ভূমিকা :ভারতীয় উপমহাদেশের যে সমস্ত মহান ব্যক্তিবর্গ মিল্লাত মাযহাব ও সুন্নিয়তের খেদমত করে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং মানুষের ক্বলবে রাসূল (স:)’র প্রেম মহব্বতের বীজ বপন করে অন্ধকার ক্বলবকে এশকে রসূল দ্বারা আলোকিত করেছেন তাদের মধ্যে হাদিয়ে জামাঁ ছাহেবে কাশ্ফ ও কারামত রসূল নোমা হযরত শাহ্ছুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:) অন্যতম। তিনি উঁচু স্তরের একজন কবি ছিলেন। দেওয়ানে ওয়াইসী নামক ফারসী ভাষায় কাব্যগ্রন্থ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমানল মশাল তাঁরই রচিত।

জন্ম ও জন্মস্থান: ছাওয়ানে হায়াত লিখকগণের দৃষ্টিতে তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও শানে ওয়াইসী’র লিখক অনেক তথ্য তালাশের পর উল্লেখ করেন যে, তার জন্ম ১৮১৫/১৬ ইংরেজীতে হবে। সুতরাং ১৮১৫/১৬ ইংরেজির যে কোন সময় চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশে সাতকানিয়া উপজেলার আমিরাবাদে মল্লিক সোবহান গ্রামে হাজী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন হযরত ওয়াইসী।

হযরত ওয়াইসী (র:)’র পিতা-মাতার পরিচিতি: হযরত সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:)’র পিতার নাম হযরত ছৈয়দ ওয়ারেস আলী (র:)। তিনি তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। ফারসী ভাষায় খুবই পারদর্শী ছিলেন এবং গাজীয়ে বালাকোট ছুফী নূর মোহাম্মদ নেজামপুরী (র:)’র পীর ভাই ছিলেন। তাঁর দাদার নাম হযরত ছৈয়দ হারেস আলী (র:)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশের বিশেষ করে বাংলার তখনকার রাষ্ট্রীয় ভাষা ফারসী ছিল বিধায় ব্রিটিশরা শোষনকে আড়ালকে সেবকের নামে যে সকল পদক্ষেপ শুরু করে তৎমধ্যে কলেজে ফারসী শিক্ষার ব্যবস্থা অন্যতম। কলকাতা নগরীতে ১৮০০ ইংরেজীতে চালু হওয়া এ ব্যবস্থা ১৮৩০ ইংরেজী পর্যন্ত চালু ছিল। তখন ফারসী শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাছাই করে ১০ জন ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করে ব্রিটিশ সরকার। তৎমধ্যে ১৮০১ ইংরেজীতে শিক্ষক (প্রফেসর) হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন হযরত ছৈয়দ ওয়ারেস আলী (র:)। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:)’র মাতার নাম ছিল হযরত সৈয়দা সাইদা খাতুন (র:)। জীবনী পাঠে জানা যায়, তিনি পবিত্র কুরআন পাকের হাফেজা ছিলেন। আরবী, ফারসী ও বাংলা ভাষায় প্রচুর জ্ঞান রাখতেন। প্রতিবেশী গরীব-দু:খীদের প্রতি সহায়তায় দীর্ঘ ছিল তার হাত।

প্রাথমিক শিক্ষা: কথায় আছে ‘বীজ হতে অঙ্কুর উৎপন্ন হয়’। হযরত ওয়াইসী (র:)’র শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ জানা না গেলেও সকল জীবনী লিখকগণ এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি তাঁর মুহতরম পিতার নিকট ৭/৮ বৎসর মতান্তরে ১৩/১৪ বৎসর শিক্ষা লাভ করে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। যেহেতু তাঁর মুহতরম পিতা ফারসী ভাষায় অভিজ্ঞ ছিলেন সেহেতু তিনি ফারসী ভাষায় গভীর দক্ষতা অর্জন করেন। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তিনি একজন দক্ষ ফারসী কবি হিসাবে শিক্ষিত সমাজে পরিচিতি লাভ করেন।

পিতা-মাতার ইন্তেকাল: বুজুর্গ পিতা হযরত ওয়ারেস আলী (র:) পাঞ্জাতের যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন। মুহতরিমা মাতা হযরত সৈয়দা সায়িদা খাতুন হযরত ওয়াইসী সাথে নিয়ে হিজরত/হজ্জের উদ্দেশ্যে গমনকালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী নদীর সাগর মোহনায় জাহাজ ডুবিতে ইন্তেকাল করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।

উচ্চশিক্ষা: যৌবনে প্রারম্ভে পিতা-মাতাকে হারান হযরত ওয়াইসী (র:)। মাতার ইন্তেকালের পর তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন যে, তিনি কি নিজ বাড়িতে চলে আসবেন নাকি কলকাতায় চলে যাবেন চিন্তিত অবস্থায় তিনি আশ্রয়স্থল হিসাবে কলকাতার তালতলা নামক স্থানে গৃহ শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদের পুনাশীতে এক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি এমদাদুল হকের বাড়িতেও গৃহ শিক্ষক হিসাবে অবস্থান করেন। জীবনী পাঠে আরো জানা যায় যে, হযরত সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:) হুগলী নদীর মোহনা থেকে ফুরফুরাতে গিয়া জগৎবল্লভপুর থানার দশা গ্রামের পানভীল্লাহ মাদ্রাসায় কিছুকাল লেখাপড়া করেন। আবার হুগলী মোহছেনীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। এভাবে তার শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি হয় বলে জানা যায়।

কর্মজীবন: কর্মজীবনে হযরত ওয়াইসী (র:) লক্ষ্ণৌর পদচ্যুত নবাব আলী শাহ্’র ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়। তারপর পদোন্নতি হয়ে সে দপ্তরে সুপারিনটেনডেন্ট’র দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৮৬৭ সালে তাঁকে পলিটিক্যাল পেনশন অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট’র দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাথে সাথে তাঁর জীবনী মোবারকে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, তার শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসাসহ আরো কয়েকটি মাদ্রাসায় খন্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। তবে কোনটি আগে, কোনটি পরে করছিলেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

বৈবাহিক জীবন: মুর্শিদাবাদের পুনাশি গ্রামের নিকটবর্তী ঘাড়েরা গ্রামের জমিদার ও সম্ভ্রান্ত বংশদ্ভুত খন্দকার নেজাবত হোসেন’র কন্যা মুহতরেমা ফাতেমা খাতুনের সাথে তাঁর বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। মুহতরেমা ফাতেমা খাতুন ভদ্র ও নম্র স্বভাবের ছিলেন। তিনি ছিলেন আবেদা। বছরের অধিকাংশ সময় সিয়াম সাধনা করতেন তিনি। পর্দানশীন ও সাদাসিধে চালচলন ছিল তার স্বর্ণালংকার। মুর্শিদাবাদে তার দাম্পত্য জীবন সংঘটিত হলেও স্বপরিবারে কলকাতায় বসবাস করতেন হযরত ওয়াইসী (র:)।

রেয়াজত বন্দেগী: হযরত শাহ্ সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:) ইবাদত বন্দেগী রেয়াজত মোজাহাদার বর্ণনা করা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।তাঁর জীবনী লিখকগণের লেখা থেকে তাঁর ইবাদত বন্দেগী ও এশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। ‘সত্যের আলোকপাত‘ নামক কিতাবে হযরত ছুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:) সম্পর্কে আছে,’হযরত শাহ্ছুফী মাওলানা ফতেহ আলী (র:) হযরত নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী (র:)’র খলিফা এবং সরকারি কর্মচারী ছিলেন। আরবী ও ফারসী ভাষায় ছিল তার অসাধারণ পান্ডিত্য। দেওয়ানে ওয়াইসী তারই লিখিত গ্রন্থ। তিনি মোজাদ্দেদে আলফেসানী (র:), খাজা নকশেবন্দী (র:), খাজা আজমিরী (র:), হযরত গাউছে পাক (র:) হতে রূহানীভাবে ফয়েজ লাভ করেন আর রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে খাবে মোরাকাবায় সদা সাক্ষাত লাভ হত বিধায় তাঁর ‘রাসূল নামা’ বলে ডাকা হত।’ ড. গোলাম সাকলাইন বলেন, “ছুফী ফতেহ আলী সাহেব একজন ছুফী সাধক ছিলেন, সংস্কারক ছিলেন এবং একজন বিশিষ্ট আলেম ছিলেন।” তিনি কিছুকাল চাকুরী জীবনের মধ্যে কাটান। পরে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কারণে নিজেকে তাসাওউফ’র সাধনায় নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি চাকুরী করলেও হৃদয়ের আনন্দিত উপলব্ধিকে অন্য জগতের কাজে ব্যয় করতেন। এ জগৎ হল তার আধ্যাত্মিক জগত। মন-প্রাণকে তাসাওউফ’র সাধনায় নিয়োগের জগত। তিনি তাঁর পীর ও মুর্শিদ হযরত ছুফী নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী রহঃ’র শিষ্যত্ব গ্রহণের পর আল্লাহ পাকের জিকিরে নিজেকে নিমগ্ন রাখতেন। তিনি তাঁর পীরের নির্দেশনা মত লোকজনকে মুরিদ করাতেন এবং তাদেরকে হযরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আদর্শের অনুকরণ করতে বলতেন। হযরত ফতেহ আলী রহঃ যখন ধীরে ধীরে তাসাওফের সাধনায় নিজেকে সমর্পন করেন তখন চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হণ। চাকুরী ত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূল’র আরাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। সংসারী হয়েও বেশির ভাগ সময় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। “বাংলাদেশের পীর আউলিয়াগণ” নামক কিতাবে চিত্রায়িত হয়েছে এভাবে- ‘তিনি চাকুরীতে থাকাকালীন ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক কাজের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এ জন্য পরে তিনি চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে দ্বীনের কাজে নিয়োজিত করেন।’

ত্বরীকত জীবনে পদার্পণ: হযরত ছুফী ওয়াইসী (র:) কলকাতায় বসবাস করতেন। অপরদিকে গাজীয়ে বালাকোট হযরত ছুফী নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী (র:) ও কলকাতার কলিন স্ট্রীট’র মুন্সী গোলাম রহমান মসজিদ সংলগ্ন কক্ষে অবস্থান করতেন। তখন হযরত ছুফী নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ)’র বেলায়তের সুখ্যাতি কলকাতার চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিল। এ সময় তাঁর কাছে মুরিদ হওয়ার জন্য হযরত ওয়াইসী (র:) উপস্থিত হলে, হযরত ছুফী নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেলেন তাঁর ভিতরে এশকে রাসূল’র আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তিনি তার সিনাই সংরক্ষিত বেলায়তের ¯স্রোতধারা তার প্রতি নিক্ষেপ করে প্রথমেই তাঁকে উচ্চ পর্যায়ের ছবক প্রদান করেন।

পীর মুর্শিদের খেদমত ও খেলাফত লাভ: উভয় হযরত যেহেতু কলকাতায় অবস্থান করতেন সেহেতু হযরত ওয়াইসী (র:) দীর্ঘদিন যাবৎ কাদেরিয়া, চিশ্তিয়া, নক্সবন্দিয়া, মোজাদ্দেদীয়া, করনিয়া ইত্যাদি ত্বরিকতের উচ্চ মোকাম ত্বায় করে নিয়েছিলেন। তাঁর কাশ্ফ কারামত, নবীপ্রেম, উন্নত চরিত্রের কথা চতুর্দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন সময়ের বহু ওলামায়ে কেরাম সহচার্য গ্রহণ করে তাঁর কাছ থেকে তরিকতের সবক গ্রহণ করেন। তৎমধ্যে শামসুল উলামা হযরত গোলাম ছালমানী (রহঃ), ফুরফুরার হযরত আবু বকর ছিদ্দিকী (রহঃ)’র মত যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ফাজেল জ্ঞানী গুণীরা অন্যতম। যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী আজিজুল হক শেরে বাংলা (র:)। শুধু তাই নয়, হযরত শাহ্সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:) কে আল্লামা গাজী আজিজুল হক শেরে বাংলা (র:) পেশওয়ায়ে আলেমাঁ, মোক্তাদায়ে ছালেকাঁ, ইয়াদগারে আরেফাঁ, হাদিয়ে জ্বামাঁ, ছাহেবে কাশ্ফ ও কারামত, মা’দনে ফুয়ুজাত ও কামালাত ইত্যাদি লক্বব দ্বারা খেতাব করেছেন। যা দেওয়ানে আজিজ মূল কপির ১৬৬ পৃষ্ঠায় এবং বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক আল্লামা আবদুল মন্নান (ম:জি:আ:) কর্তৃক অনুদিত কপির ৪০২-৪০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। হযরত ওয়াইসী (র:)’র পীর মুর্শেদে গাজীয়ে বালাকোট হযরত ছুফী নুর মোহাম্মদ নিজামপুরীকেও দেওয়ানে আজীজের মূল কপির ১৬০ পৃষ্ঠা ও অনুদিত কপির ৩৯১ পৃষ্ঠায় পেশওয়ায়ে ছালেকাঁ, ফখরে আরেফাঁ, ছাহেবে কাশ্ফ ও কারামত, মা’দনে ফুয়ুজাত ইত্যাদি গুণবাচক শব্দ দ্বারা খেতাব করেছেন। এছাড়া এ ছিলছিলার আরো অনেক মাশায়েকে এজামের প্রশংসা করা হয়েছে উক্ত কিতাবে। তাই যারা এ ছিলছিলার মশায়েখদের সমালোচনা করে ছুন্নী মিল্লাত-মাযহাবের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রয়োজন দেওয়ানে আজীজ পড়ে নেয়া। হযরত ছুফী ওয়াইসী (র:) দীর্ঘ ২০ বৎসর যাবৎ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে শরীয়ত ও ত্বরীকত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের খেদমত করে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। সেই স্রোতধারায় আজও হযরত ওয়াইসী (র:)’র অনুসারীরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সুন্নীয়তের খেদমত করে যাচ্ছেন। আমার মহান মুর্শেদে আজম হাদীয়ে জামাঁ ওস্তাদুল ওলামা ও ফুজালা আল্লামা শাহ্ছুফী চৌধুরী মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মুনিরী (ম:জি:আ:) হযরত সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (র:)’র অনুসারী ও তাঁর এশকে রাসূল (স:)’র স্রোতধারার অন্যতম নহর হয়ে বাংলাদেশ, বার্মা, চীন, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাওয়াজ্জুহ বিল হাজের ও তাওয়াজ্জুহ্ বিল গায়েব’র মাধ্যমে অন্ধকার ক্বলবকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র এশক মহব্বতের নূরে নূরান্বিত করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাঁর হায়াতে অফুরন্ত বরকত দান করুন। আমিন।

দেওয়ানে ওয়াইসী: আগে বলা হয়েছে যে, দেওয়ানে ওয়াইসী হযরত ছুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ)’র অমর কীর্তি। তিনি এর বয়তগুলো এতই এশক মুহাব্বত নিয়ে রচনা করেছেন যে, পাঠকের ক্বলবের মধ্যেও এশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগুন জ্বলে উঠে। এ কাব্য গ্রন্থের মধ্যে ১৭৯টি গজল ও ২৩টি কছিদা রয়েছে।

ইন্তেকাল:এ মহান মনিষী ৮ রবিউল আউয়াল ১৩০৪ হিজরী মোতাবেক ৬ ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজী রোজ: রবিবার ইন্তেকাল করেন। তাঁকে ২৪/১ মুন্সীপাড়া লেন, মানিকতলা, কলকাতায় দাফন করা হয়। হযরত ওয়াইসী (র:) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে বেলায়তের স্রোতধারা রক্ষার্থে ৩৫ জন মনিষীকে খেলাফত প্রদান করেছিলেন। যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রচার-প্রসার হচ্ছে।

খলিফাদের কয়েকজনের নাম: ১।শামসুল ওলামা মাওলানা গোলাম ছালমানী (র:), ফুরফুরা, ভারত।২। আল্লামা আবু বকর ছিদ্দিকী (র:), ফুরফুরা, হুগলী, ভারত।৩। মৌলভী আহমদ আলী, সুরেশ্বরী, ফরিদপুর, বাংলাদেশ।৪। মৌলভী আবদুল কাদের, ফরিদপুর, বাংলাদেশ।৫। মৌলভী আমজাদ আলী, ঢাকা, বাংলাদেশ।৬। মৌলভী ছৈয়দ আজম হোসাইন, মদীনা শরীফ, প্রমূখের নাম উল্লেখযোগ্য।

তথ্যসূত্র:১। সত্যের আলোকপাত- মুর্শেদে আজম হাদীয়ে জামাঁ ওস্তাদুল ওলামা ও ফুজালা আল্লামা শাহ্ছুফী চৌধুরী মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মুনিরী (ম:জি:আ:)। ২। শানে ওয়াইসী – আহমদুল ইসলাম। ৩। বাংলাদেশের ছুফী সাধক- ড. গোলাম সাকলায়েন। ৪। বাংলাদেশের পীর আউলিয়াগণ- আলহাজ্ব মাওলানা এম. ওবাইদুল হক। ৫। তাজকেরাতুল আউলিয়া- মাওলানা নুরুল আবছার। ৬। ত্রৈমাসিক ফজলে আহমদী, ১ম বর্ষ, সংখ্যা-৪, ১৯৯৮।