আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পুরুষ ও নারী জাতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। উভয়ের শারীরিক ভাবে আলাদা আলাদা স্বভাবে ভূষিত করেছেন।
মহিলাদের লজ্জা স্থান হতে নির্গত রক্ত তিন প্রকার: যথা- হায়েয, নিফাস ও ইস্তেহাযা।
হায়েযের পরিচয়: ৯ বছর বয়সের পরে এবং ৫৫ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত প্রতিমাসে অথবা কয়েক মাস পরপর হায়েযের সময়সীমায় লাল, হলদে, মেটে, সবুজ কালো যে কোনো রঙের রক্তকে হায়েযের রক্ত বলে গণ্য করা হবে।
এই অবস্থায় নামাজ রোজা আদায় করবে না। কুরআন ধরবে না এবং কুরআন পড়বেও না।
নিফাসের পরিচয়: সন্তান জন্মদানের পর যে রক্ত দেখা দেয় সেটাকে নিফাস বলে।
ইস্তেহাযার পরিচয়: হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময়ে যে রক্ত দেখা দেয় সেটাকে ইস্তেহাযা বলে। ওই অবস্থার হুকুম হলো পবিত্র থাকার হুকুমের মতো।
হায়েযের সময়সীমা: হায়েযের সময়সীমা সর্বনিম্ন ৩ দিন ৩ রাত। আর সর্বোচ্চ ১০ দিন ১০ রাত। তিনদিনের কম ও দশদিনের বেশি রক্তস্রাব হলে সেটা হায়েয বলে গন্য হবে না। সেটা হবে ইস্তেহাযা। এই অবস্থায় তিনদিনের কম হলে ছেড়ে দেয়া নামাজ কাযা করতে হবে। আর দশদিনের বেশি হলে এরপর থেকে নামাজ পড়তে হবে।(তবে এখানে আদতের ওপর নির্ভর করে দশদিনের আগে থেকেও নামাজ পড়তে হতে পারে, তাই ৮ নাম্বার মাসআলা দেখে নিবেন)
পবিত্রতার সময়: দুই হায়েযের মধ্যবর্তী পবিত্রতার সর্বনিম্ন সময় ১৫ দিন। আর সর্বোচ্চ কোনো সময়সীমা নেই। মাসের পর মাসও কেউ পবিত্র থাকতে পারে। পনের দিনের কম পবিত্রতা হলে কী হবে দেখুন মাসআলা ৪।
মাসআলা- ১: কারো জীবনের প্রথম রক্তস্রাব শুরু হয়েই ১০ দিনের বেশি হলে, ১০ দিন ১০ রাত হায়েয ধরবে, বাকি দিন ইস্তেহাযা ধরবে। আর প্রতিমাসে এমন হলে প্রতিমাসেই একই নিয়ম মেনে চলবে।
মাসআলা- ২: যদি কারো ৩ দিন ৩ রাত রক্ত দেখা দেয় তারপর ১৫ দিন পাক থাকে, তারপর আবার তিন দিন তিন রাত হায়েয দেখা দেয়, তবে পূর্বের ৩ ও পরের ৩ দিন হায়েয ধরে ১৫ দিন পবিত্রতা ধরবে।
মাসআলা- ৩: কারো ১ অথবা ২ দিন রক্ত দেখা দিলে তারপর ১ অথবা ২ দিন পাক থাকলে তারপর আবার ১ অথবা ২ দিন রক্ত দেখা দিলে পুরো সময়টাকে হায়েয ধরতে হবে। যদিও সে মাঝের রক্ত বন্ধের সময়টার কারণে ইস্তিহাযা বুঝে নামাজ পড়ুক না কেন, পরে আবার রক্ত আসলে পুরো সময়টা হায়েয ধরবে।
মাসআলা- ৪: কারো ১ অথবা ২ দিন রক্ত দেখা দিলে তারপর ১৫ দিনের কম সময় রক্ত বন্ধ রইলো, ধরুন দশ বারোদিন পবিত্র রইলো তারপর আবার রক্ত দেখা গেল, তখন সে রক্ত দেখা যাওয়ার প্রথমদিন থেকে গুণে তার অভ্যাসের দিন পর্যন্ত হায়েয ধরবে এবং বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা ধরবে।
মাসআলা- ৫: যদি কারো হায়েয শেষ হওয়ার পর ১৫ দিন পবিত্র থাকে তারপর রক্ত দেখা দেয় এবং ৩ দিন ৩ রাত পূর্ণ হওয়ার আগেই রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, এরপর পুনরায় ১৫ দিনের বেশি পবিত্র থাকে তাহলে আগের রক্ত ইস্তেহাযা ধরবে এবং ছেড়ে দেয়া নামাজ কাযা করবে। কারণ তিনদিনের কম হায়েয হয় না।
হায়েযের অভ্যাস সংক্রান্ত মাসআলা:
মাসআলা- ৬: কারো যদি প্রতিমাসে ৩ দিন রক্তস্রাব হয় তবে তার অভ্যাস ধরবে ৩ দিন। ৪ দিন হলে ৪ দিন, ৭ দিন হলে ৭ দিন। কিন্তু ধরুন কারো অভ্যাস নিয়মিত ৬ অথবা ৭ দিন। তো হঠাৎ একমাসে তার হায়েয হলো ১০ দিনের বেশি। তখন পুরো ১০ দিন হায়েয না ধরে আগের মাসের অভ্যাস অনুযায়ী ৬ অথবা ৭ দিন হায়েয ধরবে। বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা ধরবে।
মাসআলা- ৭: কারো অভ্যাস ৩ দিন। কিন্তু একমাসে তার ৪ দিন অথবা ৫ দিন রক্তস্রাব হলো। তখন বুঝতে হবে তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। আর যদি ১০ দিনের বেশি রক্তস্রাব হয় তখন ৩ দিন অভ্যাস ধরবে এবং বাকিদিনের নামাজ কাযা করবে। [ফাতহুল কাদির]
মাসআলা- ৮: কারো অভ্যাস ৩ দিন। এরপরের মাসে ৪ দিন হলো, আর তার পরের মাসে ১০ দিনের বেশি রক্তস্রাব হলো তখন যেহেতু আগের মাসে তার ৪ দিন রক্ত এসেছিল, সেহেতু অভ্যাস ৪ দিন মনে করবে। অবশিষ্ট দিন কাযা করতে হবে। তবে কাযা আদায় করার জন্য দশদিনের বেশি অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, দশদিনের কম হলে সেটা হায়েয হবে।
আর দশদিন চলে গেলে বুঝতে হবে ৪ দিনের বেশি যতদিন রক্ত দেখা গেছে সেটা ইস্তেহাযা ছিল। তখন ৪ দিনের পরের দিন থেকে বাকি দিনের নামাজ কাযা করবে এবং ৪ দিনকেই তার অভ্যাস হিসেবে মনে রাখতে হয়। এরপর যদি এর পরের মাসে দশদিনের কম হয় ৪ দিনের বেশি হয় তখন নতুন দিনকে তার অভ্যাস ধরবে।
হায়েয চলাকালীন সময়ের মাসায়েল:
হায়েযের সময় নামাজ রোজা আদায় করা নিষেধ। তবে নামাজ পুরোপুরি মাফ হয়ে যায়, কাযা করতে হয় না, কিন্তু রোজা কাযা করতে হয়।
মাসআলা- ৯: যে ওয়াক্তে হায়েয শুরু হয় সে ওয়াক্ত এখনো আছে এবং নামাজ এখনো পড়েনি, তবে সেই নামাজ মাফ। এমনকি নামাজের শেষ ওয়াক্তে হলেও পরে সেই নামাজ কাযা করতে হবে না।
মাসআলা- ১০: ফরজ নামাজ পড়াকালীন সময়ে হায়েয দেখা গেলে সেই নামাজ ভেঙ্গে যাবে, পড়তে হবে না এবং তা কাযা করতেও হবে না।
মাসআলা- ১১: তবে নফল বা সুন্নাতের সময় হায়েয দেখা গেলে সে নামাজ ভেঙ্গে গেলেও পরে পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে।
মাসআলা- ১২: রোজা শুরু করার পর হায়েয দেখা দিলে পরে সেই রোজা কাযা করতে হবে, চাই সেটা ফরজ হোক অথবা নফল।
মাসআলা- ১৩: যদি কারো ১০ দিনের কম স্রাব হয় এবং এমন সময় বন্ধ হয় যে, গোসল করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধার মতো ওয়াক্ত বাকি থাকে তবে সেই নামাজ ওয়াজিব হয়ে যায়। নিয়ত বাঁধবে এবং নিয়ত বাঁধার পর ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলেও নামাজ আদায় করে নিবে। তবে যদি ফজরের শেষ ওয়াক্ত হয় এবং সূর্য উদয়ের সময় হয়, তবে পরে কাযা করে নিবে। আর যদি সময় এত কম হয় যে, তাড়াতাড়ি গোসল করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধার মতো সময় অবশিষ্ট থাকবে না, তবে শেষ ওয়াক্তে রক্ত বন্ধ হলেও সে নামাজ কাযা করতে হবে না।
মাসআলা- ১৪: কিন্তু যদি পরিপূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত হায়েয হওয়ার পর বন্ধ হয় এবং গোসলের সময় নেই কিন্তু এতটুকু সময় থাকে যে শুধু আল্লাহু আকবার বলতে পারবে, তবে ওই ওয়াক্তের নামাজ ওয়াজিব হবে এবং পরে কাযা করতে হবে।
মাসআলা- ১৫: কারো ১০ দিনের কম স্রাব হলে শেষ রাতে যদি এতটুকু সময় থাকে যে গোসল করে নিতে পারবে কিন্তু আল্লাহু আকবার বলার মতো সময়ও থাকবে না, তবুও তার পরের দিনের রোজা ওয়াজিব হবে, এমনকি গোসল না করলেও রোজার নিয়ত করে রোজা রাখবে এবং ফজরের পর গোসল করে নিবে। আর যদি সময় তারচেয়ে কম থাকে, গোসল করার মতো সময় না থাকে তবে তার পরেরদিনের রোজা হবে না, কিন্তু সে সারাদিন রোজাদারের মতো থাকবে এবং পরে কাযা করবে।
মাসআলা- ১৬: কিন্তু কারো যদি পরিপূর্ণ ১০ দিনরাত পূর্ণ হয় রাতের শেষভাগে এবং পবিত্র হওয়ার পর এতটুকু সময়ও নেই যে আল্লাহু আকবার বলতে পারে, তবে তার জন্য পরের দিনের রোজা ওয়াজিব।
মাসআলা- ১৭: ১/২ দিন হায়েয হওয়ার পর রক্ত বন্ধ হলে গোসল ওয়াজিব হবে না। যেহেতু ইস্তিহাযা। অজু করে নামাজ পড়বে, তবে স্বামীর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে না যাওয়া ভালো। যদি পনের দিনের ভেতর আবার স্রাব হয় তবে তো বুঝা যাবে সেটা হায়েয ছিল এবং পূর্বের মাসের অভ্যাস অনুযায়ী প্রথম দিন থেকে গুণে হায়েয ধরবে এবং এখন গোসল ওয়াজিব হবে, গোসল করে নামাজ পড়বে। আর যদি পূর্ণ ১৫ দিন রক্ত দেখা না যায় তবে তো ইস্তিহাযা ছিল এবং প্রথম ১/২ দিনের বাদপড়া নামাজও কাযা করে নিবে।
মাসআলা- ১৮: হায়েযের অবস্থায় যে কাপড় পরিহিত ছিল তাতে নাপাকি না থাকলে সেই কাপড় দিয়ে নামাজ পড়তে পারবে। নাপাকি লেগে থাকলে শুধু ওই স্থান ধৌত করেও নামাজ পড়তে পারবে। পুরো কাপড় ধৌত করা জরুরী নয়।
মাসআলা- ১৯: হায়েযের সময় ফিজিক্যাল রিলেশন জায়েজ নেই, হারাম। স্বামী স্ত্রী দুজনেই গোনাহগার হবে। তবে সহবাস ছাড়া সবই জায়েজ। হায়েযা স্ত্রীর সবকিছুই পাক। হায়েযের কারণে সে নাপাক হয়ে যায়নি। তার মুখের লালা, কাপড়, শরীর সবই পাক। তাঁকে চুমু দেয়া, আদর করা সবই জায়েজ। তবে স্ত্রীর হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত কোনো অঙ্গ স্পর্শ করতে পারবে না।
মাসআলা- ২০: যদি কারো অভ্যাস অনুযায়ী হায়েয বন্ধ হয়ে যায় তবে গোসল না করা পর্যন্ত স্বামীসঙ্গ জায়েজ নয়। হ্যাঁ যদি এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় অর্থাৎ এতটুকু সময় অতিবাহিত হয়ে যায় যার মধ্য গোসল সেরে তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার মতো সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এবং তার ওপর এক ওয়াক্তের কাযা ওয়াজিব হয়, তবে পরের ওয়াক্তে গোসলের পূর্বে স্বামীসঙ্গ জায়েজ।
মাসআলা- ২১: যদি কারো অভ্যাস অনুযায়ী হায়েয না হয় বরং পূর্বেই হায়েয বন্ধ হয় যেমন ৫ দিন অভ্যাস ছিল কিন্তু ৪ দিন হয়েছে, তবে গোসল করে নামাজ পড়া ওয়াজিব, কিন্তু সহবাস জায়েজ হবে না। পাঁচদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কেননা হতে পারে আবার হায়েজ শুরু হবে।
মাসআলা- ২২: পরিপূর্ণ ১০ দিনরাত হায়েজ হওয়ার পর বন্ধ হলে অলসতাবশতঃ গোসল না করলে গোসলের পূর্বে সহবাস জায়েজ হবে কিন্তু বিরত থাকা উত্তম।
মাসআলা- ২৩: এক দুই দিন হায়েয হওয়ার পর বন্ধ হলে অজু করে নামাজ পড়লেও সহবাস ঠিক হবে না, আদত অনুযায়ী সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কেননা, পনের দিনের আগে রক্তস্রাব হলে বুঝা যাবে সেটা হায়েজ ছিল।
নিফাসের পরিচয়: সন্তান জন্মদানের পর যে রক্ত দেখা দেয় সেটাকে নিফাস বলে। কারো জমজ হলে অথবা ছয়মাসের ভিতর আরেকটি সন্তান হলে প্রথম সন্তান থেকে নিফাস ধরবে।
নিফাসের সময়সীমা: সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিন। ৪০ দিনের পর রক্ত আসলে সেটা ইস্তিহাযা হবে। নিফাসের সর্বনিম্ন সময়সীমা নেই। দুই চার ঘন্টা, দুই চারদিন হতে পারে। এমনকি রক্ত একেবারে নাও আসতে পারে।
মাসআলা-২৪: প্রসবের পর রক্ত আসলে রক্ত বন্ধ হলে গোসল করবে। আর একেবারেই রক্ত না আসলে তবুও গোসল করতে হবে। এই গোসল ফরজ।
মাসআলা- ২৫: নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করে নামাজ পড়া শুরু করবে। এটা মনে করবে না যে, চল্লিশ দিন অপেক্ষা করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে এটা প্রচলিত। এটা ঠিক নয়। তবে নিফাসের সময়সীমার ভিতর দুএকদিন রক্ত বন্ধ থাকলে তারপর আবার রক্ত এলে ওই বন্ধ থাকার সময়কেও নিফাস ধরতে হবে।
মাসআলা- ২৬: কারো ৪০ দিনের সময় রক্ত বন্ধ না হলে আর সন্তানটি প্রথম সন্তান হলে ৪০ দিন নিফাস ধরবে আর বাকি দিন ইস্তেহাযা ধরবে। কিন্তু সন্তান যদি প্রথম সন্তান না হয় তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং চল্লিশ দিনে বন্ধ হলে তো চল্লিশ দিনই নিফাস কিন্তু চল্লিশ দিনের বেশি অতিবাহিত হয়ে গেলে পূর্বের সন্তানের আদত অনুযায়ী দিন নিফাস ধরবে এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত যে নামাজ ছেড়েছে সেগুলোও কাজা করতে হবে।
মাসআলা- ২৭: বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময় হুশ থাকলে এমনকি অর্ধেক বের হলে আর ক্ষতির আশংকা না থাকলে নামাজ পড়তে হবে। তবে ক্ষতির আশংকা থাকলে পড়বে না, পরে কাযা করবে। একই বিধান ধাত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
মাসআলা- ২৮: কোনো কারণে গর্ভপাত হলে বা এম আর করা হলে যদি সন্তানের হাত পা নখ ইত্যাদি হয়ে যায় তবে এরপর যে রক্ত বের হবে সেটাকে নিফাসের রক্ত ধরা হবে এবং নিফাসের হুকুম মানতে হবে। কিন্তু যদি হাত পা নখ ইত্যাদি না হয় তবে সাধারণত তিনমাসের আগে গর্ভপাত হলে এমন হয়, সে অবস্থায় যে রক্ত আসবে তাকে নিফাস না ধরে পূর্বের আদত অনুযায়ী দিন হিসেব করে হায়েয ধরতে হবে। তবে এর পূর্বে যদি অন্তত পনের দিন পাক না থাকে তবে এটা ইস্তিহাযা হবে। এবং যদি রক্ত তিনদিনের কম হয় তবেও ইস্তিহাযা হবে। (এইটা পুরোপুরি হায়েযের বিধানের মতো হয়ে যাবে)
হায়েয নিফাসের সময় করণীয়/বর্জনীয়:
মাসআলা- ২৯: হায়েয নিফাস অবস্থায়, গোসল ফরজ অবস্থায়, নামাজ রোজা ব্যতীত আরো যে সব কাজ জায়েজ নয় তা হলো, মসজিদে যাওয়া হারাম। কাবা তাওয়াফ জায়েজ নয়। কুরআন পড়া জায়েজ নয়। স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে কুরআনের সাথে সেলাই করা না থাকলে আলগা কাপড় অথবা আলগা চামড়ার কভার হলে সেটার ওপর দিয়ে স্পর্শ করতে পারবে।
মাসআলা- ৩০: টাকা পয়সা, তাবিজ বরতন ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত লেখা থাকলে সেটা স্পর্শ করবে না। তবে সেগুলো থলি বা পাত্রে রাখলে থলি বা পাত্র ধরে উঠাতে পারবে।
মাসআলা- ৩১: গায়ের জামা বা ওড়না দিয়ে কুরআন ধরাও জায়েজ নয়। তবে গা থেকে আলাদা কাপড় দিয়ে ধরতে পারবে।
মাসআলা- ৩২: যদি পরিপূর্ণ আয়াত না পড়ে একটি শব্দ অথবা আয়াতের অর্ধেক পড়ে তবে ঠিক আছে। কিন্তু এত অর্ধেকটুকু ছোট আয়াতের সমান হতে পারবে না।
মাসআলা- ৩৩: কারো হেফজ করা অবস্থায় হায়েয হলে এবং প্রয়োজন হলে মনে মনে তিলাওয়াত করবে।
মাসআলা- ৩৪: কোনো আয়াত দুআ হলে আর দুআর নিয়তে পড়লে গোনাহ নেই। দুআ কুনুত পড়াও জায়েজ।
মাসআলা- ৩৫: বাচ্চাদের কুরআন শিক্ষা দিলে বানান করে কুরআন পড়তে পারবেন এবং একেকটি শব্দ আলাদা আলাদা শ্বাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়াতে পারবেন।
মাসআলা- ৩৬: হায়েয নিফাস অবস্থায় সব ধরনের দুআ দুরুদ ইস্তেগফার পড়া যাবে। নামাজের সময় অজু করে নামাজের স্থানে বসে ইস্তেগফার ও জিকির করা মুস্তাহাব।
মাসআলা- ৩৭: হায়েয নিফাসের পর তাড়াতাড়ি গোসল করে নামাজ পড়ে নিবে। অলসতা করে দেরি করলে আর ওয়াক্ত চলে গেলে নামাজ কাযা করলে গোনাহগার হবে।
ইস্তিহাযা:
মাসআলা- ৩৮: হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত যে রক্ত দেখা যায় সেটা ইস্তিহাযা।
মাসআলা- ৩৯: নয় বছরের আগে রক্ত দেখা গেলে ইস্তিহাযা।
মাসআলা- ৪০: গর্ভাবস্থায় রক্ত বের হলে সেটাও ইস্তিহাযা।
মাসআলা- ৪১: বাচ্চা প্রসবের পূর্বের রক্ত পানি ইস্তিহাযা। এমনকি অর্ধেক বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রক্ত দেখা গেলে ইস্তিহাযা হবে।
মাসআলা- ৪২: ইস্তিহাযার হুকুম সারাক্ষণ নাক দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া মাযুর ব্যক্তির মতো। তাই ইস্তিহাযার সময় নামাজ রোজা আদায় করবে। তাওয়াফ, সহবাস সব করতে পারবে। শুধু প্রত্যেক নামাজে নতুন করে অজু করবে। সেই অজু দিয়ে এক ওয়াক্তের ভিতর তিলাওয়াত ও নফল নামাজ যত ইচ্ছা আদায় করতে পারবে যতক্ষণ না অজু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া যায়। তবে কখনো রক্ত এলে কখনো বন্ধ থাকলে ওয়াক্তের ভিতর বন্ধ হওয়ার সময়টায় নামাজ আদায় করে নিবে।
লিকুরিয়া বা সাদা স্রাবের মাসায়েল:
মাসআলা- ৪৩: সাদা স্রাবে অজু নষ্ট হয়, গোসল নয়। যদি সর্বক্ষণ এই স্রাব নির্গত হয় তবে ইস্তিহাযার বিধানের মতো প্রতি ওয়াক্তে স্রাব ধৌত করে নিবে। কিন্তু যদি কখনো কখনো বন্ধ হয় তবে বন্ধ থাকার সময় নামাজ পড়বে এবং নামাজ পড়ার সময় স্রাব বের হলে পুনরায় অজু করে নামাজ পড়ে নিবে।
হায়েয নিফাস শেষ কখন হয়:
মাসআলা- ৪৪: অনেকেই মনে করে সাদা স্রাব আসার ওপর হায়েয নিফাস শেষ হওয়ার আলামত। কিন্তু এমনটা ভাবা ভুল। সাদা স্রাবের অপেক্ষা করে নামায বন্ধ রাখা যাবে না বরং যখন স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী রক্ত বন্ধ হবে তখন থেকেই পবিত্র হয়ে নামায পড়া শুরু করবে । তবে সতর্কতার জন্য যেই ওয়াক্তে হায়েজ বন্ধ হবে ঔ ওয়াক্তের নামাযকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করবে। [ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮২, ফাতাওয়া শামী ১/৪৮৯-৪৯০]
তথ্যসূত্র: আহকামুন নেসা- মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন।