল, তাহার পর কমিয়া যাওয়ার ২/৩ মাস পরে সমস্তই পুরা হইয়া গেল, জাকাত ওয়াজেব হইবে। বৎসরের ১ম ও শেষে মালদার হইলে মধ্য দিয়া কিছু কমিয়া গেলে তবেও জাকাত দিতে হইবে, মাফ হইবে না। কিন্তু যদি সমস্ত মাল তাহার হস্ত হইতে চলিয়া যাওয়ার পর পুনরায় মালিক হয়, তখন ঐ সময় হইতে বৎসর হিসাব করিতে হইবে। কাহার ও নিকট নেছাব পরিমান বা ততোধিক সোণা থাকিলে বৎসর পুরা হওয়ার র্পূব্বে ঐ সোনা খরচ হইয়া গেলে জাকাত ওয়াজেব্ হইবে না। স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা যাহা প্রস্তুত করা যাইবে, নেছাব পরিমান হইলে জাকাত দেওয়া ওয়াজেব্ হইবে, যেমন অলঙ্কার ও বাসনা ইত্যাদি, ব্যবহার করুক বা না করুক জাকাত ওয়াজেব হইবে। চাঁদির সঙ্গে

রাং মিশ্রিত থাকিলে, তখন দেখিতে হইবে যে চাঁদির ওজন বেশী, নারাঙের ওজন বেশী। চাঁদির ওজন বেশী হইলে, সমস্তকেই চাঁদি ধরিতে হইবে নেছাব পরিমান বা ততোধিক হইলে জাকাত দিতে হইবে, কম হইলে দিতে হইবে না। যদি রাং বেশী হয়, তবে সমস্তকেই রাং ধরিতে হইবে, চাঁদি ধরিতে পারিবে না। পিতল, লোহা, তামা এবং রাঙের যাহা হুকুম হয় তাহাই করিতে হইবে অর্থাৎ সওদাগরির মনন করিলে নেছাব পরিমিত হইলে, জাকাত ওয়াজেব হইবে। স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার অথবা অন্য কোন বস্তু প্রস্তুত করিলে তাহার ওজন করত: যাহা ধার্য্য হইবে তাহাই দিতে হইবে। উহার মূল্য ধরিয়া হিসাব করিয়া দিতে হইবে না। যেমন এক ব্যক্তি রৌপ্যের একটি গ্লাস প্রস্তুত করিয়াছে তাহার মূল্য ১২০ ্ টাকা হইবে, ওজন করিলে ৯০ তোলা রৌপ্য হইবে। এ স্থলে ঐ ব্যক্তির ৯০ তোলার জকাত দিতে হইবে, ১২০ ্ টাকা মূল্যের উপর জকাত দিতে হইবে না। স্বর্ণ, রৌপ্য, টাকা, নোট, গিনি, অলঙ্কার ইত্যাদি নেছাব অপেক্ষা অধিক হইলে তাহার জকাত নেছাবের পাঁচ অংশের একাংশ অধিক হইলে, ঐ অধিকেরও ৪০ ভাগ করযি়া ১ভাগ জাকাত দতিে হইব।ে যমেন আব্দুলরে নিকট ৬৩ তোলা রৌপ্য আছে। তন্মধ্য হইতে ৫২।। তোলা নেছাব বাদ দিলে বাকী ১০।।০ সাড়ে দশ তোলা নেছাব হইতে বৃদ্ধি হইলে, ঐ বৃদ্ধি ১০।।০ তোলা নেছাব ৫২।। সাড়ে বায়ান্ন তোলার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হইল; সুতরাং ঐ ১০।। সাড়ে দশ তোলাকে ৪০ ভাগ করিয়া এক ভাগে। -১-৮ আট ভাগে ৪০ ভাগ রতি হইবে এবং ৫২।। তোলায় ১।/ আনা একুনে ১।।/০ রতি জকাত দিতে হইবে। স্বর্ণের হিসাব ও এইরূপ জানিবে, যেমন কাবেদের নিকট ১ তোলা স্বর্ণ আছে, তাহা হইতে স্বর্ণের আসল নেছাব ৭।। তোলা বাদ দিলে বৃদ্ধি ১।।০ তোলা অবশিষ্ট থাকিবে, সুতরাং ৭।।০ তোলার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ ৶ তিন আনা হইবে এবং

বৃদ্ধি ১।।০ দেড় তোলা আসল নেছাব ৭।। সাড়ে সাত তোলার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। অতএব বৃদ্ধি ১।।০ দেড় তোলার ভাগের এক ভাগ ৩ তিন পূর্ণ চব্বিশের চল্লিশ রতি হইবে। ৯ তোলা স্বর্ণে ৯-৩ তিন আনা তিন চব্বিশের চল্লিশ রতি জকাত দিতে হইবে। নেছাবের বৃদ্ধি রাশি একের পাঁচ অংশের অনধিক হইলে জাকাত দিতে হইবে না। যেমন করিমের নিকট ৮।। সাড়ে আট তোলা স্বর্ণ আছে তন্মধ্যে শুধু ৭।।০ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের ৶ তিন আনা স্বর্ণ জাকাত দিতে হইবে। এইরূপ পাঁচ অংশে বৃদ্ধি হইয়া অন্য অংশে মিলিত না হইলে তাহার জাকাত দিতে হইবে না। যেমন রহিমের নিকট ১০ দশ তোলা স্বর্ণ আছে। তন্মধ্যে হইতে ৭।। সাড়ে সাত তোলা আসল নেছাব বাদ দিলে ২।। আড়াই তোলা বৃদ্ধি সোনা অবশিষ্ট থাকে। এবং ৭।। সাড়ে সাত তোলার পাঁচ অংশের এক অংশ করিলে ১।। দেড় তোলা হয়। ঐ দেড় তোলা বাদ দিলে ১ এক তোলা বাকী থাকে, এ স্থলে ৯ তোলার উল্লিখিত মতে জাকাত দিতে হইবে। বাকী ১ এক তোলার জাকাত দিতে হইবে না। কারণ ঐ এক তোলা একের পাঁচ অংশ নয়। যেহেতু ১০।। সাড়ে দশ তোলা হইলে পুরা জাকাত দিতে হইত। কেননা নেছাব একের পাঁচ অংশের দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০।। সাড়ে দশ তোলা হইতে ৭।। সাড়ে সাত তোলা বাদ দিলে ৩ তিন তোলা বাকী থাকিবে। এবং ঐ ৭।। সাড়ে সাত তোলাকে পাঁচ ভাগ করিলে এক ভাগে ১।। দেড় তোলা হইবে। সুতরাং ১।। দেড় তোলাকে দ্বিগুণ করিলে ৩ তিন তোলা হইবে অতএব ১০।। সাড়ে দশ তোলার জকাত দিতে হইবে। বকরের নিকট একখানি বানিজ্যের নৌকা আছে তাহাকে রৌপ্য দ্বারা মূল্য নিরূপন করিলে ৫২।। আনা হইবে। স্বর্ণ দ্বারা মূল্য নিরূপণ করিলে ৪/৫ আনা হয় তবে এ স্থলে রৌপ্য দ্বারা মূল্য নিরূপণ করিতে হইবে, যাহা মূল্যের সংখ্যা অধিক হয় তাহাই করিবে। কাহারও নিকট নগদ ২০ ্ কুড়ি টাকা

আছে এবং বাণিজ্যের দ্রব্যাদি র্বত্তমান আছে। যদি বানিজ্যের দ্রব্যের মূল্য নিরূপণ করা যায় তবে ১০০্ টাকা ও নগদ ২০্ ঐ ১০০্ টাকা যোগ করিলে ১২০্ টাকা হইবে। এ স্থলে ঐ ব্যক্তির মোট ১২০্ টাকার জাকাত দিতে হইবে। ইব্রাহিমের নিকট ৩০ তোলা রৌপ্য ও ১ তোলা স্বর্ণ আছে। এ স্থলে উভয় দ্রব্যের নেছাব পুরা নয়, ঐ সময় ইব্রাহিম প্রথমত, ১ ভরি স্বর্ণের মূল্য ৪০্ টাকা ধার্য্য করিবে এবং ৩০ তোলা রৌপ্যের সহিত ৪০ তোলাকে যোগ করিলে ৭০ তোলা হইবে। সত্তর তোলা রৌপ্যের জাকাত দিতে হইবে। চাঁদির মূল্য ধরিয়া স্বর্ণের সহিত মিশ্রিত করিলে সিদ্ধ হইবে না। নোট কাগজ নেছাব পরিমাণ হইলে জাকাত ওয়াজেব হইবে। কেননা নোট টাকার ন্যায় কার্য্য করে। কোন ব্যক্তির নিকট ২০০্ টাকা জমা আছে এবং ১০০্ টাকা কর্জ্জ আছে। তবে উহার উপর বৎসর কাল অতীত হইলে ১০০্ একশত টাকার জাকাত ওয়াজেব হইবে। বাকী একশত কর্জ্জের বদলে জাকাত দিতে হইবে না। বৎসরের প্রথমে কাহারও নিকট ২০০ দুই শত তোলা চাঁদি থাকিলে, বৎসর অতীত হওয়ার র্পূব্বে ২/৪ তোলা স্বর্ণ বা ৯/১০ তোলা স্বর্ণ ঐ ২০০ শত তোলা চাঁদির সঙ্গে যোগ হইলে বৎসরের শেষে সোনার মূল্য ও চাঁদির ওজন করত: জাকাত দিতে হইবে। সোনার জাকাত নূতন বৎসর হিসাব করিয়া আলগ ভাবে দিতে পারিবে না। কারণ যখন চাঁদির বৎসর পূর্ণ হইবে, সোনার বৎসর না পুরাইলেও চাঁদির বৎসর পূর্ণ হওয়ায়, সোনার পূর্ণ বৎসর ধরিয়া জাকাত দিতে হইবে। এইরূপ বৎসরের প্রথমে ১০০্ শত টাকা ছিল, বৎসরের শেষ তারিখে ঐ ১০০্ টাকার দ্বারা বর্দ্ধিত হইয়া মোট ৩০০্ শত টাকা হইল, তখন ৩০০্ টাকার জাকাত আদায় করিতে হইবে। কারণ বৎসরের শেষ তারিখে যাহা জমা হয় তাহা হিসাবান্তে মোট করিয়া মোট মালের জাকাত আদায় করিতে হইবে। ভিন্ন বস্তু দিয়া জাকাত আদায় করিলে

তাহার মূল্য দিয়া জাকাত আদায় করিতে পারিবে। যেমন ১০০ তোলা রৌপ্যের ২।। আড়াই তোলা রৌপ্য জাকাত দিতে হইবে। যদি রৌপ্য দিয়া জাকাত দেওয়া হয়, বাজারে আড়াই তোলা রৌপ্যের মূল্য ১্ এক টাকা যদিও হয় তবে ঐ সময় টাকা দিয়া জাকাত আদায় করিলে আড়াই টাকা দিতে হইবে। নতুবা ঐ আড়াই তোলা রৌপ্যের মূল্য এক টাকার ৬৪ পয়সা দিয়া আদায় করিলে দুরস্ত হইবে। কারণ রৌপ্যের জাকাত ভিন্ন বস্তু অর্থাৎ তামা দিয়া আদায় করাতে দুরস্ত কিন্তু চাঁদির ওজন হইতে মূল্য অধিক হইলে মূল্য দিয়া জাকাত আদায় করা সিদ্ধ হইবে না।যেমন আড়াই তোলা চাঁদির মূল্য ৩্ তিন টাকা হইলে ১০০ তোলা চাঁদির জাকাত তিন টাকা দেওয়া অসিদ্ধ। অর্থাৎ ওজন মতে জাকাত দিতে হইবে। যেকান ব্যক্তির নিকট ৮/৯ তোলা স্বর্ণ আছে। এক বৎসর গত হওয়ার র্পূব্বে খরচ হইয়া গেলে উহার উপর জাকাত ওয়াজেব নহে। কাহারও নিকট না পুরা পরিমাণ স্বর্ণ আছে, না-পুরা পরিমাণ রৌপ্য আছে। অর্থাৎ সামান্য স্বর্ণ আছে ও অল্প রৌপ্য আছে; স্বর্ণ ও রৌপ্য দুই বস্তুর মূল্য মিলাইয়া সাড়ে ৫২।। তোলা চাঁদির সমান হয় নতুবা সাড়ে ৭।। সাত তোলা স্বর্ণের সমান হয় উহার উপর জাকাত ওয়াজেব হইবে। যদি স্বর্ণ ও রৌপ্য দোন বস্তুর মূল্য মিলাইয়া ঐ পরিমাণ চাঁদি বা স্বর্ণের সমান না হয় জাকাত ওয়াজেব নহে। যদি স্বর্ণ ও চাঁদি প্রত্যেকে পুরা ২ নেছাব পরিমাণ হয় মূল্য যোগ করা আবশ্যক নহে পৃথক ২ জাকাত দিতে অর্থাৎ চাঁদি ৫২।। তোলার জাকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ চাঁদির দ্বারা বা তৎমূল্য দ্বারা আদায় করিবে। ৭।। তোলার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ স্বর্ণ বা তৎমূল্য দ্বারা আদায় করিবে। কাহারও নিকট কিঞ্চিৎ পরিমান স্বর্ণ ও কিঞ্চিৎ পরিমান চাঁন্দি এবং কিছু পরিমান সওদাগরির মাল আছে। বৎসরের শেষে মূল্য করিলে তবে তিন বস্তুর মূল্য ৫২।। তোলা চাঁন্দরি

অথবা ৭।। তোলা স্বর্ণের সমান হইলে জাকাত ওয়াজেব হইবে। নতুবা হইবে না। স্বর্ণ বা চাঁদি কাহাকেও ধার দিলে অথবা সওদাগরি বিক্রিত মালের মূল্য বাকী থাকিলে, উহা নেছাব পরিমাণ হইলে, এক বৎসর বা কয়েক বৎসর গত হওয়ার পর পাওয়া গেলে, ঐ সমস্ত বিগত সনের জাকাত দেওয়া ওয়াজেব জানিবে। স্বামী হইতে প্রাপ্ত মোহরের জাকাত, পাওয়া যাওয়ার পর হইতে বৎসর পুরাইলে নেছাব পরিমান বা ততোধিক হইলে জাকাত ওয়াজেব। ইহার র্পূব্বরে জাকাত দিতে হইবে না। মালদার ব্যক্তি যাহার উপর জাকাত ওয়াজেব বৎসর গত হওয়ার র্পূব্বে জাকাত আদায় করিলে দুরস্ত হইবে। মালদার না হইলে কিন্তু মালদার হওয়ার আশা আছে ঐ ব্যক্তি মাল পাওয়ার র্পূব্বে জাকাত আদায় করিলে দুরস্ত হইবে না। মাল পাওয়া যাওয়ার পর এক বৎসর গত হইলে পুনরায় ঐ জাকাত আদায় করিতে হইবে। মালদার ব্যক্তি কয়েক বৎসরের জাকাত আগাম দিলেও দুরস্ত হইবে। কিন্তু মাল কোন বৎসর বৃদ্ধি হইলে, বৃদ্ধি মালের জাকাত দিতে হইবে। কোন ব্যক্তির নিকট ১০০্ শত টাকা র্বত্তমান আছে আরও ১০০্ টাকা অন্য কাহারও নিকট পাওয়া যাওয়ার আশায় বৎসর গত হওয়ার র্পূব্বরে আদায় করিলে তাহাও দুরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তির মালের উপর জাকাত ওয়াজেব হওয়ার পর জাকাত আদায় করার র্পূব্বে সমুদয় মাল চুরি হইলে বা অন্য কোনরুপে চলযি়া গলেে জাকাত মাফ হইবে কন্তিু নিজে অন্য কেহকে দিলে বা নিজের এক্তেয়ার মতে ধ্বংস হইলে, জাকাত মাফ হইবে না, দিতে হইবে। বৎসর পুরা হওয়ার পর সমস্ত মাল খয়রাত করিয়া দিলে তবেও জাকাত মাফ হইবে। ঘরের আসবাব যমেন থাকিবার ঘর ও পরিধানের বস্ত্র, হীরা, মণি, মুক্তা, ইত্যাদিতে জাকাত নাই, কিন্তু বাণিজ্য করার মনন করিলে জাকাত দিতে হইবে। দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার, ১ম খণ্ড, আলমগিরী ১ম খণ্ড, বেহেস্তী জেওর ইত্যাদি। ফতোয়া ছেরাজিয়াতে বর্ণিত আছে যে, এই জমানায় যেই পয়সার রেওয়াজ আছে সে পয়সার মূল্য দুই শত দেরম হইলে, দেরমের মত জাকাত ওয়াজেব হইবে, অর্থাৎ ৫২।।০ বায়ান্না টাকা আট আনা ঐ পয়সার মূল্য হইলে এবং বৎসর কাল পুরা হইলে ঐ পয়সার উপর জাকাত ওয়াজেব হইবে। বানিজ্যের নিয়ত র্স্বত্ব নহে।

উষ্ট্রের জাকাতের বিবরণ

পাঁচটি উট ছায়েমা (জঙ্গলে চরিয়া আহার করিলে) এবং এক বৎসর পুরা হইলে একটি ছাগল জাকাত দিতে হইবে। পাঁচটি হইতে নয়টি র্পয্যন্ত একটি ছাগল দিতে হইবে। দশটি হইতে ১৪টি র্পয্যন্ত দুইটি ছাগল, পনর হইতে ১৯টি র্পয্যন্ত তিনটি ছাগল দিতে হইবে। ২০ কুড়িটি উট হইতে ২৪টি র্পয্যন্ত চারটি ছাগল জাকাত দতিে হইব।ে ২৫পঁচশিটি উট হইতে ৩৫টি র্পয্যন্ত এক বৎসরের অধিক দুই বৎসরের কম একটি উটের বাচ্চা জাকাত দিতে হইবে। এই রূপ ৩৬ হইতে ৪৫ র্পয্যন্ত দুই বৎসরের অধিক হইয়া তিন বৎসর চলিতেছে, এইরূপ একটি উট জাকাত দিবে। ৬১ হইতে ৭৫ র্পয্যন্ত ৫ পাঁচ বৎসর চলিতেছে, সেইরূপ একটি উষ্ট্র দিতে হইবে। ৭৬ হইতে ৯০ র্পয্যন্ত তৃতীয় বৎসর চলিতেছে, সেইরূপ দুইটি উট শাবক দিতে হইবে। এই মত ৯১ হইতে ১২০ র্পয্যন্ত ৪র্থ বৎসরে পতিত হইয়াছে, সেইরূপ ২টি উট জাকাত দিতে হইবে। ১২০টির অধিক হইলে প্রত্যেক পাঁচটী বৃদ্ধি করিয়া এক ছাগল ও দুই উট দিতে হইবে। এইরূপ র্পয্যায় ক্রমে উটের বৃদ্ধি বুঝিয়া জাকাত বৃদ্ধি করা যাইবে। দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, কুদুরী ইত্যাদি। উপরোক্ত বয়সের উট পাওয়া না গেলে মূল্য আদায় করিতে পারিবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

মহিষ ও গরুর জাকাতের বিবরণ

গরু বা মহিষ ত্রিশটি হইলে এবং ছায়েমা ও এক বৎসর গত হইলে জাকাত দেওয়া ফরজ জানিবে। ৩০টি গরুতে এক বৎসরের অধিক বয়সের একটি দামড়ি বা স্ত্রী জাতীয় বাছুর দিতে হইবে। এইরূপ মহিষ ও জানিবে। ৪০টি গরু হইলে দুই বৎসরের অধিক কালের দামড়ি বা স্ত্রী জাতীয় বাছুর দিতে হইবে। ষাটটি গরু হইলে এক বৎসরের অধিক বয়সের ২ দুইটি গরু দিতে হইবে। ইহাও স্মরণ রাখিবে যে প্রত্যেক ত্রিশ গরুতে এক বৎসরের অধিক বয়সের একটি গরু ও ৪০ চল্লিশে দুই বৎসরের অধিক বয়সের একটি গরু বৃদ্ধি করা যাইবে। ৭০টি গরু হইলে ২ দুই বৎসরের অধিক বয়সের একটি গরু ও এক বৎসরের অধিক একটি দিতে হইবে। এইরূপ ৮০ আশীটি হইলে ২ দুই বৎসরের অধিক বয়সের দুইটি গরু দিতে হইবে। ৯০টি গরু হইলে ১ বৎসরের অধিক বয়সের তিনটি গরু দিতে হইবে। ১০০ একশতটি গরুতে দুই বৎসরের অধিক বয়সের একটি গরু এবং এক বৎসরের অধিক বয়সের দুইটি গরু মোট তিনটি গরু দিতে হইবে। ১১০টি গরু হইলে, দুই বৎসরের করিয়া দুই গরু এবং এক বৎসরের এক একুনে তিনটি দিতে হইবে। ১২০টি গরুতে এক বৎসর করিয়া ৪টী গরু দিতে হইবে। অথবা দুই বৎসর করিয়া তিনটি দিলে ও দুরস্ত হইবে। এইরূপ গরুর বৃদ্ধি বুঝিয়া জাকাতের সংখ্যা বৃদ্ধি করিবে। গরুর হিসাবের ন্যায় মহিষের হিসাব ধরা যাইবে। কুদুরী ও গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড, নুরুল হেদায়া ইত্যাদি।

মেষ, ভেড়া ও ছাগলের জাকাতের বিবরণ

ছাগল ৪০ চল্লিশটি হইলে এবং জঙ্গলে চরিয়া খাইলে ও এক বৎসর পুরা জমা থাকিলে। এক বৎসরের অধিক বয়সের একটি ছাগল জাকাত দেওয়া ফরজ। যদি ছাগল ও ভেড়া মিলিয়া ৪০ চল্লিশটি হয় একটি ছাগল বা ছাগী জাকাত দিবে। যদি ও বা একাকী পুরা নেছাব না হয়। নেছাব পুরা হওয়াতে ও কোরবানীতে ও সুদে মেষ ও ভেড়া এক সমান জানিবে। কিন্তু ওয়াজেব আদায় করাতে ও শপথ করাতে এক সমান নহে। যেমন কাহার ও নিকট ৪০টি ভেড়া আছে তাহাতে একটি ভেড়া জাকাত দেওয়া ওয়াজেব হইবে, ভেড়ার বদলে একটি ছাগল দিয়া জাকাত দিলে দুরস্ত হইবে না। সেইরূপ কেহ /২ সের ছাগলের গোস্তের পরির্বত্তে /৩ সের ভেড়ার গোস্ত লইলে সুদ হইয়া হারাম হইবে। কারণ তাহাতে বেশ ও কম হইয়াছে। এইরূপ কেহ শপথ করিলে যে, আমি ভেড়ার মাংস খাইব না। ছাগলের মাংস খাইলে কাফ্ফারা দিতে হইবে না। ১২১টি হইলে ২ দুইটি ছাগল জাকাত দিবে এইরূপ ২০১টি হইলে তিনটি ছাগল বা শেষ দিতে হইবে। ৩০০ শত হইলে ৪টি দিতে হইবে। তাহার পর প্রত্যেক শত করা একটি বৃদ্ধি করা যাইবে। যেমন ৪০০ তে ৫টী ৫০০ তে ৬টী ইত্যাদি উল্লিখিত পশ্বাদির উপর জাকাত ওয়াজেব হইবে। যেই জন্তু অধিকাংশ বৎসর জঙ্গলে বা পাহাড়ে চরিয়া খায়, যেই উট, গাভী ছাগল বা ভেড়াকে নিজ ঘর হইতে ঘাস খাওয়া দেওয়া যায় তাহাতে জাকাত নাই। গাধা বা খচ্চর দ্বারা বাণিজ্য করার নিয়ত করিলে, উহার মূল্য নিরূপন করিয়া জাকাত ধরা যাইবে। যে যে জন্তু গৃহে পোষা যায় ঐ জন্তু বাণিজ্যের জন্য আনয়ন করিলে জাকাত দিতে হইবে। উট, গাভী, ছাগ বা ভেড়ার বাচ্চা উহাদের সঙ্গে বড় একটি বয়:প্রাপ্ত না থাকিলে জাকাত দিতে হইবে। ঐ বাচ্চা ৪০টীর মধ্যে একটি বড় বয়:প্রাপ্ত থাকিলে জাকাত দিতে হইবে। দুই ব্যক্তির ৪০টি ছাগল বা ভেড়া হইলে জাকাত দিতে হইবে না। ঘোটক ও ঘোটকী উভয়

এক ব্যক্তির হইলে এবং উভয়ে মাঠে চরিয়া আহার করিলে এমাম আবু হানিফা (র:) বলেন, প্রত্যেক ঘোড়ায় এক টাকা করিয়া জাকাত দিতে হইবে, এক বৎসর পুরা হইলে। কেবলমাত্র একেলা ঘোটক থাকিলে ও ঘোটকী না থাকিলে জাকাত দিতে হইবে না। অর্শ্ব, গর্দ্দভ, পশ্বাদি দ্বারা বোঝা আনয়ন করিলে, ঐ পশ্বাদির জাকাত দিতে হইবে না। ছাগ জাকাতে না দিয়া তৎমূল্য বাজার দরানুসারে দিলে দুরস্ত হইবে। বৎসর পুরা হওয়ার র্পূব্বে দরিদ্র হইয়া গেলে জাকাত দিতে হইবে না। বৎসর পুরা হওয়ার পর সমস্ত মাল খয়রাত করিয়া দিলে, জাকাত মাপ হইয়া যাইবে। কাহারও নিকট ২০০ শত টাকা ছিল, এক বৎসর পরে এক শত টাকা চুরি হইলে বা খয়রাত করিয়া দিলে এক শত টাকার জাকাত মাপ হইয়া যাইবে। অর্থাৎ দিতে হইবে না। বাকী এক শত টাকার জাকাত দিতে হইবে। বেহেস্তী জেওর, দোররুল মোখতার, আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

জাকাত আদায় করার বিবরণ

যখন মালের উপর পুরা বৎসর গত হইয়া যাইবে অবিলম্বে জাকাত আদায় করিবে, নেক কাজে গৌণ করা ভাল নহে। আদায় করার র্পূব্বে মৌত আসিলে নিজের উপর জাকাত বাকী থাকিবে এবং নিজে পাতকী হইবে। মৌতের আগে জাকাত আদায় করিবার সময় এইরূপ নিয়ত করিবে যে, আমার মালের জাকাত আমি আদায় করিতেছি নতুবা ফকিরকে দিবার সময় বলিবে ইহা তোমাকে জাকাতের টাকা বা পয়সা দিতেছি; না হইলে জাকাতের টাকা নিজ তহবিল হইতে জুদা করিয়া লইবার সময় জাকাত দিবার নিয়তে জুদা করিয়া রাখিলে ও নিয়তের জন্য বছ্ হইবে। নতুবা নিয়ত ছাড়া জাকাত আদায় হইবে না। ফকিরকে জাকাতের টাকা দিবার সময় নিয়ত

না করিলে যত দিন ঐ ফকির টাকা খরচ না করে তাহার হাতে জমা থাকিলে সেই সময় জাকাতের নিয়ত করিলেও দুরস্ত হইবে, খরচ করার পর নিয়ত করিলে দুরস্ত হইবে না। পুনরায় জাকাত দিতে হইবে। কোন ব্যক্তি জাকাত দিবার মননে ২টী টাকা পৃথক করিয়া রাখিল, ফকিরকে দিবার সময় ভুলে জাকাতের নিয়ত না করিলেও জাকাত আদায় হইবে। হাঁ যদি জাকাত দিবার নিয়ত না করিয়া পৃথক করিয়া রাখিত তাহা হইলে জাকাত আদায় না হইত। কোন ব্যক্তি জাকাত দিবার জন্য ২টী টাকা তহবিল হইতে পৃথক করিলে ঐ টাকা এক দিন একজন ফকিরকে দিলে ও দুরস্ত হইবে। নতুবা কয়েক জন ফকিরকেও দিতে পারিবে। না হইলে দোন টাকা সামান্য ২ করিয়া কয়েক মাসেও দিতে পারিবে। কিন্তু এক ব্যক্তিকে বখশিস দিতেছে বলিয়া প্রকাশ করে কিন্তু অন্তরে জাকাত দিতেছে বলিয়া নিয়ত করিয়া জাকাতের টাকা বা পয়সা দিলে জাকাত আদায় হইবে। কোন দরিদ্র ব্যক্তির নিকট ধনবানের কর্জ্জ থাকিলে ঐ ধনবান জাকাতের টাকার দ্বারা কর্জ্জ টাকা কাটাওতি দিয়া কর্জ্জ টাকা শোধ করিয়া লইতে পারবিে না। কিন্তু যদি প্রথম জাকাতের টাকা ঐ দরিদ্রের হস্তে অর্পণ করার পর বলে, আমার কর্জ্জ আদায় কর, তখন ঐ দরিদ্র ব্যক্তি জাকাতের টাকার দ্বারা ঋণ শোধ কেিল দুরস্ত হইবে। জাকাতের টাকা নিজে আদায় না করিয়া অপরের দ্বারা দরিদ্রের নিকট পাঠাইয়া দেওয়া ও দুরস্ত আছে। প্রেরক জাকাতের নিয়ত করিলে বছ করিবে, ঐ ব্যক্তি জাকাতের নিয়ত না করিলেও আদায় হইবে। কেহ কোন গরীবকে জাকাতের টাকা দিবার জন্য দিলে ঐ ব্যক্তি জাকাতের জন্য দেওয়া টাকা না দিয়া নিজ হইতে টাকা গরীবকে দিলে, জাকাত আদায় হইবে না কিন্তু

উহার দেওয়া টাকা তাহার নিকট মজুদ থাকিলে এবং খরচ না করিলে সেই টাকা হইতে নিজ দেওয়া টাকা পূরণ করিয়া লওয়ার নিয়ত করিয়া ফকিরকে দিলে জাকাত আদায় হইবে। খরচ করার পর নিজ টাকা দিয়া উনির জাকাত আদায় করা অসিদ্ধ। পুনরায় জাকাত দিতে হইবে; এইরূপ ফেতরাও জানিবে। যদি একে অন্যকে বলিল, আমার জাকাতগুলি আদায় করিয়া দিও, কিন্তু জাকাত দিবার জন্য কোন টাকা পয়সা দিল না ঐ ব্যক্তি নিজ টাকা দিয়া জাকাত দিলে দুরস্ত হইবে। পরে উনি হইতে নিজ টাকা দিয়া জাকাত দিলে দুরস্ত হইবে। পরে উনি হইতে নিজ টাকা গ্রহণ করিবে। হুকুম ছাড়া একে অন্যের জাকাত আদায় করিলে আদায় হইবে না। পরে জাকাত দাতা টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হইলেও সিদ্ধ হইবে না, এবং যেই ব্যক্তি হুকুম ছাড়া জাকাত দিয়াছে সেই ব্যক্তির জাকাত দাতা হইতে উসুল করিয়া লওয়ার ক্ষমতাও থাকিবে না। জাকাত দাতা ব্যক্তি একজন লোককে বলিল, আমার এই জাকাতের টাকা একজন গরীবকে দিবা। তখন ঐ ব্যক্তি নিজেই গরীবকে দিতে পারিবে। নতুবা অন্যের দ্বারাও দিতে পারিবে। নিজের মাতা ও পিতাকে দিতে পারিবে যদি এইরূপ বলে যাহা চাহ তাহা কর এবং যাহাকে ইচ্ছা হয় তাহাকে দাও, তবে নিজে গরীব হইলে নিজেও রাখিতে পারিবে। বেহেস্তী জেওর ইত্যাদি।

জাকাত ও ফেতরার ধন কাহাকে দিতে হইবে তাহার বিবরণ

সাত ব্যক্তিকে জাকাতের ধন দেওয়া দুরস্ত আছে। (১) ফকির যাহার গৃহে এক বেলা খাবার আছে। (২) মিছকিন যাহার খাবার নাই। (৩) আমেল অর্থাৎ তহছিলদার এমামের পক্ষ হইতে

যিনি জাকাতের ধন তহছিল করেন তাঁহার পারিশ্রমিক স্বরূপ কিছু পাইবে। (৪) মোকাতেব যে ক্রীতদাসকে তাহার প্রভু লিখিত অঙ্গীকার করিয়াছে যে, তুমি আমাকে এত টাকা দিতে পারিলে তোমাকে দাসত্ব হইতে মুক্তি দেওয়া যাইবে। ঐ দাস মুক্তি পাওয়ার আশায় জাকাতের ধন গ্রহণ করিতে পারে। (৫) ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি অর্থাৎ যে ঋণীর ঋণ পরিশোধাস্তে তাহার নেছাব পরিমিত ধন অবশিষ্ট না থাকে। (৬) গাজী দরিদ্র হওয়ার গতিকে র্ধম্ম যুদ্ধা মুসলমান সৈন্যের সমভিব্যাহারে মিলিত হইতে না পারিলে। (৭) প্রবাসী অর্থাৎ যে নির্ধন মোছাফের। যেই সাত ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করা গেল, তাহা হইতে এক ব্যক্তিকে জাকাতের ধন দান করেিল সিদ্ধ হইবে। সকলকে দেওয়ার আবশ্যক করিবে না। মসজিদ বা তত্তুল্য কোন গৃহ অথবা পুল, শড়ক, নতুবা লা-ওয়ারিশ মৃতের গোর ও কফন দেওয়া এবং মৃত ব্যক্তির কর্জ্জ শোধ করা জাকাতের ধন দ্বারা অসিদ্ধ জানিবে। কেননা উহাতে কাহাকেও স্বত্বাধিকারী করা হইল না। জকাত ও ফেতরার ধন দ্বারা স্বত্বাধিকারী করা র্শত্ত বটে। পিতা ও পিতামহ যত উর্দ্ধে হউক উহারাকে জাকাতের ও ফেতরার ধন দিতে পারিবে না এবং উহারা ও গ্রহণ করিতে পারিবে না। এইরূপ পুত্র ও পৌত্রাদি যত অধো দিকে হউক উহারাকে ও জাকাত ও ফেতরার ধন দিতে পারিবে না, এবং উহারা ও গ্রহণ করিতে পারিবে না। অর্থাৎ পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, পরদাদা নানা, নানী ইত্যাদি ও পুত্র, কন্যা এবং পুত্রের পুত্র ও কন্যার কন্যা, ইত্যাদ।ি ভ্রাতা, ভগ্নি, ভাতিজি, ভাতিজা, ভাগিনী, ফুফি, চাচা, খালা, মামু, বিমাতা, মাতার স্বামী, জামাতা, শ্বশুর, শাশুড়ী, ইত্যাদিকে দেওয়া দুরস্ত জানিবে; পিতা যদি ধনবান হয় তাহার নাবালেগ পুত্র ও কন্যাকে অন্য লোকে ফেতরা ও জাকাতের ধন দেওয়া অসিদ্ধ। ধনবানের বালেগ পুত্র

কিম্বা কন্যা গরীব হইলে অন্য লোকে জাকাত ও ফেতরার ধন দিতে পারিবে এবং উহারা ও লইতে পারিবে। স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে জাকাতে ও ফেতরার ধন দেওয়া ও লওয়া অসিদ্ধ। বনিহাসেম অর্থাৎ হাসেমিয় বংশধর গণকে জাকাত ও ফেতরার ধন দেওয়া না দুরস্ত। বহি হাসেম হজরত আলির (কররমল্লাহু ওয়াজহাহু) বংশধরগণ এমাম হাছন (র:) ও এমাম হোছেন (র:) এমাম জয়নাল আবেদিন (র:) হজরত আব্বাছ (র:) এর বংশধরগণকে বনি হাসেম বলে। যেই রমণী যেই ছেলেকে দুগ্ধ পান করাইয়াছে সেই রমণী ঐ ছেলেকে এবং ঐ ছেলে ঐ স্ত্রীলোককে জাকাতের ধন দিতে পারিবে। প্রবাসী তাহার সমুদয় ধন বাড়ীতে রাখিয়া প্রবাসে আসিয়াছে সে পথিকাবস্থায় জাকাতের ধন ফেতরা বা ছদকা লইতে পারবি।ে কোন স্ত্রীলোক দরিদ্রাবস্থায় তাহার স্বামীর নিকট মোহরে মাজ্জলের ১০০ টাকা নেছাব পুরা হয় এবং তাহার স্বামী ঐ ১০০্ টাকা দেওয়ার শক্তিবান। মোহরের টাকা স্বামীর নিকট চাহিবামাত্র পাইবে। এ অবস্থায় ঐ স্ত্রীলোককে জাকাতের ধন দেওয়া এবং ঐ স্ত্রী গ্রহণ করা অসিদ্ধ। কিন্তু তাহার স্বামী মোহরের টাকা দিতে অক্ষম হইলে গ্রহণ করিতে পারিবে। ছৈয়দ বংশকে জাকাতের ধন দান করা অসিদ্ধ। কাফেরকে দেওয়া দুরস্ত নহে। কাহাকেও জাকাতের ধন গ্রহণ করার উপযুক্ত মনে করিয়া জাকাতে ধন দিলে পরে জানিতে পারিলে যে ঐ ব্যক্তি মালদার বা ছৈয়দ বংশ, নতুবা অন্ধকার রাত্রে কাহাকেও জাকাতের ধন দেওয়ার পর জানিতে পারিল যে উনি তাহার কন্যা বা মাতা হয়; নতুবা এমন এক ব্যক্তিকে জাকাত দিল যে যাহাকে জাকাত দেওয়া দুরস্ত নহে। এই সব অবস্থায় জাকাত আদায় হইয়া যাইবে। পুনরায় আদায় করা ওয়াজেব হইবে না। কিন্তু যদি জাকাতের ধন গ্রহিতা জানিতে পারিল যে,

ইহা জাকাতের পয়সা, আমি জাকাতের পয়সা লওয়ার উপযুক্ত নহি, তবে গ্রহণ না করিবে ও ফেরৎ দিবে। জাকাতের ধন দেওয়ার পরে জানিতে পারিল যে জাকাত গ্রহিতা কাফের, জাকাত আদায় হইবে না। পুনরায় আদায় করিতে হইবে। কোন ব্যক্তি দরিদ্র বা মালদার হওয়ার সন্দেহ হইলে যতক্ষণ র্পয্যন্ত গরীব বলিয়া প্রমান না হয় জাকাত না দিবে। প্রমানীত হওয়া ছাড়া জাকাতের ধন দেওয়ার পর অন্তর সাক্ষ্য দিল যে ঐ গ্রহিতা ব্যক্তি দরিদ্র, তবে আদায় হইবে। নতুবা আদায় হইবে না। পুনরায় দিতে হইবে। এক সহরের ফেতরা ও জাকাত অন্য সহরে নেওয়া ও মকরুহ জানিবে। কিন্তু নিজের এগানা বা কুটুম্বের জন্য অন্য সহরে প্রেরণ করা মকরুহ নহে। জাকাতের ও ফেতরা ও নজরের ধন, প্রথমত: ভ্রাতা, ভগ্নি, ভাতিজা, ভাগিনের, চাচা উহাদের সন্তানগণ, ফুফু, খালা, মামু, উহাদের পুত্রগণ, শ্যালক-সম্বন্ধী, শ্বাশুর, তৎপর প্রতিবেশী (পাড়া পড়শী) তৎপর গ্রামস্থিত বা মহল্লার প্রতিবেশী পুত্র ইত্যাদিকে দান করিবে। বেহেস্তি জেওর, আলমগিরী ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

ফেতরার বিবরণ

পবিত্র রমজান মাস শেষ হইবার দিবস পর শওয়াল চাঁদের প্রথম দিবস ঈদুল ফেতরের নামাজের র্পূব্বে যে অর্থাদি নিয়ত করিয়া বাহির করা যায় উহাকে ফেতরা বলে। সমুদয় মুসলমানের প্রতিই ফেতরা দেওয়া ওয়াজেব। কিন্তু জাকাতের ন্যায় নেছাব পরিমিত ধন থাকা আবশ্যক। জাকাতের ধন এক বৎসর কাল বিলম্ব করিয়া দিতে হয়, ফেতরা দিতে এক বৎসর গৌণ করিতে হইবে না। কাহার ও নিকট ২ দুই খানা গৃহ আছে ১ম গৃহে তাহার থাকিতে হয়। ২য় খানা খালি থাকিতে হয়, নতুবা কেরেয়ায় লাগান হয়, তবে কেরেয়ার গৃহ খানা তাহার আবশ্যকীয় আসবাব হইতে বেশী, ঐ কেরেয়ার গৃহ খানার

মূল্য ৫২।।০ আনা হইলে ঐ ব্যক্তির উপর ফেতরা ওয়াজেব হইবে। উহাকে জাকাত বা ফেতরার পয়সা দেওয়া দুরস্ত নহে। হাঁ যদি ঐ গৃহ খানির কেরেয়ার দ্বারা জীবন রক্ষা হয়, গৃহ খানি আবশ্যকীয় আসবাবের মধ্যে গণ্য হইবে এবং উহার উপর ফেতরা ওয়াজেব হইবে না। উহাকে জাকাতের পয়সা দিতে পারিবে। সারর্মম্ম এই যে, যেই ব্যক্তির জাকাত ও ফেতরার পয়সা লওয়া দুরস্ত আছে, তাহার উপর ফেতরা ওয়াজেব নহে। যেই ব্যক্তির উপর জাকাত ও ফেতরা লওয়া দুরস্ত নাই তাহার উপর ফেতরা ওয়াজেব জানিবে। কোন ব্যক্তির নিকট মাল ও আবশ্যকীয় আসবাব হইতে অধিক মাল ও আসবাব আছে এবং উহার নিকট কর্জ্জ ও আছে, তখন দেখিতে হইবে যে তাহার কর্জ্জ শোধ করার পর যদি ৫২।।বায়ান্ন টাকা আট আনার মাল বেশী থাকে ফেত্রা ওয়াজেব হইবে নতুবা নহে।ঈদের দিবসের ফজর হইতে ফেত্রা ওয়াজেব জানিবে, যদি ঈদের দিবসের ফজর হওয়ার র্পূব্বে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়,উহার ফেত্রা দেওয়া ওয়াজেব নহে।ঈদের নামাজ পড়িতে যাওয়ার র্পূব্বে ফেতরা আদায় করা মস্তাহাব।ঈদের নামাজের র্পূব্বে আদায় করিতে না পারিলে পরে হইলে ও আদায় করিতে হইবে।মরিবার র্পূব্ব র্পয্যন্ত আদায় করিতে পারিবে,কিন্তু বাজ এমাম পাতকী হইবে বলিয়া বলিয়াছেন।মায়ের উদরে কোন সন্তান থাকিলে,তাহার ফেতরা দিতে হইবে না এবং ঈদুল ফেতরের প্রাত:কালের র্পূব্বে শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে তাহার পক্ষে ফেত্রা দেওয়া ওয়াজেব।ঈদুল ফেতরের দিবস প্রাত:কাল হওয়ার পর শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে তাহার ফেত্রা ও দিতে হইবে না।গেঁহু বা তাহার আটা,অথবা ছাতু,নতুবা আঙ্গুর অর্দ্ধ,ছা দিতে পারে। খর্জ্জুর, যব, আটা বা ছাতু এক ছা দিতে পারিবে।৮০ আশি তোলায় /১ সের ধরিয়া এইরূপ তিন সেরের কিঞ্চিৎ কমে একছা হয় এবং পৌনে

দুই সেরে অর্দ্ধ ছা হয়। ঐ সকল বস্তুর মূল্য প্রদান করিলে ও সিদ্ধ হইবে। আমাদের দেশে ধান্য, চাউল, ইত্যাদির দ্বারা ফেতরা দিলে ঐ বস্তুর সাত পোয়ার মূল্য ধরিয়া দিতে হইবে। কম হইলে আদায় হইবে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু সম্পত্তির মালিক হইলে তাহার পিতা ঐ সম্পত্তি হইতে তাহার পক্ষে ফেতরা দিবে। রমজানের রোজা কয়েকটি গত হইলে ফেতরা দিতে পারিবে। ফেতরা আদায় করাতে তিনটি বৃহৎ ফায়েদা আছে। (১) রোজা কবুল হওয়া (২) মৌতের সময় জান কবজ করার কষ্ট হইতে মুক্তি পাওয়া (৩) কবর আজাব হইতে বে-ডর হওয়া। নিজের ফেতরা নিজে আদায় করিবে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকাগণের পক্ষ হইতে নিজে আদায় করিবে যদি বালক ও বালিকাগণ সম্পত্তির অধিকারী না হয়। বিবির ফেতরা দেওয়া স্বামীর উপর ওয়াজেব নহে। বয়:প্রাপ্ত ছেলের ফেতরা দেওয়া বাপের উপর আবশ্যক নহে। কিন্তু যুবক সন্তান উন্মাদ হইলে তাহার ফেতরা বাপের দিতে হইবে। স্ত্রীর ফেতরা স্বামী বিনা অনুমতিতে আদায় করিলে, এবং যুবক সন্তানের ফেতরা পিতা সন্তানের বিনা অনুমতিতে আদায় করিলে দুরস্ত হইবে। এক ব্যক্তির ফেতরা কয়েক ব্যক্তিকে এবং কয়েক ব্যক্তির ফেতরা এক ব্যক্তিকে দেওয়া দুরস্ত আছে। দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার ইত্যাদি।

রোজার বিবরণ

আহার, সঙ্গম, পান, ভোজন ব্যতীত মনন করিয়া প্রাত:কাল হইতে সন্ধ্যা র্পয্যন্ত উপবাস থাকাকে রোজা বলে। আরব্য ভাষায় ইহাকে ছৌম বলে। উহা পবিত্র রমজান মাসে র্নিব্বাহ করিতে হয়। রমজান অর্থ জলিয়া যাওয়া, দগ্ধ হওয়া। অর্থাৎ রমজানের উপবাসের অগ্নিতে লোকের পাপ রাশি জলিয়া ভষ্মীভ’ত হয়। হাদিছ সরেিফ রোজার অত্যন্ত

পূণ্য বলিয়া আসিয়াছে। আল্লাহুতালার নিকট রোজাদারের বড় রোতবা। হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা(ছল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়ালেহি অছল্লম) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি ছওয়াব বুঝিয়া কেবলমাত্র আল্লার জন্য রোজা রাখিবে, র্পূব্বরে সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করিয়া দিবে। রমজান সরিফের রোজা শাবান মাসে, কাবার তাহবিলে কেবলার পরে ফরজ হইয়াছে এবং ফেতরার আদেশ ঈদের নামাজের দুই দিন র্পূব্বে হইয়াছিল, ও জাকাত ফেতরার পরে ফরজ হয়। শরায় রোজা আট প্রকার নিরূপণ করিয়াছে। (১) পবিত্র রমজান শরিপের র্নিদ্ধারিত রোজা (২) রমজান মাসের কাজা ও কাফ্ফারার রোজা (৩) র্নিদ্ধারিত ওয়াজেব নজরের রোজা (৪) অর্নিদ্ধারিত নজরের রোজা (৫) নফল অথবা ছুন্নত রোজা (৬) মস্তাহাব রোজা (৭) মকরুহ তনজিহি রোজা (৮) মকরুহ তাহরিমী রোজা। রমজান মাসের রোজা কোন ওজরের দ্বারা রাখিতে না পারিলে অন্য সময়ে তাহা পুরা করিয়া দেওয়াকে কাজা বলে। ওজর যেমন পীড়িত হওয়া এবং হায়জে ও নেফাছ ইত্যাদি। কাফ্ফারার রোজা, যেমন রমজান শরিফের রোজা কোন ওজর ব্যতীত ভাঙ্গিলে একের পরির্বত্তে ৬০ ষাটটি রোজা লাগালাগি রাখা ইত্যাদি এবং একটি রোজা কাজা ও দিতে হইবে। কাফ্ফারার রোজাকে ফরজ বলিয়া বিশ্বাস না করিলে কাফের হইবে না। অবশ্য পাপী হইবে। কোন ব্যক্তি পীড়িত অবস্থায় বলিল, খোদাতালা আরোগ্য করিলে আমি আগামী সোমবারে আমার মানসি রোজা অবশ্য রাখিব। উহা স্বীকার করাকে নির্ধারিত নজরের রোজা বলে। কাবেদ বলিল, আমি রোগমুক্ত হইলে একদিবস রোজা রাখিব; কোন্ দিবস রোজা রাখিব তাহা নির্ধারিত নাই। এ স্থলে ইহাকে অর্নিদ্ধারিত মানসি রোজা বলে। নফল বা ছুন্নত রোজা, যেমন মহররমের ৯ই ১০ই তারিখ দুই রোজা, ঐ মহররমের রোজাদ্বয়কে আইয়্যামে আশুরা বলে। মস্তাহাব রোজা, যেমন প্রত্যেক চন্দ্রের ১২। ১৪। ১৫ই তারিখের তিনটি রোজা,

জুমার রোজা, জেলহজ্জের ৯।।০ সাড়ে নয় রোজা, শাওয়ালের ছয় রোজা,শবে বরাতের রোজা ইত্যাদি, শুধু একদিবস রোজা না রাখিয়া দুই দিবস একাক্রমে রাখা শ্রেয়:।সোমবারের সঙ্গে মঙ্গলবার মিলাইবে, নতুবা রবিবারের সঙ্গে সোমবার মিলাইয়া রাখিবে।দুই ঈদের দিবস, জিলহজ্জ চাঁদের ১১। ১২। ১৩ই তারিখে মোট ৫ দিবস রোজা রাখা মকরুহ তাহরিমা, অনেকেই হারাম বলিয়াছেন। মকরুহ তনজিহ,যেমন শুধু মহরমের ১০ই তারিখে ১ একটি রোজা রাখা।শুধু শনিবারে রোজা রাখা যায় না।কারণ শনিবার য়িহুদি দিগের জুমা,রবিবার নছারা বা খৃষ্টানদিগের জুমা এই জন্য ঐ দুই দিবস রোজা রাখা না দুরস্ত, উহাদের সঙ্গে তুল্য না হওয়ার উদ্দেশ্য হইলে দুরস্ত হইবে।বৎসর ভরিয়া রোজা রাখিতে পারিবে।কিন্তু যে পাঁচ দিন নিষেধ তাহা বাদ দিয়া রোজা থাকিতে হইবে।স্বামীর অনুমতি ব্যতীত পত্নী নফল রোজা রাখা মকরুহ তনজিহি,চেহেরি খাওয়ার সময় রোজার নিয়ত করিলেই হইবে। চেহেরি খাইলেই নিয়ত হইয়া যাইবে।আর নিয়তের আবশ্যক হইবে না।এইরূপ মধ্যাহ্নে রোজার নিয়ত করিলে ও রোজা সিদ্ধ হইবে,সূর্য্য পশ্চিম দিক গেলে রোজার নিয়ত অসিদ্ধ।গৃহবাসী বা সুস্থ শরীরের লোক হইলে রমজান মাসে রমজানের রোজা ব্যততি অন্য কোন রোজার নযি়ত করলিওে রমজানরে রোজায় পরিণত হইবে।কিন্তু পীড়িত লোক বা প্রবাসী হইলে যেই রোজার নিয়ত করে সেই রোজাই দুরস্ত হইবে। রোজার নিয়ত করা ফরজ,রোজার নিয়ত মনে ২ করিলেও সিদ্ধ হইবে,কিন্তু শব্দ করিয়া নিয়ত করা ছুন্নত।প্রত্যেক দিন প্রত্যেক রোজার জন্য নিয়ত করিতে হইবে।নিয়ত এইরূপ করিতে হইবে,আমি রমজানের রোজা কি,নজরের রোজা,কাজা রোজা, কাফ্ফারা রোজা,নফল রোজা,ইত্যাদি রাখিতেছি, এইরূপ রোজার নাম স্মরণ করিয়া বলিলে সিদ্ধ হইবে। দিবসে কেহ রোজা ভাঙ্গিবার নিয়ত করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। নামাজ

পড়ার সময় মুখে শব্দ করিয়া বলিলে, আমি রোজা রাখিব অর্থাৎ রোজা নিয়ত শব্দ করিয়া বলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে। কিন্তু মনে ২ বলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে না। কোন কারণ বশত: শাবান মাসের ২৯শে তারিখে চন্দ্রোদয় না হইলে ঐ মাসের ৩০ তারিখকে সন্দেহ দিবস বলে। সন্দেহের দিবসে রমজানের নিয়তে অথবা কোন ওয়াজেবের নিয়তে রোজা থাকিলে মকরুহ তনজিহ হইবে এবং নিশ্চয় রমজানের রোজা রাখিলে, মকরুহ তাহরিমা হইবে। সন্দেহের দিবস কোন ওয়াজেব অথবা রমজানের রোজা থাকার পর জানিতে পারিল যে, ধার্য্য তারিখে শাবানের চন্দ্রই র্বত্তমান ছিল, এ স্থলে তাহার ওয়াজেব রোজা আদায় হইয়া যাইবে। কিন্তু ঐ সন্দেহের দিবস রমজানের রোজা রাখিলে এবং প্রকৃত পক্ষে চন্দ্রোদয় হইয়াছিল ইহার প্রমাণ হইলে, রমজানের রোজা সিদ্ধ হইবে। কাহারও রমজানের র্পূব্ব দিবস রোজা রাখার অভ্যাস আছে ঐ ব্যক্তি ঐ সন্দেহের দিবস রোজা থাকিলে তাহা সিদ্ধ হইবে। শাবানের ৩০ শে তারিখে নফল নিয়তে রোজা রাখা অভ্যাস্ত ব্যক্তি হউক বা না হউক দুরস্ত জানিবে। সারমর্ম এই শাবান চন্দ্রের ৩০শে তারিখে রমজানের চন্দ্রোদয় না হইলে নফল নিয়তে রোজা রাখা সিদ্ধ। যদি ঐ তারিখে রমজানের প্রথম তারিখ বলিয়া প্রমাণীত হয় ঐ নফল রোজা রমজানের রোজায় গণ্য হইবে। রমজানের রোজা ও র্নিদ্ধারিত ওয়াজেব, নজরের রোজার নিয়তের সময় এবং নফল রোজা নিয়তের সময় র্সূয্যাস্ত যাওয়ার পর হইতে পর দিবসে অর্দ্ধ দিবসের ১ ঘণ্টা র্পূব্ব র্পয্যন্ত সিদ্ধ, র্অদ্ধ দিবসে বা পরে নিয়ত করা অসিদ্ধ। অদ্য তারিখে আগামীকল্য রোজা রাখিবার নিয়ত করা অর্থাৎ সোমবারে র্সূয্যাস্তের র্পূব্বে কেহ বলিল, আমি আগামী কল্য মঙ্গলবারে রোজা রাখিব, এস্থলে উহার মঙ্গলবারের রোজা সিদ্ধ হইবে না। কারণ র্সূয্যাস্তের র্পূব্বে নিয়ত করা গেল। এইরূপ বৎসর ভরিয়া নিয়ত ছাড়া রোজা থাকিলে ও রোজা সিদ্ধ হইবে না। কাজা

রোজা ও কাফ্ফারার রোজা এবং অর্নিদ্ধারিত ওয়াজেব নজরের রোজার নিয়ত রাত্রিতে করিতে হইবে, এবং কোন্ রোজা রাখিবে তাহা ও র্নিদ্ধারিত করিতে হইবে। প্রাত:কাল হইতে কিছু না খাইয়া বা পান না করিয়া র্অদ্ধদিনের এক ঘন্টা র্পূব্বে রমজনের রোজার নিয়ত করিলে ও রোজা সিদ্ধ হইবে। রমজানের মাসে রমজানের রোজা ব্যতীত অন্য কোন রোজার নিয়ত করিলে ও রমজানের রোজা আদায় হইবে। গত বৎসরের রমজানের কাজা রোজা আদায় করিয়া দেওয়ার র্পূব্বে সামনের সনের রমজান উপস্থিত হইলে ঐ উপস্থিত রমজান গত হওয়ার পর কাজা রোজা রাখিতে হইবে। কারণ রমজান মাসে রমজানের রোজা ব্যতীত অন্যকোন রোজা থাকিতে পারিবে না।প্রত্যেক মুসলমান বয়:প্রাপ্ত বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর রমজানের রোজা ফরজ, কোন ওজর বশত: থাকিতে না পারিলে তাহার কাজা দেওয়া ফরজ।রাত্রিতে রোজার নিয়ত করিলে প্রাত:কাল না হওয়া র্পয্যন্ত খাইতে ও পান করিতে পারিবে। শাবান মাসের ২৯ তারিখে মেঘ হওয়ায় চন্দ্র দেখা না গেলে ৩০শে শাবানের র্অদ্ধ দিনের ১ এক ঘন্টা র্পূব্বে র্পয্যন্ত কিছু না খাইবে, ঐ সময় কোনস্থান হইতে চন্দ্রোদয়ের কোন খবর আসিলে নিয়ত করিলে রোজা সিদ্ধ হইবে।না আসিলে পরে খাইতে পারিবে প্রাত:কাল হয় নাই বলিয়া মনে করিয়া চেহেরি খাইলে এবং সূর্য্য অস্ত গিয়াছে বলিয়া মনে করিয়া এফতার করিল, পরে জানিতে পারিল যে ঐ সময় প্রাত:কাল হইয়াছে ও সূর্য্য অস্ত যায় নাই এই দুই অবস্থায় কাজা রাখিতে হইবে কাফ্ফারা দিতে হইবে না। প্রাত:কাল হওয়ার সন্দেহ হইলে সেই সময় কিছু না খাওয়া আফ্জল। কোন ব্যক্তি ২৯শে শাবান রমজান সরিফের চন্দ্র দেখা না যাওয়ায় ৩০শে শাবান কাজা বা নজরের রোজা গং থাকার পর খবর পাইল যে ঐ তারিখে রমজানের চন্দ্রোদয় হইয়াছে তখন ঐ রোজা রমজানের রোজায় পরিনত হইবে।

কাজা রোজা বা নজরের রোজা অন্য তারিখে পুনরায় রাখিতে হইবে। যদি কেহ বলে আগামী কল্য খাদ্যদ্রব্য প্রাপ্ত হইলে রোজা থাকিব নচেৎ থাকিব না তাহা হইলে ও রোজা সিদ্ধ হইবে না। কোন রমনী রত্রিতে হায়েজ থাকাতে রোজার নিয়ত করিলে প্রাত:কাল হওয়ার আগে হায়েজ হইতে পাক হইয়া গেলে তবে ঐ স্ত্রীলোকের রোজা সিদ্ধ হইবে। দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড আলমগিরী ১ম খণ্ড, বেহেস্তি জেওর ৩য় খণ্ড, মেকতাহুল জন্নত ইত্যাদি।

কাজা রোজার বিবরণ

হায়েজ বা নেফাছ অথবা পীড়া ইত্যাদি ওজরের দ্বারা রমজানের রোজা ছুটিয়া গেলে অবিলম্বে তাহার কাজা দিতে হইবে। গৌণ করিলে পাপী হইবে। রমজানের কাজা রোজা রাখিবার সময়, সন, দিন, তারিখ র্নিদ্দষ্টি করিয়া রোজা রাখার কোন প্রয়োজন নাই। মাত্র রমজানের কাজা রোজা রাখিতেছি বলিয়া মনে ২ বা শব্দ করিয়া নিয়ত করিলে সিদ্ধ হইবে। দুই বৎসর বা কয়েক বৎসরের রোজা কাজা হইলে তখন কোন্ রোজা কাজা করিতেছে তাহার সন র্নিদ্দষ্টি করিয়া নিয়ত করিতে হইবে। যেমন ১৩১৮। ১৩১৯। ১৩২০ মঘীর রোজা কাহারও কাজা বাকী থাকিলে, এইরূপ নিয়ত করিব,ে আমি ১৩১৮ মঘীর রোজা রাখিতেছি। কারণ সন র্নিদ্ধারিত না করিলে রোজা কোন সনের রাখিল তাহা জানা যাইবে না। কাজা রোজা রাখিলে রাত্রিতে নিয়ত করিতে হইবে। প্রাত:কাল হওয়ার পর নিয়ত করিলে কাজা রোজা সিদ্ধ হইবে না। ঐ রোজা নফল হইবে। কাজা রোজা পুনরায় রাত্রিতে নিয়ত করিয়া রাখিতে হইবে। কাফ্ফারার রোজার নিয়ত ও রাত্রিতে করিতে হইবে। ফজর হওয়ার পর নিয়ত করিলে কাফ্ফারার রোজা সিদ্ধ হইবে না। রমজানের কাজা রোজা এক সঙ্গে লাগালাগি ও রাখিতে পারে, নতুবা

এক একটা করিয়া জুদা ২ ও রাখিতে পারে। রমজানের রাত্রিতে রোজার নিয়ত করার পর দিবসে অজ্ঞান হইয়া তিন দিন থাকিলে দুই দিনের রোজা কাজা করিবে, কারণ ঐ দুই দিনের রোজার নিয়ত করা যায় নাই। রাত্রিতে রোজার নিয়ত করার পর সেই রাত্রে অজ্ঞান হইলে একটি রোজার কাজা দিতে হইবে না। বাকী যত রোজা অজ্ঞান অবস্থায় রাখিতে পারে নাই সেই সমস্ত রোজার কাজা দেওয়া ওয়াজেব হইব।ে কোন ব্যক্তি সমস্ত রমজান ভরিয়া অজ্ঞান (বেহুস) থাকিলে সমস্ত রোজার কাজা দিতে হইবে, এই কথা না বুঝিবে যে আমার রোজা মাফ হইয়া গিয়াছে। হাঁ যদি সমস্ত রমজান মাস ভরিয়া পাগল থাকে কোন এক দিন ও ভাল না হয় তবে ঐ রমজানের রোজার কাজা উহার উপর ওয়াজেব নহে। দদি কোন এক দিবস রমজান মাসের ভিতর ভাল হইয়া যায় এবং জ্ঞান ও ঠিক হয়, তবে ভাল হওয়ার দিবস হইতে রমজানের রোজা রাখা আরম্ভ করিবে এবং পাগল অবস্থায় যত রোজা রাখে নাই তত রোজার রোজা ও দিতে হইবে। পিচকারী দ্বারা বাহ্য করাইলে বা ডুষ দিলে সেই রোজার কাজা দিতে হইবে, এই ঔষধ মস্তকে কিম্বা উদরে গেলে উহার কাজা দিতে হইবে। কুলকুচ করিবার সময় রোজা স্মরণ থাকাতে অনিচ্ছায় গলার ভিতরে পানি গেলে, কেহ জবরদস্তি করিয়া এফতার করাইলে, কর্ণে কিম্বা নাকে ঔষধ ঢালিয়া দিলে, কাঙ্কর অথবা তত্তুল্য কোন দ্রব্য ভক্ষণ করিলে বা ঘৃণা জনক বা ঘৃণিত কোন বস্তু সেবন করিলে, পুরা মুখ করিয়া ইচ্ছানুযায়ী বমি করিলে, ভুলে কিছু খাইয়া পরে সন্দেহ করিল যে তাহার রোজার এফতার হইয়া গিয়াছে তখন ইচ্ছা করিয়া খাইলে, রমজান মাসে রোজার নিয়ত ও করেন নাই, না এফতারের নিয়ত, প্রাত:কালে কিছু খাওয়ার পরে রোজার নিয়ত করিলে, মেঘের পানি,

শিশির, বরফ, চক্ষের পানি শরীরের র্ঘম্ম কি তত্তুল্য কোন দ্রব্য তিন ফোঁটা গলার ভিতরে গেলে, এসমস্ত অবস্থায় রোজার কাজা দিতে হইবে।যদি কর্ণে তৈল ঢালিয়া দেয় সমস্ত এমামগণ রোজা ভাঙ্গিয়া যাইবে বলিয়া বলিয়াছেন এবং পানি যদি অনিচ্ছায় আপনে ২ কর্ণের ভিতরে প্রবেশ করে তাহাতে এমামগণ রোজা না ভাঙ্গিবে বলিয়া বলিয়াছেন।যদি কেহ ইচ্ছা করিয়া কর্ণের ভিতর প্রবেশ করিয়া দেয়,তাহাতে এমাম গণের মতভেদ আছে।কোন ব্যক্তি রোজার কথা স্মরণ না থাকিয়া ভুলে কিছু খাইলে বা পান করিলে নতুবা সঙ্গম করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না।কিন্তু স্মরণ হওয়ার পর ঐ কাজ করিলে কাজা ও কাফ্ফারা দিতে হইবে।দিবসে নিদ্রা যাওয়ায় স্বপ্ন দোষ হইলে,কোন রমণীর দিকে দৃষ্টি করায় এনজাল হইলে, তৈল মস্তকে দিলে ছুরমা লাগাইলে, সামান্য ২ বমি করিলে, নাপাকী অবস্থায় গোছল করার র্পূব্বে প্রভাত হইয়া গেলে পরে দিনে গোছল করিলে,এই সমস্ত অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হইবে না। মৃতের সহিত সঙ্গম করিলে অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকার সহিত সঙ্গম করিলে যদি বীর্য্যপাত হয়, রোজা কাজা করিতে হইবে।এই প্রকার চতুষ্পদ পশ্বাদির সহিত সঙ্গম করিলে কাজা দেওয়া ওয়াজেব হইবে।আমিনিকে নিদ্রা অবস্থায় তাহার স্বামী খলিল সঙ্গম করিয়া গেলে আমিনীর উপর কাজা ওয়াজেব হইবে।দোররুল মোখতার গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড, আলমগিরী ১ম খণ্ড, বেহেস্তি জেওর ৩য় খণ্ড, মেপ্তাহুল জন্নাত, কাজি খাঁ ১ম খণ্ড, ইত্যাদি।

এফতারের বিবরণ এবং কোন ২ কারণে রোজা ভাঙ্গিতে পারে তাহার বিবরণ

পবিত্র রমজানের রোজা থাকিয়া সূর্য্যাস্ত হওয়ার পর শরবৎ, পানি বা খোরমা দ্বারা রোজাভঙ্গ করাকে এফতার বলে।হালাল

বস্তু যেমন খেজুর, র্খোম্মা, আঙ্গুর, দুগ্ধ, শরবৎ ইত্যাদির দ্বারা, এফতার করা যায়। কিন্তু হেকিমী মতে আদ্রক ইত্যাদির দ্বারা এফতার করা উত্তম। কারণ আদ্রক বায়ু পিত্ত কফ্ বিনাশ করে। সূর্য্যাস্ত হওয়ার পর এবং র্পূব্বে দিকে আকাশ কাল বর্ণ হইলে এফতার করা উত্তম। নয় অবস্থায় রোজা ভাঙ্গিতে পারে। (১) পীড়িত ব্যক্তির পীড়া বৃদ্ধির ভয় হইলে। (২) গর্ভবতী। (৩) যাহারা আপন সন্তান ও অপরের সন্তানকে দুগ্ধ পান করায় এবং নিজের জানের ও সন্তানের জানের ভয় হয়। (৪) প্রবাসী তিন দিবা রাত্রির ব্যবধান দূরে গমন করিলে। (৫) অত্যন্ত বৃদ্ধ হইলে। (৬) কাহার ও দ্বারা অত্যাচার নিপীড়িত হইলে, যেমন কাটিয়া ফেলা বা শরীরের কোন অংশ কাটিয়া দেওয়া ইত্যাদি। (৭) মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা হইলে। (৮) অত্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা হইলে। (৯) সর্পদংশ করিলে যদি ঔষধ সেবন না করাইয়া মৃত্যুর ভয় হয়। তিন দিবা রাত্রির কম পথ গমন করিতে ইচ্ছা করিলে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। প্রবাসী গৃহে আসিলে, ঋতুবতী ও নেফাসিনী পাক হইলে, উন্মাদের জ্ঞান লাভ হইলে, পীড়িত ব্যক্তি আরোগ্য হইলে, অত্যাচারীর দৌরাত্ম্যে রোজা ভঙ্গ করিলে বা ভ্রমক্রমে এফতার করিলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, উক্ত দিবসের রোজা সকলের কাজা দিতে হইবে। এইরূপ নাবালেগ বালক বালেগ হইলে, বির্ধম্মী কাফের মুসলমান হইলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, কিন্তু উহার উক্ত দিবসের রোজার কাজা দিতে হইবে না। বালেগ ও মুসলমান হওয়ার পরের দিবস হইতে রোজা রাখার আদেশ করা যাইবে। নাবালেগ বয়স্ক বালক, বয়:প্রাপ্ত হইলে যদি সমস্ত মাস রোজা থাকিতে অক্ষম হয় তবে সাধ্যানুসারে যে কয়েক দিন রোজা থাকিতে পারে তাহাই থাকিবে। ১০ দশ বৎসর বয়স হইলে রোজা ও বস্তু যেমন খেজুর, র্খোম্মা, আঙ্গুর, দুগ্ধ, শরবৎ ইত্যাদির দ্বারা, এফতার করা যায়। কিন্তু হেকিমী মতে আদ্রক ইত্যাদির দ্বারা এফতার করা উত্তম। কারণ আদ্রক বায়ু পিত্ত কফ্ বিনাশ করে। সূর্য্যাস্ত হওয়ার পর এবং র্পূব্বে দিকে আকাশ কাল বর্ণ হইলে এফতার করা উত্তম। নয় অবস্থায় রোজা ভাঙ্গিতে পারে। (১) পীড়িত ব্যক্তির পীড়া বৃদ্ধির ভয় হইলে। (২) গর্ভবতী। (৩) যাহারা আপন সন্তান ও অপরের সন্তানকে দুগ্ধ পান করায় এবং নিজের জানের ও সন্তানের জানের ভয় হয়। (৪) প্রবাসী তিন দিবা রাত্রির ব্যবধান দূরে গমন করিলে। (৫) অত্যন্ত বৃদ্ধ হইলে। (৬) কাহার ও দ্বারা অত্যাচার নিপীড়িত হইলে, যেমন কাটিয়া ফেলা বা শরীরের কোন অংশ কাটিয়া দেওয়া ইত্যাদি। (৭) মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা হইলে। (৮) অত্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা হইলে। (৯) সর্পদংশ করিলে যদি ঔষধ সেবন না করাইয়া মৃত্যুর ভয় হয়। তিন দিবা রাত্রির কম পথ গমন করিতে ইচ্ছা করিলে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। প্রবাসী গৃহে আসিলে, ঋতুবতী ও নেফাসিনী পাক হইলে, উন্মাদের জ্ঞান লাভ হইলে, পীড়িত ব্যক্তি আরোগ্য হইলে, অত্যাচারীর দৌরাত্ম্যে রোজা ভঙ্গ করিলে বা ভ্রমক্রমে এফতার করিলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, উক্ত দিবসের রোজা সকলের কাজা দিতে হইবে। এইরূপ নাবালেগ বালক বালেগ হইলে, বির্ধম্মী কাফের মুসলমান হইলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, কিন্তু উহার উক্ত দিবসের রোজার কাজা দিতে হইবে না। বালেগ ও মুসলমান হওয়ার পরের দিবস হইতে রোজা রাখার আদেশ করা যাইবে। নাবালেগ বয়স্ক বালক, বয়:প্রাপ্ত হইলে যদি সমস্ত মাস রোজা থাকিতে অক্ষম হয় তবে সাধ্যানুসারে যে কয়েক দিন রোজা থাকিতে পারে তাহাই থাকিবে। ১০ দশ বৎসর বয়স হইলে রোজা ও বস্তু যেমন খেজুর, র্খোম্মা, আঙ্গুর, দুগ্ধ, শরবৎ ইত্যাদির দ্বারা, এফতার করা যায়। কিন্তু হেকিমী মতে আদ্রক ইত্যাদির দ্বারা এফতার করা উত্তম। কারণ আদ্রক বায়ু পিত্ত কফ্ বিনাশ করে। সূর্য্যাস্ত হওয়ার পর এবং র্পূব্বে দিকে আকাশ কাল বর্ণ হইলে এফতার করা উত্তম। নয় অবস্থায় রোজা ভাঙ্গিতে পারে। (১) পীড়িত ব্যক্তির পীড়া বৃদ্ধির ভয় হইলে। (২) গর্ভবতী। (৩) যাহারা আপন সন্তান ও অপরের সন্তানকে দুগ্ধ পান করায় এবং নিজের জানের ও সন্তানের জানের ভয় হয়। (৪) প্রবাসী তিন দিবা রাত্রির ব্যবধান দূরে গমন করিলে। (৫) অত্যন্ত বৃদ্ধ হইলে। (৬) কাহার ও দ্বারা অত্যাচার নিপীড়িত হইলে, যেমন কাটিয়া ফেলা বা শরীরের কোন অংশ কাটিয়া দেওয়া ইত্যাদি। (৭) মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা হইলে। (৮) অত্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা হইলে। (৯) সর্পদংশ করিলে যদি ঔষধ সেবন না করাইয়া মৃত্যুর ভয় হয়। তিন দিবা রাত্রির কম পথ গমন করিতে ইচ্ছা করিলে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। প্রবাসী গৃহে আসিলে, ঋতুবতী ও নেফাসিনী পাক হইলে, উন্মাদের জ্ঞান লাভ হইলে, পীড়িত ব্যক্তি আরোগ্য হইলে, অত্যাচারীর দৌরাত্ম্যে রোজা ভঙ্গ করিলে বা ভ্রমক্রমে এফতার করিলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, উক্ত দিবসের রোজা সকলের কাজা দিতে হইবে। এইরূপ নাবালেগ বালক বালেগ হইলে, বির্ধম্মী কাফের মুসলমান হইলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, কিন্তু উহার উক্ত দিবসের রোজার কাজা দিতে হইবে না। বালেগ ও মুসলমান হওয়ার পরের দিবস হইতে রোজা রাখার আদেশ করা যাইবে। নাবালেগ বয়স্ক বালক, বয়:প্রাপ্ত হইলে যদি সমস্ত মাস রোজা থাকিতে অক্ষম হয় তবে সাধ্যানুসারে যে কয়েক দিন রোজা থাকিতে পারে তাহাই থাকিবে। ১০ দশ বৎসর বয়স হইলে রোজা ও বস্তু যেমন খেজুর, র্খোম্মা, আঙ্গুর, দুগ্ধ, শরবৎ ইত্যাদির দ্বারা, এফতার করা যায়। কিন্তু হেকিমী মতে আদ্রক ইত্যাদির দ্বারা এফতার করা উত্তম। কারণ আদ্রক বায়ু পিত্ত কফ্ বিনাশ করে। সূর্য্যাস্ত হওয়ার পর এবং র্পূব্বে দিকে আকাশ কাল বর্ণ হইলে এফতার করা উত্তম। নয় অবস্থায় রোজা ভাঙ্গিতে পারে। (১) পীড়িত ব্যক্তির পীড়া বৃদ্ধির ভয় হইলে। (২) গর্ভবতী। (৩) যাহারা আপন সন্তান ও অপরের সন্তানকে দুগ্ধ পান করায় এবং নিজের জানের ও সন্তানের জানের ভয় হয়। (৪) প্রবাসী তিন দিবা রাত্রির ব্যবধান দূরে গমন করিলে। (৫) অত্যন্ত বৃদ্ধ হইলে। (৬) কাহার ও দ্বারা অত্যাচার নিপীড়িত হইলে, যেমন কাটিয়া ফেলা বা শরীরের কোন অংশ কাটিয়া দেওয়া ইত্যাদি। (৭) মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা হইলে। (৮) অত্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা হইলে। (৯) সর্পদংশ করিলে যদি ঔষধ সেবন না করাইয়া মৃত্যুর ভয় হয়। তিন দিবা রাত্রির কম পথ গমন করিতে ইচ্ছা করিলে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। প্রবাসী গৃহে আসিলে, ঋতুবতী ও নেফাসিনী পাক হইলে, উন্মাদের জ্ঞান লাভ হইলে, পীড়িত ব্যক্তি আরোগ্য হইলে, অত্যাচারীর দৌরাত্ম্যে রোজা ভঙ্গ করিলে বা ভ্রমক্রমে এফতার করিলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, উক্ত দিবসের রোজা সকলের কাজা দিতে হইবে। এইরূপ নাবালেগ বালক বালেগ হইলে, বির্ধম্মী কাফের মুসলমান হইলে বাকী দিবস আহার না করা ওয়াজেব, কিন্তু উহার উক্ত দিবসের রোজার কাজা দিতে হইবে না। বালেগ ও মুসলমান হওয়ার পরের দিবস হইতে রোজা রাখার আদেশ করা যাইবে। নাবালেগ বয়স্ক বালক, বয়:প্রাপ্ত হইলে যদি সমস্ত মাস রোজা থাকিতে অক্ষম হয় তবে সাধ্যানুসারে যে কয়েক দিন রোজা থাকিতে পারে তাহাই থাকিবে। ১০ দশ বৎসর বয়স হইলে রোজা ও

নামাজ পড়ার জন্য শাসন করা যাইবে। কোন ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখিলে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িতে পারে না, রোজা না রাখিলে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িতে সমর্থ হয়। তবে ঐ ব্যক্তির রোজা রাখিতে হইবে এবং বসিয়া নামাজ পড়িবে। কোন ব্যক্তির কোন ২ দিন পীড়া আসিয়া উপস্থিত হয়, এই অবস্থায় একদিন পীড়ার দিবস বিবেচনা করিয়া ঐ দিবসে রোজা এফতার করিল এবং ঐ দিবস পীড়া ও আসিল না ঐ ব্যক্তির উপর কাফ্ফারা দিতে হইবে। এইরূপ কোন রমণী হায়েজের দিবস মনে করিয়া রোজা ভঙ্গ করিল কিন্তু ঐ দিবস উহার হায়েজের রক্ত দেখা গেল না, ঐ রমণীর উপর কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে। পীড়িত অবস্থায় নিজের খেয়ালে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না, কিন্তু মুসলমান দিনদার ডাক্তার যদি বলে, তুমি এই অবস্থায় রোজা থাকিলে তোমার অনিষ্ট হইবে, তবে রোজা না থাকিতে পারিবে। যদি কবিরাজ বা ডাক্তার কাফের হয় নতুবা সরিয়তের কোন ধার না ধারিলে তাহারার কথা মোতবর হইবে না এবং রোজাও না ভাঙ্গিবে। ডাক্তার কিছু বলে নাই, নিজে পরীক্ষিত লোক হইলে ও কোন কারণবশত: জানা গেল যে এবং অন্তরে সাক্ষ্য দিতেছে যে এই অবস্থায় রোজা অনিষ্ট করিবে, তবে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে। যদি নিজে তজরবাকার ব্যক্তি না হয় এবং পীড়ার কোন অবস্থা জানিতে ও না পারে, নিজের খেয়াল মতে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না। মুসলমান দিনদার ডাক্তারের কথা ছাড়া এবং নিজে নাতজরবাকার হইলে নিজের খেয়াল মতে রোজা ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা দিতে হইবে এবং রোজা না রাখিলে পাতকী হইবে। পীড়িত আরোগ্য হওয়ার পর শরীরের কমজুরী বা শক্তিহীনতা বাকী থাকিলে এবং রোজা রাখিলে পীড়া বৃদ্ধি হওয়ার ভয় হইলে রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে। প্রবাসী প্রবাসে

রোজার দ্বারা কোন কষ্ট না পাইলে রোজা রাখা ভাল। পীড়িত ব্যক্তি পীড়িত অবস্থায় এবং প্রবাসী বাড়ীতে উপস্থিত হওয়ার র্পূব্বে প্রবাসে মৃত্যু হইলে ঐ সময় যত রোজা রাখে নাই তাহার ধর্ত্তব্য হইবে না। পীড়ার গতীকে ১০ দশটি রোজা ভাঙ্গিল, তাহার পর ৫ পাঁচ দিন সুস্থ রহিল, সুস্থ দিবসের ৫টী রোজা কাজা না রাখিয়া মৃত্যু হইলে ঐ পাঁচটীর জন্য আখেরাতে ধর্ত্তব্য হইবে, পীড়িত ৫ পাঁচ দিবসের রোজা মাফ জানিবে। ১০ দিন সুস্থ থাকিয়া কাজা রোজা আদায় না করিলে ১০ দশ রোজার জন্য আখেরতে ধর্ত্তব্য হইবে। এইরূপ প্রবাসী বাড়ীতে আসিলে কাজা রোজা আদায় করার র্পূব্বে মৃত্যু হইলে যতদিন বাড়ীতে ছিল তত দিনের জন্য আখেরতে ধর্ত্তব্য হইবে। বাড়ীতে যত দিন ছিল, তাহার অধিক রোজা ভাঙ্গিলে বেশী রোজার জন্য ধর্ত্তব্য হইবে না। উপরোক্ত অবস্থায় মৃত ব্যক্তি রোজার ফিদিয়া দেওয়ার জন্য ওয়ারিশানকে মৃত্যুকালে অছিয়ত করা কর্ত্তব্য। হায়েজ ও নেফাসিনী রমণী রাত্রিতে পাক হইলে প্রাত:কালে রোজা রাখিতে হইবে রজনীতে অবগাহন না করিলে তবেও রোজা রাখিবে এবং ফজরে গোছল করিবে। প্রাত:কাল হওয়ার পর পাক হইলে রোজা নিয়ত করা অসিদ্ধ। কিন্তু কিছু খাইতে ও পান করিতে পারিবে না, সমস্ত দিবস রোজাদারের মত থাকিতে হইবে। কোন ব্যক্তি রাত্রি আছে বলিয়া চেহেরী খাইলে নতুবা সূর্য্য অস্ত হওয়ার বিবেচনায় এফতার করিলে, ফকিহ জায়লয়ী (র:) এই মছআলাটির আটারটি র্শত্ত বর্ণনা করিয়াছেন। তন্মধ্যে দশ র্শত্তরে কাজা ও কাফ্ফারা কিছুই করিতে হইবে না। বাকী আট র্শত্তরে মধ্যে চারি র্শত্তরে কাজা রোজা রাখিতে হইবে। চারি র্শত্তরে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়েই করিতে হইবে। ঐ আটার র্শত্ত এই: (১) চেহেরী খাওয়ার পর অল্প রাত্রি (২) কি প্রভাত কিছুই বিবেচনা করিতে না পারিলে।

এই দুই অবস্থায় কিছুই করিতে হইবে না। (৩) অধিক রাত্রি বিবেচনায় চেহেরী খাইয়াছিল পরে প্রভাত হইয়াছে বিবেচনা করিলে, উহার কাজা রোজা থাকিতে হইবে। (৪) অধিক রাত্রি আছে বলিয়া সন্দেহ করিয়া চেহেরী খাইলে পরে অধিক রাত্রি আছে বিবেচনা করিলে কিছুই করিতে হইবে না। (৫) অধিক রাত্রি আছে বলিয়া সন্দিহান হইয়া খাইলে পর অধিক রাত্রি আছে বিবেচনা করিলে কিছুই করিতে হইবে না। (৬) অধিক রাত্রি বিবেচনায় খাইলে এবং খাইতে ২ প্রভাত হইলে তবে রোজা কাজা করিতে হইবে। (৭) প্রাত:কাল হয় নাই বলিয়া খাইলে পরে প্রাত:কাল বিবেচনা করিলে কাজা রাখিতে হইবে। (৮) প্রভাত হইয়াছে বলিয়া খাইলে পরে দেখা গেল যে চন্দ্রের রশ্মি সূর্য্যরে ন্যায় দেখাইতেেছ তবে কিছুই করিতে হইবে না। (৯) সূর্য্যােদয় হইয়াছে বলিয়া খাইলে পর দেখা গেল যে চন্দ্রের রশ্মি সূর্য্যরে ন্যায় দেখাইয়াছে তবে কিছুই করিতে হইবে না। এই নয় অবস্থা রোজার ১ম আরম্ভ দিয়া হইল। (১) কোন ব্যক্তি সূর্য্যাস্ত হওয়ার বোধে আহার করিলে পর জানা গেল যে সূর্য্য অস্ত হয় নাই এস্থলে কাজা রোজা রাখিবে। (২) সূর্য্যাস্ত হওয়ার বিবেচনায় পান, আহার, করিলে পর দেখা গেলে প্রকৃত প্রস্তাবে সূর্য্যাস্ত হইয়াছে, তবে কিছুই করিতে হইবে না। (৩) সূর্য্যাস্ত হইয়াছে বিবেচনায় পান, আহার, করার পর অনুসন্ধানে জানা গেল যে সূর্য্যাস্ত হইয়াছে কিনা সন্দেহস্থল এইরূপ ক্ষেত্রে কিছুই করিতে হইবে না। (৪) সূর্য্যাস্ত হইয়াছে বিবেচনায় এফতার করিলে পর সূর্য্যাস্ত হইলে এস্থলে দুইটি মত অবলম্বন করিয়াছে। (৫) এফতারের পর যদি সূর্য্যাস্ত হয় তবে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়ই করিতে হইবে। (৬) যদি নিশ্চয়ই সূর্য্যাস্ত হইয়াছে বলিয়া পান আহার করিলে কিছুই করিতে হইবে না। (৭) সূর্য্যাস্ত না হওয়া

বিবেচনায় আহার করিলে উভয় কাজা ও কাফ্ফারা দিতে হইবে। (৮) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকিলে সূর্য্যাস্ত হওয়া বিবেচনায় আহার করিলে পরে সূর্য্য উদয় হইলে কাজা ও কাফ্ফারা দিতে হইবে। (৯) সূর্য্যাস্ত হওয়া বিবেচনায় আহার করিলে কিছুই হইবে না। এই নয় র্শত্ত রোজার শেষ দিক দিয়া হইল। কাজি খাঁ ১ম খণ্ড গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, বেহেস্তি জেওর ৩য় খন্ড দোররুল মোখতার বাহারুল উলুম ৩য় খণ্ড ইত্যাদি।

নজরের বিবরণ

কোন ব্যক্তি রোজার নজর করলিে তাহা পূর্ণ করা ওয়াজেব। ঐ রোজা না রাখিলে গোনাহগার হইবে, নজর দুই প্রকার (১) নির্ধারিত নজর। (২) অর্নিদ্ধারিত নজর। র্নিদ্ধারিত নজর যেমন কোন ব্যক্তি বলিল, আয় খোদাতায়ালা আমার ফলানা মকছুদ অদ্য পুরা হইয়া গেলে আমি আগামী কল্য রোজা রাখিব, অর্থাৎ দিন ও তারিখ র্নিদ্ধারিত করিয়া বলা; দিন ও তারিখ র্নিদ্ধারিত না করাকে অর্নিদ্ধারিত নজর বলে, যেমন আমার ফলানা মকছুদ পূর্ণ হইলে আমি এক দিবস রোজা রাখিব, কোন দিবস রোজা রাখিব তাহা র্নিদ্ধারিত নাই। র্নিদ্ধারিত নজরের রোজার নিয়ত রাত্রি হইতে র্অদ্ধ দিনের ১ ঘণ্টা আগে র্পয্যন্ত করা দুরস্ত আছে। অর্নিদ্ধারিত নজরের রোজার নিয়ত রাত্রিতে করা র্শত্ত জানিবে। যদি প্রাত:কাল হওয়ার পর রোজার নিয়ত করে নজরের রোজা আদায় হইবে না, বরং নফল হইবে, নজরের রোজা পুনরায় রাত্রিতে নিয়ত করিয়া রাখিতে হইবে। কোন ব্যক্তি শুক্রবারে রোজা রাখিবার নজর (মানসী) করিল, যখন শুক্রবার আসিল, একমাত্র বলিল, আমি অদ্য রোজা রাখিলাম, আর কিছুই বলিল না নতুবা নফল রোজার নিয়ত করিল তবুও নজরের রোজা আদায় হইয়া যাইবে। হাঁ যদি

ঐ শুক্রবারে নজরের রোজার কথা ভুলিয়া কাজা রোজা রাখে নতুবা নজরের রোজা স্মরণ থাকা সত্বওে ইচ্ছা করিয়া কাজা রোজা রাখিলে কাজা রোজা আদায় হইবে। নজরের রোজা পুনরায় রাখিতে হইবে। নজর গৃহিত হওয়া সম্বন্দে পাঁচ র্শত্ত আছে যাহাতে এক র্শত্ত পাওয়া যাইবে নজর গৃহিত হইবে। ১ম র্শত্ত এই যেই বস্তু নজর করিবে উহাতে ফরজ পাওয়া যাইতে হইবে, যেমন, কোন ব্যক্তি বলিল আমার পীড়িত পুত্রকে খোদায় আরোগ্য করিলে একটি গরু বা মহিষ নতুবা ছাগল জবেহ করিয়া ফকির, মিছকিনকে দান (ছদ্কা) করিব, আরোগ্য হইলে, জবেহ করিয়া ফকির মিছকিনকে দান করা ওয়াজেব হইবে। কারণ গো, মহিষ ইত্যাদিতে জকাত ফরজ (২) নজরীয় বস্তু এবাদতে মকছুদা হওয়া, যেমন, রোজা, নামাজ ইত্যাদি (৩) নজর করা বস্তু খোদার গোনাহর র্কম্ম না হওয়া, যেমন কোন ব্যক্তি ঈদের দিবস নতুবা জিলহজ্জ চাঁদের ১০। ১১। ১২। ১৩ তারিখে রোজার নজর করলিে নজর গৃহিত হইবে, কিন্তু ঐ পাঁচ দিবস রোজা রাখা হারাম, তাই অন্য দিবসে রোজা রাখা ওয়াজেব হইবে। কারণ ঐ পাঁচ দিবস খোদার জেয়াফত, রোজা রাখিলে খোদার জেয়াফত হইতে বিরত বা ফিরিয়া থাকা হইল, কিন্তু রোজা খোদ ভাল কাজ বিরত থাকার দরুন হারাম হইতেছে আবার ঐ দিবস নজরের রোজা রাখিলে আদায় হইবে, এবং গুনাহগার হইবে। কাহাকেও হত্যা করার জন্য নজর (মানসীক) করিলে নজর গৃহিত হইবে না। কারণ উহা খোদ পাপ ও গোনাহর র্কম্ম। (৪) নজরকারীর উপর নজর করার র্পূব্বে নজর করা বস্তু ওয়াজেব না হওয়া, যেমন কোন জকাত দাতা ব্যক্তি বলিল, আমি রোগ হইতে আরোগ্য হইলে আমার উপর যে জকাত ওয়াজেব আছে তাহা আদায় করিব, তাহাতে নজর গৃহিত হইবে না। কারণ তাহার উপর খোদার র্পূব্ব হইতে ওয়াজেব

করিয়াছি। (৫) নজর করা বস্তুর নিজে মালিক হওয়া এবং মালীকিয়ত হইতে অধিক বস্তুর নজর না করা ও অপরের দ্রব্য না হওয়া যেমন কোন ব্যক্তি বলিল আমার ফলানা মোকদ্দমায় জয়লাভ হইলে আমি ২০০০ হাজার টাকা ফকির, মিছকিনকে দান করিব। নজরকারী ৪০০ চারি শত টাকার অধিক মালিক হইবে না, মোকদ্দমায় জয়লাভ করিলে ৪০০ শত টাকার উপর নজর গৃহিত হইবে, অর্থাৎ ৪০০্ চারিশত টাকা ফকির মিছকিনকে দান করা ওয়াজেব হইবে। বাজ কেতাবের মধ্যে আর একটি র্শত্ত বৃদ্ধি করিয়াছে র্শত্তটা এই নজরের দ্রব্য অসম্ভব বস্তু না হওয়া। যেমন কোন ব্যক্তি নজর করিলে, আমি গত কল্য রোজা রাখিব তাহাতে নজর গৃহিত হইবে না। কারণ গতকল্য রোজা রাখা অসম্ভব। কোন ব্যক্তি নিজ পুত্রকে জবেহ করিবার জন্য নজর করিলে তাহার বদলে একটি ছাগল জবেহ করিলে নজর আদায় হইবে। মক্কা শরিফের ফকিরের জন্য নজর করিলে অন্য জায়গার ফকিরকে দিলে নজর আদায় হইবে। কিন্তু মক্কার মসজিদে হারামের বা মসজিদে নববী অথবা মসজিদে আকছা এই তিন মসজিদের জন্য নজর করেিল পূর্ণ করা ওয়াজেব হইবে। অন্যান্য মসজিদের জন্য নজর করিলে সেই দ্রব্য ফকির মিছকিনকে দেওয়া ওয়াজেব। নজরের দ্রব্য মালদারের খাওয়া হারাম এবং নজর আদায় হইবে না। নজরকারী ও তাহার আহলে বয়েত নজরের দ্রব্য খাইতে পারিবে না। নজরের সিরিনী বা অন্যান্য বস্তু ফকির ও মিছকিন ব্যতীত মালদারের খাওয়া হারাম, মালদার বা ছৈয়দ বংশ খাইলে নজর পুনরায় আদায় করিতে হইবে। এইরূপ নামাজের জন্য নজর করিলে আদায় করা ওয়াজেব হইবে। যেমন কেহ বলিল, আমি মুচিবৎ হইতে মুক্ত হইলে দুই রকাত নামাজ পড়িব, মুক্ত হওয়ার পর দুই রকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজেব হইবে। নজর দুই প্রকার

(১) নজরে স্বর্ত্বীয়া মোয়াল্লক (২) বেগর স্বত্বীয়া (মতলক) কোন স্বর্ত্বের সহিত সংলগ্ন করা গেলে উহাকে নজরে স্বর্তীয়া বলে, যেমন জায়েদ বলিল, আমি যদি পীড়া হইতে আরোগ্য হই, একটি ছাগল জবেহ করিয়া ফকিরকে দান করিব। ছাগল জবেহ করিয়া ফকিরকে দান করার স্বর্ত্বটা আরোগ্যের সহিত সংলগ্ন করিল। কোন স্বর্ত্বের সহিত স্বর্ত্ব করা না গেলে উহাকে বেগর স্বর্ত্বীয়া নজর বলে। যেমন রহিম বলিল, আমি খোদার জন্য এক মাস রোজা রাখিব নতুবা হজ্জ করিব বা দান করিব ইত্যাদি। দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার ২য় খণ্ড, আলমগিরী ১ম খণ্ড, বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি নজর করিল যে আমি শুক্রবারে নতুবা মহরমের ১ম তারিখ হইতে ১০ দশ তারিখ র্পয্যন্ত রোজা রাখিব তবে উহার উপর শুক্রবারে বা মহরমের ১-১০ তারিখে রোজা ওয়াজেব নহে। অন্য দিবসেও অন্য মাসে আদায় করা দুরস্ত আছে।

রোজা ভঙ্গ হওয়ার বিবরণ

রোজাদার ভুলিয়া কিছু খাইলে বা পান করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। ফরজ হউক বা নফল হউক তাহাতে কোন প্রভেদ নাই। এইরূপ ভুলিয়া সঙ্গম করিলেও রোজা ভঙ্গ হইবে না। ইচ্ছা করিয়া ধুম ও বালু উদরে প্রবেশ করাইলে রোজা ভঙ্গ হইবে। এইরূপ লোবান জালাইয়া নাকে ঘ্রান লইলে রোজা ভঙ্গ হইবে। থামাক পান করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। কিন্তু আতর এবং গোলাপ ফুলের ঘ্রান লইলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। দন্তের মধ্যে ছোলা অপেক্ষা ক্ষুদ্র, কোন বস্তু থাকিলে ঐ বস্তু গিলিয়া ফেলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। কিন্তু হস্তে লওয়ার পর গিলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে, এবং কাজা দিতে হইবে। ছোলার তুল্য হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে ও কাজা দিতে হইবে। থুক গিলিলে রোজা ভঙ্গ হইবেনা।

পান খাওয়ার পর ভাল মতে কুলকুচ ও গরগরা করার পর থুকের লালবর্ণ বাকী থাকিলে তাহাতে রোজার কোন ক্ষতি হইবে না। কোন ব্যক্তি পান চিবাইয়া ঘুমাইলে প্রাত:কাল হওয়ার পর চক্ষু খুলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে এবং কাজা দিতে হইবে, কাফ্ফারা দিতে হইবে না। কুল কুচ করিবার সময় গলায় পানি প্রবেশ করিলে এবং রোজা স্মরণ থাকিলে রোজা ভঙ্গ হইবে, কাজা দিবে কাফ্ফারা ওয়াজেব নহে। কুলকুচ করার পর থুকের সঙ্গে যেই পানি মিশ্রিত থাকে তাহা গিলিয়া ফেলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। দন্ত হইতে রক্ত বাহির হইয়া গলায় প্রবেশ করিলে থুকের অংশ অধিক হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। রক্তের ভাগ সমান বা অধিক হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে। কোন রমণীকে নিদ্রাবস্থায় নতুবা অজ্ঞান অবস্থায় তাহার স্বামী বা অপরে তাহার সঙ্গে সঙ্গম করিয়া গেলে ঐ রমণীর রোজা ভঙ্গ হইবে কাজা দিবে, কিন্তু ঐ পুরুষের উপর কাজা ও কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে। কোন পুরুষ, রমণীর যোনীদ্বার বা, গুহ্যদ্বার দিয়া সঙ্গম করিলে ঐ রমণীর উপর জোর না চালাইলে উভয়ের উপর কাজা ও কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে এন্জাল হউক বা না হউক। কোন ব্যক্তি, রমণী চুম্বন করিলে এনজাল হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে। ইক্ষু চুষিলে গলার ভিতরে জল পৌঁছিলে রোজা ভঙ্গ হইবে এবং ঐ ব্যক্তির উপর কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে। থুক ফেলার পর থুকের মধ্যে চুরমার নেসানা ও রং দেখা গেলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। বর্ষার জল ও বরফ গলার ভিতর প্রবেশ করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। চক্ষুতে ফোঁটা ২ ঔষধ দিলে রোজা ভঙ্গ হইবে না। যদি বমন আসিয়া বাহির হইয়া যায় ও গলায় ফিরিয়া না যায় মুখ পুরা হউক বা না হউক রোজা ভঙ্গ হইবে না। কিন্তু ইচ্ছা করিয়া পুরামুখ বমন করিলে নতুবা বমন করিয়া উহা গিলিয়া ফেলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। সামান্য বমন আসিয়া পুনরায় আপনে ২ গলার ভিতরে ফিরিয়া গেলে তাহাতে রোজা ভঙ্গ হইবে না। কিন্তু ইচ্ছা

করিয়া উহা গিলিয়া ফেলিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। কোন রমণী বা ধাত্রী কারণবশত: যোনীদ্বারে ভিজা অঙ্গুলি ঢুকাইয়া দিলে রোজা ভঙ্গ হইবে, উহার কাজা ওয়াজেব হইবে। কাফ্ফারা ওয়াজেব নহে। কোন রোজাদারের পায়খানার সময় গুহ্যের দ্বারকে একখানা রুমাল দিয়া পানি দ্বারা ধৌত করার পর দাঁড়াইবার র্পূব্বে মুছিয়া লইবে নতুবা ঐ পানি উদরে প্রবেশ করিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। এই জন্য ফকিহগণ বলেন, রোজাদারে পানি দিয়া এস্তেনজা করিবার সময় শ্বাস বন্ধ করিবে। রোজাদারে পানি দিয়া এস্তেনজা করিবার সময় এমনভাবে এস্তেনজা করিয়াছে যে পানি পিচকারী দেওয়ার স্থান র্পয্যন্ত পৌঁছিলে রোজা ভঙ্গ হইবে। কোন ব্যক্তি তাজা বাদাম গিলিয়া ফেলিলে কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে। কোন ব্যক্তি প্রাত:কাল হওয়ার র্পূব্বে ইচ্ছা করিয়া সঙ্গম করিল, পরে প্রভাত হওয়ার ভয়ে প্রভাত হইতইে তৎক্ষণাৎ লঙ্গি বাহরি করলিে প্রভাত হওয়ার পর শুক্র নির্গত হইলে উহার রোজা ভঙ্গ হইবে না, কারণ উহা স্বপ্ন দোষের ন্যায়। যদি ক্ষণকাল ঐ সময় থামিয়া থাকার পর শুক্র নির্গত হইলে বা নিজ অঙ্গ না নড়িলে রোজা ভঙ্গ হইবে এবং কাজা ওয়াজেব হইবে। নিজ অঙ্গ নাড়িলে কাজা ও কাফ্ফারা ওয়াজেব হইবে। এইরূপ রমণী স্পর্শ করা মাত্র শুক্র নির্গত হইলে কি হস্তমৈথুন করিলে বা পুরুষে ২ নতুবা স্ত্রীতে ২ সঙ্গম দ্বারা বীর্য্যপাত হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে এবং কাজা ওয়াজেব হইবে। খোলাছা ১ম খণ্ড, আলমগিরী ১ম খণ্ড গায়তুল আওতার ১ম খণ্ড মেপ্তাহুল জন্নত দোররুল মোখতার ইত্যাদি।

রোজার মকরুহের বিবরণ

রোজাদারে কোন বস্তুর স্বাদ (মজা) গ্রহণ করা অনাবশ্যক চর্ব্বন করা কিন্তু শিশু ছেলেকে কোন বস্তু চর্ব্বন করা ব্যতীত খাওয়াতে না পারিলে তবে মকরুহ হইবে না। চুম্বন করা সঙ্গমের আশঙ্কা না হইলে মকরুহ হইবে। ছুরমা দেওয়া, গোঁপের মধ্যে তৈল দেওয়া জোহরের

পরে হইলে ও মকরুহ হইবে না। দাঁতুনী করা জোহরের পর হইলে ও মকরুহ হইবে না। স্বামী খারাব মেজাজ হইলে এবং তরকারীর লবণের বেশীর জন্য স্ত্রীর সহিত কলহ করিলে জিহবায় দিয়া লবনরে আন্দাজ নির্ণয় করা মকরুহ নহে। রোজা দার দুই রোজার মধ্য দিয়া এফতার না করা মকরুহ। রোজা রাখিয়া একবারে নি:শব্দে থাকা মকরুহ। কারণ উহা অগ্নি পুজকের কাজ। অজু ছাড়া কুল্লি করা মকরুহ। যেই প্রবাসী রোজা রাখিলে অনিষ্ট না হয় রোজা রাখা মস্তাহাব, অনিষ্ট করিলে এফতার করা ওয়াজেব। দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, মেফতাহুল জন্নত ইত্যাদি।

নফল রোজার বিবরণ

নফল রোজার নিয়ত যদি এইরূপ করে, আমি নফল রোজা রাখিতেছি নতুবা আমি রোজা রাখিতেছি দুরস্ত হইবে। অর্দ্ধ দিনের ১ এক ঘণ্টা র্পূব্ব র্পয্যন্ত নিয়ত করিতে পারে; দিনের ১০টা র্পয্যন্ত কিছু নাখাইয়া পরে রোজার নিয়ত করিলে সিদ্ধ হইবে। রমজান শরীফ ও ঈদেল ফেতর এবং জিলহজ্জের ১০। ১১। ১২। ১৩ তারিখ বাদ বৎসরের সমস্ত দিন নফল রোজা রাখিতে পারে। রহিম মানস করিল, আমি এক বৎসর কাল পুরা রোজা রাখিব তাহাতে একদিন ও বাদ দিব না, তবু ও ঐ পাঁচদিন বাদ দিয়া রোজা রাখিয়া পরে অন্য পাঁচদিন, রোজা রাখিয়া পূর্ণ করিতে হইবে। নফল রোজার নিয়ত বরিলে ওয়াজেব্ হইবে। প্রভাতকালে নফল রোজার নিয়ত করিলে পরে ভঙ্গ করিলে ওয়াজেব। রাত্রিতে নফল রোজার নিয়ত করিল, আমি আগামী কল্য রোজা রাখিব, অনন্তর প্রভাতের র্পূব্বে নিয়ত বদলাইয়া রোজা রাখিল না তাহাতে কাজা ওয়াজেব নহে। কাহারও বাড়ীতে অতিথি হইয়া আহার না করিলে নতুবা দাওত কারীর বাড়ীতে পান ও আহার না করিলে বাড়ী ওয়ালার মন ভঙ্গ হইবে সেই সময় নফল রোজা ভঙ্গ করা দুরস্ত

আছ।ে এবং অতথিরি জন্য বাড়ী ওয়ালার নফল রোজা ভাঙ্গতিে পারবি।ে পরে কাজা দওেয়া ওয়াজবে হইব।ে ঈদরে দবিসে নফল রোজার নয়িত করয়িা নফল রোজা রাখলিে তবুও ভঙ্গ করতিে হইব।ে এবং উহার কাজা দওেয়া ওয়াজব্ েহইবে না। মহরম মাসরে ১০দশ তারখিরে রোজা মস্তাহাব। হজরত মোহাম্মদ মস্তফা (দ:) ফরমাইয়াছনে, যইে ব্যক্তি ঐ রোজা রাখবিে গত এক বৎসররে গুনাহ মাফ হইয়া যাইব।ে জলিহজ্জরে ৯ নয় তারখি রোজা রাখলিে অত্যন্ত পূণ্যরে কাজ এক বৎসর আগরে গোনাহ এবং এক বৎসর পররে গোনাহ মাফ হইব।ে ১ম তারখি হইতে নয় তারখির্ পয্যন্ত রোজা রাখা অতশিয় বহেতের। শবে বরাতরে র্অথাৎ শাবান মাসরে ১৫ পনর তারখি দবিস রোজা রাখা অন্যান্য নফল রোজা হইতে অধকি ছওয়াব। প্রত্যকে মাসরে ১৩। ১৪। ১৫ তারখিে রোজা রাখা মস্তাহাব। হুজুর (ছল্ল:) এই তনি রোজা রাখতিনে। জুমার দবিস ও সোমবাররে রোজা ও শওয়ালরে ছয় রোজা মস্তাহাব। দোররুল মোখতার, গায়তেুল আওতার ১ম খণ্ড, বহেস্তেি জওের ৩য় খণ্ড, মপ্তোহুল জন্নত ইত্যাদ।ি

   চেহেরী খাওয়া ও এফতার করার বিবরণ

চেহেরী খাওয়া ছুন্নত, ক্ষুধা না হইলে বা কিছু না খাইলে অল্প পানি হইলেও পান করিবে। চেহেরী না খাইলে উঠিয়া একটি পান বা, অর্দ্ধ পান খাইলেও চেহেরী খাওয়ার পূণ্য লাভ করিবে। চেহেরী গৌণ করিয়া খাওয়া ভাল, এইরূপ গৌণ না করিবে যাহাতে প্রভাত হওয়ায় রোজার মধ্যে সন্দেহ হয়। নিদ্রা থাকায় চেহেরী খাইতে না পারলিে প্রাতঃকাল হওয়ার পর রোজা থাকতিে হইব।ে চহেরী না খাওয়ার দরুণ রোজা না থাকা বড় গোনাহ। প্রাত:কাল হওয়ার র্পূব্ব র্পয্যন্ত চেহেরী খাইতে পারিবে। প্রভাত হওয়ার পর দুরস্ত নহে। রাত্রি বাকী আছে বিবেচনায় চেহেরী খাওয়ার পর জানা গেল যে প্রভাত

হওয়ার পর চেহেরী খাওয়া গিয়াছে তবে রোজা হইবে না কাজা ওয়াজেব হইবে। কাফ্ফারা ওয়াজেব নহে। তবুও কিছু খাইতে পারিবে না। রোজাদারের ন্যায় উপবাস থাকিবে। এইরূপ সূর্য্যাস্ত যাওয়ার বিবেচনায় এফতার করার পর সূর্য্য উদয় হইলে রোজা ভঙ্গ হইবে। সূর্য্যাস্ত না যাওয়া র্পয্যন্ত কিছুই খাইতে পারিবে না, এবং কাজা ওয়াজেব হইবে। প্রভাত হওয়ার সন্দেহ হইলে খাওয়া দাওয়া মকরুহ যদি ঐ সময় কিছু খায় বা পান করে গোনাহগার হইবে। যদি জানে ঐ সময় প্রভাত হইয়াছিল রোজা ভঙ্গ হইবে কাজা ওয়াজেব হইবে। কিছু জানা না গেলে, সন্দেহ থাকিলে কাজা ওয়াজেব হইবে না। কিন্তু কাজা রাখা ভাল। সূর্য্য অস্ত গেলে হঠাৎ এফতার করিবে গৌণ করা মকরুহ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইলে কিছু গৌণ করিয়া যাহাতে র্সূয্যাস্তের সন্দেহ না থাকে এফতার করিবে। এক মাত্র ঘড়ি ঘণ্টার উপর নির্ভর না করিবে। যদিওবা, কেহ আজান দেয় সময়ের সন্দেহ থাকিলে এফতার করা অসিদ্ধ। খোরমার দ্বারা এফতার করা ভাল নতুবা মিষ্ট দ্রব্য দ্বারা, না হইলে পানি দ্বারা এফতার করিবে। বেহেস্তি জেওর ৩য় খণ্ড ও দোররুল মোখতার ইত্যাদি।

কাফ্ফারার বিবরণ

কোন বয়:প্রাপ্ত বালক, বয়স্কা রমণীর সহিত ইচ্ছা করিয়া সঙ্গম করিলে বা পান আহার করিলে কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। রমজানের রোজার নিয়ত করার পর ভঙ্গ করিলে কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। রমজানের রোজা ব্যতীত অন্য কোন রোজা ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা নাই কিন্তু কাজা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। কাফ্ফারা এই মত আদায় করিবে। একটী ক্রীতদাসের দাসত্ব বিমোচন করিতে হইবে, তদঅভাবে লাগালাগি দুই মাস অর্থাৎ ৬০ দিন রোজা রাখিতে হইবে। তদঅভাষে ৬০টি মিছকিনকে তৃপ্তির সহিত আহার করাইবে।

তদঅভাবে প্রত্যেক রোজার জন্য এক একটি দরিদ্রকে ভোজন করাইবে। ৬০টি মিছকিনকে খাওয়াইলে পাপ মোচন হইবে না। লাগালাগি দুই মাসের মধ্যে যদি আবশ্যক কি অনাবশ্যক একটি রোজা ভঙ্গ করে পুনরায় ৬০টি রোজা রাখিতে হইবে র্পূব্বরে রোজা বিফল যাইবে। ঋতুবতী রমণী হায়েজ হওয়ার কারণে মধ্য দিয়া রোজা ভঙ্গ হইলে কাফ্ফারার কোন অনিষ্ট হইবে না। তাহারা ৬০ দিনে দুইবার ঋতুবতী হইতে এবং র্পূব্বরে রোজা ও বজায় থাকিবে। পুরুষের রোজার ন্যায় বিফল হইবে না। কিন্তু পাক হওয়ার পর হঠাৎ রোজা আরম্ভ করিবে, এবং ৬০ রোজা পুরা করিবে। নেফাছিনী রমণী নেফাছের গতীকে মধ্য দয়িা রোজা ছুটিয়া গেলে এবং লাগালাগি রোজা রাখিতে না পারিলে কাফ্ফারা সিদ্ধ হইবে না, পুনরায় ৬০ রোজা লাগালাগি রাখিতে হইবে। পীড়া বা কষ্টের গতীকে কাফ্ফারার রোজা মধ্য দিয়া ছুটিয়া গেলেও লাগালাগি রাখিতে না পারিলে কাফ্ফারা অসিদ্ধ। সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় ৬০ রোজা লাগালাগি রাখিতে হইবে। কাফ্ফারার রোজার মধ্য দিয়া রমজানের রোজা আসিলে তবুও কাফ্ফারা অসিদ্ধ। ৬০টি রোজা রাখিবার শক্তিহীন হইলে ৬০টি মিছকিনকে সকালে ও বৈকালে তৃপ্তির সহিত আহার করাইবে কিন্তু ঐ ৬০টি মিছকিন হইতে ছোট ২ বাচ্চা না হওয়া আবশ্যক। বাজ কেহ বলেন ছোট ২ বাচ্চা হইলে পুনরায় উহারার পরির্বত্তে অন্য মিছকিনকে আহার করাইতে হইবে। যদি আহার না করাইয়া কাঁচা আনাজ অর্থাৎ চাউল ইত্যাদি ৬০টি মিছকিনকে দিলে, তবুও কাফ্ফারা দুরস্ত হইবে। কিন্তু প্রত্যেককে ছদকায় ফেতরার পরিমাণ দিতে হইবে। যদি ঐ পরিমান কাঁচা আনাজের মূল্য দেওয়া যায় তাহাও দুরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তি কাহাকে বলিল, আমার পক্ষে তুমি আমার কাফ্ফারা আদায় করিয়া দিবে এবং ৬০টি মিছকিনকে আহার করাইয়া

দিবা। ঐ ব্যক্তি উনির পক্ষে আহার করাইয়া দিলে বা কাঁচা আনাজ দিলে দুরস্ত হইবে। অর্থাৎ কাফ্ফারা আদায় হইবে। আদেশ না করিলে, আদায় করিলে, আদায় হইবে না। একটি মিছকিনকে ৬০ দিবস সকালে ও বৈকালে আহার করাইলে নতুবা ৬০ দিবস র্পয্যন্ত কাঁচা আনাজ দিলে বা কাঁচা আনাজের মূল্য দিলে কাফ্ফারা সিদ্ধ হইবে। যদি ৬০ দিবসের আনাজ হিসাব করিয়া এক দিবস একটি ফকিরকে দিলে সিদ্ধ হইবে না। এইরূপ একটি ফকিরকে ৬০ দিবসের কাফ্ফারা এক দিবসে ৬০ ষাটবার করিয়া দিলেও সিদ্ধ হইবে না। এক দিবসের আদায় হইবে আরও ৫৯ দবিসরে কাফফরা আদায় করযি়া দতিে হইব।ে র্অথাৎ একটি মিছকিনকে এক দিবসের রোজার বদলার বেশী নেওয়া দুরস্ত নহে। ছদকায় ফেত্রার কমে দিলে ও কাফ্ফারা সদ্ধি হইবে না। এক রমজানরে একটি রোজা ভঙ্গ করযি়া কাফফরা আদায় করার র্পূব্বে অন্য তারিখে আর একটি রোজা ভাঙ্গিলে একবার কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। ২/৩ রোজা ভঙ্গ করিলে এক বার কাফ্ফারা দিলেই সিদ্ধ হইবে। দুই রমজানের রোজা ভাঙ্গিলে প্রত্যেক রোজার এক ২ বার কাফ্ফারা দিতে হইবে। এক রমজানের কয়েকটি রোজা ভাঙ্গিলে প্রথম রোজার কাফ্ফারা আদায় না করিলে একবার কাফ্ফারা দিলে সিদ্ধ হইবে। জায়েদ ৪টা তারিখে রোজা ভাঙ্গিলে তাহার কাফ্ফারা দিয়া আবার ১০ই তারিখে ভাঙ্গিলে পুনরায় ১০ই তারিখের কাফ্ফারা দিতে হইবে। জায়েদ রমজানের ৩রা তারিখে এক রোজা ভাঙ্গিয়া পুনরায় ৮ই তারিখে আর এক রোজা ভাঙ্গিলে, উভয় রোজা একবার কাফ্ফারা দিলে সিদ্ধ হইবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড, দোররুর মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ইত্যাদি।

ফিদিয়ার বিবরণ

কোন ব্যক্তি বৃদ্ধ হওয়ার গতীকে নতুবা রোগের দ্বারা আরোগ্যের আশা না থাকিলে ও রোজা রাখার উপর অসমর্থ হইলে রোজা না রাখিবে। প্রত্যেক রোজার জন্য একটি মিছকিনকে ফেত্রার পরিমিত আনাজ বা তৎমূল্য ফিদিয়া দিবে নতুবা সকাল ও বৈকালে তৃপ্তির সহিত আহার করাইবে। পরে রোজা রাখিবার সমর্থ হইলে কাজা দিতে হইবে। এবং ফিদিয়ার বদলা পৃথক পাইবে ঐ ফিদিয়া কয়েক ফকিরকে বাঁটিয়া কিছু ২ করিয়া দিতে পারিবে। কোন ব্যক্তি মৃত্যু কালে অছিয়ত করিল যে, আমার কয়েকটি রোজার কাজা বাকী আছে, আমার রোজার পরির্বত্তে ফিদিয়া দিও, কফন, দফন এবং কর্জ্জ শোধ করার পর যাহা মাল বাকী থাকে তাহার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়া ফিদিয়া আদায় করা ওয়াজেব হইবে। অছিয়ত না করিলে অলি নিজের মাল দ্বারা ফিদিয়া আদায় করিলে খোদার নিকট কবুল হওয়ার আশা করা যায় এবং রোজার জন্য খোদা ধর্ত্তব্য করিবে না। অছিয়ত ব্যতীত মৃতের মাল দ্বারা ফিদিয়া দেওয়া দুরস্ত নহে। এইরূপ ফিদিয়া আদায় করিতে তিন ভাগের এক ভাগ মাল হইতে বেশী মালের আবশ্যক হইলে ওয়ারিশগণের অনুমতি ব্যতীত বেশীর দ্বারা ফিদিয়া দেওয়া দুরস্ত হইবে না। সকলে রাজি হইয়া দিলে সিদ্ধ হইবে। ওয়ারিশগণ হইতে বাজ কেহ না বালেগ থাকিলে উহারার অংশ বাদ দিয়া বালেগ গণের অংশ হইতে ফিদিয়া দিলে দুরস্ত হইবে। কোন ব্যক্তি নামাজের ফিদিয়ার জন্য অছিয়ত করিয়া গেলে তাহা ও এইরূপ করিতে হইবে। এক ওয়াক্ত নামাজের ফিদিয়া দুই সের গেঁহু দিতে হইবে। একদিনের বেতের সহ বার সের গেঁহু দিতে হইবে। ৮০ তোলায় সের ধরিতে হইবে। কোন ব্যক্তির জিম্মায় জকাত বাকী থাকিলে আদায় করিবার জন্য ওয়ারিশগণকে অছিয়ত করিয়া গেলে ওয়ারিশগণের উপর আদায় করা ওয়াজেব হইবে। অছিয়ত করিয়া না গেলে, ওয়ারিশগণ আদায় করিলে দুরস্ত হইবে না। মৃতের পক্ষে বা জীবিত ব্যক্তির পক্ষে কেহ রোজা রাখিলে বা নামাজ পড়িলে দুরস্ত হইবে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকাগণ রোজা ভাঙ্গিলে তাহার কাজা রাখিতে হইবে না। কিন্তু নামাজ নিয়ত করিয়া ভাঙ্গিলে দ্বিতীয় বার পড়িতে হইবে। বেহেস্তি জেওর ৩য় খণ্ড, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, দোররুল মোখতার ইত্যাদি।

চন্দ্র দেখিবার বিবরণ

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা ধুলি মিশ্রিত হইলে এক ব্যক্তি পরহেজগার দিনদার সত্য বাদি, লোক সাক্ষ্য দিল যে, আমি পবিত্র রমজানের চন্দ্র দেখিয়াছি তাহা গ্রাহ্য হইবে। ঐরূপ একটি স্ত্রীলোক সাক্ষ্য দিলে তাহা ও গ্রাহ্য করা যাইবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় শাওয়াল চন্দ্র দেখা না গেলে এক সাক্ষী যতই দিনদার, পরহেজগার হউক না কেন গ্রাহ্য করা যাইবে না। দুই জন পুরুষ বা একটি ও দুইটি স্ত্রীলোক শাওয়ালের চন্দ্র দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দিলে কবূল করা যাইবে। যদি ৪ চারিটি স্ত্রীলোক ও সাক্ষ্য দেয় তাহা ও কবূল করা যাইবে। যে ব্যক্তি শরিয়তের কোন ধার না ধারে হামিসা গোনাহ করিতে থাকে, যেমন নামাজ না পড়া, রোজা না রাখা ও মিথ্যা কথা বলা, ইত্যাদি কছম করিয়া বলিলে ও তাহার সাক্ষ্য মোতবর হইবে না। এইরূপ দুই, তিন, ব্যক্তি সাক্ষ্য দিলে ও মোতবর হইবে না। যদি আকাশ সম্পূর্ণ ছাপ ও ধুলিযুক্ত না হয়, ২/৪ জন্য লোকে রমজানের ও ঈদের এবং জিলহজ্জ মাসের চন্দ্র দেখিয়াছে

বলিয়া সাক্ষ্য দিলে, তাহা ও অগ্রাহ্য হইবে। হাঁ যদি অধিক লোকে ঐরূপ অবস্থায় ঐ তিন মাসের চন্দ্র দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দেয় এবং শ্রবণ কারীগণের অন্তরে সত্য বলিতেছে বলিয়া বোধ করে তবে উহারার সাক্ষ্য কবুল করা যাইবে। অধিক লোকের পরিমান এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) ৫০ পঞ্চাশ জন পুরুষ র্নিদ্ধারিত করিয়াছেন ও এমাম মহাম্মদ (রহ:) প্রত্যেক দিক হইতে খবরের পর খবর আসলিে উহাকে গ্রাহ্য করে। বাজ ফকিহ কাজি সাহেবের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। দেশে ও গ্রামে এইরূপ সংবাদ মশহুর হইয়া থাকে যে গতকল্য চন্দ্র দেখা গিয়াছে, কিন্তু তালাস করার পর কোন ব্যক্তি চন্দ্র দেখিয়াছে সেইরূপ কোন লোক পাওয়া গেল না। সেই খবর ও বিশ্বাস করা যাইবে না। এক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ রমজানের চন্দ্র না দেখিলে এবং উহার সাক্ষ্য মতে লোকগণ রোজা না রাখিলে চন্দ্র দর্শনকারীর রোজা রাখিতে হইবে। দর্শনকারীর ৩০ রোজা সম্পূর্ণ হওয়ার দিবস শাওয়াল চন্দ্র উদিত না হইলে ঐ ব্যক্তি রোজাদার গণের সঙ্গে ৩১শে রোজা র্পূণ করিয়া সহর বাসি লোকের সহিত ঈদ করিবে। একাকী এক ব্যক্তি ঈদের চন্দ্র দেখিলে শরিয়তে তাহার সাক্ষ্য কবুল না করিলে ঐ ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না এবং চন্দ্র দেখিলে ও সকলের সহিত রোজা রাখিবে ও ঈদ করিবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড ও বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড, মিপ্তাহুল জন্নত ইত্যাদি।বলিয়া সাক্ষ্য দিলে, তাহা ও অগ্রাহ্য হইবে। হাঁ যদি অধিক লোকে ঐরূপ অবস্থায় ঐ তিন মাসের চন্দ্র দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দেয় এবং শ্রবণ কারীগণের অন্তরে সত্য বলিতেছে বলিয়া বোধ করে তবে উহারার সাক্ষ্য কবুল করা যাইবে। অধিক লোকের পরিমান এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) ৫০ পঞ্চাশ জন পুরুষ র্নিদ্ধারিত করিয়াছেন ও এমাম মহাম্মদ (রহ:) প্রত্যেক দিক হইতে খবরের পর খবর আসলিে উহাকে গ্রাহ্য করে। বাজ ফকিহ কাজি সাহেবের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। দেশে ও গ্রামে এইরূপ সংবাদ মশহুর হইয়া থাকে যে গতকল্য চন্দ্র দেখা গিয়াছে, কিন্তু তালাস করার পর কোন ব্যক্তি চন্দ্র দেখিয়াছে সেইরূপ কোন লোক পাওয়া গেল না। সেই খবর ও বিশ্বাস করা যাইবে না। এক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ রমজানের চন্দ্র না দেখিলে এবং উহার সাক্ষ্য মতে লোকগণ রোজা না রাখিলে চন্দ্র দর্শনকারীর রোজা রাখিতে হইবে। দর্শনকারীর ৩০ রোজা সম্পূর্ণ হওয়ার দিবস শাওয়াল চন্দ্র উদিত না হইলে ঐ ব্যক্তি রোজাদার গণের সঙ্গে ৩১শে রোজা র্পূণ করিয়া সহর বাসি লোকের সহিত ঈদ করিবে। একাকী এক ব্যক্তি ঈদের চন্দ্র দেখিলে শরিয়তে তাহার সাক্ষ্য কবুল না করিলে ঐ ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না এবং চন্দ্র দেখিলে ও সকলের সহিত রোজা রাখিবে ও ঈদ করিবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড ও বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড, মিপ্তাহুল জন্নত ইত্যাদি।বলিয়া সাক্ষ্য দিলে, তাহা ও অগ্রাহ্য হইবে। হাঁ যদি অধিক লোকে ঐরূপ অবস্থায় ঐ তিন মাসের চন্দ্র দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দেয় এবং শ্রবণ কারীগণের অন্তরে সত্য বলিতেছে বলিয়া বোধ করে তবে উহারার সাক্ষ্য কবুল করা যাইবে। অধিক লোকের পরিমান এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) ৫০ পঞ্চাশ জন পুরুষ র্নিদ্ধারিত করিয়াছেন ও এমাম মহাম্মদ (রহ:) প্রত্যেক দিক হইতে খবরের পর খবর আসলিে উহাকে গ্রাহ্য করে। বাজ ফকিহ কাজি সাহেবের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। দেশে ও গ্রামে এইরূপ সংবাদ মশহুর হইয়া থাকে যে গতকল্য চন্দ্র দেখা গিয়াছে, কিন্তু তালাস করার পর কোন ব্যক্তি চন্দ্র দেখিয়াছে সেইরূপ কোন লোক পাওয়া গেল না। সেই খবর ও বিশ্বাস করা যাইবে না। এক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ রমজানের চন্দ্র না দেখিলে এবং উহার সাক্ষ্য মতে লোকগণ রোজা না রাখিলে চন্দ্র দর্শনকারীর রোজা রাখিতে হইবে। দর্শনকারীর ৩০ রোজা সম্পূর্ণ হওয়ার দিবস শাওয়াল চন্দ্র উদিত না হইলে ঐ ব্যক্তি রোজাদার গণের সঙ্গে ৩১শে রোজা র্পূণ করিয়া সহর বাসি লোকের সহিত ঈদ করিবে। একাকী এক ব্যক্তি ঈদের চন্দ্র দেখিলে শরিয়তে তাহার সাক্ষ্য কবুল না করিলে ঐ ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না এবং চন্দ্র দেখিলে ও সকলের সহিত রোজা রাখিবে ও ঈদ করিবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড ও বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড, মিপ্তাহুল জন্নত ইত্যাদি।বলিয়া সাক্ষ্য দিলে, তাহা ও অগ্রাহ্য হইবে। হাঁ যদি অধিক লোকে ঐরূপ অবস্থায় ঐ তিন মাসের চন্দ্র দেখিয়াছে বলিয়া সাক্ষ্য দেয় এবং শ্রবণ কারীগণের অন্তরে সত্য বলিতেছে বলিয়া বোধ করে তবে উহারার সাক্ষ্য কবুল করা যাইবে। অধিক লোকের পরিমান এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) ৫০ পঞ্চাশ জন পুরুষ র্নিদ্ধারিত করিয়াছেন ও এমাম মহাম্মদ (রহ:) প্রত্যেক দিক হইতে খবরের পর খবর আসলিে উহাকে গ্রাহ্য করে। বাজ ফকিহ কাজি সাহেবের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। দেশে ও গ্রামে এইরূপ সংবাদ মশহুর হইয়া থাকে যে গতকল্য চন্দ্র দেখা গিয়াছে, কিন্তু তালাস করার পর কোন ব্যক্তি চন্দ্র দেখিয়াছে সেইরূপ কোন লোক পাওয়া গেল না। সেই খবর ও বিশ্বাস করা যাইবে না। এক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ রমজানের চন্দ্র না দেখিলে এবং উহার সাক্ষ্য মতে লোকগণ রোজা না রাখিলে চন্দ্র দর্শনকারীর রোজা রাখিতে হইবে। দর্শনকারীর ৩০ রোজা সম্পূর্ণ হওয়ার দিবস শাওয়াল চন্দ্র উদিত না হইলে ঐ ব্যক্তি রোজাদার গণের সঙ্গে ৩১শে রোজা র্পূণ করিয়া সহর বাসি লোকের সহিত ঈদ করিবে। একাকী এক ব্যক্তি ঈদের চন্দ্র দেখিলে শরিয়তে তাহার সাক্ষ্য কবুল না করিলে ঐ ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গিতে পারিবে না এবং চন্দ্র দেখিলে ও সকলের সহিত রোজা রাখিবে ও ঈদ করিবে। খোলাছতুল ফতাওয়া ১ম খণ্ড ও বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড, মিপ্তাহুল জন্নত ইত্যাদি।

কছমের বিবরণ

শপথ করাকে কছম বলে। কছম তিন প্রকার। (১) গমুছ (২) লোগো (৩) মোনাকাদ। মিথ্যা শপথ করা, যেমন রহিম বলিল, আমি আল্লার কছম করিয়া বলিতেছি, আমি টাকা চুরি

করি নাই। যদি প্রকৃত পক্ষে টাকা চুরি করিয়া থাকে ও মিথ্যা কহে, তবে ইহাকে গমুছ শপথ বলে। এ শপথ করা অত্যন্ত পাপ কাজ জানিবে। ইহাতে কবিরা গোনাহ হইবে। মিথ্যা কছম করিলে তৌবা করা ওয়াজেব। স্বীয় স্বত্ব বিবেচনা করিয়া শপথ করিলে পরে জানা গেল যে বাস্তবিক ঐ স্বত্ব আমার নহে। এইরূপ শপথ করাকে লোগো শপথ বলে। খোদাতালা ইচ্ছা করিলে মাফ করিলেও করিতে পারেন। ভবিষ্যৎ র্কম্ম লইয়া যেমন রহিম বলিল, আল্লার কছম আমি অদ্য রেঙ্গুন যাইব না। পরে রহিম, অদ্য তারিখে রেঙ্গুন গেলে উহাকে মোনাকাদ শপথ বলে। অনাবশ্যক কছম করা অত্যন্ত খারাব ও অন্যায়, ইহাতে আল্লাতালার বেতাজিমী হয়। এইরূপ বলিলে কছম হইয়া যাইবে, যেমন খোদার কছম, আল্লার কছম, খোদার ইজ্জতের কছম, খোদার জলালের কছম, খোদার বুজুর্গির কছম এই সমস্ত শব্দের দ্বারা কছম হইবে। খোদার নাম না লইয়া এইরূপ বলিল, কছম করিয়া বলিতেছি আমি এই কাজ করিব না তবুও কছম হইবে। কোরাণরে কছম, খোদার কালামের কছম খোদা সাক্ষী আছে, খোদাকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, খোদাকে হাজের ও নাজের জানিয়া বলিতেছি এইরূপ বলিলে কছম হইবে। কোরাণ শরীফকে হাতের উপর লইয়া নতুব কোরাণরে উপর হাত রাখিয়া বলিল, কছম কহিল না, ইহাতে কছম হইবে না। আমি যদি ফলানা কাজ করি মৃত্যু সময়, বে-ঈমান হইয়া মরিব, আমি যদি ফলানা র্কম্ম করি তবে আমি মুসলমান নহি ইহাতেও কছম হইবে। কছম ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব। যদি এইরূপ বলে কছম হইবে না যদি আমি ফলানা কাম করি তবে আমার হস্ত ভাঙ্গিয়া যাউক, অঙ্গ ফুটিয়া যাউক, খোদার গজব ভাঙ্গিয়া পড়ুক, আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িবে,

খোদার মাইর পড়িবে। যদি এই কাজ করি আমি শুকর খাইব, মৃত্যুকালে কলেমা আমার মুখে না আসুক, কেয়ামতের দিবস আমি আল্লা ও রসুলের সম্মুখে জরদারো হইব, এইরূপ বাক্যের দ্বারা কছম হইবে না। ভাঙ্গিলে কাফ্ফারাও দিতে হইবে না। খোদা ব্যতীত অন্য কাহারও কছম করা যায় না। যদি এইরূপ বলে তোমার ঘরে আমার জন্য আহার করা হারাম, নতুবা ফলানা বস্তুকে আমি আমার উপর হারাম করিয়াছি তবে কছম হইবে। কছম ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা দিবে, ঐ বস্তু হারাম হইবে না। এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কছম দেওয়াইলে কছম হইবে না। যেমন এক ব্যক্তি অন্যকে বলিল, তোমার খোদার কছম তুমি এই র্কম্ম করিওনা ইহাতে কছম হইবে না। মোনাকাদ কছম ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব হইবে বাকী দুই প্রকার কছমে কাফ্ফারা নাই। কোন পাপ কার্য্য করার জন্য কছম করিলে তাহা করিলে তাহা ভঙ্গ করা ওয়াজেব পরে কাফ্ফারা আদায় করা ওয়াজেব যেমন কোন ব্যক্তি বলিল, আমি খোদার কছম নামাজ পড়িব না ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি কছম করিল যে আমি ফলানা বস্তু অদ্য ভক্ষণ করিব না; পরে ভূলে ভক্ষণ করিলে নতুবা কেহ জবরদস্তী করিয়া আহার করাইলে কাফ্ফারা দিতে হইবে। কেহ ক্রোধ হইয়া বলিল, আমি তোমাকে এক কড়াও দিবনা, পরে পয়সা বা টাকা দিলে কছম ভঙ্গ হইবে এবং কাফ্ফারা দিতে হইবে। রহিম কছম করিল যে, আমি তোমার ঘরে যাইব না পরে ঘরের দ্বারের দেহলিজে দাঁড়াইলে কছম ভাঙ্গিবে না আন্দরে প্রবেশ করিলে কছম ভঙ্গ হইবে। এই ঘরে যাইব না বলিয়া কছম করিলে পরে ঐ ঘর পড়িয়া ভঙ্গ হইলে ভঙ্গ ঘরে গেলে কছম ভঙ্গ হইবে। হাঁ যদি সম্পূর্ণ ময়দান হয় বা জমী হয় নতুবা বাগান,

মসজিদ ইত্যাদি হইয়া যায় তবে উহাতে গেলে কছম ভঙ্গ হইবে না এই ঘরে যাইব না বলিয়া কছম করার পর ঐ ঘর পড়িয়া ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় পুনরায় নূতন প্রস্তুত করিলে সেই ঘরে গেলে কছম ভঙ্গ হইবে। জায়েদ ঘরে বসিয়া কছম করিল যে, আমি এই ঘরে কখনও আসিব না, বসিয়া থাকিলে কছম ভাঙ্গিবে না। ঘর হইতে বাহির হইয়া পুনরায় ঘরে আসিলে কছম ভঙ্গ হইবে। এই কাপড় পরিধান করিবে না বলিয়া কছম করিল হঠাৎ খুলিয়া ফেলিলে কছম হইবে না ক্ষণকাল গৌণ করিয়া পরিধানে রাখার পর খুলিলে কছম ভঙ্গ হইবে। রহিম কছম করিয়া বলিল, আমি কোন সময়ে না, কোন সময়, নিশ্চয় তোমার ঘরে আসিব জীবিত অবস্থায় না আসিলে মৃত্যুকালে কছম ভঙ্গ হইব।ে রহমি কছম করযি়া বললি, আমি জাবদেরে ঘরে যাইব না। কাবেদ যেই ঘরে বাস করে সেই ঘরই ধরিতে হইবে, ঐ ঘর নিজের হউক বা কেরেয়ার ঘর হউক নতুবা খুজিয়া লওয়া ঘর হউক। কেহ কছম করিল যে, আমি দুগ্ধ আহার করিব না, পরে দুগ্ধ জমাইয়া দধি বানাইয়া খাইলে কছম ভাঙ্গিবে না। ছাগলের ছোট পালিত বাচ্চার উপর কছম করিল যে, আমি এই বাচ্চার গোস্ত খাইব না পরে বড় হইয়া ছাগল হইয়া গেলে ঐ ছাগলের গোস্ত খাইলে কছম ভঙ্গ হইবে। গোস্ত না খাওয়া কছম করিলে মৎস্য খাইলে কছম ভঙ্গ হইবে না। আটা না খাইবে বলিয়া কছম করিলে আটার রুটি বা আটার দ্বারা অন্য কোন বস্তু প্রস্তুত করিয়া হালোয়া ইত্যাদি খাইলে কছম ভঙ্গ হইবে। রুটি আহার করিবে না বলিয়া কছম করিলে, সেই দেশে যে যে বস্তুর রুটি আহার করা যায়, সেই রুটি আহার করিলে কছম ভাঙ্গিয়া যাইবে। মাথা (কল্লা) খাইবে না বলিয়া কছম করিলে, চিড়িয়া মোরগ ইত্যাদির মস্তক খাইলে কছম ভঙ্গ হইবেনা।

গরু, ছাগল ইত্যাদির মস্তক খাইলে কছম ভঙ্গ হইবে। ফল (মেওয়া) খাইবে না বলিয়া কছম করিলে আনার, ছেব, আঙ্গুর, আখরোট, মনাক্কা, খেজুর খাইলে কছম ভঙ্গ হইবে। তরমুজ, খরমুজা, আম, খাইলে কছম ভঙ্গ হইবেনা। ফলানা রমণীর সহিত আলাপ করিব না বলিয়া কছম করিলে ঐ রমণীর সহিত নিদ্রা অবস্থায় আলাপ করিলে, শব্দ শুনিয়া রমণী জাগরিত হইলে কছম ভাঙ্গিবে। ছোট বালিকার সহিত আলাপ করিবে না বলিয়া কছম করিলে, যৌবন অবস্থায় বা বৃদ্ধ অবস্থায় আলাপ করিলে কছম ভঙ্গ হইবে। তোমার মুখ চাহিব না, তোমার ছুরত দেখিব না বলিয়া কছম করিলে কোন স্থানে দুরে থাকিয়া ছুরত দেখিলে কছম ভঙ্গ হইবে না। আমি ফলানা বস্তু খরিদ করিব না বলিয়া কছম করলি, পরে অন্য লোকের দ্বারা ক্রয় করাইলে কছম ভাঙ্গিবে না। আমি এই বস্তু বিক্রয় করিব না বা এই ঘর কেরেয়া করিয়া লইব না বলিয়া কছম করিলে, অপর লোকের দ্বারা বিক্রয় করাইলে বা ঘর কেরেয়া করাইলে কছম ভঙ্গ হইবে না। হাঁ যদি কছম কারীর নিয়তে নিজে বা অন্য লোকের দ্বারা না করান থাকে, তবে কছম ভঙ্গ হইবে। কছমকারিনী পর্দ্দানসীন বা আমিরজাদী রমণী হইলে ঐ রূপ কছম করিলে, অপর লোকের দ্বারা করাইলেও কছম ভঙ্গ হইবে। রোজা না রাখিবে বলিয়া কছম করিলে, পরে রোজার নিয়ত করিয়া ক্ষণকাল গত হইলে কছম ভঙ্গ হইবে। নামাজ না পড়িবে বলিয়া কছম করিলে, পরে নামাজের নিয়ত করিয়া প্রথম রকাতের ছজিদা করিলে কছম ভঙ্গ হইবে। এই গালিচার উপর শয়ন করিবে না বলিয়া কছম করিলে পরে ঐ গালিচার উপর চাদর বিছাইয়া শয়ন করিলে কছম ভঙ্গ হইবে। অপর এক খানা গালিচা ঐ গালিচার উপর বিছাইয়া শয়ন করিলে কছম ভাঙ্গিবে না। আনার খাইব বলিয়া

কছম করিলে জীবিত অবস্থায় একবার খাইলে বছ করিবে। না খাইবায় জন্য কছম করিলে জীবদ্দশা র্পয্যন্ত খাইতে পারিবে না। দোররুল মোখতার, আলমগিরী, বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড ইত্যাদি।

কছমের কাফ্ফারার বিবরণ

কোন ব্যক্তি কছম ভাঙ্গিলে কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজেব হইবে। কাফ্ফারা এই একটি ক্রীতদাসের দাসত্ব বিমোচন করিতে হইবে। তদভাবে ১০টি মিছকিনকে দুই ওয়াক্ত তৃপ্তির সহিত আহার করাইয়া দিবে। নতুবা কাঁচা আনাজ দিলে প্রত্যেক মিছকিনকে ৮০ তোলায় সের হিসাব করিয়া দুই সের করিয়া দিবে। আহার ও কাঁচা আনাজ না দিলে তবে ১০ দশ জন ফকিরকে কাপড় দিবে যাহাতে অধিকাংশ অঙ্গ ঢাকিতে পারে। যেমন চাদর নতুবা লম্বা বড় কোর্ত্তা দিলে কাফ্ফারা আদায় হইবে। কিন্তু কাফ্ফারার কাপড় বেশী পুরানা না হওয়া চাই। প্রত্যেক ফকিরকে এক একটি করিয়া লুঙ্গি দিলে বা এক একটি পায়জামা দিলে কাফ্ফারা আদায় হইবে না। লুঙ্গির সহিত কোর্ত্তা দিলে আদায় হইবে। আহার করান কাপড় দেওয়া এই দুইটি হইতে যেই একটি ইচ্ছা করে আদায় করিলে কাফ্ফারা সিদ্ধ হইবে। এই আদেশ পুরুষের জন্য। কোন দরিদ্র স্ত্রীলোককে কাপড় দিলে এইরূপভাবে দিবে যাহাতে উহার র্সব্বাঙ্গ ঢাকা যায় ও নামাজ পড়িতে পারে। ইহার কম হইলে দুরস্ত হইবে না, এবং কাফ্ফারা অসিদ্ধ। কছমকারী দরিদ্র হওয়ায় আহার করাইতে বা কাপড় দিতে অসমর্থ হইলে লাগালাগি তিনটি রোজা রাখিবে। আবশ্যকবশত: একটি ভাঙ্গিলে পুনরায় তিনটি রোজা লাগালাগি রাখিতে হইবে। নতুবা কাফ্ফারা আদায় হইবে না। পৃথক ২ করিয়া তিনটি রোজা পূর্ণ করিলে তাহাও সিদ্ধ

হইবে না। কছম ভঙ্গ করার র্পূব্বে কাফ্ফারা আদায় করা অসিদ্ধ। যেমন রহিম বলিল, জায়েদ! খোদার কছম আমি তোমার সঙ্গে আলাপ করিব না। কছম হইয়া গেল। আগে আলাপ করিয়া কছম ভঙ্গ করার পর কাফ্ফারা আদায় করিলে সিদ্ধ হইবে। নতুবা অসিদ্ধ। কছম ভঙ্গ করার র্পূব্বে কাফ্ফারা আদায় করিলে, পরে ভঙ্গ করিলে কাফ্ফারা পুনরায় দেওয়া ওয়াজেব হইবে এবং র্পূব্বরে আদায়কৃত কাফ্ফারা ফকির হইতে ফেরৎ লওয়া না দুরস্ত। কয়েক বার কছম করিলে যেমন খোদার কছম আমি এই কাজ করিব না এইরূপ ২য় দিবস ও ৩য় দিবসও বলিল। নতুবা এই রূপ বলিল, আল্লার কছম, খোদার কছম, কালামুল্লার কছম, আমি ফালানা কাজ নিশ্চয় করিব। পরে কছম ভঙ্গ করিলে একবার কাফ্ফারা দিলে সিদ্ধ হইবে। এক ব্যক্তির জিম্মে বহুত কছমের কাফ্ফারা জমা হইয়া থাকিলে, প্রত্যকে কছমরে কাফফারা পৃথক ২ করযি়া দতিে হইব।ে জীবতি অবস্থায় আদায় করিতে না পারিলে মৃত্যুকালে ঐ কছমের কাফ্ফারার জন্য উত্তরাধিকারীগণকে অছিয়ত করা ওয়াজেব। জাকাত যেই মিছকিনকে দেওয়া যাইবে, কফ্ফারা ও উহাকে দেওয়া যাইবে। দোররুল মোখতার, গায়তুল আওতার ২য় খণ্ড, খোলাছা ২য় খণ্ড, বেহেস্তী জেওর ৩য় খণ্ড ইত্যাদি।

এতেকাফের বিবরণ

জমাতের মসজিদে কোনও পুরুষ এতেকাফের মনন করিয়া ধ্যানে বসাকে এতেকাফ বলে। যে মসজিদে এমাম ও মোয়াজ্জেন নিযুক্ত আছে তাহাকে জমাতের মসজিদ বলে। গ্রামস্থিত লোকে যদিও পাঁচ ওক্ত নামাজ না পড়ে, তথাপিও সেই মসজিদে এতেকাফ সিদ্ধ হইবে। এইরূপ জুমার মসজিদেও এতেকাফ সিদ্ধ হইবে। স্ত্রী লোক

মসজিদে এতেকাফ করা মকরুহ, কিন্তু গৃহে যে স্থানে র্সব্বদা নামাজ পড়ে, সেই স্থানে থাকিয়া এতেকাফ করা যায়। গৃহে নামাজের স্থান ছাড়া অন্য স্থানে এতেকাফ করা সিদ্ধ হইবে না। গৃহের মধ্যে কোন এক স্থানকে এতেকাফের সময় মসজিদ করিয়া এতেকাফ করিলে দুরস্ত হইবে। এতেকাফে সাত শর্ত আছে। (১) মসজিদ হওয়া (২) মুসলমান হওয়া, (৩) পাক হওয়া, (৪) এতেকাফের নিয়ত করা, (৫) বুদ্ধিমান হওয়া, (৬) উন্মাদ না হওয়া, (৭) ঋতুবতী ও নেফাসিনী না হওয়া। এতেকাফ নিয়ত ছাড়া না দুরস্ত। এতেকাফ তিন প্রকার: (১) ওয়াজেব (২) ছুন্নত মোয়াক্কাদা (৩) মস্তাহাব। কোন ব্যক্তি মুখে বলিল যে, খোদাতালা যদি আমার পুত্রকে পীড়া হইতে আরোগ্য করে, তবে আমি এক দিবস এতেকাফ করিব। এইরূপ মুখে অঙ্গীকার করাকে ওয়াজেব এতেকাফ বলে। এতেকাফ একদিন একমাস এক বৎসর ইত্যাদি করিতে পারে। পবিত্র রমজান মাসের শেষের দশ দিবস এতেকাফ করাকে ছুন্নতে মোয়াক্কাদা বলে। উল্লিখিত র্নিদ্ধারিত সময় ভিন্ন অন্যান্য সময় এতেকাফ করাকে মস্তাহাব এতেকাফ বলে। ওয়াজেব ও ছুন্নত এতেকাফে রোজা থাকা র্শত্ত। জানাজার নামাজের নিমিত্ত এতেকাফ হইতে বাহির হইলে এতেকাফ ভঙ্গ হইবে। ওয়াজেব এতেকাফে মসজিদ হইতে বাহির হওয়া হারাম কিন্তু বাহ্য, প্রস্রাব, স্নান, স্বপ্নদোষ হইলে যদি মসজিদে হাউজ না থাকে তবে বাহির হওয়া যায়। স্বামীর আদেশ ব্যতীত স্ত্রীলোকে এতেকাফ করা অনুচিত। মস্তাহাব ও ছুন্নত এতেকাফে বাহির হইতে পারিবে না। মসজিদে পান, আহার, শয়ন করিবে। ভ্রমক্রমে ১ ঘণ্টাকালে মসজিদ হইতে বাহির হইলে এতেকাফ ভঙ্গ হইবে। ঘণ্টার র্মম্ম ক্ষণকাল, অল্পক্ষণ সময়। চব্বিশ ঘণ্টা হইতে এক ঘণ্টা নহে। ওজর হইলে মসজিদ হইতে বহির্দ্দেশ যাইতে পারে।

যেমন বাহ্য, প্রস্রাব, স্নান। এতেকাফ ভঙ্গ হইলে কাজা দিতে হইবে। এতেকাফে ওয়াজেব নজর করিবার সময় পীড়িত ব্যক্তির বিমার পুরছি করিবার কি, জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার বা, এলমের মজলিসে উপস্থিত হওয়ার র্শত্ত করলিে তাহাও দূরস্ত আছ।ে এতকোফরে মসজদি জামে মসজিদ হইতে দূরর্বত্তি হইলে এমন সময় বাহির হইতে হইবে যাহাতে জুমার নামাজ পাওয়া যায় খোত্বা সহ। খোত্বা ও জুমার আগে ছয় রকাত, দুই রকাত তাহাইয়াতুল অজু ও চারি রকাত ছুন্নত কাব্লুল জূমা এবং খোত্বা ও জুমার ফরজের পর ছয় রকাত। চারি রকাত বাদল জুমা ও দুই রকাত ছুন্নতুল ওক্ত ইহা এমাম মহাম্মদ (রহ:) ও এমাম আবু ইউছুফ (রহ:)’র বাক্য। এমাম আবু হানিফা (রহ:) খোত্বা ও জুমার ফরজের আগে চারি রকাত ছুন্নত কাব্লুল জুমা এবং খোত্বা ও জুমার ফরজের পরে চারি রকাত ছুন্নত বাদাল জুমা পড়িতে পারে মত যাইতে হইবে বলিয়া বলেন। এমাম আবু হানিফা (রহ:) এতেকাফের কম সময় এক দিবা রাত্রি বলেন। এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) এক দিবসের র্অদ্ধ দিনের অধিকাংশ বলিয়া বলেন। এমাম মহাম্মদ (রহ:) এক ঘণ্টা বলিয়া বলেন। এক দিবস এতেকাফ করার নিয়তে বসিলে এক দিন ও রাত্রি সর্ম্পূন হওয়ার র্পূব্বে ভঙ্গ করিলে উহার কাজা দিতে হইবে। দশদিন এতেকাফে গৌণ করা এতেকাফের র্শত্ত ও রোকণ নহে। এক দিবা রাত্রি এতেকাফ করিলে ছুন্নত আদায় হইবে। এতেকাফ ছুন্নতে মোয়াক্কাদা কেফায়া অর্থাৎ এক ব্যক্তি আদায় করিলে সকলের জন্য আদায় হইবে। কেহ আদায় না করিলে সকল পাপী হইবে। এতেকাফে চুপ করিয়া থাকা মকরুহ। এতেকাফে পূণ্য বাক্য ভিন্ন পাপ জনক বাক্য বলা মকরুহ। কোরান, হাদিছ, ফেকার গ্রন্ত পাঠ করিতে পারিবে,

এবং মছআলা ও তছওফ বিষয় পুস্তক পাঠ করিতে পারিবে। স্বীয় পত্নীর সহিত সঙ্গম করিলে ভ্রমে হইলে ও এতেকাফ ভঙ্গ হইবে। দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, ফতোয়া লাবুদ্দিয়া ইত্যাদি।

হজ্জের বিবরণ

পবিত্র মক্কা নগর হইতে ৯ মাইল দূরর্বত্তী আরফাত প্রান্তরে অবস্থান করাকে হজ্জ বলে। এবং হজ্জ কারক ব্যক্তিকে হাজী বলে। হজ্জ এছলামের পঞ্চরোকন। ধনবান্ হইলে জীবনের মধ্যে একবার মাত্র হজ্জ করা ফরজ। যেই ব্যক্তির নিকট আবশ্যকীয় খরচ ব্যতীত হজ্জ সমাপনে প্রত্যাগমন র্পয্যন্ত স্ত্রী ও পরিবার বর্গের গ্রাসাচ্ছাধন দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাহার উপর হজ্জ ফরজ। হজরত (দ:) ফরমাইয়াছেন, যেই হজ্জ গোনাহ এবং খারাবী হইতে শুদ্ধ হইবে তাহার বদ্লা বেহেস্ত বই আর কিছু নহে। আরও ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি হজ্জ করার সামর্থ্য হওয়া স্বত্বেও যদি হজ্জ না করে মৃত্যু কালে য়িহুদী বা নাছারা হইয়া মরিলে তাহা কোন আশ্চর্য্য জনক নহে। হজ্জ কয়েকবার করিলে একবার ফরজ ও বাকী নফল হইবে। কোন ব্যক্তি বাল্যকালে হজ্জ করিলে পরে যৌবনাবস্থায় মালদার হইলে উহার উপর পুনরায় হজ্জ করা ফরজ হইবে। র্পূব্বরে হজ্জ মোতবর হইবে না। যখন হজ্জ ফরজ হইবে তৎক্ষণাৎ আদায় করা ওয়াজেব। ওজর ব্যতীত গৌণ করা দুরস্ত নহে। গৌণ করিলে হজ্জ আদায় হইবে; কিন্তু পাপী হইবে। স্ত্রী লোকের স্বামীর সহিত বা যাহারা উক্ত স্ত্রী লোককে কস্মিনকালেও বিবাহ করিতে পারে না তাহাদের সঙ্গে হজ্জ করিতে যাইতে পারে। যেমন পিতা, ভ্রাতা, মামু, দাদা, নানা ইত্যাদি স্ত্রী লোকের সঙ্গে বুদ্ধিমান ও বয়:প্রাপ্ত ব্যক্তির যাওয়া র্কত্তব্য। অন্ধের উপর হজ্জ ফরজ নহে। যতই মালদার হউক উহার উপর

হজ্জ ফরজ নহে। স্ত্রীলোকের সঙ্গে যেই মোহরম যাইবে, তাহার সমস্ত খরচ ঐ স্ত্রী লোকের উপর বহন করা ওয়াজেব হইবে। স্ত্রী লোকের জন্য জীবদ্দশা র্পয্যন্ত হজ্জ করার জন্য কোন মোহরম ব্যক্তি পাওয়া না গেলে তবে হজ্জ না করিলে গোনাহ হইবে না। কিন্তু মৃত্যু কালে ঐ স্ত্রী লোকের পক্ষে হজ্জ করাইবার জন্য অছিয়ত করিয়া যাওয়া ওয়াজেব। পরে ওয়ারিশগণ তাহার মাল দ্বারা হজ্জ করাইলে তাহার জিম্মার হজ্জ আদায় হইবে। অপরের দ্বারায় হজ্জ করাকে বদলা হজ্জ কহে। এক ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ হইয়াছে আলস্য করিয়া হজ্জ আদায় করিতে গৌণ করিয়া হজ্জ করে নাই। পরে অন্ধ হইয়া গেল, নতুবা বিমার হইল যদ্ধারা হজ্জ করিতে পারে না, ঐ ব্যক্তির মৃত্যুকালে হজ্জ আদায় করাইবার জন্য অছিয়ত করা উচিত। কোন রমণী এদ্দতে থাকিলে এদ্দত শেষ হওয়ার র্পূব্বে হজ্জে যাওয়া অসিদ্ধ। এক ব্যক্তির নিকট মক্কা শরীফে আসা যাওয়ার খরচ আছে, কিন্তু মদীনা শরীফের খরচ নাই তবে ঐ ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ হইবে। হজ্জের মধ্যে পাঁচটি আরকান আছে যথা: (১) এহরাম বাঁধা (২) তওয়াফ করা (৩) সাই করা অর্থাৎ দৌঁড়ান (৪) আরফাতে দণ্ডায়মান হওয়া (৫) মাথার চুল কামাইয়া ফেলা, যাহাদের উপর হজ্জ ফরজ উহারা আট প্রকার: (১) মুসলমান হওয়া (২) বুদ্ধিমান হওয়া (৩) বয়:প্রাপ্ত হওয়া (৪) স্বাধীন হওয়া (৫) মক্কা শরীফে যাতায়াতের ব্যয় থাকা (৬) শরীর শুদ্ধ থাকা (৭) হজ্জ ফরজ বলিয়া জ্ঞান হওয়া। (৮) হজ্জের পথ নিরাপদ হওয়া। হজ্জের মধ্যে ১৫টী ওয়াজেব আছে। (১) মিকাত হইতে এহরাম বাঁধা। (২) ক্ষুদ্র প্রস্তর খণ্ড নিক্ষেপ করা। (৩) র্সূয্যাস্ত যাওয়া র্পয্যন্ত আরফাতের মাঠে অবস্থান করা। (৪) মজদাল্ফায় রাত্রে থাকা। (৫) ছফা ও মারওয়া র্পব্বতে দৌঁড়ান। (৬) মস্তক মুণ্ডন করা।

(৭) পদব্রজে তওয়াফ করা। (৮) স্বীয় দক্ষিণ দিক হইতে তওয়াফ আরম্ভ করা। (৯) পাক অঙ্গ বস্ত্র সহ তওয়াফ করা। (১০) হাজ্র আছওদ হইতে তওয়াফ আরম্ভ করা। (১১) আফাকীর জন্য বিদাইর তওয়াফ করা। কিন্তু হায়েজা রমণীর জন্য বিদাইর তওয়াফ ওয়াজেব নহে। নামাজের ন্যায় গুপ্ত স্থান আবৃত করা। (১৩) ছফা ও মারওয়া র্পব্বতে দৌঁড়িবার সময় ছফা পর্ব্বত হইতে আরম্ভ করা। (১৪) পদব্রজে দৌঁড়ান। (১৫) আরফায় অবস্থিতির পর স্ত্রী সঙ্গম না করা। অন্যান্য বিবরণ ও বাকী ওয়াজেব পবিত্র মক্কা নগরে মোয়াল্লেমের নিকট শিক্ষা করিবে। হজ্জের মধ্যে তিন ফরজ। (১) এহরাম বাঁধা। (২) আরফাতের মাঠে খাড়া হওয়া। (৩) তওয়াফে জেয়ারত। দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড, বেহেস্তী জেওর ৪র্থ খণ্ড ইত্যাদি।

জবেহের বিবরণ

গলা কাটাকে জবেহ বলে। কিন্তু মৎস্য টিড্ডি জবেহ করার আবশ্যক নাই। জবেহ করার সময় গলদেশের দুইটি শিরা এবং নিশ্বাস প্রশ্বাসের ও আহারীয়া শিরা এই চারিটি কাটিতে হইবে। কোন কারণবশত: এই চারিটি শিরা কর্ত্তন করিতে না পারিলে হালাল হইবে না। আপাতত: তিনটি কাটিলেও সিদ্ধ হইবে। জবেহ দুই প্রকার: (১) এখতেয়ারী (২) বে-এখতেয়ারী, ধারাল অস্ত্র দ্বারা শিরাকে কর্ত্তন করাকে এখতেয়ারী বলে। যে জবেহ করার শক্তি না থাকিলে ঐ জন্তুর কোন স্থানে জখম করিলেই হালাল হইবে। উহাকে বে-এখতেয়ারী জবেহ বলে। যেমন কোন চতুষ্পদ জন্তু ধরা না দিলে কি কূপে পতিত হইলে যদি জবেহ করা কষ্টকর হয় তবে বল্লম বা কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা কোন

স্থানে জখম করিলে হালাল হইবে। এইরূপ শিকারীর পোষা জন্তু বৃদ্ধ হইলে তাহাকে জবেহ করা র্কত্তব্য। শিকারীয় জন্তু জবেহ করিলে তাহার মাংস হালাল হইবে না। কিন্তু মাংস ও র্চম্ম পাক হইবে। কোন ব্যক্তির গাভী বা মহিষী গর্ভবতী হইলে বৎস হইবার সময় অত্যন্ত কষ্ট হইলে, তবে গাভী বা মহিষী ইত্যাদির পেটে হাত দিয়া ঐ বৎস জবেহ করিলে ঐ পেটের বৎস হালাল হইবে এবং পেটে হাত দিয়া যদি গল দেশে জবেহ করিতে না পারে তবে অন্য স্থানে জখম করিলেও হালাল হইবে। জবেহ করার নিয়ম এই প্রথম পশুকে ভ’মিতে কাবামুখী করিয়া শয়ন করাইয়া জবেহকারীও কাবামুখী হইয়া তীক্ষè অস্ত্র হস্তে লইয়া বিছমিল্লাহে আল্লাহো আকবর বলা মাত্র গলার চারিটা শিরা কাটিয়া দিবে। (১) হলকুম, নিশ্বাসও প্রশ্বাসের রাস্তা। (২) মরিয়ী, পান করা ও আহারীয় রাস্তা। ৩, ৪ গলার ২ কিনারায় ২ সাহরগ। এই চারি শিরা হইতে দুই শিরা বাকী থাকিলে জন্তু হারাম হইবে। জবেহ করার সময় জন্তু পশ্বাদির মস্তক জবেহকারীর বাম পার্শ্বে ও ধড় ডান পার্শ্বে থাকা ওয়াজেব। হলকুম ও মরিয়ীর ডান ও বাম পার্শ্বে সাহরগ দুইটি রক্ত চলাচলের রাস্তা। জবেহ করার সময় জানিয়া শুনিয়া বিছমিল্লাহ না বলিলে জন্তু হারাম হইবে। ভ্রমবসত: বিছমিল্লাহ না বলিয়া জবেহ করিলে জন্তু হালাল হইবে। ভোতা চাকু দিয়া জবেহ করা ও জন্তু ঠাণ্ডা হওয়ার র্পূব্বে উহার র্চম্ম খুলিয়া লওয়া মকরুহ। কিন্তু হস্ত পদাদি নড়াচড়া না করিলে কোন দোষ হইবে না। জবেহ করিবার সময় মৃরগীর গলা কাটিয়া গেলে ঐ মুরগী দুরস্ত হইবে। এইরূপ জেয়াদা করিয়া জবেহ করা মকরুহ। কিন্তু মুরগী মকরুহ হইবে না। তীক্ষè অস্ত্র যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, পিতল,

লৌহ এবং বাঁশের নেইল ও ধারাল প্রস্তর দ্বারা জবেহ করিতে পারে। নখ, দন্ত, শৃঙ্গ ইত্যাদির দ্বারা জবেহ করা মকরুহ। কিন্তু উহা পশুতে সংলগ্ন না থাকিলে এবং ধারাল হইলে সিদ্ধ হইবে। ফলত: কেহ ২ উহাকে মকরুহ বলিয়া বলিয়াছেন। পশ্বাদি ভূমিতে শয়ন করাইয়া জবেহ করার অস্ত্র ধার দেওয়া মকরুহ। কিন্তু শয়ন করার র্পূব্বে ধার দেওয়া মোস্তাহাব। পশুর ঘাড়ের দিক্ দিয়া জবেহ করার মকরুহ, যদি ঐ পশু শিরচ্ছেদ করা র্পয্যন্ত জীবিত থাকে। ঘাড়ের দিক দিয়া জবেহ করিতে শিরোচ্ছেদ না হইতেই জন্তু মৃত্যু হইলে উহা হারাম হইবে। কাবাভিন্ন অন্যদিকে জবেহ করা মকরুহ, এইরূপ অবৈধ রূপে জবেহের জন্য র্নিদ্দষ্টি জন্তুকে কষ্ট দেওয়া মকরুহ। জবেহকারী মুসলমান, বুদ্ধিমান, শক্তিমান এই তিন গুণে গুণান্বিত হওয়া আবশ্যক। স্ত্রীলোক জবেহ করিতে পারিবে। অনাবশ্যক অপবিত্র শরীরে জবেহ করিলে মকরুহ তাহরিমি হইবে। এইরূপ অনাবশ্যক ঋতুবর্তী স্ত্রীলোক জবেহ করা। নেফাছিনী নারী জবেহ করিলে। র্ধাম্মকি মুত্তাকি থাকিতে ফাছেক বেদাতী জবেহ করিলে। অজ্ঞান বা মাতাল জবহে করলি।ে উন্মাদ বা পাগলে জবেহ করিলে মকরুহ তাহারিমা হইবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক: বালক জবেহ করিলে হালাল হইবে না। কিন্তু যে বালক বুদ্ধি ও জবেহ করার শক্তি রাখে এবং আল্লার নাম ব্যতীত অন্য কাহারও নামে জবেহ করিলে ও কম পক্ষে তিনটি শিরা না কাটিলে ঐ জন্তু হারাম হওয়ার অবগত থাকিলে সেই বালকের জবেহ করা সিদ্ধ হইবে। কেতাবীয় অর্থাৎ মুছায়ী, ইছায়ী, র্ধম্মাবলম্বীগণ জবেহ করিলে সিদ্ধ হইবে। যেই বালকের খৎনা হয় নাই উল্লিখিত জবেহের র্শত্ত জ্ঞাত থাকিলে তাহার জবেহও সিদ্ধ হইবে। বোবা ব্যক্তি জবেহ করিলে হালাল হইবে। মোশরেক বির্ধম্মী, বা হিন্দুগণ জবেহ করিলে জন্তু হারাম হইবে। এইরূপ বিছমিল্লাহ ব্যতীত জবেহ করিলে হারাম হইবে। এইরূপ র্ধম্মভ্রষ্ট ও জেন অর্থাৎ দেও, পরী জবেহ করিলে তাহাও হারাম হইবে। উটের ঘাড়ের নিম্নে বর্শা বা ধারাল অস্ত্র কি বল্লম মারিয়া জবেহ করা মোস্তাহাব। আরবীয় ভাষায় উহাকে নহর বলে। কিন্তু উষ্ট্রকে ছুরিকা দিয়া জবেহ করা মকরুহ। গো, মেষ, মহিষ, দুম্বা প্রভৃতি জন্তু নহর করা মকরুহ। হালাল জন্তুর মধ্যে নিম্নলিখিত বস্তু হারাম জানিবে। (১) দমে মছফুহ অর্থাৎ তরল রক্ত (২) লিঙ্গ (৩) অণ্ডকোষ (৪) বাহ্যস্থান (৫) প্রস্রাবস্থান (৬) ইলেট অর্থাৎ মাংস পরে যে পুটলিকা বা গেরা থাকে তাহা (৭) মুত্রথলি অর্থাৎ চোনা গাড়া (৮) পিত্ত (৯) হারাম অর্থাৎ ঘাড়ের মগজ (শিরা বিশেষ) প্রভৃতি। জবেহ কারী মুসলমান হওয়া ফরজ এবং ধৃতকারী ও মুসলমান হওয়া ফরজ, জবেহের সময় বিছমিল্লাহ বলা ফরজ, গলদেশে জবেহ করা ফরজ, পশ্চাদির গলদেশের শিরা কাটিয়া দেওয়া যে যে শিরায় রক্ত চলাচল করে তাহাও ফরজ। কাটিয়া রক্ত বাহির করিয়া দেওয়া ফরজ। খোদার নামে জবেহ করিতেছি এইরূপ নিয়ত করা ফরজ। জবেহের র্পূব্বে অজু করিয়া লওয়া ছুন্নত, জবেহের অস্ত্র ধারাল হওয়া, জবেহকারী ও ধৃতকারী উভয়েই কাবাভিমুখে দণ্ডায়মান হওয়া। জবেহ করার নিয়ত বলা। এই চারিটি ছুন্নত জানিবে। জবেহ কারীকে সাহায্যকারককেও বিছমিল্লাহ বলা ফরজ। ছাগল জবেহ করিবার সময় জীবিত কিনা? জানিতে না পারিলে প্রথমত: জবেহের পর নড়াচড়া করিতেছে কিনা দেখিতে হইবে। নড়াচড়া করিলে খাওয়া হালাল হইবে, নতুবা নহে তৎপর রক্ত বাহির হইল কিনা? জীবিত পশ্বাদির মত রক্ত বাহির হইলে হালাল হইবে নতুবা নহে তৎপর মুখ যদি খুলিয়া যায় হারাম হইবে, যদি বন্ধ হয় খাওয়া হালাল হইবে। ইহাও যদি জানিতে না পারে, তৎপর চক্ষু যদি বন্ধ হইয়া যায় খাওয়া যাইবে, চক্ষুদ্বয় খুলিয়া গেলে খাওয়া যাইবে না। ইহাও জানিতে না পারিলে তৎপর পা যদি লম্বা করিয়া দেয় খাওয়া যাইবে না। পা, কবজ অর্থাৎ কুড়াইয়া ফেলে খাওয়া যাইবে। তৎপর লোম যদি খাড়া হইয়া যায় খাওয়া যাইবে, ঢলিয়া পড়িয়া গেলে খাওয়া যাইবে না। জবেহ করার সময় সামান্য জীবন আছে বলি জানিতে পারিলেও সব সময় খাইতে পারিবে। যেই মোরগের মস্তক ইন্দুর কাটিয়া লইয়া গেলে সেই মোরগের অন্য স্থান দিয়া জবেহ করিলে খাওয়া হারাম হইবে। কারণ ঐ মোরগের মস্তক ইন্দুর লইয়া যাওয়ার দরুন মোরগটি মৃত্যু হইয়াছে। জবেহ করার দরুন মৃত্যু হয় নাই। ছাগল হইতে যদি কুকুরের আকৃতি মত বাচ্চা জন্ম পেয়েদা) হয়, তবে ঐ বাচ্চা যদি কুকুরের মত শব্দ করে, খাওয়া যাইবে না। ছাগলের মত শব্দ করিলে খাওয়া যাইবে। যদি কুকুরও ছাগলের মত দুই রকমের শব্দ করে, তবে ঐ বাচ্চার সম্মুখে পানি রাখা যাইবে, পানি যদি জিহ্বায় পান করে কুকুর জানিবে, খাওয়া যাইবে না। মুখে পান করিলে ছাগল জানিবে, খাওয়া যাইবে। যদি ও জিহ্বাহ ও মুখের দ্বারায় পান করে, ঘাস ও মাংস উহার সম্মুখে রাখিলে, ঘাস খাইলে ছাগল হইবে ও খাওয়া যাইবে। মাংস খাইলে কুকুর জানিবে খাইতে পারিবে না। যদি ঘাস ও মাংস দুইটা খায়, তবে উহাকে জবেহ করিয়া দেখিতে হইবে, ঐ বাচ্চার উদর হইতে উজরী (আঁতরী) বাহির হইলে কুকুর বুঝিবে, খাওয়া দুরস্ত হইবে না। যদি থলিয়া অর্থাৎ পানি ও ঘাস খাওয়ার পর যেই স্থানে যাইয়া জমিত হয়, সেই স্থান বাহির হয় ছাগল হইবে ও খাইতে পারিবে। দোররুল মোখতার, গায়েতুল আওতার ৪র্থ খণ্ড আলমগিরী ৫ম খণ্ড ইত্যাদি।


কোরবানীর বিবরণ

কোরবানী করা অত্যন্ত ছোয়াবের কাজ, হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ছ:) ফরমাইয়াছেন, কোর্ব্বানের দিবসের মধ্যে খোদায় তালার নিকট কোরবান হইতে অন্য বস্তু বেশী পছন্দ নহে, সমস্ত ভাল কাজ হইতে কোরবানই অতি উত্তম, কোরবানী জবেহ করিবার সময় যেই রক্ত বাহির হয়, তাহা জমির উপর পড়িবার র্পূব্বে আল্লাহ তালার নিকট কবুল হইয়া যায়, তবে মুসলমানের উচিৎ যে নিজের দিলকে পরিস্কার করিয়া কোরবানের দিবসে কোর্ব্বান করা, মহা পুরুষ হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছ:) বলিয়াছেন, কোর্ব্বানী জানোয়ারের শরীরে যত গুলি লোম আছে, এক ২ লোমের বদলে এক এক নেকি লিখা যাইবে, তবে চিন্তা করিয়া দেখুন, একটা ভেড়ার গায়ে যত গুলি লোম আছে তাহা সকাল বেলা হইতে সন্ধ্যা র্পয্যন্ত গননা করিলে শেষ করিতে পারিবে না। এই মত কোরবানের ছোয়াব ও গননা করিতে পারা যাইবে না। তবে দিনদার ব্যক্তি ও খোদা ভক্ত মানব্গণ মালেক নেছাব না হইলেও তাহারা এই সুযোগ পারিত: পক্ষে হারাইবেন না। কারণ, এই সময় চলিয়া গেলে কোথায় পাইবে; মালেকে নেছাব বলে যে, সংসারিক আবশ্যকিয় ব্যয় র্নিব্বাহ করিয়া বৎসরের শেষে ৫২।।০ টাকা বা তৎমূল্যের দ্রব্য জমা থাকিলে তাহাকে নেছাব বলে, কোর্ব্বানী নিজের ও মাতা এবং পিতা ও পীর ইত্যাদির জন্য করিতে পারে, হজরতের জন্য ও করিতে পারে, কোর্ব্বানের জন্য তিন দিন র্নিদ্দষ্টি আছে, জিলহজ্জ চাঁদের ১০ দশ তারিখের ফজরের পর হইতে ১২ বার তারিখের দিনের সূর্য্য ডুবিবার র্পূব্বে র্পয্যন্ত দোরস্ত আছে, রাত্রিতে জবেহ করা মকরুহ ১ একটি ছাগল ও ভেড়া ইত্যাদি এক ব্যক্তি করিতে পারিবে। ১টী গরু ও ১টী উট ও ১টী মহিষ এক হইতে সাত ব্যক্তি র্পয্যন্ত সরিক হইয়া কোর্ব্বানী

করিতে পারিবে অর্থাৎ একটি গরু ও মহিষ ইত্যাদিতে সাত হিচ্ছা র্পয্যন্ত করিতে পারিবে তাহা হইতে বেশী করিতে পারিবে না। কিন্তু সাত অংশ পুরাপুরি মূল্য দিতে হইবে যদি কেহই কম দিলে কাহারও কোর্ব্বানী দুরস্ত হইবে না। সাত ব্যক্তির নিয়ত ও এক অর্থাৎ খোদার কোরবতের জন্য হইতে হইবে। কেহর নিয়ত কোরবানী গোস্ত খাওয়া হইলে সাত অংশের কোরবানী বাতেল হইয়া যাইবে নিজের শক্তি মতে যেই র্পয্যন্ত পারা যায় সরিকি কোর্ব্বানী হইতে বাঁচিয়া থাকা আবশ্যক। দুই বৎসরের অধিক বয়স্ক গরু কিম্বা মহিষ, এক বৎসরের অধিক বয়স্ক ছাগ কিম্বা মেষ, পাঁচ বৎসরের অধিক বয়স্ক উট কোর্ব্বানীর জন্য র্নিদ্দষ্টি। কোরবানী পশুর লেজ কিম্বা কান তিন ভাগের এক ভাগ থাকিলে ও দুই ভাগ না থাকিলে সেই পশু দ্বারা কোরবানী দোরস্ত হইবে না, কোরবানী দুই রকম, ওয়াজেব ও নফল, আবার ওয়াজেব কয়েক প্রকার আজে, প্রথম প্রকার ধনি ও দরিদ্রের উপর ওয়াজেব। দ্বিতীয় প্রকার গরীবের উপর ওয়াজেব ধনীর উপর ওয়াজেব নহে। তৃতীয় প্রকার ধন বানের উপর ওয়াজেব গরীবের উপর ওয়াজেব নহে। প্রথম প্রকার গরীব ও ধনবানের উপর ওয়াজেব উহা নজর, যদি কেহ বলে খোদার জন্য আমার একটি গরু বা ছাগ নতুবা একটি উট নিশ্চয় কোরবানী করিতে হইবে, উহা নজর হইবে, এই রকম বলিলে গরীব ও ধনী সকলের উপর ওয়াজেব হইবে ঐ পশুর মাংস ফকির ও মিছকিন ছাড়া নিজে বা নিজের ঘরের লোক কেহ খাইতে পারিবে না, বরং হারাম হইবে। যদি ধনী লোক বলে আমার গরুটি খোদায় বিমার হইতে রক্ষা করিলে আমি ঐ গরুটির দ্বারা কোরবানী করিব, তবে ভাল হওয়ার পর ঐ ব্যক্তির উপর ঐ গরুটি কোরবানের দিবসে কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব হইবে। কিন্তু ফকির মিছকিনকে মাংস খাবাইতে হইবে নিজে বা নিজের ঘরের লোক ও ধনবান কেহ খাইতে পারিবে না। খাইলে নজর আদায় হইবে না এবং

প্রতি বৎসর সরিয়তে তাহার উপর যেই কোর্ব্বানী ওয়াজেব করিয়াছে সেই কোর্ব্বানী অপর একটি পশুর দ্বারা করা ওয়াজেব হইবে। সেই কোর্ব্বানীর গোস্ত ধনী ও দরিদ্র এবং নিজেও নিজের আহালও আয়াল সকলে খাইতে পারিবে। যদি কোন দরিদ্র লোকে বলে, আমার গরু কিম্বা ছাগল বা উটটি বিমার হইতে খোদায় রক্ষা করিলে আমি ঐ জানোয়ারটির দ্বারা কোর্ব্বানী করিব, তবে ঐ জানোয়ারটি ভাল হইলে কোর্ব্বানের দিবসে জবেহ করিয়া ফকির-মিছকিনকে তাহার গোস্ত বিতরণ করিতে হইবে, নিজে ও নিজের আহাল ও আয়াল ও ধনী লোক কেহ খাইতে পারিবে না ও খাইলে নজর আদায় হইবে না! যদি খায়, অর্থাৎ ধনবানে কোর্ব্বানের নজর করিলে তাহাকে দুই কোর্ব্বানী করিতে হইবে ১টী নজরের কোর্ব্বানী ২য় টী শরীয়তের দুই কোর্ব্বানী তাহার উপর ওয়াজেব করিয়াছে তাহার, গরীবে নজর করিলে কেবল নজরের এক কোর্ব্বান করিয়া ফকির ও মিছকিনকে দান করিয়া দেওয়া ওয়াজেব, পাঠক এই মছআলা ভালমতে বুঝিয়া লইবেন ও স্মরণ রাখিবেন বহুত ২ লোক এই মছআলা হইতে অজ্ঞাত হইয়া থাকে, নফল কোর্ব্বান যেমন, মুছাফের ও গরীবগণের কোর্ব্বান করা। যদি কোন গরীব লোকে পশু খরিদ করিবার সময় কোর্ব্বানের নিয়ত করিয়া পশু খরিদ করে তবে তাহার উপর সেই পশুর দ্বারা কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব, যদি কোন ধনবান লোকে কোর্ব্বানের নিয়তে পশু খরিদ করে তবে সেই পশু দ্বারা কোর্ব্বানী করা তাহার উপর ওয়াজেব নহে, সার মর্ম এই যে কোর্ব্বানীর পশু গরীব লোকে বদলাইতে পারিবে না ধনবান দৌলত মন্দ লোকে বদলাইতে পারিবে, যদি কোন মানব কোন ছাগলের অধিকার হইয়া পরে কোর্ব্বানের নিয়ত করে, নতুবা ছাগল খরিদ করিবার সময় কোর্ব্বানের নিয়ত করে নাই, পরে কোর্ব্বানের নিয়ত করিলে দোন: ছুরত মতে সেই মানবের উপর সেই ছাগল দ্বারা কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব নহে, ধনী হউক বা

দরিদ্র হউক একই কথা। তৃতীয় রকম ধনবানের উপর ওয়াজেব, যেমন শরীয়তে মালও আসবাবের দ্বারা যাহার উপর কোর্ব্বানী ওয়াজেব করিয়াছে। ফতোয়া আলমগিরী ৫ম খণ্ড কেতাবুল উজহিয়া ৩২৩ পৃষ্ঠা স্বামি ৫ম খণ্ড ২২৫ পৃষ্ঠা ও ২৩৪ পৃষ্ঠা, কোর্ব্বানী মুসলমানের উপর ওয়াজেব, কাফেরের উপর ওয়াজেব নহে, মোছাফেরের উপর অর্থাৎ প্রবাসির উপর ওয়াজেব নহে, দৌলত ওয়ালার উপর ওয়াজেব, গরীবের উপর ওয়াজেব নহে, দৌলতমন্দ অর্থাৎ তোয়াঙ্গর উহাকে বলে, যাহার নিকট ২০০ দুই শত দরম মৌজুদ আছে, নতুবা দুই শত দরমের বরাবর মাল থাকে, থাকিবার ঘর বাদ ও পরিধানের পোষাক বাদ ও খেদমতের খাদেম বাদ এবং ঘরের আবশ্যকিয় মাল বাদ কোর্ব্বানের দিবস র্পয্যন্ত ঐ মাল মৌজুদ থাকিলে তাহার উপর কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব। হারুনিয়াত কেতাবে লিখিত আছে যে যখন কোর্ব্বানের দিবস উপস্থিত হয়, তখন এক ব্যক্তির নিকট ২০০ দুইশত দরম বা দুই শত দরমের অধিক দরম মৌজুদ ছিল কিন্তু অন্য কোন মাল তাহার নিকট ঐ দরম ছাড়া নাই তখন তাহার দরম নষ্ট হইয়া গেলে তাহার অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির উপর কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব হইবে না, কোর্ব্বানের প্রথম দিবসে কেহর নিকট ২০০ শত দরম মৌজুদ ছিল না শেষ তারিখে অর্থাৎ ১২ বার তারিখের সূর্য্য ডুবিবার র্পূব্বে দুই শত দরম পুরা হইল ও উহার কোন কর্জ্জ ও নাই তবে সেই ব্যক্তির উপর কোর্ব্বানী করা ওয়াজেব হইবে। অন্য কোন মাল ঐ দরম ছাড়া যদি না থাকে, হায়াত ও মৌত এবং গরীবি ও ধনবান হওয়া কোর্ব্বানের শেষ তারিখে ধরিতে হইবে, যেমন তাহার উদাহরণ উপরে লিখা হইল। আরও উদাহরণ লিখা যাইতেছেÑ যথা: কোন ব্যক্তি ১০। ১১ তারিখে গরীব চিল এই জন্য তাহার উপর কোর্ব্বানী ওয়াজেব ছিল না জিলহজ্জ চাঁদের ১২ তারিখের সূর্য্য অস্তের র্পূব্বে কোথা হইতে ২০০ দুইশত দরমের মালিক হইয়া গেলে, তাহার অন্য কোন কর্জ্জ ও নাই, তবে তাহার

উপর কোর্ব্বানী ওয়াজেব হইয়া যাইবে সেই মত ১২ বার তারিখে সূর্য্য অস্তের র্পূব্বে কোন ছেলে জন্ম হইলে ঐ ছেলে মালেকে নেছাব হইলে বাজ এমামগণ বলেন তাহার উপর কোর্ব্বান ওয়াজেব হইবে, তাহার পিতা তাহার মাল হইতে কোর্ব্বানী করিতে হইবে, বাজ এমামগণ বলেন, ওয়াজেব হইবে না, বাপ না থাকিলে তাহার অলি কোর্ব্বানী করিবেন তাহার মাল হইতে ও তাহার অর্থাৎ নাবালেগের কোর্ব্বানীর গোস্ত বিতরণ করবিে না ইহা এমাম আবু হানিফা (রহ:) সাহেবের মত অনুযায়ী কিন্তু ঐ নাবালেগের কোর্ব্বানীর গোস্ত তিনিই খাইবেন, খাওয়ার পর কিছু বাকী থাকিলে সেই গোস্তের দ্বারা এমন বস্তু বদলাইয়া লইতে পারিবেন যেই বস্তুকে নষ্ট না করিয়া ফায়েদা গ্রহণ করিতে পারে, যেমন পোষাক ও মৌজা কিন্তু রুটির দ্বারা বদলাইতে পারবিে না, কারণ রুটি না খাইলে ফায়েদা হইবে না। এই মছআলার ফতোয়া জাহেরা রেওয়াএতের উপর, জাহের রেওয়াএতের মতে ছোট ছেলেগণের মাল হইতে কোরবানী করা পিতা বা অছির উপর ওয়াজেব নহে, ফকিহগণের কেতাবের এবারত মতে দেখা যাইতেছে যে, ছোট নাবালেগ ছেলের কোরবানী করা উহারা মালদার হইলেও ওয়াজেব নহে। তবে যদি কেহ নাবালেগ ছেলে গণের কোরবানী করাইতে ইচ্ছা করেন, তবে নিজের মালদ্বারা কোরবানী করাইলে নফল হইবে। নাবালেগের মাল হইতে কখনও করাইবেন না। আলমগিরী ৫ম খণ্ড ২২৫ পৃষ্ঠা ও কাজি খাঁ ৩২৯ পৃষ্ঠা ৪র্থ খণ্ড, খোলাছতুল ফতোয়া ৪র্থ খণ্ড ৩০৯ পৃষ্ঠা কেতাবুল উজহিয়া, তবু যদি বাপে তাহার ছেলের মাল হইতে কোরবানী করায় তবে এমাম আবু হানিফা (রা:) ও আবু ইউছুপ (রা:) মত মতে পিতা ছেলের মালের জেমান অর্থাৎ গুনাগারী দিতে হইবে না, এই বাক্যের উপর ফকিহগণের ফতোয়া, যদি অছি ছোট ছেলের মাল হইতে কোরবানী করিয়া থাকে তবে এমাম মোহাম্মদ (রহ) বাক্যানুযায়ী জেমান অর্থাৎ গুনাগারী দিতে হইবে, এমাম

আবু হানিফা (রহ) বাক্যমতে মতভেদ দেখা যায়। বাজ এমামগণ বলেন, যদি ছোট ছেলে খায় তবে, জেমান দিতে হইবে না। যদি না খায় জেমান দিতে হইবে, বাজ এমামগণ বলেন মোটের উপর জেমান দিতে হইবে না। পিতার মত, কেতাব ঐ পৃষ্ঠা ঐ গোলামের উপর কোরবানী ওয়াজেব নহে কিন্তু ১২ তারিখের শেষ সময় সূর্য্য অস্তের র্পূব্বে আজাদ হইয়া মালেকে নেছাব হইলে কোরবান ওয়াজেব হইবে। এইরূপ মোছাফেরকেও জানিয়া লইবে, অর্থাৎ কোরবানের শেষ দিবসে র্সূয্য অস্তের র্পূব্বে মুকিম হইয়া মালেকে নেছাব হইলে কোরবান করা ওয়াজেব হইবে, পরের এমামগণ হইতে, জাপরানি (র) ও ফকি আলিররাজি বলেন, যেই ব্যক্তির নিকট এই পরমান ফসলের জমি আছে যে, যাহার মূল্য ২০০ দুই শত দরম হয়, তবে সেই ব্যক্তির উপর কোরবানী ওয়াজেব হইবে, আবু আলিদ দকাক্ (র) বলেন যেই ব্যক্তির নিকট এই পরিমাণ জমি আছে যে যাহা হইতে এক বৎসরের খোরাক উৎপন্ন হয় সেই ব্যক্তির উপর কোরবানী ওয়াজেব হইবে। আলমগিরি কেতাবুল উজহিয়া ৩২৪ পৃষ্ঠা, কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা ও খোলাছা ৩০৯ পৃষ্ঠা ! যদি কোন ব্যক্তি ধনবান হইয়া কোরবানের জন্য একটি ছাগল খরিদ করিলে পরে ছাগলটি হারান হইয়া গেল ও কোরবানের দিবসে ঐ ব্যক্তি গরীব হইয়া গেল, সেই ব্যক্তির উপর অন্য ছাগল খরিদ করিয়া কোরবানী করিতে হইবে না, যদি ঐ হারান হওয়া ছাগলটি গরীবি অবস্থায় কোরবানের দিবসের আন্দর পাওয়া যায় তবে ঐ ব্যক্তি ছাগলের দ্বারা কোরবানী করিতে হইবে না, যদি ঐ ছাগলটি হারান হওয়ার পর তোয়াঙ্গরী অবস্থায় আর একটি ছাগল খরিদ করিয়া কোরবানী করিল পরে গরীবি অবস্থায় নষ্ট হওয়া অর্থাৎ হারানো ছাগলটি পাওয়া গেলে ঐ ব্যক্তির উপর কিছু খয়রাত করিতে হইবে না। স্ত্রী লোকগণ স্বামির উপর যে প্রাপ্য মোহর বাকী আছে তদ্ধারা মালেকে নেছাব হইবে না, এমামগণের এই মত। আজনাছ কেতাবে লিখিত আছে, একজন রুটি ওয়ালার নিকট ২০০ দুইশত দরমের গেউ আছে নতুবা এক ব্যক্তির নিকট ২০০ দরমের নমক আছে নতুবা এক ধুফির নিকট ২০০ শত দরমের সাবান আছে, তবে উহারা কোরবানী করিতে হইবে। আলমগিরী ৫ম খণ্ড কেতাবুল উজহিয়া ৩২৪। ৩২৫ পৃষ্ঠা নিজের স্ত্রীর ও বড় আওলাদের কোরবানী এমাম আবু হানিফা (র) মত মতে উহারার এজাজত ছাড়া দুরস্ত হইবে না, কিন্তু এমাম আবু ইউছুফ (র) মত মতে দুরস্ত হইবে, দলিলে এস্তেহেছান, কাজি খাঁন ৪র্থ খণ্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা, হাদিছ ও তফছিরের কেতাব দ্বারা ধনবান গননা করা যাইবে না, যদিও এক এক রকমের দুইটি দুইটি করিয়া থাকে। এলম তিব অর্থাৎ ইউনানি কেতাব ও এলম নজমের কেতাব ও এলম আদবের কেতাবের দ্বারা ধনবান গণণা করা যাইবে। যদি ঐ কেতাবের মূল্য নেছাব পরিমাণ হয় কোরবানী করিতে হইবে। এই মত অজিজেকুর দরি নামক কেতাবে লিখিত আছে এক জন চাষার নিকট দুইটি বৃষ গরু ও লাঙ্গল ও কোদাল ইত্যাদি আছে, তদ্ধারা ঐ কৃষককে নেছাবওয়ালা বলিতে পারিবে না, কিন্তু একটি গাভীর দ্বারা ধনবান অর্থাৎ ছাহেবে নেছাব ধরিতে হইবে। ৩ তিনটি বৃষ গরুর দ্বারা ধনবান অর্থাৎ তোঁয়াঙ্গগর গণনা করা যাইবে, যদি বৃষ গরুর মূল্য ২০০ দুইশত দরম হয় ছাহেবে নেছাব হইবে তাহার উপর কোরবানী ওয়াজেব হইবে। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ৩ তিন খানা কাপড় থাকে এক খানা হামিসার জন্য ২য় খানা মেহন্নতের কাজের জন্য ৩য় খানা ঈদ ও জুমার জন্য তাহাকে তোঁয়াঙ্গর ও ধনবান গণনা করিতে পারিবে না, কিন্ত যদি ৪ চারি খানা কাপড় থাকে ৪র্থ খানার বূল্য ২০০ দুইশত দরম হইলে তোয়াঙ্গর বুঝিতে হইবে ও

তাহার উপর কোর্ব্বানী ওয়াজেব, খোলাছা ৪র্থ খণ্ড ৩১০ পৃষ্ঠা আলমগিরী ৫ম খণ্ড ও কাজি খাঁ ৪র্থ খন্ড, যদি কোন ধনবান লোকে বলে যে কোর্ব্বানের দিবসের আন্দর আমার উপর খোদার জন্য এই ছাগলটি বা গরুটি নতুবা উটটি কোরবানী করা আবশ্যক আরও বলে যে আমার উপর যেই কোরবানী সরিয়তে ওয়াজেব করিয়াছে সেই কোরবানী করার খবর দিতেছি কিন্তু এমত নজর করিতেছে যে, ১০। ১১। ১২ তারিখের আন্দর, আগেও নহে ও কোরবানের দিবসের পরেও নহে তবে সেই ব্যক্তি একটি ছাগল বা গরু বা উট দিয়া কোরবানী করিলে দুরস্ত হইবে। নিজে খাইতে পারিবে। যদি কোরবানের দিবসের র্পূব্বে এইরূপ বলিয়া নজর করে তবে ধনবান লোকে ২ দুইটি দিতে হইবে অর্থাৎ যেই পশু নজর করিয়াছে তাহা ১টী ও কোরবানের জন্য ১টী কিন্তু নজরের পশুর গোস্ত খাইতে পারিবে না, যদি এই রকম নজর গরীব লোকে করে তবে সে ১টী পশু জবেহ করিতে হইবে, কিন্তু তাহার মাংস খাইতে পারিবে না, স্বামী ৫ম খণ্ড ২৩৪ পৃষ্ঠা যদি কোন ব্যক্তি জিলহজ্জের ১০ তারিখ বা ১১ এগার তারিখে গরীব থাকা অবস্থায় কোরবানী করে ১২ বার তারিখের আন্দর পূনরায় ধনবান হইলে, তবে ঐ ব্যক্তির উপর আবার কোরবান করা ওয়াজেব হইবে। যদি ধনবান অর্থাৎ যাহার উপর কোরবানী ওয়াজেব সেই ব্যক্তি যদি কোরবানের দিবসের আন্দর কোরবান করিবার র্পূব্বে মরিয়া যায় তবে তিনি হইতে কোরবানী মাফ হইয়া যাইবে, যদি কোন ব্যক্তি কোরবানের দিবসে কোরবানীর পশু জবেহ না করিয়া তৎমূল্য বা জীবিত পশু খায়রাত করিয়া দিলে তাহার কোরবানী দুরস্ত হইবে না, অন্য লোকের কোরবান হুকুম দিলে করা জায়েজ আছে, হুকুম ছাড়া জায়েজ নহে, যেমন স্বামী মোছাফেরীতে ও বিদেশে থাকিলে তাহার বিবি তাহার জন্য কোরবানী করাইলে জায়েজ হইবে না, এই মত অন্য লোকের কোরবান করা ও এজাজত ছাড়া দুরস্ত হইবে না, বেহুস ও পাগল লোক কোরবান সম্বন্ধে ছোট নাবালেগ ছেলের মত। যেই সকল লোক পাগল ও হুসীয়ার হয় অর্থাৎ কোন সময় পাগল হয় ও কোন সময় হুসিয়ার, তবে সেই লোকগণের কোরান সম্বন্ধে ভাল লোকের মত, অর্থাৎ মালেকে নেছাব হইলে কোরবান করা ওয়াজেব, যেই ছেলে বা মেয়ে কোরবানের দিবসের আন্দর করা ওয়াজেব, যেই ছেলে বা মেয়ে কোরবানের দিবসের আন্দর বালেগ হইলে ও মালেকে নেচাব হইলে তাহারার উপর কোরবানী করা ওয়াজেব, যেই ব্যক্তির নিকট কর্জ্জ আছে, কর্জ্জ বাদ দিলে সেই ব্যক্তি ছাহেবে নেছাব অর্থাৎ তোয়াঙ্গর হইবে না, তাহার উপর কোরবানী ওয়াজেব নহে। কোরবানীর গোস্ত ওজন করিয়া ভাগ করিবে আন্দাজ করিয়া ভাগ করিবে না, একজন ধনবান লোক কোরবানের প্রথম দিবসে একটি ছাগল খরিদ করিয়া কোরবান না করিয়া কোরবানের দিবসের আন্দর গরীব হইয়া গেল, নতুবা টাকা খরচ করিয়া কোরবানের দিবসের আন্দর গরীব হইয়া গেল, অর্থাৎ নেছাব কমিয়া গেল, তাহার জন্য কোরবান মাফ, অর্থাৎ কোরবানী করা আবশ্যক হইবে না, যদি কোরবানের তিন তারিখ চলিয়া যাওয়ার পর গরীব হইয়া যায় অর্থাৎ ১০। ১১। ১২ তারিখের পর গরীব হয়, তবে জীবিত ছাগলটি খয়রাত করিয়া দিবে। নতুবা তাহার মূল্য খয়রাত করিয়া দিতে হইবে, কোরবানী তাহার জন্য মাফ হইবে না। কাজি খাঁন ৪র্থ খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠা যেই ব্যক্তি কোরবানের দিবসে কোরবানী করিবার জন্য নজর করিয়াছে, সেই ব্যক্তি কোরবান উক্ত দিবসে করেন নাই ও উক্ত দিবস চলিয়া গেলে তবে পশুটিকে জীবিত খয়রাত করিয়া দিবে। গরীব হইলেও জীবিত খয়রাত করিয়া দিবে। গায়তুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা। নজরকারী নজরের গোস্ত খাইলে সেই পরিমান গোস্তের মূল্য খয়রাত করিয়া দিবে, যদি নজরের পশু জবেহ করে, তবে সমস্ত

গোস্ত খয়রাত করিয়া দিবে, জবেহের দ্বারা গোস্তের মূল্য কমিয়া গেলে যাহা কমিয়া যাইবে তাহার মূল্য খয়রাত করিয়া দিবে, এই মত যদি কোন গরীবে কোরবানী করিবার জন্য একটি পশু খরিদ করার পর কোরবানী করিতে না পারে কোরবানের দিবস চলিয়া গেলে, তখন ঐ ব্যক্তি কোরবানীর পশুটিকে জীবিত খয়রাত করিয়া দিবে কারণ কোরবানের দিবসে কোরবান করিলে জবেহ করেিত হয়। যখন কোরবানের দিবস গত হইয়া যায় তখন জীবিত পশু খয়রাত করিতে হইবে। যদি কোন ধনবান লোক কোরবান করাকে নিজের উপর ওয়াজেব করিয়া, না লয়, ও কোরবানের জন্য কোন পশুও খরিদ করে নাই পরে ঐ সময় কোরবানের দিবস যদি গত হইয়া যায় তবে ঐ ব্যক্তি একটি ছাগলের মূল্য খয়রাত করিয়া দিতে হইবে। শামী ৫ম খণ্ড ২২৬ পৃষ্ঠা ও সরবেকায়া ও মেফতাহুল জন্নত ১১৭ পৃষ্ঠা। এইরূপ কোন ধনবান লোক কোরবানের সময় কোরবান করিতে না পারিলে একটি ছাগলের মূল্য খয়রাত করিয়া দিতে হইবে। যদি কোরবানের জন্য ছাগল খরিদ না করে, যদি খরিদ করে, তবে তাহার ইচ্ছা জীবিত পশুটি খয়রাত করিয়া দিতে পারে নতুবা তাহার মূল্য খয়রাত করিয়া দিতে পারে। কেতাব ঐ পৃষ্ঠা ঐ ও গায়তুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮৬ পৃষ্ঠা বাজ কেতাবে লিখিত আছে কোরবানের জন্য পশু খরিদ করিলে কোর্ব্বানের র্নিদ্দষ্টি সময়মতে কোরবান না করিলে সময় গত হইয়া গেলে জীবিত পশুটি খয়রাত করিয়া দিবে, যদি লোকটি ধনবান হয়, আরও বাজ কেতাবে লিখিত আছে, কোরবানের জন্য পশু খরিদ করুক বা না করুক মালদার হইলে কোরবানের র্নিদ্দষ্টি সময়গত হইয়া গেলে মূল্য খয়রাত করিয়া দিতে হইবে। কোরবানের রুকন, যেই পশুর দ্বারা কোরবানী দুরস্ত, সেই পশুকে জবেহ করা,

অন্য পশু নহে, অর্থাৎ চৌ পায়া পশু জবেহ করা, কোরবানের রুকন। যেই ব্যক্তির উপর কোরবানী ওয়াজেব নহে, গরীব হওয়ার দরুন। সেই ব্যক্তি কোরবান করার নিয়তে কোরবানের দিবসে মুরগি বা মুরগা জবেহ করা মকরুহ তাহরিমা জানিবে, কারণ মজুছি অর্থাৎ আগুন পুজকের সহিত তাহার তুলনা হইতেছে। আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩২ পৃষ্ঠা ও শামী ৫ম খণ্ড ২২০ পৃষ্ঠা ও গায়েতুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮২ পৃষ্ঠা ইত্যাদি। প্রতি বৎসর কোরবানী করিবার জন্য যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে তছিয়ৎ করিয়া যায় তবে বৎসর ২ তাহার কোরবানী করা তদীয় উত্তরাধিকারীগণের উপর ওয়াজেব, কোরবানের দিবসে জীবিত লোক দিগের সঙ্গে একই গরুতে অংশীদার রূপে তাহার কোরবানী করা যাইতে পারে। কিন্তু তদীয় অংশের, মাংস তাহার ওয়ারিশগণ খাইতে পারিবে না। সমস্তই বিতরণ করিতে হইবে। যদি মৃত ব্যক্তি অছিয়ৎ করিয়া না যায় তবে তাহার কোরবানী করা তদীয় ওয়ারিশ গণের পক্ষে নফল। ইহাও কোরবানের দিবসে জীবিত লোকদিগের সহিত অংশী দাররূপে আদায় করা যাইতে পারে। দান বিতরণাদি করিয়া অবশিষ্ট মাংস তাহার ওয়ারিশগণ খাইতে পারে, ইহা ও জানিবে যে অছিয়ৎ করা কোরবানীর গোস্ত ফকির ও মিছকিনকে দান করিতে হইবে। শামী ৫ম খণ্ড ২৩৬ পৃষ্ঠা কেতাবুল উজহিয়া। নিজের পালিত গরু কিম্বা মহিষ দ্বারা অন্য লোকের সহিত অংশীদার রূপে কোরবাণী করিতে চাহিলে প্রথমত: তাহার ন্যায্য মূল্য ঠিক করত: অংশীদারগণের নিকট হইতে সর্ম্পূন মূল্য গ্রহণ করিয়া পরে আপন অংশের টাকা তাহাদিগকে প্রত্যার্পণ করিতে হইবে। কোরবানের র্পূব্বে বা, কোরবানের চাঁদ উদিত হইবার র্পূব্ব,ে কোরবানী পশু খরিদ করিয়া

রাখা যাইতে পারে। কিন্তু তাহাতে ভিন্ন ২ পরিবারের অংশীদার থাকিলে অংশীদারগণ সকলের দ্বারা কোরবানের দিবসের শেষ ও জবেহের র্পূব্বে র্পয্যন্ত ঐ পশু পালিত হওয়া আবশ্যক। যাহার প্রতি কোরবানী ওয়াজেব ঐ ব্যক্তি যদি কোরবানী পশু খরিদ করিয়া কোরবানের র্পূব্বে তাহা হারাইয়া ফেলে বা মরিয়া যায় নতুবা চুরি হয়, তবে অন্য পশু খরিদ করিয়া তাহাকে কোরবানী করিতে হইবে। এবং কোরবানের দিবসের আন্দর ঐ পশুটি পূন: প্রাপ্ত হইলে তাহা বিক্রয় করিয়া টাকা গ্রহণ করিতে পারিবে। কিন্তু যাহার প্রতি কোরবানী ওয়াজেব নহে অর্থাৎ গরীব লোক যদি কোরবানী করার নিয়তে পশুটী খরিদ করার পর হারাইয়া ফেলিলে, নতুবা মরিয়া গেলে, বা চুরি হইলে, তাহার উপর আর একটি পশু খরিদ করিয়া কোরবানী করা ওয়াজেব নহে। হাঁ যদি আর একটি পশু খরিদ করিয়া কোরবানী করার পর, হারাণ পশু বা চুরি হওয়া পশুটি কোরবানের দিবসে আন্দর পাওয়া গেলে তাহার দ্বারা ও কোরবানী করিতে হইবে। কোরবানের দিবসের পরে পাওয়া গেলে, জীবিত পশু দান করিতে হইবে বিক্রয় করিয়া টাকা লইতে পারিবে না। জিলহজ্জ চাঁদের নয় তারিখের ফজররে ফরজ নামাজের পর হইতে ১৩ তারখিরে আছররে ফরজ নামাজরে পর র্পয্যন্ত প্রত্যেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক এবং মুকিম ও মুছাফের সকলের উপর জামাতে হউক বা একাকী হউক একবার একবার তকবির বলা ওয়াজেয় কিন্তু তকবির পুরুষ উচ্চরবে এবং স্ত্রীলোক চুপে চুপে বলিবে ফতোয়া শামী ৫ম খণ্ড ২২৮ পৃষ্ঠা ও গায়েতুল আওতার ১ম খণ্ড ৩৯০। ৩৯১ পৃষ্ঠা হজরত ছরত্তরে আলম (দ:) ফরমাইয়াছেন যখন তোমরা জিলহজ্জ চাঁদ দেখ ও কোরবান করিতে ইচ্ছা কর, তখন নিজের চুল ও নখ হইতে বিরত থাকিবে, অর্থাৎ না কাটিবে র্মম্ম

এই যে যাহারা কোর্রব্বানী করিবেন, তাহারা জিলহজ্জ চাঁদের ১ম তারিখ হইতে ১০ম তারিখ র্পয্যন্ত ক্ষৌর র্কম্ম অর্থাৎ নখ ও ছুল ইত্যাদি কাটা হইতে বিরত থাকা মোস্তাহাব ও ছওয়াবের ভাগি হইবে, গায়েতুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮২ পৃ: যেই ব্যক্তির উপর নামাজ ফরজ, সেই ব্যক্তির উপর তকবির বলা ওয়াজেব। এই বাক্যের উপর ফতোয়া তকবির এই মত পড়িবে।

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد ـ

ফরজ নামাজের ছালাম ফিরার পর তকবির বলিতে হইবে, যদি ছালামের পর কোন কথা বলে বা কিছু খায় নতুবা মসজিদ হইতে বাহিরে চলিয়া যায় ও মুনাজাত ইত্যাদি কার্য্য করিলে তকবির আর বলিতে পারিবে না, তকবির এমাম সাহেব ভূলিয়া না বলিলে তবে ও মুকতদি গণের উপর এয়াদ থাকিলে বলা ওয়াজেব হইবে, এমাম আবু ইউছুফ (রহ:) বলিয়াছেন, আমি জিলহজ্জ চাঁদের নয় তারিখের মগরীবের নামাজের এমামতি করিয়া তকবির ভূলে বলি নাই, তখন এমাম আবু হানিফা (রহ:) মুকতদিগণের দ্বারা তকবির বলাইয়াছিলেন, যিনি মছবুক কিম্বা লাহেক হয়, তাহার উপর বাকি নামাজ পড়িয়া ছলামের পর তকবির বলা ওয়াজেব যদি তাহারা এমামের সঙ্গে ২ তকবির বলে, তবে তাহারার নামাজ ভঙ্গ হইবে না, কিন্তু লব্বায়েক বলিলে নামাজ ভঙ্গ হইবে কারণ লব্বায়েক শব্দ মানুষের কথা ও আলাপের সঙ্গে তুলনা হয়। মছবুক, অথবা লাহেক তাহারা এমামের সঙ্গে নামাজের আন্দর তকবির বলিলে ও ছালাম ফিরার পর দোবারা তকবির বলিতে হইবে, যেই

তকবির এমামের সঙ্গে বলিয়াছেন তাহা, জায়গা মতে বলা হয় নাই। আইয়ামে তসরিকের কাজা নামাজের ৪ চারি ছুরত আছেÑ প্রথম ছুরত এই আইয়ামে তসরিকের আগের নামাজে, আইয়ামে তসরিকের আন্দর কাজা করা; ২য় ছুরত এই যে, আইয়ামে তকবিরের আন্দরের নামাজ আইয়ামে তকবির গত হওয়ার পর কাজা করা; ৩য় ছুরত এই এক বৎসরের আইয়ামে তকবিরের অন্য বৎসরের আইয়ামে তকবিরের আন্দর কাজা করা; ৪র্থ ছুরত এই, আইয়ামে তকবিরের নামাজ অর্থাৎ চলিত সনের আইয়ামে তকবিরের নামাজ, চলিত সনের আইয়ামে তকবিরের আন্দর কাজা করা। এই চারি ছুরত হইতে কেবল আখেরী ৪র্থ ছুরত কাজা নামাজের পর তকবির বলা ওয়াজেব হইবে। উপরের লিখিত তিন ছুরতে তকবির ওয়াজেব নহে। রমজানের ঈদের নামাজের র্পূব্বে কিছু মিষ্ট দ্রব্য খাওয়া মস্তাহাব। গায়েতুল আওতার, কিন্তু কোরবানের ঈদের নামাজের র্পূব্বে না খাওয়া মস্তাহাব, কোরবানীকারীগণ কোরবানী পশু জবেহ করার সময় সেই স্থানে উপস্থিত থাকা ভাল, কারণ হজরত মহাম্মদ মস্তফা (ছ:) আপনার বিবি আয়সা ছিদ্দিকা (র:) কে বলিয়াছিলেন, হে আয়সা তোমার কোরবানীর জন্য তুমি দাঁড়াও উপস্থিত থাক কারণ কোরবানীর পশু জবেহ করার সময় প্রথম রক্তের যেই ফোঁটা জমিনের উপর পড়িবে তদ্ধারা তোমার সমস্ত গুনাহ মাফ করিবেন। তখন আয়সা ছিদ্দিকা (র:) বলিলেন, হে রছুলুল্লাহে (ছ:) এই খবর সমস্ত মোমেনিন লোকের জন্য, নতুবা কেবলমাত্র আমার জন্য খাছ? তদউত্তরে হজরত (ছ:) ফরমাইলেন, আমরার জন্য ও সমস্ত মোমেনিনের জন্য। হজরত (ছ:) ফরমাইয়াছেন, সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও যেই ব্যক্তি কোরবানী করে না সেই ব্যক্তি আমার এই পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করিতে পারিবে না। ২য় রেওয়ায়তে ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও কোরবানী করেনা সেই ব্যক্তি এহুদী হইয়া মরিবে

নতুবা নছরা হইয়া মরিবে। হজরত আলি র্করম-ল্লাহু ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি কোরবানী পশু খরিদ করার মননে ঘর হইতে বাহির হইবেন তাহার প্রত্যেক কদমে দশ খানা নেকি লিখিবেন ও দশ খানা গুনাহ মাফ করিবেন ও দশ খানা র্মতবা উচ্চ করিয়া দিবেন। যখন পশু খরিদ করার জন্য আলাপ করিবেন তখন ঐ ব্যক্তির আলাপ তছবিহের মধ্যে গণ্য হইবে, যখন পশুর মূল্য আদায় করিয়া দিবেন তখন এক দরমের বদলে ৭০০ সাত শত দরমের ছওয়াব পাইবেন, যখন কোরবান করিবার জন্য ঐ জানুয়ারটিকে মাটির উপর শোয়াইবেন তখন এই জমি হইতে সপ্তম জমিন র্পয্যন্ত খোদার যাহা সৃষ্টি আছে তাহা সমস্তই ঐ কোরবান কারকের জন্য গুনাহ মাফ চাহিবেন, যখন জবেহ করার পর রক্ত বাহির হইবে, তখন আল্লাহ তালা এক এক ফোটা রক্ত হইতে ১০ দশটী ২ করিয়া ফেরেস্তা তৈয়ার করিবেন ঐ সকল ফেরেস্তা কোরবান কারকের জন্য কেয়ামত র্পয্যন্ত গুনাহ মাফ চাহিতে থাকিবে, যখন কোরবানীর গোস্ত ভাগ করিয়া পরে ভোজন করিবে তখন প্রত্যেক গ্রাসে যেমন একটি ২ গোলাম, হজরত ইসমাইলের (আ:) আওলাদ হইতে আজাদ করিল। হাদিছ হজরত আলি (রা:) ও হজরত আনছ (র:) বলিয়াছেন যে হজরত মহাম্মদ মস্তফা (ছ:) ফরমাইয়াছেন, যখন মোমেনগণ কবর হইতে বাহির করা যাইবেন, তখন আল্লাহ তালা বলিবেন, হে আমার ফেরেস্তাগণ আমার বন্ধাগণকে পেয়াদা অর্থাৎ পায়ে হাঁটাইয়া নিওনা, তাহারার ঘোড়ার উপর তাহারাকে ছওয়ার করাইয়া লও কারণ তাহারার দুনিয়াতে ছওয়ারীর আদত ছিল। প্রথম বাপের পিটের উপর ছরয়াব ছিলেন, তাহার পর মাতার পেটে ছওয়ার ছিলেন তাহার পর মাতার গোদে অর্থাৎ কোলে ছওয়াব ছিলেন, তাহার পর বাপের কাঁধে ও গর্দ্দনে ছওয়ার ছিলেন তাহার পর অর্শ্বের উপরও খচ্চর ও জাহাজ ইত্যাদিতে

ছওয়ার ছিল, যখন মৃত হইলে তখন ভ্রাতাগণের উপর ছওয়ার হইয়াছিল। যখন কবর হইতে বাহির হইয়া উঠিল, তখন পায়ে চালাইয়া নিওনা, ইহাদের ছওয়ারীর আদত হইয়াছে। তাহারা ইতি র্পূব্বে ছওয়ারী রওয়ানা করিয়াছেন অর্থাৎ ঘোড়া পাঠাইয়াছেন, উহা তাহাদের কোরবানী যেমন আল্লাহতালা তাহার খবর দিয়াছেন কোরান মজীদে

يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ اِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا

এই জন্য হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছ:) ফরমাইয়াছেন, হে! আমার উম্মতগণ তোমরা তোমাদের কোরবানী মোটা কর কারণ পুলছরাত পার হইবার সময় উহা তোমাদের ছওয়ারী হইবে। উপরে যেই ২ স্থানে কোরবানের দিবস লিখিত হইয়াছে তাহা জিলহজ্জ চাঁদের ১০। ১১। ১২ তারিখের র্সূয্যাস্তের র্পূব্বে সময় র্পয্যন্ত বুঝিয়া লইবে। ও যেই স্থানে অছিয়ৎ লিখা আছে তাহার অর্থ এই, ছেলে মাতা ও পিতা মৃত্যু হইবার সময় ছেলেকে যেই ব্যক্তির উপর সফর্দ্দ করে তাহাকে অছি বলে। কোরবানকারী লোকে নিজের কোরবানী পশুর গোস্ত খাইবে ও ধনী ও দরিদ্রগণকে খাবাইবে ও নিজে জমা করিয়া রাখিতে পারিবে, কুদুরী ও হেদায়ার মজমুন। কোরবানীর গোস্ত তিন ভাগের একভাগ খয়রাত করা মোস্তাহাব। যাহার নিকট আওলাদ বেশী ও বড় পরিবার সেই ব্যক্তি কোরবানীর গোস্ত দান না করা মোস্তাহাব ও ভাল। যদি জবেহের আহকাম ভালমতে জানে নিজের হাতে জবেহ করা ভাল নতুবা অন্য লোককে জবেহ করিবার জন্য হুকুম দিবে (সরহে বেকায়া) কোরবানীর পশুকে কেবলামুখী করিয়া জবেহ করিবে জবেহ করিবার। আগে এই দোয়াটি পড়িয়া লইবে।

اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا

مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ اِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لَلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَاشَرِيْكَ لِهُ وَبِذَالِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا َاوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ اَللهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ র্পয্যন্ত পড়িয়া بسم الله الله اكبر বলিয়া জবেহ করিবে, জবেহ করার পর এই দোয়া পড়িবে اللهم تقبل من র্পয্যন্ত পড়িয়া কোরবানী কারকের নাম ও পিতার নাম লইবেন অর্থাৎ এই মত বলিবে اللهم تقبل من আবদুল আজিজ পীং হায়দর আলি ও কন্যা হইলে দোক্তরে বলিতে হইবে, যেমন জয়নব খাতুন দোক্তরে হায়দর আলি বলিবেন। যখন ছরদ হইবে তখন চামড়া খালাইয়া লইবেন ও গোস্ত পাক করিবেন। কোরবানীর চামড়া খয়রাত করিতে পারিবেন, অর্থাৎ দান করিতে পারিবেন, নতুবা কোরবানীর চামড়ার দ্বারা বিছানা তৈয়ার করিতে পারিবেন, নতুবা যেই বস্তু বাকী থাকে তদ্ধারা বদলাইয়া ফায়েদা ও উপকৃত হইতে পারিবেন, যেমন চামড়া দিয়া মোশক ও চালনি ও দস্তর খানা ইত্যাদি খরিদ করিতে পারিবেন, নতুবা চামড়ার মূল্য দান করিবার উদ্দেশ্যে বিক্রয় করিতে পারিবেন যেমন আমাদের দেশের দস্তর কিন্তু খরচের জন্য বিক্রি করা দোরস্ত নহে, যখন চামড়া বিক্রি করা যাইবে তখন মূল্য ফকির মিছকিনকে দান করা ওয়াজেব হইবে। কারণ যাহারা জকাত ও ফেত্রা লওয়া দুরস্ত আছে তাহারা কোরবানীর চামড়ার মূল্য খাইতে

পারিবেন; গায়েতুল আওতার ১৮৯ পৃষ্ঠা ৪র্থ খণ্ড, খোলাছাতুল ফতোয়া ৩২২ পৃষ্ঠা কেতাবুল উজহিয়া ৪র্থ খণ্ড। কোরবানীর চামড়ার মূল্য নিজের জন্য ও নিজের আওলাদের জন্য খরচ করা দুরস্ত নহে, কোরবানীর চামড়ার পয়সা তমলিক করা ওয়াজেব। মালদারকে, কোরবানীর পয়সা দেওয়া দুরস্ত নহে, কোরবানীর গোস্ত দ্বারা কসাইর জবেহকারীর মজুরি দেওয়া দুরস্ত নহে। কারণ গোস্তের দ্বারা ও চামড়ার দ্বারা মজুরি দেওয়া তাহা বিক্রি করার মত। আমাদের দেশে বাজ্ লোকে কোরবানী পশু জবেহকারীকে চামড়া বিক্রি করিয়া পয়সা দিয়া থাকে যদি জবেহকারীকে ঐ পয়সার দ্বারা মজুরি দিয়া থাকে, নতুবা জবেহকারী মালদার ব্যক্তি হয় তবে নাজায়েজ হইবে। এমদাদুল ফতোয়া ২য় খণ্ড ১১৩ পৃষ্ঠা ও গায়েতুল আওতার ১৮৯ পৃষ্ঠা ৪র্থ খণ্ড খোলাছা ও আলমগিরি। কোরবানী ফৌত হইলে অর্থাৎ অক্ত মতে করিতে না পারিলে তাহার কাজা দিতে হইবে। তাহার বিবরণ র্পূব্বে ভালমতে লিখা হইয়াছে। যদি কোন ব্যক্তি কোরবান করিবে বলিয়া নজর করে তাহাতে কোন পশু কোরবানী করিবে নজরের জন্য র্নিদ্দষ্টি করিল না, তবে কোরবানের দিবসে একটি ছাগল কোরবানী করিয়া ফকির ও মিছকিনকে বাঁটিয়া দিলে আদায় হইবে। নিজে খাইতে পারিবে না খাইলে তাহার মূল্য ফকির মিছকিনকে দিতে হইব।ে এক ব্যক্তি ২ দুইটা পশু কোরবানী করিলে দোনটা কোরবানীতে গণ্য হইবে। বাজ ফকিহগণ বলেন দ্বিতীয়টা গোস্ত খাওয়ার মধ্যে গণ্য হইবে। গায়তুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৯১ পৃষ্ঠা।

কোরবান করার সময়ের বিবরণ

কোরবানী করার জন্য জিলহজ্জ চাঁদের ১০। ১১। ১২ তারিখের র্সূয্যাস্তের র্পূব্বে র্পয্যন্ত র্নিদ্দষ্টি অর্থাৎ এই তিন দিনের আন্দর যেই সময় চাহে

কোরবান করিতে পারিবে, ১০ দশ তারিখের ফজর হওয়ার পর হইতে কোরবান করার সময় আরম্ভ হয়। ১০ দশ তারিখে কোরবান করা আফজল ১১ তারিখে কম ১২ তারিখে তাহার চেয়ে কম কিন্তু রাত্রিতে জবেহ করা মকরুহ। কোরবানের সম্বন্ধে অর্থাৎ কোরবানের তারিখের মধ্যে যদি এমাম সাহেবের সন্দেহ হয়, তবে কোরবানের তৃতীয় তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা না করা মোস্তাহাব অর্থাৎ ১০ দশ তারিখের দিনে সন্দেহ হইলে ১১ এগার তারিখের দিন কোরবানী করিবেন ১২ বার তারিখের দিন কোরবান না করিবেন কারণ সেই তারিখে হয়ত ১৩ তের তারিখ হইতে পারে, যদিও ১২ বার তারিখে কেহ কোরবান করে তবে সমস্ত গোস্ত বিতরণ করা মোস্তাহাব ও না খাইবে। ফতোয়া কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড কেতাবুল উজহিয়া ৩৩১ পৃষ্ঠা ও আলমগিরী ৫ম খণ্ড ৩৩৭ পৃষ্ঠা ইত্যাদি। গাঁয়ের বস্তির মধ্যে যাহারা বাস করে তাহারার জন্য ১০ দশে জিলহজ্জ চাঁদের র্সূয্য উদয় হওয়ার পর হইতে আরম্ভ হয় ও সহর বাসি লোকের জন্য ঈদের নামাজের খোত্বার পর হইতে আরম্ভ হয় এই মত “জহিরিয়” নামক কেতাবে লিখিত আছে। এমাম সাহেব নামাজের মধ্যে থাকার সময় যদি কোরবানী পশু জবেহ করা যায়, তবে কোরবানী দুরস্ত হইবে না, সেই মত আত্তাহিয়া পড়িবার পরিমাণ বসিবার র্পূব্বে কোরবানী করিলে জায়েজ হইবে না, যদি ঐ পরিমাণ বসিয়া পড়িলে ছালাম ফিরার র্পূব্বে কেহ কোরবানী পশু জবেহ করিলে এমাম আবু হানিফা (রাহ:) মত মতে দুরস্ত (জাএজ) হইবে না। এই মত “বদায়া” নামক কেতাবে লিখিত আছে ও খাজানতুল মুফ্তিন; ফকিহগণ উহা ছহি বলিয়া বলিয়াছেন, আলমগিরী ৫ম খণ্ড। যদি সহরের মসজিদের মুছল্লিগণ ময়দানের মুছল্লিগণের র্পূব্বে ঈদের নামাজ পড়িয়া কোরবান করেন, দলিলে এস্তেহছান মতে দুরস্ত হইবে। এই মত ময়দানের নামাজিগণ যদি সহরি নামাজিগণের র্পূব্বে ফরাগত হয় তাহাও দুরস্ত হইবে। অর্থাৎ কেতাবে যাহারাকে, সহরী

বলে তাহারা ঈদের নামাজের র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিলে দুরস্ত হইবে না। সরিয়তে যাহারাকে, সহরী না বলে অথবা গাঁয়ের লোক বলে এবং জুমার নামাজ ও ঈদের নামাজ যেই স্থানে পড়া দুরস্ত নহে, সেই জায়গার লোকে ঈদের নামাজ না পড়িয়া কোরবানী করিতে পারিবে। যেই জায়গায় জুমার নামাজ ও ঈদের নামাজ পড়িতে ওয়াজেব হয়, সেই জায়গার লোকে ঈদের নামাজের র্পূব্বে কোরবান করিলে দুরস্ত হইবে না। এমাম সাহেব এক ছালাম ফিরার পর কোরবান করিলে জায়েজ হইবে অর্থাৎ এক দিকে ছালাম ফিরাইয়াছে, বাম দিকে ছালাম ফিরাইবার র্পূব্বে কেহ কোরবানীর পশু জবেহ করিলে সমস্ত এমামগণের মত মতে দুরস্ত হইবে। আলমগিরী ও কাজি খাঁন। কোরবানী পশু যদি সহরে ও কোরবানী কারি গাঁএর মধ্যে থাকে তখন এক ব্যক্তিকে পশু জবেহ করার জন্য পাঠাইলে ঈদরে নামাজরে র্পূবে সইে ব্যক্তি ঐ সহরে পশু জবহে করিলে দুরস্ত হইবে না। যদি কোরবানী পশু কোন গাঁওতে থাকে ও কোরবান কারি সহরে থাকিলে যদি কেহকে ও কোরবান করিবার জন্য আদেশ দিলে নামাজের র্পূব্বে গাঁওর মধ্যে কোরবান করিলে দুরস্ত হইবে। কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা। কারণ পশু যেই স্থানে থাকে সেই জায়গা মোতবর হইবে। কোরবান কারকের জায়গা মোতবর হইবে না। যদি এউমুন্নাহারে অর্থাৎ দশ তারিখে সন্দেহ হইয়া সকলে নামাজ পড়িয়া কোরবান করিল পরদিন তাহারা জানিতে পারিল যে, গত কল্য জিলহজ্জ চাঁদের নয় তারিখ অর্থাৎ আরফার দিন ছিল, তবে তাহারা কোরবান ও নামাজ দোহরাইতে হইবে, সোবা ও সন্দেহ করে যে অদ্য তারিখ দশে জিলহজ্জ নতুবা নয় জিলহজ্জ হয়, তবে ভাল এই যে আগামী কল্য সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পর অর্থাৎ সন্দেহের দিনের পর সূর্য্য ঢলিলে কোরবান করিবে। কেতাব ঐ ও পৃষ্ঠা ঐ। যদি নয় জিলহজ্জ অর্থাৎ আরফাতের দিনে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পর কেহ কোরবান করে, পরে

জানা গেল যে ঐ দিন নয় তারিখের দিন নহে, দশ তারিখের দিন ছিল, তবে এমাম জাফরানি (রহ:) বলেন কোরবানী দুরস্ত হইবে। এই মত যদি কেহ দশ তারিখে ঈদের নামাজের র্পূব্বে পশু জবেহ করার পর প্রকাশ হইল ঐ দিন এগার তারিখের দিন ছিল, তবে তাহার কোরবানী দুরস্ত হইবে। কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড কেতাবুল উজহিয়া ৩২৯ পৃষ্ঠা। ঈদের দিন ঈদের নামাজের পরে স্মরণ হইল যে এমাম বে-অজু কিম্বা নাপাকি অবস্থায় এমামতি করিয়াছে, কিন্তু ঐ সময় লোকে অর্থাৎ মুকতদিগণ কোরবানী পশু জবেহ করিয়াছে, ও মুকতদিগণ ঈদের নামাজের স্থান হইতে আলগ ২ হইয়া গিয়াছে, তবে কোরবানী দুরস্ত হইবে। যদি লোকগণ আলগ হওয়ার র্পূব্বে স্মরণ হয় তখন মুকতদিগণ সহ লইয়া এমাম নামাজ দ্বিতীয় বার পড়িবে অর্থাৎ দোহরাইতে হইবে, ও কোরবানী দোহরাইতে হইবে না লোকগণ জুদা ২ হওয়ার পর নামাজ দোহরাইবার জন্য আওয়াজ দিলে ঐ সময় এমামের বে-অজু নামাজ পড়ার অবস্থা অবগত হওয়ার পরও র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিলে কোরবানী দুরস্ত হইবে। অবগত হওয়ার পরও সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিলে দুরস্ত হইবে না, সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার পরে জবেহ করিলে কোরবানী সিদ্ধ হইবে। লোকগণ উপস্থিত না হইলে এমাম সাহেব একাকী ঈদের নামাজ দোহরাইতে হইবে। আলমগিরী ৫ম খণ্ড, ৩৩৭ পৃষ্ঠা, ফতোয়া ছেরাজিয়া ৮৯ পৃষ্ঠা খোলাছা ৩১১ পৃষ্ঠা ৪র্থ খণ্ড ও স্বামী ৫ম খণ্ড ৩২৪ পৃষ্ঠা। মিনার মধ্যে ঈদের নামাজ নাই। কারণ হাজিগণ হজ্জের কাজে ব্যস্ত থাকে এইজন্য ঐতারখিে তাহাদরে জন্য কোরবানরে ঈদরে নামাজ মাফ। স্বামী ৫ম খণ্ড এক সহরের মধ্যে ফেত্না ও ফছাদ আছে ও তাহাতে হাকেম নাই, সেই সহরের লোক নামাজ না পড়িয়া ফজর উদয় হওয়ার পর কোরবানী করিলে দুরস্ত হইবে, হাকেম যদি জানিয়া শুনিয়া নামাজ না পড়ে তবে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে কোরবানী করা দুরস্ত হইবে না।

৪র্থ খণ্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা। ১১। ১২ তারিখে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে ও পরে কোরবানী করা দুরস্ত হইবে। কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড। দশে জিলহজ্জ তারিখে কোন ওজর ছাড়া বা ওজর দ্বারা ঈদের নামাজ না পড়িলে সূর্য্য ঢলিয়া যাওয়ার র্পূব্বে কোরবান দুরস্ত হইবে না। কন্তিু ১১।১২ তারখিে নামাজরে র্পূব্বে কোরবানী পশু জবেহ করিতে পারিবে। আলমগিরী ৫ম খণ্ড। কয়েকজন সাক্ষী এমাম সাহেবের নিকট জিলহজ্জ চাঁদের সাক্ষ্য দেওয়াতে কোরবানের ঈদের নামাজ পড়িল ও কোরবান করিল পরে প্রকাশ হইল যে ঐ তারিখ নয় জিলহজ্জ হয় অর্থাৎ দশে জিলহজ্জ নহে। উহা আরফাতের দিন ছিল, তবে ফকিহগণ বলিয়াছেন নামাজ দুরস্ত হইবে ও কোরবানী দুরস্ত হইবে, কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড কেতাবুল উজহিয়া ৩৩১ পৃঃ। যদি এমাম সাহেব কোরবানের ঈদের নামাজ পড়িবার জন্য ১১ এগার তারিখে জিলহজ্জ চাঁদে বাহির হয় নতুবা ১২ বারই জিলহজ্জ তারিখে বাহির হয়, তবে যেই ব্যক্তি জিলহজ্জ চাঁদের এগার তারিখে বা ১২ বার তারিখে এমাম সাহেব নামাজ পড়িবার র্পূব্বে কোরবান করিবে তাহার কোরবানী সিদ্ধ হইবে। কারণ নামাজের অক্ত চলিয়া গিয়াছে, যদি তিন ব্যক্তি এক একটি করিয়া কোরবানীর জন্য ছাগল খরিদ করিল, এক ব্যক্তি ১০ দশ দরম দিয়া ছাগল খরিদ করিল, ২য় ব্যক্তি ২০ কুড়ি দরম দিয়া ৩য় ব্যক্তি ৩০ ত্রিশ দরম দিয়া খরিদ করিল, প্রত্যেক ছাগলের মূল্য বাজারের মূল্য মতে এক সমান হয় অর্থাৎ বরাবর হয় পরে তিন ব্যক্তির ছাগল এই রকম ভাবে মিশ্রিত হইয়া গেল। অর্থাৎ একত্র হইয়া গেল যে কাহার ছাগল কোনটি কেহ চিনিতে পারিতেছেন না; তবে তাহারা ১ একটি ২ ছাগল দিয়া কোরবানী করিবার জন্য সম্মত হইল। তখন তাহারা এই রকম

ভাবে কোরবানী করিতে হইবে, যেই ব্যক্তি ৩০ ত্রিশ দরম দিয়া খরিদ করিয়াছে সে ২০ কুড়ি দরম খয়রাত করিবে ও ২০ কুড়ি দরম ওয়ালা ১০ দশ দরম খয়রাত করিয়া দিবে ও ১০ দশ দরম ওয়ালার কিছুই খয়রাত করিতে হইবে না, কারণ যেই ব্যক্তি ৩০ ত্রিশ দরম দিয়া খরিদ করিয়াছে হয়ত সেই ব্যক্তি ১০ দশ দরমের খরিদা ছাগলটি জবেহ করিয়াছে, যেই ব্যক্তি ২০ কুড়ি দরম দিয়া খরিদ করিয়াছে, হয়ত সেই ব্যক্তি ১০ দশ দরম ওয়ালা ছাগলটির দ্বারা কোরবান করিয়াছে, বাকী ব্যক্তি ১০ দশ দরম ওয়ালা ছাগলটি দিয়া কোরবানী করিয়াছে, তাই তাহার উপর কিছু খয়রাত করিতে হইবে না। যদি ঐ রকম ভাবে খয়রাত না করিয়া, এক ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বলে যে তুমি আমার কোরবানী ঐ ছাগলের দ্বারা কর আমি তোমাকে এজন দিলাম। এই রকম প্রত্যেকে অন্যকে বলিলে তিন ব্যক্তির কোরবানী দুরস্ত হইয়া যাইবে। কেহ কিছু খয়রাত করিতে হইবে না। গায়তুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা ও শামী ৫ম খণ্ড ২৩০ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।

কোন ২ পশুর দ্বারা কোরবানী করা দুরস্ত ও কোন ২ পশুর দ্বারা কোরবানী না দুরস্ত তাহার বিবরণ

চারি রকমের পশু দ্বারা কোরবানী করা দুরস্ত আছে (১) গরু, যেই গরুর দুই বৎসর গত হইয়াছে। (২) উষ্ট্র, যেই উষ্ট্রের পাঁচ বৎসর গত হইয়া ছয় বৎসর চলিতেছে। (৩) ছাগল, যেই ছাগলের এক বৎসর গত হইয়াছে। (৪) দুম্বা যাহার এক বৎসর গত হইয়াছে। মহিষ গরুর মধ্যে সামিল, অর্থাৎ মহিষ দুই বৎসর গত হইলে কোরবাণী করিতে পারিবে, ভেড়া ও মেষ এবং দুম্বা ছাগলের মধ্যে সামিল, খোলাছা ও আলমগিরি ৫ম খণ্ড ও মেফতাহুল জান্নাত। যেই

ব্যক্তি গছবীয় ছাগলের দ্বারা কোরবাণী করিবে সেই ছাগলের মূল্য আদায় করিলে কোরবান দুরস্ত হইবে। কিন্তু আমানতি ছাগলের দ্বারা কোরবান করিলে পরে তাহার মূল্য জেমান দিলে ও কোরবানী জায়েজ হইবে না। হেদায়া ৩য় খণ্ড ৪৩৬ পৃষ্ঠা ও নুরল হেদায়া ৪র্থ খণ্ড ২৯৪ পৃষ্ঠা। কোরবাণী পশু জবেহ করার র্পূব্বে বাচ্চা দিলে বাচ্চাকেও জবেহ করিতে হইবে, যদি জবেহ না করে কোরবানের দিবস গত হইয়া যায় তবে বাচ্চাটিকে জীবিত খয়রাত করিয়া দিতে হইবে। যদি ঐ বাচ্চাটি অনিষ্ট হইয়া যায় নতুবা জবেহ করার পর গোস্ত খাইলে গোস্তের মূল্য দান করিতে হইবে। যদি বাচ্চাটি জবেহ না করিয়া নিজের নিকট রাখিয়া দিয়া সামনের বৎসরে কোরবান করে তাহা জায়েজ হইবে না, ও ঐ ব্যক্তির আর একটি পশু খরিদ করিয়া কোরবান করিতে হইবে, “আছল” নামক কেতাবে লিখিত আছে, যদি বাচ্চাটাকে বিক্রি করে তাহার মূল্য দান করিতে হইবে ও গাভীটি কোরবানের জন্য র্নিদ্দষ্টি হইবে। এমামগণ হইতে বাজ এমাম বলিয়াছেন, এই হুকুম যেই ব্যক্তি নজর করিয়াছে তাহার জন্য নতুবা কোরবান কারি গরীব হইলে তাহারা এই রকম করিতে হইবে, যাহারা মাল দার তাহারা সেই পশুর দ্বারা কোরবান না করিয়া অন্য পশুর দ্বারা কোরবান করিতে পারিবে। শামী ৫ম খণ্ড ২২৭ পৃষ্ঠা। জঙ্গলি গরুর দ্বারা কোরবাণী জায়েজ হইবে না। যেই গরু, আহালি ও জঙ্গলি গরু হইতে জন্ম হয়, সেই গরুর মাতা যদি আহালিয়া হয় তবে সেই গরুর দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত হইবে। কিন্তু সেই গরুর ও বয়স ২ দুই বৎসর গত হইয়া গেলে জায়েজ হইবে। নতুবা জায়েজ হইবেনা। কাজি খাঁ ৪র্থ খণ্ড ৩৩১ পৃষ্ঠা। কোন ব্যক্তি নিজের ছাগলের দ্বারা অপর এক ব্যক্তির জন্য কোরবাণী করিলে, অপর ব্যক্তির আদেশ মতে করুক বা বিনা আদেশে করুক জায়েজ হইবেনা

কারণ ঐ ছাগলে অপর ব্যক্তির মালেকিয়ত পাওয়া যায় নাই। মালেকিয়তে আদেশ কারি নিজের বা আদেশ কারির নায়েবের কবজ অর্থাৎ দখল পাওয়া যাইতে হইবে এই খানে কাহার ও কবজ পাওয়া যায় নাই, আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩৫ পৃষ্ঠা। দুই ব্যক্তি এক মরবেতে দুইটী ছাগল রাখিল পরে গল্তি করিয়া প্রত্যেকে একটি র্নিদ্দষ্টি ছাগলের দাবি করিতে লাগিল, অপরটির দাবি ছড়িয়া দিল, যেই টির দাবি ছড়িয়া দিয়াছে সেইটি বায়তুল মালে পাইবে, ঝগড়া কৃত ছাগলটি দোন ব্যক্তি দুই অংশ সমান ভাবে ভাগ করিয়া নিবে, কাহারও কোরবাণী দুরস্ত হইবে না। মরবেত শব্দের অর্থ জানোয়ার বাঁধিবার স্থান। চারি ব্যক্তি চারিটি ছাগল একটি ঘরে বন্ধ করিয়া রাখার পর একটি মরিয়া গেল কিন্তু কাহার ছাগলটি মরিয়া গেল, কেহ জানিতে পারিতেছে না; তখন সমস্ত ছাগলগুলি বিক্রি করিয়া সেই ছাগলগুলির মূল্যের দ্বারা পুনরায় চারিটি ছাগল চারি ব্যক্তি খরিদ করিবে প্রত্যেকের জন্য একটি ২ হইবে তাহার পর ঐ চারি ব্যক্তি হইতে একে অন্যকে জবেহ করিবার জন্য উকিল বানাইয়া দিতে হইবে অর্থাৎ ১ম ব্যক্তি ২য় ব্যক্তিকে বলিবে যে, আমার ছাগলটি জবেহ করিবার জন্য তোমাকে উকিল বানাইয়া দিলাম, ২য় ব্যক্তি ১ম ব্যক্তিকে বলিবে যে আমার ছাগলটি জবেহ করিবার জন্য তোমাকে উকিল বানাইলাম, এই রকম ৩য় ব্যক্তি ও ৪র্থ ব্যক্তি, একে অন্য কে উকিল নিযুক্ত করিতে হইবে, প্রত্যেকে, প্রত্যেক কে উকিল নিযুক্ত করিয়া জবেহ করার পর পূনরায় ঐ চারি ব্যক্তি হইতে প্রত্যেকে প্রত্যেক কে বলিবে যে, আমার ছাগলটি তোমার জন্য হালাল করিয়া দিলাম। তবে কোরবাণী দুরস্ত হইবে। তিন জন লোক তিনটি কোরবাণী পশুকে এক খানা মজবুত বস্তুর দ্বারা বাঁধিল, পরে একটা পশুতে এমন আয়েব পাওয়া গেল যে, যাহার দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত

নহে। সকলে বলিতে লাগল যে, আয়েবদার পশুটা আমার নহে ২য় ও ৩য় পশুতে সকলের ঝগড়া লাগিল। আয়েবদার পশুটি বায়তুল মালে পাইবে, আয়েব ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় পশুকে তিন ব্যক্তি তিন অংশ করিয়া নিবে, আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩৫ পৃষ্ঠা। যেই পশুর শিং নাই, ও যেই পশুকে খছি করা হইয়াছে অর্থাৎ অণ্ডকোশ বাহির করিয়া দেওয়া হইয়াছে ও যেই জানোয়ার পাগল কিন্তু অন্য পশুর সঙ্গে আহার করে এই সকল পশুর দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত হইবে। যেই পশু পাগল হইয়া আহার করে না ও মাঠে বা, ঘরে ঘাস খায় না সেই পশুর দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত হইবে না। যেই পশু খারেস দার ও অত্যন্ত কৃশ তদ্ধারা কোরবাণী সিদ্ধ হইবে না। যদি মোটা ও তাজা হয়, খারেস গোস্ত র্পয্যন্ত না পৌঁছিলে, কোরবাণী সিদ্ধ হইবে। যেই পশু লেংড়া, কোরবানের অর্থাৎ জবেহ করার জায়গা র্পয্যন্ত হাঁটিয়া যাইতে না পারিলে তদ্ধারা কোরবাণী সিদ্ধ হইবে না। কানা ও অন্ধ এবং কৃশ যাহার হাড্ডির ভিতর মগজ নাই, সেই পশ্বাদির দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত নহে। যেই পশুর বিমারি ছাপ ও জাহের দেখা যায় তদ্ধারা কোরবাণী সিদ্ধ হইবে না। কোরবাণী পশু জবেহ করিবার সময় জবেহকারি ছাড়া অন্য ব্যক্তি ছুরি ধরিয়া সাহায্য করিলে তবে দোন ব্যক্তির বিছমিল্লাহে আল্লাহো আকবর বলিতে হইবে। যদি এক ব্যক্তি না বলে, ২য় ব্যক্তি বলে তখন জবিহা দুরস্ত হইবে না, আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩৭ পৃষ্ঠা। গরু সাত ভাগের একভাগ অপেক্ষা এক ব্যক্তি একটি দুম্বা বা ছাগ বা মেষ কোরবাণী করাই উত্তম হইবে। যদি মূল্যে ছাগ তুল্য হয়; এইরূপ ভেড়া অপেক্ষা ভেড়ী উত্তম, ছাগ অপেক্ষা ছাগী উত্তম, বলদ বা এড়ে গরু অপেক্ষা গাভী উত্তম, মহিষ অপেক্ষা মহিষী উত্তম, উট অপেক্ষা উটনী উত্তম। যদি মূল্যে মাংসে তুল্য হয়। খোলাছা

৪র্থ খণ্ড ৩১৪ পৃষ্ঠা ও কাজি খাঁ ৩৩১ পৃষ্ঠা ৪র্থ খণ্ড। যদি মূল্যে ও মাংসে বেশ কম হয় তবে, যেইটা বেশ হয় তাহাই ভাল। কোন পশুর এক কান ও লেজ বা এক চক্ষুর রোসনি ৩ তিন ভাগের এক ভাগ চলিয়া গেলে দুই ভাগ বাকী থাকিলে সেই পশুর দ্বারা কোরবানী দুরস্ত হইবে। ইহার অধিক চলিয়া গেলে তদ্ধারা কোরবাণী সিদ্ধ হইবেনা। চক্ষুর মধ্যে তিন ভাগের পরিচয় করার নিয়ম এই যে, প্রথম এক দিন বা দুই দিন আয়েবদার ছাগলটিকে ঘাষ খাইতে না দিবে অর্থাৎ খোরাক হইতে বন্ধ রাখিবে, তাহার পর আয়েবদার চক্ষুটি বন্ধ করিয়া ভাল চক্ষুটি খুলিয়া দিয়া ঐ ছাগলটিকে ঘাষ দেখাইতে ২ তাহার নিকটে যাইবে, যেই স্থানে ঘাষ দেখিবে সেই জায়গায় একখানা নেসানা দিবে, অনন্তর ভাল চক্ষুটি খুলিয়া দিবে। তখন আগের মত ঐ ছাগলটিকে ঘাষ দেখাইতে দেখাইতে নিকটে যাইবে যেই জায়গায় ছাগলটির চক্ষে ঘাষ দেখিবে সেই স্থানে একখানা নিশানা দিবে। তখন ভাল চক্ষুর দ্বারা যদি পনর হাত পরিমাণ দেখে ও খাবার চক্ষুর দ্বারা যদি ১০ দশ হাত পরিমাণ দেখিয়া থাকে তখন জানিতে পারিবে যে খারাব চক্ষুটার রোসনি তিন ভাগের এক ভাগ নষ্ট হইয়া গিয়াছে তদ্ধারা কোরবানী দুরস্ত হইবে। যদি ইহার অধিক হয় খারাব চক্ষে আট হাত কিম্বা নয় হাত দেখে তাহা হইলে ঐ ছাগলের চক্ষুর রোসনি তিন ভাগের এক ভাগ হইতে বেশী নষ্ট হইয়া গিয়াছে তদ্ধারা কোরবাণী সিদ্ধ হইবে না। যেই পশুর এই পরিমাণ দাঁত থাকে যে যদ্ধারা সে স্বচ্ছন্ধে আহার করিতে পারে তাহার দ্বারা কোরবাণী জায়েজ। যেই পশুর জন্মাবধি কর্ণহীন তদ্ধারাও কোরবাণী দুরস্ত নহে। কিন্তু ছোট ২ কান থাকিলে সেই পশুর দ্বারা কোরবাণী দুরস্ত হইবে। যেই পশুর দোন শিং জড় হইতে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে

অর্থাৎ শিং এর গোড়ার আন্দরে যইে হাড্ডির ভিতর মগজ আছে সেই হাড্ডি র্পয্যন্ত ভাঙ্গা পৌঁছিয়াছে সেই পশুর দ্বারা কোরবানী দুরস্ত হইবে না। হেদায়া ৪র্থ খণ্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা, এমদাদুল ফতোয়া ২য় খণ্ড ১১৫ পৃষ্ঠা ইত্যাদি কেতাবুল উজহিয়া। শিং ভাঙ্গা বা একেবারে না থাকিলেও দুরস্ত হইবে যদি আন্দরের গুদা নষ্ট না হয় গুদা নষ্ট হইলে দুরস্ত হইবে না। যেই দুম্বার অধিক আলইয়া কাটা হইলে তদ্ধারা কোরবাণী দুরস্ত হইবে না। আলইয়া শব্দের অর্থ পশুর টিয়া ও টিয়ার গোস্ত ও দুম্বার লটকিয় গোস্ত। যেই পশুর দুগ্ধ-বাঁট কাটা গিয়াছে বা শুষ্ক হইয়া গিয়াছে তদ্ধারা কোরবাণী দুরস্ত হইবেনা। যেই পশুর নাসিকা কাটা গিয়াছে কিম্বা বাঁটের অগ্রভাগ কর্ত্তিত হইয়াছে তদ্ধারাও কোরবানী সিদ্ধ হইবে না। যে কোন দুগ্ধবতী পশুর দুগ্ধ কোন প্রকার ঔষধের বিষম ফলে দুগ্ধ দেওয়া বন্ধ হইয়া গেলে তদ্ধারাও কোরবানী দুরস্ত হইবে না। যেই দুম্বার জন্মাবধি আলইয়া নাই তাহার দ্বারাও সিদ্ধ হইবে না ও খুনছা পশুর দ্বারাও কোরবাণী দুরস্ত নহে। খুনছা পশুর অর্থ যেই পশুর মধ্যে পুরুষাঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ দোনটি থাকে। যেই পশুর কর্ণ দৈর্ঘ কিম্বা প্রস্তে কাটা হইলে এবং ঐ কান ছিদ্র যুক্ত ও কোন রূপ দাগ যুক্ত হইলে তবে ঐ পশুর দ্বারা কোরবাণী না করা উত্তম। যেই ছাগলের জিহ্বা কাটা তৃণ ও ঘাষ খাইতে কোন অসুবিধা না হইলে তদ্ধারা কোরবানী জায়েজ হইবে নতুবা জায়েজ হইবেনা। গরুর জিহ্বা কাটা হইলে কোরবানী দুরস্ত হইবেনা। যেই পশু পায়খানা ছাড়া অন্য কোন বস্তু খায় না তদ্ধারা ও কোরবাণী দুরস্ত হইবে না। পায়খানা যদি উষ্ট্র খায় ৪০ চল্লিশ দিন বাঁধিয়া রাখিবে ও গরু হইলে ২০ কুড়ি দিন কিছু খাইতে দিবে না ও ছাগল হইলে ১০ দিন বন্ধ রাখিবে, তবে গোস্ত পাক

হইবে মুরগী হইলে ৩ তিন দিন ও চনচরা হইলে একদিন বন্ধ রাখিবে। যেই ব্যক্তির উপর কোরবানী ওয়াজেব সেই ব্যক্তি কোরবানী পশু খরিদ করার পর কোন রূপ আয়েবদার হইলে, ঐ ব্যক্তির অপর একটি পশু খরিদ করিয়া কোরবানী করিতে হইবে। নচেৎ তাহার কোরবানী সিদ্ধ হইবে না। কিন্তু যাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব নহে সেই ব্যক্তি উক্ত পশুর দ্বারা কোরবানী করিতে পারিবে। কোন পশু জবেহের স্থানে জবেহ করার জন্য আনয়ন করার পর বাজে রকম জোরা জোরী করিয়া আয়েবদার হইলে তদ্ধারা কোন ক্ষতি হইবে না। গায়েতুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮৮ পৃষ্ঠা ও আলমগিরি ৫ম খণ্ড ১৩০-১৩২ পৃষ্ঠা ইত্যাদি। কোন পশুর এক পা কাটা হইলেও কোরবানী দুরস্ত হইবে না। যেই ছাগলের একটি বাঁট কাটা হইবে দুরস্ত হইবে না। যদি উষ্ট্র কিম্বা গরুর একটি বাঁটের মাথা কাটা হইলে তদ্ধারা সিদ্ধ হইবে, দুইটি বাঁটের মাথা কাটা হইলে সিদ্ধ হইবে না। যেই ছাগলের এক বাঁটের দুগ্ধ বন্ধ হইয়া যাইবে, ও যেই গাভীর দুই বাঁটের দুগ্ধ বন্ধ হইয়া যাইবে তদ্ধারা কোরবানী সিদ্ধ হইবে না। আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩১ পৃষ্ঠা ও শামী ৫ম খণ্ড ২২৮ পৃষ্ঠা ও খোলাছা ৩২১ পৃঃ ৪র্থ খণ্ড। লেংড়া অর্থাৎ তিন পায়ে ভার দিয়া চলে, ৪র্থ পা জমির উপর না রাখিলে ও সাহায্য না পাইলে সেই পশুর দ্বারা কোরবানী সিদ্ধ নহে। যদি ৪র্থ পা সামান্য ভাবে জমির উপর রাখিয়া সাহায্য লয় তদ্ধারা সিদ্ধ হইবে। খোলাছা ঐ পৃষ্ঠা। কোরবানী পশুর পশম ও দুগ্ধ দ্বারা বা অন্য কোন রকমে ঐ পশু হইতে ফায়দা লওয়া মকরুহ জানিবে। যদি কেহ কোরবানী পশু হইতে দুগ্ধ দোহন করে বা পশম কাটিয়া লয় তাহা ফকিরগণকে দান করিতে হইবে, কাহারও নিকট বিক্রি বা বকসিস করিতে পারিবে না। যেই পশুর পুরুষাঙ্গ কাটা ও

গাভীর উপর উঠিতে পারে না তদ্ধারা কোরবানী সিদ্ধ হইবে ও কাঁশি দার পশুর দ্বারাও কোরবানী সিদ্ধ হইবে। কোরবানীর যেই পশু বয়স বৃদ্ধি হওয়ার দ্বারা বাচ্চা প্রদান করে না সেই পশুর দ্বারা সিদ্ধ হইবে। শামী ৫ম খণ্ড ২২৯ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।

শরীকি কোরবানের প্রণালী

ছাগল, ভেড়া, মেষ, দুম্বা একটি এক ব্যক্তি কোরবানী করিতে পারিবে। গো, মহিষ, উষ্ট্র সাত ব্যক্তি র্পয্যন্ত একটিতে শরীক হইয়া কোরবানী করিতে পারিবে। একটি গরুতে কেহ কোরবানীর অংশ, কেহ আকিকার অংশ ও কেহ শিকারের জজার অংশ দিয়া কোরবান করিলে তাহাই সিদ্ধ হইবে। কিন্তু অলিমার কথা কেতাবে লিখে নাই, অলিমা করিলে ও আদায় হইবে। আকিকা ছেলে জন্ম হইবার পর ৭। ১৪। ২১ তারিখের করাইতে হয়, ইহা গত হইয়া গেলে যেই দিবস ছেলে জন্ম হইয়াছে সেই দিবসের র্পূব্বরে দিনে করাইতে হইবে, যেমন শুক্রবারে ছেলে জন্মিলে বৃহস্পতিবারে আকিকা করাইতে হইবে এইরূপ ৭ সাত মাস বা চৌদ্দ মাস সাত বৎসর কি চৌদ্দ বৎসর ইত্যাদিতে আকিকা করাইতে পারিবে। যেই সমস্ত পশুর দ্বারা কোরবানী দুরস্ত, আকিকাও সিদ্ধ। গো, দুই বৎসরের অধিক বয়স্ক ও মেষ ও দুম্বা ও ছাগ ইত্যাদি এক বৎসরের অধিক বয়স্ক আকিকার জন্য র্নিদ্দষ্টি। ৫ পাঁচ ব্যক্তি একটি গরু কোরবান করিবার জন্য খরিদ করিল, পরে এক ব্যক্তি শরীক হইতে চাহিলে চারি ব্যক্তি রাজি হইল ও এক ব্যক্তি নারাজ তবেও সকলের কোরবান দুরস্ত হইবে। কারণ ঐ চারি ব্যক্তির অংশ সাতভাগের এক ভাগ হইতে বেশী হইবে। প্রথমত: ঐ গরুটিকে ৫ পাঁচ ভাগ করিয়া নারাজ ব্যক্তি তাহার অংশ উঠাইয়া লইবে, পরে ঐ চারি ব্যক্তির চারি ভাগ গোস্তকে ৫ পাঁচ ভাগ করিয়া পাঁচ ব্যক্তি লইয়া যাইবে। যদি ছয় ব্যক্তি একটি গরু খরিদ করিয়া পরে এক ব্যক্তি শরীক হইতে চাহিলে এক ব্যক্তি নারাজ হইলে ও পাঁচ ব্যক্তি রাজি হইলেও কোরবানী সিদ্ধ হইবে না। কারণ ঐ পাঁচ ব্যক্তির বাকী অংশ সাত ভাগের এক ভাগ হইবে না। শরীক কোরবানী পশু খরিদ করার আগে হওয়া মস্তাহাব। কারণ মালেকে নেছাবের সঙ্গে পরে শরীক হইয়া কোরবানী করা মকরুহ, কারণ ধনবান অর্থাৎ মালেকে নেছাব কোরবানী পশু বিক্রি করিতে পারে ও বদলাইতে পারে গরীব লোকেরা যখন কোরবানের নিয়তে পশু খরিদ করিবে ও শরীক হওয়ার উদ্দেশ্য না থাকিলে, তবে তাহাদের উপর যত অংশ খরিদ করিয়াছে, তত অংশ কোরবান করা ওয়াজেব হইবে। তাহারা ঐ অংশ বিক্রি করিতে বা বদলাইতে পারিবেনা। এই জন্য গরীব লোকের সঙ্গে পশু খরিদ করার পর শরীক হইয়া কোরবানী করা অসিদ্ধ। যেমন ৫ পাঁচ ব্যক্তি একত্র হইয়া একটি পশু খরিদ করার পর এক ব্যক্তি শরীক হইতে চাহিলে ঐ ৫ পাঁচ ব্যক্তি হইতে যদি তিন ব্যক্তি ধনবান হয় তবে ঐ তিন ব্যক্তির অংশ হইতে এক অংশ খরিদ করিয়া কোরবান করিলে সিদ্ধ হইবে। কারণ ঐ তিন ব্যক্তির অংশ এক অংশ হইতে বেশী হয়। যদি ঐ পাঁচ ব্যক্তি হইতে দুই ব্যক্তি ধনবান হয় ও তিন ব্যক্তি গরীব হয়, তবে শরীক হইয়া কোরবান করিলে সিদ্ধ হইবেনা, কারণ দুই ব্যক্তি বাকী পুরা এক অংশের মালিক হইতে পারিবেনা। দুই ব্যক্তি একটি গরু কিম্বা উট দিয়া কোরবানী করিল তাহাতে ইমামগণের মতভেদ আছে; মোক্তার যে দোরস্ত হইবে। কোরবানের সহজ উপায় এই যে, তিন ব্যক্তি ৭্ সাত টাকা দিয়া একটি কোরবানী পশু খরিদ করিল, তাহাতে এক ব্যক্তি ১্ এক টাকা ২য় ব্যক্তি ২ দুই টাকা ৩য় ব্যক্তি ৪্ মোট সাত টাকা; তাহাদের কোরবানী দুরস্ত হওয়ার উপায় এই যে, প্রথমত: পশুটীর মাংস বরাবর সাত অংশ করিতে হইবে, অনন্তর যেই ব্যক্তি

১্ এক টাকা দিয়াছে সেই ব্যক্তি এক ভাগ নিবে যেই ব্যক্তি ২ দুই টাকা দিয়াছে সে দুই অংশ লইবে যেই ব্যক্তি ৪্ চারি টাকা দিয়াছে; সে চারি ভাগ নিবে, এই রূপ যে কোন ব্যক্তি সহজ উপায়ে কোরবানী দুরস্ত রূপে করিতে পারে। তদ্রুপ ৫ পাঁচ জন লোকে ১৪্ চৌদ্দ টাকা দিয়া একটি কোরবানী পশু খরিদ করিলে তাহাতে এক ব্যক্তি ২ দুই টাকা ২য় ব্যক্তি ২।। আড়াই টাকা ৩য় ব্যক্তি ৩্ ও ৪র্থ ব্যক্তি ৩্ তিন টাকা ৫ম ব্যক্তি ৩।। সাড়ে তিন টাকা মোট মোট ১৪্ চৌদ্দ টাকা হইল। এই পশুটিকেও র্পূব্বরে ন্যায় সমান সাত ভাগ করিয়া এক এক অংশ এক এক অংশীদার উঠাইয়া লইবে লবশিষ্ট ২ দুই ভাগকে ৪ চারি ভাগে বিভক্ত করিয়া ভাগের অর্দ্ধেক যে ব্যক্তি ২।।০ আড়াই টাকা দিয়াছে তাহাকে নিতে হইবে ও বাকী ৩।।০ সাড়ে তিন ভাগ হইতে ১ দেড় ভাগ ৩।।০ সাড়ে তিন টাকা ওয়ালাকে নিতে হইবে এবং বাকী ২ দুই ভাগ ৩্ তিন টাকা হিসাবে যে দুই ব্যক্তি দিয়াছে তাহারা উভয়েই দুই ভাগ গ্রহণ করিবে। সাত ব্যক্তি একত্র হইয়া একটি কোরবানী পশু খরিদ করার পর কোরবানী পশু জবেহ করার র্পূব্বে একজন অংশীদারের মৃত্যু হইলে তাহার ওয়ারিশান, বয়স্কগণ বলিল তোমাদের তরফ হইতে ও ফলানা মুরদার তরফ হইতে তোমরা কোরবানী কর তবে সকলের কোরবানী দুরস্ত হইয়া যাইবে। যদি ওয়ারিশান এজাজত না দেয় তবে কাহারও কোরবানী দুরস্ত হইবেনা। কোরবানী পশু বহুদিন র্পূব্বে খরিদ করিয়া কেরেয়া দিলে সেই পয়সা দান করিতে হইবে নিজে খাইতে পারিবে না। আলমগিরি ৫ম খণ্ড ৩৩৮ পৃষ্ঠা খোলাছা ৩২১ পৃষ্ঠা ও ৪র্থ খণ্ড। গায়েতুল আওতার ৪র্থ খণ্ড ১৮৮ পৃষ্ঠা। গরীব লোকের সঙ্গে কোরবানী পশু খরিদ করার র্পূব্বে শরীক হইতে পারিবে।

                    ৩য় খণ্ড সমাপ্ত

                     খালি পাতা

                  কিতাবের নাম

ক Ñ হ = কলেমতুল হক

স Ñ বে = সরহে বেকায়া

নু Ñ হে = নুরুল হেদায়া কুদুরী

বে: জে: = বেহেস্তি জেওর

যা: আ: = যাদুল আখেরত

মে: জি: – মেপ্তাহুল জন্নত

কা: খাঁ = কাজি খান

জা: ফ: = জামেউল ফতাওয়া

ফ: এ: = ফতোয়ায়ে এমদাদিয়া

আ: গি: = আলমগিরী

জা: র: = জামেওর রমুজ

বা: রা: = বাহারুর রায়েক

শ্বামী =

গা: আ: = গায়েতুল আওতার

দো: মো: = দোররুল মোখতার

না: ফা: = নাহারুল ফায়েক

রু: দি: = রুকুনুদ্দিন

মা: বু: = মালা বুদ্দাহ মিনহু

ফ: লা: = ফতোয়ায়ে লা বুদ্দিয়া

ফ: ছে: = ফতোয়ায়ে ছেরাজিয়া

ম: ফ: = মজমুয়া ফতোয়া মৌলানা আবুল হাছানাত ছগীরি

ফ: ক: = ফত্হুল কদীর

হেদায়া

`: আ: = দকায়েকুল আখবার

ত: রু: = তফছিরে রুহুল বয়ান